#Ch.08
আজ মঙ্গলবার, মেঘ রেডি হয়ে একেবারে নিচে নামলো, ক্লাসের টাইম ৩০ মিনিট এগিয়ে দিয়েছে তাই তাড়াতাড়ি যেতে হবে। খাবার টেবিলে বসে তাড়াহুড়োয় খাবার খাচ্ছে মেঘ। সামনের চেয়ার ফাঁকা এতেই যেনো মেঘের স্ব*স্তি কাজ করছে। রবিবারের ধ*মক খাওয়ার পর থেকে মেঘ ইচ্ছে করেই আবিরের থেকে দূরে দূরে থাকতে চাইছে। এদিকে আবির ৮ টার দিকে না খেয়ে অফিসে চলে গেছে। নিজের অফিসে কাজ শেষ করে তারপর বাবার অফিসে যাবে। মেঘও খাওয়া শেষ করে কোচিং এর উদ্দেশ্যে রওনা দিল।
২ টায় মেঘ কোচিং থেকে এসে ফ্রেশ হয়ে খেতে বসেছে। ২ লুকমা মুখে তুললেই কারো পায়ের শব্দে ফিরে তাকায় মেঘ। আবির খাবারের টেবিলের দিকে আসছে, ওমনি মেঘের গলায় খাবার আটকে গেছে। খাবার গিলতে পারছে না মেয়েটা। কোনোরকমে পানি দিয়ে খাবার টা গিললো। এদিকে আবির বেসিন থেকে হাত ধৌয়ে এসে মামনিকে খাবার দিতে বলল। বসল মেঘের বিপরীতে রাখা চেয়ারটাতে।
মেঘের চিবুক নামলো গলায়, দৃষ্টি তার প্লেটের দিকে। মনে মনে আল্লাহ আল্লাহ করছে মেয়েটা, হাত পা কাঁ*পাকাঁ*পি শুরু হয়ে যাচ্ছে। ২ দিন পালিয়ে থেকেও লাভ হলো না। বার বার কানে বাজছে রবিবারের সেই কথাটা
"এমন থা*প্পড় দিব যার দাগ ১ মাসেও যাবে না।"
কে চাই স্বেচ্ছায় মা*ইর খেতে, কোনোরকমে খেয়ে সরে পরলেই বাঁ*চে সে। খাওয়ার গতি বাড়ালো, নাকে মুখে খাচ্ছে মেঘ। আবির ক্ষি*প্ত দৃষ্টিতে তাকালো মেঘের দিকে, কপাল কুঁচকে গম্ভীর গলায় বলল,
"কি হয়েছে তোর?"
মেঘের নি*শ্বাস আটকে আছে, গলা শুকিয়ে কাঠ। সারাশরীরের কম্পনের মাত্রা তীব্র হলো, কথা বের হচ্ছে না মুখ দিয়ে। কিন্তু আজ তাকে বলতে হবে, হি*টলারের মুখোমুখি হতে হবে তাকে। নিজেকে নিজে সাহস দিলো।
মেঘের সরল স্বীকারোক্তি,
"কিছু হয় নি আমার।"
আবির কিছু বলতে গিয়েও গিলে ফেলল কথাটা। এরমধ্যে হালিমা খান আবিরের খাবার নিয়ে এসেছেন। আবির খাওয়ায় মনোযোগ দিল। হালিমা খান আবিরকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
"সকালে কিছু খেয়েছিলি বাবা?"
আবির গুরুভার কন্ঠে উত্তর দিলো,
"খায় নি"
হালিমা খান কিছুটা চিন্তিত কন্ঠে বললেন,
"সকালে খেয়ে গেলেই পারতিস, একটু দেরি হলে না হয় হতো!"
আবির কোনো উত্তর দিলো না।মেঘ মনে মনে ভাবছে, আমায় যে লোক হু*মকি দেয়,
"ঠিকমতো খেতে হবে"
সে নিজে যখন না খেয়ে থাকে তখন তাকে কেনো কেউ ধম*ক দেয় না। সব দোষ এই মেঘের। থাক*বোই না এই বাড়িতে৷ উঠতে চাইলো টেবিল থেকে তৎক্ষণাৎ চোখ পরে আবির ভাইয়ের দিকে, আবির মাথা নিচু করে খাচ্ছে। এখন উঠতে গেলে নিশ্চয় ধ*মক দিয়ে আবার বসাবেন, কে জানে আবার থা*প্পড় ই মা*রেন কি না। এসব ভেবে মেঘ আবার বসে দ্রু*তগতিতে খাওয়া শুরু করে।
আবির রাগে একপ্রকার চিৎকার দিয়ে উঠল,
"একটা থা*প্পড় দিব তোকে, এভাবে খাচ্ছিস কেন?"
মেঘ সহসা থমকে গেল, ধমক খেয়ে চোখ টলমল করছে তার, মুখের ভাত গুলো কোনোরকমে গিলল।মনে মনে ভাবলো,
"আমাকে থা*প্পড় দেয়ার এত ইচ্ছে আপনার?"
আবিরের থা*প্পড়ের ভয়ে ২ দিন যাবৎ খাবার টেবিলে সবার সাথে খায় না মেয়েটা। কে জানতো এই দুপুর বেলা আবির ভাই অফিস থেকে বাসায় চলে আসবেন। জানলে হয়তো আগে খেয়ে নিতো না হয় আবির ভাই খাওয়ার পর খেতে আসতো। কেনো এই মানুষ টা তার সামনে আসে। কেনোই বা এত রা*গ দেখায় ভেবে পায় না মেঘ। হঠাৎ মনে পরে যায় ঘুম থেকে উঠে বলা স্লোগান টা। মেঘ মনে মনে বিড়বিড় করল,
" আমার মন একমাত্র আমার নিয়ন্ত্রণে চলবে, মেঘ ভয় পাবে না আবিরকে।"
তারপর স্বাভাবিক ভাবে প্লেটের ভাতগুলো শেষ করে হাত ধৌয়ে সিঁড়ি দিকে যেতে নেয়৷ সোফার কাছে পর্যন্ত যেতেই মীম আর আদি দৌড়ে এসে জাপ্টে ধরে মেঘকে৷ আকস্মিক ঘটনায় কিছুটা ঘাবড়ে গেলো মেঘ।তারপর স্বাভাবিক কন্ঠে বললো,
" কি হয়েছে তোদের?"
মীম ফিসফিস করে মেঘকে বললো,
"আপু প্লিজ আবির ভাইয়াকে বলো না আমাদের নিয়ে বাইকে ঘুরতে, কখনো বাইকে উঠি নি, প্লিজ বলবা!"
মেঘ কোনো কিছু না ভেবেই বললো,
"আমি বলতে পারবো না।"
আদি বলে উঠল,
"প্লিজ প্লিজ প্লিজ আপু। আমরা বলার সাহস পাচ্ছি না। প্লিজ তুমি একটু বলো না "
মেঘ আবারও গম্ভীর কন্ঠে জবাব দিলো,
" আমি পারবো না বলতে। তোদের ঘুরতে ইচ্ছে করে তোরা বল। "
মেঘ মনে মনে ভাবছে,
"তোরাই সুখে আছিস আমাকে তো উঠতে বসতে থাপ্পড় মা*রার হুম*কি দিচ্ছে! আমি এবার এটা বললে নিশ্চিত এখনই খাবো থাপ্প*ড় টা।"
আবিরের খাওয়া শেষ এদিকে আসতে দেখে মেঘ তাড়াতাড়ি রুমে চলে যেতে চাচ্ছে। কিন্তু আদি আর মীম আরও করুন স্বরে বলছে,
"প্লিজ আপু, তুমি বলো না। "
এবার মেঘ রেগে কটমট করে বলে,
"আমি বললাম তো পারবো না।।"
মীম আর আদি এবার চুপসে গেলো। মেঘ আর এক মুহুর্ত দাঁড়ালো না। সিঁড়ি দিয়ে উঠায় ব্যস্ত। আবির বিষয়টা লক্ষ্য করেছে, আবির আদিকে জিজ্ঞেস করে,
"কাকে কি বলতে বলছিস ওকে?"
মীম শ্বাস টেনে সাহস নিয়ে বললো,
"ভাইয়া আমাদের আপনার বাইকে নিয়ে ঘুরাবেন প্লিজ?"
মেঘ সিঁড়িতে উঠতে উঠতে ফিসফিস করে বলছে, "হিট* লার নিবে বাইকে তোদের? সেগুরে বালি৷"
আবির কন্ঠ তিনগুণ ভারি করে উত্তর দিলো,
"আমার বাইকে কাউকে উঠাবো না,
কিছুদিন পর তানভির কে বাইক কিনে দিব। তখন ও তোদের নিয়ে ঘুরবে। "
আদি অকস্মাৎ প্রশ্ন করে বসলো,
"তুমি তানভির ভাইয়াকে নিয়ে ঘুরো না?"
আবির এবার স্বাভাবিক কন্ঠেই বললো,
"এখনও তানভির আমার বাইকে উঠে নি! তবে ভবিষ্যতে উঠতে পারে । ওর সাথে তোদের কি সম্পর্ক?"
মীম আর আদি বোবা হয়ে রইলো। মেঘের কথা ফলে যাওয়াতে নিজেকে নিয়ে গর্ব করতে করতে রুমের দিকে যাচ্ছে আর ভাবছে দুই ভাইয়ের গলায় গলায় সম্পর্ক অথচ বাইকে উঠার পারমিশন দেয় নি ছিঃ।
সহসা অভিব্যক্তি পাল্টালো মুখের৷ বিড়বিড় করে বলল,
"হিট*লারের থেকে ভালো আর কি আশা করা যায়?"
রুমে গিয়ে সোজা শুয়ে পরলো। তৎক্ষনাৎ ফোনটা হাতে নিল। এই ২-৩ দিনে একবারের জন্য ও ফে*সবুকে ঢুকে নি সে। মন খারাপ কাটাতে ঢুকলো ফে*সবুকে, কিছুক্ষণ ঘুরাঘুরির পর একটা পোস্ট সামনে আসছে। ১ দিন আগে আবির ফেসবুক একটা অসম্ভব সুন্দর ছবি আপলোড দিয়েছে সাথে ছোট করে ক্যাপশন লিখেছেন।
"শূন্যতা আমায় ঘিরে আছে,
আর আমি ঘিরে আছি মোহে।"
মেঘ ছবিটা দেখে যতটা খুশি হলো তার থেকে বেশি চিন্তিত হলো ক্যাপশনে কি বুঝিয়েছেন তা ভাবতে। সে ক্যাপশন বুঝার চেষ্টায় মগ্ন হলো। মনে মনে আওড়ালো,
"ওনি কি তাহলে সত্যি কারো সাথে রিলেশনে আছেন? "
তৎক্ষণাৎ মনের ভেতর থেকে জবাব এলো,
"ওনি প্রেম করলে তোর কি? তোরে যে উঠতে বসতে থা*প্পড় দে*য়ার ভ*য় দেখায়, তোর লজ্জা করে না এই হি*টলার কে নিয়ে ভাবতে!"
সঙ্গে সঙ্গে ডাটা অফ করে ফোন রেখে দিলো মেঘ। সত্যিই তো, সে তো আবির ভাইয়ের উপর রেগে আছে তাহলে আবার আবির ভাইকে নিয়ে ভাবছে কেনো..!
এদিকে আবির রুমে এসে ৫-১০ মিনিট রেস্ট নিয়ে নিজের ল্যাপটপ আর কিছু কাগজপত্র নিয়ে বেরিয়ে পরেছে৷
★★★★
সন্ধ্যায় মেঘের নতুন টিউটর এসেছে। বয়স এত বেশি না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিজিক্সে পড়াশোনা করছেন এবার ৩য় বর্ষে আছেন। দেখতে মাশাআল্লাহ অনেক সুন্দরী, গোলগাল চেহারা, বোরকা পরে হিজাব পরে এসেছেন। গুছিয়ে কথা বলেন, সুন্দর করে বুঝিয়ে পড়িয়েছেন মেঘকে। মেঘ যেনো পড়ার থেকেও বেশি মুগ্ধ হয়েছে ওনার কথা বলার স্টাইলে।
ওনার নাম জান্নাত। মেঘের ওনাকে এতই ভালো লেগেছে যে দু দিন পড়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পারলো না। জান্নাত আপু চলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ছুটে গেল বড় আব্বুর কাছে। জানালো ওনার কাছেই পড়বে সে।
আলী আহমদ খান যেনো কিছুটা নিশ্চিন্ত হলেন। তারপরও মেঘকে বললেন,
"কখনো যদি মনে হয় তোমার পড়ার ঘাটতি হচ্ছে তাহলে আমি নতুন টিউটর আনবো, তুমি চিন্তা করো না। পড়াশোনায় মনোযোগ দাও!"
মেঘ "ঠিক আছে" বলে নিজের রুমে চলে গেলো।
রাতে সবাই একসাথে খাওয়া দাওয়া করলো কিন্তু আবির নেই। ইদানীং আবির অফিস শেষ করে নিজের নতুন অফিসে চলে যায়। ওখানে সব গুছানো, প্ল্যানিং করা এসব নিয়ে ব্যস্ত থাকে। রাত ১১ টার আগে ফিরেই না। কেউ অপেক্ষাও করে না তার জন্য। কারণ আবিরের ক*ড়া নির্দেশ,
"আমার জন্য কেউ অপেক্ষা করলে আমি আর ফিরবোই না।"
সেই থেকে মা আর মামনি নিজেদের সময় মতো শুয়ে পরে। আবির ১১ টার পরে এসে ফ্রেশ হয়ে নিজের মতো খায়।
★★★★
কেটে গেলো আরও দুদিন। দেখা হলো না মেঘ আর আবিরের। সকালে আবির খেতে আসলেও মেঘ আগে আগেই খেয়ে পা*লায়, সে আবির ভাইয়ের মুখোমুখি হতে চাই না।
মেঘ ছোটবেলা থেকেই খুব আবেগী আর জে*দি৷ অল্পতে কা*ন্না করা তার স্বভাব। আর কোনো বিষয়ে জে*দ করলে তা সহজে কাটে না। যেমন সামান্য থা*প্পড়ের জন্য আবির ভাই এর সাথে ৯ বছরের উপরে কথা বলে নি একটিবার। আবির দেশে আসাতে মনে অন্যরকম অনুভূতি জন্মানো শুরু করেছিল সবেমাত্র। কিন্তু আবির ভাইয়ের হুমকিতে অনুভূতি গুলো চা*পা পরে যাচ্ছে। মেঘ নিজেই যেনো অনুভূতি গুলোকে মাটি চা*পা দিতে ব্যস্ত।
কথায় আছে,
"চোখের আড়াল হয়ে গেলে,
মনের আড়াল হতে বেশি সময় লাগে না"
এজন্য মেঘ সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে যেনো আবির ভাইয়ের সামনে সে না পরে৷ সবাই টেবিলে বসার আগেই সে খেয়ে নিজের রুমে চলে যায়, আবির ভাই অফিসে গেলে সে কোচিং এর জন্য বের হয়, দুপুরে আবির থাকে না বলে একটু রিলাক্সে খেতে পারে৷ রাতে জান্নাত আপু পড়িয়ে যায় ৭.৩০ নাগাদ তখন ই খেয়ে রুমে চলে যায়। তখন তো আবির ভাই ফিরেই না, দেখা হবে কি ভাবে..!!
★★★★
সেই রবিবার থেকে মেঘ পালিয়ে বেড়াচ্ছে। আজ বৃহস্পতিবার রাত, মেঘ নিজের পড়া শেষ করে শুয়ে মোবাইল টা হাতে নিয়েছে। আবিরের কথা খুব মনে হচ্ছে তার, তাই আবিরের আইডি তে ঢুকলো কিন্তু কোনো আপডেট নেই। মনের ভেতরটা কেমন জানি মোচড় দিলো মেঘের। মঙ্গলবার দুপুরে খেতে বসেছিল একসাথে তারপর আর দেখেই নি সে।
মেঘের খুব ইচ্ছে করছে আবির ভাইকে দেখার। মনকে কোনোভাবেই শান্ত করতে পারছে না। মনের জোর গুলোও নিস্তেজ হয়ে পরেছে। অনেকক্ষণ মনকে বুঝিয়ে ব্যর্থ হলো তাই রুম থেকে বের হয়ে গুটিগুটি পায়ে এগিয়েছে আবির ভাইয়ের রুমের দিকে। রাত তখন ১১ টার উপরে। ড্রয়িং রুমে একটা হালকা আলোর বাল্ব জ্বলছে, পুরো বাড়ি অন্ধকার। মেঘ আবিরের রুমের সামনে দাঁড়ালো। দরজা চাপানো, আস্তে করে ধাক্কা দিলো মেঘ। চেক করতে চাইছিলো খোলা কি বন্ধ। মেঘের হালকা ধাক্কাতেই খুলে গেলো দরজা। কিছুটা ঘাবড়ে গেল মেঘ। যদি আবির ভাই রুমে থাকেন তাহলে আজ থা*প্পড় নিশ্চিত। তাই দুগালে হাত দিয়ে আস্তে করে উঁকি দিলো রুমে৷
রুমের বারান্দায় বাল্ব জ্বলছে । সেটার আলোয় রুমে আসছে। মোটামুটি আলোকিত হয়ে আছে রুমটা। আবির কোথাও নেই। বিছানা টানটান করে পাতানো। টেবিলে বই, খাতা, কাগজপত্র এলোমেলো সাথে একটা ল্যাপটপের আলো জ্ব*লছে। চেয়ারের উপর ২-৩ টা কাপড় এলোমেলো পরে আছে। ছেলেদের রুম সচরাচর যেমন হয়।
মেঘ মনে মনে ভাবছে,
"আবির ভাই কি এখনও বাসায় ফিরে নি?"
নিজের রুমের দিকে ফিরে ১ কদম এগুতেই কানে ভেসে আসে গানের সুর । দাঁড়িয়ে পরলো মেঘ, মনে মনে ভাবছে,
"গান কে গাইছে, আবির ভাই নয় তো?"
আবারও ঘুরে গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে গেলো সিঁড়ির কাছে। মেঘ এই জীবনে কোনোদিন সন্ধ্যার পর ছাদে যায় নি৷ সবাই গেলেও যায় না, ওর ভ*য় লাগে, সন্ধ্যা বেলা নাকি ছাদে তাঁনারা ঘুরে বেড়ায়। সারারাত ছাদেই থাকেন এ ভয়ে ছাদে পা বাড়ায় না সেদিকে। সিঁড়ি কাছে এসে থমকে দাঁড়ালো মেঘ,
"এই গান কি তাঁনারা গাইতেছেন? আমাকে আকৃষ্ট করে নেয়ার জন্য? "
যাবে কি যাবে না এটায় ভাবছে মেঘ, বুকে সাহস নিয়ে দু কদম এগিয়েছে মেঘ, একটু উঁকি দিয়ে দেখলো ছাদের দিকে৷ ছাদের গেইট খোলা। এটা দেখে মনে সা*হস পেলো মেয়েটা৷ তাঁনারা গান গাইলে গেইট খুলার কি দরকার। তারপরও আল্লাহ আল্লাহ করে এগুচ্ছে মেঘ৷
গেইটের কাছে এসে বুকে হাত রেখে উঁকি দিলো ছাদের দিকে। ছাদের এক কর্ণারে নজর পরলো, সিঙ্গেল সোফার উপর হেলান দিয়ে বসে আছে একজন৷ চাঁদের উপর থেকে মেঘ সরে যেতেই স্পষ্ট বুঝা গেলো এটা আবির ভাই৷ মেঘ নিস্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে পরলো, এত রাতে আবির ভাই ছাদে কি করেন, কৌতুহল হলো মেঘের।আগে কি গান গেয়েছে তা মেঘ বুঝতে পারে নি,
নিচ থেকে শুধু সুর টায় শুনেছে। এখন আবির ভাই নিরব। কয়েক মুহুর্ত পর আবির ভাই আবার শুরু করলো,
"ছোট্ট বুকে মেঘ জমিয়ে ক্যানরে কাঁদিস পাখি?
তুই ফিরবি বলে আমি কেমন সন্ধ্যা নামায় রাখি
ছোট্ট তোর ওই ওমের ডানায় নাক ঘষতে দিবি কি?
বুকের ভেতর ঘুলঘুলিতে একলা পাখি হবি?
তুই বুকের ভেতর ঘুলঘুলিতে একলা পাখি হবি?"
মেঘ উদ্বিগ্ন নয়নে তাকিয়ে আছে আবির ভাইয়ের দিকে। ছেলেদের গান শিখতে হয় না, তারা খালি গলাতে গান গাইলেও যেনো অসম্ভব সুন্দর লাগে। মেঘ মুগ্ধ হয়ে আবিরের গান শুনছে। আবির ভাই একই লিরিক্স বার বার গাওয়াতে গানে মনোযোগ দিলো মেঘ,
নিজেকে নিজে প্রশ্ন করলো মেঘ,
"এই গান কাকে উদ্দেশ্য করে গাইছেন ওনি? আমাকে নিয়ে নয়তো? এটুকু বলতেই মুখে হাসি ফুটে উঠলো মেঘের, তৎক্ষনাৎ মনে হলো ওনি আমাকে নিয়ে কেনো গান গাইবেন, আমি কে! তানভির ভাই তো সেদিন বললো আবির ভাইয়ের জীবনে কেউ আছে তাহলে কি তার কথা ভেবেই গাইতেছেন?"
সঙ্গে সঙ্গে হাসি গায়েব হয়ে গেল ৷ নিস্তব্ধ আঁখিতে তাকিয়ে আছে সে, বুকের বা পাশে হালকা ব্যথা অনুভব হলো, ওনার মনে সত্যি অনেক দুঃখ না হয় এমন গান কেউ গায়..!
এরমধ্যে আবির ভাইয়ের গান থেমে গেলো, কিছুক্ষণ নিরব থেকে পকেট থেকে একটা সিগারেট বের করে ঠোঁটে ধরলো, আ*গুন দিয়ে জ্বা*লালো সেই সিগা*রেট। এদিকে মেঘের মাথায় আকাশ ভে*ঙে পরেছে। নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে ক*ষ্ট হচ্ছে, আবির ভাই সিগারেট খান.? দাঁড়িয়ে থাকার শক্তিটুকু পাচ্ছে না মেয়েটা । অকস্মাৎ দরজার এখানেই বসে পরেছে সে৷মেঘের জাত শ*ত্রু হলো সিগারেট। যেখানে সিগারেটের গ*ন্ধ মেঘ সহ্য করতে পারে না, সিগারেটের গ*ন্ধে তার শ্বা*সকষ্ট হয়ে যায়। সেখানে আবির সিগারেট খাচ্ছে। এটা যেনো মেঘ মানতেই পারছে না৷ ওষ্ঠদ্বয় উল্টে নিরবে চোখের জল ফেলছে, যাকে সে মিস করছিল, এতক্ষণ তাকে দেখার জন্য উদ্বেগ ছিল তাকে খোঁজে এসে এরকম একটা দৃশ্য দেখবে তা সে কল্পনাও করে নি। অষ্টাদশীর মনটা নির্ম*মভাবে হ*ত্যা করেছে আবির। আবির ভাই অষ্টাদশীর মনে বসন্তের ফুলের মতো আর ফুটবে না । আবিরের প্রতি খুব রা*গ হলো মেঘের। রাগের সাথে কান্নার মাত্রাও বাড়তে লাগলো। ছাদের দরজার পাশে বসেই ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে মেঘ। নিজেকে সান্ত্বনা দেয়ার কোনো ভাষায় খোঁজে পাচ্ছে না সে। আচমকা আবির মেঘের সামনে হাজির হলো। মেঘ তখনও কা*ন্নায় ব্যস্ত৷
আবির গম্ভীর কন্ঠে শুধালো,
"এখানে কি করছিস?"
■■■■■■■■■■■■■■■■■■■■■■■
#Ch.09
আবির ভাইয়ের কন্ঠ শুনে মেঘ ভূ*ত দেখার মতো চমকে উঠল, মেঘের কা*ন্নার তীব্রতা এতোটায় বেড়ে গেছিলো যে ছাদের কর্ণার থেকে আবির শুনতে পেয়ে ছুটে এসেছে।
অতিরিক্ত কা*ন্নায় মেঘের শরীর কাঁ*পছে। জোর করে কা*ন্না থামিয়েছে। এখনও নাক টানছে আর জোরে জোরে শ্বাস ছাড়ছে।
আবির গম্ভীর স্বরে পুনরায় বললো,
"কথা বলছিস না কেন, এত রাতে এখানে কি করিস?"
মেঘ এবার কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে, ছাদের ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে ধীরস্থির কন্ঠে উত্তর দিলো,
"এমনি এসেছিলাম"
আবিরের শরীর ঝুঁকে এলো, মেঘ তখনও ছাদের ফ্লোরেই বসা। চাঁদের আলোতে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছিলো মেঘের অভিব্যক্তি৷ চিবুক নেমেছে গলায়, হাত পা কাঁপছে, ভ*য় আর কা*ন্নার প্রতিক্রি*য়া দুটায় অনুভব করছে। আবির আচমকা মেঘের বাহুতে ধরলো, এক টানে দাঁড় করালো মেঘ কে। মেঘের শরীরের কম্পন তীব্র হলো, হৃদপিণ্ডের ধুপধাপ বেড়ে যাচ্ছে সহসা৷ চোখ তুলে তাকাতেও পারছে না। আবির তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো, রা*গে ক*টমট করতে করতে বলল,
"তুই কাঁদছিলি কেনো?"
মেঘ উত্তর খোঁজে পাচ্ছে না। কিভাবে বলবে, আবির ভাইয়ের সি*গারেট খাওয়া আর অন্য মেয়েকে উদ্দেশ্য করে গান গাওয়াতে তার ভেতর থেকে এমনিতেই কা*ন্না আসছে। মেঘ মাথা নিচু করে চুপ হয়ে রইলো।
আবির দীর্ঘশ্বাস ফেলে কিছুটা স্বাভাবিক কন্ঠে বলল,
"তুই কি সবসময় রাতবিরাতে ছাদে আসিস?"
মেঘ তৎক্ষনাৎ বিদ্যুৎ বেগে কতক্ষণ মাথা নাড়িয়ে না বোধক সম্মতি জানালো, তারপর আস্তে আস্তে বললো,
" এই জীবনে কোনোদিন সন্ধ্যার পর ছাদে উঠি নি আমি"
আবির ভাই উদ্বিগ্ন কন্ঠে শুধালো,
"তাহলে আজ আসলি কেন?"
মেঘ নিস্তব্ধ, নিরব। কিছু বলার সাধ্য নেই বলে দীর্ঘশ্বাস ফেলল ৷ এত রাতে ছাদে আসার কোনো অজু*হাতও খোঁ*জে পেল না। আবির কয়েক পা এগিয়ে মেঘের অনেকটা ঘনিষ্ঠ হয়ে দাঁড়ালো। আবিরকে এত কাছাকাছি দেখে মেঘের নিঃশ্বাস বন্ধ হওয়ার হাল হলো। আবিরের গায়ের গ*ন্ধে মা*তাল হওয়ার অবস্থা। ভ*য়ংকর পরিস্থিতি থেকে নিজেকে বাঁচাতে দু কদম পিছিয়ে গেল মেঘ। কিন্তু পিছনে আর জায়গা নেই দরজার পাশের পিলারে পিঠ ঠেকল, থরথ*র করে কাঁপছে অষ্টাদশীর ছোট দেহ, পায়ের পাতা শিরশির করছে । সরে যেতে চাইলো সামনে থেকে,
আচমকা আবির দুহাতে পিলারের দু পাশ চেপে ধরলো। কিছুটা ঝুঁকে মেঘের মুখোমুখি হলো। আবিরের উষ্ণ শ্বাস, তীব্র দৃষ্টি মেঘকে নাজেহাল করে দিচ্ছে। মা*নসিক টানাপো*ড়নে পরে গেল মেঘ ৷ বুকের ভেতর কেউ অবিরাম নৃত্য করছে যার শব্দ বাহির থেকে শুনা যাচ্ছে। শরীর ঘামতে শুরু করেছে।
আবির ভাই হঠাৎ ই শীতল কণ্ঠে বললেন,
"এতবছর তো খুব পা*লায় বেড়াইছিস! এখন দেখবো কতটা পা*লাতে পারিস।"
আবিরের ঠান্ডা হুম*কিতে কেঁপে উঠল, এই কথা শুনামাত্র মেঘের শরীরে হাই ভোল্টেজের ঝাঁকুনি দিল। মেঘের বক্ষস্পন্দন জোড়ালো হতে শুরু করেছে। আবির সরু নেত্রে অষ্টাদশীর পানে তাকিয়ে আছে। মেঘের টাল*মাটাল অবস্থা বুঝতে পেরে সামনে থেকে সরে গেল৷ আবির শক্ত কন্ঠে ফের বলল,
"রুমে যা"
আবির সরে যাওয়াতে স্বস্তি পেল মেঘ, বার বার দীর্ঘশ্বাস ফেলতে শুরু করল। কয়েক মুহুর্ত পর সিঁড়ির দিকে নামতে গেলো, গুটগুটে অন্ধকার সিঁড়ি। পিছন ফিরে তাকিয়ে বুকে সা*হস নিয়ে ডাকল,
"আবির ভাই"
আবির উল্টো দিকে ফিরে ছিল, ডাক শুনে ঘুরে বলল,
"হুমমমমম"
মেঘ ভয়ে ভয়ে বলল ,
"আমাকে একটু রুম পর্যন্ত দিয়ে আসবেন! প্লিজ"
আবির বিস্মিত কন্ঠে বলল,
"কেনো? হাঁটতে পারছিস না?
মেঘ মাথা নিচু করে আস্তেধীরে বলল,
"ভয় লাগছে!"
"কেন?"
"তাঁনারা যদি আমাকে ধরে ফেলেন! "
আবির কয়েক সেকেন্ড থেমে, স্ব শব্দে হেসে উঠলো।
আবির মেঘের কথায় হাসছে ভাবতেই মনে মনে খুশি লাগছে মেঘের৷ আবিরের হাসির শব্দে মেঘ অবাক চোখে তাকালো। ততক্ষণে আবিরের হাসি গায়েব৷ আবির অকস্মাৎ ঠাট্টার স্বরে শুধালো,
"তা তুই ছাদে আসার সময় কি তাঁনারা বেড়াতে গিয়েছিলো?"
আবিরের এমন কথায় মেঘ আহাম্মকের মতো তাকিয়ে আছে। আবির সহসা বলে উঠলো,
" তুই যা আমি পিছনে আছি"
মেঘ আর কিছু বলার সাহস পেল না। দুটা সিঁড়ি নেমে হঠাৎ কিছু ভেবে থমকে দাঁড়ালো। আবির নিরুদ্বেগ কন্ঠে শুধালো,
"আবার কি হলো?"
মেঘ দুবার জোরে জোরে শ্বাস ছাড়লো, মনে তীব্র সাহস নিয়ে পেছন ফিরে তাকালো। আবির ছাদের দরজার পাশে দাঁড়ানো, ৬ ফুট লম্বা তারউপর মেঘ বেশ কয়েকটা সিঁড়ি নেমে গেছে। এখান থেকে আবিরের লম্বা শরীরটা চাঁদের আলোয় সুপারি গাছের মতো মনে হচ্ছে । মেঘ উদ্বিগ্ন কন্ঠে প্রশ্ন করলো,
"আবির ভাই, আপনি সিগা*রেট খান কেনো?"
মেঘের কথায় আবির যেন ছোটোখাটো টাশকি খেল।মুহুর্তেই গম্ভীর কন্ঠে বললো,
"তার জবাবদিহি কি তোকে দিতে হবে?"
মেঘ এবার কোমল কন্ঠে বললো,
"সিগারে*ট স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষ*তিকর, আর আমি.."
এটুকু বলেই থেমে গেল। আবির কন্ঠ দ্বিগুণ ভারি করে বলল,
"আর তুই কি?"
মেঘ ভ*য়ে ভ*য়ে বলল,
"কিছু না"
মেঘ আর থামলো না, সিঁড়ি দিয়ে নামতে ব্যস্ত হলো।
মেঘ করিডোরে হাঁটছে, আবির পেছনে মোবাইলের ফ্ল্যাশ জ্বা*লিয়ে সিঁড়ি নিচ পর্যন্ত নামলো।
মেঘ পেছন ফিরে আবিরকে দেখার সাহস পাচ্ছে না। নিজের রুমের দরজা পর্যন্ত এসে রুমে ঢুকার সময় এক পলক তাকালো। আবিরের মনোযোগ মোবা*ইলে। মেঘ রুমে চলে গেলো।
★★★★
আবিরের আরও একটি রাত কাটলো নির্ঘুম, নিস্তব্ধ। প্রত্যেক সপ্তাহে ছুটির দিনের আগে সারারাত জেগে থাকে, এটা তার বহু বছরের অভ্যাস। বিদেশে থাকাকালীনও তাই করতো। দেশে এসে প্রতি বৃহস্পতিবার রাত নিজের মতো একাকী কা*টায়৷ নিজেকে নিয়ে ভাবে, নিজের স্বপ্ন, ইচ্ছে, ভালোবাসা, প্রিয়জন সবকিছু নিয়েই ভাবে।
মেঘ নিজের রুমে শুয়ে ছাদের বিষয়গুলো ভাবছে, আবিরের এত কাছে আসা, আবির ভাইয়ের বলা সেই কথাগুলো মাথায় ঘুরছে। এসব ভেবে কখন ঘুমিয়েছে নিজেও জানে না। সকাল সকাল খাবার টেবিলে খাবার খাচ্ছে সবাই, শুক্রবার বলে ভালোমন্দ রান্না হয়েছে। মেঘের মনটা আজ খুব ভালো। কেনো ভালো নিজেও জানে না তবে আবিরের প্রতি ভ*য় কিছুটা শিথিল হয়েছে। খাবার টেবিলে আবির নেই দেখে মন কিছুটা খারাপ হয়েছে কিন্তু তেমন পাত্তা দেয় নি। নিজের মতো খেয়ে পড়তে বসেছে। প্রতি শুক্রবারে প্রাইভেটে ১ ঘন্টার পরীক্ষা থাকে। ১ সপ্তাহে যা পড়ায় তার উপরই পরীক্ষা থাকে, আজও ৩ টা থেকে ৪ টা পর্যন্ত পরীক্ষা।
অন্যদিকে তানভির রাজনীতি নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরেছে৷ সামনে এমপি নির্বাচন, তাদের প্রিয় নেতা মনোনয়ন কিনেছেন। সবাই মিটিং মিছিলে ব্যস্ত। জনসমর্থন যাচাই করে মনোনয়ন দেয়া হবে। তানভিরদের এখন সব এলাকায় যেতে হচ্ছে, জনগণের সুবিধা অসুবিধা শুনছে, লিস্ট করছে। এমপি নির্বাচনের কয়েকমাস পরেই হবে সভাপতি নির্বাচন। তানভিরের টার্গেট সভাপতি হওয়া তাই তাকে আরও বেশি এক্টিভ থাকতে হচ্ছে।
★★★
২.৩০ টা নাগাদ মেঘ পরীক্ষা দিতে বেড়িয়েছে। আজ একটু আগেই চলে এসেছে। পরীক্ষা শুরু হতে এখনও ১০ মিনিট বাকি। তাই বন্যা আর মেঘ গল্প করছে৷
বন্যা: কিরে তোর হি*টলার ভাইয়ের কি খবর ? কিছু তো আর বললি না, ছবি দেখাবি বলছিলি তাও দেখালি না। সত্যি সত্যি মন থেকে বের করে দিয়েছিস?
মেঘ: মুখে যা বলি তার সবটায় কি পারি?
এত চেষ্টা করেও তো পারলাম না মন থেকে তাড়াতে৷ গতরাতে থাকতে না পেরে গিয়েছিলাম ওনাকে দেখতে৷ কি যে একটা বাঁশ খেয়েছি!
বন্যা: কেন, কি হয়ছে?
মেঘ: কি আর হবে লুকিয়ে দেখতে গিয়েছিলাম, আবির ভাইয়ের কাছে ধরা পরে গেছি।
বন্যা: ব্যাটার চোখ আছে! ভালো হয়েছে। গেলি কেন তুই?
মেঘ মনে মনে ভাবছে,
" এখন যদি বন্যাকে বলি আবির ভাইয়ের জন্য কা*ন্না করেছি তাহলে বন্যা আমায় এখানেই বালি চা*পা দিয়ে দিবে।"
বন্যা আর মেঘ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ভার্সিটিতে ভর্তির আগ পর্যন্ত কোনো প্রকার প্রেম, বন্ধুত্ব, ক্রাশ কিছুই খাওয়া যাবে না। এজন্য কোচিং এ নতুন কারো সাথে কথায় বলে না৷ মেঘ আগে আসলে বন্যার জন্য সিট রাখে, বন্যা আগে আসলে মেঘের জন্য সিট রাখে। বিষয়টা অনেকটা হাইস্কুল জীবনের মতো। এত কিছুর পরও মেঘ আবির ভাইয়ের উপর ক্রাশ খেয়ে ফেলেছে । এরজন্য বন্যা অবশ্য প্রতিনিয়ত ই মেঘকে বুঝাচ্ছে। এতক্ষণে স্যার চলে আসছেন, যথারীতি পরীক্ষাও শুরু হলো।
৪ টায় পরীক্ষা শেষ করে দুই বান্ধবী হাতে হাত ধরে বের হয়েছে। আশেপাশে মেঘদের গাড়ি নেই৷ তাই রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে ড্রাইভার আংকেল কে ফোন দিবে ভাবলো। হঠাৎ বাইক নিয়ে আবির হাজির হলো,
হেলমেট পরা, সাদা শার্ট, কালো প্যান্ট,কালো সু, হাতে কালো ফিতার ঘড়ি, শার্টের বোতামের ফাঁকে সানগ্লাস ঝুলানো। মেঘের দিকে তাকিয়ে উচ্চস্বরে ডাকল,
"মেঘ"
মেঘ আর বন্যা দুজনেই ডাক শুনে সেদিকে তাকিয়েছে৷ মেঘ এক পলক তাকাতেই চিনতে পারলো। আবিরকে এভাবে দেখে আবারও নতুন করে ক্রাশ খেয়েছে। মেঘ মনে মনে ভাবছে,
" ওনি এখানে কেনো? ওনি কি আমায় নিতে এসেছেন? কই সেদিন তো মীম আর আদিকে ধমকে বললেন, কাউকে বাইকে উঠাবে না, তারমানে আমাকেও নিশ্চয় উঠাবেন না! না উঠাক, ওনার বাইকে উঠতে আমার বয়েই গেছে! কিন্তু ওনি আসলো কেনো, আল্লাহ জানেন কোন পাপের শাস্তি দিতে এখানে এসেছেন। আল্লাহ বাঁচাও!"
এসব হাবিজাবি ভাবনায় ব্যস্ত মেঘ৷ এদিকে বন্যা মেঘের হাত ঝাপটে ধরে আছে। আবির মেঘের দিকে খানিকক্ষণ সুস্থির বনে তাকিয়ে আছে, হয়তো মেঘের অভিব্যক্তি বুঝার চেষ্টা করছিলো। এবার হেলমেট খুলে মেঘের দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে বলল,
'উঠ'
মেঘ অজানা ঘোরে আঁটকে আছে, আনমনে হাবিজাবি ভাবনায় ব্যস্ত৷ আবিরের কথা কানেই গেল না৷ বন্যাও মনেযোগ দিয়ে ছেলেটাকে দেখছে, আগে কখনোই এই ছেলেকে দেখে নি। বন্যা তানভিরকে অনেকবার দেখেছে কিন্তু আবিরকে ঠিকমতো চিনে না৷ বন্যা মনে মনে আওড়ালো,
"এই ছেলে কে? মেঘকে বাইকে উঠতে বলছে কেনো?"
বন্যা মেঘে হাতটা আরও শক্ত করে ধরে আছে। আবির এবার ধ*মকে উঠল,
"এই মেঘ, উঠতে বললাম তো!"
মেঘ এবার চমকে উঠে। গোল গোল চোখে তাকায়, পরপর দুবার জোরে শ্বাস নিয়ে নিজেকে কিছুটা স্বাভাবিক করে৷ তারপর বন্যার দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করল,
"ওনি আবির ভাই"
তৎক্ষনাৎ বন্যা মেঘের হাত ছেড়ে দিল, হয়তো আবিরের রাগী চোখ মুখ দেখে কিছুটা ভয়ও পেয়েছে। মেঘ কয়েকপা এগিয়ে আবিরের কাছাকাছি এসে দাঁড়িয়েছে। ততক্ষণে আবির বাইক থেকে নেমে গেছে।
আবির মেঘের দিকো স্পষ্ট চোখে তাকিয়ে উদ্বিগ্ন কন্ঠে শুধালো,
"এই, তুই কি কিছু খাস?"
মেঘ কপাল কুঁচকে বললো,
"মানে? কি খাবো?"
"কোন দুনিয়ায় থাকিস তুই? ডাকলে শুনিস না"
মেঘ চুপচাপ মাথা নিচু করে রইলো। আবির আবারও বলল,
" বাইকে উঠ।"
আবির মেঘকে বাইকে উঠতে বলছে, এটাও সম্ভব? মেঘ নিজের কানতে বিশ্বাস করতে পারছে না। মেঘের হেলদোল নেই দেখে আবির বাইক থেকে হেলমেট নিয়ে নিজেই মেঘকে পরিয়ে দিল। তারপর পুনরায় বাইকে বসে গুরুগম্ভীর কন্ঠে বলল,
"তুই কি উঠবি?"
এতকিছু না ভেবে মেঘ হাসিমুখে বাইকে উঠে বসল। আবিরের গায়ের সাথে গা লাগতেই কেঁপে উঠল কিছুটা। মেঘ কাঁধে হাত রাখবে নাকি রাখবে না তা নিয়ে দুটানায় আছে। এমনিতেই জীবনে প্রথম বাইকে উঠছে তারউপর আবার আবির ভাইয়ের বাইকে । আবির মেঘের মনের অস্থিরতা বুঝে শীতল কন্ঠে বলল,
"ধরে বস না হয় পরে যাবি"
মেঘ কাঁপাকাঁপা হাতে আবিরের কাঁধে হাত রাখলো। সঙ্গে সঙ্গে মেঘের হৃৎস্পন্দনের মাত্রা বাড়তে লাগলো।
এদিকে বন্যা নির্বাক চোখে তাকিয়ে দেখছে আর ভাবছে,
"মেঘের বর্ণনায় কোনো ভুল ছিল না, আবির ভাইয়া সত্যি ই অসাধারণ। যেকোনো মেয়েই এক দেখাতে ক্রাশ খাবে।"
কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে আবির বাইক স্টার্ট দিল, মনের ভ*য়ে মেঘ আবিরের কাঁধে জোড়ে চেপে ধরল। মেঘের কান দিয়ে শা শা করে মৃদু বাতাস ঢুকছে, প্রথমবার বাইকে উঠার অনুভূতি অসাধারণ। মেঘ নিভু নিভু চোখে চারপাশ দেখার চেষ্টা করছে। বেশকিছুক্ষণ পর তারা পৌঁছে গেল, "বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সে"
আবির মেঘকে শপিং এ নিয়ে আসছে ভাবতেই মেঘ আনন্দে আত্মহারা হয়ে যাচ্ছে। এত খুশি রাখার জায়গা পাচ্ছে না।
আবির মেঘকে নিয়ে একটা হিজাবের দোকানে গেল, রেগুলার পড়ার জন্য হিজাব চাইতেই দোকানদার জর্জেট হিজাবের বক্স বের করে দিলো। মেঘের বুঝতে বাকি নেই, রবিবারে বলেছিল হিজাব পড়ে যেতে কিন্তু মেঘ ওড়না মাথায় দিয়ে যাচ্ছিলো। কি করবে সে? মা আর বড় মা ছাড়া মেঘ একা শপিং এ যায় নি কখনো। বড় আম্মুরাও এখন শপিং করবেন না। তাই মেঘ ভেবেছিলো কিছুদিন ওড়না মাথায় দিয়ে যাবে তারপর ওনারা শপিং এ গেলে হিজাব নিয়ে নিবে। মেঘ বক্স থেকে বেছে বেছে ৩ টা আলাদা করেছে৷ তারপর আবিরকে দেখিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
"এই তিনটা নিব?"
আবির মেঘের প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে দোকানদার কে জিজ্ঞেস করল,
"এগুলোর মধ্যে কয়টা কালার আছে আপনার কাছে?"
দোকানদার বললেন,
"ভাইয়া আপাতত ২৪ টা আছে, আপনি চাইলে আরও দিতে পারবো তবে কিছুদিন পরে নিতে হবে!"
আবির স্বাভাবিক কন্ঠে বলল,
"সবচেয়ে বড় সাইজের ২৪ টা কালারের ই হিজাব দেন।"
আবিরের কথা শুনে মেঘ তড়িৎ বেগে তাকাল। তৎক্ষনাৎ চোখ নামিয়ে শক্ত গলায় বলল,
"এতগুলো লাগবে না, ৩ টা হলেই হবে।"
আবির তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে মেঘের দিকে তাকিয়েছে, রাগে কটমট করে বলল,
"তোকে কিছু জিজ্ঞেস করেছি আমি?"
আবিরের রাগী চোখ দেখে ভ*য়ে সিটিয়ে পরলো মেঘ। আর কিছু বলার সাহসই পেল না। কিন্তু ভেতরে ভেতরে ক্রোধে ফুঁসছে । যেখানে তার কোচিং সপ্তাহে ৩-৪ দিন, ২-৩ টা হিজাব হলেই হয়ে যায় সেখানে ২৪ টা হিজাব নেয়ার কোনো মানেই হয় না। কিন্তু এই কথা কিভাবে বুঝাবে হিট*লারকে।
আবির নিজে পছন্দ করে আরও কয়েকটা পার্টি হিজাবও নিল। মেঘ মাথানিচু করে মনে মনে শুধু আবিরকে ব*কেই গেল। আবির শপিং ব্যাগ গুলো হাতে নিয়ে মেঘকে বলল,
"চল"
মেঘ মুখের উপর জিজ্ঞেস করে ফেলল,
" কোথায়?"
আবির রাগান্বিত কন্ঠে ফের বলল,
"কোথায় যাবো না যাবো কি তোরে বলে যেতে হবে?"
মেঘের নিজের মাথায় নিজের গাট্টা দিতে মন চাচ্ছে। আম্মু, বড় আম্মুকে আর বন্যাকে কথার পাল্টা ঝটপট প্রশ্ন করে অভ্যস্ত মেঘ। তাই আবিরকেও তেমনি জিজ্ঞেস করে ফেলেছে৷ আবিরের পেছন পেছন একটা জুয়েলার্সের দোকানে ঢুকলো মেঘ। আবির ঢুকেই একজনকে জিজ্ঞেস করলেন,
"আজকে কি নেয়া যাবে?"
লোকটা হাসিমুখে উত্তর দিলেন,
" জ্বি ভাইয়া, দু মিনিট বসুন আমি বের করে দিচ্ছি। "
২ মিনিটের মধ্যেই লোকটা পুনরায় প্রশ্ন করলেন, "ভাইয়া প্যাকিং করে দিবো?"
আবির তৎক্ষনাৎ জবাব দিল,
"প্যাকিং লাগবে না, রেডি হলে আমাকে দেন।"
লোকটা ১ জোড়া নুপুর আবিরের দিকে এগিয়ে দিল।
মেঘ উৎসুক জনতার ন্যায় নুপুর ২টা দেখছে, অনেক মোটা আর খুব সুন্দর ডিজাইনের ২ টা নুপুর। আবিরের আকস্মিক কর্মকাণ্ড দেখে মেঘ কারেন্টের খাম্বার ন্যায় স্তব্ধ হয়ে গেছে। আবিরের এক হাঁটু ফ্লোরে আরেকটা পা স্বাভাবিক রেখে নিচে বসেছে। যেভাবে প্রপোজ করে অনেকটা সেভাবে। সহসা মেঘের এক পা নিজের হাঁটুর উপর রেখে একটা নুপুর পরিয়ে দিল।
এদিকে মেঘের নিঃশ্বাস বন্ধ হওয়ার অবস্থা, হৃদপিণ্ডের কম্পনের তীব্রতা বুঝতে পেরে মনে হচ্ছে এই যাত্রাই আর বাঁচবে না। আবিরকে না করার শক্তিটুকুও পাচ্ছে না। মেঘ খাম্বার মতোই স্থির, যা হওয়ার তা শরীরের ভিতরে হচ্ছে, র*ক্ত সঞ্চালনের মাত্রা বাড়ছে, মনে হচ্ছে এই বুঝি প্রেশার বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে যাবে।
দু পায়ে নুপুর পরিয়ে আবির চেয়ারে বসলো। মেঘের দিকে তাকিয়ে শান্ত কন্ঠে বলল,
"দেখ, কেমন লাগছে "
মেঘ তখনও নিষ্পলক চোখে আবিরের দিকে তাকিয়ে আছে। আবির রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
"তোকে নুপুর দেখতে বলেছি, আমাকে না! "
আবিরের কথায় দোকানদার জোরে হাসি শুরু করেছে৷ ততক্ষণে মেঘ স্বাভাবিক হলো, পরিস্থিতি বুঝতে পেরে তাড়াতাড়ি পায়ের দিকে তাকালো।
সত্যিই অনেক সুন্দর লাগছে, মেঘের ফর্সা পায়ে নুপুরগুলো দেখতে অন্যরকম লাগছে। মেঘ খুশিতে গদগদ হয়ে বলল,
"অনেক ধন্যবাদ, আবির ভাই"
আবির দোকানের বিল পরিশোধ করে মেঘকে নিয়ে কাছাকাছি একটা রেস্টুরেন্টে গেল। মেঘের বার বার মনে হচ্ছে, এইসব কিছু স্বপ্ন, একটু পর ঘুম ভাঙবে আর সব শেষ হয়ে যাবে। রেস্টুরেন্টে বসে আবির মেঘের দিকে ম্যানু কার্ড এগিয়ে দিয়ে ধীর কন্ঠে বলল,
"তোর যা খেতে ইচ্ছে করে অর্ডার দে।"
মেঘ নিজের পছন্দ মতো কাচ্চি সাথে বোরহানির কথা বললো৷ আবির ওয়েটারকে ডেকে ২ টা কাচ্চি দিতে বলল, সাথে ২ গ্লাস বোরহানি। মেঘ উত্তেজিত কন্ঠে জিজ্ঞেস করল,
"আবির ভাই, আপনার কি কাচ্চি পছন্দ? "
আবির বেশ বিরক্ত হয়ে বললো,
"আমার পছন্দ অপছন্দ জেনে তোর কাজ নেই৷ "
সহসা মেঘের মুখটা চুপসে গেছে। খাবার আসায় দুজন চুপচাপ খাবার খেল। মেঘ অবশ্য খেতে খেতে কয়েকবার চোখ তুলে আবিরকে দেখছিলো কিন্তু আবিরের সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই৷ সব কাজ শেষে আবির বাইকে উঠতে যাবে এমন সময় মেঘ আবিরকে ডাকল,
"আবির ভাই"
"হুমমম"
"না, কিছু না!"
আবির এবার সত্যি সত্যি রেগে গেল। কন্ঠ তিনগুন ভারি হলো, রাগান্বিত স্বরে বলতে শুরু করল,
"তোকে হিজাব আর নুপুর দিয়েছি বলে খুশিতে বেশি লাফাইস না! মাথায় ওড়না দিয়ে বউয়ের মতো চলাফেরা যাতে না করতে পারিস সেজন্য হিজাব দিয়েছি। আর তুই সারাক্ষণ টুইটুই করে কোথায় কোথায় ঘুরিস সেসব জানতে নুপুর দিয়েছি।"
আবিরের এমন কথা শুনে মেঘ আহাম্মক বনে গেল। মনে মনে কি না কি ভাবছিলো সে। আবির ভালোবেসে গিফট দিচ্ছে, আহা কি সুন্দর অনুভূতি হচ্ছিলো সবকিছু মুহুর্তেই বিলীন হয়ে গেছে। অষ্টাদশীর মনের ভেতর নবজাগ্রত অনুভূতিতে আবির সযত্নে এক বালতি পানি ঢেলে দিল। আবির কন্ঠ খাদে নামিয়ে বলল,
"উঠ"
মেঘ ভ*য়ে ভ*য়ে চুপচাপ উঠে বসল, তবে মনে মনে ঠিক করল,
"এবার আর আবিরকে ধরে বসবে না। "
আবিরের ধম*কে মেঘের ভাবনার সুতা ছিঁড়লো। আবির রাগান্বিত কন্ঠে বলল,
"এক কথা তোকে কতবার বলতে হয় মেঘ? ধরে বস না হয় তোকে রাস্তায় ফেলে চলে যাব।"
ধমক খেয়ে মেঘের ছোট দেহ কম্পিত হয়, সহসা শক্ত হাতে আবিরের কাঁধ চেপে ধরে । আবির আর কিছুই বলল না, বাসার সামনে পর্যন্ত আসলো কিন্তু কেউ কোনো কথা বলল না। আবির বাসার সামনে বাইক থামিয়ে স্বাভাবিক কন্ঠে বলল,
"বাসায় যা"
মেঘ বাইক থেকে নেমে, আবিরের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
"আপনি যাবেন না?"
"না"
"কোথায় যাবেন?"
আবির বিরক্তি নিয়ে বললেন,
"তুই কে যে তোকে আমার সবকিছু বলে যেতে হবে? আর একবার আমার মুখের উপর প্রশ্ন করবি সঙ্গে সঙ্গে থা*প্পড় দিব!"
মেঘের মুখটা চুপসে গেছে, চিবুক নামিয়েছে গলায়, পাতলা ওষ্ঠে বিড়বিড় করে বললো,
"হিট*লার একটা। "
আবিরের তৎক্ষনাৎ জবাব এলো,
"আমি হি*টলার হলে তুই কি?"
"আবির শুনে ফেলছে?"
ভেবেই আঁতকে উঠলো মেঘ, আবিরের দিকে দ্বিতীয়বার তাকানোর সাহস হলো না। আবিরের থা*প্পড়ের ভয়ে ছুটে পালালো বাড়ির ভিতর। আবির নিষ্পলক চোখে অষ্টাদশীর পায়ের দিকে তাকিয়ে আছে, নুপুরের ঝনঝন শব্দ কানে লাগছে৷ আচমকা আবিরের ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসির ঝলক দেখা গেল।
■■■■■■■■■■■■■■■■■■■■■■■
#Ch.10
মেঘ এক ছুটে বাড়ির ভেতরে ঢুকলো। সোফায় বসে গল্প করছিলো মালিহা খান, হালিমা খান আর আকলিমা খান।
মেঘকে ছুটতে দেখে দৃষ্টি পরলো সেদিকে।
আকলিমা খান ডেকে বললেন,
"মেঘ কি হয়ছে তোর, এভাবে ছুটছিস কেনো?"
মেঘ সিঁড়ির নিচে এসে থামলো, হাঁপাচ্ছে মেয়েটা, জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিচ্ছে আর বার বার দরজার দিকে তাকাচ্ছে। আবির ভাই বলেছে কোথায় যাবে তারপরও যদি কোনো কারণে বাসায় চলে আসে, এই আশংকায় বার বার তাকাচ্ছে মেঘ।
হালিমা খান সূক্ষ্ম নজরে মেঘের পায়ের দিয়ে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,
"তুই নুপুর পেলি কোথায়?"
মেঘ এবার দরজার দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে মা কাকিয়ার দিকে তাকালো, অকস্মাৎ বলে উঠলো,
"আবির ভাই দিয়েছে! "
হালিমা খান, মালিহা খান আর আকলিমা খান তিনজন অবাক হয়ে চোখাচোখি করলো কিছুক্ষণ,
মালিহা খান পুনরায় জিজ্ঞেস করলেন,
"আবির তোকে নুপুর দিয়েছে মা?"
মেঘ এবার স্পষ্ট দৃষ্টিতে তাকালো, একটু রাগী রাগী ভাব নিয়ে বললো,
"আবির ভাই ই দিয়েছে বড় আম্মু! তোমার ছেলে না দিলে কি তোমার ছেলের কথা বলতাম আমি?"
হালিমা খান কয়েক মুহুর্ত নিরব থেকে আবার বললেন,
তোর মনে আছে মেঘ, "আবির বিদেশ যাওয়ার ৬ মাস আগে, তোর নুপুর গুলো তোর থেকে আমি নিয়ে নিছিলাম! "
মেঘ কিছুক্ষণ ভাবলো তারপর বললো,
"হ্যাঁ আম্মু মনে পরছে, ঐ নুপুর গুলো কোথায়?"
হালিমা খান সহসা উত্তর দিলেন,
"ঐগুলো তো আমার কাছেই আছে। কিন্তু সেদিন নুপুর গুলো আমি নিজের ইচ্ছে তে নেই নি। আবির ই বলেছিলো নিতে৷"
মেঘ চমকে উঠলো মায়ের কথায়, ছুটে এসে বসলো সোফায়,
"কি হয়ছিলো বলো আম্মু, কেনো নিয়েছিলে?"
হালিমা খান একটু ভেবে চিন্তে বললেন,
"তেমন কিছু না, আবির আমার কাছে এসে বলেছিলো, তোর পায়ের নুপুরের শব্দ নাকি ওর মাথায় ধরে, ঘুমাইলে তুই দৌড়াদৌড়ি করিস,ঝনঝন করলে ওর মাথা ব্যথা করে,পড়তে পারে না। তাই বলছিলো নুপুর খুলে রেখে দিতে৷
তাই আমিও আবিরের কথামতো তোর থেকে নুপুর নিয়ে নিছিলাম৷ এরপর তুই ও আর কখনো চাস নি, আমিও আর তোকে দেয় নি । ২-১ বছর পর মনে হয়ছিলো আমার কিন্তু বের করে দেখি এগুলো তোর লাগবে না। এজন্য তোর আব্বুকে বলে রাখছিলাম, তুই চাইলে তোকে যেনো নুপুর বানিয়ে দেয়, তখন তো আবির ছিল না।।
এজন্যই আজকে তোর পায়ে নুপুর দেখে আমরা অবাক হচ্ছিলাম। "
মেঘ ভাবনায় পরে গেলো,
"ছোটবেলায় আবির ভাই নুপুর খুলতে বললে এখন ওনি নিজের হাতে কেনো পরিয়ে দিলেন, এখন কি ওনার মাথা ব্যথা ভালো হয়ে গেছে? তৎক্ষনাৎ মনে হলো আবির ভাইয়ের কথা, তাহলে কি সত্যি আমার চালচলন পর্যবেক্ষণ করতেই নুপুর গুলো দিয়েছেন নাকি ছোটবেলার কথা ভেবে মনটা নরম হয়েছে ওনার।"
আকলিমা খান হাসিমুখে বলে উঠলেন,
"ঐসব বাদ দে৷ শপিং ব্যাগে কি রে মেঘ?"
মেঘ কাকিয়ার কথায় স্বাভাবিক হয়ে বললো,
"হিজাব"
কেউ আর কিছু বললো না, তারা তাদের আড্ডায় মনোযোগ দিলো
মেঘ ও শপিং ব্যাগ নিয়ে সিঁড়ি তে উঠায় ব্যস্ত হলো..
রাতে আর আবিরের সাথে মেঘের দেখা হয় নি।
★★★★
প্রতিদিনের মতো আজকেও সকাল ৮ টায় অফিসের জন্য রেডি হয়ে খেতে বসেছে আবির,মেঘ ইচ্ছে করেই আজ সেজেগুজে খেতে নামবে ভাবলো, চুল ছাড়ায় সেগুলো কোমড় ছাড়িয়ে পরেছে , মাথায় পিচ্চি বাচ্চার মতো একটা পুতুলের বেল ও দিয়েছে, কালো জামা পরেছে সাথে ম্যাচিং কালো ওড়না, ওষ্ঠদ্বয়ে হালকা গোলাপি রঞ্জকও লাগিয়েছে,
সিঁড়ি দিয়ে নামছে, আবির এক পলক তাকাতেই স্তব্ধ হয়ে রইলো, মেয়েটা এমনিতেই অনেক ফর্সা,তারমধ্যে কালো জামা পরাতে অসম্ভব সুন্দর লাগছে, সাথে চুল গুলো ছাড়া থাকাতে মায়াবন বিহারির মতো লাগছে অষ্টাদশীকে।।
আবির চোখ সরাতে পারছে না,অবিচলিত আঁখিতে তাকিয়ে আছে অষ্টাদশীর পানে,
হঠাৎ তানভির ডেকে উঠলো,
"ভাইয়া তুমি কি আজ ফ্রী আছো?"
মনোযোগ নষ্ট হলো আবিরের, মেঘের দিক থেকে চোখ নামালো, তানভিরের দিকে না তাকিয়েই বললো,
"কেনো?"
"আজকে আমাদের হবু এমপির জন্মদিন, ওনি তোমার কথা বলছিলেন, তুমি দেশে আছো জেনে খুব করে বললেন তুমি যেতে।। "
আবিরের স্বাভাবিক জবাব,
"কখন যেতে হবে?"
তানভির: ৬ টায়
আবির: আচ্ছা ঠিক আছে।
মেঘ এতক্ষণে টেবিলের কাছে চলে এসেছে, তিন কর্তায় যেনো ঘাড় ফিরিয়ে তাকালো৷
সকলেই এক নজর পায়ের দিকে তাকালো কিন্তু কেউ তেমন কথা বললো না।
অবশ্য কথা বলারও কিছু নেই। মেয়েদের সাজুগুজুতে বাবা, চাচারা নাক গলায় না সচরাচর, বরং তারা চায় বাড়ির মেয়েরা সবসময় হাসিখুশি থাকুক।
মেঘ চেয়ার টেনে বসলো আবির ভাইয়ের বিপরীতে, এক পলক তাকালো, আবির ভাইও আজ কালো শার্ট পরেছে৷ আবির ভাই সবসময় সাদা অথবা কালো শার্ট ই পড়েন। হঠাৎ কফি কালার বা আসমানি বা হালকা কোনো কালার পড়েন। শুধু পাঞ্জাবির ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম দেখা যায়৷
ড্রেস মিলে যাওয়াতে মেঘের মাথা নিচু করে মুচকি হাসলো।।
ইকবাল খান তানভিরের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,
"তোদের হবু এমপি আবিরকে কিভাবে চিনে?"
তানভিরের সহজ সরল উত্তর,
আমি একটা প্ল্যান দিয়েছিলাম ওনাকে, প্ল্যান কার্যকর হওয়ায় খুশি হয়ে হবু এমপি বলছিলেন,
"তোমার মাথায় এত প্ল্যান আসে কিভাবে? "
আমি তখন বলেছি,
" আমায় বেশিরভাগ প্ল্যান ভাইয়া দেন। আমি ভাইয়াকে প্রবলেম শেয়ার করি তারপর ভাইয়া আমায় প্ল্যান দেয়৷ '
তখনই এমপি বলছিলেন তাহলে তোমার ভাইয়াকে নিয়ে আইসো। তখন ভাইয়া বাহিরে ছিলেন।
আজ ওনার জন্মদিন তাই সকাল বেলা ওনি নিজে আমায় কল করে জিজ্ঞেস করলেন ভাইয়া আসছে কি না, আমি হ্যাঁ বলাতে ওনি নিজেই বার বার বললেন ভাইয়াকে নিয়ে যেতে৷ "
ইকবালের খানের সাথে মোজাম্মেল খান এবং আলী আহমদ খান ও যেনো মনোযোগ দিয়ে তানভিরের কথা গুলো শুনছিলো। মোজাম্মেল খান সবসময় ই চুপচাপ থাকেন৷ যা সিদ্ধান্ত সকল কিছু বড় ভাইয়ের৷
তানভিরের এসব কথা শুনে আলী আহমদ খান রাগে ফুঁসছেন, রাগান্বিত স্বরে বললেন,
"আবির, আমি কিন্তু তোমায় আগেই সাবধান করেছি! রাজনীতিতে তুমি জরাবে না। "
আবির নিরুদ্বেগ কন্ঠে উত্তর দিলো,
"আমি তো বলেছি রাজনীতি করবো না!"
"তাহলে তানভির কে রাজনীতি নিয়ে প্ল্যান দাও কেন, রাজনীতি নিয়ে মাথা ঘামাও কেন, আর এমপির জন্মদিনে যেতে এক কথায় রাজি হলে কেনো?
এই বুদ্ধি, প্ল্যান ব্যবসায় লাগালে আমাদের ব্যবসাটা আরও এগুতো৷ "
গম্ভীর কন্ঠে একটানা কথাগুলো বললেন, আলী আহমদ খান।
মেঘ, মীম আর আদি চুপচাপ খাচ্ছে। বাবা, চাচার কথায় কোনো মনোযোগ নেই তাদের। মেঘ খাচ্ছে আর মিটিমিটি হাসছে, আবার একটু পর পর আবির ভাইয়ের দিকে পিটপিট করে তাকাচ্ছে।
আলি আহমদ খানের কথায় আবির খাবার প্লেট থেকে চোখ তুলে তাকালো, রাশভারী কন্ঠে বলা শুরু করলো,
""তোমাদের কয়েকবছর যাবৎ একটায় সমস্যা , তানভির কেনো রা*জনীতি করে, মেইন কথা তোমরা রা*জনীতি পছন্দ করো না৷ কিন্তু আমি মন থেকে চাই তানভির রা*জনীতি করুক এবং সেটা মাঝপথে ছাড়ার জন্য না৷ সভাপতি, এ*মপি,ম*ন্ত্রী পদে পদে নিজের সাফল্য বয়ে আনুক এবং আমার বিশ্বাস আমার ভাই সফল হবে, ইনশাআল্লাহ।
কয়েক সেকেন্ড থেমে আবার বলা শুরু করলো,
প্রতিটা বিষয় আমরা নিজেরা যখন ভাবি তখন একতরফা ভাবি, মনে হয় আমি যা ভাবছি সেটায় ঠিক, এটা করলেই পারফেক্ট হবে। কিন্তু সব দিক থেকে সেটা পারফেক্ট নাও হতে পারে৷ তাই তানভির পরিস্থিতি বুঝে নিজে যা ভাবে সেটা আমায় জানায় যদি ভাবনা ঠিক থাকে তাহলে আমি বলি ঠিক আছে, না হয় আমি সাজেশন দেয় এটা এভাবে না করে ওভাবে কর। এতটুকুই। এই কথাগুলো তানভির চাইলে আমায় না বলে তাদের কমিটির লোকজন কে বলতে পারতো কিন্তু তানভিরের যেহেতু ইচ্ছে সভাপতি হওয়ার, তার প্ল্যান সভাপতি জানলে সে কাজ করবে তখন তানভিরের নাম থাকবে না। এজন্য তানভির আমায় শেয়ার করে৷
আরেকটা বিষয় হলো ব্যবসা । আমি ব্যবসায় ঢুকেছি মাত্র ১ সপ্তাহ হলো, আমি সবকিছু বুঝে নেয় ঠিকমতো তারপর দেখো ব্যবসায় মনোযোগ দিতে পারি কি না।
এমপির জন্মদিনে যেতে রাজি হওয়ারও কারণ আছে।
এবার বাবা চাচাদের দিকে এক পলক তাকিয়ে, চোখ নামিয়ে বলা শুরু করলো,
তোমরা এখন নামি-দামি ব্যবসায়ী। একসময় তোমাদের ব্যবসাও অনেক ছোট ছিল। অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়ছে তোমাদের। তখন আমি ছোট ছিলাম তবুও যতটা সম্ভব বুঝেছি৷ বর্তমানে আমি নতুন ব্যবসা শুরু করতে যাচ্ছি। আমারও কাগজপত্র নিয়ে অনেক জায়গায় দৌড়াদৌড়ি করতে হবে। অনেক বিত্তবানদের সঙ্গে ব্যবসার দিক থেকে টক্কর লাগবে। শুধু টাকা থাকলেই সবকিছু করা সম্ভব হয় না সাথে পা*ওয়ার প্রয়োজন হয়। অনেক সময় পুলিশের থেকেও রা*জনৈতিক পাও*য়ার বেশি কাজে লাগে৷ আইনি ভাবে যে বিষয় সমাধান করতে মাসের পর মাস লেগে যায় সেটা বড় বড় নে*তাদের একটা কলে*ই সলভ হয়ে যায়। তানভিরের যেহেতু রাজনীতি তে আগ্রহ আছে তাহলে সে মনোযোগ দিয়ে রাজনীতি করুক। আমি ব্যবসা সামলায়। তানভির ভালো অবস্থানে থাকলে,আর আমি মোটামুটি পরিচিত থাকলে আমাদের যেকোনো প্রয়োজনে আশেপাশে মানুষের সাহায্য পাবো।"
এতগুলো কথা বলে এবার আবির থাকলো।
মেঘ হা করে তাকিয়ে আছে আবির ভাইয়ের দিকে আর ভাবছে,
" কি দূরদর্শী চিন্তাভাবনা আবির ভাইয়ের, মেঘ মনে মনে নিজেকে বাহবা দিচ্ছে, আবির ভাইয়ের জন্য হি*টলার নাম টা একদম ঠিক ঠাক। "
আলী আহমদ খান, মোজাম্মেল খান এবং ইকবাল খান তিনজনই অবাক চোখে তাকিয়ে আছে৷
ইকবাল খান সহসা বলে উঠলেন,
"দেখেছো ভাইয়া, আবিরের চিন্তা ভাবনা কত দূর৷ আগে থেকেই ভেবে চিন্তে মাঠে নেমেছে। তুমি খামোখা চিন্তা করো ওর জন্য। দেখবে আমাদের ব্যবসাতে খুব শীগ্রই পরিবর্তন আসবে ইনশাআল্লাহ। "
আলী আহমদ খান আর কথা খোঁজে পেলেন না। খাওয়া শেষ করে উঠে গেলেন।
মোজাম্মেল খান তানভিরের দিকে তাকিয়ে বললেন,
"আমাদের মান না রাখ, আবিরের মান অন্ততঃ রাখিস "
তানভির শীতল কন্ঠে জবাব দিলো,
"আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো ভাইয়াকে সব দিক থেকে সাহায্য করার। "
সকলেই নিরব, এতক্ষণে মোটামুটি সবার খাওয়া শেষ। সবাই সবার মতো উঠে যাচ্ছে। আবিরের খাওয়া শেষ হতেই যেই না উঠতে যাবে,
নজর পরলো অষ্টাদশীর পানে, কাজল পরিহিতা টানাটানা চোখ,গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আবিরের দিকে,
আবির টেনে হিঁচড়ে দৃষ্টি সংযত করলো, হালকা করে কাশি দিলো,
মেঘ এখনও বিভোরে তাকিয়ে আছে।
আবির এবার দাঁড়াতে দাঁড়াতে বললো,
"মুখ টা বন্ধ কর মেঘ, মাছি ঠুকবে মুখে"
মেঘ নড়েচড়ে বসলো, আবির ততক্ষণে বেসিনে চলে গেছে হাত ধুতে।
মেঘ নিজের মাথায় নিজে গাট্টা দিলো,
"ছিঃ আবির ভাই কি ভাবলো, যতই মন শক্ত করি, আহাম্মকের মতো আবির ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে থাকবো না ভাবি, ততই যেনো আবির ভাইয়ের কাছে বেকুব সাজতেছি৷ "
সেই যে মাথা নিচু করে খাচ্ছে আর মনে মনে নিজেকে ব*কতে ব্যস্ত, আবির ভাই কখন ব্যাগ নিয়ে বেড়িয়েছেন সেদিকেও নজর নেই মেঘের৷
খাওয়া শেষ করে রুমে গিয়ে পড়তে বসেছে। আজ কোচিং, প্রাইভেট নেই তাই ৩ টা পর্যন্ত টানা পড়াশোনা করেছে। তারপর গোসল করে খেতে এসেছে৷
বিকেল হয়ে গেছে তাই কাকিয়া আর বড় আম্মু ঘুমাচ্ছেন, হালিমা খানও শুয়ে ছিলেন মেঘের সিঁড়িতে নামার সময় নুপুরের শব্দে বেড়িয়ে এসে খাবার দিলেন মেঘ কে,
মেঘ চুপচাপ খাবার খাচ্ছে।
হালিমা খান পাশে চেয়ারে বসে শান্ত কন্ঠে মেয়েকে জিজ্ঞেস করলেন,
"পড়াশোনা ঠিকমতো করছিস তো মা?"
মেঘ উপর নিচ মাথা নাড়লো শুধু।
হালিমা খান: আর তো কয়েকটা দিন এরপর ই তো রেজাল্ট দিয়ে দিবে। তারপর ই তো ভর্তি পরীক্ষার যু*দ্ধ শুরু হয়ে যাবে।
মেঘ চুপচাপ খাওয়া শেষ করে সোফায় বসে টিভি দেখছিলো।। হালিমা খান সব গুছিয়ে মেয়ের পাশে বসলেন।
মেঘ কিছুক্ষণ পর মায়ের উরুর উপর মাথা রেখে শুয়ে পরলো, হালিমা খানও সযত্নে মেয়ের মাথায় হাতবুলিয়ে দিচ্ছেন, বিকেলে গোসল করাতে চুলগুলো এখনও ভেজা।।
হালিমা খান একটু রাগে রাগে বললেন,
"সারাদিন বাসায় থেকেও বিকেলে গোসল করিস কেনো, ঠিকমতো না খেলে, ঠিক মতো গোসল না করলে অসুস্থ হয়ে পরবি, তখন তো পড়তেই পারবি না।"
মেঘ চুপচাপ মায়ের হাঁটু আঁকড়ে শুয়ে আছে।
ততক্ষণে ৫ টা বেজে গেছে। আবির আজ একটু তাড়াতাড়ি চলে এসেছে অফিস থেকে। ৬ টায় এমপির জন্মদিনের অনুষ্ঠানে যেতে হবে।
বাড়িতে ঢুকে চুপচাপ সিঁড়ির দিকে যাচ্ছে। পায়ের শব্দে হালিমা খান তাকিয়ে দেখলেন আবির,
হালিমা খান কোমল কন্ঠে বললেন,
"এত তাড়াতাড়ি চলে এলি যে, কফি দিব তোকে?"
আবিরের দৃষ্টি পরে সোফায়, হালিমা খানের উরুতে শুয়া মেঘকে দেখে বুকের ভেতর ছ্যাত করে উঠে আবিরের।
মায়ের কথা শুনে মেঘ ও ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায়, চোখ পরে সিঁড়ির কাছে আবির ভাইয়ের দিকে। সঙ্গে সঙ্গে সোজা হয়ে উঠে বসলো।
আবির তৎক্ষনাৎ তড়িৎগতিতে মেঘের কাছে আসে, ভয়ার্ত কন্ঠে বললো,
"কি হয়েছে তোর?"
বলতে বলতে কপালে, গালে,গলায় হাত রাখলো একবার।
আবির ভাইয়ের উষ্ণ হাতের ছোঁয়ায় কেঁপে উঠলো অষ্টাদশী।
আবির হাত সরিয়ে উত্তেজিত কন্ঠে পুনরায় প্রশ্ন করলো,
"শরীর খারাপ লাগছে? মাথা ব্যথা করছে?"
মেঘ যেনো বিস্ময়কর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আবির ভাইয়ের অভিমুখে। আবির ভাইয়ের কপাল ঘামে চিকচিক করছে।
হালিমা খান অভিযোগের স্বরে বললেন,
"আরে দেখ না সারাদিন বাসায় থেকেও অসময়ে গোসল করে, এত লম্বা চুল শুকাতে তো সময় লাগে নাকি। নিজের কোনো যত্ন নেয় না কিছু না।"
আবির সহসা বলে উঠলো,
"মামনি একটু কফি করে দিবা প্লিজ?"
হালিমা খানের সরল উত্তর,
তুই বস একটু, এখনি নিয়ে আসছি।
হালিমা খান উঠে রান্না ঘরে গেলেন, আবির ঘুরে গিয়ে হালিমা খানের জায়গায় বসলেন,
মেঘ নিচের দিকে চেয়ে ঠোঁট কামড়ে ধরে বসে আছে, শীর্ণ বক্ষ ধড়ফড় করছে অষ্টাদশীর।
আবির ক্ষুদ্র চোখে তাকিয়ে আছে অষ্টাদশীর পানে, নিরুদ্যম কণ্ঠে শুধালো,
"কি হয়েছে তোর? মন খারাপ? "
মেঘের দুনিয়া ঘুরছে, মনের ভিতর টালমাটাল অবস্থা। হৃদপিণ্ড ছুটছে দ্বিকবিদিক।।
কিছু সেকেন্ড পর, কোনোরকমে এপাশ-ওপাশ মাথা নাড়লো।
আবির একটু চুপ থেকে গম্ভীর কন্ঠে বললো,
"কেউ বকেছে তোকে?"
সহসা মেঘের জবাব,
"কেউ বকে নি!"
আবির এবার দীর্ঘশ্বাস ফেললো, বেশ ঠান্ডা কন্ঠে বললো,
"তাকা আমার দিকে!"
মেঘ এবার দ্বিতীয় দফায় ধাক্কা খেলো, মেঘ নড়ে উঠলো, কাঁপা কাঁপা চোখে তাকালো আবির ভাইয়ের চোখের দিকে৷ আবির ভাইয়ের শীতল চাউনিতে অষ্টাদশীর মনে ঝড় শুরু হয়েছে। সাগরের গভীরতার ন্যায় চোখের দিকে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকা সম্ভব হলো না মেঘের । চটজলদি মাথা নিচু করে ফেললো।
আবির তখনও তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে অষ্টাদশীর দিকে।
আবির কিছুটা ভেবে শক্ত কন্ঠে বললো,
"মেঘ, আমি এই বাড়ির সিঙ্গেল একটা মানুষের মুখেও তোর নামে অভিযোগ শুনতে চাই না"
মেঘের অভিব্যক্তি বুঝা গেলো না, চিবুক গলায় নেমেছে৷ নিজের মনের উথাল-পাথাল পরিস্থিতি সামলাতে ব্যস্ত অষ্টাদশী।
আবির কপাল গোটায়, হঠাৎ ই পল্লব ফেলে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে শ*ক্ত চাউনিতে মেঘের দিকে তাকায়,
"কাল থেকে বিকালে কোচিং এ যাবি। ওনাদের ৩ টায় ব্যাচ আছে। প্রতিদিন ১১ টায় গোসল করবি, ১ টার পর নামাজ পরে খেয়ে প্রাইভেটে যাবি তারপর কোচিং শেষ করে বাসায় আসবি। আমি কোচিং এ কথা বলে নিবো। "
এতক্ষণে হালিমা খান কফি নিয়ে হাজির হলেন,
আবির স্বাভাবিক কন্ঠে বললো,
"মামনি, মেঘ কাল থেকে ১১ টায় গোসল করবে, আর বিকালে কোচিং যাবে।৷ ওর গোসলের টাইম যদি ১ মিনিট এদিক সেদিক হয় তুমি সঙ্গে সঙ্গে আমায় কল করবা। "
এতটুকু বলেই কফির কাপ নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে ধপধপ করে উপরে চলে গেলো।
মেঘের হৃদপিণ্ড দুভাগ হয়ে গেলো আবির ভাইয়ের কথায়। এতদিন মনের ভেতর শুধু তু*ফান চালিয়েছে এই লোকটা। এখন মেঘের জীবনেও তুফা*ন চালাচ্ছেন। বন্যা তো ১০ টার ব্যাচে যাবে, মেঘ একা একা বিকালে পড়তে যাবে৷ ওখানে তো কাউরে চিনে না ভাবতেই আ*হত হলো মনটা।
ঠায় সোফায় হেলান দিয়ে বসে আছে মেঘ। হালিমা খান মেঘকে এক কাপ কফি এনে দিলেন। মেঘ কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে কফি খাওয়ায় মনোযোগ দিলো।
কিছুক্ষণ পর মেঘ সিঁড়ি দিয়ে উঠছে রুমে যাওয়ার উদ্দেশ্যে। তখন ই সিঁড়ি দিয়ে ব্যস্ত পায়ে নামছে আবির ভাই, এমপির জন্মদিনের অনুষ্ঠানে যাওয়ার জন্য রেডি হয়েছেন,
খয়েরি রঙের শার্ট কনুই পর্যন্ত হাতা ভাজ করা, কালো প্যান্ট দিয়ে ইন করা, নতুন শো জুতা, চোখে নতুন একটা সানগ্লাস, চুল গুলো খুব সুন্দর করে স্টাইল করা৷
এক পলক তাকাতেই মেঘ থমকে দাঁড়ালো সিঁড়িতে, আবির ভাইয়ের এক হাত পকেটে অন্য হাতের আঙুলে বাইকের চাবি ঘুরাতে ঘুরাতে মেঘের পাশ কেটে নেমে গেলেন, মেঘ ওখানেই দাঁড়িয়ে পরেছে, বডি স্প্রের তীব্র গন্ধে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো আবির ভাইয়ের দিকে, যতক্ষণ দেখা গেলো ততক্ষণ স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো,
বিড়বিড় করে বললো,
"ওনার য*ন্ত্রণায় আমাকে পা*বনা যেতে হবে মনে হচ্ছে! "
কিছুক্ষণ পর মেঘ রুমে চলে গেলো!
★★★★
তানভির সারাদিনেও বাসায় ফিরতে পারে নি সেই যে সকালে বের হয়েছিলো, সারাদিন নির্বাচনের কাজে ব্যস্ত। বিকেলে বাহিরেই খেয়েছে। তারপর থেকে জন্মদিনের অনুষ্ঠানের কাজে ব্যস্ত। কোথায় কি রাখবে, কি ভাবে করবে, সভাপতি, সাধারণ সদস্য সকলেই ব্যস্ত।
অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার পর্যায়ে আবির উপস্থিত হলো। আবিরকে দেখে তানভির ছুটে এসেছে৷ পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন হবু এমপির সাথে৷ হ্যান্ডসেক করে মতবিনিময় শুরু করলেন দুজনে।
অনুষ্ঠান ভালোই ভালোই শেষ হলো৷ বেশ কিছু ছবিও তুলা হয়েছে। এমপির ফ্যামিলির সাথে, আবির তানভির এমপির দুপাশে দাঁড়িয়ে, কেক খাওয়ানো সহ আরও অনেক ছবি তুলা হয়েছে।
সেখান থেকেই ৪ টা ছবি আবির ফেসবুকে আপলোড করেছে সাথে জন্মদিনের ক্যাপশন দিয়ে।
অনুষ্ঠান শেষে তানভির বললো,
"ভাইয়া তুমি কি আমায় বাইকে লিফট দিবা নাকি রিক্সা করে বাড়ি যাব?"
আবির এক মুহুর্ত ভেবে উত্তর দিলো,
"আজ থেকে যেতে পারবি, সমস্যা নেই!"
তানভির খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেছে। ১০ দিনের মাথায় ভাইয়ের বাইকে উঠার অনুমতি পেলো।
বাইক চালাতে চালাতে আবির গম্ভীর কন্ঠে তানভির কে বললো,
"তোর কাছে মেঘের বান্ধবীর নাম্বার আছে?"
তানভির স্বাভাবিক ভাবেই বললো,
"হ্যাঁ আছে। কেনো ভাইয়া?"
আবির রাশভারি কন্ঠে বললো,
"তুই তাকে কল দিয়ে বলিস কাল থেকে যেনো ৩ টায় কোচিং এ যায়, মেঘের ব্যাচ টাইম চেইঞ্জ করে দিয়েছি সাথে তারটাও। কোচিং এর লোকের সাথে কথা বলেছি। মেঘের একা একা বিকেলে ভালো লাগবে না। "
তানভিরের চিন্তিত স্বরে বললো,
"আবার কোনো সমস্যা হয়েছে ভাইয়া?"
আবির এবার দীর্ঘশ্বাস ফেলে, কন্ঠ দ্বিগুণ ভারি করে বললো,
"তোর বোন ঠিক মতো খায় না, গোসল করে না, পড়ে না কত অভিযোগ শুনতে হয়। এজন্য টাইম পাল্টে দিয়েছি, সাথে ওকেও ওয়ার্নিং দিয়েছি।"
তানভির আর কিছু বললো না। চুপচাপ দুই ভাই বাসায় ঢুকে যে যার মতো রুমে চলে গেলো।
★★★★
রাত তখন ১০.৩০+
তানভির ফোন থেকে বন্যা নামে সেইভ করা একটা নাম্বারে কল দিলো। দুবার দেয়ার পর রিসিভ হলো।
বন্যাঃ আসসালামু আলাইকুম।
তানভিরঃ ওয়ালাইকুম আসসালাম
বন্যাঃ কে বলছেন?
তানভিরঃ আমি মেঘের ভাই।
বন্যা একটু ভ*য়ে ভ*য়ে বললো,
"আবির ভাইয়া?"
তানভিরের কিছুটা রাগ হলো, অকস্মাৎ বলে উঠলো,
"ভাইয়া তোমায় কল দিবে কেন, ভাইয়ার কি খেয়ে কাজ নাই যে তোমায় কল দিবে? ভাইয়া জীবনেও তোমায় কল দিবে না, শুধু তোমায় কেনো কোনো মেয়েকেই কল দিবে না! "
বন্যা আস্তে আস্তে শুধালো,
"তানভির ভাইয়া?"
তানভিরঃ হ্যাঁ।
বন্যাঃ কোনো দরকার ভাইয়া?
তানভিরঃ শুনো তুমি কাল থেকে ২ টার ব্যাচে প্রাইভেট পড়বে আর ৩ টার ব্যাচে কোচিং করবে। মেঘও বিকালে কোচিং করবে। এটায় জানানোর জন্য কল দিয়েছি। ভুল করে আবার সকালে চলে যেয়ো না। আল্লাহ হাফেজ।
এতটুকু বলেই কল কেটে দিলো তানভির।
বন্যা খাটের উপর টাশকি খেয়ে বসে পরলো। কিছু ভাবতে পারছে না। কিছুক্ষণ স্থির থেকে তাড়াতাড়ি কল করলো মেঘকে।
১ বার বাজতেই কল রিসিভ করলো মেঘ।
বন্যাঃ এই পাগল, তোর কি হয়ছে রে? কাল থেকে এতবার কল দিচ্ছি কোনো খবর নাই তোর! সেই যে আবির ভাইয়ের সাথে বাইকে গেলি। কি হলো তাও বললি না, কি অ*ঘটন ঘটাইছিস তুই?
মেঘঃ আমি অ*ঘটন ঘটাই নি। আবির ভাই অঘটন ঘটাইছে৷ ওনি আমার মনের ভিতর ঢুকে আমার জীবনের ১৪ টা বাজায় দিছে। আমার খাওয়া,গোসল, ঘুম সবকিছুর নাজেহাল অবস্থা করে ফেলছে। ওনাকে যতবার দেখছি ততবারই ভেঙেচুরে যাচ্ছি আমি আমি। বারবার নতুন করে ক্রাশ খাই। কি করবো বল..!!
বন্যা এবার রাগে বললো,
রাত বিরাতে নে*শা করা ছেড়ে ঘুমা বাই।
কি জন্য কল দিয়েছিলো তা বলতেই পারলো না, মেঘের এসব হাবিজাবি কথা শুনতে তার এখন একটুও ভালো লাগছে না। কোথায় সিরিয়াস মুডে কল দিলো মেঘকে৷ মেঘ যেনো ঘো*রেই পরে আছে।
মেঘ ও আর কল ব্যাক করলো না।
★★★★
মেঘ ফেসবুকে ঢুকলো, ঢুকতেই সামনে আসলো আবির ভাইয়ের ৩ ঘন্টা আগে করা পোস্ট। ছবিগুলো খুব ভালো করে দেখছে মেঘ৷ টেনে টেনে বড় করে আবির ভাইকে মনোযোগ দিয়ে দেখছে। হঠাৎ ই একটা ছবি দেখে মেঘের দৃষ্টি স্থির হলো৷
আবির ভাইয়ের পাশে কড়া নীল রঙের একটা গাউন পরা মেয়ে। দেখেই মনে হচ্ছে শরীরে বড়লোক বড়লোক ভাব আছে একটা।
মেঘের পায়ের রক্ত চড়চড় করো মাথায় উঠছে।ঐ মেয়ে কে আর আবির ভাইয়ের পাশে ঐ মেয়ে কি করে। কমেন্ট চেক করতে গেলো মেঘ, অনেকগুলো কমেন্টের ভিড়ে ঐ নীল জামা পরিহিতার একটা আইডি চোখে পরলো। আবির ভাইদের ছবি তে কমেন্ট করেছে,
"আপনি অসম্ভব কিউট, ইচ্ছে করছিলো আপনাকে সবসময়ের জন্য রেখে দেয়। ইচ্ছে হলে বেড়াতে আসবেন আর সম্ভব হলে ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট এক্সেপ্ট করবেন।"
রাগে শরীর ঘামছে মেঘের, শুয়া থেকে উঠে বসলো, কমেন্ট টাতে Angry রিয়েক্ট দিয়ে মেয়ের আইডিতে ঢুকলো।
প্রোফাইল পিকটা ২ ঘন্টা আগেই আপলোড করা, কভার ফটোতে হবু এমপির সাথে ছবি, ক্যাপশন (বাবা-মেয়ে)
মেঘের বুঝতে বাকি নেই এটা এমপির মেয়ে। একটা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। মেঘ রাগে ফুঁস ফুস করছে।
আবারও আবির ভাইয়ের আইডিতে ঢুকলো মেঘ। Just Now একটা পোস্ট করেছেন আবির ভাই,
"Teri Nazar Ne Ye Kya Kar Diya
Mujh Se Hi Mujhko Juda Kar Diya"
সাথে রাতের শহরে বাইকে বসা একটা ছবি শেয়ার করলেন।
মেঘ মনোযোগ দিয়ে ক্যাপশন বুঝার চেষ্টা করছে। তারমানে আবির ভাই ঐ মেয়ের প্রেমে পরে গেছে। ভাবতেই নেত্রযূগল থেকে দুফোঁটা পানি গড়িয়ে পরলো৷ আবারও সেই কমেন্ট টা খোঁজতে গেলো মেঘ। কি এমন সুন্দর মেয়েটা দেখতে হচ্ছে তো! কিন্তু পোস্টের সব কমেন্ট ঘেটেও মেয়ের কমেন্ট পেলো না। তারমানে আবির ভাই ডিলিট করে ফেলছে?
কিন্তু ঐ মেয়ে কে কি এক্সেপ্ট করে ফেললো?
তারপর দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজেকে নিজে সান্ত্বনা দিতে লাগলো,
"আবির ভাই তো শুধুই আমার ক্রাশ। ক্রাশ তো ক্ষণিকের। ওনিও তো কিছুদিন পর বিয়ে করবেন তখন তো আমাকে মেনে নিতেই হবে। আমার তো সাহসে কুলাবে না আবির ভাইকে কিছু বলার। মা*ইর খাওয়ার থেকে চুপ থাকি, সেই ভালো।"
★★★★
এদিকে আবির বাসায় ফিরে ফ্রেশ হয়ে শুয়ে আছে৷
একটা ছবি Zoom করে শুধু চোখ গুলোর দিকে তাকিয়ে আছে,
আর বিড়বিড় করে গাইছে,
Maine Jab Dekha Tha Tujhko
Raat Bhi Wo Yaad Hai Mujhko
Taare Ginte Ginte So Gaya
Dil Mera Dhadka Tha Kaske
Kuch Kaha Tha Tune Hanske
Main Usi Pal Tera Ho Gaya
কিছুক্ষণ থেমে আবার বললো,
Teri Nazaron Ne Kuch Aisa Jaadu Kiya
Lut Gaye Hum Toh Pehli Mulaqaat Mein
■■■■■■■■■■■■■■■■■■■■■■■
#Ch.11
প্রতিদিনের মতো আজও খাবার টেবিলে একসাথে খেতে বসেছে সকলে৷ কিন্তু মেঘের মাথায় আজ অন্য প্ল্যান ঘুরছে। সবার খাওয়া মোটামুটি শেষ, মেঘ ইচ্ছে করেই অল্প অল্প খাচ্ছে।
এদিকে মোবাইলে কি যেনো চেক করছিলো আবির, মোবাইল চেক করে করেই খাচ্ছিলো , আবিরের খাওয়া শেষ, তাই মোবাইল টেবিলের উপর একপাশে রেখে হাত ধৌতে উঠে পরে।
৩-৪ কদম যেতেই মেঘ হাত বাড়িয়ে আবির ভাইয়ের মোবাইল হাতে নেয়৷ তাড়াহুড়োতে হয়তো পাওয়ার বাটনে চাপ দিতে ভুলে গেছে আবির ভাই। হোমপেইজ ভেসে আছে। এখানে ২ টা হাতের ছবি। একটা বড় হাতের উপর একটা পিচ্চি হাত। মেঘ ১ সেকেন্ড তাকালো ছবিটার দিকে৷ কিন্তু এখন ছবি নিয়ে গবেষণা করার সময় না।
তাই মেঘ তাড়াতাড়ি ফেসবুকে ঢুকলো,
friend requests অপশনে ঢুকতেই চোখে পরলো কত ছেলে মেয়ের আইডি৷ সে খোঁজতে লাগলো গত রাতের নীল জামা পরিহিতাকে। একটু নিচে যেতেই পেয়ে গেলো, প্রত্যাশিত ব্যক্তির আইডি। এক সেকেন্ড না ভেবে ব্ল*ক করে দিলো তাকে। তাড়াতাড়ি ফেসবুক থেকে বের হয়ে ফোন রেখে দিলো আগের জায়গায়।
এবার মেঘ দীর্ঘশ্বাস ফেললো, মনে খুব শান্তি লাগছে এখন।
আবির ভাই টেবিলের কাছে এসে মোবাইল নিতে নিতে, মেঘের দিকে তাকালো,
নিরুদ্বেগ কন্ঠে বললো,
"যতক্ষণ সময় খাবার টেবিলে বসে থাকিস ততক্ষণ যদি তুই খাইতি, তাহলে আজ ক*ঙ্কালের মতো থাকতি না! "
মোবাইল আর ব্যাগ নিয়ে অফিসের জন্য বেড়িয়ে গেলেন।
এদিকে মেঘ মুচকি হেসে বিড়বিড় করে বললো,
"আমি তো আপনার জন্যই বসে থাকি। আমি খাবার খেয়ে রুমে যেতে যেতে আপনি বাইক নিয়ে চলে যান৷ দেখতেই পারি না। তাই তো বাধ্য হয়ে এখন টেবিলেই বসে থাকি! "
★★★★
আবির ভাইয়ের কথা মতো মেঘ ১১ টার মধ্যে গোসল করেছে আজ। যথাসময়ে রেডি হয়ে রওনা দিলো টিউশনের উদ্দেশ্যে। মনটা ভিষণ খারাপ। আজ থেকে একা একা টিউশন আর কোচিং এ পড়তে হবে এটা ভেবেই মন ভা*ঙছে বারবার।
টিউশনে ঢুকতেই বন্যা ডাকলো,
"মেঘ,এখানে আয়!"
মেঘ চোখ গোল গোল করে অবাক চোখে তাকালো, ছুটে গেলো বন্যার কাছে,
মেঘ: তুই এই সময় টিউশনে কেন? আগের ব্যাচে পড়িস নি?
বন্যা: কিভাবে পড়বো? তোর বেস্ট হয়েছি, তোর ভোগান্তি তো আমাকে ভুগতে হবেই।
মেঘ: মানে?
বন্যা: গতকাল রাতে তানভির ভাইয়া কল দিয়েছিল আমায়, বললো তোর সাথে আমারও টাইম পাল্টায় দিছে। আজ থেকে যেনো বিকেলে আসি৷
মেঘ: তাহলে তুই জানাস নি কেনো আমায়? আমি পুরো রাস্তা মন খারাপ করে এসেছি। একা একা পড়তে হবে বলে।
বন্যা: তোকে কিভাবে জানাবো? তুই তো আবির ভাইয়ের ঘো*রে ডুবে আছিস।
মেঘ কিছুটা লজ্জা পেলো।
তারপর স্ব শব্দে হেসে বললো, জানিস বন্যা আমার হিজাব টা আবির ভাই কিনে দিছে। শুধু এটায় না সর্বমোট ৩০ টা হিজাব কিনে দিয়েছে। শুধু তাই না দেখ আমার পায়ের নুপুর গুলো। এগুলোও আবির ভাই দিয়েছে৷ তাও আবার নিজের হাতে পড়িয়ে দিয়েছেন। দেখ, সুন্দর না?
বন্যা কপাল ভাজ করে নুপুর গুলো দেখলো, তারপর বললো,
"হ্যাঁ খুব সুন্দর হয়েছে। কিন্তু কাহিনী কি বল তো? ঐ ব্যাটার হঠাৎ তোর প্রতি এত মায়া হচ্ছে! তোকে কিছু বলছে কি?"
মেঘ: হ্যাঁ বলছে। আমি কই যাই না যাই তা পর্যবেক্ষণ করতে নুপুর দিয়েছে৷
বন্যা হা করে তাকায় আছে!
ততক্ষণে স্যার পড়াতে চলে এসেছেন।
টিউশন, কোচিং শেষে মেঘ বাসার উদ্দেশ্যে চলে গেছে৷
সন্ধ্যার পর আবার জান্নাত আপু আসবে। পড়া রিভিশন দিতে হবে৷
জান্নাত আপু শুক্রবার, শনিবার বাদ দিয়ে বাকি ৫ দিন পড়ান। জান্নাত আপু খুব ভালো পড়ান৷ মেঘ ওনার ভক্ত হয়ে গেছে একেবারে। জান্নাত আপুও মেঘকে খুব আদর করে৷ পড়াশোনার পাশাপাশি কিভাবে পড়লে ভালো হবে, রুটিন করা সবকিছুতেই হেল্প করেন৷ এজন্য মেঘ ইদানীং পড়াশোনাতেও গুরুত্ব বেশি দিচ্ছে।
★★★★
এভাবে কেটে গেলো ১০-১২ দিন। আবিরের সাথে মেঘের প্রতিদিন সকালে খাবার টেবিলে দেখা হয়৷ মাঝে মাঝে মেঘ আগে আসে, মাঝে মাঝে আবির আগে চলে আসে। তারপরও দেখা তো হয়, এতেই যেনো মেঘের মনে সারাদিন প্রশান্তি কাজ করে।
আবির বাড়ি ফেরে ১১-১২ টার দিকে৷ আবিরের বাইকের শব্দ পেলেই মেঘ ছুটে যায় নিজের রুমের বারান্দায়। হেলমেট টা খুলে যখন বাইক থেকে নামে,
"মেঘ গভীর মনোযোগ দিয়ে দেখে সে দৃশ্য আর গুনগুন করে গান গায় " তারপর বাড়িতে ঢুকার আগ পর্যন্ত যতটুকু সম্ভব তাকিয়ে তাকিয়ে আবির ভাই কে দেখে। আবির ভাই বাড়িতে ঢুকে গেলে হাসিমুখে ঘুমিয়ে পরে মেঘ৷ এটায় যেনো মেঘের দৈনিক রুটিন। কেনো আবির ভাইকে দেখে, তার কোনো উত্তর নেই অষ্টাদশীর কাছে।
আবির ভাই কি শুধুই তার ক্রাশ নাকি সে আবির ভাইকে ভালোবাসে এর উত্তর নিজেও খোঁজে পায় না। তবে আবির ভাইকে অসম্ভব ভালো লাগে, আবির ভাইয়ের শীতল চাউনি বারংবার অষ্টাদশীর হৃদ*য়টা চূ*র্ণবিচূ*র্ণ করে। আবির ভাই অষ্টাদশীর মন- মস্তিষ্ক জোড়ে বিচরণ করছে ।
★★★★
১০-১২ দিন পর সকালবেলা আবির জুসের গ্লাস হাতে নিয়ে দু চুমুক খেলো কি না।
আলী আহমদ খান বলে উঠলেন,
"আবির তোকে একটু চট্টগ্রাম যেতে হবে। "
আবির তৎক্ষনাৎ বিসুম খেলো।
তানভির তাড়াতাড়ি উঠে, ভাইয়ের মাথায় ফু দিচ্ছে। রান্না ঘর থেকে ছুটে এসেছেন মালিহা খান৷
এদিকে মেঘ অসহায়ের মতো তাকিয়ে আছে আবির ভাইয়ের দিকে৷
কিছুক্ষণ পর আবির স্বাভাবিক হয়ে বললো,
"আমি চট্টগ্রাম গিয়ে কি করবো?"
আলী আহমদ খান স্বাভাবিক ভাবেই বললেন,
"আমাদের কোম্পানিতে কিছু সমস্যা হচ্ছে, কিছু ডিলার ঝামেলা করতেছে শুনলাম। তোর কাকামনিকে সিলেট যেতে হবে। কোম্পানির CEO হিসেবে এখন দায়িত্ব তোর উপর ই পরে। তুই কথা বললেই আশা করি সমাধান হবে। ডিলাররা অর্ডার ডেলিভারি করা পর্যন্ত তুই থাকবি ঐখানে৷ যদি সব ঠিকঠাক হয়ে যায় তখন চলে আসিস। "
আবির এক পলক মেঘের দিকে তাকালো, তারপর দৃষ্টি নামিয়ে প্রশ্ন করলো,
"কবে যেতে হবে?"
আলী আহমদ খান সহসা বলে উঠলেন,
"আজ রাতে অথবা আগামীকাল সকালে চলে গেলে ভালো হবে। "
আবির চুপচাপ মাথা নিচু করে বসে আছে। আলী আহমদ খান আর মোজাম্মেল খান উঠে গেলেন।
তানভির এবার ভাইকে বললো,
"ভাইয়া তোমার কি একা যেতে খারাপ লাগবে? আমি কি যাবো তোমার সঙ্গে? "
আবির অ*গ্নিদৃষ্টিতে তাকালো তানভিরের দিকে, দাঁতে দাঁত চেপে বিড়বিড় বিড়বিড় করে কি যেনো বললো,
কেউ কিছু বুঝলো না কিন্তু তানভির স্ব শব্দে হেসে উঠলো।
আবির এবার রা*গে ফুঁসতে ফুঁসতে বললো,
""তানভির..!!""
তানভির হাসতে হাসতে চেয়ার থেকে উঠে বেসিনের দিকে দৌড় দিলো।
আবির অ*গ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তানভিরের দিকে তারপর মাথা নিচু করে প্লেটের খাবার টা কোনোরকমে শেষ করে উঠে চলে গেলো।
এদিকে মেঘ, মীম আর আদি বসে আছে।
আদি আর মীম প্ল্যান করছে আবির ভাইয়াকে বলবে কক্সবাজার গেলে ওদের জন্য খেলনা, সাজুনি, শামুক নিয়ে আসতে।
মেঘ নিশ্চুপ বসে খাচ্ছে! আবির ভাই কে দেখার জন্য ই এখন সে প্রতিদিন ফজরের সময় ঘুম থেকে উঠে৷ রাতে ঘুমানোর আগেও আবির ভাইকে দেখে ঘুমায়৷ আবির ভাই চট্টগ্রাম চলে গেলে ও থাকবে কিভাবে!
মীম হঠাৎ ডেকে উঠলো,
"আপু ভাইয়াকে তুমি কি আনতে বলবা?"
মীমের ডাকে ধ্যান ভাঙলো মেঘের, একটু হাসার চেষ্টা করলো, তারপর কোমল কন্ঠে বললো,
"আমার কিছু লাগবে না!"
সারাদিন কেটে গেলো, মেঘ নিজের মতো কোচিং, টিউশন শেষ করে আসছে৷ মীম, আদি স্কুল থেকে ফিরেছে।
আবির ৮ টায় বাসায় ফিরেছে। ততক্ষণে জান্নাত আপু পড়িয়ে চলে গেছেন। মেঘ বই খাতা নিয়ে নিজের রুমে চলে গেছে। রাত ১০ টার দিকে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে যাবে আবির।
রুমে গিয়ে শাওয়ার শেষ করে, একেবারে রেডি হয়ে রুম থেকে বের হলো আবির। মেঘের রুমের দরজার সামনে এসে থামলো,
দরজা ধাক্কা দিলো আস্তে করে।
মেঘ বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে আছে । পাশে বই খাতা পরে আছে, ফ্যানের বাতাসে পৃষ্ঠা গুলো উড়ছে। জান্নাত আপু যাওয়ার পর ই রুমে এসে শুয়ে ছিল।
আবির আস্তে করে ডাকলো,
"মেঘ"
কোনো সাড়া নেই। তাই রুমের ভিতরে ঢুকলো আবির। শান্ত পায়ে এগিয়ে গেলো মেঘের কাছে।
মেঘের মুখের একপাশ বিছানায় লেপ্টে আছে। ফ্যানের বাতাসে চুল গুলো এলোমেলো হয়ে উড়ছে,ছোট চুল গুলো বার বার মুখে ঝাপটে পরছে, লাইটের আলোয় অপর গালটা চিকচিক করছে।
আবির বিছানার এক পাশে বসলো, কিছুক্ষণ সূক্ষ্ম দৃষ্টিতে পরখ করলো অষ্টাদশীকে। তারপর গালে হাত রেখে মুখ থেকে ছোট চুলগুলোকে সরিয়ে দিলো। ২-১ বার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে চুপচাপ রুম থেকে বেড়িয়ে, ব্যাগ নিয়ে নিচে চলে আসলো।
মীম আর আদি খুব করে বললো,
"ভাইয়া কক্সবাজার যেয়ো প্লিজ, চাটনি নিয়ে এসো, খেলনা,শামুক আরও অনেক কিছুর আবদার করলো ভাইয়ের কাছে। "
উত্তরে আবির শুধু বললো,
"সময় পেলে যাব!"
খেয়ে ১০ টা নাগাদ বেড়িয়ে গেছে আবির।
ইকবাল খান আগামীকাল সকাল ৮ টায় সিলেট যাবেন।
আবিরের বাবার কোম্পানি ঢাকার বাহিরে তিনটা শাখা আছে। চট্টগ্রাম, সিলেট এবং রাজশাহী । ইকবাল খানকে বেশিরভাগ সময় ই বিভিন্ন জায়গাতে দৌড়াদৌড়ি করতে হয়। কখনো চট্টগ্রাম, কখনো রাজশাহী, কখনো সিলেট, বাকি সময় বাড়িতে থাকলে হেড অফিসে থাকেন। একই সাথে দুই শাখাতে যেতে হলে কখনো কখনো মোজাম্মেল খানকেও যেতে হয়। তবে আলী আহমদ খান এখন আর ঢাকার বাহিরে যান না। আবির আসাতে ওনি চাইছেন আবির সব দায়িত্ব বুঝে নেক৷
রাত ১১ টায় মীম এসে ডাকছে,
"আপু উঠো, খাবে না?"
মেঘ ঘুমঘুম চোখে তাকায় মীমের দিকে,
মীম আবার বলে,
"১১ টা বাজে, তুমি কখন খাবে? আম্মু, বড় আম্মু সবাই বসে আছে তোমার জন্য। আমিও খাই নি আসো৷ "
১১ টা শুনেই মেঘের ঘুম উদাও হয়ে গেছে, সহসা মনটা খারাপ হলো৷
চিন্তিত স্বরে বললো,
"আবির ভাই কি চলে গেছে?"
মীম হাসিমুখে বলছে,
"হ্যাঁ, ভাইয়া তো ১০ টার আগেই চলে গেছে। আমি আর আদি বলে দিছি আমাদের জন্য, খেলনা, গিফট, চাটনি নিয়ে আসতে৷ তোমার জন্যও আনতে বলেছি। ভাইয়া বলেছে সময় পেলে যাবে কক্সবাজার। "
মেঘের মনটা চূ*র্ণবি*চূর্ণ হয়ে গেছে। মনে মনে ভাবছে,
কেনো যে শুইতে গেলাম, না ঘুমালে তো আবির ভাইকে দেখতে পারতাম৷ আমি ঘুমিয়ে ছিলাম তাতে কি, আবির ভাই কি আমায় বলে যেতে পারতো না?
মীম আবার ডাকলো,
"আপু আসো খেতে যাই! "
মেঘ কঠিন স্বরে বললো,
"আমার খিদা নেই । খাবো না। তুই খেয়ে নে। ওদের বল খেয়ে নিতে। আমি ঘুমাবো। আর লাইট টা অফ করে দিয়ে যা৷ "
মীম মন খারাপ করে চুপচাপ লাইট অফ করে চলে গেলো,
এদিকে মেঘ ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁ*দছে, কিছুক্ষণ পর নিজে নিজেই ভাবছে,
আবির ভাই তো আমায় নিয়ে ভাবেন ই না।ভাবলে তো আমাকে ডেকে বলেই যেতেন। তাহলে আমি কেনো ওনার জন্য কা*ন্না করছি। আর কাঁদবো না আমি। কিছুক্ষণ পর থামলো। খুব খিদে পাচ্ছে কিন্তু সে খাবে না। বড্ড অভিমান জমেছে বুকে। এভাবেই ঘুমিয়ে পরলো আবার।
★★★★
ভোরবেলাও উঠলো না মেঘ৷ ৮ টার উপরে বাজে খাবার টেবিলেও আসে নি। বাধ্য হয়ে মোজাম্মেল খান নিজে গেলেন মেয়েকে ডাকবে। মেঘ তখনও ঘুমে৷
আব্বুর ডাকে ঘুম ভাঙলো মেঘের। ১০ মিনিটের মধ্যে ফ্রেশ হয়ে নিচে আসলো। খাবার টেবিলে আবির ভাই নেই দেখে মনটা খারাপ হলো , কাকামনিও সকাল সকাল সিলেটের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন। চুপচাপ খেতে বসলো মেঘ কিন্তু গলা দিয়ে খাবার নামছে না। কোনো রকমে অল্প কিছু খেয়ে উঠে পরলো৷
রুমে গিয়ে পড়ার চেষ্টা করলো কিন্তু পড়া মাথায় ঢুকছে না। মাথায় শুধু আবির ভাই ঘুরছে। আবির ভাই কেনো বলে গেলো না, এখন আবির ভাই কোথায় আছেন, খেয়েছেন কি না এসব চিন্তায় ব্যস্ত হলো৷ একটু পর পর ডাটা অন করে ফেসবুকে ঢুকছে৷ কিন্তু আবির ভাই নেটে নাই, কোনো আপডেট ও নেই। ১০ মিনিট পর পর মেঘ ফেসবুক চেক করছে কিন্তু তাতে কোনো লাভ হচ্ছে না।
সারাদিন গেলো, এই পড়তে বসছে এই আবার ফোন চেক করছে৷ বিকাল নাগাদ কোনো খবর না পাওয়াতে মন খারাপ করে ঘুমিয়ে পরলো।
★★★★
আবির চট্টগ্রাম এসে অফিসের কাজে ব্যস্ত হয়ে পরেছে। বাসা থেকে আবিরের আম্মু কল দিয়ে খোঁজ নিয়েছে ছেলের। এছাড়া মোজাম্মেল খানও কাজের জন্য কয়েকবার কল দিয়েছে আবিরকে৷
দেখতে দেখতে ৩ দিন হয়ে গেলো আবিরের চট্টগ্রাম আসা। সাথে অফিসের ঝামেলায় সারাদিন এক মুহুর্ত রেস্ট নিতে পারে না। অফিসের কাজের ফাঁকে ২-১ বার বাসায় কল করে, আম্মু, মামনি,তানভিরের সাথে কথা হয়। মীম আর আদির এক কথা ভাইয়া কক্সবাজার যেয়ো প্লিজ, আমাদের জিনিস গুলো নিয়ে এসো। কিন্তু মেঘ যেনো নিখোঁজ।।
আবির বিদেশে থাকাকালীন তানভির বাসায় না থাকলে যেই মেয়ে একায় সারা বাড়ি মাতিয়ে রাখতো৷ এখন আবির চট্টগ্রাম, তানভির সকালে বের হয়ে পার্টি অফিসে আর ফেরে ১০ টার দিকে৷ বাবা চাচাও সারাদিন অফিসে থাকে। তারপরও মেঘকে সারাদিনে খোঁজে পাওয়া যায় না।
সকালে অল্প খেয়ে যে রুমে ঢুকে কোচিং থাকলে বের হয়, না হয় ৩-৪ টায় খুদা লাগলে চুপচাপ এসে খাবার খায়, মাকেও ডাকে না। জান্নাত আপু এসে পড়িয়ে গেলে, মেঘ অল্প খেয়ে আবার রুমে চলে যায়। মনমরা হয়ে থাকে সবসময়।
আবিরের অফিসের ঝামেলা মোটামুটি মিটেছে। ডিলার প্রোডাক্ট ডেলিভারি দেয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। দুদিন ফ্রী থাকাতে মীম আর আদির কথা মনে করে কক্সবাজার গেলো। এর আগে কখনো কক্সবাজার যায় নি আবির। এটায় জীবনে প্রথমবার। 5★ হোটেলে রুম নিয়েছে। ফ্রেশ হয়ে বের হতে হতে বিকেল হয়ে গেছে।
সমুদ্র সৈকতে দাঁড়িয়ে আছে আবির,
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের স্পষ্ট রূপ দিয়ে সজ্জিত বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার। কক্সবাজারের সূর্যাস্তের ছবি প্রায় সবাই স্মৃতি হিসেবে রেখেছেন নিজেদের মোবাইল ফোন বা প্রতিটা বাড়ির দেয়ালে।আবির সমুদ্রের ঢেউয়ের সঙ্গে গোধূলি বেলার সূর্যাস্ত দেখে বিমোহিত। অসংখ্য প্রাপ্তি, ক্লান্তি, হতাশা বিকীর্ণ হয়ে আছে আবিরের মনে। সমুদ্রের পানিতে অস্তমিত সূর্যের অপরূপ দৃশ্য উপভোগ করেছে।
কিছুক্ষণ পর আবিরের ফোনে কল আসে।। পকেট থেকে ফোন বের করে দেখে তানভিরের কল। রিসিভ করে,
তানভির: আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া
আবির: ওয়ালাইকুম আসসালাম।
তানভির: কোথায় আছো?
আবির: কক্সবাজার আসছি আজ। কেনো?
তানভির: একটু দরকার ছিল !
আবির: বল।
তানভির: এমপির মেয়ে নাকি তোমায় রিকুয়েষ্ট দিয়েছিল৷ তুমি নাকি তাকে ব্লক করে দিয়েছো। আজ এমপির বাসায় গেছিলাম। মেয়ে তো তোমার কথা জিজ্ঞেস করতেছে আমায়।
আবির: তুই কি বলছিস?
তানভির: প্রথমে তো এমনিতেই বুঝানোর চেষ্টা করছি। কিন্তু মানতেছে না তাই বাধ্য হয়ে বলছি তুমি আরেকজনকে পছন্দ করো। তারসাথে তোমার বিয়ে ঠিক।
আবির: আচ্ছা ঠিক আছে ।
তানভির: কিন্তু একটা সমস্যা আছে ভাইয়া।
আবির: আবার কি সমস্যা?
তানভির: এমপির মেয়ে যদি এমপিকে বলে আর ওনি যদি আমায় জিজ্ঞেস করে তখন আমি কি বলবো? যদি মেয়ের কথা জিজ্ঞেস করে তখন কি বলবো?
আবির: প্রথমত এমপি কোনোসময় এসব বিষয় নিয়ে মাথা ঘামাবে না। আর যদি শুনে ছেলে অন্য কাউকে পছন্দ করে তাহলে আরও কিছু বলবে না।
তানভির: তারপর ও যদি জিজ্ঞেস করে ফেলে তখন কি বলবো?
আবির: বলবি তোর বোনের সাথে বিয়ে ঠিক।
তানভির: তারপর?
আবির: তারপর আবার কি? বাকিটা আমি সামলে নিবো।
তানভির: যদি ফোর্স করে?
আবির একটু গম্ভীর কন্ঠে বললো, "বেকুবের মতো কথা বলিস না তানভির। এমপির মেয়ে হোক আর মন্ত্রীর মেয়ে তারজন্য কি তুই নিজের ভালোবাসা কোরবান করবি নাকি, আজব।"
তানভির আর কথা বাড়ালো না।
তানভির: আচ্ছা ভাইয়া এখন রাখি তাহলে৷ আল্লাহ হাফেজ।
আবির: আল্লাহ হাফেজ ।
কল কেটে আবির ডাটা অন করে ফেসবুকে ঢুকে। কেনো জানি মনে হলো ব্লকলিস্ট চেক করবে৷ ব্লক লিস্টে ঢুকতেই চোখে পরলো প্রথম আইডিটাই ঐ মেয়ের।
দু সেকেন্ড ভাবলো, সে তো শুধু কমেন্ট ডিলিট করেছিল, ব্লক তো করে নি। এটা যে মেঘের কাজ তা বুঝতে বেশিক্ষণ সময় লাগলো না । কিন্তু মেঘ ফোন পেলো কোথায়? আরও কিছুক্ষণ ভাবার পর মনে হলো, টেবিলের উপর ফোন রেখে যাওয়ার ঘটনা। তারমানে সেদিন ই ব্লক করেছে।
অজান্তেই ঠোঁটের কোণে এক চিলতে মুচকি হাসির ঝলক দেখা গেলো।
আস্তে আস্তে বললো,
""এই সামান্য বিষয়ে জ্বলে উঠলে
সইবি কিভাবে এত ঝড়-ঝঞ্ঝা।
এত তাড়াতাড়ি তো তোকে আমার করে নিবো না।
আবার খুব বেশি কষ্টও দিবো না তোকে। "
অন্ধকার নেমেছে বিচে, একটু হাঁটাহাঁটি করলো আবির। ভাই বোনের জন্য কিছু কেনাকাটাও করলো। তারপর হোটেলে চলে আসছে।
★★★★
কেটে গেলো আরও ২ দিন। আবির বাড়ি নেই ৬ দিন যাবৎ। অষ্টাদশীর মনে বিষন্নতা ছেয়ে গেছে। খাই না ঠিক মতো, পড়াশোনা করে না, মোবাইল ও চাপে না, কথাও বলে না কারো সাথে। শুধু টিউশন আর কোচিং যায় আসে এতটুকুই।
আজ সকাল থেকে মনটা মাত্রাতিরিক্ত খারাপ। তানভির ডেকে এনে খাবার টেবিলে বসিয়েছে। তানভির আজকাল পার্টি অফিসের দৌড়াদৌড়িতে মেঘকে কিছুই বলে না। মেঘকে এখন আর আগের মতো বকেও না। মেঘ যেমন পাল্টে গেছে তেমনি তানভিরও পাল্টে গেছে। মেঘ খাবার টেবিলে বসে কোনো কথা না বলেই অল্প খাবার খেলো।
তানভির মোজাম্মেল খান কে প্রশ্ন করলো,
আব্বু, ভাইয়া কবে ফিরবে?
মোজাম্মেল খান যথারীতি জবাব দিলেন,
"কাজ শেষ হলে ফিরবে, কাজ এখনও শেষ হয় নি!"
মেঘের হৃদয়ে র*ক্তক্ষরণ হচ্ছে, কয়েকটা দিনেই আবির ভাইয়ের শূন্যতা খুব করে ভোগা*চ্ছে অষ্টাদশীকে।
টিউশন শেষ করে কোচিং এ গেলো দুই বান্ধবী একসাথে।
বন্যা বার বার জিজ্ঞেস করছে,
"কি হয়ছে তোর?"
মেঘ শুধু মাথা নাড়ছে একটা কথাও বলছে না।
একটা ক্লাস শেষ হয়েছে । স্যার বেড়িয়ে যাওয়া মাত্রই ওষ্ঠ উল্টে কান্না শুরু করলো মেঘ, প্রথম দিকে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদলেও নিজেকে বেশিক্ষণ কন্ট্রোল করতে পারলো না । কা*ন্নার মাত্রা বেড়ে গেছে। শ্বাস নিতে পারছে না।
মেঘের এই অবস্থা দেখে আঁতকে উঠে বন্যা। মেঘকে নিয়ে ওয়েটিং রুমে চলে যায়। ওখানে যাওয়াতে বাধভাঙ্গা কা*ন্না শুরু হয় মেঘের। বন্যা কোনোভাবেই শান্ত করতে পারছে না। ১০-১৫ মিনিট স্থির হয় এই কা*ন্না । তারপর কিছুটা থেমেছে, এখন জোরে জোরে শ্বাস ছাড়ছে৷ একটু কাঁদলেই মেঘের শ্বাসকষ্ট শুরু হয়৷
বন্যা মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে শান্ত কন্ঠে বললো,
"কি হয়েছে তোর? এভাবে কান্না করছিস কেন?"
মেঘ ফুপিয়ে ফুপিয়ে উত্তর দিলো,
"আমার খুব কা*ন্না পাচ্ছে! "
বন্যা ভ্রু কুঁচকে বললো,
"কা*ন্না পাচ্ছে তা তো দেখতেই পাচ্ছি! কিন্তু কেনো কান্না পাচ্ছে সেটা বল!"
মেঘের গম্ভীর জবাব,
"জানি না!"
বন্যা নিজেকে কন্ট্রোল করে আবার প্রশ্ন করলো,
"রেজাল্ট নিয়ে চিন্তা করছিস? নাকি চান্স পাওয়া নিয়ে? নাকি বাসায় কেউ বকেছে তোকে?"
আবারও কাঁদছে মেঘ, কাঁদতে কাঁদতেই বললো,
"আমি আবির ভাইকে খুব মিস করছি বন্যা, ওনি ফেসবুকেও আসেন না, আমি ওনাকে না দেখে, ওনার কথা না শুনে আর থাকতে পারছি না "
বন্যা এবার অবুঝ বাচ্চার মতো হাসলো, তারপর বললো,
"মিস করছিস তো কল দে"
মেঘ কাঁদতে কাঁদতেই বললো,
"ওনি কি আমার সাথে কথা বলবেন?"
বন্যা এবার স্ব শব্দে হাসলো,
"ওনি কথা বলবেন কি বলবেন না, এসব যদি তুই ভাবিস তাহলে ওনি কি ভাববেন?"
মেঘ এবার মুখ তুলে তাকালো বন্যার দিকে,
বন্যা এবার হাসতে হাসতে বললো,
"বেবি, তুমি তো আবির ভাইয়ের প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছো, সাবধান বান্ধবী ডুবে যেয়ো না, সামনে কিন্তু ভর্তি পরীক্ষা। "
মেঘ ভেংচি কেটে বললো,
আমি আবির ভাইকে ভালোবাসি..
এটুকু বলেই থেমে গেলো, না টা বলার খুব চেষ্টা করলো কিন্তু বলতে পারলো না।
বন্যা মেঘকে ঠান্ডা মাথায় বেশ কিছুক্ষণ বুঝালো৷ মেঘ শান্ত হয়ে বসে আছে।
বন্যা বললো,
"তুই তাহলে বাসায় চলে যা, ক্লাস করতে হবে না৷ ফোন দে, আমি ড্রাইভার আংকেল কে কল দিচ্ছি।। "
তারপর মেঘকে গাড়িতে দিয়ে বন্যা এসে ক্লাস টা শেষ করলো।
★★★★
মেঘ বাসায় এসে ফ্রেশ হয়েই ছুটে গেলো মায়ের রুমে। হালিমা খান ঘুমাচ্ছিলেন। মেঘ মায়ের হাতের উপর মাথা রেখে মাকে জরিয়ে ধরে শুয়ে পরেছে।৷ হালিমা খান ঘুমের মধ্যে ই একবার চোখ খুলে দেখলেন, মেঘকে দেখে মেঘের পিঠ বরাবর জরিয়ে ধরে ঘুমিয়ে পরলেন পুনরায়।
অনেকক্ষণ কান্না করায় মেঘও ক্লান্ত ছিল সেও মাকে জরিয়ে ধরে ঘুমিয়ে পরেছিলো। বেশ কিছুক্ষণ পর মেঘের ঘুম ভাঙে। ততক্ষণে হালিমা খান সজাগ হয়ে গেছেন৷ শুয়ে শুয়ে মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন। মেঘ সচরাচর মায়ের কাছে শুতে আসে না। যখন খুব বেশি মন খারাপ থাকে তখন ই আসে।
মেঘের ঘুম ভাঙতেই হালিমা খান বললেন,
"তোর কি শরীর খারাপ মা?"
মেঘ মাথা নেড়ে, না করলো
হালিমা খান পুনরায় বললেন,
"রেজাল্ট নিয়ে চিন্তা করছিস?"
মেঘ আবারও মাথা নেড়ে, না করলো
মেঘ এবার মাকে শক্ত করে জরিয়ে ধরে বললো,
"আম্মু আবির ভাই কবে আসবে?"
মেয়ের প্রশ্নে হালিমা খান মুচকি হাসলেন আর বললেন,
"কেনো ভাইয়ের জন্য পেট পু*ড়ছে?"
মেঘ মনে মনে বললো,
"পেটের সাথে মনটাও পু*ড়ছে আম্মু। "
মেঘকে নিরব দেখে হালিমা খান বললেন,
"দুপুরে তো কথা হলো, বললো আরও ২-৪ দিন লাগতে পারে। "
কথা হয়েছে শুনে সহসা মেঘের মনটা খারাপ হলো, নিজেকে সামলে বললো,
"আম্মু আবির ভাইকে কল দাও না প্লিজ।"
হালিমা খান: বিকেলেই তো কথা হলো। এখন আবার কল দিয়ে কি করবো, ছেলেটা মনে হয় ব্যস্ত।
মেঘ: আম্মু প্লিজ দাও না।
হালিমা খান নিজের ফোন হাতে নিয়ে কল দিলো আবিরকে। লাউড স্পিকারে দিয়েছেন।
কয়েকবার রিং হতেই রিসিভ হলো৷
আবির: আসসালামু আলাইকুম মামনি
আবির ভাইয়ের কন্ঠ শুনে মেঘের বক্ষস্পন্দন জোড়ালো হলো।
হালিমা খান: ওয়ালাইকুম আসসালাম। ব্যস্ত আছিস বাবা?
আবির: হ্যাঁ কিছুটা৷ কেনো?
হালিমা খান: মেঘ একটু কথা বলবে তোর সাথে!
আবির: ঠিক আছে দাও।
হালিমা খান মেঘের দিকে ফোন এগিয়ে দিলেন। মেঘ কাঁপা কাঁপা হাতে ফোন নিলো, সঙ্গে সঙ্গে লাউডস্পিকার অফ করে দিলো মেঘ।
মেঘ ধীর কন্ঠে বললো,
"হ্যালো"
আবির তৎক্ষনাৎ রেগেমেগে বললো,
"হ্যালো কি রে? প্রথমে কল দিয়ে সালাম দিতে হয় এটাও জানিস না?"
আবিরের ধমকে চুপসে গেলো মুখটা। আস্তেধীরে বললো,
"আসসালামু আলাইকুম "
আবির গম্ভীর কন্ঠেই উত্তর দিলো,
"ওয়ালাইকুম আসসালাম"
মেঘ এবার কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,
"কেমন আছেন আবির ভাই?"
আবির কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে বললো,
"আলহামদুলিল্লাহ ভালো, তুই কেমন আছিস?"
মেঘ দীর্ঘশ্বাস ফেলে উত্তর দিলো,
"আলহামদুলিল্লাহ । "
দুজনেই কয়েক সেকেন্ড নিরবতা পালন করলো,
আবির নিরবতা ভেঙে রাশভারী কন্ঠে শুধালো,
"তোর ফোন দিয়ে কল দিতে পারিস না? মামনির ফোন থেকে দিতে হলো কেনো?"
মুখের উপর মেঘ বলে ফেললো,
"আপনার নাম্বার নাই আমার কাছে"
আবির এবার দীর্ঘশ্বাস ফেললো, গম্ভীর কন্ঠে জবাব দিলো,
"রাখছি, ব্যস্ত আছি আমি। "
এই বলে কল কেটে দিলো। মেঘ আহাম্মকের মতো ফোনের দিকে তাকিয়ে রইলো। বুঝে উঠতে পারলো না ব্যাপার টা। আবির ভাইয়ের নাম্বার নেই এই কথা শুনে রেখে দিলো নাকি সত্যি ই ব্যস্ত।এটা ভেবে পাচ্ছে না অষ্টাদশী।
ফোনের স্ক্রীনে ভেসে আছে, আবির নামে সেইভ করা নাম্বার টা। মেঘ মনে মনে নাম্বার টা মুখস্থ করতে ব্যস্ত হলো। তারপর মাকে ফোন দিয়ে নিজের রুমের দিকে দৌড় দিলো।
নিজের ফোনে আবির ভাইয়ের নাম্বার টা লিখে নামের অপশনে লিখলো,
"আমার আবির সাথে লাভ ইমুজি কিছুটা দূরে লিখলো ভাই। " সেইভ করলো নাম্বারটা।
■■■■■■■■■■■■■■■■■■■■■■■
#Ch.12
আবির ভাইয়ের সাথে কথা বলেছে এই খুশিতে মেঘ সারাবাড়ি ছুটছে। কে বলবে এই মেয়েটায় এক সপ্তাহ রুম থেকে বের হয় নি, কারো সাথে কথা পর্যন্ত বলে নি। আজ সে মীম আর আদিকে নিয়ে দুষ্টামি, খুনসুটিতে মগ্ন৷ মীম আর আদিও যেনো আপুকে এভাবে পেয়ে বড্ড খুশি।
হঠাৎ জান্নাত আপু বাড়িতে ঢুকলো, মেঘকে এত হাসিখুশি দেখে জান্নাত আপুও খুশি হলো। এই ১ সপ্তাহে জান্নাত আপু যতদিন এসেছে৷ প্রতিদিন ই মেঘ মনমরা হয়ে বসে থাকে। পড়া ধরলে পারলে বলে, না পারলে চুপ থাকে, আপু বুঝালেও সারা নেই। বুঝছে কি না তাও বলে না। জান্নাত আপু কম করে হলেও ২০ বার জিজ্ঞেস করে,
"মেঘ তোমার কি হয়েছে বলো?"
মেঘ কিছুই বলে না। এতে জান্নাত আপুও চিন্তিত ছিল। ওনি নিজে থেকেই অনেক বুঝিয়েছেন, রেজাল্ট নিয়ে যেনো চিন্তা না করে, এডমিশন টেস্ট নিয়ে যেনো না ভাবে। কিন্তু মেঘ এসবে কোনো সাড়া দেয় নি। তাই আজ মেঘকে খুশি দেখে জান্নাত আপুর মুখে সহসা হাসি ফুটে উঠেছে।
জান্নাত আপু ডাকলে,
"মেঘ"
সোফায় বসা মেঘ পিছন ফিরে তাকিয়ে জান্নাত আপুকে দেখে ছুটে আসে।
মেঘ: আপু কেমন আছো?
জান্নাত: আলহামদুলিল্লাহ ভালো। তুমি কেমন আছো?
মেঘ: আলহামদুলিল্লাহ ভালো। আপু তুমি একটু বসো , আমি রুম থেকে বই খাতা নিয়ে আসছি।
বলেই সিঁড়ি দিয়ে ছুটছে রুমের দিকে। জান্নাত হাস্যোজ্জ্বল মুখে তাকিয়ে আছে মেঘের দিকে। সত্যি বলতে ছটফটে স্বভাবের মেয়েরা হঠাৎ শান্ত হয়ে গেলে সবার নজরে পরে যায়। মেঘের ক্ষেত্রেও তেমনটায় হয়েছে৷
জান্নাত আপুর পড়ায় মেঘের সম্পূর্ণ মনোযোগ আছে আজ। পড়ানোর আগেই সব বুঝে ফেলছে। জান্নাত আপু পড়িয়ে যাওয়ার পর আরও ১-২ ঘন্টা মীম আর আদির সাথে আড্ডা দিয়েছে মেঘ। নিজেও পড়ছে না ওদের কেও পড়তে দিচ্ছে না।
এতে অবশ্য মা,কাকিয়া কিছুই বলছে না। মেয়েটা যে হাসিখুশি আছে এতেই সবার ভালো লাগছে।
মোজাম্মেল খান এবং আলী আহমদ খান বাসায় ফিরেছেন কিছুক্ষণ আগে। ফ্রেশ হয়ে খেতে বসেছেন। মেঘ ও আজ সবার সাথে খেতে বসেছে। আবির ভাইয়ের চেয়ারের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো।
মনে মনে বললো,
"মিস ইউ আবির ভাই"
আলী আহমদ খান মেঘকে জিজ্ঞেস করলেন,
"মেয়েটা ভালো পড়াচ্ছে তো আম্মু?"
মেঘ হাসিমুখে উত্তর দিলো,
"আপু অনেক ভালো পড়ায় বড় আব্বু!"
'কোনো সমস্যা হলে জানাইয়ো'
স্বাভাবিক ভাবেই কথাটা বললেন আলী আহমদ খান।
মেঘও শান্ত স্বরে বললো,
"ঠিক আছে বড় আব্বু!"
মেঘ রুমে এসে শুয়ে পরেছে। আজ পড়তে একটুও ইচ্ছে করছে না৷ আবির ভাইয়ের সাথে কথা বলার খুশি, সাথে এটাও অনুভব করছে সে আবির ভাইকে ভালোবেসে ফেলেছে। এসব ভেবেই মেঘের ওষ্ঠ ছড়িয়ে আসে। সহসা ডাটা অন করে আবির ভাইয়ের আইডিতে ঢুকে। সেদিন রাগ করে ছবি ডিলিট করার পর আর ছবিগুলো ডাউনলোড করে নি। আজ আবার ইচ্ছে হলো ছবিগুলো সেইভ করার। এখন আর রা*গ, অভিমানে আবির ভাইয়ের ছবি ডিলিট করবে না এই প্রতিজ্ঞা করলো৷
আবির ভাইয়ের আইডিতে ঢুকতেই একটা পোস্ট চোখে পরে,
"আমার স্বপ্নগুলো হাতছানি দেয়,
সন্ধ্যাতারার মাঝে"
সাথে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে তুলা একটা ছবি।
২ ঘন্টা আগেই পোস্ট করেছেন।মেঘ সঙ্গে সঙ্গে ছবিতে কেয়ার রিয়েক্ট দিলো, একটা লাভ ইমুজিও কমেন্ট করলো। আবির ভাইয়ের ছবি দেখে মেঘেরও কক্সবাজার যেতে খুব ইচ্ছে করছে। কিন্তু চাইলেই তো সব ইচ্ছে পূরণ হয় না। এক দৃষ্টিতে ছবিটা কিছুক্ষণ দেখলো তারপর আস্তে আস্তে সব ছবি সেইভ করতে লাগলো৷
গ্যালারিতে একটা একটা এলবাম খুললো
নাম দিলো - Pawky Trample এখানে আবির ভাইয়ের সব ছবি একসাথে রাখলো৷
আবির ভাইকে দেখতে দেখতে কখন ঘুমিয়েছে কে জানে।
★★★★
কেটে গেলো আরও ২-৩ দিন। মেঘ নিজের রুটিন মতো খায়, গোসল করে, ঘুমাই, পড়াশোনা করে। মাঝখানে ৫/৭ দিন একদম ই পড়াশোনা করে নি। এই গ্যাপটাও এখন ফিলাপ করছে। ক্লান্ত লাগলে আবির ভাইয়ের ছবি দেখে৷
আজ কোচিং, টিউশন কিছু নেই। তাই দুপুরে খেয়ে ঘুমিয়েছে মেঘ। বিকেলে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিচে আসে কফি খাওয়ার৷ নিচে আসতেই চোখে পরে মীম আর আদি অনেক গিফট ছড়িয়ে দেখছে।
মেঘকে দেখেই আদি ছুটে যায় মেঘের কাছে।
আদি: আপু দেখো ভাইয়া কত গিফট নিয়ে আসছে আমাদের জন্য। অনেকগুলো শামুক এনেছে সবার নাম লিখা। আসো আসো
এরমধ্যে মীম ২ টা শামুক নিয়ে এসেছে। দেখো আপু তোমার নামের একটা আমার নামের একটা।।
মেঘ এক পলক তাকালো শামুকের দিকে।
শামুক গুলোর উপর সুন্দর করে ভেসে আছে নামটা,
মেঘ উত্তেজিত কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
"আবির ভাই কখন এসেছে?"
মীম হাসিমুখে উত্তর দিলো,
"কিছুক্ষণ আগেই এসেছে । "
মেঘ আর কিছু না বলে সিঁড়ি দিয়ে ব্যস্ত পায়ে উঠতে লাগলো।
মীম পিছন থেকে ডাকলো,
আপু কোথায় যাচ্ছো, আরও গিফট আনছে ভাইয়া, আসো দেখে যাও।
মেঘ গলা উঁচু করে বললো,
"একটু পরে আসছি। "
হুটোপুটি করে উঠে, অন্তহীন ছুটে আবির ভাইয়ের রুমের দিকে, ঠিক দরজার সামনে এসে থামে, উত্তেজিত হাতের ধা*ক্কায় চাপানো দরজা সহসা খুলে গেলো,
আবির শাওয়ার শেষ করে কোমড়ে টাওয়েল জড়িয়ে উন্মুক্ত শরীরে ওয়াশরুম থেকে বের হয়েছে মাত্র। সারা শরীরে বিন্দু বিন্দু পানিতে চিকচিক করছে। প্রশস্ত বুকের লোমগুলোতেও পানি জমে আছে। চুল থেকে টুপ টুপ করে পানি পরছে।
মেঘের দিকে নির্বাক চোখে তাকিয়ে আছে আবির। মেয়েটার এলোমেলো চুলগুলো উড়ছে এদিকসেদিক। এই কয়দিনেই অষ্টাদশীর মুখটা মলিন হয়ে গেছে। গায়ের রঙও কিছুটা চেপে গেছে। গভীর দৃষ্টিতে তা পরখ করতে ব্যস্ত আবির।
এদিকে আবির ভাইয়ের আবেশিত, নেশা ভরা চোখের চাউনীতে অষ্টাদশীর কোমল মনে অশান্ত, অস্থির ঢেউ আঁচড়ে পরে৷ মনে হচ্ছে সিডর, আইলা, জলোচ্ছ্বাস সবকিছু একসাথে হানা দিয়েছে। এতদিন পর প্রিয় মানুষটাকে দেখছে তাও আবার এই অবস্থায়! আবির ভাইকে এই অবস্থায় দেখে মেঘের অন্তঃস্থলে শিহরণ জাগায়।
মেঘের মনে অকস্মাৎ গান বেজে উঠলো,
"দৃষ্টিতে যেন সে রাসপুতিন
খু*ন হয়ে যায় আমি প্রতিদিন
নামধাম জানি, সাথে তার সবকিছু
তবুও নিলাম আমি তার পিছু!'
টেনে হিঁচড়ে অনেক কষ্টে দৃষ্টি নামালো মেঘ। বক্ষস্পন্দন জোড়ালো হলো। অষ্টাদশীর ভেতরটা ভরে এলো, এ যেনো প্রশান্তির হাওয়া।
আবির তখনও দুর্বোধ্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে অষ্টাদশীর পানে।
মেঘ গলা খাকাড়ি দিয়ে, দীর্ঘশ্বাস ফেলে মাথা নিচু করে কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বললো,
"Sorry"
আবিরের এবার হুঁশ ফিরে।
অবাক চোখে তাকিয়ে কপাল কুঁচকে বললো,
"SORRY কেন?"
মেঘ কন্ঠ খাদে নামিয়ে জবাব দিল,
"অসময়ে চলে আসছি তাই,"
এটুকু বলেই চলে যেতে নেয় মেঘ।
আবির হঠাৎ ই গম্ভীর গলায় বলে উঠলো,
"দাঁড়া, কি বলতে এসেছিলি বল!"
মেঘ তৎক্ষনাৎ শীতল কন্ঠে বললো,
"ভুলে গেছি "
আবির কয়েক সেকেন্ড থাকলো, ঠোঁটের কোণায় দুষ্টু হাসি, নিরুদ্বেগ কন্ঠে বললো,
"মনে করে বলে, তারপর যাবি"
আবির ভাইয়ের কথা শুনে মেঘের হাত পা কাঁপা কাঁপি শুরু হয়ে গেছে। আবির ভাই থা*প্পড় দিবে না তো!
মেঘ নরম স্বরে আস্তেধীরে আবারও বললো,।
"সরি আবির ভাই, এভাবে আর রুমে ঢুকবো না। সরি"
আবির কন্ঠ দ্বিগুণ ভারি করে, বিরক্তি নিয়ে বললো,
"এত ন্যাকামি করছিস কেনো মেঘ,
তুই কি চাচ্ছিস, এখন আমি চিৎকার দিয়ে বাড়ির সব মানুষ জড়ো করে বলি,
""ওমা গো, ও বাবা গো, মেঘ আমার স*র্বনাশ করে ফেলছে, আমায় খালি গায়ে দেখে ফেলছে, এখন আমার কি হবে!""
আবির ভাইয়ের মুখে এমন কথা শুনে মেঘ হা করে তাকালো আবির ভাইয়ের দিকে। আবির ভাইয়ে খালি গা দেখে মনের ভেতর পুনরায় উতালপাতাল শুরু হয়ে যাচ্ছে৷ মেঘের সমস্ত গায়ে স্রোতের মতো শীতল হাওয়া বয়ে যায়। তৎক্ষনাৎ মাথা নিচু করে ফেললো মেঘ৷
আবির শক্ত কন্ঠে আবার বললো,
"আমি মেয়ে না যে আমায় এই অবস্থায় দেখে ফেলছিস বলে মানসম্মান চলে যাবে। তুই কি বলতে আসছিলি সেটা বল। "
মেঘ এবার মাথা নিচু করে কাঁপা কাঁপা গলায় আস্তে আস্তে বললো,
"আপনাকে দেখতে আসছিলাম"
আবির ভ্রু কুঁচকে তাকালো, তৎক্ষনাৎ বলে উঠলো,
"দেখতে আসছিস দেখ, খোঁজ নে আমার, এত ফরমালিটি করছিস কেনো?"
মেঘ নরম স্বরে বললো,
"দেখেছি এখন আসি!"
ঘুরে এক পা ফেলতেই, আবির ডাকলো,
"তোর সাথে কথা আছে, বস এসে"
মেঘ ঠায় দাঁড়িয়ে পরলো সেখানে। মেঘের এবার রক্ত সঞ্চালণ বন্ধ হওয়ার পরিস্থিতি হলো। মুখ তুলে তাকাতেও পারছে না। মনে মনে বলছে,
"আল্লাহ বাঁচাও "
আবির আবার বললো,
"বসতে বললাম তো তোকে"
মেঘ ধীরস্থির পায়ে এগিয়ে এসে বিছানার কোণায় বসেছে৷ চিবুক নামিয়েছে গলায়। দৃষ্টি তার ফ্লোরে৷
আবির একটা টিশার্ট হাতে নিয়ে ঘুরে এসে মেঘের থেকে কিছুটা দূরে বসেছে।
আবির কঠিন স্বরে বললো,
"কি হয়েছে তোর?"
মেঘ আবারও কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বললো,
আবির ভাই আপনি কিছু একটা পড়ুন, প্লিজ।
আবির মুচকি হেসে ভেজা শরীরেই হাতের গেঞ্জি টা পরে নিলো। আর বললো,
"এবার শান্তি হয়ছে? এখন বল কি হয়েছে তোর?"
মেঘ চিবুক নামিয়ে শীতল কন্ঠে উত্তর দিলো,
"কিছু হয় নি। "
রাগান্বিত স্বরে আবির বললো,
"মেঘ, ভাবছি তোকে মেডিকেলে বিক্রি করে দিব!"
মেঘের সংকীর্ণ মুখটা আরও বেশি ছোট হলো, নিভু নিভু চোখে তাকালো আবির ভাইয়ের দিকে, পাতলা অধর নেড়ে বললো,
"কেনো? আমি কি করেছি?"
আবির অভিভূতের ন্যায় নিষ্পলক চেয়ে রইলো মেঘের দিকে, প্রখর তপ্ত স্বরে বললো,
""এইযে তুই ঠিকমতো খাচ্ছিস না, দিনকে দিন কঙ্কাল হইতেছিস, তোকে এই বাড়িতে রাখার থেকেও মেডিকেলে রাখলে বেশি কাজে দিবে।""
কন্ঠ ভিজে এলো মেঘের, নেত্র দ্বয় টলমল করছে,
কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,
"খাই তো আমি!"
আবির এবার সরু নেত্রে তাকালো মেঘের চোখের দিকে, নেত্র যুগল টইটম্বুর হয়ে আছে, পল্লব ফেললেই পানি গড়িয়ে পরবে গাল বেয়ে।
আবির দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলা শুরু করলো,
এই কয়দিনে না তুই ঠিক মতো খেয়েছিস আর না তুই ঠিক মতো কোনো কাজ করেছিস। খাওয়া আর ঘুম যে ঠিকমতো করিস নি তা তোকে দেখলেই বুঝা যাচ্ছে। চুল গুলো কতদিন আঁচড়াস না আল্লাহ জানে। এমনকি তুই পড়াশোনাও করিস না। কোচিং, টিউশনের প্রতিটা পরীক্ষায় কম নাম্বার পেয়েছিস
একটু থেমে রাগে কটমট করে বললো,
"তুই কি পড়াশোনা করতে চাচ্ছিস না? তুই পড়াশোনা না করলে বল আমি বাড়ির সবার সাথে কথা বলে নিবো। আজকের পর কোনোদিন তোর বই নিয়ে বসতে হবে না। এরজন্য তোকে কেউ কিচ্ছু বলবে না!"
মেঘের গাল বেয়ে অঝোরে পানি পরছে। কান্নারত কন্ঠে বললো,
"আমি পড়াশোনা করবো!"
আবির পুনরায় গুরুভার কন্ঠে বললো,
"১ সপ্তাহে কোচিং, টিউশনের পরীক্ষায় কম নাম্বার পাওয়ার কারণ কি?"
মেঘ ভণিতা ছাড়ায় বলে উঠলো,
কম পায় নি তো!
আবির দাঁতে দাঁত চেপে, কন্ঠ তিনগুণ ভারি করে বললো,
"আমার সামনে অন্ততপক্ষে মিথ্যা বলিস না। প্রতিটা ৩০ মার্কের পরীক্ষায় তুই ১২/১৫/২০ পেয়েছিস। এগুলো কি খারাপ মার্ক না? এই মার্ক পেলে তুই জীবনে চান্স পাবি?"
মেঘ অকস্মাৎ আবির ভাইয়ের দিকে তাকায়,আওয়াজ বিহীন কান্নায় গাল বেয়ে গলায় এসেছে অশ্রুরা।
ভেজা কন্ঠে অবাক চোখে তাকিয়ে বললো,
"আপনি কিভাবে জানেন?"
আবির উদ্বেলিত ভঙ্গিতে তাকিয়ে আছে অষ্টাদশীর পানে, শক্ত কন্ঠে বললো,
"মেঘ আমি তোকে ছাড় দিয়েছি, ছেড়ে দেয় নি!
তুই কি ভাবছিস তোর কোনো খবর আমার কাছে নাই? তোর কোচিং এর পরিচালক আমার স্কুল ফ্রেন্ড। তাছাড়াও তোর নাম্বারের পাশে গার্ডিয়ানের যে নাম্বার টা দেয়া কোচিং এ সেটাও আমার নাম্বার। তুই পরীক্ষায় কত পাস, তোর কবে কি পরীক্ষা সব মেসেজ যেমন তোর কাছে যায়, তেমনি আমার কাছেও আসে। তোর টিউশনের স্যারও আমার পরিচিত। তুই যেদিকে পা দিবি সবটায় আমার দখলে। তাই মিথ্যা বলা, কোনোকিছু লুকানোর চেষ্টা কখনো করিস না!"
মেঘ আহাম্মকের মতো তাকিয়ে কথা গুলো শুনলো, দুরু দুরু বুক কা*পছে। উদগ্রীব চোখদুটো লম্বাচওড়া মানুষটার মুখের দিকে৷ কান্না থেমে গেছে। গালে পানির দাগ স্পষ্ট । উদ্বেগহীন চাউনী আবির ভাইয়ের।
কয়েক মুহুর্ত চোখাচোখি হলো দুজনের।শেষমেশ আবির ভাই দৃষ্টি ফেরালো।
মেঘ আর কিছু বলার ভাষা খোঁজে পাচ্ছে না। চুপচাপ পা বাড়ায় দরজার দিকে,
আবির সহসা ডাকে,
"দাঁড়া!"
মেঘের পা কাঁপছে,
আবির হাতে একটা শপিং ব্যাগ নিয়ে এগিয়ে আসলো মেঘের কাছে। আবির ভাই কাছাকাছি আসতেই নাকে লাগলো চিরচেনা, পরিচিত গতরের গন্ধ৷ মাত্র শাওয়ার নেয়ায় সে গন্ধটা যেনো অন্যরকম সুন্দর লাগছিলো।
আবির শপিং ব্যাগ এগিয়ে দিলো মেঘের দিকে। আর বললো,
"এগুলো তোর, আর আজকের পর পরীক্ষা, পড়াশোনা, নিজের যত্নে একটুখানি ত্রুটি যদি আমি দেখি তাহলে আর মুখে কিছু বলবো না। যা এখন"
আবির ভাইয়ের ঠান্ডা হুমকিতে কম্পিত হলো অষ্টাদশীর দেহ। আঙ্গুল শুদ্ধ কাঁপছে। কাঁপা হাতে শপিং ব্যাগ নিয়ে ছুটে পালালো রুম থেকে।
নিজের রুমের দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকলো। শপিং ব্যাগটা বিছানার পাশে রেখে বিছানায় শুয়ে পরলো মেঘ। শপিং ব্যাগ টা খুলে দেখার ইচ্ছেও করছে না। ইচ্ছের থেকেও বড় বিষয় সেই শক্তিটায় পাচ্ছে না। বিছানায় শুয়ে চোখ বন্ধ করতেই চোখের সামনে ভেসে উঠলো আবির ভাইয়ের সেই উন্মুক্ত দেহ, গায়ে চিকচিক করতে থাকা বিন্দু বিন্দু পানি, সেই ধারালো চাউনী। অষ্টাদশীর হৃদয়ে লাগছে বসন্তের হাওয়া।। হৃদপিণ্ডের কম্পনের মাত্রা এতটায় তীব্র যা সহ্য করতে না পেরে মেঘ ডানহাত দিয়ে চেপে ধরেছে। কিন্তু তাতেও যেনো কম্পন থামছে না।
সহসা চোখ মেলে তাকালো মেঘ।
চোখের সামনে থেকে যেনো আবির ভাই সরছেই না। চোখ বন্ধ করলেও আবির ভাইকে দেখছে, চোখ মেলে তাকালেও আবির ভাইকেই দেখছে৷ আর বার বার মাথায় আসছে, আবির ভাইয়ের বলা কথা গুলো,
"মেঘ তোকে ছাড় দিয়েছি, ছেড়ে দেয় নি!"
আবার মনে হচ্ছে,
"তুই যেদিকে পা দিবি সবটায় আমার দখলে"
এসব ভেবেই বারবার কেঁপে উঠছে অষ্টাদশী সাথে এক অন্যরকম অনুভূতি কাজ করছে । প্রতিটা মেয়েই চাই তার প্রিয়জন তাকে আগলে রাখুন, চোখেচোখে রাখুক তেমনি মেঘের কাছে আবির ভাইও প্রিয়মানুষ৷৷ আবির ভাই যদি বোনের নজরেও দেখে তারপরও তে মেঘ কে নিয়ে ভাবে এটা ভেবেই মানসিক শান্তি পাচ্ছে মেয়েটা।
এভাবে চললো ৩০ মিনিটের উপরে৷ তারপর ঘুমের দেশে তলিয়ে গেলো মেঘ।
উঠলো ঠিক সন্ধ্যে নামার আগে। ফ্রেশ হয়ে এসে তৎক্ষনাৎ শপিং ব্যাগটা টেনে আনলো নিজের কাছে৷ শপিং ব্যাগটা উল্টে সবগুলো জিনিস বিছানার উপর ফেললো।
অনেক ছোট ছোট জিনিস এলোমেলো হয়ে পরে আছে বিছানার উপর। কম করে হলেও ১৫-২০ টা হাতের ব্রেসলেট, মুক্তার মালা, কানের দুলের সংখ্যা অগণিত। দেখে মনে হচ্ছে ওনি বেছে দেখার সময় পান নি। যা পেয়েছেন সব নিয়ে নিয়েছেন। বড় একটা শামুকে লিখা, "My Pursuit" আরেকটা শামুকে লিখা, #মাহদিবা_খান_মেঘ এছাড়াও অসংখ্য ছোট ছোট শামুক একটা কাঁচের বয়ম ভরা যার সবগুলোই আবির নিজের হাতে কুড়িয়ে এনেছে। এগুলো বাদের আরও যা যা সাজার জিনিস ছিল, খাবার জিনিস যেগুলোর টেস্ট ভালো এগুলো দিয়েছে মেঘকে।
মেঘ বিস্ময়কর চোখে তাকিয়ে দেখছে সবগুলো জিনিস,
প্রিয়মানুষের নাম অথবা প্রিয়জনের কন্ঠ যেখানে আকাশ সম মন খারাপ দূর করতে সক্ষম সেখানে তার দেয়া সামান্যতম উপহারও অমূল্য সম্পদ ।
আবির ভাই যে তার কথা ভেবে আলাদা ভাবে জিনিস গুলো এনেছেন এতেই যেনো অষ্টাদশী খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেছে।। একটা মুক্তার মালা গলায় পরলো, দুহাতে দুটা ব্রেসলেট, কানেও দুল পরলো এক সেট। ঠোঁটে হালকা গোলাপি কালার লিপস্টিকও দিয়েছে।
উত্তেজিত পায়ে বাহিরে বের হলো নিজের রুম থেকে। সিঁড়ি দিয়ে নামতে যাবে তখন ই চোখ পরে আবির ভাই উঠতেছে সিঁড়ি দিয়ে। হয়তো কোথাও গিয়েছিলেন,
মেঘ সিঁড়ি দিয়ে আর নামে নি ঠায় দাড়িয়ে আছে সেখানে। বুকের ভেতর ধুকপুক করছে।
আবির ভাই কাছাকাছি আসতেই উত্তেজিত কন্ঠে বলে উঠলো,
"আবির ভাই, আমাকে কেমন লাগছে? "
আবির সিঁড়ি থেকে চোখ তুলে মেঘের দিকে তাকালো, কয়েক সেকেন্ড পর চোখ নামিয়ে বললো,
"ভালো!"
এমন ভাবলেশহীন উত্তরে মেঘের উত্তেজনা মিলিয়ে গেছে, মলিন হয়ে গেলো মুখটা, তবুও কিছুটা স্বাভাবিক স্বরে বললো,
"Thank You Abir Vai"
আবির নিজের মতো রুমের দিকে চলে যায়।
মেঘ কিছুক্ষণ এখানেই দাঁড়িয়ে থাকে আর মনে মনে বলে,
"সুন্দর লাগছে বললে কি আপনার জাত চলে যেতো?
হি*টলার একটা"
........................................................................
𝐓𝐎 𝐁𝐄 𝐂𝐎𝐍𝐓𝐈𝐍𝐔𝐄𝐃
***Download NovelToon to enjoy a better reading experience!***
Updated 62 Episodes
Comments