𝐓𝐇𝐄 𝐈𝐍𝐃𝐄𝐗
#Ch.01
৭ বছর পর বাড়ি ফিরছে খান বংশের বড় ছেলে #সাজ্জাদুল_খান_আবির । বাড়ি ফিরছে বললে ভুল হবে বিদেশ থেকে দেশে ফিরছে আবির। এই ৭ বছরে খান বাড়িতে ঘটে গেছে অনেক ঘটনা যার সাথে স্ব শরীরে যুক্ত নেই আবির, তবে আত্মিকভাবে প্রতিটা ঘটনায় জরিয়ে আছে সে৷
আবিরের বাবা চাচা তিনজন, আবিরের বাবা সবার বড় নাম,'আলী আহমদ খান'
তানভীরের বাবা মেজো নাম, 'মোজাম্মেল খান'
ছোট চাচ্চুর নাম ' ইকবাল খান'
আবির তার বাবা মায়ের একমাত্র ছেলে৷
মেজো চাচা মানে মোজাম্মেল খানের এক ছেলে এক মেয়ে। ছেলের নাম #তানভির_খান। মেয়ের নাম #মাহদিবা_খান_মেঘ
ছোট চাচার এক মেয়ে এক ছেলে মীম আর আদি। এখনো তারা এলাকার যৌথ পরিবারগুলোর মধ্যে শ্রেষ্ঠ। বাড়ির সকলের প্রাণ যেনো এক সুতোয় বাঁধা ।
৫ ভাইবোনের মধ্যে আবির সকলের চোখের মনি। আবিরের জন্মের পর তার বাবা মা দ্বিতীয় সন্তান নেওয়ায় চিন্তায় করেন নি। HSC পর্যন্ত সে বাড়িতেই ছিল সবার নয়নের মনি৷ আবিরের চাঞ্চল্যে মেতে থাকতো খান বাড়ি৷ আচমকা যেনো পরিবেশটা পাল্টে গিয়েছিল। ১৮ বছর বয়সে আবিরের হঠাৎ করে স্কলারশিপে বিদেশে পড়তে যাওয়া, বাড়ির সকলের সাথে শারীরিক ভাবে যেমন দূরত্ব বেড়েছিল৷ তেমনি দূরত্ব বেড়েছে মানসিকতার৷
৭ বছর পূর্বের আবিরের সাথে বর্তমান আবিরের আকাশ পাতাল পার্থক্য। দেখেও যেনো চেনার উপায় নেই। ৬ ফুট লম্বা ছেলেটা গায়ের রঙ শ্যামলা, গাল ভর্তি ছাপ দাঁড়ি, চুলের স্টাইল কোনো নায়কের থেকে কম না তার ফ্যাশন আর লুকে যেকোনো মেয়ে এক দেখাতেই প্রেমে পরতে বাধ্য৷
প্লেনে বসে আবির অবলীলায় ভেবে যাচ্ছে অতীতে ফেলে আসা স্মৃতি গুলো।
সেই চাঞ্চল্যকর মুহুর্তগুলো এখন শুধুই স্মৃতির পাতায়। মা কে রেখে এসেছিল সেই যৌবনের প্রথম দিকে যখন তার বয়স ছিল ১৮ ৷ সেই সময়ে মা ই ছিল তার একমাত্র বন্ধু৷ আজ সে ২৪ বছরের যুবক। এতগুলো বছরের একটা দিনও বাদ যায় নি যে মায়ের সাথে ফোনে কথা বলে নি সে। বাড়ির সকলের সাথেই মোটামুটি কথা বলার চেষ্টা করেছে৷ ছোটবেলার স্মৃতি গুলো ভাবতে ভাবতে নিজের দেশে পৌছে গিয়েছে আবির৷
এয়ারপোর্টে আবিরের বাবা 'আলী আহমদ খান' আর তানভীর দাঁড়িয়ে আছে। তানভীর সম্পর্কে তার চাচাতো ভাই আর বয়সে ২ বছরের ছোট কিন্তু দুজন দুজনের বেস্ট ফ্রেন্ড আর কলিজার বন্ধু । তানভীর আবিরকে দেখেই দৌড়ে এসে জরিয়ে ধরলো। এই ৭ বছরে একবারের জন্য ও বাড়ি ফেরেনি আবির। তবে প্রতিনিয়ত কথা হয় আবির তানভীরের।
আবির তার আব্বুকে সালাম করে জরিয়ে ধরে। তারপর বাড়ি ফিরে তিনজন। বাড়িতে যেনো হৈহৈ রৈরৈ ব্যাপার । হবে নাই বা কেন
বাড়ির বড় ছেলে এত বছর পর বাড়ি ফিরছে। রান্নাঘরে বাহারি রকমের রান্নার ধুম পরেছেন মা চাচিদের। হঠাৎ দরজায় আবিরকে দেখে সবার মধ্যে হৈচৈ শুরু হয়ে গেছে। আবিরের আম্মু দৌড়ে এসে জরিয়ে ধরলেন ছেলেকে। আবেগাপ্লুত হয়ে মাকে জরিয়ে ধরলো আবির।
মমতাময়ী মাকে সেই ৭ বছর আগে ছুঁয়েছিল আজ এত বছর পর মায়ের ছোঁয়া পেলো আবির। মা চাচিদের সালাম করলো। সোফায় বসিয়ে ছেলেকে একের পর এক শরবত নাস্তা দিতে ব্যস্ত সবাই। এরিমধ্যে উদয় হলো মীম আর আদির৷ মিমের বয়স ১৪ বছর। তার ছোটভাই আদির বয়স মাত্র ১০ বছর। আদিই এই বাড়ির সবচেয়ে ছোট । আবির যখন দেশ ছেড়ে ছিল তখন আদির ৩ বছর হয়েছে মাত্র৷ ভিডিও কলে দেখতে দেখতে ভাইকে সে একটু একটু চিনে৷ দৌড়ে এসে জরিয়ে ধরেছে ভাই কে। আবিরও জরিয়ে ধরেছে আদিকে। মীম ও আবিরের পাশে বসেছে৷ খোঁশগল্প করছে সবাই মিলে৷
আদি জিজ্ঞেস করছে
'ভাইয়া, আমার জন্য কি এনেছো? '
আবির যেইনা উঠতে যাবে মা চাচিরা উঠতে দিচ্ছে না। আগে শরবত খাবি তারপর উঠবি। আবির তানভিরের দিকে তাকিয়ে বললো
'ঐ লাগেজ টা নিয়ে আয় তো '
তানভির একটা লাগেজ টান দিতে যাবে আবির আচমকা বসা থেকে দাঁড়িয়ে
'ঐটা তে ছুঁবি না '
তানভির সহ বাড়ির সকলেই যেনো অবাক হয়ে গেলো।
আবির আবার ঠান্ডা মাথায় বললো পাশের লাগেজ টা নিয়ে আয়....
তানভিরও তার কথা মতো লাগেজ নিয়ে আসলো৷ লাগেজ খুলে যে যার মতো জিনিস বের করছে আর জিজ্ঞেস করছে এটা কার,ঐটা কার। আবির শরবত খেতে খেতে উত্তর করছে।
আদির জন্য বিদেশি দামি দামি খেলনা, মীমের জন্য ড্রেস,কসমেটিকস বক্স, মা কাকিদের জন্য অনেক গিফট। তানভীরের জন্য মোবাইল, একটা ল্যাপটপ অন্যান্য গিফট৷ আলাদা আরেকটা ল্যাপটপ আছে।
মীম জিজ্ঞেস করছে, 'ভাইয়া এই ল্যাপটপ টা কি তোমার? '
আবির উত্তর দেয়, 'না এটা মেঘের'
মেঘের মা ' হালিমা খান' জিজ্ঞেস করলেন মেঘের ল্যাপটপ কি দরকার বাবা?
আবিরঃ ওর তো HSC পরীক্ষা শেষ৷ সামনে Admission Test আছে। অনেক কিছু জানার বা পড়ার দরকার আছে৷ মোবাইল দেখে পড়ার থেকে ল্যাপটপে সুবিধা হবে তাই নিয়ে আসলাম।
মীমঃ আমার জন্যও নিয়ে আসতা একটা..!!
আবির অবলীলায় হেসে উত্তর দেয়,
'তোর ১৮ বছর বয়স হলে তোকেও কিনে দিব। চিন্তা করিস না। '
মীম খুশিতে গদগদ হয়ে বলে,
'ধন্যবাদ, ভাইয়া।'
বাড়ির হৈচৈ শুনে ঘর থেকে বের হলেন ছোট চাচা ইকবাল খান। আবির চাচ্চুকে দেখেই সালাম করতে যায়, চাচ্চু বাঁধা দিয়ে জরিয়ে ধরেন ভাতিজা কে। ইকবাল খান বাড়ির সকলের দিকে এক পলক তাকিয়ে নরম স্বরে বলেন,
'এতদিনে এই বাড়িটা পরিপূর্ণ হলো৷'
ইকবাল খানের জন্য আনা উপহার আবির নিজের হাতেই চাচ্চুকে দিলো। বাকিদের জিনিস গুলোও একটা একটা করে দিলো আবির। মেজো চাচ্চু মানে মোজাম্মেল খান বাসায় নেই। তাই ওনার জন্য আনা গিফট যত্ন করে রেখে দিলো আবির৷ লাগেজে পরে আছে একটা বক্স যেটা রেপিং পেপারে মুড়ানো আর একটা শপিং ব্যাগ।
আদি জিজ্ঞেস করল,
'ভাইয়া ঐটা কার?'
আবির ল্যাপটপের পাশে বক্স আর শপিং ব্যাগ টা রেখে উত্তর করল,
'এগুলো মেঘকে দিয়ে দিও। আমি রুমে যাচ্ছি। '
ইকবাল খান এক পলক সবার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,
'মেঘ কোথায়?'
হালিমা খান উত্তর দিলেন,
'ও তো কোচিং এ গেছে, এতক্ষণে তো চলে আসার কথা। '
আবির বাকি ২টা লাগেজ নিয়ে উঠতে চাচ্ছিলো, হঠাৎ পিছন ফিরে মায়ের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করল,
'আমি কোন রুমে থাকবো?'
ছেলের এমন প্রশ্নের জন্য মা 'মালিহা খান' হতভম্ব হয়ে পরলেন,তৎক্ষনাৎ স্বাভাবিক হয়ে উত্তর করলেন,
'তোর রুম তোরই আছে ৷ আজ সকালেই পরিষ্কার করা হয়েছে৷'
আবির কোনো কথা না বলে দুই লাগেজ নিয়ে উঠতে গেলে তানভির এগিয়ে আসে৷ আমায় দাও আমি নিয়ে যাচ্ছি। আবির একটা লাগেজ তানভিরের দিকে এগিয়ে দেয়৷ নিজে আরেকটা লাগেজ সযত্নে নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে উঠতে থাকে৷
ততক্ষণে দরজায় এসে উপস্থিত হয় এই বাড়ির বড় মেয়ে #মাহদিবা_খান_মেঘ
মীম মেঘকে দেখে দৌড়ে এসে বলে,
'আপু আপু, আবির ভাইয়া এসেছে'
মেঘ সিঁড়ি দিকে তাকায়, লম্বা স্বাস্থ্যবান সুপুরুষ দেহি একজন হাতে লাগেজ নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে উঠছে। শুধু পিছন টা দেখা যাচ্ছে। মেঘ ভিতরে ঢুকে সবার হাতে গিফট দেখে এদিক সেদিক তাকায়। ততক্ষণে আবির নিজের রুমে চলে গিয়েছে। মেঘের মা 'হালিমা খান' মেয়ের দিকে এগিয়ে এসে বলেন,
' তোর জন্য গিফট এনেছে।'
মেঘ তাকিয়ে বলে,
'কি গিফট?'
হালিমা খান চোখে ইশারা দিলেন,সোফায় রাখা ল্যাপটপের দিকে চোখ পরে মেঘের। ছুটে যায় ল্যাপটপের কাছে। জিজ্ঞেস করে,
'এটা কি আমার?'
মীম বলে,
'হ্যাঁ আপু এটা তোমার, বক্সটা আর শপিং ব্যাগটাও তোমার ।'
ল্যাপটপ টা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখছে মেঘ, যেন আকাশকুসুম কিছু পেয়ে গেছে৷ তারপর শপিং ব্যাগ টা একটু খুলে দেখল ২ টা ড্রেস মনে হচ্ছে৷ সে ল্যাপটপ আর বক্স গুলো নিয়ে রুমের দিকে চলে যাচ্ছে।
■■■■■■■■■■■■■■■■■■■■■■■
#Ch.02
এতবছর পর নিজের রুমটা আশ্চর্যান্বিত নয়নে দেখছে আবির। সেই পরিচিত ঘ্রাণ যেখানে সে নিজের জীবনের ১২ টা বছর কাটিয়েছিলো। যেই রুমটা ছিল তার একান্ত ব্যক্তিগত, আজও তাই আছে। একটা জিনিসও এদিক সেদিক হতে দেন নি আবিরের মা 'মালিহা খান'। এমনকি রুমে বছরের পর বছর তালা দিয়ে রেখেছেন তিনি৷ যখন ই ছেলের কথা মনে হতো ছেলের রুমে এসে নিরবে কেঁদে যেতেন যেনো কেউ বুঝতে না পারে৷
আবির রুমে ঢুকে লাগেজ খুলে নিজের পরনের টিশার্ট হাতে শাওয়ার নিতে চলে যায়। শাওয়ার শেষে বের হলেন একটা কফি কালার টিশার্ট আর একটা টাওজার পরে হাতে টাওয়েল নিয়ে মাথার চুল মুছতে মুছতে। খাটে বসে আছে তানভির। লাগেজ নিয়ে এসে রুমেই বসে আছে সে৷
তানভির কে দেখে আবির জিজ্ঞেস করছে,
'কি হলো, কিছু বলবি?'
তানভির মুচকি হেসে জিজ্ঞেস করছে
'আচ্ছা ভাইয়া ঐ লাগেজটা ধরতে দিলে না কেন? কি আছে ঐটাতে?'
আবিরের চক্ষুদ্বয়ে উদ্বেগ স্পষ্ট, চোয়াল শক্ত করে উত্তর দিল,
'ঐটাতে আমার পার্সোনাল কিছু জিনিস আছে৷'
তানভির হাসতে হাসতে উত্তর দেই,
' সেই পার্সোনাল জিনিস গুলো দেখতে চাচ্ছে আমার অবুঝ মন, কি করবো বলো?'
স্বভাবসুলভ গম্ভীর কন্ঠে উত্তর দিলো আবির
'কাউকে দেখানোর জিনিস আশা করি পার্সোনাল হবে না?'
তানভির ভাইয়ের আপত্তিস্বর বুঝতে পেরে এই বিষয়ে আর কিছু বলে নি৷
শুধু জিজ্ঞেস করে,
"বিকালে কি বের হবে?"
আবির উপর নিচ মাথা নেড়ে হ্যাঁ সূচক সম্মতি জানায়৷
তানভির কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ বিদায় নেয় রুম থেকে৷
আবির খাটের এক কোণায় বসে মোবাইল হাতে নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু চেক করতে ব্যস্ত হয়ে পরে।
★★★
মেঘ নিজের রুমে ঢুকে শপিং ব্যাগ খুলে ৩ টা ড্রেস বের করলো। ৩ টা জামা ই অসাধারণ সুন্দর। ২ টা গাউন ড্রেস আর একটা গর্জিয়াছ কাজের থ্রিপিস। ল্যাপটপ টাও খুলে দেখে, তার প্রয়োজনীয় সকল এপ ব্রাউজার অলরেডি ল্যাপটপে সেট করা আছে।
মেঘের দৃষ্টি যায় রেপিং পেপারে মোড়ানো বক্সের দিকে। রেপিং পেপার খুলতেই চোখে পরে ৩ টা উপন্যাসের বই যেগুলোর উপরে ছোট একটা চিরকুটে লিখা 'এডমিশনের পরে পড়বি'৷ তারসাথে একটা ছোট বক্স যেখানে একবক্স রঙিন পাথর। মেঘের এই পাথর গুলো ছোটবেলায় খুব পছন্দ ছিল। তার সাথে একটা iPhone 13 pro max মোবাইলের বক্স। ফোন দেখে মেঘের চক্ষু চরখগাছ। অনেকদিন যাবৎ মনের কোণে সুপ্ত ইচ্ছে ছিল একটা আইফোন কেনার৷ কিন্তু কাউকে বলার মতো সাহস হয় নি তার। এগুলো দেখে খুশিতে গদগদ হয়ে পরেছে মেঘ৷
ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পড়াকালীন মেঘের যখন কলেজ, প্রাইভেট, কোচিং সব মিলিয়ে ব্যস্ততায় দিন কাটছিলো, তখন তানভির তার পুরোনো একটা ফোন দিয়েছিল মেঘকে। সীমটাও ছিল তানভিরের, বাসার মানুষের বাহিরে শুধু ৩-৪ জন বান্ধবীর নাম্বার ছিল সেই ফোনে। এমনকি স্যারদের কেও নাম্বার দিতে নি*ষেধ করেছিল ক*ড়া ভাষায়।। তানভির বরাবর ই বোনের ব্যাপারে খুব সিরিয়াস৷ ভাইরা বোনকে শা*সন করে ঠিক আছে কিন্তু তানভীর মেঘকে একটু বেশিই শা*সনে রেখেছে এত বছর৷ HSC পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে তানভিরকে খুব সা*হস করে বলেছিলো,
'ভাইয়া পরীক্ষা শেষ করে আমায় একটা নতুন ফোন কিনে দিবা?'
অ*গ্নিদৃ*ষ্টিতে তাকিয়ে ছিল তানভির, যেনো মস্ত বড়ো অ*ন্যায় করে ফেলেছে। তারপর মেঘ নতুন ফোনের আশা পুরোপুরি ছেড়ে দিয়েছিল। আজ সে না চাইতেই আইফোন পেয়ে গেছে, ল্যাপটপ পেয়ে গেছে৷ এ যেনো মেঘ না চাইতেই জল৷ আনমনে ভাবছে, মনে হয় তানভির ভাইয়া বলেছে ফোন আনতে আর ল্যাপটপ আনতে নাহলে ওনি কিভাবে জানবে আমার ফোন নেই।
এদিকে ১ ঘন্টা যাবৎ ফোনে মনোযোগ দিয়ে কি যেনো কাজ করছে আবির। হঠাৎ আদি দৌড়ে এসে দাঁড়ায় দরজায়,
আদিঃ ভাইয়া তোমায় খেতে ডাকছে।
আবিরঃ যা, আসছি।
১০ মিনিটের মধ্যে সাদা শার্ট পরে রেডি হয়ে নিচে নামলো আবির।
অসময়ে তেমন কেউ নেই নিচে৷ বিকাল ৪ টা বাজে৷ সবার খাওয়া শেষ অনেক আগেই। মালিহা খান বসে ছিলেন ছেলের জন্য। ছেলের ফিটফাট হয়ে রেডি হওয়া দেখে মালিহা খান জিজ্ঞেস করছেন,
'কোথাও যাবি?'
আবির বলল,
' হ্যাঁ,একটু কাজ আছে!'
আবির চুপচাপ খাবার খাচ্ছে। ছোটবেলা যা যা সে পছন্দ করতো সব রান্না হয়েছে আজ। সব খেতে পারে নি যতটুকু সম্ভব খেয়ে উঠে পরেছে। এরমধ্যে তানভির হাজির হয়েছে। শান্ত কন্ঠে বলল,
'ভাইয়া রেডি আমি, এখন যাবে নাকি লেইট হবে?'
'এখনই বের হবো'
মালিহা খান রান্নাঘর থেকে ডেকে বলছেন,
'গাড়ি নিয়ে বের হবি না? চাবি নিয়ে যা..'
'গাড়ি লাগবে না আম্মু'
দুই ভাই বের হয়ে গেল।
★
যৌথ পরিবারগুলোর সবচেয়ে আনন্দময় সময় হলো সন্ধ্যাবেলা। বাড়ির সকলে মিলে হৈচৈ করে বিকালের নাস্তা খাওয়া,একটু টিভি দেখা, খেলাধুলা করা,আড্ডা দেয়া৷ সমস্যা শুধু বড় ভাই। তানভির সবসময় মেঘকে চোখে চোখে রাখে৷ কি করছে,কি না করছে, কখন খাচ্ছে, পড়াশোনা করছে কি না এসবকিছু দেখায় যেনো তার একমাত্র কাজ। কিন্তু মীম আর আদিকে কোনোদিন একটা ধ*মক পর্যন্ত দেয় নি তানভির। এ কেমন দুমুখো ব্যবহার। তানভির যতক্ষণ বাসার বাহিরে থাকে মেঘ ততক্ষণ মুক্ত,স্বাধীন । তানভির বাসায় না থাকায় তিনভাই বোন মিলে ছোটাছুটি করছে। মেঘ যা বলে ছোট ২ টা তাই করে। মেঘ আর আবিরের এখনও দেখা হয় নি। মেঘ কোচিং থেকে এসে রুমে যে ঢুকেছিল। তার গিফট নিয়ে ব্যস্ততার কারণে সবে মাত্র রুম থেকে নিচে এসেছে। অন্যদিকে আবির বাসা থেকে চলে গেছে আরও ২ ঘন্টা আগে৷ মেঘ,মীম আর আদির ছোটাছুটি শেষ হয় বড়ো আব্বু 'জনাব আলী আহমদ খানের' বাসায় প্রবেশ দেখে৷ আলী আহমদ খান বাসায় ঢুকতে ঢুকতে নিজের স্ত্রী মালিহা খানকে জিজ্ঞেস করলেন,
'আবির কোথায়?'
মালিহা খান উত্তরে বললেন,
'ও তো তানভিরকে নিয়ে বের হলো বললো কি কাজ আছে'
আলী আহমদ খান সোফায় বসতে বসতে মেঘের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলেন,
'পড়াশোনার কি অবস্থা, আম্মু?'
মেঘ শান্তস্বরে উত্তর করল,
"আলহামদুলিল্লাহ ভালো বড় আব্বু। তবে.. "
'তবে কি?'
প্রশ্ন করলেন আলী আহমদ খান
'আমার ফিজিক্স আর ম্যাথে একটু সমস্যা, কোচিং এর সাথে কুলাতে পারছি না। প্রাইভেটগুলোতেও অনেকটা এগিয়ে গেছে।'
আলী আহমদ খান বললেন,
' ঠিক আছে তোমার জন্য প্রাইভেট টিউটর নিয়ে আসবো। কাল বা পরশুর মধ্যেই ম্যানেজ করতেছি , তুমি চিন্তা করো না মন দিয়ে পড়াশোনা করো আম্মু৷ তোমার ভাই তানভির তো আমার কোনো কথা শুনে না আর না শুনে তোমার আব্বুর কথা। কোথা থেকে মাথায় ভূত চেপেছে রাজনীতি করবে৷ পড়াশোনায় গুরুত্ব না দিয়ে রাজনীতিতে গুরুত্ব দিচ্ছে। তুমি পড়াশোনা করো ভালো করে, মেডিকেলে অথবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যেনো চান্স টা হয়ে যায়।'
'জ্বি বড়ো আব্বু, চেষ্টা করবো।'
'খেয়েছো কিছু তোমরা?'
আলী আহমদ খান জিজ্ঞেস করলেন
এবার উত্তর টা মীম দিল,
'হ্যাঁ বড় আব্বু খেয়েছি আমরা'
'ঠিক আছে, এখন রুমে গিয়ে পড়তে বসো।'
৩ ভাই বোন কোনো কথা না বলে তিনদিকে যার যার রুমে চলে যাচ্ছে।
★★★★
রাত ৯ টায় বাড়িতে ঢুকে আবির আর তানভির। খাবার টেবিলে খেতে বসেছেন ৩ ভাই আর আদি। মীম, মেঘ কেউ নেই। রান্নাঘরে তিন জা খাবার রেডি করছেন। বিকেলে আবির সাদা শার্ট পরে বেরিয়েছিল। সাদা শার্টের ২-৩ জায়গায় একটু একটু রক্ত লেগে আছে আর আবিরের হাতে ৩ টা ওয়ানটাইম ব্যান্ডেজ লাগানো, নজরে পরে ইকবাল খানের।
'কিরে আবির,তোর হাতে কি হয়েছে? শার্টেই বা দাগ কিসের?'
এই কথা শুনে ছুটে আসেন মালিহা খান,
'কি হয়েছে আবির?'
বুকের ভেতর ছ্যাত করে উঠেছে, একমাত্র ছেলের শরীরে একটা আচড় ও মা সহ্য করতে পারেন না।
আবিরঃ তেমন কিছু না, হাতে একটু লেগেছিল । ঠিক হয়ে যাবে, চিন্তা করো না।
আর কথা না বাড়িয়ে সিঁড়ির কাছে চলে যায় আবির।
আলী আহমদ খান ছেলের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করেন, 'খাবে না?'
'না আব্বু। বিকেলে খেয়েছি খিদে নেই। '
এই বলে রুমের দিকে চলে যায় আবির। আবিরের কন্ঠ শুনে মেঘ রুম থেকে বের হয় তাড়াতাড়ি, এতগুলো গিফট দিলো অবশ্যই ধন্যবাদ জানানো উচিত, ৭ বছরে ভাইয়ের মুখটাও দেখে নি সে৷ কিন্তু মেঘ রুম থেকে বের হতে হতে আবির রুমে ঢুকে পরেছে। মেঘের চোখ মুখে নিরবতা, নিচে গিয়ে সবার সাথে খেতে বসে, তানভিরও খেতে বসেছে হাতমুখ ধুয়ে।
ইকবাল খান তানভিরের উদ্দেশ্যে বলে,
'তুই তো ছিলি আবিরের সাথে, কি হয়েছে বল?'
তানভির: চাচ্চু আমি তো ভাইয়ার সাথে বের হয়েছিলাম কিন্তু পরে আমি পার্টি অফিসে চলে গিয়েছিলাম৷ তাই সঠিক জানি না৷
মেঘ যেনো কিছুই বুঝতে পারছে না। বাড়িতে এসেছে ৭-৮ ঘন্টা হয়ে গেছে মানুষটার, অথচ সে এখনও দেখেই নি তাকে তারমধ্যে আবার কি অঘটন ঘটিয়েও ফেলেছে। সে শুধু চাচ্চু আর ভাইয়ার মুখের দিকে তাকাচ্ছে বার বার৷ আহমদ আলী খান গম্ভীর স্বরে তানভিরকে বললেন,
'সে তো তোমার ভাই কম বন্ধু বেশি৷ তাকে বলে দিও কোনো প্রকার মা*রপি*ট আর রা*জ নী*তিতে যেনো না জরায়। আর এটাও বলে দিও তাকে, তার বয়সটা কিন্তু আমি পার করে এসেছি৷ তাকে দেশে এনেছি মা*রপি*ট করার জন্য না, আমাদের ব্যবসার হাল ধরার জন্য । '
তানভির: আসলে বড় আব্বু সামান্য হাত কেটেছে ভাইয়ার৷
আলী আহমদ খান: থাক আমায় কিছু বুঝাতে হবে না। কোনটা মা*রপি*টের কা*টা আর কোনটা কেটে যাওয়া আমি তা বুঝি৷ তুমি তো নিজের রাস্তা বেছেই নিয়েছো অন্তত তাকে বুঝাও এসবে যেনো না জরায়
তানভিরঃ জি, বড়ো আব্বু৷
মেঘ আচমকা প্রশ্ন করে বসে,
'কি হয়েছে? '
তানভির মেঘের দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে বলে,
'তুই চুপচাপ খা'
ইকবাল খান বড় ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বলে,
'আবির কেনো মা*রামা*রি করবে,এতবছর বাহিরে ছিল ছেলেটা, এখানে ওর কে এমন শ*ত্রু আছে?'
বাড়ির সবার মধ্যে নিরবতা, কেউ কোনো কথা বলছে না।
মেঘ মনে মনে ভাবছে,
''আবির ভাইয়া মা*র*পি*ট করেছে? কিন্তু কেনো? এত বছর ভাবতাম আমার ভাই ই পঁ*চা, রা*জনী*তি করে, আমায় শা*সন করে।৷ কিন্তু আবির ভাই তো দেখা যাচ্ছে পুরাই হি**ট*লা*র'।
■■■■■■■■■■■■■■■■■■■■■■■
#Ch.03
কোন এক আশঙ্কায় আবিরের মাথায় চিনচিন ব্য*থা অনুভব হয়, ভী*তিতে রু*দ্ধ হয় তার শ্বাস। বারান্দায় দাঁড়িয়ে আনমনে কি যেনো ভেবে যাচ্ছে আবির। দূরে ঐ চাঁদটার দিকে তাকিয়ে আছে চ*ক্ষুযূ*গল এক মুহুর্তের জন্যও সরছে না, পল্লব ও পড়ছে না একটিবার, তার দুর্বো*ধ্য দৃষ্টি।
হঠাৎ কারো অস্তি*ত্ব বুঝতে পেরে সাবলীল ভঙ্গিতে নড়েচড়ে দাঁড়ায় দৃষ্টি সরিয়ে নেয় চাঁদ থেকে। ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে নেয় মানুষটাকে তারপর, ধীরস্থির কন্ঠে জানতে চাই,
'কিছু হয়েছে?'
তানভির সরলমনে বলে,
'বড় আব্বু বুঝতে পেরে গেছে তুমি মা*রপি*ট করেছো, তাই তোমাকে সাব*ধান করতে বলেছে যেনো মা*রপি*ট আর রা*জনী*তিতে না জরাও।'
'আরকিছু?' অবহেলায় প্রশ্ন টা করলো আবির
'না, তেমন কিছু না ব্যবসার হাল ধরতে বললো৷ ' তানভির উত্তর দিলো।
আবির: আচ্ছা ঠিক আছে৷ আর কিছু বলবি?
তানভির: ভাইয়া, মাথা ঠা*ন্ডা করো তুমি। বাদ দাও প্লিজ৷ আমি তোমাকে শুধু জানিয়েছিলাম বিষয়টা। তুমি যে এভাবে দেশে চলে আসবে আর এইভাবে ঝামেলা হবে এটা আমি ভাবতে পারি নি৷ বু*ঝতে পারলে আমি আ*গেই ব্যা*পার টা স*লভ করে ফেলতাম৷
আবির: তুই আমায় বাদ দিতে বলছিস? বাহ।
তানভির: আমি ঐভাবে কিছু বলি নি ভাইয়া। যা হবার তো হয়েছে৷৷ তুমি যা করেছো এরপর আশা করি আর কিছু হবে না। তাই বলছিলাম ঐসব চি*ন্তা বাদ দিয়ে একটু রেস্ট নাও। অনেকটা জা*র্নি করে এসেছো।
আবির: আচ্ছা তুই এখন যা, এরপর থেকে আমার ব্যাপারে তোকে যেনো কেউ কিছু না বলে, এটা সবাইকে বলে দিস। এতবছর বাহিরে ছিলাম। এখন তো আমি বাড়িতে আছি, যার যা কথা সব যেনো আমায় বলে সরাসরি। আর আগামীকাল ১২ টার আগে কেউ যেনো ডাকতে না আসে আমায়।
তানভির: আচ্ছা৷ আসছি আমি৷
এতক্ষণে মেঘে ঢেকে গেছে চাঁদ। অসীম দূরত্বে তাকিয়ে কি যেনো ভাবছে ছেলেটা৷ তারপর রুমে ঢুকে দরজা আটকে ব্যাগ থেকে একটা সিগারেট বের করে, বারান্দায় বসে সি*গা*রেট জ্বা*লিয়ে ঠোঁ*টে ধরে...
দৃষ্টি পরে দূরে গাছের পাতার ফাঁকে ল্যামপোস্টের ক্ষুদ্র আলোর দিকে, তারনিচে ২-৩ টা কুকুর আপন মনে চিল্লাচিল্লি করছে।
সি*গারে*ট খাওয়াটা আবিরের নি*ত্যদিনের অভ্যাস না, যখন সে খুব রা*গান্বি*ত বা চি*ন্তিত থাকে, বা যখন নিজেকে ক*ন্ট্রোল করার সব শ*ক্তি হারিয়ে ফেলে তখন সিগারেটের ধোঁ*য়ার মধ্যে নিজের ক*ষ্ট, রা*গ,চি*ন্তা আর অ*ভিমান গুলোকে উড়িয়ে দেয়।
সি*গারে*টে কয়েকটা টান দিয়ে সি*গা*রেট টা ফেলে দেয়। তারপর টানটান হয়ে শুয়ে পরলো নিজের বিছানায়। মাথার নিচে দুহাত রেখে চোখ বুজলো।
★★★★
মেঘ খাবার খেয়ে রুমে এসে ২-৩ ঘন্টা টানা পড়াশোনা করলো।। HSC পরীক্ষা শেষ হলো এক মাস ও হয় নি কিন্তু পড়াশোনা যেনো ৩ গুণ বেড়ে গেছে। এডমিশন একটা মস্তবড় যুদ্ধ যার একমাত্র অস্ত্র হলো পড়াশোনা তার সাথে অঙ্গাঅঙ্গী ভাবে জরিয়ে আছে ভাগ্য। HSC র রেজাল্ট কবে দিবে ঠিক নেই, পাশ করবে কিনা তাও জানা নেই৷ কিন্তু অনিশ্চিত ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুতি আগেভাগেই নিতে হচ্ছে। বয়সের তুলনায় মেয়েটা পড়াশোনায় একটু বেশিই এগিয়ে গেছে। ১৮ বছর বয়সে পা দিলো সবেমাত্র ২ মাস হয়েছে। তারমধ্যে HSC পরীক্ষা শেষ । কয়েকমাস পরে সে স্নাতক শিক্ষার্থী হতে চলেছে ভাবতেই কেমন যেনো নিজেকে বড় বড় মনে হয় মেঘের।
পড়াশোনা শেষ করে নিজের বিছানায় শুয়েছে হাতে তার নতুন মোবাইল। কিন্তু করবে কি সে, না আছে ফেসবুক আর না আছে অন্য কোনো একাউন্ট। ইউ*টিউবে ঢুকে কয়েকটা ভিডিও দেখে মোবাইল রেখে দেয়।
শুয়ে ভাবতে লাগে আবির ভাইয়াকে ধন্যবাদ জানানো দরকার কিন্তু সে তো ভ*য়ে দাঁড়াতেই পারবে না আবিরের সামনে.. পু*রোনো স্মৃতিগুলো ভাবতে থাকে...
মেঘ সবেমাত্র ৫ম শ্রেণিতে উঠেছিল । বয়সের গন্ডি ৯-১০ এর মাঝামাঝি । তখন মেঘের একটা বন্ধু হয়েছিল নাম জয়৷ ছেলেটা স্কুলে নতুন এসেই বন্ধত্ব করেছিল মেঘের সাথে। ছোটবেলা পিচ্চিদের বন্ধুত্ব যেমন ছিল, চকলেট শেয়ার করা,টিফিন শেয়ার করা,একসাথে খেলাধুলা করা। ১ টা সপ্তাহ ও হয়নি তাদের বন্ধুত্বের। ৭ দিনের মাথায় আবির স্কুলে গিয়ে মেঘকে আর জয়কে একসাথে খেলতে দেখে। স্কুলের সবার মাঝখানে মেঘের গালে কয়েকটা থা*প্প*ড় বসিয়ে দিয়েছিল আর রা*গা*ন্বিত স্বরে বলেছিল, "তোকে যদি আর কোনোদিন কোনো ছেলের সাথে কথা বলতে বা খেলতে দেখি তাহলে তোর খবর আছে। "
তারপর বোনকে টানতে টানতে বাড়িতে নিয়ে আসে, একটাবার বোনের দিকে তাকিয়েও দেখে নি। দুগালে আবিরের ৫ আঙুলের দাগ বসে গেছিলো।
সেইযে থা*প্পড় দিয়েছিল মেঘ এক সপ্তাহ জ্ব*রে পরে ছিল। মেঘ ছোট বেলা থেকেই খুব অ*ভিমা*নী ছিল। ছোট্ট মেয়েটা এই থা*প্পড়ের ভ*য়ে আর আ*তঙ্কে আর কখনো আবিরের দিকে চো*খ তুলে তাকায় নি, কথা বলা তো দূরের বিষয়, আবির বাসায় থাকাকালীন রুম থেকে বের ই হয় নি মেঘবালিকা । আবির ও কখনো খোঁজ নেয় নি মেয়েটার। ছোট্ট মেঘের মনে তখনই জন্ম নেয় আবির ভাই এর প্রতি অ*ভিমা*ন, সীমাহীন অভি*যোগ, কষ্ট আর বি*তৃষ্ণা। ২ বছর পর দেশ ছাড়ে আবির। এই সময়ের মাঝে মেঘ আবিরের সাথে এক টেবিলে খেতেও বসতো না। আবিরকে দেখলেই যেনো ছুটে পালাতো মেঘ৷ আবির বিদেশ চলে যাওয়ার পর মেঘ আবিরের ভয় থেকে নিজেকে সাবলীল করে আপন মনে রাজত্ব করতে থাকে খান বাড়িতে৷ আবিরের পাশের রুমটায় তার দখলে চলে আসে আবির থাকলে হয়তো কখনোই সে এই রুমে আসতো না।
বিদেশ যাওয়ার পর আবির সবার সাথে ভিডিও কলে কথা বলেছে কিন্তু কথা হয় নি মেঘের সাথে, ২-১ বার মেঘের কথা জিজ্ঞেস করেছিল ঠিকই কিন্তু মেঘ আত*ঙ্কে কথা বলতে চাই নি। এর পর থেকে আবিরও কখনো মেঘের কথা জিজ্ঞেস করে নি।।
এতবছর পর ভাই বাড়ি এসেছেন, এখনও দেখা হয় নি তারসাথে। এরিমধ্যে মা*রপি*ট করে ফেলেছেন৷ ছোটবেলায় অনুভূতি প্রকাশ না করতে পারলেও আজ আবিরের ক*র্মকা*ণ্ডের কথা শুনে মেঘের মনে একটা নাম ই ঘুরপাক খাচ্ছে সেটা হলো 'হি*ট*লা*র'। হি*ট*লা*রে*র সাথে আবিরের কতটা মিল বা বেমিল তা বিবেচনা করার বিন্দুপরিমাণ ইচ্ছে নেই তার ।। মাথায় একটা চিন্তায় ঘুরছে ধন্যবাদ জানানো উচিত কিন্তু সে কি আদোঃ কথা বলতে পারবে হি*ট*লা*রে*র সাথে..??
এসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পরলো সে
★★★★
ভোর বেলা থেকেই বাড়িতে রান্নার ধুম পরে যায়। তিনভাই সকাল সকাল খেয়ে অফিসে চলে যায়। মীম আর আদিও স্কুলে চলে যায়। মেঘ ঘুম থেকে উঠে ৮ টায়, রাত জাগার কারণে সকালে উঠতে পারে না সে। মাঝে মাঝে গোসল করে খেয়ে বের হয় মাঝে মাঝে এমনিতেই চলে যায়।। ১০-২টা পর্যন্ত বাহিরে কোচিং,তারপর টিউশন শেষ করে বাড়ি ফিরে, ফ্রেশ হয়ে খেয়ে একটু ঘুমাই। বিকালে একটু হৈ-হুল্লোড় করে তারপর পড়াশোনা করে। এই তার বর্তমান জীবন। আজও তার ব্যতিক্রম হলো না।। খেয়ে কোচিং এর উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পরেছে, বাসার গাড়িই তাকে দিয়ে আসে আবার কল দিলে গিয়ে নিয়ে আসে।
ঠিকঠিক ১২ টায় ঘর থেকে বের হয় আবির ধীরগতিতে নিচে আসে , চি*ন্তিত মুখ দেখে মা মালিহা খান ভীতস্বরে ছেলেকে জিজ্ঞেস করেন,
'কিছু হয়েছে তোর বাবা.?'
আবির মুখের ভা*রিভা*ব বজায় রেখে উত্তর দিলেন...
'কিছু হয় নি, খেতে দাও'
ছোটবেলার চঞ্চলতার ছি*টেফোঁ*টাও নেই ছেলেটার মধ্যে এটা ভেবেই বারবার হতাশ হচ্ছেন মালিহা খান। হঠাৎ চোখ পরে ছেলের হাতে ব্যা*ন্ডে*জের দিকে, হাতটাও ফুলে গেছে অনেকটা।৷
আবির খাবার খাচ্ছে আর তার মা শা*ন্তস্বরে ছেলেকে বুঝাচ্ছেন, এটা করো না, সেটা করো না, মনে হচ্ছে ৫ বছরের শিশু সে, আ*গুন- পানি চিনে না।। যদিও বাবা মায়ের কাছে সন্তানরা সারাজীবন শিশুই থাকে। খাওয়া শেষে মায়ের থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে যায় আবির৷
★★★★
মেঘ বাড়ি ফিরেছে ১ ঘন্টা হবে, শাওয়ার নিয়ে নিচে এসেছে খেতে। খাওয়া শেষ।
তানভির রুম থেকে ছুটে এসে জিজ্ঞেস করে,
'বড় আম্মু, ভাইয়া কোথায়?'
আঁতকে উঠেন মালিহা খান,
'ও তো ২-৩ ঘন্টা আগেই খেয়ে বের হয়েছে, কেন?'
'ইশ,মিস করে ফেললাম'
মালিহা খানঃ কি হয়েছে বাবা?
মেঘ নিরবে তাকিয়ে, ভাই আর বড় আম্মুর কথোপকথন শুনছে আর বুঝার চেষ্টা করছে ঘটনা টা কি৷
তানভির ভাইকে কল দিয়ে জিজ্ঞেস করে,
'কোথায় আছো?'
আবির কি যেনো বললো শুনা যায় নি... তানভিরের চোখে মুখে উ*ত্তে*জনা স্প*ষ্ট।
বড় আম্মু,আম্মু, কাকিমনি বাহিরে চলো
কেউ প্রশ্ন করার আগেই তানভির ছোটে গেলো বাহিরে, তার পিছন পিছন মীম,আদি,মা কাকিরা সবাই দরজা পর্যন্ত গেলো,সবার পিছনে মেঘও গেলো সেখানে৷
এরিমধ্যে বাইকে বাড়ি ঢুকলো আবির, নীল রঙের চকচকে একটা সুন্দর বাইক,হেলমেট টাও নীল।
হেলমেট খুলতে খুলতে তাকায় বাড়ির মানুষের দিকে.... মেঘ অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
সেই কবে দেখেছিলো আবিরকে সেই আবিরের সাথে এই আবিরের চেহারার কোনো মিল নেই। হেলমেট খুলাতে চুল গুলো এলোমেলো হয়ে গেছে আবিরের, চোখে সানগ্লাস, নেভিব্লু রঙের শার্ট কালো প্যান্টের সাথে ইন করে পরেছে, হাতে কালো ফিতার একটা ঘড়ি, পায়ে শো জুতা। আপাদমস্তক দেখলো আবিরের, হৃ*দপি*ণ্ডের চা*রপ্রকো*ষ্ঠ ছটপট করতে লাগলো মেঘের। আবিরের দিকে বি*ভোর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সে৷
আবির বাড়ির সকলের উদ্দেশ্যে বললো,
'বাইক টা কিনেছি,কেমন হয়েছে?'
আবিরের কন্ঠ মেঘের মনের গহীনে ধাক্কা খায় এতে হুঁশ ফিরে তার। দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না সে। একদৌড়ে নিজের রুমে ঢুকে দরজা আটকে শুয়ে পরে মেঘ ।।
মীম আর আদি হৈ-হুল্লোড় করছে, আবির ভাইয়ার কাছে আবদার করছে ওদের বাইকে নিয়ে ঘুরার জন্য ।
মালিহা খান ছেলের পানে তাকিয়ে প্রশ্ন করলেন, 'বাসায় ২-৩ টা গাড়ি থাকার পরও বাইক কেনো কিনলে?'
'আমার গাড়িতে চলাচল ভালো লাগে না',অবলীলায় উত্তর দিলো আবির।
পিচ্চিরা খুশি হলেও খুশি হতে পারেন নি মালিহা খান, হালিমা খান আর আকলিমা খান। কারণ এই বাড়িতে বাইক ব্যবহার নিষেধ করেছিলেন স্বয়ং আলী আহমদ খান নিজেই। তিনি কোনো এক বয়সে বাইকে এক্সি*ডেন্ট করেছিলেন সেই থেকে বাইক কিনা বা বাইকে চলাচল নি*ষিদ্ধ করেছেন। ইকবাল খানের খুব ইচ্ছে ছিল বাইক কেনার কিন্তু বড় ভাইয়ের নিষেধ অমান্য করার সাধ্য নেই তাই কিনতে পারেন নি। তানভির খুব করে চাইছিল বাইক কিনতে, রা*জনীতি*র সুবাদে অনেক জায়গায় চলাচল করতে হয় বাইক থাকলে সুবিধা হয়। বাবা মোজাম্মেল খানকে বলেও ছিল সে, কিন্তু বাবার এক কথা , তোর বড় আব্বু বাইক পছন্দ করে না তোর দরকার পড়লে তুই একটা গাড়ি সবসময় ব্যবহার করিস তারপরও বাইক কিনার নাম মুখে নিস না।
আবির বাড়ি ফিরেছে ২৪ ঘন্টা হবে হয়তো, এরমধ্যে ই বাইক কিনে ফেলছে, এর পরি*ণাম কি হবে তা ভেবেই ভয়ে আঁ*তকে যাচ্ছেন বাড়ির তিন বউ।।
★★★★
অষ্টাদশীর হৃদয় কাঁ*পছে, কেমন জানি অস্থির লাগছে সবকিছু। পরিচ্ছন্ন নয়নে তাকিয়ে আছে রুমের জানালার দিকে, দৃষ্টি তার অসীম দূরত্বে। কি জানি কি ভাবলো কতক্ষণ হঠাৎ ঝলমলিয়ে উঠলো মেঘ সঙ্গে সঙ্গে চোয়াল শক্ত করে নিজেকে নিজে প্রশ্ন করলো,
' বাই এনি চান্স আমি কি হি*ট*লা*রটা*র উপর ক্রাশ খেয়েছি......???'
■■■■■■■■■■■■■■■■■■■■■■■
#Ch.04
শ্বা*স ঝেঁ*ড়ে, নিজের মাথায় গা*ট্টা মে*রে মেঘ বলে, 'ছিঃ মেঘ ছিঃ, কি সব ভাবছিস তুই, কেউ কি তার চাচাতো ভাইয়ের উপর ক্রাশ খায়? ভালো, ভদ্র হলেও মানা যেতো, এমন গু*রুগ*ম্ভীর, ব*দমে*জা*জি আর হি*ট*লা*র স্বভাবের কেউ কি কারো ক্রা*শ হয়..!! যে ছেলে ১০ বছরের মেয়ের গা*য়ে হা*ত তু*লতে পারে সে আর যায় হোক আমার ক্রাশ হতে পারে না। এটা ভাবতেই মেঘের বু*ক ভে*সে আসে ক*ষ্টে।
নিজেকে স্বাভাবিক করতে মোবাইল হাতে নিয়ে কল করে মেঘের সবচেয়ে কাছের বান্ধবী বন্যাকে। প্রথম কল দিতেই রিসিভ হয় কল..
বন্যা- আসসালামু আলাইকুম, কেমন আছো বেবি?
মেঘ- ওয়ালাইকুম আসসালাম, আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি, তুই কেমন আছিস?
বন্যা- হঠাৎ আমায় স্বরণ করার কোনো স্পেশাল কারণ আছে? তোর তো আবার ভাঙা ফোন ঠাসঠুস বন্ধ হয়ে যাবে।
মেঘ রা*গান্বিত স্ব*রে একপ্রকার হুং*কার দিয়ে বলে... "তুই আজ কোচিং এ আসিস নি কেন? কি যে একটা জিনিস মিস করছিস..."
বন্যা- কি মিস করেছি বলে ফেলো বান্ধবী
মেঘ- এখন বললে কি আর সেই ফিল টা পাবি নাকি আজব
বন্যা- আরে বেবি বলো তুমি। কাল শুক্রবার কোচিং বন্ধ, আবার দেখা হবে রবিবারে ততদিন সহ্য হবে না। বলে ফেল প্লিজ।
মেঘ- আমার হাতে এখন iPhone 13 pro max
মেঘের কথা বন্যা এক বিন্দুও বিশ্বাস করে নি, হেসে উড়িয়ে দিয়ে বলছে, এখন বল
'একটু পর 14 pro max কিনতে যাচ্ছিস,যাকে তার ভাই একটা আধা ভা*ঙা ফোন দিয়েছে ব্যবহারের জন্য, দিনে ১০০ বার বন্ধ হয়ে যায়, তার হাতে নাকি iPhone. তুই কি ঘুম থেকে স্বপ্ন দেখে উঠলি নাকি?'
মেঘের উৎফুল্ল মে*জাজ আচমকাই বি*গড়ে গেলো, অভিমানী স্বরে বললো,
'কাল আবির ভাই আসছেন বিদেশ থেকে ওনিই নিয়ে আসছেন আমার জন্য।'
বন্যা- তাই বল, নাহয় তোর যে ভাই সে তোকে এই জীবনে ফোন কিনে দিতো না, তোর বাবা দিতে চাইলেও সে আ*ছাড় মে*রে ভে*ঙে ফেলতো। ওয়েট ওয়েট, এই আবির ভাইটা কে রে? যে তোকে ছোট বেলা মে*রেছিল, সে?
মেঘ মুখ কালো করে উত্তর দিলো,
'হ্যাঁ আমার চাচাতো ভাই।'
বন্যা- তা তোর প্রতি এত মায়া হলো কিভাবে ওনার?
মেঘ- জানিনা। শুন তোকে কি বলি
বন্যা- হ্যাঁ বল
মেঘ- আসলে আজকে বিকালে আবির ভাইয়াকে দেখে ছোটখাটো একটা শ*ক খেয়েছি৷
বন্যা- মানে?
মেঘ- কি সুদ*র্শন চেহারা,দাঁড়ানোর স্টাইল,লুক আর অগোছালো চুলদেখে আমার মনটায় এলোমেলো হয়ে গেছে, আমি মনে হয় ওনার উপর ক্রাশ খেয়েছি.
মুখ ফুলিয়ে শ্বাস ছেড়ে একটু ধাতস্থ হয়ে গুরুগম্ভীর স্বরে বন্যা বললো,
'তোর মাথা ঠিক আছে মেঘ?তুই এতবছর যাবৎ বলছিস এই মানুষটা তোর শৈশব নষ্ট করে দিয়েছে, আজ কৈশোরে পা দিতেই এই মানুষটার উপর ক্রা-শ খেয়ে ফেলছিস? মানুষ রঙ বদলায়, কারণে অকারণে বদলায় কথাটা এতদিন শুনেছি কিন্তু আজ তোকে দেখে মনে হচ্ছে এই কথাটা ১০০% সত্যি। না হয় যাকে এত বছর শ*ত্রু ভেবে এসেছিস আজকে তার কথা অবলীলায় বলে যাচ্ছিস, বাহ মেঘ বাহ। '
মেঘের নিরবতা বুঝতে পেরে বন্যা আবার বলা শুরু করলো,
' এসব কোনো বিষয় না বেবি, হঠাৎ করে দেখেছিস তো তাই আহামরি সুদর্শন লেগেছে, বিষয়টা মাথা থেকে ঝে*ড়ে ফেল দেখবি সব ঠিক হয়ে গেছে, আমরা না দুজন দুজনকে কথা দিয়েছিলাম, একজন বিপথে গেলে আরেকজন সামলাবো । ভুলে গেলি?'
স্পষ্ট বুঝা গেলো মেঘের বদলে যাওয়া অভিব্যক্তি। সহসা নিজেকে সামলে আচমকা প্রশ্ন করে বসলো,
'আমি কি দেখতে সুন্দর না? আমি কি কারো ক্রাশ হওয়ার যোগ্য না?'
মেঘের আকস্মিক প্রশ্নে বন্যা কিছুটা হতভম্ব হলো এরপর
কয়েকমিনিট শুধু হেসেই গেলো.,স্বাভাবিক স্বরে বললো.. 'অবশ্যই তুই সুন্দর, ক্রাশ খাওয়ার ও যোগ্য কিন্তু তুই ছেলেদের ক্রাশ হতে পারবি কি না সন্দেহ আছে৷ হতে পারিস রাস্তাঘাটের,গাছগাছালির, রঙচটা দেয়ালের, গরুছাগলের ও হতে পারিস।'
রা*গে ফুঁ*সতে ফুঁ*সতে কল কেটে দিয়েছে মেঘ আর ভাবছে,
'আজকাল সান্ত্বনা নিতে চাইলেও মানুষ মজা নেয়'
যদিও বন্যার হাসির কারণ টা খুবই স্বাভাবিক । মেঘকে বরাবর ই চোখে চোখে রেখেছে তানভির সহ বাড়ির সকলে, 6-10 পর্যন্ত পড়েছে গার্লস স্কুলে, তারপর গার্লস কলেজ। আহারে জীবন ধূ ধূ মরুভূমির মতো কোথাও কেউ নেই। স্কুল কলেজের সামনেই বাসার গাড়ি থাকতো,বাসা টু স্কুল,স্কুল টু বাসা। কোনো ছেলে না দেখলে ক্রা*শ কিভাবে খাবে! বো*ধশক্তি হওয়ার পর মেঘ মনে হয় ২-৩ টা বিয়ে খেয়েছে কাজিনদের।৷ যাকে বলে নামের বিয়ে খাওয়া। তানভিরের ভয়ে বিয়ে বাড়ির এক কোণে বসে থাকতো মেঘ৷ ভাইয়ের ক*ড়া শাসন ছিল ঘর থেকে বের হতে পারবি না, বরযাত্রী আসলে তো আরও না। ঘরের ভিতরেই তারজন্য খাবার পাঠানো হতো, তানভির নিজেই বোনকে খাওয়াতো ইচ্ছে মতো। তারপর বিয়ে শেষ হলে মা বোনকে নিয়ে চলে আসতো। গায়ে হলুদে নাচা,গান গাওয়া এমনকি মেহেদীও দিতে পারে নি কখনো।। এই কষ্টে এখন আর মেঘ কারো বিয়েতেই যায় না। এতে তানভির মনে হয় হাফ ছেড়ে বেঁচেছে।৷ মেঘের এই সাদাকালো জীবনের কথা শুনলে বন্যা কেনো পৃথিবীর সব মানুষ ই হাসবে। জীবনটা তার তেজপাতা হয়ে গেছে । মাঝে মাঝে ভাবে এই বাড়িতে জন্মানো টা কি খুব দরকার ছিল...!!!
কয়েকবার বন্যা কল ব্যাক করেছে, নিজের জীবনের হতাশার জন্য মেঘ আর কল রিসিভ ই করে নি, বান্ধবীকে রাগ দেখিয়ে কি হবে...! জীবন যেখানে যেমন তা মানতেই হবে।
মেঘের বেস্ট ফ্রেন্ড হওয়ার খেসারত দিতে হচ্ছে বন্যাকেও। মেঘের সাথে সাথে বন্যাকেও চোখে চোখে রাখে তানভির। কথায় আছে সঙ্গ দোষে লোহা ভাসে, সঙ্গ খারাপ হলে মেঘও খারাপ হবে তাই সব সময় বন্যার পিছনে লোক লাগিয়ে রাখে। শুধু বন্যাই না আরও ২ জন বান্ধবী আছে মেঘের, একজন পাখি আরেকজন মায়া। ওদেরকেও নজরে রাখে তানভির। বোনকে সব দিক থেকে প্র*টেক্ট করাই যেন তার প্রথম এবং প্রধান কাজ৷
★★★★
আবির বিকাল থেকে ঘুমাচ্ছে। সন্ধ্যা ৭ টায় ঘুম ভাঙে আদির ডাকে। নিচে আবিরের আব্বু আর মেঘের আব্বু বসে আছেন, আবিরের বাইক কেনার কথা শুনেই তাড়াতাড়ি চলে এসেছেন অফিস থেকে৷ আবির ঘুম থেকে উঠে চোখেমুখে পানি দিয়ে টাওয়েল দিয়ে কোনোরকমে মুখ টা মুছে তৎক্ষনাৎ রুম থেকে বের হয় ৷ সে তার বাবাকে খুব ভালো করে চিনে ডাকার সঙ্গে সঙ্গে উপস্থিত না হলে বাড়িতে তা*ন্ডব শুরু করে দিবেন। আবিরের চোখে মুখে ঘুমের প্রভাব স্পষ্ট । ব্যস্তপায়ে হাঁটছে সে, আচমকা এলেমেলো পায়ে ছুটে রুম থেকে বের হয় মেঘ চুলগুলো অগোছালো। আকস্মিক ধা*ক্কা এড়াতে চটজলদি নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে অ*গ্নিদৃ*ষ্টিতে তাকায় আবির, তৎক্ষনাৎ মোটা ভ্রু*যূগল শিথিল হয়ে যায়,অ*মত্ত চেয়ে রইলো সে
একমুহূর্তের জন্য মস্তিষ্ক থমকে গেছে আবিরের, দৃষ্টি তার প্র*খর, আচ*মকা হাঁটা থামাতে শ্বাস ভা*রি হয় আবিরের, কালো জামা প*রিহিতা এক ললনার দিকে দৃষ্টি পরে, আ*পাদমস্তক দেখলো একবার, কালো জামাতে যাকে অ*প্সরার ন্যায় লাগছে, এলোমেলো চুলগুলো তার কোমড় ছাড়িয়েছে চুল দেখে মনে হয় জীবনানন্দ দাশের বনলতাকে উদ্দেশ্য করে লেখা,
"চুল তার কবেকার অন্ধ*কার বিদিশার নিশা।"
দ্রুতগতি থামাতে গিয়ে মেঘের ছোট দেহ কম্পিত হয়,দৃষ্টি পরে ৬ ফুট লম্বা মানুষটার বু*কে, মেঘ মুখ তুলে তাকায় সেই মানুষটার চেহারার পানে, আবিরের চোখের দিকে বি*স্ময়াভিভূত নয়নে তাকিয়ে আছে মেঘ, পলক ও পরছে না একটিবার, আবিরের চোখে মুখে ছিটানো পানির ঝাপটায় এলোমেলো চুলগুলো থেকে চুইয়ে চুইয়ে পানি পরছে যা তার পরনের সাদা টিশার্ট অল্পস্বল্প ভিজিয়ে দিচ্ছে সেদিকে খেয়াল নেই আবিরের,
আবির কয়েক সেকেন্ড স্ত*ব্ধ থেকে হঠাৎ চোখ সরিয়ে পুনরায় রু*দ্রমূর্তি ধারণ করে স*বেগে হাঁ*টা দেয় সিঁড়ির দিকে, পিছন থেকে অষ্টাদশীর কোমল কন্ঠে ডাক শুনে থমকে দাঁড়ায় আবির তবে পিছনে তাকানোর প্রয়োজন মনে করে নি সে,
মেঘ ভ*য়ার্ত কন্ঠে বলে, 'Thank you Abir Vai'
আবির শুনলো কি না কে জানে, এক মুহুর্ত দাঁড়িয়ে যথারীতি ব্য*স্ত ভঙ্গিতে নিচে নেমে যায়।
মেঘ ঠায় দাঁড়িয়ে আছে দরজার সামনে,থরথর করে কাঁপছে মেঘের হাত পা, মেঘের মনে হচ্ছে ভোঁ ভোঁ করে ঘুরছে সমগ্র পৃথিবী। কেনো জানি দাঁড়িয়ে থাকার শক্তি পাচ্ছে না মেয়েটা, নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে তাড়াতাড়ি দেয়ালে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়েছে। এতগুলো বছর পর আবিরের চোখে চোখ রাখলো মেঘ, ভেতর টা ভ*য়ে আঁ*তকে উঠছে বার বার, অন্তরা*ত্মা শুকিয়ে যাচ্ছে মেঘের৷
★★★★
সোফায় বসে আছেন ২ ভাই,বাড়ির মহিলা রান্নাঘরে কাজে ব্যস্ত থাকলেও নজর তাদের এদিকে, কি হবে কে জানে
আলী আহমদ খান নিজের গা*ম্ভীর্যতা বজার রেখে একপ্রকার হুংকার দিয়ে প্রশ্ন করলেন,
"তুমি নাকি বাইক কিনেছো?"
এই কথায় হুঁশ ফিরে অষ্টাদশীর, কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে ২ পা সামনে এগিয়ে বারান্দার সাইডে দাঁড়িয়ে নিচে তাকায় মেঘ, নিচে সোফায় বসা আব্বু আর বড় আব্বু, তাদের থেকে কিছুটা দূরে দুহাত ভাজ করে সটান হয়ে দাঁড়িয়ে আছে আবির৷
জ্বী', ভাবলেশহীন ভাবে উত্তর দেয় আবির।
'কিন্তু কেন?' পুনরায় হুংকার দেন তার আব্বু।
'আমার বাইক কেনার ইচ্ছে ছিল তাই কিনেছি,'
'তুমি জানো না এই বাড়িতে বাইক কেনা বা চালানো নিষেধ?' এবার প্রশ্ন টা চাচ্চু মোজাম্মেল খান করেছেন।
'হ্যাঁ জানি, ২০/৩০ বছর আগে কি ঘটে গেছে তা নিয়ে আতঙ্কে থাকার কোনো মানে হয় না, যদি কপালে খারাপ কিছু লিখা থাকে তাহলে সেটা ৭ সমুদ্র পারি দিয়ে হলেও আসবেই। সেটা আমি ঘরে বসে থাকলেও হবে আর গাড়িতে চলাচল করলেও হবে৷ '
'তোমরা ২ ভাই কি নিজেদের মর্জি মতোই চলবে?' আলী আকবর খান রা*গান্বিত স্বরে প্রশ্ন করলেন।
'বাইক কিনা যদি নিজের ইচ্ছে মতো চলা হয় তাহলে আমি দুঃখিত আব্বু৷ এই ব্যাপারে আমি নিজের মনের কথায় শুনবো।'
'আমাদের নিজস্ব ৩ টা গাড়ি আছে, এত গাড়ি কেনো কিনলাম তোমাদের জন্যই তো' মোজাম্মেল খান কোমল স্বরে বললেন।
'গাড়িতে চলাচল আপনাদের ইচ্ছে তাই আপনারা গাড়ি কিনেছেন, আমার গাড়িতে চলাচল করতে ভালো লাগে না তাই আমি বাইক কিনেছি এটা নিয়ে এত কথা বাড়ানোর কি আছে চাচ্চু । তোমাদের বাইক সম্পর্কিত জে*রা শেষ হলে আমার তোমাদের কে একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা বলা আছে। ' আবির আব্বুর দিকে তাকিয়ে কথাগুলো বললো।
এতক্ষণ বাড়ির মহিলা রান্নাঘরে থাকলেও এবার আর থাকতে পারলেন না, এক ছুটে সবাই ড্রয়িংরুমে চলে এসেছেন । মেঘ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আবিরের দিকে। এই বাড়িতে এত বছরে কাউকে গলা উঁচু করে মুখের উপর কথা বলতে শুনেনি সে। তানভির ভাইয়া যত মেজাজ দেখিয়েছে সব মেঘের উপর, বড় আব্বু বা নিজের আব্বুর মুখের উপর কথা বলার সাহস হয় নি তার। আবির ভাই ২দিন হলো এসছে,আজই বাবার মুখের উপর নিজের ম*র্জি শুনাচ্ছে, এখন মেঘের মনে হচ্ছে ওনি হি*ট*লা*রের থেকেও বড়মাপের কিছু । মনোযোগ দিয়ে বাকি কথা শুনার চেষ্টা করছে মেঘ.
আবির: আব্বু,চাচ্চু আমি অনেকদিন যাবৎ চিন্তা ভাবনা করেছি নিজে একটা কোম্পানি শুরু করার। তোমরা অনুমতি দিলে কাজ শুরু করবো
মোজাম্মেল খান ও আলী আকবর খান দুজনের মাথায় যেনো আকাশ ভেঙে পরেছে। এতবছর ছেলেকে বাহিরে রেখে পড়াশোনা করিয়েছেন, দেশে এসে নিজের ব্য*বসার হাল ধরবে, দেশে পা দিতেই নিজে কোম্পানি খোলার চিন্তা ভাবনা করছে ছেলে৷
মোজাম্মেল খান চিন্তিত কন্ঠে বললেন, আমরা তো ভেবেছিলাম তুমি পারিবারিক ব্যবসাকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
আবির কিছু বলার আগেই আলী আকবর খান বলে উঠলেন,
'ঠিক আছে, তুমি পড়াশোনা করে এসেছো, তোমার নিজস্ব মতামতের গুরুত্ব আমরা অবশ্যই দিবো,তোমার নতুন কোম্পানি নিয়ে আমাদের কোনো আপত্তি নেই তবে আমার একটা শর্ত আছে, তুমি আমাদের কোম্পানির CEO হবে, আগামীকাল শুক্রবার অফিস ছুটি তাই তুমি শনিবারে অফিসে যাবে,তোমাকে অফিসিয়াললি CEO পদ দেওয়া হবে। তারপর তুমি আমাদের অফিস সামলে যদি নতুন কোম্পানি শুরু করে প্রতিষ্ঠিত হতে পারো তাতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। Best of luck my boy.
আবির যেনো আগে থেকেই জানতো এরকম কিছু হবে তাই তার মধ্যে কোনো পরিবর্তন দেখা গেলো না'
এতটুকু বলে সোফা থেকে উঠে রুমের দিকে হাঁটা শুরু করলেন আবিরের আব্বু, কয়েক কদম এগিয়ে আবার দাঁড়িয়ে আবিরের দিকে তাকিয়ে রু*দ্ধ কন্ঠে বললেন,
'আমরা কোম্পানি সামলানোর জন্য সারাজীবন থাকবো না তোমাদেরকেই দায়িত্ব নিতে হবে, তুমি না পারলে তোমার প্রাণপ্রিয় ভাই তানভিরকে বলো রা*জ*নী*তি ছেড়ে ব্যবসায় আসতে তারপর তুমি তোমার মতো নিজে কোম্পানি খুলতে থাকো।'
আবির চোয়াল শক্ত করে বাবার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,
'তানভির রা*জনী*তিই করবে ওর মাথায় ব্যবসা ঢুকানোর কোনো দরকার নেই, শনিবারেই অফিসে আসবো আমি। আমি একায় সবদিক সামলাতে পারবো। তোমরা দয়া করে তানভিরকে মুক্তি দাও, নিজের মতো করে রাজনীতি টা করতে দাও ওকে। তোমার শ*র্ত যেমন আমি মেনে নিয়েছি তোমাদেরকেও আমার একটা শর্ত মানতে হবে সেটা হলো, আমি আমার মন মতো কাজ করবো, আমার যখন যেখানে প্রয়োজন হবে নিজের কাজ গুছিয়ে আমি চলে যাব তখন আমাকে কোনো প্রকার বাঁ*ধা দিতে পারবে না কেউ। দরকার হলে ২ অফিসের কাজ শেষ করে আমি রাত ১২ টায় বা ২ টায় বাসায় ফিরবো এমনকি নাও ফিরতে পারি এতে তোমাদের যেনো মা*থা*ব্যথা না হয়।'
একদমে কথাগুলো বলে কোনোদিকে না তাকিয়ে দ্রুতপায়ে বাসা থেকে বের হয়ে যায় আবির
আলী আহমদ খান কয়েক মুহূর্ত দাঁড়িয়ে কোনো কথা না বলে রুমের দিকে হাঁটা দেন।
পিনপতন নীরবতা বাড়িতে৷ সোফায় বসে আছেন মোজাম্মেল খান, কাছেই তিন ঝা একজন আরেকজনের দিকে তাকাচ্ছে বারবার, তাদের আবিরের প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস আছে কিন্তু সমস্যা হচ্ছে বাহিরের দুনিয়া সামলাতে গিয়ে নিজের প্রতি না যত্নহীন হয়ে পরে ছেলেটা এটায় তাদের চিন্তার বিষয়।
নিচে উপস্থিত মানুষগুলোর মধ্যে চিন্তার ছাপ দেখা গেলেও উপরে দাঁড়িয়ে একপ্রকার বিনোদন উপভোগ করছিল মেঘ৷ যেই বড় আব্বুর কথার উপর কারো কথা চলে না আজ ওনার সাথে টক্কর দেয়ার মানুষ এসেছে৷ বাবা ছেলে কি শ*র্তটায় না দিচ্ছে৷ যেমন বাবা তেমন ছেলে এসব ভেবেই হাসি পাচ্ছে মেঘের। হঠাৎ করেই হাসিটা গা*য়েব হয়ে মুখটা ভা*রি হয়ে গেলো মেয়েটার, আর ফিসফিসিয়ে বলতে শুরু করলো,
" নিজে তো হি*ট*লা*র সাথে আমার ভাইটাকে বড় গু*ন্ডা বানাতে কি সুন্দর উৎসাহ দিচ্ছে । এতবছর ভাইয়ের জ্বা*লায় জীবন তেজপাতা এখন আবার আরেকজনের আবির্ভাব হলো। কপালটায় খারাপ আমার। "
এখন নিচে যাওয়ার পরিস্থিতি নেই তাই বিড়বিড় করতে করতে রুমে ঢুকতে যাবে হঠাৎ চোখ পরে আবির ভাইয়ার রুমের দিকে এক রাশ হতাশা নিয়ে রুমে ঢুকে যায় মেঘ।
বাবা মা কে ছেড়ে আলাদা রুমে থাকলে খুব স্বাধীনতা পাবে ভেবে নিচতলা থেকে উপর তলায় চলে এসেছিল মেঘ, আবির ভাই বিদেশ যাওয়াতে কোনো চিন্তায় ছিল না। কিন্তু মেঘ আসার ১৫ দিনের মাথায় তানভির ও মেঘের পাশের রুমে চলে আসে জিনিসপত্র নিয়ে। সিঁড়ি দিয়ে সোজা উঠতেই তানভিরের রুম। বোনকে পাহারা দিতেই মূলত এই রুমে আসা। তানভির যতক্ষণ রুমে থাকে ততক্ষণ নিজের রুমের দরজা টা খুলে রাখে, মেঘ সিঁড়ি দিয়ে দৌড়ে উঠতে গেলেও ভাইয়ের কথা ভেবে আস্তেধীরে উঠানামা করে৷ বর্তমানে মেঘের অবস্থা না*জে*হাল কারণ তার একপাশে আবির ভাই এর রুম,আরেকপাশে তানভির ভাইয়ের৷ তানভির ভাইয়ের পরের রুমটা মীমের জন্য ঠিকঠাক করা হচ্ছে কিছুদিন পর থেকে মীমও উপরে থাকবে কিন্তু তাতে কি! ভাইয়ের ঘর ডিঙিয়ে মীমের রুম পর্যন্ত যেতে পারবে কি না স*ন্দেহ আছে৷
★★★★
রাত ১০ টার উপরে বাজে সবাই খাওয়াদাওয়া শেষ করে যার যার রুমে চলে গেছে। আবির এখনও বাড়ি ফিরে নি। মালিহা খান সোফায় বসে অপেক্ষা করছেন ছেলের জন্য । ১০-১৫ মিনিট পর বাড়িতে ঢুকলেন আবির আর তানভির, মাকে বসে থাকতে দেখে কিছুটা রা*গান্বিত হলো ছেলে।
'আম্মু তুমি আমার জন্য এভাবে রাত জেগে বসে থেকো না প্লিজ, আমি নিজের মতো করে খেয়ে নিবো।'
'তোর বউ আসলে আমি আর অপেক্ষা করবো না তোর জন্য,' সহসা উত্তর দিলেন মালিহা খান।
বড় আম্মুর কথা শুনে স্ব শব্দে হেসে উঠে তানভির । আবির ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায় তানভিরের দিকে সঙ্গে সঙ্গে তানভির হাসি থামিয়ে ফেলে, নিঃশব্দে হাসছে সে।
তানভির বরাবর ই ভী*তু প্রকৃতির, বাহিরে যতই শ*ক্তপো*ক্ত থাকুক না কেন বাবা, চাচা আর ভাইয়ের সামনে সে যেনো ভে*জা বিড়াল। এতদিন যত কাজ ই থাকতো ছেলেটা ৮-৯ টার মধ্যে বাড়ি এসে সবার সাথে খেতে বসতো৷ কিন্তু আবির ফেরাতে টাইম সিডিউলে কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে ছেলেটার।
■■■■■■■■■■■■■■■■■■■■■■■
#Ch.05
আবির মায়ের উদ্দেশ্যে ঠাট্টার স্বরে বলে উঠলো,
'এর উল্টোটাও হতে পারে যেমন তোমার বউমা তোমার কোলে ঘুমিয়ে গেলো আর তুমি তাকে ঘুম পাড়াতে পাড়াতে আমার জন্য অপেক্ষা করলে'
ছেলের এরকম ঠাট্টায় ভ্যাবাচেকা খেলেন মালিহা খান৷
'আবির পুনরায় শান্ত অথচ ক*ড়া বলে উঠলো, 'কাল থেকে তোমায় যেন বসে থাকতে না দেখি। আমার কিছু লাগলে চেয়ে নিবো আর খাবার টেবিলে রেখে দিও আমি খেয়ে নিব। '
এই কথার কোনো উত্তর বা দিয়ে,মালিহা খান স্বাভাবিক কন্ঠে বললেন,
'তানভির, মেঘ এখনও খায় নি, একটু ডেকে আসবি? এখন খাবে কি না!'
তানভির ঠিক আছে বলে উপরে গেলো, আবিরও নিজের রুমে গেলো৷ ৫ মিনিটে ড্রেস পাল্টে ফ্রেশ হয়ে নিচে নামছে।
এতক্ষণে মেঘ খাবার টেবিলে চলে এসেছে৷ ভেবেছিল ভাই ফ্রেশ হয়ে নামার আগে তাড়াতাড়ি খেয়ে পালাবে৷
খাওয়া অর্ধেক হতেই তার দৃষ্টি নিবদ্ধ হয় সিঁড়ির পানে, কালো টিশার্ট আর টাওজার পরে হাতে মোবাইল নিয়ে আপন মনে নামছে আবির, মেঘ সরু চোখে নিরীক্ষণ করছে আবিরকে৷ মানুষটাকে দেখে হৃৎস্পন্দন বাড়তে লাগলো মেঘের৷ এখন সে স্পষ্ট অনুভব করছে। তার বুকের ভেতরে কিছু একটা হচ্ছে । কিন্তু বোধগম্য হলো না কি হচ্ছে। নিজের অজান্তেই বুকের বা পাশে হাত রাখলো মেঘ। অনুভব করলো কিছু একটা অনবরত নৃত্য করছে বুকের ভেতর৷
আবিরের চেয়ার টেনে বসার শব্দে ঘোর কাটলো মেঘের, স্ব বেগে হাত নামিয়ে আনলো বুক থেকে, আবির মেঘের ঠিক বিপরীত চেয়ারটায় বসেছে।
মেঘের ছোট্ট বুকটা অনবরত কেঁপেই যাচ্ছে, চোখ তুলে তাকাতে পারছে না মেয়েটা। শরীর কাঁ*পা কাঁ*পি আর হৃদপিণ্ডের লাফা- লা*ফিতে সে বিদ্বিষ্ট, দিশেহারা অবস্থা অষ্টাদশীর। ইচ্ছে করছে ছুটে পালিয়ে যেতে আবিরের সামনে থেকে৷ কিন্তু পারছে না মনে হচ্ছে পায়ে শিকল দিয়ে বাঁধা।
মালিহা খান, হঠাৎ মেঘের হাতে হালকা ধাক্কা দিলেন, 'কিরে কি হলো তোর?'
দ্বিতীয় বার বার ঘোর কাটলো মেঘের, তৎক্ষণাৎ স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করলো, কাঁপা কাঁপা গলায় বললো, 'কিছু না!'
এই বলে পুনরায় খাওয়ার চেষ্টা করলো,কিন্তু এবার আর গলার দিয়ে খাবার নামছে না মেঘের৷ গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে, কাঁ*পা কাঁ*পা হাতে গ্লাস নিয়ে ঢকঢক করে অর্ধেক গ্লাস পানি নিমিষেই শেষ করে ফেললো মেঘ।
আবির আপন মনে খাচ্ছে, 'সামনে বা আশেপাশে কি হচ্ছে এসব দেখার প্রয়োজনই মনে করলো না সে। এই জগতের সবকিছু তার আগ্রহ সৃষ্টি করতে অক্ষম। '
আবিরের গা ছাড়া ভাব দেখে কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে খাওয়া শুরু করে মেঘ৷ মাঝখানে এক পলকের জন্য তাকিয়েছিল আবিরের দিকে, 'কালো টিশার্টে মুখ টা কত মায়াবী লাগছিল, এলোমেলো চুল, খাওয়ার স্টাইল দেখে দ্বিতীয় বারের মতো ক্রাশ খেলো অষ্টাদশী।
কে বলতে পারে, দুইদিন আগে পর্যন্ত আবিরের কোনো স্মৃতি ছিল না মেঘের মন, মস্তিষ্ক জোড়ে। হঠাৎ মনে পরলেও শুধু ওকে মেরেছিল এই স্মৃতিটায় মনে হতো আর রাগে কটমট করতো মেঘ। আর আজ বিকাল থেকে যতবার আবিরকে দেখছে ততবার মেঘের শীর্ণ বক্ষ ধরফড়িয়ে ওঠছে। ছোট বেলা যে ভ*য়টা ভাইয়ের প্রতি বোনের ছিল সেটা আজ বদলে গেছে। আবিরের দৃষ্টি তাকে বরফের ন্যায় জমিয়ে দিচ্ছে প্রতিনিয়ত৷ এই দৃষ্টিতে সূ*চালো কিংবা ধা*রালো অ*স্ত্র আছে যা এক কিশোরীর বক্ষপিঞ্জর এফোঁ*ড় ওফোঁ*ড় করে দেয়ার ক্ষমতা রাখে৷
আবিরের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে হাবিজাবি চিন্তা করছিল মেঘ।
আবির চোখ তুলে তাকাতেই, মেঘের মনোযোগ ঘুরে গেলো, আবিরের ত*প্ত দৃষ্টি মনে হচ্ছে ফা*লা ফা*লা করে দিচ্ছে হৃদপিণ্ডটা, দৃষ্টি সংযত করে চিবুক নামিয়ে নিলো গলায়, সহসা মুখবিবর চুপসে গেছে আমস*ত্ত্বের ন্যায়।
দ্বিতীয়বার আবিরের দিকে তাকানোর স্পর্ধা টুকু হয় নি অষ্টাদশীর।
এরমধ্যে মালিহা খান ছেলে আবিরের উদ্দেশ্যে বলে উঠলেন,
'তোর নতুন কোম্পানি টা কি না খুললে হয় না? তোর বাবা বিষয়টা ভালোভাবে নিচ্ছেন না। কেনো বাবাকে রাগিয়ে দিচ্ছিস..!! তোর বাবা তোকে অনেক ভালোবাসে। '
শাণিত স্বরে মায়ের দিকে তাকিয়ে আবির বলা শুরু করলো,
"ছেলেরা সারাজীবন বাবাদের প্রিয় থাকতে পারে না।
নিজের স্বপ্ন,ইচ্ছেকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে দূরত্ব বেড়ে যায় বাবা ছেলের।
এটা অস্বাভাবিক কিছুনা। যদি বাবার স্বপ্ন বা ইচ্ছের হাল প্রতিটা ছেলে ধরতো তাহলে পৃথিবী এতটা এগিয়ে যেতো না, আমাকেও দেশ ছেড়ে এত বছর বাহিরে পড়ে থাকতে হতো না। আব্বু নিজে এই কোম্পানি শুরু করেছিল, ওনি যদি ওনার বাবার ইচ্ছেকে প্রাধান্য দিতেন তাহলে আজ এতদূর পৌছাতেন না । তাছাড়া আমি তো বলি নি বাবার স্বপ্ন বাদ দিয়ে আমি আমার স্বপ্নকে প্রাধান্য দিবো। আমার স্ব*প্ন একান্তই আমার। আমি দুদিক ই সামলাবো তুমি এসব নিয়ে অযথা চি*ন্তা করে নিজের শরীর খারাপ করো না।'
মালিহা খান চিন্তিত স্বরে বলে উঠলেন, 'এত চাপ আর দৌড়াদৌড়ি করে তো নিজে অসুস্থ হয়ে পরবি বাবা।'
আবির গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলো, "তোমাকে তো বললাম আমার জন্য দুশ্চি*ন্তা করতে হবে না।"
তানভির মাঝখান থেকে বলে উঠলো, "ভাইয়ার জন্য চি*ন্তা করার মানুষ আছে বড় আম্মু, তুমি রিলা*ক্সে থাকতে পারো।"
মেঘ এতক্ষণ নিরবে খেলেও এই কথা শুনামাত্রই ছোট দেহ কম্পিত হয় তার, আত*ঙ্কিত হয়ে তাকালো আবিরের দিকে,
আবির তৎক্ষণাৎ ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো তানভিরের দিকে, ওমনি মুখটা চুপসে গেলো তানভিরের৷
করুন স্বরে বললো, 'সরি ভাই'
পিনপতন নীরবতা খাবার টেবিলে। কেউ কোনো কথা বলছে না। মেঘের মনটা সহসা খারাপ হয়ে গেলো৷
"তানভির আবিরের একনিষ্ঠ ভক্ত । এক কথায় দুজন দুজনের বেস্ট ফ্রেন্ড। আবির গুরুগম্ভীর স্বভাবের, রাগী, কথা কম বলে কিন্তু দিনশেষে আবিরের অপ্রকাশিত আবেগগুলো তানভিরকেই শেয়ার করে এসেছে এতবছর,এমনকি এখনও। আবিরের থেকেও বেশি তানভির ভালোবাসে আবিরকে। আবির যদি বলে সারারাত এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকবি, তানভির তাই করবে।
অবশ্য করবে নাই বা কেনো, সেই কলেজ লাইফ থেকে রাজ*নীতি করার ইচ্ছে তানভিরের, পড়াশোনাতে তার বিশেষ আগ্রহ ছিল না । বড় আব্বু এবং আব্বুকেও বলেছে কয়েকবার তাদের কড়া জবাব, রাজ*নীতি আমাদের পছন্দ না. এই বাড়ির কেউ রাজ*নীতি করবে না।
একদিন বাধ্য হয়ে ভাইকে কল করেছে তানভির, ভালোমন্দ কথা শেষ করে তানভির ভয়ে ভয়ে বললো,
'ভাইয়া তোমার সাথে আমার একটু কথা ছিল!'
আবির সাবলীল ভঙ্গিতে উত্তর দিয়েছিল সেদিন,
'রাজ*নীতি করতে চাস তাই তো?'
তানভির নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছিল না, আবির এত স্বাভাবিক ভাবে কথাটা বলছে'
আবির: 'তুই রাজ*নীতি কর সমস্যা নাই। কিন্তু কিছু বিষয় মাথায় রাখবি, বিষয় টা দেখতে যতটা সহজ ততটাও সহজ না। একনিষ্ঠ এবং সৎ থাকতে হবে তোকে । দল,মত নির্বিশেষে তোকে সত্যের পথে চলতে হবে পা চা*টা স্বভাব যেনো না হয়। '
তানভির ভয়ে ভয়ে বললো, 'বড় আব্বু আর আব্বু তো রাজি হচ্ছে না'
আবির হেসে উত্তর দিয়েছিল, 'ঐসব আমি সামলে নিবে, তুই আমায় কথা দে তুই তোর জায়গায় সৎ থাকবি, আর যেকোনো সমস্যা আমায় শেয়ার করবি'
সেদিন খুশিতে তানভিরের চোখ টলমল করছিল, আবির সামনে থাকলে হয়তো জরিয়ে ধরে কেঁ*দে দিতো ছেলেটা, সেদিনই ভাইকে কথা দিয়েছে, '
'সে সারাজীবন সৎ থাকবে এবং একনিষ্ঠ ভাবে রাজ*নীতি করবে। '
এরপর থেকে রাজ*নীতি সম্পর্কিত যত ঝামেলা আছে, কি করা দরকার, কোনটা করলে ভালো হবে সবই ভাইয়ের সাথে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তানভির ।
আজ সে ছাত্রলী*গের সহ-সভাপতি। সবটুকু ক্রেডিট আবিরের। আগামীবছর মে*য়র নির্বাচনের পরে নতুন করে সভাপতি করা হবে। তাই তানভির চেষ্টা করছে যেন এইবার সভাপতি হতে পারে৷ '
তানভিরের রাজ*নীতির জন্য বাবা-চাচার সাথে আবিরের কথা-কাটাকাটি সেই শুরু থেকেই। কিন্তু আবিরের এক কথা, তানভির রাজ*নীতিই করবে। আজ সন্ধ্যায় ও বাবা-চাচার মুখের উপর বলেছিল তানভিরকে কোনো প্রকার বাঁধা যেনো না দেয়া হয়।
তানভিরের জীবনে আবির গাছের ন্যায়, যার ছায়ায় তানভিরের অবস্থান। ভাই ছাড়া তানভির অসহায় ।
★★★
খাওয়া শেষ করে আবির নিজের রুমে চলে গেছে, তানভির ও চলে গেছে। কিন্তু বসে আছে মেঘ, সে খাবার টেবিলে সবার আগে এসেছিল, ভেবেছিল ভাইয়ের আগে খেয়ে পালাবে কিন্তু তা আর হলো কই আবিরের জীবনে কেউ আছে এই কথাটায় মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে অষ্টাদশীর, ভাতের প্লেটে আঙুল ঘুরাচ্ছে আর ভাবছে,
'আমার ছোট্ট মন টা এভাবে ভেঙে গেলো, প্রেমে পরার আগেই ব্রেকাপ হয়ে গেলো, ছিঃ' তৎক্ষনাৎ নিজের মনকে নিজেই সান্ত্বনা দিচ্ছে, থাক মন খারাপ করিস না, ছেলেটা ভালো না,মনে নেই তোকে ছোট বেলা মেরেছিল, আস্ত হিট*লার, তোর জীবনে রাজপুত্র আসবে যার জীবনে রাজ করবি শুধু তুই,'
মালিহা খান মেঘের হাতে পুনরায় ধাক্কা দিয়ে বললো, থাক তোর আর খেতে হবে না, এতে হুঁশ ফিরে মেঘের৷
মেঘ কিছু বলার আগেই খাবারের প্লেট সামনে থেকে নিয়ে যান ওনি। বড় আম্মুর এসব কর্মকাণ্ডে আহাম্মক বনে যায় মেঘ।
মালিহা খান বলে উঠেন: এভাবে ১৪ ঘন্টা ভাত নিয়ে বসে থাকলে বি*ষ হয়ে যাবে খাবার।
মেঘেরও খাবার খাওয়ার তেমন ইচ্ছে নেই আর। সে তো নিজেকে সা*ন্ত্বনা দিতে ব্যস্ত। হাত টা ধৌয়ে রুমের দিকে যাচ্ছে। মালিহা খান মেঘকে ডেকে আবার বললেন তোর কি পেট ভরেছে নাকি নতুন করে খাবার দিব তোকে,
আর খাবো না' এটুকু বলে রুমে চলে আসে মেঘ । পড়তেও ইচ্ছে করছে না মেয়েটার, চুপচাপ শুয়ে আছে।
চোখ বন্ধ করতেই ভেসে উঠে, 'আবিরের হাসি, বাইক এনে যখন হাসি মুখে বলছিল কথা গুলো কানে ভেসে আসছে, কি সুন্দর করে কথা বলে মানুষ টা, তাকানোর ধরন, রাগলে কুঁচকে ফেলা ঘন ভ্রু দুলো সবই যেনো চোখের সামনে ভাসছে মেঘের। '
সঙ্গে সঙ্গে চোখ খুলে ফেলে মেঘ, বুক ভে*ঙে আসে কষ্টে৷ এই লোক আমার ভাবনায় কেনো আসছে বার বার, এই লোক তো অন্য কারো৷ এই বলে অভিমানে ঘুমিয়ে পরে মেঘ।
★★★
আজ শুক্রবার সকালে থেকে বাড়িতে হৈচৈ শুরু হয়ে গেছে। মীম, আদি আর মেঘ দুষ্টামি, আড্ডায় মাতিয়ে তুলেছে ড্রয়িংরুম।
তিন ঝা রান্নায় ব্যস্ত। আবির বাড়ি ফিরেছে বলে আবিরের দুই মামা, দুই খালা তাদের বাচ্চারা সবাই দেখতে আসবে, মীম আর মেঘের মামা,খালাদের বাড়ি থেকেও বেড়াতে আসবে মানুষ। বেশিরভাগ মানুষ ই চাকরিজীবী যার ফলে শুক্রবার ছাড়া কারও সময় নেই। ইকবাল খান ব্যস্ত বাজার করা নিয়ে৷ যখন যা লাগছে ওনি ছুটছেন আনার জন্য।
তানভিরের সকাল থেকে কোনো খোঁজ নেই, সকালে নাস্তা করে বেরিয়েছে, পার্টি অফিসে কাজ আছে, বিকালে ফিরবে বলে চলে গেছে। এজন্য মেঘের কোনো ভয় ডর নেই। আপন মনে আড্ডায় মগ্ন মেয়েটা।
হঠাৎ উপরে করিডোর থেকে আবির ডাক দিলো মাকে, 'আম্মু একটু কফি দিতে পারবে'
এই বলে রুমে চলে গেলো পুনরায়,
"উত্তর শুনারও প্রয়োজন মনে করে নি সে । "
মালিহা খান কফি করে মেঘকে ডাক দিলেন, 'কফি টা আবিরকে দিয়ে আয় তো মা!'
তৎক্ষনাৎ মেঘের মনে পরে গেলো গতরাতে কথা, সহসা বলে উঠলো, আমি কেনো মীম দিয়ে আসুক৷
মালিহা খান কিছুটা বিরক্তি নিয়ে বললো, ওরা নিলে ফেলে দিবে, তখন আরেক মুসিবতে পড়বো, বাড়িতে একটু পর মেহমান আসবে যা না মা।
মেঘ আর কথা না বাড়িয়ে ধীর পায়ে পায়ে হাঁটতে হাঁটতে আবিরের দরজা পর্যন্ত আসলো। গলা শুকিয়ে যাচ্ছে মেঘের, বুকের ভেতরের ধুকপুক টা বেড়ে যাচ্ছে , হাত- পা কাঁপছে। আস্তে আস্তে দরজায় টুকা দিলো মেঘ
আবির: দরজা খুলা আছে
কাঁ*পা কাঁ*পা হাতে দরজা ধাক্কা দিলো মেঘ।
আবির ল্যাপটপে কি যেনো করছে। তাকিয়েও দেখলো না কে এসেছে।
আবির: এখানে রেখে যা
মেঘ হাঁটতে পারছে না, হাত আরও বেশি কাঁপছে এখন, পায়ে একটুকু জোর পাচ্ছে না। ঠায় দাঁড়িয়ে আছে আগের জায়গায়
আবির ল্যাপটপ টেবিলে রেখে মেঘের মুখোমুখি এসে দাঁড়িয়েছে, হাত থেকে কফির কাপ টা নিয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে রাখে, মেঘের সেদিকে কোনো মনোযোগ নেই, তার মস্তিষ্কের প্রতিটা নিউরন ছুটছে এদিক সেদিক। বডিস্প্রের তীব্র ঘ্রাণে হুঁশে ফেরে মেঘ, তার থেকে এক ফুটের দূরত্বে দাঁড়িয়ে আছে আবির,
আচমকা এইভাবে এসে দাঁড়ানোয় একটু ভ্যাবাচেকা খেলো মেয়েটা। মেঘ ত্রস্ত ঘুরে গেলো নিজের উপর জোর খাটিশে পা বাড়ায় দরজার দিকে।
সবেগে,সুদূর হস্তে মেঘের কনুই চেপে ধরলো আবির, কড়া কন্ঠে বললো,
'এদিকে তাকা'
অনিচ্ছা স্বত্তেও ঘুরে দাঁড়ালো মেঘ। চিবুক নেমে গলায় আটকালো, সারা শরীর কাঁপছে, শীতল স্বরের হুমকিতে কানের লতি গরম হয়ে যাচ্ছে সাথে আবিরের শরীরের আর বডিস্প্রের তীব্র গন্ধ নাকে লাগছে মেঘের।
আবির পুরু কন্ঠে বলল, 'কফিটা টেবিলে দিয়ে আসতে বলেছিলাম কথা কানে যায় না?'
এতটুকু বলতেই মেঘ হেলেদুলে পড়ে যেতে নেয়,
টালমাটাল মেয়েটার বাহু ধরে সোজা দাঁড় করিয়ে দিলো আবির, জ্ঞান হারাতে হারাতেও যেন হারায় নি মেঘ,
আবিরের চাউনীতে তীক্ষ্ণতা গম্ভীর কন্ঠে বললো, 'তুই কি পুষ্টিহীনতায় ভুগছিস? অবশ্য ভুগবি নাই বা কেন, খাবার প্লেটে আঙুল ঘুরালে কি আর শরীরে পুষ্টি হবে!'
প্রথমে গম্ভীর কন্ঠে বললেও শেষটা যেনো মজার ছলেই বললো।।
মেঘের শরীর ঘামছে, কে বুঝাবে এই লোকটাকে, যাকে দেখলে অষ্টাদশীর সব শক্তি নিমিষেই মিলিয়ে যায় কোথায় যেন, যার দৃষ্টি কেঁ*ড়ে নেয় তার সমস্ত ধ্যান-জ্যান,মনোনিবেশ।
আবির সাবলীল ভঙ্গিতে বলে উঠলো, 'যেতে পারবি নাকি দিয়ে আসবো?'
নিজেকে সামলে মেঘ বললো,'পারবো৷ তারপর গুটিগুটি পায়ে রুম থেকে বের হয়ে যায় মেঘ!'
আবির তাকিয়ে আছে অষ্টাদশীর হাঁটার পানে।
মেঘ কোনোরকমে নিজের রুম পর্যন্ত এসেছে,এক দৌড়ে এসে খাটে শুয়েছে, মন মস্তিষ্ক অস্বাভাবিকভাবে লাফালাফি করছে। কয়েক মুহুর্তের মধ্যে নিজের অস্তিত্ব খোঁজে পেলো না। সেন্স হারিয়ে পরে আছে বিছানায়।
★★★
১১ টার পর থেকে মেহমান আসা শুরু হয়েছে। বাড়িঘর ভরে গেছে আত্মীয় স্বজনে। মীম, আদি গোসল করে সেজেগুজে গল্প করছে সবার সাথে, আবির একেবারে নামাজের সময় ঘর থেকে বের হয়েছে। টুপি, পাঞ্জাবি পড়ায় অন্যান্য দিনের থেকেও অনেক সুন্দর লাগছে ছেলেটাকে।
সবাইকে সালাম দিয়ে টুকটাক কথা বলে মামাদের সাথে বেরিয়ে যায় নামাজ পরতে।।
মেঘের দেহ এখনও বিছানায় লেপ্টে আছে। বোনকে খোঁজতে মীম উপরে গিয়ে দেখে মেঘ ঘুমাচ্ছে। ডাকতে ডাকতে মেঘের ঘুম ভাঙে,
মীম: আপু, ও আপু উঠো। এখন ঘুমাচ্ছো কেনো? বাড়িতে মেহমান চলে আসছে। আজান পরে গেছে অনেকক্ষণ আগে উঠো, নামাজ পরে রেডি হও আম্মু আমায় পাঠাইছে তোমায় ডাকছে।
কিছুক্ষণ পর মেঘের জ্ঞান ফেরে, পাশের দেয়ালে টানানো দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকায় ১.১৫ বাজে। তৎক্ষনাৎ শুয়া থেকে উঠে বসে। আবিরকে কফি দিতে গেছিলো ৮.৩০-৯ টার মধ্যে। ৪ ঘন্টার উপরে তার জ্ঞান ছিল না। ৫ মিনিট বসে তারপর গোসলে চলে যায়।
নামাজ পরে আবিরের দেয়া একটা জামা পরে নিলো মেঘ, বেগুনি রঙের গাউন, মোটামুটি গর্জিয়াস । চুল গুলো খোঁপা করে নিলো, এত লম্বা চুল ছেড়ে রাখলে কিছুই করতে পারবে না সে। মুখে হালকা ফেসপাউডার দিয়ে, গোলাপি রঙের লিপস্টিক দিলো হালকা করে।
রুম থেকে বের হলো প্রায় ৩ টার দিকে। মামা খালারা সবাই খেতে বসেছে৷ ছোটদের খাওয়া শেষ। রুম থেকে বের হয়ে করিডোর দাঁড়িয়ে পরিস্থিতি বুঝার চেষ্টা করছে সে। বাড়িতে এত হৈ-হুল্লোড়ের শব্দে মাথা ধরে ফেলছে মেঘের।
নজর পরে সোফার দিকে, আবিরকে ঘেরাও করে বসে আছে সব মামালো খালাতো ভাই বোনরা, তারমধ্যে একজনের দিকে নজর পরে স্পেশাল একজন, মালা আপুর দিকে, মালা আপু অনার্স ৩য় বর্ষে পড়তেছে এখন, আবির ভাইয়ার মামাতো বোন, মালা আপুর একটা বড় আপুও আছে ওনি মাইশা৷ ওনার পড়াশোনা শেষ, জব করতেছেন এখন। দুই বোন ই এসেছেন। কিন্তু মালা আপুর দৃষ্টি কেমন জানি, আবির ভাইয়ার দিকে এমন ভাবে তাকিয়ে আছে যেনো চোখ দিয়েই গিলে খাবে আবির ভাই কে। বিষয়টা দেখেই মেঘের মেজাজ গরম হয়ে গেছে
তৎক্ষনাৎ মনে পরে গেলো রাতের কথা, তানভির ভাইয়া তে বলেছিল আবির ভাই এর জীবনে কেউ আছে। মালা আপুই কি সেই কেউ টা। ভাবতেই বুক ভরে উঠে কষ্টে।
আবিরের সমবয়সী একটা ভাইয়া আছে নাম সাকিব।। ওনি আবির ভাইয়ার দ্বিতীয় বেস্ট ফ্রেন্ড বলা চলে। আরও কয়েকটা ছোট ভাই আবির ভাইকে এটা সেটা অনেক কথা জিজ্ঞেস করছে, বিদেশে কেমন লাগে, পড়াশোনা কেমন, কিভাবে থাকতে হয় এসবই।
মেঘ ধীরস্থির পায়ে সিঁড়ি দিয়ে নামছে, আবির এক পলক তাকায় সেদিকে পুনরায় ভাইদের কথায় মনোযোগ দেয়।
মেঘকে দেখে ২-৪ জন ডাক শুরু করে, এই মেঘ কেমন আছিস, এদিকে আয়।
মীম ছুটে আসে মেঘের দিকে, 'আপু তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে মাশাআল্লাহ নজর না লাগে কারো!'
মেঘ মুচকি হাসলো
মীম মেঘকে টেনে নিয়ে সোফায় বসালো, সবার সাথে কথা বলতে বলতে হঠাৎ দৃষ্টি পরে আবির ভাইয়ার দিকে, উপর থেকে সে শুধু মালা আপুর নজর টায় দেখেছে। এখন সে আবিরকে দেখছে, নীল পাঞ্জাবি, সাদা প্যান্ট, মাথায় টুপি আহা কত মায়াবী লাগছে । আবিরের হাস্যোজ্জল মুখটা দেখে প্রেমে পরে গেছে মেঘ। যত্রতত্র দৃষ্টি সরিয়ে বাকিদের সাথে কথা বলায় ব্যস্ত হলো।
বড়দের খাওয়া শেষ। মেঘ উঠে সবাইলে সালাম দিয়ে খুশগল্প করতে লাগে, খালামনি দের অনেক দিন পর দেখছে। আগে বিয়েতে গেলে টুকটাক দেখা হতো কিন্তু তানভিরের অত্যাচারে মেয়েটা বিয়ে বাড়িতে যাওয়া ছেড়ে দিছে তাই মামি আর খালাদের সাথে দেখায় হয় না। মামা অবশ্য মাঝে মাঝে দেখতে আসে, এটা সেটা নিয়ে আসে।
সারাদিনের ঘুরাঘুরি শেষে সবাই নিজেদের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। থাকার জন্য বলেছে সবাই কিন্তু চাকরিজীবীদের কাছে বেড়ানো মানেই কয়েক ঘন্টা ।
বিদায় বেলায় মালা আপুর আচরণে মাথায় রক্ত উঠে যায় মেঘের, ভালো করে বললেই হয় বেড়াতে যাবেন' গায়ে ঢলে পরার কি আছে আশ্চর্য, মালার এরকম আচরণে আবির ভাই তৎক্ষনাৎ সরে না গেলে তো উপরে পরে যেতো এই মেয়ে। রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে মেঘ নিজের রুমে চলে যায়।
মেহমানদের বিদায় দিয়ে আবিরও বাইক নিয়ে বেরিয়ে পরে কোথায় যেনো।মাঝখানে তানভির একবার এসেছিল সবার সাথে দেখা করে আবার বেরিয়ে গেছে। পার্টি অফিসে কি নিয়ে ঝামেলা চলছে তাই বসার সময় হয় নি তার।
মেঘ নিজের রুমে দরজা বন্ধ করে কাঁদতে লাগলো৷ কিন্তু কেনো কাঁদছে সে নিজেও জানে না । অতিরিক্ত রাগে কান্না আসে মেয়েটার।
■■■■■■■■■■■■■■■■■■■■■■■
#Ch.06
মেঘ বরাবর ই খুব অভিমানি। অল্পতেই কান্না করে দেয়।। রাত ১০ টা বেজে গেছে এখনও মুখ ফুলিয়ে রুমে বসে আছে মেয়েটা৷ সারাদিন খাওয়া নেই।
তড়িঘড়ি করে তানভির বাড়িতে ঢুকে৷ এসেই মাকে জিজ্ঞেস করে, "মেঘ খেয়েছে?"
হালিমা খান সহসা উত্তর দিলেন, " সন্ধ্যার পর থেকে এত ডাকছি দরজায় তো খোলছে না।"
তানভির আর কথা বাড়ালো না তড়িৎগতিতে ছুটে গেলো বোনের দরজার সামনে, প্রথমে আস্তে করে ডাকলো৷ মেঘের সারা নেই, আচমকা চোয়াল শক্ত করে একপ্রকার চিৎকার দিলো,
'মেঘ তুই এই মুহুর্তে দরজা না খুললে তোর কপালে শ*নি আছে বলে দিলাম।'
মেঘ শুয়া থেকে এক লাফে উঠে বসলো। কয়েক সেকেন্ডে দৌড়ে গিয়ে দরজা টা খুললো। চোখ তুলে তাকানোর সাহস নেই ভাইয়ের দিকে। আজ পর্যন্ত তানভির মেঘের গায়ে হাত তুলে নি শুধু ধ*মক ই দেয়৷
কিন্তু ভাইকে এক বিন্দু বিশ্বাস করে না মেঘ। কখন আবির ভাইয়ের মতো নাক মুখে মারবে থা*প্পড় বিশ্বাস নেই।
দরজা খুলতেই নরম স্বরে তানভির বললো, 'খেতে যা'
"মেঘ তানভিরের এত নরম স্বর কোনোদিন শুনে নি,ভাবতেই পারছে ভাইয়া তাকে এত ভালোবেসে খেতে বলছে।"
তানভির: খাওয়া শেষ হলে তোর ফোন টা দিস, তোকে একটা ফেসবুক আইডি খুলে দিব।
তানভিরের এমন কথায় মেঘ আহাম্মক বনে গেলো । তানভির ভাই বরাবর ই এরকম। নিজেই ঝাড়বে তারপর নিজেই আদর করবে, এটা সেটা কিনে আনবে মেঘের জন্য। কিন্তু আজকের বিষয় টা সম্পূর্ণ ভিন্ন। এত নরম স্বর কখনো শুনেনি এর আগে।
নিমিষেই মনটা খুশিতে ভরে গেলো মেঘের।
খাবার টেবিলে বসে আপন মনে খাচ্ছে মেঘ, আজকে তার পছন্দের অনেক রেসিপি আছে, একটু একটু করে সব চেক করছে। কিন্তু রাগে ফুঁসফুস করছে মেঘের আম্মু হালিমা খান।
হালিমা খান: "সন্ধ্যা থেকে যে তোকে এতবার ডাকতে গেলাম বের হলি না কেন? ঠিক ই ভাইয়ের ভয়ে বের হয়ে আসলি। আমাকে কেনো কষ্ট দেস। তোকে কে কি বলে দুই দিন পর পর না খেয়ে পরে থাকিস। কিছুদিন পরে যে এডমিশন৷ না খেলে পড়বি কিভাবে, আর না পড়লে ভর্তি হবি কিভাবে।
তুই ও তোর ভাইয়ের মতো হচ্ছিস, সে সারাদিন ভন্ডের মতো টুইটুই করে ঘুরে আর তুই ও এখন তার ভাব নিচ্ছিস। খেয়ে না খেয়ে রুমে পরে থাকিস।
আর শুন মেয়ে মানুষের এত রাগ জেদ ভালো না, তোর এই রাগ জেদ সামলানোর জন্য আমরা সারাজীবন তোর পাশে থাকবো না । "
এতটুকু বলতেই চোখ পরে ড্রয়িং রুমে দাঁড়ানো আবিরের দিকে।
আবিরের চাউনিতে পরিষ্কার রু*ষ্টতা, শ্যামবর্ণের মুখমন্ডল কালো দেখাচ্ছে, ক*ড়া কন্ঠে মামনির দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো,
"কি হয়েছে?"
পুরুষালি কন্ঠে আঁতকে উঠে মেঘ।
হালিমা খান গলা নামিয়ে উত্তর দিলো, "খায় না ঠিক মতো, পড়াশোনা করে না কি করবো ওকে নিয়ে"
আবির পূর্বের অভিব্যক্তি বজায় রেখে উত্তর দিলো,
"ওকে কিছু বলো না, কাল থেকে মেঘ টাইম টু টাইম খাবে, একটু এদিক সেদিক হলে সেটা আমি দেখবো।"
আবিরের কথায় খুশি হয়ে গেলো হালিমা খান।।
কিন্তু মেঘ খুশি হবে নাকি ভয় পাবে তা বুঝে উঠতে পারলো না৷ এতবছরে অভিমান করে মাঝে মাঝে না খেয়ে থাকলে তানভির এসে ধমকে বা বুঝিয়ে খাওয়াতো এখন সেই দায়িত্ব নিতে যাচ্ছে আরও একজন। ২ জন মিলে মেঘ কে শাসন করবে ভাবতেই মেঘের বুক কেঁপে উঠে আবার মনের মধ্যে অন্য রকম প্রশান্তিও কাজ করে মেঘের।। আবির ভাই এর মূল্যবান সময়ের মধ্যে ৫ মিনিট সময় যে মেঘ কে নিয়ে ভাববে এতেই খুশি খুশি লাগছে মেঘের।
তৎক্ষণাৎ মনে হয়ে গেলো তানভির ভাইয়া বলেছে ফেসবুক আইডি খুলে দিবে, তাড়াতাড়ি খেয়ে রুমের দিকে ছুটলো মেঘ৷
রুম থেকে ফোন নিয়ে ছুটে গেলো তানভির ভাইয়ার রুমে কিন্তু তানভির ভাইয়া রুমে নেই।। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলো কিন্তু কোথাও নেই।
মোবাইল নিয়ে নিজের রুমে ঢুকতে যাবে হঠাৎ শুনতে পেলো তানভিরের কন্ঠ। কিন্তু কোথায় আছে
বাধ্য হয়ে মেঘ জোরে ডাক দিলো, "ভাইয়া!"
তানভির পাশের রুম থেকে উত্তর দিলো, "আবির ভাইয়ার রুমে আমি, আয়।"
আবির ভাই নাম টা শুনেই মেঘের বুকটা হুহু করে উঠে চিন্তায়, নিজেকে নিজে সাহস দেয়ার চেষ্টা করলো । তারপর গুটিগুটি পায়ে হেঁটে দরজায় দাঁড়ালো।
তানভির: ভেতরে আয়
মেঘ: মেবাইল টা দিয়ে যায়, তুমি কাজ করো।
তানভির: আরে ভেতরে আয়। বস তুই, তোকেও দরকার লাগবে।
মেঘ আর কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ খাটের কর্ণারে বসলো।
আবির নেই রুমে, ওয়াশরুমে আছে মনে হয়৷
তানভির ফোন নিয়ে কি যেনো করছে, তখন ই ওয়াশরুম থেকে বের হলো আবির
মেঘের দৃষ্টি পরে সেদিকে,
একটা ছাই রঙের টিশার্ট আর একটা ব্ল্যাক টাওজার, ভেজা চুল গুলো থেকে টপটপ করে পানি পরছে। শরীরের টিশার্ট টা অনেকটায় ভিজে গেছে।৷
মেঘ টেনে হিঁচড়ে দৃষ্টি নামিয়ে আনলো, মনে মনে ভাবছে,
একটা মানুষ এত কিউট কিভাবে হয়,যদি পারতাম আমার পড়ার টেবিলে সাজিয়ে রাখতাম, সারাদিন পড়তাম আর দেখতাম। তাহলে আমার মন কখনোই খারাপ হতো না!লোকটা ফর্সা নন, শ্যামলা গায়ের রঙ কিন্তু দেখতে মারা*ত্মক সুন্দর। সবচেয়ে মারা*ত্মক ওনার লুক, তাকানোর স্টাইল।
উফ,যতবার দেখছি ততবার ই নতুন করে ক্রাশ খাচ্ছি!
আবির ভাই খাটের অপর পাশে মোবাইল হাতে নিয়ে বসেছেন।
তানভির ভাইয়া মোবাইলে ফেসবুক অপশনে ক্রিয়েট নিউ একাউন্ট এ ঢুকতেই তানভির ভাইয়ার ফোনে কল আসে। দাঁড়িয়ে পকেট থেকে ফোন বের করে রিসিভ করে কথা বলা শুরু করে। ওমনি মেঘের মেবাইলটা আবিরের হাতে দিয়ে বলে ভাইয়া তুমি ওরে একাউন্ট টা খুলে দাও আমার গুরুত্বপূর্ণ কল আসছে। এই বলে মোবাইল রেখে রুম থেকে বেরিয়ে চলে গেলেন।
মেঘ বসে আছে চুপচাপ, মুখ তুলে তাকাতে সাহস পাচ্ছে না। বুকটা এখনও ধুকপুক করছে।
আবির মেঘের মোবাইলে নিজের মতো করে ফেসবুক একাউন্ট খুলছে, জন্মতারিখ, সাল,নাম কিছু জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন মনে করছে না ওনি। সবকাজ শেষ করে ফোনটা এগিয়ে দিলেন মেঘের দিকে৷
তখনি রুমে ঢুকলো তানভির।
সহসা বলে উঠলো, শেষ?
এই বলে ফোন টা নিজের হাতে নিলো।।
ফেসবুকে ঢুকে তানভিরের আইডি টা খোঁজে রিকুয়েষ্ট পাঠালো,
আবিরের দিকে তাকিয়ে বললো, " ভাইয়া তোমাকে রিকুয়েষ্ট দেয়, এক্সেপ্ট করো নাকি!"
আবির গম্ভীর কন্ঠে বললো, "আমায় রিকুয়েষ্ট দিতে হবে না। "
তানভির কথায় পাত্তা না দিয়ে কয়েক সেকেন্ড পর বললো, "ভাইয়া তোমায় রিকুয়েষ্ট পাঠিয়েছি। Accept করে নিও৷ না হলে আমার ছোট্ট বোনটা কষ্ট পাবে।"
আবির তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তানভিরের দিকে।
মেঘ মনে মনে খুশিই হলো ভাইয়ের কথায়, মেঘের তো কখনো সাহস ই হতো না আবির ভাই কে রিকু*য়েষ্ট দেয়ার বা এক্সে*প্ট করার কথা বলার।
তানভির সেদিকে গুরুত্ব না দিয়ে, মেঘের হাতে ফোন দিয়ে বললো, তুই এখন যা, আমি আর ভাইয়া এক্সেপ্ট করে নিবো। তুই কি করিস না করিস সব নজরে রাখবো কিন্তু।
মেঘ কোনো কথা না বলে মাথা নিচু করেই রুমে চলে আসলো মোবাইল নিয়ে।
মেঘ রুমে এসে বিছানায় শুয়ে ফেসবুকে ঢুকতেই নজরে পরলো,
'Sazzadul Khan Abir' Accept your friend request.
মেঘ শুয়া থেকে উঠে বসে, মেঘের খুশি দেখে কে, Friendlist এ একমাত্র ফ্রেন্ড সেটায় আবির ভাই। তার একটা স্ক্রিনশট রেখে দিল মেঘ।
তার ৫ মিনিট পর এক্সে*প্ট করলো তানভির ভাই।
আবির ভাইয়ার আইডিতে ঢুকলো, প্রোফাইল পিকটা নতুন কেনা বাইকে বসা, "একদম ওয়াও।"
কভার ফটো সবুজ ঘাসের মাঝে বাইক টা রাখা তার সামনে বাইকে হেলান দিয়ে বসা আবির ভাই, ছবিটা "ওহ মাই গড, ওয়াও!"
সবগুলো ছবি দেখে দেখে ডাউনলোড করছে মেঘ। যত দেখছে ততই পাগ*ল হয়ে যাচ্ছে মেয়ে টা।মনে হয় পাবনা যেতে বেশিদিন লাগবে না। তারপর মোবাইল রেখে ঘুমানোর চেষ্টা করলো, চোখ বন্ধ করতেই চোখের সামনে ভেসে আসছে একটার পর একটা স্টাই*লিশ ছবি। কখন যেনো ঘুমিয়ে পরেছে মেয়েটা।
★★★
আজ শনিবার, আবিরের অফিসে যাওয়ার দিন। সকাল সকাল উঠে শাওয়ার নিয়ে ফিটফাট হয়ে রেডি হয়ে পরেছে আবির। ৭.৩০ বাজে মাত্র ।
নিজের রুম থেকে বের হয়ে করিডোর দিয়ে দ্রুত হাঁটছে হঠাৎ মেঘের দরজার সামনে এসে দাঁড়িয়ে দরজায় ডাক দেয়,
২ বার ডাকতেই ঘুমন্ত মেঘ, ঘুমে টলতে টলতে দরজা খুলে, সামনে দাড়িয়ে আছে আবির ভাই। নিজের চোখকে যেনো বিশ্বাস ই করতে পারছে না, প্রথমে ভেবেছে এটা স্বপ্ন, তারপর এদিক সেদিক তাকিয়ে বুঝলো এটা বাস্তব। আচমকা এইভাবে আবিরকে দাঁড়ানো দেখে ভ্যাবাচেকা খেল মেয়েটা। মেঘের চেহারায় নিদ্রিত ভাবটা লেপ্টে আছে এখনও। আবির পূর্ণ দৃষ্টিতে পরখ করলো অষ্টাদশী রাঙা মুখবিবর তারপর চোখ সরিয়ে নিয়ে বললো,
" ৫ মিনিটের মধ্যে খেতে আয় "
পুনরায় দ্রুতগতিতে হাঁটা দিলো।
আবিরের অযাচিত উপস্থিতি নাড়িয়ে দিয়েছে মেঘের মস্তিষ্ক। হঠাৎ মনে পরে গেলো ৫ মিনিটে নিচে যেতে হবে। তৎক্ষনাৎ ছুটলো ওয়াশরুমে।৷ ৫ মিনিটের মধ্যে নিচে উপস্থিত হলো মেঘ৷
এই সময় মেঘকে খাবার টেবিলে দেখে অবাক হলো সকলে, ২ বছর যাবৎ মেয়েটা সকালে সবার সাথে খায় না, প্রাইভেট থাকলে আগে খায় না হয় সবাই অফিস বা স্কুলে চলে গেলে তারপর খেয়ে কলেজে যায়।
হালিমা খান ছুটে আসলেন মেয়ের দিকে," আয় আয় বস মা, কি খাবি বল!"
টেবিলের কাছে আসতেই দেখলো একটা চেয়ার ই ফাঁকা আছে সেটা আবার আবির ভাইয়ের বিপরীতে। কিন্তু এখানে বসার বিন্দু পরিমাণ ইচ্ছে নেই তার। কারণ আবিরের আশেপাশে থাকলে মেঘ কেমন একটা ঘোরে থাকে। মন,মস্তিষ্ক সব যেনো আবিরের নিয়ন্ত্রণে থাকে। কিন্তু কিছু করার নেই। বাধ্য হয়ে বসতে হলো এই চেয়ারে।
আবির মাথা নিচু করে মনোযোগ দিয়ে খাচ্ছে, মেঘ তখন ঘুমে টলতে টলতে আবির কে দেখেছিল রাজপুত্রের মতো, কিন্তু এখন আর সে তাকাতে পারছে না। শীর্ণ বক্ষ ধরফর করছে মেঘের, মনে মনে খুব করে চাচ্ছে একটু তাকিয়ে আবিরকে দেখতে। কিন্তু মনে হচ্ছে কিছু একটা মাথায় চেপে বসে আছে, মুখ টায় তুলতে পারছে না।
আলী আহমদ খান হঠাৎ বলে উঠলেন, 'মেঘ মা আজ থেকে তোমার নতুন টিউটর আসবে। সারাদিন তে তুমি বাহিরে থাকবে তাই তাকে সন্ধ্যার পর আসতে বলেছি। "
মেঘ চুপচাপ খাবার খাওয়ার চেষ্টা করছে, বুকের ভেতর যে ঝড় তুফান চলছে তা যেনো কেউ বুঝতে না পারে।
আবির সবার আগে খাবার শেষ করে বাসা থেকে বের হয়ে গেলে। আবিরের পেছন পেছন আলী আহমদ খান, মোজাম্মেল খান ও ইকবাল খান ও চলে গেলেন।
ইকবাল খান আগেই অফিসে জানিয়ে দিয়েছে অফিস যেনো সাজিয়ে গুছিয়ে রাখে,
আবির অফিসের সামনে এসে বাইক পার্ক করে অফিসে ঢুকতে গেলে সিকিউ*রিটি গা*র্ড বলে উঠেন, স্যার আপনার একটু বসতে হবে, বড় স্যাররা না আসলে আপনি ভেতরে যেতে পারবেন না।
আবিরের পায়ের র*ক্ত মাথায় উঠে যাচ্ছে। রা*গে কটমট করতে করতে ওয়েটিং রুমে বসে আছে সে।
১০ মিনিটের মধ্যেই অফিসে ঢুকলেন তিন ভাই। আবির তখনও বসেই আছে।
কিছুক্ষণ পর সিকিউ*রিটি গা*র্ড এসে ডাকলেন,
"স্যার আপনাকে ভেতরে যেতে বলেছে!"
আবির নি*র্ভীক ভঙ্গিতে হেটে ভেতরে চলে গেলো।
অফিসের ভেতরে ফুল দিয়ে সাজানো, ঢুকতেই সবাই হাততালি দিয়ে কংগ্রাচুলেশন জানচ্ছে আবিরকে। দুএকজন ছবি তুলায় ব্যস্ত।
বাবা - চাচা তিন জন আর আবির মিলে একটা কেক ও কাটলো। তিন ভাইয়ের তো আজকে খুশির দিন। বংশের বড় ছেলে তাদের কোম্পানির হাল ধরতে যাচ্ছে। এর থেকে বড় পাওয়া আর কি আছে। তানভিরের মতে আবির যদি মুখের উপর বলে দিতো আমি ব্যবসা সামলাবো না তখন তো কিছুই করার ছিল না। আবির যেহেতু মেনে নিয়েছে এতেই হবে।
ঘন্টাখানেক হলো আবির অফিসে এসেছে। এরমধ্যে চাচ্চু ইকবাল খান ভাতিজাকে সব কাজ কর্ম বুঝিয়ে দিতে ব্যস্ত। অন্যদিকে আলী আহমদ খান এবং মোজাম্মেল খান আজ আড্ডায় মগ্ন।। তাদের মাথা থেকে সব চাপ চলে গেছে। দুই ভাই মিলে চা খাচ্ছে, খুনশুটি করছে। এত বছরের ব্যবসায়িক জীবনের অবসানের সময় এসেছে এবার।
সারাদিন আবিরের ব্যস্ততায় কাটে, প্রথম দিনের অফিস, দায়িত্ব বুঝে নেওয়া বিশাল চাপ। মাঝখানে একবার সময় করে বাবা চাচাদের সাথে তুলা একটা ছবি ফেস*বুকে শেয়ার ও করেছিল। ৬ টায় বাসায় ফিরেছে আবির। এসেই সোজা রুমে চলে গেছে, শাওয়ার নিয়ে রেস্ট নিচ্ছে। হয়তো ঘুমিয়ে পরেছিল।দূর স্বপ্নই দেখলো কি না আচমকা উঠে বসলো বিছানায়।
আবিরের চোখে-মুখে উদ্বেগ স্পষ্ট। তড়িঘড়ি করে রুম থেকে বের হয়ে নিচে আসলো।
পরিস্থিতি স্বাভাবিক, মালিহা খান এবং হালিমা খান কাজে ব্যস্ত। আদির আম্মু আদিকে নিয়ে পড়াতে বসেছেন। মীম ও হয়তো পড়ছে নিজের রুমে । কয়েক মুহুর্ত সোফায় বসে আবার উঠে রান্নাঘরের দিকে গেলো।
হালিমা খানের দিকে তাকিয়ে ঠান্ডা কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো, "মেঘ কোথায় মামনি?"
মেঘের টিউটর এসেছে, পড়ার ঘরে পড়াচ্ছে।
আবিরঃ ওহ আচ্ছা। আমায় একটু কফি করে দিতে পারবে?
হালিমা খান: একটু অপেক্ষা করো বাবা এখনি দিচ্ছি।
আবির ছোট বেলা থেকেই নিজের মা মালিহা খানকে আম্মু, তানভিরের আম্মুকে মামনি আর আদির আম্মু কে কাকিয়া ডেকে অভ্যস্ত। এত বছরেও তার ডাকে পূর্বের ন্যায় মিষ্টতা মিশে আছে।
সোফায় বসে কফি খাচ্ছে আর মোবাইল ঘাটাঘাটি করছে। ২০ মিনিট পর পড়ার রুম থেকে বের হলো একটা ছেলে বয়স হয়তো ২২-২৩ হবে। ৫.৭-৮ হবে লম্বা, চোখে চশমা। হালিমা খানকে বললো,
"আন্টি আজ আসি আবার কাল আসবো"
হালিমা খান ও হাসি মুখে বললেন, "আচ্ছা ঠিক আছে।"
এদিকে আবিরের কোমলতা পাল্টে গেলো, চটে গেল ভীষণ, সবেগে ঘু*ষি বসাল সোফার পাশের দেয়ালে, আবিরের চোখ আগুনের মতো লাল হয়ে গেছে। একমুহূর্ত বসলে না, সোজা উঠে ধপধপ করে সিঁড়ি দিয়ে উঠে নিজের রুমে চলে গেলো।
■■■■■■■■■■■■■■■■■■■■■■■
#Ch.07
অতি*রিক্ত রা*গে আবিরের তামা*টে চেহারা র*ক্তবর্ণ ধারণ করেছে। চক্ষু যুগলে ক্রো*ধ স্পষ্ট প্রতীয়মান হচ্ছে। ৫-৭ মিনিটের মধ্যে ভীষণ তাড়াহুড়োতে তৈরি হয়ে নিচে নামছে আবির৷
মেঘ পড়ার রুম থেকে বই খাতা নিয়ে রুমে উদ্দেশ্যে রওনা দিল।
হঠাৎ সিঁড়ির নিচে সাইড হয়ে দাঁড়িয়ে পরে সে৷
আবির ভাই হুলস্থুল বাঁধিয়ে নামছে। মেঘ একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে, মান*সিক টা*নাপোড়নে ভুগছে মেয়েটা৷ আবিরের সামনে বা আশেপাশে কোথাও দাঁড়াতে পারে না মেঘ। আবিরকে দেখলেই যেনো খেই হারায় বারবার। হৃ*দয় কেঁ*পে উঠে অষ্টাদশীর। কেমন অস্থি*র অস্থি*র লাগে। যেমন মা*রাত্মক চাওনি, তেমনি মা*রাত্মক তার চলাফেরা ৷
মনে মনে এসব ভেবেই যেনো ঘোরের রাজ্যে চলে যায় মেঘ। আবির পাশ দিয়ে যাওয়াতে আবিরের শরীরের ঝাঁঝালো গন্ধ সাথে তীব্র স্প্রের গ*ন্ধ মস্তি*ষ্ক পর্যন্ত চলে যায়। সহসা ঘোর কাটে মেঘের, সিঁড়িতে আবির ভাই নেই৷
কয়েক কদমে আবির পৌঁছে গেলো মেইন গেইটের কাছে৷
হঠাৎ রান্নাঘর থেকে 'মালিহা খান' ডাকলেন,
"এই সময় কোথায় যাচ্ছিস বাবা?"
মেঘপেছন ফিরে তাকায় সেদিকে,
আবির চৌকাঠের বাহিরে পা রাখতে রাখতে ব্যস্ত আর ক্রো*ধিত কন্ঠে উত্তর দিলো,
বাহিরে একটু কাজ আছে৷, ফিরতে রাত হবে।
এক মুহুর্ত ও দাঁড়ায় নি সে। ক্ষি*প্রবেগে হেঁটে চলে যায়।
মেঘ ঠায় দাঁড়িয়ে আছে সিঁড়ির নিচে, কিছুই যেনো ঢুকছে না ছোট্ট মস্তিষ্কে। কয়েক মুহুর্ত পরে মেঘ ও যথারীতি বই খাতা নিয়ে রুমে চলে যায়। আজ তার অনেক পড়া৷ আগামীকাল রবিবার কোচিং এ পরীক্ষা , ক্লাস, নতুন টিউশন। সবমিলিয়ে পড়া শিখতে ব্যস্ত হয়ে পরে৷
★★★
রাত ৯ টায় খেতে বসেছেন সবাই। খান বাড়ির খাবার টেবিল টা অনেকটায় লম্বা। টেবিলের একপাশের প্রস্থ বরাবর বসেন 'আলী আহমদ খান' খান বাড়ির বড় কর্তা। ওনার বিপরীতে কোন চেয়ার নেই কারণ ওনার মুখোমুখি বসার যোগ্যতা এই বাড়িতে কারোর নেই। একপাশে ৪ টা চেয়ার ইকবাল খান, আদি,তানভির ভাইয়া আর আবির ভাইয়ের চেয়ার একপাশে। আবির ভাই না থাকাকালীন ও চেয়ার সরানো হয় নি। অন্যপাশে তিনটা চেয়ার। মোজাম্মেল খান, মীম আর মেঘের। মেয়ে মানুষ গা ঘেঁ*ষে বসা পছন্দ করে না তাই একটা চেয়ার স্টোর রুমে রেখে ৩ টা চেয়ার দূরে দূরে রেখেছে।
যদিও মেহমান আসলে আরও ৩-৪ টা চেয়ার অনায়াসে ফেলা হয় ফেলা হয় এখানে। এতবছর আবির ভাই না থাকায় মেঘ একেবারে কর্ণারের চেয়ারটাতে বসেছে। আবির ভাই ফেরার পরও তাকে বাধ্য হয়ে এই চেয়ারটাতেই বসতে হয়।
আবির ভাইয়ের মুখোমুখি বসা আর প্রথম বি*শ্বযু*দ্ধে শহী*দ হওয়া দুটায় মেঘের কাছে সমান। রোজ দুবার চোখের সামনে নিজের মস্তি*ষ্কের র*ক্তক্ষ*রণ সহ্য করা, বুকের ভেতর উতালপাতাল ঢেউ সামলানো, সেই ধারা*লো চোখের চাউনী প্রতিবার যেনো পি*স পি*স করে কা*টে অষ্টাদশীর হৃদয়টা।।
এদিকে বোকা মেঘ এখনও অনুধাবন ই করতে পারছে না আবির ভাই কি তার শুধুই ক্রাশ নাকি সে তার প্রেমেও পরেছে।।
আচমকা আলী আহমদ খানের রাশভারি কন্ঠে মেঘের গাঢ় চিন্তার ব্যাঘাত ঘটলো
আলী আহমদ খানঃ আবির কোথায়?
অফিসের কাজ তো সেই সন্ধ্যেবেলায় শেষ তাহলে এত রাতে কোথায় সে?
মালিহা খান তটস্থ ভঙ্গিতে বললেন, ও তো সন্ধ্যায় এসেছিল, রেস্ট নিয়ে কফি খেয়ে তারপর বের হলো!
আলী আহমদ খানঃ ছেলেদের নিষেধ করো রাতবিরেতে ঘুরাঘুরি করতে ।
ইকবাল খান সাবলীল ভঙ্গিতে বলে উঠলেন, "বড় ভাইয়া,তুমি চিন্তা করো না, ছেলেটা এতবছর পর দেশে ফিরেছে । বন্ধুদের তো একটু সময় দিতে হয়।
আলী আহমদ খান চুপচাপ খাওয়া শেষ করলেন উঠার আগ মুহুর্তে মেঘের দিকে তাকিয়ে বললেন, "শাহরিয়ার কেমন পড়িয়েছেন মা?"
মেঘ নরম স্বরে বললো,
"আলহামদুলিল্লাহ ভালো পড়িয়েছেন । "
আর কোনো কথা বললেন না উঠে বেসিন থেকে হাত ধৌয়ে নিজের রুমে চলে গেছে। তার কিছুসময় পর বাকি দুই ভাই ও যে যার রুমে চলে গেলো৷ খাবার টেবিলে বসে বসে খাচ্ছে খান বাড়ির তিন বাদ*ড়। মেঘ বড় বা*দর , মীম হলো মেজো বাদ*র, আর আদি হলো সবচেয়ে ছোট বাদ*র। তিনজনে রাজ্যের গল্পে মেতেছে।
হালিমা খান এসে ধমক দিলেন, এই মেঘ, তোর কি এখন বাঁদরামি করার সময়? দুদিন পর পরীক্ষা শুরু হয়ে যাবে, পড়াশোনা বাদ দিয়ে আড্ডায় মজে থাকিস সবসময়৷
মেঘের প্রফুল্ল মুখটা তৎক্ষনাৎ মলিন হয়ে গেলো, কোনো রকমে খাবার শেষ করে রুমে চলে গেলো৷ পড়াশোনায় মনোযোগ দিলো।
★★★★
আবির কত রাতে ফিরেছে, সে হদিস কেউ রাখে নি।৷
তানভির ফিরেছে ১১ টায় তখনও হালিমা খান অপেক্ষা করছিলেন৷ তানভির মাকে ঘুমিয়ে যেতে বললেন তারপরও হালিমা খান ১২ টা পর্যন্ত অপেক্ষা করলেন আবির ফিরে নি তাই বাধ্য হয়ে ঘুমিয়ে পরেছেন।
আবির ফিরেছে রাত ২ টার দিকে। কোনোরকমে ফ্রেশ হয়ে বেলকনিতে পাতা চেয়ারে হেলান দিয়ে আকাশের পানে তাকিয়ে আছে৷ দৃষ্টি নিবদ্ধ দূরে ঐ চাঁদে কিছুক্ষণ পর পর মেঘে ঢেকে যায় আবারও আলোকিত হয়। আবির কি যেন ভাবে খানিকক্ষণ।
তারপর গম্ভীর কন্ঠে নিজেই নিজেকে শুধালো,
"তুই কি কোনোদিন শুধরাবি না?"
কেটে গেলো আবিরের নির্ঘুম, নিদ্রাহীন রাত।
★★★★
সকাল ৮ টায় খাবার টেবিলে বসে খাবার খাচ্ছে মীম, মেঘ,আদি, তানভির আর কাকামনি ইকবাল খান। বড় দুই ভাই ভোর সকালেই অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়ে দিয়েছেন। মেঘ মীমের সাথে ফিসফিস করে আড্ডায় ব্যস্ত। তানভির যেনো দেখেও না দেখার মতো খাচ্ছে। আগে হলে একটা ধ*মক দিয়ে বলতো, ' চুপ থাক ' আজ যেনো কিছুই করলেন না। তাই মেঘ আর মীম আপন মনে গল্প করে করে খাচ্ছে।
মেঘের মনোযোগ ভাঙলো কারো চেয়ার টানার শব্দে, মেঘ তৎক্ষণাৎ তাকালো। আবিরের নিখাদ দৃষ্টি মেঘের চোখে নিবদ্ধ । মেঘ এক পলক তাকিয়ে চোখ নামিয়ে ফেললো, বুকের ভেতর ধুকপুকেরর মাত্রা বাড়ছে তারসাথেই নিযুক্ত হলো চি*ন্তার ছাপ।
মাথা নিচু করে মনে মনে বললো, " আবির ভাইয়া সারারাত ঘুমান নি? ফ্যাকাশে হয়ে আছে মুখটা। কি হয়েছে ওনার! এসব ভেবেই মেঘ আঁতকে উঠছে বার বার, গতকাল সন্ধ্যায় বের হলো চোখ অন্ধকার করে, রাতে কখন ফিরেছেন ওনি? কোথায় ছিলেন সারারাত! "
এসব চিন্তায় মেঘের উৎফুল্ল মেজাজ টা খারাপ হয়ে গেলো।
মীমের ডাকে স্বাভাবিক হলো মেঘ,৷ মীমের খাওয়া শেষ ওঠে যাচ্ছে। এতক্ষণে তানভির আর ইকবাল খানও খেয়ে চলে গেছেন। খাবার টেবিলে এখন শুধু আদি, আবির আর মেঘ।
মেঘ প্লেটের ভাত গুলো তাড়াতাড়ি শেষ করলো । যেইনা উঠতে যাবে আবির ভাই মেঘের প্লেটে আরও দু চামচ ভাত দিলেন।।
মেঘ ছোট করে চিৎকার দিতে গিয়েও দিলো না, চোখ পড়লো আবিরের দিকে, আবিরের তা*মাটে মুখ টা দেখেই চোখ নামিয়ে নিলো।
আবির প্রখর তপ্ত স্বরে বললো, "এগুলো শেষ করে তারপর উঠবি!"
মেঘ কিছু বলতে গিয়েও থেকে গেলো।
আবির আবারও বলে উঠলো, "তোর নামে সারাক্ষণ শুধু অভিযোগ শুনি, খাস না, খাস না! এখন চুপচাপ খা, একটা কথা বলবি তো এক চামচ ভাত দিব"
মেঘ চিবুক গলায় ঠেকাল অল্প অল্প করে ভাত খাচ্ছে। হঠাৎ আদি উৎফুল্ল মেজাজে বললো,
"মেঘাপু , আমার খাওয়া শেষ, তুমি লাস্ট! হা হা হা"
মেঘের মুখটা আরও ছোট হয়ে গেলো। কিছুক্ষণ আগেই ৩ ভাই বোন মিলে চ্যালে*ঞ্জ নিয়েছিল যে আগে খেয়ে ফাস্ট হবে তাকে একটা কিটকেট দেওয়া হবে।
মেঘ ই ফাস্ট হতো কিন্তু আচমকা আবির বসাতে মেঘের মনোযোগ ন*ষ্ট হয়ে যায়, খাওয়া বন্ধ হয়ে যায়, তাই মীম ফাস্ট হয়ে গেছে। আদির আগে খাওয়া শেষ করলে তো অন্ততপক্ষে ২য় থাকতো। আবির ভাই এর উপর কিছুটা ক্ষি*প্ত হলো মেঘ৷ সঙ্গে সঙ্গে মনোযোগে বিঘ্ন ঘটলো,
মনে মনে বললো,আবির ভাই কে কি জিজ্ঞেস করবো "কি হয়েছে?"
ততক্ষণে প্লেটের ভাত জোর করে খেয়ে শেষ করেছে।
মেঘের জিজ্ঞাসু নেত্র যুগল আবিরের মুখের পানে,
মেঘের হা*ত -পা কাঁ*পছে । গলা শুকিয়ে আসছে। কি জিজ্ঞেস করতে চেয়েছিল সব এলোমেলো হয়ে গেছে,আবির ভাইকে দেখলে প্রতিবার যেমন বুকের ভেতর কেউ ঢোল বাজিয়ে নৃত্য করে। আজও তার ব্য*তিক্রম হলো না। মুখ দিয়ে টু শব্দ টা বের করতে পারছে না। গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। চোখ নামিয়ে গ্লাস টেনে ঢকঢক করে পুরো গ্লাসের পানি টা শেষ করলো।
আবিরের এদিকে কোনো মনোযোগ নেই। সে তার খাওয়াতে মগ্ন।
মেঘ বসে থাকতে পারছে না আবির ভাইয়ের সামনে তাই কোনোরকমে কাঁপা কাঁপা পায়ে বেসিনে চলে গেলো। আবির চোখ তুলে এক পলক দেখলো প্লেট টা, খাওয়া শেষ তাই আর কথা বাড়ায় নি।।
হাত ধৌয়ে কোনোরকমে রুমের উদ্দেশ্যে ছুটলো মেঘ। সিঁড়িতে এমন ভাবে ছুটেছে যেনো থামলেই পায়ের শিরশিরে গরিয়ে পরবে নিচে।
★★★★★
৯.৩০/৪০ বাজে আবির বাসা থেকে বের হচ্ছে । আব্বু আর চাচ্চু সেই সকালে অফিসে চলে গেছেন তাই আবির একটু পরে গেলেও সমস্যা নাই। আবিরের কিছুটা পিছনে মেঘ ও বের হলো। আজ রবিবার কোচিং খোলা৷ মেইন গেইটের সামনে গিয়ে থমকে দাঁড়ালো মেঘ। আবির ভাই বাইক ঘুরাচ্ছে।
মেঘ অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সেদিকে। সেদিন প্রথম এখানেই দেখেছিল আবির ভাইকে। সেই থেকে অষ্টাদশীর ছোট্ট পৃথি*বীটা এলোমেলো হয়ে গেছে। ধ্যা*নে জ্ঞানে শুধুই আবির ভাই।
অষ্টাদশীর খুব ইচ্ছে হচ্ছিলো বাইকে করে কোচিং যেতে । আজ পর্যন্ত মেঘ বাইকে উঠে নি৷ শুধু মেঘ কেন, মীম আদি কেউ ই উঠে নি। মেঘের খুব ইচ্ছে করে খুলা আকাশের নিচে বাইকে ঘুরবে প্রকৃতির সৌন্দর্য, বাতাস উপভোগ করবে৷
মনে মনে ভাবলো, "আবির ভাই কি আমায় নিয়ে যাবেন?"
হঠাৎ আবিরের কন্ঠ কানে বাজলো,
"মেঘ"
নিজের নামটা আবির ভাইয়ের মুখে শুনে, মনের মধ্যে বসন্তের হাওয়া লেগেছে, মনে হচ্ছে তরোয়াল দিয়ে ফালা ফালা হয়ে গেছে হৃদয় টা। মনের মধ্যে হাজারপ পাখির কল রব, তারা যেনো বলে বেড়াচ্ছে, তোর ক্রাশ তোকে ডাকছে!"
আবিরের গম্ভীর কন্ঠ ভেসে আসলো আবারও,
"ডাকছি তো?"
মেঘ চুপসে গেলো, চোখ নামিয়ে কাঁ*পাকাঁ*পা পায়ে এগিয়ে গেলো আবিরের দিকে, মনে মনে ভাবলো
"আবির ভাই কি সত্যিই আমায় বাইকে করে নিয়ে যাবেন..?"
আবির চোখে মুখে বিরক্তি নিয়ে বললো,
"তুই চুল খোলে ঘুরিস কেন? "
মেঘ যেন আহাম্মক হয়ে রইলো,
আবির কন্ঠ দ্বিগুণ ভারি করে বললো,
"আজকের পর থেকে যেনো তোকে বাহিরে কোথাও চুল খোলা না দেখি। যদি আর একদিন তোকে এভাবে দেখি তাহলে এমন থা*প্পড় দিবো তোর গাল থেকে থা*প্পড়ের দাগ এক মাসেও যাবে না। ছোট বেলার মাই*র টা আশা করি ভুলিস নাই!"
এতটুকুন বলেই আবির হেলমেট পরে বাইক স্টার্ট দিয়ে চলে গেলো।
মেঘের মাথায় আকাশ ভেঙে পরলো, কয়েক মুহুর্ত নিস্তব্ধ হয়ে রইলো। মেঘ নিজের প্রতি নি*স্পৃহায় শ্বাস ফেললো। আবির ফিরে আসার পর থেকে মেঘ উদ্বেলিত, ক্রাশ খাওয়া, প্রেম প্রেম অনুভূতি সবেতে যেনো পানি আরে না না বরফ ঢেলে দিয়ে গেলো আবির ভাই৷ যেই মেঘ আবিরের প্রেমে হা*বুডুবু খাবে ভাবছিল তাকে যেনো গভীর খা*দে চুবিয়ে মা*রলো। মনে পরে গেলো ছোট বেলার আবিরের মা*রের কালো অধ্যায়। ছোটবেলায় আবির ই মে*রেছিল শুধু তাকে। আজ পর্যন্ত মা বাবা এমন কি তানভির এত ধমকায় সেও কোনোদিন মেঘের গায়ে হা*ত তুলে নি। এতবছর পর আবির ভাই ফিরলো। আবির ভাইকে দেখে মেঘ পুরোনো সবকিছু ভুলে নতুন ভাবে আবির ভাইকে নিয়ে ভাবনা শুরু করেছিল সবে মাত্র। সেই ভাবনায় আ*গুন জ্বা*লিয়ে চলে গেলো ব্যাটায়।
আহত চোখে তাকিয়ে রইলো কতক্ষণ আচমকা রক্তজবার ন্যায় ঠোঁটদুটো ভে*ঙে হুহু করে কেঁদে উঠলো মেঘ। এই কা*ন্না কতক্ষণ স্থায়ী হলো তা জানা নেই৷
হঠাৎ বন্যার কলে কিছুটা কেঁপে উঠলো মেঘ। ফোন রিসিভ করতেই বন্যা বললো,
"কিরে কই তুই, আসবি না?"
মেঘ কথা না বলেই কে*টে দেয় কল, মেঘের গাল চুপচুপে ভিজে আছে। তারপর হাতের উল্টোপিঠ দিয়ে চোখ দুটো মুছে গাড়ির দিকে যায়।
বেশ কিছুক্ষণ পর কিছুটা স্বাভাবিক হলো মেঘ। মনে মনে ক্ষু*ব্ধ হলো,গাড়িতে বসে বসে ফুঁসছে রাগে। এসির মধ্যে বসেও যেনো কপালে ঘাম ঝরছে মেয়েটার, রাগে ক্ষো*ভে ওষ্ঠ উল্টালো। মনে মনে স্থির করলো,
আর কখনো আবির ভাইকে নিয়ে ভাববে না। আবির ভাই সত্যি ই হিট*লার তা না হলে আমার মতো নিষ্পাপ মেয়েটাকে শুধু শুধু মা*রার চিন্তা করতে পারে, আমি ওনার কোন পাকা ধানে মই দিয়েছি । অভিমানি কন্ঠে মনে মনে ভাবলো মেঘ।
এসব ভাবতে ভাবতে কোচিং এ পৌছে গেলো। ক্লাস শুরু হয়ে গেছে ১০ মিনিট আগে। বন্যা জায়গা রেখেছিল তাই বন্যার পাশেই বসলো।
একটা ক্লাস শেষ হওয়ার পর আরেকটা ক্লাসের স্যার আসতে আসতে বন্যা মেঘকে ফিসফিস করে বললো,
"কিরে আসতে এত দেরি হলো কেনো? আর তুই না আমাকে তোর ক্রাশ বয় আবির ভাইয়ের ছবি দেখাবি বলছিলি, কই দেখা।"
মেঘ করুণ দৃষ্টিতে তাকালো বন্যার দিকে তারপর গম্ভীর কন্ঠে উত্তর দিলো,
"প্রথমত ওনার জন্য আমার আসতে দেরি হয়েছে। দ্বিতীয়ত ক্রাশ শব্দ টা মনের মধ্যে চাপা পরে ম*রে গেছে। শুধু শুধু আমার জীবন থেকে তিনটা দিন নষ্ট করলাম৷ এখন থেকে আমি শুধু পড়াশোনা করবো। অন্য কিছু ভাববো না"
মেঘের কথাগুলো বন্যা মনোযোগ দিয়ে শুনলো তারপর স্ব শব্দে হেসে উঠলো বন্যা,
মেঘ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে বন্যার দিকে,
বন্যা আবার আস্তে আস্তে ধীর কন্ঠে বললো,
আমি সেদিনই বলেছিলাম এসব ক্রাশ টাশ কিছু না, পড়াশোনায় মনোযোগ দে । ঠিক হলো তো আমার কথা।
এরমধ্যে স্যার ক্লাসে আসছেন৷ দুজনেই ক্লাসে মনোযোগ দিলো
★★★
মেঘ বাসায় ফিরে চুপচাপ নিজের রুমে চলে গেলো, মনটা তার ভীষণ খারাপ। ফ্রেশ নিচে এসে খাবার খেয়ে কোনোদিক না তাকি নিজের রুমে গিয়ে পড়তে বসেছে। সন্ধ্যার পর টিউটর আসবে পড়া মুখস্থ করতে হবে৷ সকালের শা*সন ভুলার চেষ্টায় ম*গ্ন মেয়েটা৷
প্রতিদিন সন্ধ্যার দিকে নিচে আসে মেঘ, ছোট ভাই বোনের সাথে আড্ডা আর খেলায় মগ্ন হয়। কিন্তু আজ তার ব্যতি*ক্রম হলো। দুপুরের পর থেকে একবারের জন্যও নিচে নামলো না মেঘ৷ মীম আর আদি কয়েকবার ডাকতেও গিয়েছিল। দরজা লাগিয়ে পড়ছে মেঘ, আসবে না বলেছে।
সন্ধ্যার পর পর বাড়িতে ফেরে আবির। চোখে মুখে উ*জ্জ্বলতা ফুটে উঠছে। চোখ পরে রান্নাঘরে মা কাকিয়া দের দিকে।৷ কাকিয়াকে ডেকে উৎফুল্ল কন্ঠে বললো,
"কাকিয়া, চিকেন পাকোড়া বানাবে প্লিজ!"
মা কাকিয়া তিনজনই যেনো অবাক চোখে তাকিয়ে আছে আবিরের দিকে। ছেলেটা মুখ ফোটে কিছুই চাই না কখনো, খাওয়া নিয়েও কখনো নাক সিটকায় না। পছন্দের খাবারের নাম ও জানে না কেউ। আজ হঠাৎ নিজে থেকে কিছু খেতে চেয়েছে।
কাকিয়া হাসিমুখে বললো,
তুমি ফ্রেশ হয়ে আসো আমি রেডি করছি।
আবির স্বাভাবিক ভাবে রুমের দিকে চলে গেলো, করিডোরে যাওয়ার পথে কানে আসলো মেঘের পড়ার শব্দ, অনর্গল পড়ছে মেয়েটা শ্বাসও নিচ্ছে না মনে হচ্ছে৷ আবিরের ঠোঁট বেকিয়ে কিছুটা হাসলো তারপর সবেগে রুমে চলে গেলো৷
আবির বেশ সময় নিয়ে শাওয়ার নিলো, ১০ মিনিট রেস্ট ও নিলো। তারপর কালো টিশার্ট আর টাউজার পরে রুম থেকে বের হয়, একটু সামনে আসতেই চোখ পরলো মেঘের রুমের দরজা খোলা, মেঘ নেই৷
আবির নিজের মতো এসে সোফায় বসলো, ভাইকে দেখে মীম আর আদি আগেই ছুটে পালালো। না হয় এসেই বলবে "পড়াশোনা নাই!"
আবিরকে মালিহা খান কফি দিলেন, আবির কফি খেতে খেতে তানভির কে কল দিলো,
"কই তুই?"
তানভির: আমি তো পার্টি অফিসে ভাইয়া, কোনো দরকার?
আবির: কাজ না থাকলে তাড়াতাড়ি বাসায় আয়।
তানভির ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করলো, "কিছু হয়েছে ভাইয়া?"
আবির স্ব শব্দে হেসে বললো,
"দূর কিছু হয় নি, চিকেন পাকোড়া বানাচ্ছে কাকিয়া, খেলে তাড়াতাড়ি আয়!"
তানভির: আচ্ছা আসছি৷
কথাগুলো না শুনলেও আবিরের হাসির শব্দ ঠিকই কানে এসেছে পড়ার রুমের বসা অষ্টাদশীর। বুকটা সঙ্গে সঙ্গে কেঁপে উঠলো, নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করলো,
"আবির ভাইয়া হাসছেন? ওনি বাসার ফিরেছেন? "
তৎক্ষনাৎ মনে পরে গেলো সকালের ঘটনা, সাথে সাথে মুখটা কালো করে পড়া রিভিশন দেয়ায় ব্য*স্ত হলো মেঘ।
তানভির ফিরেছে ৫-৭ মিনিট হবে৷ ফ্রেশ হয়ে নিচে এসেছে। এতক্ষণে চিকেন পাকোড়া হাজির হলো সামনে। ফ্রিজ থেকে বের করে কিছু রান্না করা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার তা তাদের জানাই আছে। এজন্য ধৈর্য নিয়েই বসে বসে ফোন ঘাঁটছিল আবির।
দুই ভাই আপন মনে গল্প করে পাকোড়া খেতে ব্যস্ত। এদিকে মেঘ অপেক্ষা করছে টিউটরের আসার জন্য। ৪০ মিনিট লেইট । এখনও আসছে না কি করবে বুঝতে পারছে না। পড়ছে কিছুক্ষণ হাবিজাবি ভাবছে আবার পড়ছে।
তানভির হঠাৎ ডাকলো,
"মেঘ, এদিকে আয়!"
মেঘ ভাইয়ের ডাক শুনেই কিছুটা কেঁপে উঠলো, তারপর পড়ার রুমের দরজায় দাঁড়ালো, হালকা গোলাপি রঙের জামা পরেছে, মাথায় ওড়না দেয়া। পেট পিঠ সবটায় ওড়না দিয়ে ঢাকা,অনেক স্নিগ্ধ লাগছে মেঘকে।।
আবির তখনও স্ব শব্দে হাসছে। তানভির ভাইয়া আর আবির ভাই নিজেদের মধ্যে মসকরায় ব্যস্ত।।মেঘ দরজায় দাঁড়িয়ে আবির ভাইয়ের হাসিতে ম*গ্ন। তিনদিনেও এই মানুষটাকে এতটা প্রফুল্ল দেখেনি সে৷ বরাবরই যেনো গম্ভীর । সেই বাইক কেনার দিন একটু হেসে হেসে কথা বলার চেষ্টা করেছিল সেই হাসিতেই ক্রাশ খেয়েছিল মেঘ। আজকের হাসি ঘা*য়েল করে দিলো মেঘকে। চোখ সরাতে চেয়েও সরাতে পারছে না।
আবিরের চোখ পরে দূরে দরজায় দাঁড়ানো মেঘের দিকে, কয়েক সেকেন্ড পরেই হাসি থাকিয়ে চোখ নামিয়ে নিলো আবির৷
তানভির তৎক্ষনাৎ বলে উঠলো, "মেঘ পাকোড়া খাবি? আয় খেয়ে যা!"
মেঘ যেনো বড় সড় টাশকি খেলো,
"ভাইয়া তাকে খাবার খেতে ডাকছে, এতগুলো বছরে এরকম ঘটনা তার সাথে কখনো ঘটেনি! "
তানভির আবার ডাকলো,
'আয় খেয়ে যা, পরে পড়তে বসবি নে'
মেঘ দু পা এগুলো কি যেনো ভেবে ঠায় দাঁড়িয়ে পরলো,
কিছুটা অভিমানি কন্ঠে উত্তর দিলো, "তোমরা খাও, আমি খাবো না!"
আবারও পড়ার রুমে চলে গেলো মেঘ। তানভির আর আবিরও আর বেশি কথা বললো না। খাওয়া শেষ করে আবির নিজের রুমে গেলো, তানভির পুনরায় পার্টি অফিসে ছুটলো, মিটিং আছে তার৷ ভাই ডেকেছে বিধায় মিটিং রেখে ছুটে এসেছিল সে।
মেঘ টিউটরের জন্য অপেক্ষা করলো আরও ৩০ মিনিট। পড়তে পড়তে খিদা পেয়েছে তার।
মাত্র খাবার হয়েছে ৮ টাও বাজে নি। মেঘ খেতে বসেছে। বার বার তাকাচ্ছে দরজার দিকে, টিউটর আসলে পড়তে বসতে হবে।।
খাওয়া শেষ হলো কিন্তু টিউটর আসলো না। তাই মেঘ বই খাতা নিয়ে উপরে যাচ্ছে আর আম্মুকে বলে গেলো, টিউটর আসলে ঢেকে দিতে।
রাত ৯ টায় খেতে বসলেন সবাই। তানভিরও মিটিং শেষ করে বাসায় এসেছে। খাবার টেবিলে সবাই থাকলেও মেঘের কোনে হদিশ নেই৷
তানভির কাকিয়া কে জিজ্ঞেস করলো,
"মেঘ খাবে না?"
কাকিয়া স্বাভাবিক ভাবেই উত্তর দিলো," ও তো সন্ধ্যা বেলায় খেয়ে উপরে চলে গেছে, বললো খিদে পেয়েছে'
তেমন কথা নেই কারো মুখে, আবির কোনোরকমে অল্প খেয়ে রুমে চলে গেলো, গতরাতে ঘুমায় নি ছেলেটা। সারাদিনের ক্লান্তিতে ঘুম পাচ্ছে খুব। তাই রুমে গিয়ে শুয়ে পরেছে।
এদিকে মেঘ পড়ছে আর ক্ষ*ণে ক্ষ*ণে ঠোঁট উল্টে কান্না করছে। আবারও নিজেকে সান্ত্বনা দিচ্ছে। যেভাবেই হোক চান্স পেতে হবে। অভিমানি স্বরে বলছে, দূরের ভার্সিটি হলে ভালোই হবে৷ এই বাড়ি থেকে চলে যাবো অনেক দূরে। ভাইয়া৷ আবির ভাই আমায় পাবেই না বক*বে কিভাবে আর মা*রবে কিভাবে? তৎক্ষনাৎ মায়ের কথা ভেঙে কা*ন্না করে দেয়। মাকে ছাড়া থাকবে কিভাবে সে!"
■■■■■■■■■■■■■■■■■■■■■■■
#Ch.08
"মানুষের মন কখনো ক্লান্ত হয় না।"
এই স্লোগান দিতে দিতে নিজেকে শক্ত করলো মেঘ।
আজকে সে ফজরের আজানের সময় উঠেছে৷ রাতে এলার্ম দিয়ে ঘুমিয়েছিল। দিন যত যাচ্ছে পরীক্ষা তত কাছে আসছে। যেভাবেই হোক চান্স পেতে হবে। প্রথম টার্গেট মেডিকেল, দ্বিতীয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এজন্য সবই পড়তে হচ্ছে তাকে।
নামাজ পড়ে, পড়তে বসেছে মেঘ। ৭-৭.৩০ পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে। সকালে খালি পেটে বেশিক্ষণ থাকা কষ্টকর তাছাড়া পড়াশোনা করলে আরও বেশি খুদা পাই। গতকাল সন্ধ্যায় খেয়েছিল সারারাত কিছু খাই নি৷ খিদায় চু চু করছে পেট। দৌড়ে নিচে গেলো মেঘ।
মেঘের দৌড় দেখে ভয় পেয়ে গেলেন হালিমা খান, ওনিও রান্নাঘর থেকে ছুটলেন।
হালিমা খান চিন্তিত স্বরে জিজ্ঞেস করলেন,
"কি হয়ছে তোর, এভাবে ছুটছিস কেন?"
মেঘ জবাব দিল,
"আমার খুব খুদা পাইছে আম্মু, তাড়াতাড়ি খেতে দাও।"
হালিমা খান আবারও জিজ্ঞেস করলেন,
"তুই কখন উঠেছিস?"
মেঘের শান্ত জবাব,
"ফজরের সময় উঠেছি তারপর পড়াশোনা করেছি। তাড়াতাড়ি খেতে দাও আমায়।"
হালিমা খান যেনো খুশিতে গদগদ হয়ে গেলেন। ওনার মেয়ে পড়াশোনায় মনোযোগ দিচ্ছেন সাথে খাওয়া দাওয়াতেও। এ তো প্রতিটা মায়ের ই প্রধান স্বপ্ন। ওনি ছুটে গেলেন রান্নাঘরে। মেয়ের পছন্দের সব খাবার হাজির করলেন মেয়ের সামনে।
মেঘ খুদার তাড়নায় ঝটপট খাবার শেষ করে নিজের রুমে চলে গেলো৷ আজকে তার কোচিং, প্রাইভেট কিছু নেই। সন্ধ্যায় শুধু শাহরিয়ার ভাইয়া পড়াতে আসবেন। সারাদিনের একটা রুটিন করে নিলো মেঘ। টার্গেট সেট করে পড়াশোনা করলে পড়াশোনা তাড়াতাড়ি এগোয়৷
এদিকে ৮ টার পর বাড়ির সবাই খেতে বসেছে। আবির একেবারে রেডি হয়ে নেমেছে। চেয়ার টেনে বসতে বসতে নজর পরে, সামনের চেয়ার টা ফাঁকা। নিষ্পলক তাকিয়ে থাকে, কয়েক সেকেন্ডে স্বাভাবিক হয়ে খাওয়া শুরু করে।
ইকবাল খান জিজ্ঞেস করলেন,
"মেঘ কোথায়, উঠেনি এখনও? "
হালিমা খান প্রফুল্ল মেজাজে উত্তর দিলেন,
"ও নাকি সেই ভোর বেলা উঠেছে। পড়তে পড়তে খুদা লাগছিল তাই কিছুক্ষণ আগেই খেয়ে গেলো। "
আলী আহমদ খান শীতল কন্ঠে প্রশ্ন করলেন,
"শাহরিয়ার কি গতকাল এসেছিল?"
হালিমা খান পুনরায় উত্তর দিলেন,
"গতকাল আসে নি ভাইজান, মেঘ অনেকক্ষণ অপেক্ষা করেছে। "
আলী আহমদ খান স্বাভাবিক কন্ঠে বললেন,
"হয়তো কোনো সমস্যা, আজ আসবে নিশ্চয়ই।"
কেউ আর কোনো কথা বলল না, চুপচাপ খাওয়াতে ব্যস্ত সকলে।
কিছুক্ষণ পর খাওয়া শেষে উঠে চলে গেলেন বাড়ির কর্তারা, বসে আছে চার ভাই বোন। মীম আর আদি খুনসুটি করে খাওয়াতে ব্যস্ত।
তানভির হঠাৎ আবিরের দিকে তাকিয়ে বললো,
"ভাইয়া তোমার কি কিছু হয়েছে?"
আবির নড়েচড়ে বসলো, মুখ গোমড়া করে উত্তর দিলো, "কিছু হয় নি।"
তানভির আর কথা বাড়ায় নি চুপচাপ নিজের খাওয়া শেষ করলো।নিজের খাবার শেষ করে, ফ্রেশ হয়ে আবিরও অফিসের জন্য বেরিয়ে পরেছে। বাকিরাও নিজেদের কাজে ব্যস্ত হলো।
সারাদিনের ব্যস্ততা শেষে সকলেই বাড়ি ফিরলো, ফিরলো না কেবল আবির।
আগামী মাস থেকে আবিরের নতুন কোম্পানি শুরু হবে সেই কাজেই ব্যস্ত সে। সারাদিন বাবার কোম্পানির কাজ সামলে সন্ধ্যার পর প্রায় ই দেখতে হয় নিজের অফিসের কাজকর্ম । সাথে তার আরও দুজন বন্ধু আছে। একজন রাকিব আরেকজন রাসেল । আবিরের পরেই তাদের পোস্ট আবিরের অবর্তমানে তারাই সামলাবে কোম্পানি । কয়েক বছর আগে থেকেই আবিরের সাথে প্ল্যান করে রেখেছিল এটারই পূর্ণতা পেতে চলেছে।
এদিকে গতকালের ন্যায় আজও পড়ার রুমে অপেক্ষা করছে মেঘ। কিন্তু শাহরিয়ার ভাইয়া আসার কোনো খবর নেই। এই পৃথিবীতে কারো জন্য অপেক্ষা করার মতো কষ্ট আর কিছুতে নেই। অধৈর্য হয়ে রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে মেঘ বড় আব্বুর সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।
আলী আহমদ খান সোফায় বসে কফি খেতে খেতে টিভি দেখছিলেন। মেঘ জিজ্ঞাসু চোখে তাকালো বড় আব্বুর দিকে তারপর আস্তে করে বলল,
"ভাইয়া কি পড়াতে আসবেন না?"
আলী আহমদ খানের মনোযোগ সরলো টিভির দিক থেকে৷ এক পলক তাকালো মেঘের দিকে তারপর পকেট থেকে ফোন বের করে ডায়েল করলেন শাহরিয়ারের নাম্বারে। প্রথমবার রিসিভ হলো না। দ্বিতীয় বার রিসিভ হলো।আলী আহমদ খান জিজ্ঞেস করলেন,
"তুমি আসছো না কেনো? পড়াবে না? "
শাহরিয়ার শীতল কন্ঠে উত্তর দিল,
"আংকেল আমার জন্য বাসাটা দূরে হয়ে যায়। সময় মেইনটেইন করাও একটু সমস্যা তাই আমি আর আসতে পারবো না। সরি। "
আলী আহমদ খানের জবাব,
"তাহলে তুমি এই কথাটা প্রথম দিন ই জানাতে পারতে।"
শাহরিয়ার গম্ভীর কন্ঠে উত্তর দিলো,
"একটু অসুস্থ ছিলাম আংকেল, হাসপাতাল থেকে আজই ফিরেছি। আপনাকে সময় করে ফোন দিতাম আমি। "
আলী আহমদ খান উদ্বিগ্ন কন্ঠে শুধালো,
"কি হয়েছে তোমার?"
শাহরিয়ার ঠান্ডা কন্ঠে বলল,
"তেমন কিছুটা, হালকা ব্যথা পেয়েছি। দোয়া করবেন আংকেল, আল্লাহ হাফেজ। "
আলী আহমদ খান বললেন,
" সাবধানে থেকো, আল্লাহ হাফেজ। "
আলী আহমদ খান মেঘকে জানালেন, মেঘ কি বলবে বুঝে উঠতে পারলো না ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো সোফার পাশে৷ তখন ই সিঁড়ি দিয়ে নামছিল তানভির, মেঘের কাছে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করল,
"এখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেন?"
মেঘ মাথা নিচু করে, পাতলা অধর নেড়েচেড়ে বলে,
"শাহরিয়ার ভাইয়া পড়াবেন না আমায়!"
তানভির কপাল গুটিয়ে বলল,
"তাতে মন খারাপ করার কি আছে? মানুষের সমস্যা থাকতেই পারে! "
মেঘ চোখ তুলে তাকালো ভাইয়ের পানে। তানভির বড় আব্বুর দিকে তাকিয়ে পুনরায় বললো,
"আমার একজন পরিচিত আপু আছে, ওনি খুব ভালো পড়ান শুনেছি। আপনি অনুমতি দিলে আমি কি কথা বলে দেখবো?"
আলী আহমদ খান তানভিরের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালেন,
" হয়তো মনে মনে ভাবলেন যেই ছেলে জীবনে পড়াশোনায় করে না সেই ছেলে আবার বোনের জন্য টিউটর খোঁজছে।"
মুখ ফোটে বললেন,
"দেখো তোমার মতো গর্দ*ভ হয় না যেনো"
তানভির হাসি মুখে বলল এবার,
"২-১ দিন পড়ার পর মেঘের যদি মনে হয় পড়বে তাহলেই ফিক্সড করবো।"
আলী আহমদ খান এবার যেন স্বস্তি পেলেন।সহজভাবেই বললেন,
" ঠিক আছে কালকেই আসতে বলো তাহলে।"
তানভির আর কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ বাসা থেকে বের হয়ে গেল। মেঘ ও নিজের মতো বই খাতা নিয়ে রুমে চলে গেলো।
........................................................................
𝐓𝐎 𝐁𝐄 𝐂𝐎𝐍𝐓𝐈𝐍𝐔𝐄𝐃
***Download NovelToon to enjoy a better reading experience!***
Updated 62 Episodes
Comments