সঙ্গিন প্রনয়াসক্তি [Part.2]

#পর্বঃ০৭

একটানা সাতদিন তীব্র জ্বরের দাপদা'হ আর সর্দি কাশির মতো বিদঘু'টে অসু'স্থতায় ভুগে তবেই সেদিন সারাবেলা বাইরে থাকার পাঠ চোকালো অরু।

এখন জ্বর নেই মোটেই, গত কয়েকদিনের থেকে আজ শরীরটাও বেশ হালকা লাগছে, তবে খুসখুসে কাশিটা যেন পিছুই ছাড়ছে না, দিনের বেলা যেমন তেমন রয়ে সয়ে হয়।কিন্তু রাত হলে যেন, কাশির চৌদ্দ গোষ্ঠী এসে ওর ঘুম হারাম করে দেয়। স্বাধে কি আর অরু এটাকে বিদঘু'টে রো'গ বলে?

আজ মনে হচ্ছে একফালি রোদ উঠেছে পুর্বাকাশে, অরু উঠে গিয়ে জানালার পর্দা সমেত কাঁচ সরিয়ে দেয়। সঙ্গে সঙ্গে বরফ শীতল ঠান্ডা হাওয়া নাক চি'ড়ে ভেতরে প্রবেশ করলো ওর। রোদের তাপ যতটা মনে হচ্ছিলো ততটাও গাড়ো না। মুখ ভার করে আবারও জানালার কাঁচ টেনে দিলো অরু, মনে মনে ভাবলো,

---এই ঠান্ডা বাতাস লেগে যদি আবারও জ্বরটা ফিরে আসে তাহলে আপা নির্ঘাত মে'রে আলুরদম বানিয়ে দেবে।

তবে পর্দাটা আর টানলো না।রুমের কোন থেকে একটা বারস্টুল টেনে নিয়ে গালে হাত দিয়ে বসে পরলো জানালার মুখোমুখি।

প্রকৃতির আবহমান উত্থান পতন দেখতে দেখতে যখন ভাবলেশহীন হয়ে পরে অষ্টাদশীর উদাসীন মন।

তখনই রুমের বাইরে হাতের আঙুল দিয়ে দরজায় টকটক আওয়াজ তুলে কড়া নারে,অষ্টাদশীর মনে গ্রীক গড খ্যাতি প্রাপ্ত সুদর্শন যুবক।

অরু পেছনে ঘুরলো তৎক্ষনাৎ, দেখলো, পুরো ফর্মাল ড্রেসআপে স্ব পকেটে হাত গুঁজে দাড়িয়ে আছে ক্রীতিক। চুল গুলোও আজ এলোমেলো নয়,বরং হেয়ারজেল দিয়ে পরিপাটি করা। সফেদ শার্টের উপর নেভি'ব্লু কোটি আর গ্রে রঙের রিস্ট ওয়াচে তাকে অসম্ভব মানিয়েছে।

অবশ্য এটা নতুন কিছু নয়,প্রথম দুটো'দিন বাড়িতে সারাক্ষন গেইম খেলে কাটালেও, গত একসপ্তাহ ধরেই প্রতিদিন রেডি হয়ে কোথাও যায় ক্রীতিক। অরু জানেনা ক্রীতিক কোথায় যায়, আর জানতেও চায়না। কারন অরুর চোখে ক্রীতিক একজন নি'র্দয় মানব। কতটা অ'মানুষ হলে, একজনকে এমন প্রতিকূল আবহাওয়ায়

ঘর থেকে বের করে দিয়ে ঘুমিয়ে যেতে পারে মানুষ? ভেবে পায়না অরু, আর না ক্রীতিকের কাছে এর কোন জবাব আছে। এই লোক বেপরোয়া স্বভাবের জানতো অরু, তাই বলে এতোটা?? তাও বিনা কারনে।এখনো সেসব কথা ভাবলে মাথাটা জল'ন্ত লাভায় টগবগ করে ওঠে অরুর।

দ্বিতীয় বারের মতো ক্রীতিকের দরজায় টোকা দেওয়ার আওয়াজ পেয়ে সম্মোহন ফিরে পেলো অরু। তবে কোন কথা না বলে শুধু জিজ্ঞাসু দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো ক্রীতিকের দিকে।

জবাবে, নিজ পকেটে হাত গুঁজে রেখে একটানা কয়েক মিনিট নিস্প্রভ তাকিয়ে রইলো ক্রীতিকও। ক্রীতিকের চোখ নিস্প্রান তবে তাকালে মনে হয় কথাদের রাজ্য,এ চোখে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকা যায়না, অরুও পারলো না, চোখ নামিয়ে সংশয় বোধ করলো, তারপর বাধ্য হয়ে জিজ্ঞেস করেই ফেললো

---কিছু বলবেন??

--না।

সশব্দে কথাটা বলে দ্রুত স্থান ত্যাগ করে চলে গেলো ক্রীতিক।

অজ্ঞাত অরু কিছু না বুঝে,সেদিকেই তাকিয়ে বিরবিরিয়ে বললো,

---এই লোকটা এমন কেন??ভারী অদ্ভুত।

*****************************************

--অবসেশন!

---মানে ঘোর??

---হ্যা ওটাই, তুই আমার প্রতি অবসেসট অর্নব আর কিছু নয়, অযথা নিজের মূল্যবান সময় নষ্ট করিস না। আমার জীবনটা পদ্ম পাতার জলের মতোই আজ আছি কাল নেই, দেখা গেলো নিজ বাবার হাতেই...

বাক্যটুকু আর শেষ করতে পারলো না এলিসা, তার আগেই ফোনের ওপাশ থেকে ক'ড়া গলায় শা'সিয়ে উঠলো অর্নব।

-- চুপ করবি এলিসা,এই এক বাসি গল্প শুনিয়ে শুনিয়ে আর কতোদিন দুরে সরিয়ে রাখবি আমাকে??

--- যেদিন নিজ চোখে দেখবি, সেদিন বুঝবি আমি কোনো বাসি কিংবা বেহুদা কথা বলছি না।

--- যেদিন দেখবো সেদিন তুই একা থাকবি না, আমরা তিনজনই তোর সাথেই থাকবো।নিজেকে এতোটা হেল্পলেস ভাবার কিছুই নেই।

--- আমার জন্য তোরা কেন বি'পদে পড়তে যাবি?

অর্নব শীতল কন্ঠে বললো,

--- তুই আর আমরা কি আলাদা বল??

এলিসা জবাব দেয়না, এই অর্নবটাকে বুঝিয়ে বুঝিয়ে হয়রান ও নিজেই। কাজের কথা বলতে গেলেও ঘুরিয়ে ফিরিয়ে প্রেম টপিকে চলে আসে,আশ্চর্য।

কিন্তু অর্নবই বা কি করবে, ভালোবাসাতো আর পরিস্থিতি বুঝতে চায়না।আর না মানতে চায় কোনো বাঁধা। নইলে এলিসার মতো নাম করা পকার প্লেয়ার কেই কেন ভালোবাসতে গেলো ও, দুনিয়াতে আর কি কোনো ভালো মেয়ে ছিলোনা??

একটা দীর্ঘঃশ্বাস ছেড়ে এলিসা শুধায়,

--- এখন কোথায় আছিস??

--- গাড়িতে, আজকেই ইউ এস এ ফিরলাম, এর মধ্যে ক্রীতিক আবার কারও ডিটেইলস চাচ্ছে ওটা বের করে দিয়ে এখন বাসায় যাচ্ছি। তোদের জন্য আমার ডিটেকটিভ এজেন্সির জবটা আর বৈধ থাকলো না।

---দ্য গ্রেট হ্যা'কার অর্নব সায়ন্ত যদি বেস্ট ফ্রেন্ড হয়, তবে "ফ্রেন্ড উইথ বেনিফিট "কে না চায় বল?

অর্নব উচ্ছ্বাসিত গলায় বললো,

--- চলনা, আজ সিনেমা হলে গিয়ে "ফ্রেন্ড উইথ বেনিফিট "মুভিটা দেখে আসি, শুধু তুই আর আমি, হেব্বি রোমান্টিক মুভি আমি দশবারেরও বেশি দেখেছি।

--তুই একটা ন'ষ্ট।

বিরক্ত হয়ে কল কেটে দিলো এলিসা। এই ছেলের সারাক্ষণ মাখোমাখো ভাব।কি করে এতো নাম করা হ্যা'কা'র হলো ও?

তৎক্ষনাৎ ভাবনার সুতোয় টান পরলো ওর, অযাচিত মন বললো,

--- ওয়েট, ক্রীতিক কার ডিটেইলস চাইলো অর্নবের কাছে? নতুন করে আবার কার সাথে ঝা'মেলা পাঁকাতে চাইছে ওও?

****************************************

ঘড়ির কাঁটায় ঠিক সন্ধ্যা সাতটা, ক্রীতিক মাত্রই বাড়িতে এসেছে,বেশভুসা দেখে মনে হচ্ছে বাইক রাইডিং এ গিয়েছিল সে।

পা'স'ওয়ার্ড দিয়ে দরজা খুলে হলরুমের মধ্যেখানে পা রাখতেই দু'পা নিজ গতিতে থমকে গেলো ওর। ভেতরে ক্রমান্বয়ে ছড়িয়ে পরলো অজানা লাবডুড। সেখানেই কিছুক্ষণ একইভাবে দাড়িয়ে থেকে ধীর পায়ে এগিয়ে এলো সবচেয়ে কর্নারের কাঁউচের দিকে।

ঘাড়টা সামান্য কাত করে মুখে একটা বাঁকা হাসি ঝুলিয়ে রেখে দেখতে লাগলো ঘুমন্ত মেয়েটাকে । এই মেয়েটা ওর চেনা খুব চেনা। যেখানে মেয়েদের প্রতি তীব্র অনীহা ওর, সেখানে এই হাটুর বয়সী মেয়েটার প্রতি অদম্য আসক্তি। অথচ এই অনুভূতি গুলোকে কত বছর ধরে অস্বীকার করে যাচ্ছে ও।

খুবই সন্নিকটে একজনার উপস্থিতি স্পষ্ট অথচ তখনও হল রুমের নরম গদিতে হাত পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে ঘুমাচ্ছে অরু।

গভীর ঘুমে তলিয়ে থাকায় জামা কাপড়েরওও হদিস নেই।প্লাজো টিশার্ট দুটোই যায়গা থেকে সরে গিয়ে শরীরের অর্ধেকাংশ উন্মু'ক্ত। হল রুমে জ্বালিয়ে রাখা বিস্তর ফকফকে সাদা আলোয় সে সব কিছুই ক্রীতিকের চোখে দৃশ্যমান।

ও না চাইতেও একঝলক পা থেকে মাথা অবধি পরখ করলো অরুকে। হুট করেই কেমন ঘোর লেগে এলো দু’চোখে। নে'শাগ্রস্তদের মতোই চোখ দুটো ঝাপসা লাগছে ওর। গলাটা শুকিয়ে কাঠ হয়ে আসছে।বারবার জিভ দিয়ে শুকনো অধর ভিজিয়ে যাচ্ছে। চোখের সামনে শুয়ে থাকা অরুর লতানো নারীদেহের ভাঁজ গুলো বড্ড আকর্ষনীয় লাগছে ক্রীতিকের চোখে।

বয়সের তারতম্য, সম্পর্কের জটিলতা সব কিছু কয়েকমূহর্তের জন্য ভুলতে বসেছে দ্য গ্রেট পার্সোনালিটি খ্যাত জায়ান ক্রীতিক চৌধুরী ।

মেয়ে মানুষে নাকি তার এলার্জী, ভার্সিটির টিচার থেকে স্টুডেন্ট সবাই তো এটাই জানে।

কিন্তু এখন এই মূহুর্তে এমন কেন হচ্ছে? আট বছর আগের তৈরী হওয়া প্রনয়াসক্তি কেনই বা হুট করে মাথা চা'ড়া দিয়ে উঠছে। তাহলে কি ক্রীতিক অরুকে নয় বরং নিজ অনুভূতি কে ঘৃ'ণা করে?? সৎ মায়ের মেয়ের প্রতি এতোটা দূর্বলতা কোন সমাজই মেনে নেবেনা, বাঙালি সমাজ তো একদমই নয়, তাইতো নিজে বাঙালী হয়েও বাঙালিদের প্রতি এতো রা'গ ওর। ভালোবাসায় আবার সমাজ কিসের? ধর্মে যার প্রাধান্য আছে সমাজে তার সীকৃত নেই কেন?? ভেবে পায়না ক্রীতিক। এই মূহুর্তে ভাবতেও চায়না কোনো কিছু । ওর চোখে পৃথিবী এখানেই থমকে গিয়েছে।

পায়ে পায়ে এগিয়ে গিয়ে অরুর শিওরে ধপ করে বসে পরে ক্রীতিক, ফ্লোরে উরোঝুরো হয়ে পরে থাকা লম্বা চুল গুলোর দিকে একপলক গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে, ওর কানের কাছে এসে হিসহিসিয়ে ক্রীতিক বলে,

--- আবার কেন ফিরে এলি এই আধ পো'ড়া জীবনে?? বাকিটা পু'ড়িয়ে দিতে??

তারপর একটা কপট হাসি খেলে গেলো ক্রীতিকের ঠোঁটের কোনে, মুখটা আর-ও একটু সামনে বাড়িয়ে, একই সুরে বললো,

---এবার যদি সত্যিই তোর আসক্তি থেকে নিজেকে সামলাতে না পারি, তাহলে বিশ্বাস কর তুইও পু'ড়'বি। আমার দহনে পো'ড়া'বো আমি তোকে। এখন তো ছোট নেই,তাহলে তুই কেন বেঁ'চে যাবি?এবার আর আমি একা নই, আমরা দুজনে মিলে প্রনয়াসক্ত হবো।

ক্রীতিক অযাচিত ঘোরের বসে আরও কিছু বলতে যাবে তার আগেই অরু ঘুমের তালে একটু নরেচরে ওঠে। অকস্মাৎ সম্বিত ফিরে ফেলো ক্রীতিক।

কি করছিল ও এটা??সঙ্গে সঙ্গে অরুর দিকে তাকিয়ে কঁপাল কুঁচকে ফেললো ও। এক ঝটকায় উঠে দাড়িয়ে ওয়ার্ডরব থেকে একটা লম্বা চাঁদর বের করে ছু'ড়ে' মারলো অরুর উন্মুক্ত গায়ে। এমন ভাবে দুর থেকে ছু'ড়'লো যেন অরুর শরীরে কোন নোংরা লেগে আছে।

গায়ে কাথা জাতীয় কিছুর উপস্থিতি টের পেয়ে সেটাকে ভালো মতো গায়ে পেঁচিয়ে অন্যপাশ হয়ে শুয়ে পড়লো অরু।

সরু যায়গা হওয়াতে পাশ ঘুরতেই কাঁচের টি-টেবিল থেকে ছোট্ট বাইকের শো-পিচ টা পরে যাচ্ছিলো মেঝেতে, তৎক্ষনাৎ সেটাকে ক্যাচ করে নিলো ক্রীতিক। বাইকে বসা হেলমেট পরা দের ইঞ্চি সাইজের পুতুলটাকে চোখ পাকিয়ে হিসহিসিয়ে বললো,

----ডোন্ট ইউ ডে'য়ার টু মেইক এ সাউন্ড!!

*****************************************

সেই সন্ধ্যায় গতর ডুবে যাওয়া নরম সোফাতেই ঘুমিয়ে কাটিয়ে দেয় অরু। যখন ঘুম ভা'ঙে তখন রাত নয়টা বেজে পয়ত্রিশ।

চারিদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকারাচ্ছন্ন পরিবেশ। ঘুমের রেশ কাটিয়ে আড়মোড়া ভে'ঙে উঠে বসতেই সেদিনের মতো বিশাল মনিটরের একফালি তীক্ষ্ণ আলো এসে চোখে লাগে অরুর।

সেই আলোতে ক্রীতিকের উপস্থিতি স্পষ্ট।

কানের উপর কান পট্টির ন্যায় বড় বড় হেডফোন লাগিয়ে নির্দিধায় গেমিং রিমোটকন্ট্রোলটায় হাত নাড়িয়ে যাচ্ছে সে।

পড়নে বাইকার দের মতো ব্ল্যাক লেদার জ্যাকেট, যার সামনের দিকের চেইনটা পুরোপুরি খুলে ঘাড় থেকে খানিকটা নামানো। যার দরুন ভেতরে পরিহিত কালো স্যান্ডোগেঞ্জিটা ও দৃশ্যমান। তারউপর শরীরচর্চা করে কৃত্তিম উপায়ে বানানো অ্যাবস গুলোকে এইটুকুনি স্কিনি স্যান্ডোগেঞ্জি আড়াল করতে পারছে না মোটেই। অন্ধকারে বসে বসে আড় চোখে এসবই দেখছিল অরু। ঠিক তখনই রুমের লাইট জলে সবকিছু আলোকিত হয়ে যায়, অকস্মাৎ তীক্ষ্ণ আলো চোখে পরায় কপাল কুঁচকে চোখ দুটো খিঁচে বন্ধ করে নিলো অরু।

---হা করে না থেকে,মুখের লালা পরিষ্কার কর।

সামনের মনিটরে ধ্যান রেখেই বললো ক্রীতিক।

চোখ বড়বড় করে ক্রীতিকের মুখের দিকে তাকালো অরু। আগের মতোই ভাবলেসহীন মুখশ্রী।

তবে অরু আর ভাবলেসহীন হয়ে বসে থাকতে পারলো না হঠাৎ এরূপ পঁচানি খেয়ে, ভ্যাবাচ্যাকা হয়ে তৎক্ষনাৎ আলগোছে চুল বাঁধতে বাঁধতে দৌড়ে উপরে চলে গেলো।

তার কয়েক মূহুর্ত্ব পরে আবারও নিচে নেমে অসহায় মুখ নিয়ে ক্রীতিকের সামনে এসে দাঁড়ায় অরু।

--- কি সমস্যা?

ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন ছো'ড়ে ক্রীতিক।

অরুর চোখে মুখে অ'সহায়ত্ব, কন্ঠে কাঁদও কাঁদও ভাব,কোন মনে কান্না আটকে রেখে ও বললো,

--- আপা এখনো ফেরেনি।প্রতিদিন তো সন্ধ্যায় ফিরে আসে।

--- তো আমি কি করবো,

ভাবলেশহীন জবাব ক্রীতিকের।

--- আপনার ফোনটা একটু দিন আপাকে কল করবো।

--- ল্যান্ড লাইন দিয়ে কর।

--- নাম্বার জানিনাতো।

ফোঁস করে একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে, পকেট থেকে ফোন বের করে অরুর হাতে দেয় ক্রীতিক।

অরু কল করলো, একবার, দুইবার,তিনবার তাও ধরলো না অনু।

এতো রাত হয়ে গেছে আপা ফিরছে না, কল ও ধরছে না, অযাচিত ভ'য়েরা যেন আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরল অরুকে।অজস্র খারাপ চিন্তায় পেটের মধ্যে না'ড়িভু'ড়ি কেমন উগরে আসতে চাইছে। কিন্তু না সেসবের বদলে উগরে আসলো কা'ন্নারা, অনেক চেষ্টা করেও ক্রীতিকের সামনে স্থীর থাকতে পারলোনা অরু। ধপ করে মেঝেতে বসে ফুপিয়ে কেঁ'দে উঠলো।

আবার সেই একই কা'ন্নার আওয়াজ। অরু কি বোঝেনা কোন এক অজানা কারনে এই আওয়াজে ভেতরটা ছিঁ'ড়ে যায় ক্রীতিকের? গলা কাঁ'টা মুরগীর মতোই ছ'টফ'ট করে ওঠে হৃদয়টা। ইচ্ছে করে সব কিছু ধ্বং'স করে ফেলতে।ভেতরে যা হচ্ছে হোক,সেসব কে পাত্তা না দিয়ে, আপাতত অরুকে রা'ম ধমক দিয়েই শুধালো ক্রীতিক।

--- কি হয়েছে, ভ্যা ভ্যা করছিস কেন?

অরু কাঁদ'তে কাঁ'দতে জবার দেয়

--- আপা কল তুলছে না, এখান আসার পর থেকেই আপা কেমন যেন ব্যাস্ত হয়ে গিয়েছে। এখন আবার কলটাও ধরছে না।

--- পার্ট টাইম জব করলে ব্যাস্ত হবেনা তো কি হবে, মুখ টিপেটিপে বললো,ক্রীতিক।

--- কিছু বলছেন??

--- না, তুই কা'ন্নাকা'টি অফ কর।তোর কা'ন্নার আওয়াজ বির'ক্ত লাগে।

---- আমি কাঁ'দলেও আপনার বির'ক্ত লাগে হাসলেও বির'ক্ত লাগে, করবোটা কি আমি??

---- চুপ করে থাকবি।

অরু তাই করলো,চুপ হয়ে বসে রইলো। এমনিতেই ক্রীতিকের সামনে কেঁ'দে ফেলেছে, এখন ভাবতেই কেমন লজ্জা করছে ওর, ওও তো এতোটাও বাচ্চা স্বভাবের মেয়ে নয়, যথেষ্ট স্ট্রং।

অরুর ভাবনার ছেদ ঘটে ক্রীতিকের আওয়াজে

---আমি বের হয়ে আশেপাশে খুঁজে দেখছি, তুই থাক।

অরু একটু একটু হেঁচকি তুলে বললো,

--- আমিও যাবো।নিয়ে যাননা।

*****************************************

ম্যাকডোনাল্টস ক্যাফেটেরিয়ার পার্কিং লটে গাড়ি পার্ক করে, আশেপাশের রাস্তায় হাটছে ক্রীতিক আর অরু।

ওভারসাইজ ডেনিমের পকেটে হাত ঠুকিয়ে গা ছাড়া ভাব নিয়েই হাঁটছে ক্রীতিক। দেখে মনে হচ্ছে ওর মধ্যে চিন্তার লেশমাত্র নেই।ওদিকে অরু ভেবে পাচ্ছে না হসপিটালে না নিয়ে গিয়ে ওকে এখানে কেন নিয়ে এলো পা'গল লোকটা?আপা তো হসপিটালে।

অরু বার কয়েক জিজ্ঞেস করেছে আগ বারিয়ে।

কিন্তু ক্রীতিকের সোজাসাপটা উত্তর

--- আশেপাশে খোঁজ এখানেই পেয়ে যাবি।

অরু সেই তখন থেকে এদিক ওদিক হন্নে হয়ে ছুটছে, সোডিয়ামের আলোয় যতদূর চোখ যায় কোথাও কোন মানুষ নেই। ক্যাফেটাও বন্ধ হয়ে গিয়েছে খানিকক্ষণ আগে অথচ অনুর দেখা নেই।

--- আচ্ছা তোর পেটের মাঝখানের তিলটা কি আসল??যখন ছোট ছিলি তখন তো দেখিনি।

পাহাড়ি আঁকাবাকা রাস্তায় অরু যখন অনুকে খুঁজতে খুঁজতে পাগল প্রায়,ঠিক তখনই ক্রীতিক জ্ঞানী ব্যাক্তিদের মতো ভাবুক হয়ে এই ছাপরি প্রশ্নটা করে বসে।

এই মূহুর্তে ক্রীতিকের কথায় অরু ওর গোপন তিলকের খবর জানায় অবাক হবে,নাকি আহা'ম্মকের মতো প্রশ্ন করায় গিয়ে ঠা'টিয়ে থা'প্প'ড় মা'রবে ঠিক বুঝে উঠতে পারলো না। যত যাই হোক। বয়সে ওর চেয়ে দ্বিগুণ বড় ক্রীতিক।

তবে কিছু তো কথা শোনানোই যায়, সেই উদ্দেশ্যেই ঘুরে পেছনে এগিয়ে এলো অরু।

তখনই উল্টো দিক থেকে ডাক পরলো অনুর।

--- অরুউউ

অরু চকিতে পেছনে চাইলো দেখলো, খুঁ'ড়িয়ে খুঁ'ড়িয়ে এদিকেই এগিয়ে আসছে আপা। তার সঙ্গে লম্বা মতো একটা ভাইয়া, অনুর হাতধরে ওকে হাঁটতে সাহায্য করছে, অনুর ছোট্ট শরীরটা লোকটার শীতের কোর্টদিয়ে আবৃত।

লোকটা কে?কি হয়?কেনইবা অনুর হাতটা শক্ত করে ধরে রেখেছে?

সে-সব নিয়ে এই মূহুর্তে একবিন্দু পরিমান মাথা ব্যাথা নেই অরুর। ও শুধু দেখছে ওর আপা ব্যা'থা পেয়েছে হাটতে পারছে না ভালো করে।

একদিক দিয়ে ক্রীতিক আর অরু এগিয়ে আসছে, অন্যদিক দিয়ে অনু আর প্রত্যয়। প্রত্যয় আর ক্রীতিকের চোখেচোখে কথা আদান-প্রদান হলো বোধ করি।

কয়েকমূহুর্তের মধ্যে অরু ছুটে গিয়ে গলা জড়িয়ে ধরলো অনুর, উৎকন্ঠা নিয়ে বললো,

--- আপা, আমায় রেখে কোথায় গিয়েছিলি তুই? তোর চিন্তায় চিন্তায় পা'গল হয়ে যাচ্ছিলাম আমি, একমুহূর্তের জন্য মনে হচ্ছিল এই অচেনা দেশে আমার আপন বলতে কেউ নেই।

অরুর কথায় ক্রীতিকের মেজাজ অকস্মাৎ তে'ড়ে উঠলো। এইটুকু সামান্য কথায় রাগ লাগার মতো কোন কারণ খুঁজে পাচ্ছে না ক্রীতিক,তবুও কয়েকমূহুর্তের জন্য চোখের রঙ বদলালো ওর। আবারও সেই ভ'য়ানক তীক্ষ্ণ চাউনি।

পরক্ষনেই প্রত্যয়ের সাথে চোখাচোখি হওয়ায় আবার তা দপ করেই নিভে গেলো।

পাছে এসে জড়ো হলো ঠোঁট গলিয়ে একটা রহস্যময়ী ক্রুর হাসি। যে হাসিতে সামিল হলো সয়ং প্রত্যয় ওও।

ওরা যে কি মনে করে হাসলো সেটা কেবল ওরাই ভালো জানে।

■■■■■■■■■■■■■■■■■■■■■■■

#পর্বঃ০৮

অ্যা'লকোহল আর ব্যা'থা না'শকের সংমিশ্রণে তৈরি মলমটা হাঁটুর থেঁ'তলে যাওয়া ক্ষ'ত স্থানে লাগাতেই চোখ মুখ খিঁচে মৃদু আর্তনাদ করে ওঠে অনু। ব্যাথা শিথিলের উদ্দেশ্যে, অরু মলম লাগাতে লাগাতে ঠোঁট উঁচিয়ে সেখানটায় আলতো করে ফু দিচ্ছে বারবার।

--- হয়েছে অরু এই টুকুনি তো ব্যাথা আর মলম লাগাতে হবেনা।

অরু মুখের আদলে সিরিয়াস ভঙ্গিমা নিয়ে বলে,

--- এই টুকুনি ব্যাথা?? দুই হাঁটু থেঁ'তলে যখ'ম হয়ে গিয়েছে। কি করে এমন হলো বলতো?

অরুর প্রশ্নে অনু নিজেও খানিকটা ভাবনায় ডুবে যায়,সত্যিই তো ব্যাথা এই টুকুনি হলেও আজকে সেভিয়রের মতো ওই লোকটা সময় মতো না এলে অনেক ভ'য়াবহ কিছু ঘটে যেতে পারতো। ফার্স্ট ক্লাস কান্ট্রি হওয়ার দরুন আমেরিকার যেমন অনেক অনেক ভালো দিক আছে, তেমনই ভালোর আড়ালে ঢাকা কুৎসিত দিকের ওও অভাব নেই। আজ তেমনই একটা কুৎসিত ঘটনার সম্মুখীন হতে হয়েছে অনুকে।

সন্ধ্যা রাতে শিফট শেষ করে ক্যাফেটেরিয়া থেকে বেরিয়ে অনু গিয়েছিল মায়ের কাছে হসপিটালে। মা ,আই সি ইউ তে ভর্তি, খুব একটা পাশে থাকতে হয়না,নার্সরাই খেয়াল রাখেন সর্বক্ষন। তাইতো পার্ট টাইম জবটা অফারটা পেয়েই লুফে নিয়েছিল অনু। কে জানতো সেই জবই কাল হয়ে এভাবে সামনে দাড়াবে ওর।

ক্যালিফোর্নিয়া আর সানফ্রান্সিসকোর মাঝামাঝি এই স্টেটে পাবলিক ট্রান্সপোর্ট নেই বললেই চলে। এখানে পার্সোনাল গাড়ি বিহীন চলাফেরা বরই দূরহ ব্যাপার। ক্যাফেটেরিয়া থেকে হসপিটাল অবধি ছোটমোটো একটা বাস স্টপেজ থাকলেও ক্রীতিকের নিরবিচ্ছিন্ন জনমানবহীন বাড়ি অবধি হেঁটেই যেতে হয় অনুকে।

যদিও প্রতিদিন সকালে কোম্পানির বরাদ্দকৃত গাড়িতেই হসপিটালে যায় অনু কিন্তু বিকালে পার্টটাইমের কারনে আর গাড়ির ড্রাইভার কে অযথা ঝামেলা দেয়না ও। বাস ধরে আর বাকিটা পথ হেটে নিজেই বাড়িতে ফিরে যায়।

আজও লাস্ট বাস ধরে কেবলই ক্যাফেটেরিয়ার সামনের স্টপেজএএ নেমেছিল অনু। তখন সন্ধ্যা রাত মাত্র। তবুও পুরো রাস্তা জুড়ে শুনশান নিস্তব্দতা বিরাজমান । অদুরে কোন এক হাইওয়ে থেকে আসা শাঁই শাঁই করে কাবার্ড ভ্যানের শব্দ ছাড়া টুকরো পাতা ঝরে পরার টুপটাপ আওয়াজটা পর্যন্ত অনুপস্থিত।

চারিদিকে কেমন গা ছমছমে পরিবেশ।

অনু যত দ্রুত সম্ভব পা চালাচ্ছিল বাড়ির পথে।

ঠিক তখনই সামনে এসে দাঁড়ায় সেদিন ক্যাফেতে ঝামেলা করা গু'ন্ডামতো সেই লোকটা। আজ আর একজন নয় বরং কয়েকজন ছিল ওরা। সব গুলোই নে'শার ঘোরে বুদ হয়ে আছে। লোক গুলো কেমন লোভাতুর দৃষ্টি নিক্ষেপ করে চেয়ে আছে ওর পানে। সোডিয়ামের মৃদু আলোয় অনুর চোখে বড্ড বি'শ্রী লাগলো সেই চাহনী।ওদের আ'ক্রো'শ দেখে মনে হচ্ছে ওরা অনুকে ধরার জন্যই ফাঁ'দ পেতে বসে ছিল।

তাছাড়া ওদের ইংরেজি একসেন্ট ছিল পুরোপুরি অন্যরকম শুনেই বোঝা যাচ্ছিল এরা আমেরিকান না, হতে পারে ব্রিটিশ।

"ব্রিটিশ"শব্দটা মাথায় ঘুরতেই অনুর শীড়দাড়া বেয়ে বয়ে যায় হীমধরা ঠান্ডা স্রোত ।ব্রিটিশরা সাভাবিকের তুলনায় অধীক উ'গ্র মেজাজের, আর প্র'তিশোধ পরায়ন হয়।

---তারমানে কি এরা রি'ভেঞ্জ নিতে এসেছে??

কথাটা ভেবেই অনু একপা দুপা করে পেছাতে শুরু করে, তারপর আর এক সেকেন্ডওও সময় নষ্ট না করে চোখ খিঁচে দৌড়াতে শুরু করে পথের উল্টো দিকে।

দু'একবার পেছনে তাকালে দেখতে পায় ওই বাজে লোক গুলো এখানো ওর পিছু ছাড়েনি, বরং স্ব গতিতে ওকে ধরার জন্য ধেয়ে আসছে।

পেছনে তাকিয়ে দৌড়াতে দৌড়াতে হুট করেই পায়ের স্যান্ডেল ছিড়ে সামনের শুকনো পিচ ঢালা কাঁচের মতো ধা'রালো রাস্তায় হোঁচট খেয়ে পরে যায় ও। তৎক্ষনাৎ দুই'হাটুতে প্রচন্ত ব্যাথা পেয়ে মা'গো বলে আর্তনাদ করে ওঠে অনু।

হাঁটুর অবস্থা বেগতিক।

তবুও হাঁপাতে হাঁপাতে পেছনে ফিরে তাকিয়ে অনু দেখতে পায় লোক গুলো খুব কাছে চলে এসেছে আর দু'পা এগোলেই হয়তো ধরে ফেলবে ওকে। আর তারপর কি হবে?? অনু কি আর কখনো বেঁ'চে ফিরতে পারবে?

অজস্র দানাবাঁধা ভ'য়ের তোপে থরথর করে কাঁপছিল অনু।ঠিক তখনই ওর ডান হাতটা টেনে ধরে ওকে নিয়েই দৌড়াতো শুরু করলো কেউ। ওর পাঁচ আঙুলের ভাজে নিজের পাঁচ আঙুল ঢুকিয়ে সামনের দিকে দৌড়াচ্ছে লোকটা। অনু নিজেও তারসাথেই দৌড়াচ্ছে, তবে পায়ের ব্যাথার কারনে তালেতাল মেলাতে পারছে না।

--- কাম অন, আমি কোন সিনেমার

হিরো নই যে ওদের সাথে একা ফা'ইট করে আপনাকে বাঁচাবো। আপাতত দুজনার সেইফটির জন্য আমাদের পালাতে হবে। পরে না হয় ওদের দেখে নেবো।

দৌড়াতে দৌড়াতে সামনে তাকিয়েই কথা বলছে লোকটা।

রোড লাইটের আলোয় ছুটতে থাকা লোকটাকে ভালো করে পরখ করলো অনু, মেরুন কালার শার্ট আর চোখে চিকন ফ্রেমের চশমা পরিহিত ফর্সা গড়নের এই যুবককে ও চেনে। হ্যা সেদিন ক্যাফেতে এই লোকটাই ওকে বাঁচিয়েছিল ওই গড়ম কফিটার হাত থেকে। আর আজ আবারও বাঁচালো,

কে এই লোক?? কোনো এঞ্জেল নয়তো? না হলে বিপদের সময়ই কেন পাওয়া যায় তাকে??

হালকা বাদামি চুল ওয়ালা ক্লিন সেভ করা পাতলা গড়নের লোকটা দেখতে যতটা সুদর্শন,তার কন্ঠস্বরটা তার থেকেও বেশি আকর্ষনীয় আর ডিপ।

অনুর ভাবনার ছেদ ঘটে লোকটার হ্যাঁচকা টানে।

এই মূহুর্তে একটা উডেন হাউজের আড়ালে লুকিয়ে আছে ওরা। অল্প একটু যায়গায় দুজন খুব আঁটসাঁট বেধে দাড়িয়েছে। অনু চেষ্টা করছে লোকটার থেকে দুরত্ব বজায় রাখার কিন্তু লোকটা নিজের অজান্তেই শক্ত হাতে ওর কোমড় চেপে ধরে সতর্ক দৃষ্টিপাত করে রাস্তার দিকে তাকিয়ে আছে। আর অনু তাকিয়ে আছে চশমার আড়ালে একজোড়া ধূসর মনির চোখের দিকে।

এভাবেই বিনাবাক্যে, শুধু শ্বাসপ্রশ্বাস আদান প্রদানে কিছুক্ষণ সময় অতিবাহিত হয়, প্রত্যয় সস্তির নিঃশ্বাস ছেড়ে ওর দিকে তাকিয়ে বলে,

--- চলে গিয়েছে ওরা।আর রি'স্ক নেই।

চোখে চোখ পরতেই অনু ধরা পরে যাওয়া চোরের মতো ওর চোখ থেকে তৎক্ষনাৎ চোখ সরিয়ে নিলো,ব্যাপারটা ঠাওর করতে পেরে প্রত্যয় দুষ্ট হেসে, হিসহিসিয়ে বলে,

--- হাউ সিনেমাটিক।

সেসব কথা ভেবে আবারও এক চিলতে লজ্জা মাখানো হাসি খেলে গেলো অনুর ঠোঁটে।

অনুর এমন উদ্ভট হাসির কারন খুঁজে পায়না অরু, তাই বিভ্রান্ত হয়ে বলে,

--- এ্যাই আপা, পাগলের মতো হাসছিস কেন একা একা??

অনু ভ্রু কুঁচকে নিজের পা থেকে অরুর হাতটা সরিয়ে দিয়ে,কম্ফোর্টার মুড়ি দিতে দিতে বলে, ---যা'তো ঘুমাবো।

অরু নিজের ঠোঁট উল্টে বলে,

--- আশ্চর্য লজ্জা পাওয়ার কি হলো? আমি কি তোর শশুর না ভাসুর?

*****************************************

দেখতে দেখতে কখন যে ক্রীতিকের এই ছোট্ট ডুপ্লেক্স বাড়িটায় একটা মাস কাটিয়ে দিলো টেরই পায়নি অরু। সময় যে কেনো এতো তারাতারি চলে যায় কে জানে??

ডাক্তার বলেছে আজমেরী শেখের ওপেন হার্ট সা'র্জারীর প্রয়োজন।তবে এতোবড় সা'র্জারীর জন্য আজমেরী হক প্রস্তুত নন, দীর্ঘদিন সুচিকিৎসার অভাবে তার শরীরে বিভিন্ন জটিল সমস্যা দেখা দিয়েছে। সেগুলোর ট্রিটমেন্ট চলাকালীন ওপেন হার্ট সা'র্জারী সম্ভব নয়।

অন্যান্য শারিরীক সমস্যার উন্নতি হলে তবেই বড় সা'র্জারী করানো হবে।তাই এই পুরো প্রসেসটায় একবছর বা তার বেশিও সময় লেগে যেতে পারে।

অনু আর অরুর কিছুই করার নেই, মাকে সুস্থ করতে হলে ধৈর্য ধরতে হবে। কারণ দুনিয়াতে মা ছাড়া ওদের সত্যিকারে আপন বলে কেউ নেই।

এরমাঝে অনু ক্রীতিক কে অনুরোধ করেছে অরুকে যাতে একটা ছোটখাটো ভার্সিটিতে এডমিশন করিয়ে দেয়, কারণ বছরের পর বছর তো আর পড়াশোনা বন্ধ করে রাখা সম্ভব নয়। অনু না হয় নিজের সখ আহ্লাদ বিসর্জন দিয়েছে,তাই বলে কি অরুকেও দিতে হবে??

অরু ভেবেছিল ক্রীতিক একবাক্যে না করে দেবে। কিন্তু তেমন কিছুই হয়নি, উল্টে ক্রীতিক আগ বাড়িয়ে জিজ্ঞেস করেছিল, অরুর কোন চয়েস আছে কিনা।

গত একমাসে সব মিলিয়ে বড়জোর হলে দশদিনমতো অরুর আর ক্রীতিকের দেখা হয়েছে। ক্রীতিক বেশির ভাগ সময়ই বাড়ির বাইরে থাকে, কখন আসে কখন যায় সেটাও জানেনা অরুরা। ক্রীতিক যখন হলরুমে বসে গেইম খেলতো তখনই কেবল দু'একসময় বেখেয়ালে দেখা হয়ে যেতো।এছাড়া ক্রীতিকের দেখা খুব একটা পায়নি অরু। মোদ্দাকথা, একই বাড়িতে থাকা সত্বেও সম্পর্কের মতোই ওদের তিনজনার মাঝে ছিল বিশাল জড়তার প্রাচীর।

কিন্তু এই প্রাচীর কতদিন স্থীর থাকে কে জানে?

ক্রীতিকের মতো বেপরোয়া আর একরোখা সভাবের মানুষের জন্য এই প্রাচীর ভে'ঙে ফেলা খুব কঠিন কিছু নয় বৈকি ।

*****************************************

ক্যালিফোর্নিয়ার এদিকে মাঘের আর পৌষের শীত বলে কিছু নেই, হাতে গোনা দুই তিনটে মাস ছাড়া বাকি সময়টাই শীতকাল এখানে। তারমধ্যে কখনো কখনো শীতকালকে সর্বেসর্বা হটিয়ে বর্ষাকাল নেমে আসে ধরনী জুড়ে। তখন শীত বর্ষা দু'টোর মিশ্রনে রাত দিন সমান হয়ে যায় এদেশে।

আজ তেমনই একটা দিন, গতরাত থেকেই বাইরে বর্ষাকাল শুরু হয়ে গিয়েছে, খানিক বাদে বাদে পশ্চিম আকাশে গুড়গুড়িয়ে মেঘ ডাকছে, আর দফায় দফায় একপশলা বৃষ্টি। সূর্য না ওঠার দরুন ঠান্ডারাও যেন জেঁকে বসেছে একদম।

এই আলো আধারি আবহাওয়ার মাঝেও অরুর মনটা আজ ভীষণ ভালো। কেনইবা ভালো থাকবে না, সানফ্রান্সিসকো স্টেট ইউনিভার্সিটিতে এডমিশন হয়েছে ওর। আগামী কাল থেকে আবারও নতুন করে পড়াশোনার অধ্যায় শুরু হবে ওর জীবনে।নাহ নিজের জীবনের উপর যতটা অভিযোগ করেছিল ততটাও খারাপ নয় জীবন টা।

সেই খুশিতেই, সকাল সকাল রান্না চড়িয়ে কিচেন কাউটারের উপর বা দুলিয়ে বসে, বিশাল লম্বা বেনিটাকে হাতে নিয়ে নাড়তে নাড়তে , গুনগুনিয়ে গাইছে অরু,

"এই মেঘলা দিনে একলা ঘরে থাকে নাতো মন

কবে যাবো,কবে পাবো ওগো তোমার নিমন্ত্রণ "

ব্যাস এতোটুকুই গেয়েছিল ও তখনই বাইরের কলিং বেলটা বাঁজখাই আওয়াজ তুলে বেজে ওঠে।

অরু লাফ দিয়ে কাউন্টার থেকে নেমে তারাহুরো করে গিয়ে দরজা খুলে দেখে বাইরে কেউ নেই, তবে ফ্রন্ট ইয়ার্ডে যে বেঞ্চিটা রয়েছে তারউপর কিছু একটা রাখা।

দরজার সামনে থেকে ছাতাটা কুড়িয়ে,সেটা নিয়েই অরু বেঞ্চির কাছে এগিয়ে গেলো,গিয়ে দেখলো তাজা টকটকে লাল গোলাপের একটা বুকে। তার মাঝখানে উইশ কার্ড। ফোঁটাফোঁটা বারিধারা জমে ফুল গুলোকে আরও বেশি সতেজ দেখাচ্ছে।

প্রথমে তাজা গোলাপে মুখ ডুবিয়ে প্রান ভরে শ্বাস নিলো অরু, তারপর উইশ কার্ডটা খুলে পড়তে শুরু করলো, যেখানে গুটিগুটি ইংরেজি অক্ষরে লেখা,

​​---- ​Many Many happy returns of the day JK Sir.

from:"S"

ব্যাস এতোটুকুই।

উইশ কার্ডডা পড়ে ভ্রু কুঁচকে ডুপ্লেক্স বাড়িটার দোতলার কর্নারের রুমটায় দৃষ্টি নিক্ষেপ করে অরু, যেখানে এই মূহুর্তে ক্রীতিক ঘুমিয়ে আছে।

প্রায় দুইদিন পর কাল মাঝরাতে বাড়ি ফিরেছিলো ক্রীতিক। রাতে যখন অরু পানি পান করতে নিচে নেমে আসে, তখনই দেখতে পায় ক্রীতিককে। অন্ধকার রুমে কাউচের উপর বসে মোবাইলের ফ্ল্যাস জ্বালিয়ে নিজের পায়ে নিজেই ব্যান্ডেজ করছে সে।

ব্যান্ডেজ করা হয়ে গেলে গায়ের জামাকাপড় গুলো ওখানেই ছু'ড়ে ফেলে দিয়ে খোঁ'ড়াতে খোঁ'ড়াতে নিজের রুমে চলে যায় ক্রীতিক।

পরে অবশ্য অরু নিজেই ক্রীতিকের জামা কাপড় গুলো লন্ড্রীতে দিয়েছিল। কিন্তু ক্ষ'ত কি করে হলো সেটা আর জিজ্ঞেস করার আর সাহস হয়ে ওঠেনি। দেখা গেলো জিজ্ঞেস করতে গেলে উল্টে থা'প্প'ড় মে'রে গাল লাল করে দিলো। যেচে পরে মানসম্মান খোয়ানোর ইচ্ছে নেই অরুর । তারউপর কথায় কথায় যে অ'পমান সহ্য করে সেই ঢের।

মনে মনে কথাগুলো ভেবে নিয়ে বুকে সমেত ঘরে চলে গেলো অরু।

*****************************************

বেলা তখন দশটা কি এগারোটা, বাইরে বৃষ্টি নেই তবে কালো মেঘে ছেয়ে আছে চারিপাশ।

তখনই একেবারে তৈরি হয়ে একটা ব্ল্যাক বেল্টের ঘড়ি হাতে পেঁচাতে পেঁচাতে নিচে নামলো ক্রীতিক। দেখেই মনে হচ্ছে বাইরে যাবে।

তবে যাওয়ার আগে বাঁধ সাধে অরু।

তাজা গোলাপের বুকে টা সামনে বাড়িয়ে দিয়ে একগাল হেঁসে বলে,

--- হ্যাপি বার্থডে ভা..ভাইয়া।

ভাইয়া শব্দটা উচ্চারণ করতে অরুর একটু কষ্টই হলো বৈকি।

ক্রীতিক কোন প্রতিক্রিয়া করতে পারলো না, তার আগেই একেরপর একের গগন কাঁপানো হাঁচি দিতে শুরু করলো ও।

ক্রীতিক একাধারে হাঁচি দিয়েই যাচ্ছে, হাঁচি দিতে দিতে ওর নাকের ডগা লাল বর্ন ধারন করেছে, হুট করেই ক্রীতিকের এমন বিরূপ প্রতিক্রিয়ায় অরু একটু ভরকে যায়, ব্যাস্ত ভঙ্গিতে বলে,

--- ককি হয়েছে আপনার?ঠিক আছেন?

ক্রীতিক হাঁচির মাঝখানে জবাব দেয়,

--- ইডিয়ট ওটাকে সরা,রোজে আমার এলার্জি আছে।

এগেইন........হাঁচ্চু।

প্রায় মিনিট দশেক পর একটু স্বাভাবিক হয়ে ক্রীতিক যখন আবারও বাইরের উদ্দেশ্যে পা বাড়ায়, তখনই দ্বিতীয় বারের মতো পিছু ডেকে ওঠে অরু।

ক্রীতিক বিরক্ত হয়ে দাঁতেদাঁত চেপে বলে,

--হোয়াট হ্যাপেন্ড অরু,কি চাইছিস তুই?

-- না মানে কোথাও যাচ্ছেন?

--- ভার্সিটিতে যাচ্ছি, এক্সাম আছে।আর কিছু?

--- এমা আপনিতো থার্টি প্লাস এখনো পড়াশোনা শেষ করতে পারেন নি?

---আমার নয় , আমার স্টুডেন্টদের এক্সাম আছে।এন্ড তুইকি ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে আমাকে বয়সের খোঁটা দিলি??

অরু সচকিত হয়ে এদিক ওদিক মাথা নাড়ালো। তবে এটা বুঝতে পারলো না, এতো ধনসম্পদ প্রতিপত্তি থাকা সত্বেও কিসের অভাবে ক্রীতিক বিজনেস ছেড়ে দিয়ে চাকরি করে।

--- শুনে রাখ, যদি দিয়েও থাকিস আমার লস নেই, বরং তোরই লস, দেখবি দিন শেষে তোর কপালেও একটা বুড়ো বর জুটবে।

অরু মুখ কাচুমাচু করে বললো,

--এভাবে কেন অভি'শা'প দিচ্ছেন, কি ক্ষ'তি করেছি আপনার?

ক্রীতিক একটু ব্যাথাতুর হাসি হাসলো, অতঃপর বললো,

---সিরিয়াসলি?? আমার এইজের কাউকে বিয়ে করাটা তোর কাছে অভিশা'পের মতো??

অরু মনে মনে বললো,

---অবশ্যই, আমিতো নিখিল ভাইয়ের মতো ইমিডিয়েট সিনিয়র কাউকে বিয়ে করবো।

অরু চুপ হয়ে গিয়েছে দেখে, ক্রীতিক ঘড়িতে নজর দিয়ে দ্রুত হাটা দিলো।

তখন আবারও দৌড়ে ওর সামনে গিয়ে দাড়ালো অরু।

অরুর বলা একটু আগের কথায় ক্রীতিকের মেজাজ এমনিতেই তু'ঙ্গে, তারউপর এখন বারবার পথ আটকাচ্ছে মেয়েটা, কি চাইছে ও??

রাগের তোপে দাঁত কটমট করতে করতে ক্রীতিক বলে,

--- কি চাই,যাবি আমার সাথে? পকেটে করে নিয়ে যাবো? উঠবি পকেটে? আয় তাহলে।

অরু এদিক ওদিক মাথা নাড়ায়।

---মাথা গড়ম হয়ে আছে অরু , রাস্তা ছাড় নয়তো তোর ওই নরম গালে ক'ষিয়ে একটা থা'প্প'ড় দেবো আমি। যেটা আমি দিতে চাচ্ছি না।

অরু শুকনো ঢোক গিলে, একটা প্যাকেট এগিয়ে দিলো ক্রীতিকের মুখের দিকে।

ক্রীতিক ভ্রু কুঞ্চিত করে বললো,

--- কি এটা?

অরু ভয়ে ভয়ে মাথা নিচু করে জবাব দেয়,

--- পায়েস। আজ আপনার জন্মদিন তাই, জানেন আপা বলে আমার হাতের ডেজার্ট নাকি অমৃত। সম্পর্ক যেমনই হোক না কেন আপনিতো আমার ভাইয়েরই মতো,তাইনা?

অরুর বলা শেষ কথাটা তী'রের ফলার মতোই মস্তিস্কে গিয়ে আ'ঘা'ত করলো ক্রীতিককে। ও চুপচাপ প্যাকেটটা হাতে নিলো, অতঃপর দু'কদম এগিয়ে গিয়ে প্যাকেটটা ময়লার বিনে ফেলে দিয়ে চোয়াল শক্ত করে, অরুর দিকে অা'গুনঝ'রা দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললো,

----- শেইম অন ইউর ফা'কিং সিমপ্যাথি।

তারপর হুরমুর করে বেরিয়ে গেলো, গেট ছাড়িয়ে।

অরু এখনো একই যায়গায় সটান দাঁড়িয়ে। না চাইতেও এভাবেই বারবার অপমানিত হতে হয় ক্রীতিকের কাছে। কই অনুর সাথে তো এমন আচরন করেনা, শুধু ওর সাথেই কেন?? ওর উপর কিসের এতো রাগ ক্রীতিকের?ভেবে পায়না অরু। তাছাড়া ওতো কোন সিমপ্যাথি দেখানোর জন্য ডের্জাট টা বানায়নি, বরং অনেকটা ভালোবাসা আর আন্তরিকতা থেকেই তো বানিয়েছিল। যেখানে ওর নিজেরই করুনা অপছন্দ সেখানে ও কিনা কাউকে করুনা করবে?তাও আবার জায়ান ক্রীতিককে? যার করুনায় বেঁচে আছে ওরা।হাস্যকর।

তাহলে ক্রীতিক আদতে কোন করুনার কথা বোঝালো??হট ডিড হি মিন?

*****************************************

রাস্তার সাইডে স্থীর দাড়িয়ে থাকা চেনা পরিচিত মার্সিডিজ গাড়িটা দেখেই বেশ অবাক হলো সায়র। মনে মনে ভাবলো,

---মাঝরাস্তায় ক্রীতিক গাড়ি থামিয়ে করছে টা কি?? আশ্চর্য।

তৎক্ষনাৎ নিজের গাড়ির ব্রেক কষে, রাস্তা পার হয়ে, স্থীর গাড়ির জানালার গ্লাসে আঙুল দিয়ে দু-তিনবার টোকা দিলো ও।ভেতর থেকে সায়রকে দেখতে পেয়ে জানালার কাঁচ নামিয়ে ক্রীতিক বলে,

-- কি সমস্যা?

--- অনেক সমস্যা,

এই বলে গাড়ির ভেতর এসে বসে পরে সায়র।গাড়িতে বসা মাত্রই ক্রীতিকের দিকে তাকিয়ে সায়র যা দেখলো তাতে আপাতত ওর চোখ কপালে।

গাড়িতে ঢুকে সায়র দেখতে পায় ক্রীতিক আড়াম করে বসে অন-টাইম চামচ দিয়ে পায়েশ খাচ্ছে।

সায়র সন্দিহান হয়ে চোখ ছোট ছোট করে বললো,

--- তুই এই রাস্তার মাঝখানে পায়েস কোথায় পেলি?

ক্রীতিক খেতে খেতে, বাম হাত উঁচিয়ে পেছনের ডাস্টবিনটার দিকে দেখিয়ে দিলো।

ক্রীতিকের কথায় সায়র চোখ মুখ কুঁচকে ফেললো, অবিশ্বাসের সুরে বললো,

--- কিহ!! তুই ডাস্টবিন থেকে খাবার তুলে খাচ্ছিস?

ক্রীতিক উপর নিচ মাথা নাড়ালো।

--- ছিহ ক্রীতিক ছিহ,তুই এখনো এতোটাও অসহায় হয়ে যাসনি যে ওখান থেকে খাবার তুলে খেতে হবে তোর। আমরা এখনো আছি কি করতে?বাই দা ওয়ে আমাকে একটু দে, ইটস লুক ইয়াম্মি।

--- সরি ব্রো, এটার এক চিমটি ভাগও আমি কাউকে দিতে রাজি নই, ইভেন কোনোদিন না।

পুরোটা আমার।

তারপর বিরবিরিয়ে অস্পষ্ট সুরে বলে,

--- ও পুরোটাই আমার,ওয়ানলি মাইন।

সায়র বোঝার চেষ্টা করে বললো,

-- তুই আবার ডেসার্টের প্রতি এতোটা অবসেসট কবে হলি?

ক্রীতিক মনে মনে বলে,

--- ঠিকই বলেছিস সি ইজ মাইন ডেজার্ট। কথাটা বলতে গিয়ে, এক চিলতে মৃদু হাসি খেলে গেলো ওর ডার্ক ব্রাউন ঠোঁট জুড়ে, তারপর আবারও তলিয়ে যায় গভীর ভাবনায় আনমনে বিরবিরিয়ে বলে,তোর আপা ঠিকই বলে হার্টবিট, তোর রান্না করা ডেজার্ট অমৃত।

ক্রীতিকের কথার টোন ধরতে পারছে না সায়র, ও কখনোই এতোটা নরম সুরে, ঠোঁটে হাসি রেখে কথা বলতে দেখেনি ক্রীতিককে।জায়ান ক্রীতিক অলওয়েজ স্ট্রং থাকতে পছন্দ করে, উইক বিহেভিয়ার ওর দ্বারা হয়না, তাহলে হুট করে হলোটা কি? ভাবছে সায়র।

একমাত্র ড্রাংক হলেই এমন আচরণ করে ক্রীতিক ।তাই উদগ্রীব হয়ে সায়র শুধালো,

--- আর ইউ ওকে ব্রো?

ক্রীতিক কুটিল হেঁসে জবাব দেয়,

---one day you'll meet someone sayor, and it'll literary take your br'eath away...

তখন ভালো, মন্দ ঠিক, বেঠিক উচিত, অনুচিত কোনোটাই মস্তিস্কে আটকায় না, যা এসে হৃদয়ে আটকায় সেটা হলো কাছে পাবার প্রবনতা।এট এনি কষ্ট, তাকে চাইই চাই।

ইউ নো হট, আমি জায়ান ক্রীতিক চৌধুরী মাত্র ডাস্টবিন থেকে তুলে এনে খাবার খেয়েছি,ইট ওয়াজ ওয়ার্ম।এন্ড আই ফিল সো মাস হ্যাপি।

সায়র ওর কথার আগামাথা কিছুই বুঝতে পারলো না, কার কথা বলছে ওও??কেনই বা বলছে?? আগেতো কখনো বলেনি, ইভেন প্রেম ভালোবাসা এই সমস্ত কথা শুনলেও রে'গেমেগে আ'গুন হয়ে যেত যে মানুষটা তার হঠাৎ হলোটা কি আজ??

চকিতে প্রশ্ন ছুড়লো সায়র

--- ব্রো ওই ডেজার্টে কিছু মেশানো ছিলোনা তো?

ক্রীতিক জবাব দেয়না,শুধু বাঁকা হেসে গাড়ি স্টার্ট দিতে দিতে আনমনে বলে,

----ছিলোতো আমার হার্টবিটের "ছোঁয়া "।এন্ড ইটস মাই পার্সোনাল ড্রা''গ।

*****************************************

সন্ধ্যা হতে না হতেই ঝুম বৃষ্টি নেমেছে আকাশ বাতাস ছাপিয়ে।বাড়িতে বিদ্যুৎ নেই, মোম জ্বালিয়ে রেখেছে অরু। অনু একটু আগেই কল দিয়ে জানিয়ে দিয়েছে বৃষ্টিতে হসপিটালে আটকা পরেছে ও চিন্তা না করতে।

অরু মাত্রই কথা শেষ করে উপরে চলে যাচ্ছিলো, তখনই গেট খুলে ভেতর ঢোকে বৃষ্টিতে ভিজে জুবুথুবু হয়ে যাওয়া ক্রীতিক।

মোমের আলোয় থরথর করে কাঁপতে থাকা ক্রীতিক কে দেখে মায়া হলো অরুর, ও এগিয়ে গিয়ে কিছু লাগবে কিনা জিজ্ঞেস করতে চাইলো, কিন্তু তখনই সকালের সেই অপমানের কথা মনে পরতে আবারও পিছু হেটে পা বাড়ালো নিজের ঘরের দিকে।

তবে দু'পা সিঁড়ির দিকে এগোতেই পেছন থেকে কাঠকাঠ আওয়াজ ভেসে এলো ক্রীতিকের,

---- দেখছিস শীতে কাঁপছি তবুও টাওয়াল এগিয়ে না দিয়ে চলে যাচ্ছিস?? আক্কেল কি পানির সাথে গুলে খেয়েছিস?

অরু একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড় বলে,

--- নিয়ে আসছি।

উপর থেকে টাওয়াল নিয়ে এসে চেহারায় একটু রাগি রাগি ভাব করেই এগিয়ে যায় ক্রীতিকের কাছে, অরু টাওয়াল দেওয়ার জন্য হাত বাড়াতেই ক্রীতিক খপ করে অরুর হাত সহ টাওয়ালটা ধরে নেয়, তারপর ওর হাত দিয়েই নিজের মতো করে চুল মুছতে থাকে।

--- আরে আরে কি করছেন? লাগছে তো হাতে।

--- ভাত তো আমার থেকে বেশিই খাস, তাহলে লাগে কেন?

---- খাওয়ার খোঁটা দিচ্ছেন??

--- তুই আমার সব সম্পত্তি খেয়ে ফেললেও সেটা দেবোনা।

--- কি বললেন??

অরুর কথার পিঠে ক্রীতিক কিছু বলতে যাবে, ঠিক তখনই দরজা ঠেলে এলিসা,অর্নব,সায়র, ক্যাথলিন সবাই একসুরে চেঁচিয়ে বলে ওঠে সারপ্রাইজ....

ওদিকে কারও উপস্থিত টের পেতেই অরুকে একঝটকায় দুরে সরিয়ে দেয় ক্রীতিক।

অরু মেঝেতে ছি'টকে পরে, আর্তনাথ করে বলে ওঠে,

--আহ...আমার কোমড়....

■■■■■■■■■■■■■■■■■■■■■■■

#পর্বঃ০৮ (বর্ধিতাংশ)

ক্রীতিকের ডুপ্লেক্স বাড়িটা অত্যাধুনিক হলেও পরিধিতে খুব একটা বড় নয়,

নিচ তলায় হল আর গ্যারেজ ছাড়া আলাদা কোনো শোবার ঘর নেই।

আর উপর তলায় একটা মাস্টার বেডরুম যেটা ক্রীতিকের নিজের।অন্যটা গেস্টরুম সেখানে আপাতত অরুরা থাকে। এছাড়া একটা রুম রয়েছে সেটা ক্রীতিকের ব্যাক্তিগত জিমনেশিয়াম। তবে এই পুরো বাড়িতে সব থেকে যেটা সুন্দর তা হলো দুইসাইডে দু'টো টানা ছাঁদ বারান্দা, আর তার একটাতে রয়েছে মিনি সাইজের একটা সুইমিং পুল,ওই দুইতিনটা বাথটাবের সমান পানি হবে আর কি। মূলত এটা ব্যাবহারের থেকে সৌন্দর্য বর্ধনের জন্যই বেশি তৈরি করা হয়েছে।

সন্ধ্যা রাতে ফ্র্যাগরেন্স মোমের লালচে আলোতে পুলের অগভীর নীল পানিটুকু ঝিলমিল করছে,দেখলে মনে হবে কোন যাদুকরের তন্ত্রমন্ত্রের ফল। তাতেই আপাতত পা ডুবিয়ে বসে আছে এলিসা,অর্নব,সায়র, আর ক্যাথলিন। যদিও বাইরে হুহু ঠান্ডা, তবে সেটাই উপভোগ করছে ওরা।

এলিসা, অর্নব,আর সায়র হলো ক্রীতিকের বেস্ট ফ্রেন্ড, পরিবার ওও বলা চলে। ওদের সবার জীবনেই কোন না কোন অপূর্নতা দিয়ে ঘেরা। চারজনই পিছুটানবিহীন ছ'ন্নছাড়া মানুষ ।সোজা পথে না হেটে আঁকাবাঁকা পথের এডভেঞ্চারাস শিহরন পেতেই বেশি পছন্দ করে ওরা। সামনে থেকে সবকিছু সাভাবিক মনে হলেও মূলত চারজনের জীবনই একেকটা গোলকধাঁধা আর সেকারণেই হয়তো ওরা সোলমেইট।দীর্ঘদিনের বন্ধুত্ব ওদের। ক্রীতিক এখনো ভেবে পায়না ওর মতো একগুঁয়ে, বদমেজাজি,রগচটা, মাথা গরম ছেলের সাথে ওরা এতোগুলা বছর কিভাবে কাটিয়ে দিলো?তাও উইথ আউট এনি কমপ্লেইন।

ছাঁদ বারান্দার রেলিং ঘেসে দাড়িয়ে মেঘলা আকাশের পানে একনাগাড়ে নিকোটিনের ধোঁয়া উড়াচ্ছে ক্রীতিক। সেদিকে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে ক্যাথলিন। ক্যাথলিন হলো এলিসার কাজিন। বয়সে ওদের থেকে বেশ ছোটই, অনুর বয়সই হবে হয়তো। তবে কেন যেন ক্রীতিকের প্রতি ওর অন্যরকম দূর্বলতা। ওর কোন বাইক রাইড কম্পিটিশন মিস করেনা ক্যাথলিন। এছাড়া বাইক রেচিং ফ্যান ক্লাবের টপ ফ্যান ব্যাজ ওও ওর দখলে। আর সেখানে ক্রীতিক থাকে সবসময় নাম্বার ওয়ান ট্রেন্ডিং এ।মোট কথা রাইডার জেকের খুব বড় ভক্ত ক্যাথলিন।

যদিও ক্রীতিকের এসব বিষয়ে বিন্দু মাত্র ধারনা নেই। ওতো কেবল নিজের ছন্নছাড়া হৃদয়টাকে একটুখানি প্রশান্তি দেওয়ার জন্যই জীবনটাকে অযাচিত বি'পদের মুখে ঠেলে দেয়। কেন যেন এই ব্যাপারটায় এক পৈচাশিক আনন্দ পায় ক্রীতিক।

ক্যাথলিনের ভালো লাগার ব্যাপারটা এলিসা সহ বাকি দুজনও জানে, তবে বয়সের দোহাই দিয়ে কেউই খুব একটা পাত্তা দেয়না।

আজ ক্রীতিকের জন্মদিন বলেই কেঁ'দেকে'টে হাজারও অনুরোধ করে তবেই এলিসার সাথে এসেছে সে। সাথে করে ক্রীতিকের জন্য জন্য গিফট ও এনেছে। তবে সে গিফট এ জীবনে ক্রীতিক খুলে দেখবে কিনা বলা বাহুল্য।

*****************************************

বৃষ্টিতে আটকে গিয়ে অনু এখনো ফেরেনি বলে সারা সন্ধ্যা অরুও আর নিজের রুম থেকে বের হয়নি। তবে এখন তো বৃষ্টি কমেছে আপা ফিরলো কিনা তা দেখতে কেবলই রুমের বাইরের করিডোরে পা রেখেছিল অরু। ঠিক তখনই ছাঁদ বারান্দা থেকে হাক ছেড়ে ডেকে উঠলো এলিসা,

--- এই যে শোনো আমাদের সবার জন্য হট কফি বানিয়ে নিয়ে এসোতো।

এলিসার কথায় বাদ সাধে সায়র,খানিকটা গলা নামিয়ে বলে,

-- - ওই!কাকে কি বলছিস, ও কি সার্ভেন্ট নাকি?ও ক্রীতিকের স্টেপ সিস্টার।

অবাকের চড়ম সীমানায় গিয়ে এলিসা বললো,

--- কি বলিস কিন্তু ক্রীতিক যে বললো, ট্রিট হার লাইক আ সার্ভেন্ট?

সায়র কটমটিয়ে ক্রীতিকের দিকে চাইলো, যে এখনো ভাবলেশহীন হয়ে একই ভাবে দাড়িয়ে আছে, তারপর চোখ ঘুরিয়ে এলিসাকে বলে,

--- আমাকেও একই কথা বলেছে বাঁদর টা। বোন কে বোন বলে পরিচয় দেয় না,কতটা খারাপ ভাবতে পারছিস?

ব্যাপারটা আন্দাজ করতে পেরে, তখনই অরুকে নিষেধ করার জন্য করিডোরে উঁকি দিলো এলিসা, কিন্তু দেখলো অরু সেখানে নেই।

নিজের কথায় এই মূহুর্তে নিজেই লজ্জিত ও,তাই ক্রীতিকের দিকে তাকিয়ে কটমটিয়ে বললো,

--- দাঁড়া আমি দেখাচ্ছি ওকে।

ওদের কথা শুনতে না পেয়ে অর্নব গোয়েন্দাদের মতো সন্দিহান হয়ে প্রশ্ন ছুড়লো,

--- এ্যাই, কি বলছিস তোরা ফিসফিসিয়ে? আমার নামে কিছু নয়তো? আমাকে নিয়ে কিছু বললে কিছু একদম পার পাবিনা বলে দিলাম,সব বের করে ফেলবো।

সায়র বিরক্ত হয়ে চোখ উল্টে বললো,

---ভুলে যাসনা অর্নব তুই একজন হ্যা'কার,কোন ম্যাজিশিয়ান নস, যে মনের কথা বের করে ফেলবি।

ওদের কথার বহরে ক্রীতিকও এবার ঘুরে দাড়ালো।তৎক্ষনাৎ কথা ছু'ড়লো এলিসা,

---জেকে অরু তোর বোন হয় আগে বলিস নি তো?

ক্রীতিকের সোজাসাপটা জবাব,

--- বোন হয়না তাই বলিনি, তাছাড়া ও কেন আমার বোন হতে যাবে? আমার বোন হওয়ার কি যোগ্যতা আছে ওর?

এলিসা পাল্টা প্রশ্ন করবে তার আগেই ট্রেতে করে সবার জন্য গরম গরম কফি নিয়ে হাজির হয় অরু। অরুর অবশ্য কফি চাওয়াতে তেমন একটা ইগোতে লাগেনি, কফিই তো চেয়েছে, তাছাড়া বাড়ি বয়ে আসা সবাই তো মেহমান এতোটুকু নিঃসংকোচে করাই যায়।

কিন্তু অরুকে একজনার মোটেই ভালো লাগেনি, আর সেটা হলো ক্যাথলিন। মানে ও এই ব্যাপারটা নিতেই পারছে না,যেখানে ও হাজার চেষ্টা করে তবেই ক্রীতিককে একটু চোখের দেখা দেখতে পায় সেখানে এই ব্রাউন স্কিন, লম্বা চুল ওয়ালা মেয়েটা কিনা ক্রীতিকের বাড়িতে চব্বিশ ঘন্টা থাকে। দিনরাত ক্রীতিকের মুখো মুখি হয়, ওর সাথে কথা বলে, হাসাহাসি করে।ব্যাপার ভাবতেই ক্যাথলিনের কেমন গা জ্বলে উঠলো। কোন এক অজানা কারনে হুট করেই মেয়েটার প্রতি রা'গ উগরে আসছে ওর।অরুর ঠোঁটের কোনে লেগে থাকা হালকা আন্তরিকতা মাখা হাসিটা দেখে একান্তে ফোঁসফাঁস করছিল ক্যাথলিন। তখনই ওর দিকে কফির কাপটা এগিয়ে দেয় অরু।

কিন্তু ক্যাথলিন তো এটা নিবে না, সবার সামনে ফিরিয়েও দিতে পারবে না, তাই ইচ্ছে করেই গরম কফিটা উল্টে ফেলে দেয় ও।তবে অসাবধানতায় পুরো কফিটাই অরুর হাতে ছিটকে পরলো।

কফিটা ছিল ধোঁয়া ওঠা আ'গুন গরম।তবুও অরু চেঁচালো না, কেবল আহ.. শব্দের মৃদু আতর্নাদ বেরিয়ে এলো ওর মুখ থেকে।

তৎক্ষনাৎ ওর কাছে ছুটে এলো সায়র, অন্যরাও ব্যাস্ত হয়ে পরেছে ও ঠিক আছে কিনা দেখার জন্য শুধু ক্রীতিক ছাড়া, ও এখনো নিজের যায়গাতেই স্থীর দাড়িয়ে সবটা দেখছে। নিজের অজান্তেই কখন যে হাতদুটো মুষ্টিবদ্ধ করে ফেলেছে হদিস নেই তার। সায়র তারাহুরো করে অরুর হাতটাকে টেনে উল্টে পাল্টে দেখে নিলো,হাতের অনেকটা যায়গা ধরে লালচে বর্ন ধারন করেছে।অরু চোখ মুখ এখনো খিঁচে বন্ধ করে বসে আছে, মুখে কোনো রা নেই,কেবল চোখ দিয়েই টুপটুপ করে ঝরে পরছে ব্যা'থাতুর নোনাজল।

--- আর ইউ ওকে বেবি?

উদগ্রীব হয়ে প্রশ্ন করলো সায়র।

অরু জবাব দিলোনা, বসে রইলো একই ভাবে।

ওর হাতে জ্বা'লা করছে ভেবে পুলের শীতল পানিতে হাতটা ডুবিয়ে দিলো সায়র। কয়েক মূহুর্ত পরেই পিটপিট করে চোখ খুললো অরু, ঠান্ডা পেয়ে সত্যিই বেশ আড়াম লাগছে এখন।

ওদিকে এলিসা ক্যাথলিনের দিকে চেয়ে চোখ পাঁকাতেই। ক্যাথলিন এসে ক্ষমা চাইলো অরুর নিকট।

---আ'ম সরি অরু, আই ডিডন্ট মিন ইট।

অরুর যে রাগ নেই তেমন না,ও দেখেছে ক্যাথলিন ইচ্ছা করে কফিটা ফেলছে, মেয়েটার কর্মকান্ডে রাগও লাগছে খুব, তবুও সবার সামনে মনুষ্যত্ব আর চক্ষু লজ্জার খাতিরে বললো,

--- ইটস ওকে।

--- অনেক তো হয়েছে , অরু ভেতরে যা,আমি মলম নিয়ে আসছি তোর জন্য।

অরুর চোখের দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে খুব সাভাবিক ভঙ্গিতে কথাটা বললো,ক্রীতিক।

এই আ'গুন ঝ'ড়া লে'লিহান দাবানলের মতো চোখে কোন মায়া কিংবা কাতরতা ছিলোনা অরু নিশ্চিত, তাহলে কি ছিল? হিং'স্র'তা? কিন্তু কেন?

এতো ভাবার সময় নেই, যেতে বলেছে চলে যাওয়াটাই উত্তম। শুধু শুধু তাদের কোয়ালিটি টাইমে কাবাব মে হাড্ডি হয়ে গেলো ও। ব্যাপারটা ভেবে লজ্জায় মাথা নিচু করে ছাঁদ বারান্দা ত্যাগ করে অরু।

*****************************************

অরু রুমে পা রেখেছে কি রাখেনি তার আগেই ওর রুমে ঢুকে ধাপ করে দরজা বন্ধ করে দেয় ক্রীতিক।এর আগে কখনোই এমনটা করেনি ও,তাই এমন হটাৎ আগমনে অরু একটু ভয়ই পেলো। দু'কদম পিছিয়ে পিঠ ঠেকালো শক্ত দেওয়ালে। ফুল স্লিভ টিশার্টের দু'হাতা উপরে তুলতে তুলতে ধীর পায়ে ওর দিকেই এগিয়ে এলো ক্রীতিক।

অন্ধকারের মধ্যে সামান্য ফ্ল্যাশের আলোয় ক্রীতিকের ভ'য়ংকর অ'গ্নিমূর্তি দেখে ভ'য়ার্ত ঢোক গিললো অরু, গলায় কথা আটকে আসছে, তবুও আমতা আমতা করে রিনরিনিয়ে বললো,

--- ক..ককি করছেন? ভ..ভ'য় লাগছে আমার।

--- হাউ ডেয়ার ইউ??

একটা কোল্ড আর ডমিনেটিং কন্ঠস্বর কানে এলো অরুর। অজানা অধিকার বোধ উপচে পড়ছে প্রত্যেকটা শব্দে।

--- ককি করেছি? ভ'য়ে ভ'য়ে শুধায় অরু।

ক্রীতিক এগিয়ে এসে, অরুর ছ্যা'কা লাগা লালচে হাতটা শ'ক্ত করে চেঁ'পে ধরলো।

এবার ভীষ'ণ ব্যা'থা পেলো অরু, ব্যা'থায় অনেকটা জোড়েই চেঁচিয়ে উঠলো,

--- আহহ... লাগছে আমার।

ক্রীতিক থামলো না, ওই হাতটা ধরেই টা'নতে টান'তে ওয়াশরুমে নিয়ে ট্যাপ ছেড়ে দিয়ে শাওয়ার জেল লাগিয়ে ইচ্ছে মতো ঘ'সতে থাকলো অরুর দ'গদগে পো'ড়া হাতটাকে।

বিস্ময়,আ'তংক আর ব্যা'থায় জর্জরিত অরুর আপনা আপনি হাত চলে গেলো মুখের উপর।

ঠোঁট কা'মড়ে কা'ন্না আটকে বললো,

--- কি করছেন আপনি??কোন সাভাবিক মানুষ কি এতোটা ব্যা'থা দিতে পারে??

খুব মনোযোগ দিয়ে ময়লা পরিষ্কার করার মতোই অরুর হাতটাকে ঘসতে ঘসতে ক্রীতিক জবাব দেয়,

--- আমি সাভাবিক তোকে কে বললো?

একেতো পু'ড়ে চাম'ড়া নরম হয়ে আছে, তারউপর এতোক্ষণ যাবত একনাগাড়ে ঘষামাজার ফলে হয়তো সেটাও উঠে গিয়ে রক্তা'ক্ত হয়ে গিয়েছে, তাইতো অরুর কা'ন্নায় এবার জোয়ার এলো।

কাঁদ'তে কাঁদ'তে নিচে বসে পরলো ও।

---- পারছি না ছাড়ুন দয়া করে, ব্যাথায় কলিজা ছি'ড়ে যাচ্ছে।

এবার ক্রীতিক ওর হাত ছে'ড়ে দিলো, অতঃপর ফ্যানায় ভর্তি হাতটা দুগালে চে'পে ধরে বললো,

----নেক্সট টাইম এমন করলে শুধু হাত নয়,বাথটাবে ছু'ড়ে ফেলে পুরো শ'রীর ধুয়ে তবেই ছা'ড়বো, আই রিপিট পুরো শ'রীর।

কান্নারত অরু বলে,

--- আমি করেছিটা কি??

ক্রীতিক একটা বিরক্তি মাখা হাসি ছুড়লো অরুর পানে, তারপর দাঁতেদাঁত চেপে হিসহিসিয়ে বললো,

--- ইন ফিউচার, ডোন্ট ডেয়ার টু টাচ এনি ওয়ান এলস।

*****************************************

আজ সারা রাতেও হয়তো বিদ্যুৎ আসবে না, না এখনো অনু ফিরেছে, একেতো অনুর জন্য চিন্তায় মাথাটা ফেটে যাচ্ছে, তারউপর সন্ধ্যা রাতের ঘটে যাওয়া অমিমাংশিত ঘটনা গুলো মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে বারংবার।

বিছানায় আধশোয়া হয়ে নিজের ব্যা'ন্ডেজ প্যাচাঁনো হাতটার দিকে উদাসীন হয়ে তাকিয়ে আছে অরু। তখন ক্রীতিক ব্যা'থা তো দিয়েছিল ঠিকই আবার নিজ হাতে মলম লাগিয়ে ব্যান্ডেজও করে রেখে গিয়েছে। এই লোককে ঠিক কি বলবে ভেবে পায়না ও পাগ'ল নাকি ভিনগ্রহ বাসিন্দা?

অরুর আনমনা ভাবনার ছেদ ঘটে দরজায় কড়ানাড়ার আওয়াজ পেয়ে। এভাবে অপরিচিতদের মতো নক করায় অবাক হয় অরু নিশ্চয়ই আপা নয়। তাই একটু ঠিক ঠাক হয়ে বসে বললো,

--- আসুন।

সঙ্গে সঙ্গে দরজা ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করে এলিসা। এলিসা মেয়ে, তবে চলন বলন কোনোটাই মেয়েদের মতো নয়, ওর পড়নে সেটে আছে কালো স্কিনি প্যান্ট আর ক্রপ টপ তার উপর শীতের ওভারকোর্ট। বব কাঁটা চুল গুলো গাড়ো বাদামি রঙে রাঙানো, সুন্দর ঠোঁট গুলোতে ম্যাট ন্যুড শেডের লিপস্টিকের আস্তরন।এক ঝলক দেখলে মনে হবে মাত্রই টিভি থেকে বেড়িয়ে এসেছে সে। এলিসার কৃত্রিম সৌন্দর্যের কাছে, অরুর অপার্থিব সৌন্দর্যকে নিছকই সাদামাটা আর ফিকে লাগছে। অরুর নিজেরও কেমন যেন সংকোচ বোধ হচ্ছিল।

কিন্তু এলিসার সম্মোহনী হাসি,আর স্নেহ জড়ানো কন্ঠস্বরে কয়েকমূহুর্তের মধ্যেই তা উবে গেলো। পাছে তৈরি হলো ভিন্নধারনা, এলিসা মেয়েটা মোটেই খারাপ না।

এলিসা রুমে ঢুকেই প্রথমে অরুর হাতটা সাবধানে উল্টে পাল্টে দেখলো তারপর বললো,

--- ব্যান্ডেজ করার মতো তো অতোটাও লাগেনি, তাহলে ব্যান্ডেজ কে করলো??

অরুর কথা ঘুরিয়ে বললো,

---আমিই করেছি, যাতে তারাতাড়ি কমে যায় ব্যাথা।

এলিসা শব্দ করে হেসে বললো,

---তোমার অনেক বুদ্ধি বুঝেছি।

এলিসার কথায় অরু হেসে দেয়।তারপর বলে

-- আমি জানি, আপনি মজা করছেন।

--- এ্যাই মেয়ে,আপনি করে কাকে বলছো? আমি ক্রীতিকের বেস্ট ফ্রেন্ড হতে পারি,কিন্তু আমি এখনো সুইট সিক্সটিন, আমাকে তুমি করে বলবে বুঝলে?

--- ঠিকাছে আপু, বলবো।কিন্তু বেস্ট ফ্রেন্ড বানানোর জন্য আর মানুষ পেলেনা? ওই হনুমানটাকে, না মানে ক্রীতিক ভাইয়াকে?

এলিসা ঠোঁটের কোনে হাসি নিয়ে জবাব দেয়,

--- মানুষ হিসেবে ক্রীতিক কেমন আমার জানা নেই অরু, তবে ফ্রেন্ড হিসেবে ওদের তিনজনারই জুড়ি মেলা ভার।আমি খুব লাকি জানো ?ওদের মতো বন্ধু পেয়েছি। আমাদের চারজনার কারোরই টাকা পয়সা কিংবা অর্থবিত্তের অভাব নেই, আমাদের যেই জিনিসের সবথেকে অভাব তা হলো একটা পরিবারের। ,সার্থহীন উষ্ণ ভালোবাসার মানুষের অভাব।আমরা চারজনই ভালোবাসার কাঙাল, পরিবারের কাঙাল। তাই হয়তো উপরওয়ালা আমাদেরকে বন্ধুত্বের মতো সুন্দর একটা সম্পর্কে বেধে দিয়েছেন।

এলিসার কথার পাছে অরু নিঃশব্দে ভারী নিঃশ্বাস নেয়।

একটু থেমে এলিসা আবারও বললো,

---অর্নব আর সায়রের তাও বাবা মা নেই। কিন্তু আমার ক্রীতিকের তো থেকেও নেই।

অরু মেকি হেসে জানার ভান ধরে বললো,

--- না আপু ভুল ভাবছেন, ক্রীতিক ভাইয়ারও বাবা মা কেউ নেই।

এলিসা অবাক চোখে অরুর পানে চাইলো, মনে মনে ভাবলো,

--- তারমানে এই মেয়ে কিছুই জানে না।

---কি হলো আপু কিছু ভুল বললাম?

--- ক্রীতিকের মা বেঁচে আছে অরু, সি ইজ কম্পলিটলি অ্যালাইভ, এন্ড লিভিং উইথ অ্যানাদার ম্যান।

এলিসার কথায় অরু যেন আকাশ থেকে পরলো, তাহলে কি এতোদিন ধরে ও ভুল জানতো, ক্রীতিকের মা মা'রা যায়নি?

এলিসা আরও খানিকটা জটলা খুলবে,তাঁর আগেই ক্যাথলিনের বিকট চি'ৎকার শুনে ছুটে বেরিয়ে যায় এলিসা। পেছন পেছন এগিয়ে যায় অরুও।

হলরুমের মধ্যিখানে বসে থরথর করে কাঁ'পছে ক্যাথলিন। ওকে চারদিক থেকে ঘিরে রেখে অর্নব আর সায়র, ক্রীতিক সেদিকে তাকিয়েই কাউচে বসে বসে আপেল খাচ্ছে।

এলিসা দোতলার করিডোর দিয়ে একনজর পরখ করে দৌড়ে নিচে নামলো। অরু সেখানেই দাড়িয়ে সবটা বোঝার চেষ্টা করলো।

---কি হলো হটাৎ ক্যাথলিনের?

নিচে গিয়ে এলিসা জিজ্ঞেস করতেই অর্নব জানায়, ক্যাথলিন হাতে ইলেক'ট্রি'ক শ:ক খেয়েছে। হাতের অবস্থা বেগতিক। সেই সাথে পুরো শরীর থরথরিয়ে কাঁপছে।

এলিসা বললো,

----কি করে হলো এসব ক্যাথ?ঘরে তো বিদ্যুৎই নেই।

ক্যাথলিন কাঁপা কাঁপা গলায় বললো, আমি জানিনা, জেকে ভাইয়া বলেছিল স্প্রেসো পান করবে, সেটা বানাতেই কফি মেকারের কাছে এসেছিলাম। তখনই.... কথাটুকু শেষ করে আবারও হুহু করে কা'ন্নায় ভেঙে পরে ক্যাথলিন।

---জেকে তুই আবার কবে থেকে স্প্রেসো খাস? আগেতো দেখিনি।

নিঃসংকোচে আপেলে কাম'ড় বসাতে বসাতে ক্রীতিক বলে,

--- আরে ইয়ার ঠান্ডার মধ্যে একটু তেঁতো কফি খেতে ইচ্ছে করছিল, তাছাড়া আমিতো আর ক্যাথলিনকে বলিনি, ও নিজেই বললো। আমি ভাবলাম কফি মেকারটা তো এনালগ, ব্যাটারীতে চলে রি:স্কে'র তো কিছুই নেই।

এলিসা আড়ালে নিঃশ্বাস ছেড়ে কিচেন কাউন্টারের দিকে এগিয়ে গিয়ে বললো,

---কোন কফি মেকার আমি দেখিতো?

সঙ্গে সঙ্গে ওর হাত টেনে ধরে অর্নব,সচকিত হয়ে বলে,

--- একদম না,তোর কিছু হয়ে গেলে আমি শেষ।

--- আশ্চর্য শেষ মানে? তাছাড়া আমার হবেটা কি?

---- তোকে নিয়ে আমি কোন রি'স্ক নেবোনা ব্যাস।

এলিসা নিজের দিকে হাত টেনে বলে,

--- অর্নব হাত ছাড়।

---না ছাড়বো না।

অর্নব এই মূহুর্তে খুবই সিরিয়াস, অন্যসময় হলে হয়তো এলিসার কথাই শুনতো।

সায়র এদের সিনম্যাটিক কাহিনি দেখে বিরক্তি প্রকাশ করে বললো,

--- গাইস প্লিজ, গভীর রাত হয়ে যাচ্ছে, ক্যাথলিন বেচারীকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে চল, ওকে চেকআপ করাতে হবে।

*****************************************

ওরা সবাই চলে গিয়েছে কয়েকমূহর্ত্ব মাত্র। অরু এখনো করিডোরেই দাড়িয়ে আছে। ক্রীতিক ওকে লক্ষ না করেই বাইরে গিয়ে মেইন সুইচবোর্ডটা অন করে দিয়ে আসে। সঙ্গে সঙ্গে আলোকিত হয়ে ওঠে মাঝারি সাইজের অত্যাধুনিক হল রুমের চারিপাশ।

অরু, ভ্রু কুঞ্চিত করে মনে মনে আওড়ালো,

--- তার মানে বি'দ্যুৎ অনেক আগেই এসেছে, উনিই সুইস বোর্ড অফ করে রেখেছিলেন, কিন্তু কেন???

■■■■■■■■■■■■■■■■■■■■■■■

#পর্বঃ০৯

ভোর হতে না হতেই গোল্ডেন গেইট ব্রীজ দিয়ে ছুটছে গাড়ির বহর। কেবল গাড়িই নয় ফরেইনার টুরিস্ট থেকে শুরু করে স্থানীয় পথচারী, সবাই গন্তব্যের উদ্দেশ্যে পা চালাচ্ছে আপন গতিতে। সানফ্রান্সিসকোর ছোট্ট শহরতলী ছাড়িয়ে মূল শহরে পা রাখলেই কেবল মনে হয় যান্ত্রিক গাড়ি ছাড়া মানুষ পায়ে হেটেও পথ চলে। এছাড়া যায়গাটা টুরিজম এরিয়া হওয়ায় সর্বক্ষনই লোকে লোকারন্য হয়ে থাকে।

ছাঁদ খোলা মার্সিডিজে বসে দিকভ্রান্তের মতোই এদিক ওদিক তাকিয়ে, মানুষ দেখছে অরু। যেন হাজার বছর পরে এই প্রানীকূলের দেখা পেলো সে। আর এমনটা হবে নাই'বা কেন?গত একমাস ধরে ওই নির্জন, শুনশান বাড়িতে থেকে থেকে বিরক্তি ধরে গিয়েছে ওর। ঘরকুনো হওয়ার দরুন টিকতে পেরেছে বৈকি অন্য কেউ হলে আলবাত পাগল বনে যেত।

তবে অরুও এই মূহুর্তে পা'গলের মতোই উদ্ভট চাহনি ফেলে চারদিকে ঘুরে ঘুরে দেখছে। যেন পৃথিবীর মাটিতে আজই ওর প্রথম দিন।

অরুর কাহিনি দেখে ক্রীতিক হুট করে গাড়ির বাটনে প্রেস করে ছাঁদটা তুলে দিলো।

ক্রীতিকের এমন কান্ডে অরু মুখ কালো করে ওর পানে চাইলো।

সুন্দর ফর্সা চেহারার সাথে এটে থাকা তীক্ষ্ণ চোয়ালটা শ'ক্ত হয়ে আছে বরাবরের মতোই, চোখের সৌন্দর্যে সামিল হয়ে আছে কালোরঙা চৌকো রোদচশমাটা। রাস্তার দিকে একধ্যানে তাকিয়ে থাকা থেকে শুরু করে একহাত দিয়ে ড্রাইভ করা প্রত্যেকটা কাজেই উপচে পরছে নজর কারা আভিজাত্য আর পুরুষত্ব। এই পুরুষের প্রতি যে কেউ এক দেখায় ফিদা হতে বাধ্য, তবে তার আচার আচরণ এমন অ'মানবিক কেন? ভাবছে অরু। কারন এই বাহ্যিক সৌন্দর্য্যের সাথে ভেতরের মানুষটার যে কোনোরূপ মিলই খুজে পায়না ও।

--- আমাকে দেখা বন্ধ কর, আমি ডিসট্রাক্ট হচ্ছি।

তৎক্ষনাৎ চোখ নামিয়ে নিজের হাতের দিকে চাইলো অরু। সফেদ রঙা ব্যা'ন্ডেজ হাতে নিয়েই আজ প্রথম দিন ভার্সিটিতে যাচ্ছে ও। আর এই ব্যান্ডেজ করা ক্ষ'তটা অন্য কারও নয় বরং ওর পাশের মানুষটার দ্বারাই তৈরি।

যদিও ক্রীতিক সবসময় গোমড়া মুখেই থাকে তবুও রাতের সেই ভ'য়ানক, কোল্ডহার্ট আর অ'গ্নিদৃষ্টিরত ক্রীতিকের সাথে এখন কার ক্রীতিকের দিন রাত তফাৎ।

আজ প্রথম দিন তাই ক্রীতিকের সাথেই যাওয়ার সুযোগ পেয়েছে অরু,কারণ ক্রীতিক ওই একই ভার্সিটির প্রফেসর। তবে ক্রীতিক এটাও সাফসাফ জানিয়ে দিয়েছে আজই ফার্স্ট আর আজই লাস্ট এরপর আর ও কখনো অরুকে নিয়ে যেতে পারবে না। তার বদলে অরুর জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে একটা ছোট্ট সাইজের প্যাডেল বাইক বা সাইকেল।

সফেদ ব্যা'ন্ডেজটা নখ দিয়ে খুঁটতে খুঁটতেই অরু যখন নানান অযাচিত চিন্তায় বিভোর , ঠিক তখনই আপন সুরে বেজে উঠলো ওর মুঠো ফোনটা। কোন এক কারণে অনেকটা তরিঘরি করেই ফোনটা কানে তুললো অরু,ওপাশের ব্যাক্তিকে কিছু বলার অবকাশ না দিয়েই অরু বললো,

--- হ্যালো নিলীমা, অবশেষে ফোন করলি তুই, জানিস কাল সারারাত তোকে ফোনে কতবার ট্রাই করেছি, একবারও কল তুলিস নি তুই।

অরু যতটা উচ্ছ্বাস নিয়ে কথাগুলো বললো, নিলীমার কন্ঠস্বর ছিলো ততটাই নির্জীব আর ক্লান্ত ও বললো,

--- আমি বুঝতে পারিনি এটা তুই, তাছাড়া কাল সারারাত হসপিটালে ছিলাম ফোন হাতের কাছে ছিলোনা।

অরু জিজ্ঞেস করে,

--- কেন কি হয়েছে? তুই ঠিক আছিস??

--- হ্যা'রে আমি ঠিকই আছি, কিন্তু তিথি।

তিথি নামটা শোনা মাত্রই অরুর মনে পরে যায় সেদিনের তিথির করা অজস্র অ'পমানের কথা, পাছে এসে ভর করে তিথির প্রতি একরাশ ঘৃ'ণা আর বির'ক্তি। তবুও কথা আগাতে জিভ দিয়ে সামান্য ঠোঁট ভিজিয়ে অরু শুধায়,

--- কি হয়েছে?

নিলীমা কাঁ'দো কাঁ'দো গলায় বলে,

---জানিনা অরু, হুট করে আমাদের তিথির মতো চঞ্চল হাসি খুশি মেয়েটার সাথেই এরকমটা কেন হলো।

--- কি হয়েছে সেটাতো বল?

--- মাত্র একদিনে ওর সাথে অনেক কিছু হয়েছে অরু, কিছু তুচ্ছ কারনে ভার্সিটি তিথির ছাত্রত্ব বাতিল করে দিয়েছে, আর ঠিক সেদিনই হুট করে ওর বাবার এতোবড় পজিশনের জবটাও চলে গিয়েছে, একদিনের ব্যাবধানে ওর ক্যারিয়ার ওর বাবার ক্যারিয়ার সব শেষ হয়ে গিয়েছে, তাহলে ওর মনের অবস্থাটা একটাবার ভাব।আর সব থেকে আশ্চর্য ব্যাপার হলো তিথির বাবা জেকে গ্রুপের মার্কেটিং ডিমার্টমেন্টের কর্মকর্তা ছিলেন, বহু বছরের ক্যারিয়ার হুট করেই শেষ। বলতে বলতে অনেকটা কা'ন্নাই করে দেয় নিলীমা।

--- তাহলে হসপিটালে কেন ছিলি?

---- এতো গুলো শকট একসাথে নিতে পারেন নি তিথির আম্মু,এসব ঘটনায় কাল রাতে হুট করেই উনি স্টো'ক করে বসেন ,তাই সেখানেই ছিলাম সারারাত ।

কথাগুলো শুনে অরুরও খারাপ লেগেছে, কিন্তু ওর তো এখানে কিছুই করার নেই, তাই অরু চাঁপা নিঃশ্বাস ছেড়ে জিজ্ঞেস করল ,

--- আন্টি এখন কেমন আছেন?

--- হুম, আগের চেয়ে বেটার।এখন বল তোর খবর কি অরু?

নিলীমাকে তৎক্ষনাৎ থামিয়ে দিয়ে অরু বলে,

--- আমার কথা পরে বলবো ক্ষন,তার আগে তুই আমাকে বল নিখিল ভাই কোন ভার্সিটিতে এডমিশন হয়েছে নিলীমা?

অরুর মুখ থেকে কথাটা বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গাড়িতে আকস্মিক ব্রেক কষলো ক্রীতিক।

হঠাৎ করে এমন হওয়াতে কম্পিত হয়ে উঠলো অরুর বক্ষপিঞ্জর। সামনের দিকে হুমরি খেয়ে পরতে পরতেও যেন বেঁচে গেলো ও। আ'তংকে চোখ দুটো বড়বড় করে ঘুরে তাকালো ক্রীতিকের পানে। তখনও মোবাইল ফোনটা অরুর কানেই ছিল।

তবে খুব বেশিক্ষণ সেটা আর কানে স্থীর রইলো না, অরু কিছু বুঝে ওঠার আগেই ফোনটাকে অরুর কান থেকে ছি'নিয়ে নিয়ে সেটাকে সজোরে মাঝরাস্তায় ছু'ড়ে মা'রে ক্রীতিক। কয়েক মূহুর্তের মধ্যে সুন্দর চকচকে হ্যালো কিটি কাভার দিয়ে মোড়ানো ফোনটা পরিনত হয় ধ্বংসাবশেষ এ।

নিজের শখের ফোনের এমন করুন দশা দেখে আঁত'কে উঠলো অরু, হিং'স্র বা'ঘিনীর ন্যায় দৃষ্টিপাত করলো ক্রীতিকের পানে। তবে মুখ দিয়ে কিছু বলার অবকাশ দিলোনা ক্রীতিক,

বরং তার আগেই গাড়ির দরজা খুলে গ'র্জে উঠে বললো

---গেট আউট।

অরু চমকে উঠে বললো,

-- কি বলছেন, এই মাঝ রাস্তায় কোথায় নামবো আমি??

--- গেট আউট,

ক্রীতিক একই বাক্য পুনরায় উচ্চারণ করে,একপ্রকার হাত ধরে ঠেলেই মাঝরাস্তায় নামিয়ে দিলো অরুকে। তারপর ওয়ালেট থেকে একটা একশো ডলারের নোট বাড়িয়ে দিয়ে বললো,

---সামনেই বাস স্টপেজ, নেক্সট বাস সোজা ভার্সিটির সামনে গিয়ে থামবে।গো এহেইড।

অরু বেচারি না পারতে টাকা'টা হাতে নিলো।

ক্রীতিক তৎক্ষনাৎ ঠা'স করে গাড়ির দরজা বন্ধ করে দিয়ে গাড়ি স্টার্ট দেয়।

যাওয়ার আগে নিজের শরীরের কালো রঙের কোর্টটা খুলে জানালা দিয়ে ছু'ড়ে মা'রে অরুর মুখের উপর।

কোর্টটাকে উল্টে পাল্টে দেখে ক্রীতিকের গাড়ির দিকে প্রশ্ন সূচক দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো অরু।

ক্রীতিক যেতে যেতে লুকিং গ্লাসে তাকিয়ে বলে,

---হাতে নিয়ে সং এর মতো দাড়িয়ে থাকার জন্য দেয়নি, গায়ে পরতে দিয়েছি।

ব্যাস এইটুকুই তারপর শাঁই শাঁই করে হাজারো অচেনা গাড়ির ভিরে হারিয়ে গেলো একমাত্র চেনা মার্সিডিজটা।

অজ্ঞাত অরু ভাবলেশহীন চোখে সেদিকেই তাকিয়ে রইলো খানিকক্ষণ , মাথায় তখন একটাই প্রশ্ন খেলে গেলো ওর, ক্রীতিক কি আদৌও মানুষের কাতারে পরে?

*****************************************

মনের মাঝে একরাশ হতাশা আর ক'ষ্ট নিয়ে কোন মতে ভার্সিটিতে এসেছে অরু। শীত নিবারক হিসেবে গায়ে জড়িয়ে রেখেছে ক্রীতিকের ব্র্যান্ডেট ব্ল্যাক কোর্ট।

গেইট দিয়ে ক্যাম্পাসে ঢুকতে ঢুকতে অরু ভাবছে,

এভাবে ভে'ঙে পরলে চলবে না,যত যাই হোক পড়াশোনাটা চালিয়ে যেতেই হবে তাকে। তবে সে ভাবনারা বেশিদূর এগোতে পারলোনা। নিজেকে নিজেই মোটিভেশন দিতে দিতে কখন যে হাজারও অচেনা অপরিচিত মুখের ভীরে কাঙ্খিত, পরিচিত,শ্যাম পুরুষের মুখ খানা চোখের সামনে চলে এলো, সে কথা ঠাওর করতে পারলো না অরু। ঠিক আগের মতোই ক্যাম্পাসের প্রসস্থ সিঁড়িতে আসন পেতে কানে হেড ফোন লাগিয়ে বই পড়ছে সে।হঠাৎ করেই কি জানি কি হয়ে গেলো, ছলাৎ ছলাৎ ঢেউ তুলে জোয়ার আসার মতোই বানভাসি হলো মনের নদী,মুখ থেকে অজান্তেই বেরিয়ে এলো খুব পরিচিত সেই চেনা নাম,

--- নিখিল ভাই?

চারিদিকে কে আছে কে নেই কিছুই আর চোখে পরলো না অরুর,বরং নিস্পলক হয়ে দ্রুত পায়ে এগিয়ে যেতে লাগলো সেই চেনা মুখের মানুষটির দিকে। তবে পুরো পুরি কাছে যাওয়া হলোনা,তার আগেই নিখিলের কাছে পৌঁছে গেলো ভিনদেশী দুজন সুন্দরী আগন্তুক রমনী। কয়েকমূহুর্তের মধ্যেই তাদের সাথে হাসি ঠাট্টায় মাতোয়ারা হয়ে উঠলেন নিখিল। তাই অরুর আর সেদিকে পা বাড়ানোর সাহস হলোনা, বরং দূর থেকেই নিখিলের হাস্যোজ্জল মুখের পানে চেয়ে শুধালো,

--- আপনি ভালো আছেন নিখিল ভাই?

অরুর থেকে কয়েক মিটার দূরত্বে দাড়িয়ে এই পুরো ব্যাপারটা দু'হাত মু'ঠিবদ্ধ করে স্ক্যান করে নিলো আরেকজন। তবে সেটা অন্য কেউ নয়,অরুতে ভীষন ভাবে আসক্ত এক ছ'ন্নছাড়া পুরুষ মি.জায়ান ক্রীতিক চৌধুরী।

অরু বাসে আসলেও অরুর পরেই ভার্সিটিতে প্রবেশ করেছে ক্রীতিক,কারণ ও গাড়ি নিয়ে বাসের পেছন পেছনই এসেছে। তারপর ক্যাম্পাসে ঢুকতেই এই কাহিনি। তবে আশ্চর্যের বিষয় হলো এই মূহুর্তে ক্রীতিকের চোখে মুখে কোন গম্ভীরতার লেসমাত্র নেই। বরং ঠোঁটের কোনে আটকে আছে একটা রহস্য জনক কপট বাঁকা হাসি। কপট হাসিটা ধরে রেখেই ক্রীতিক অস্ফুটে বলে,

--- আমার বোকা পাখি। সত্যিটা জানলে কতোই না ক'ষ্ট হবে তোর জান।বাট আ'ম ওকে উইথ দ্যাট। কজ তুই শুধু আমার।

*****************************************

অরু আজ কার মুখ দেখে ঘুম থেকে উঠেছিল কে জানে? প্রথম দিন ভার্সিটিতে আসার উদ্দেশ্যে বের হওয়ার পর থেকেই একটার পর একটা ঝামেলা লেগেই আছে পেছনে। প্রথমে ক্রীতিকের মতো ব'দমেজাজি লোকের সাথে বের হতে হলো, অতঃপর রাস্তায় বিশাল অ'ঘটন, একটু আগে নিখিল ভাইয়ের সাথে দেখা হয়েও হলোনা, আর এখন ক্লাস থেকেই বের করে দিলো ক্রীতিক ওকে।

এখন অবশ্য দোষটা ক্রীতিকের নয় অরুরই বেশি ছিলো। ক্লাসের মধ্যে বাইরে উঁকি ঝুঁকি দিয়ে নিখিল ভাইকে খুজতে গিয়েই বেজেছে বিপত্তি। ভরা ক্লাসে সবার সামনে ক্রীতিক এক রাম ধ'মক দিয়ে ক্লাস থেকে বের করে দিয়েছে অরুকে। কিন্তু অরু এটা ভেবে পায়না, বাংলা ডিপার্টমেন্ট থেকে এসে ইকোনমিকস কে নেয়??

কেনইবা ক্রীতিক বেছে বেছে এই বিদঘু'টে সাবজেক্টেই ভর্তি করালো ওকে? এটা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ফরেইনার স্টুডেন্টদের অভাব নেই এখানে,সেই সাথে সাবজেক্টেরও।তাহলে ইকোনমিকসই কেন???

এখন তো তিনদিন অন্তর অন্তর মাইক্রোকোনমিক্স ক্লাসে ক্রীতিকের মুখোমুখি হতে হবে, সাথে হাজারটা ফ্রী অ'পমান তো আছেই।

ক্লাসের বিপরীত করিডোরের মাঝখানে, উঁচু থেকে শুরু করে সবুজ ঘাস অবধি বিছানো সিঁড়িতে বসে বসে অরুর মনের সাথে মস্তিস্ক যখন বিশাল দ্বন্দে লিপ্ত ঠিক তখনই ল্যাপটপ ব্যাগ হাতে আগমন ঘটে নিখিলের।

--- অরোরা না?

পরিচিত কন্ঠস্বর শুনে হকচকিয়ে পেছনে চাইলো অরু। দেখলো গালের মাঝে টোল পরা হাসি মুখ নিয়ে দাড়িয়ে আছে নিখিল ভাই। এতোদূর এসে, বিদেশের মাটিতে নিখিল ভাইকে দেখতে পেয়ে অরুর ভীষণ আনন্দ হলো। ও বসা থেকে উঠে দাড়িয়ে দু'কদম এগিয়ে গেলো নিখিলের কাছে, তবে আগ বাড়িয়ে কথা বলতে পারলো না আগের মতো জড়তাটা রয়েই গিয়েছে।

এবার নিখিলই প্রশ্ন করলো প্রথমে,

--- অরোরা তুমি হঠাৎ এখানে? জানো ওই যে দেখছো তিনতলার ল্যাব ওখান থেকে তোমাকে দেখেই ছুটে এসেছি আমি।বারবার মনে হচ্ছিলো আমি ঠিক দেখছি তো?

মাত্রাতিরিক্ত খুশিতে অরুর কথা জড়িয়ে যাচ্ছে, তবুও খানিকটা কষ্ট করে মিনমিনিয়ে জবাব দিলো,

--- জ্বি আমি এখানে, ইকোনমিকস ডিপার্টমেন্ট ফার্স্ট ইয়ার।

সঙ্গে সঙ্গে আবারও প্রশ্ন করে নিখিল,

--- আচ্ছা অরোরা,তিথি কেমন আছে? ওর ফোন কেন বন্ধ বলতে পারবে??

তিথিকে নিয়ে নিখিলের এতোবেশি কৌতুহল আর উদ্বেগ দেখে ফাটা বেলুনের মতোই চুপসে গেলো অরুর হাস্যোজ্জল মুখটা।

অন্যদিকে,ক্লাসের বিশাল থাই লাগানো জানালার ফাঁক দিয়ে এক পলক ওদের দিকে চাইলো ক্রীতিক, অতঃপর অর্নব কে কল করে নরম সুরে, একদম সফ্ট টোন যাকে বলে, সেভাবেই বললো,

--- আমাদের ভার্সিটির সি'সিটিভি কন্ট্রোল সিস্টেমটা হ্যা'ক করতে হবে দোস্ত। বেশি না ওয়ানলি ফর ফাইভ মিনিটস।

*****************************************

তিথি সম্মন্ধে কথা বলতে মোটেই আগ্রহী নয় অরু। কেন যেন ভেতর থেকেই আসছে না কোন কথা, কি বলবে তাহলে ও??

কিন্তু নিখিল দ্বিতীয়বার আবারও একই প্রশ্ন করলো ওকে,

--- কি হলো অরোরা, জানো তিথি সম্মন্ধে কিছু?

অরুর মন বলছে, আমি এতদূর কিভাবে আসলাম, কেন আসলাম, সেসব কথা আপনার একটা বারও জানতে ইচ্ছা করলো না নিখিল ভাই? তাছাড়া আপনি হঠাৎ তিথিকে নিয়েই বা কেন এতো আগ্রহী?

--- হ্যালো,অরোরা, কি ভাবছো এতো?

নিখিল হাত নাড়িয়ে ইশারা করতেই সম্বিত ফিরে পেলো অরু। এদিক ওদিক মাথা নাড়িয়ে কিছু একটা বলতে যাবে তার আগেই ফোন চলে আসে নিখিলের।

ওপাশ থেকে কি বললো, কে জানে, নিখিল আর এক মূহুর্তের জন্যও দাঁড়ালো না ওখানে বরং দ্রুত পায়ে ছুটতে লাগলো তিনতলার ল্যাব রুমের উদ্দেশ্যে।

অযাচিত অরু পেছন থেকেই প্রশ্ন ছুড়লো,

--- কি হয়েছে নিখিল ভাই, এনিথিং রং?

নিখিল যেতে যেতে জবাব দিলো

--- সাম হাউ ক্যা'মিক্যা'ল পরে গিয়ে আমার সব রিচার্জ রিপোর্ট গুলো পু'ড়ে গিয়েছে।

এমন দু'র্ঘটনার কথা শুনে অজান্তেই মুখে হাত চলে গেলো অরুর। বিরবিরিয়ে নিজেকেই নিজে প্রশ্ন ছুড়লো,

--- আজ হচ্ছেটা কি এসব?

ক্লাস শেষে অরুকে এভাবে থ হয়ে দাড়িয়ে থাকতে দেখে ওর কাছে এগিয়ে আসে উজ্জ্বল শ্যাম বর্নের মোটা ফ্রেমের চশমা পরিহিত একটি মেয়ে। কারও উপস্থিতি টের পেয়ে অরু পেছনে চাইলে মেয়েটা হাত বাড়িয়ে বলে,

---হ্যালো আ'ম সায়নী, সায়নী মুখার্জি। আ'ম ফ্রম ইন্ডিয়া।

দুর দেশে হাজারো সাদা চামড়া ওয়ালা বিদেশি মানুষের ভীরে প্রতিবেশি দেশের কাউকে দেখতে পাওয়াটা পাশের বাড়ির প্রতিবেশির মুখ দেখতে পাওয়ার মতোই অনেকটা। অরুরও সে-রকমই ঠেকলো, ও জলদি সায়নীর হাতে হাত মিলিয়ে বললো,

--- আমি অরোরা শেখ, আই মিন অরু।

--- অরু? হাউ সুইট।

তারপর আঙুল দিয়ে ইশারা করে সায়নী বলে চলো ক্যান্টিনে যাই, তোমাকে ভার্সিটি ক্যান্টিনের সবচেয়ে বেস্ট খাবারটা টেস্ট করাবো আজ, লেটস গো।

অরু সম্মোহনী হাসি দিয়ে বললো,

--- আচ্ছা চলো।

নরম ঘাসের আস্তরণ মাড়িয়ে পায়ে পায়ে এগিয়ে যাচ্ছে ওরা দুজন, যেতে যেতে সায়নী শুধায়,

--- আচ্ছা আজ জেকে স্যার তোমাকে ওভাবে বক'লো কেন বলোতো? উনি সাধারণত কারোর সাথেই আনপ্রফেশনাল আচরণ করেন না এটলিস্ট আমিতো দেখিনি।

অরু ঠোঁট উল্টে বললো,

--- কি জানি।

তবে মনে মনে বললো,

---তোমার জেকে স্যারের বকু'নি খেয়ে আমার অভ্যেস আছে।

সায়নী প্রতিউত্তরে উৎকন্ঠা নিয়ে বললো,

--- জানো? জেকে স্যার ইজ আ ভেরি গুড রাইডার। ভার্সিটিতে তাকে যতোটা কুল লাগে, বাইক রাইডার জেকে স্যারকে ঠিক ততটাই ডেস্পারেট আর ড্যাসিং মনে হয়। যেন আস্ত একটা চকোলেট বয়।

অরু জানতো যে ক্রীতিক একজন রাইডার তবে সেটা মনিটরের ভিডিও গেইমে। কিন্তু বাস্তবেও যে ক্রীতিক বাইক রাইডিং করে সেটা ওর অজানাই ছিল।তাই চকিতে বলে,

--- কি বলছো তুমি? আমিতো জানতাম না।

সায়নী হাত দিয়ে মাঁছি তাড়ানোর মতো করে বললো,

--- আরে তুমি কি করে জানবে? নতুন এসেছো না।দাঁড়াও আমার কাছে টিকেট আছে।

এই বলে ব্যাগ থেকে দুইটা টিকেট বের করে একটা অরুর হাতে ধরিয়ে দিয়ে সায়নী বললো,

--- আগামী কাল ভার্সিটির হান্ড্রেড ইয়ার সিরিমনি, তাই কোন ক্লাস নেই, সারাদিন কোন না কোন প্রোগ্রাম হবে। তারপরের দিনই জেকে স্যারের রাইডিং ম্যাচ, টিকেটটা রাখো আমি তোমাকে সাথে করে নিয়ে যাবো, কেমন?

অরু হ্যা না কিছুই বললো না, সায়নী বলার অপেক্ষাও করলো না , অনেকটা অধিকার খাটিয়েই ওর ব্যাগে টিকেটটা ঢুকিয়ে দিলো।

*****************************************

এদেশে সন্ধা হওয়ার জন্য খুব বেশি সময়ের প্রয়োজন পরে না, বিকেল চারটার পরে এমনিতেই সূর্যের হদিস পাওয়া বাহুল্য।

আধারের কালচে আস্তরনে গোধূলির ম'রা রোদ টুকু ঢেকে গিয়েছে বহু আগেই।

আবছা আঁধারের মাঝেই ভার্সিটির গেইট দিয়ে ধীরগতিতে বের হয়েছে অরু।

ওদিকে গেইটের বাইরে গাড়িতে হেলান দিয়ে সটান দাড়িয়ে আছে ক্রীতিক।

আপাতত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে অরুর গতিবেগ গননা করাটাই ওর মোক্ষম কাজ মনে হচ্ছে।

অরু যখন একদম সামনে এসে দাঁড়ায়, ঠিক তখনই ঘড়ি থেকে চোখ সরিয়ে ক্রীতিক বললো,

--- হোয়াই সো লেট?

অরু জবাব দেয়না, উল্টে অবিশ্বাসের নজরে ক্রীতিকের মুখশ্রী পরখ করে মনে মনে বলে,

--- এই গো'মড়া মুখো লোকটা,এতো মেয়েদের ক্রাশ? সব মেয়েরা রাইডার রাইডার করে নাঁচে। কি এমন রাইড করেন উনি?

অরুর এমন খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পরখ করা দেখে ক্রীতিক ভ্রু কুঁচকে বললো,

--- হোয়াট??

অরু লাফিয়ে উঠে দূরত্ব বাড়ালো।

---কি হলো দূরে সরে কেন গেলি? কাছে আয়।

--- ক..কাছে কেন আসবো?

ক্রীতিকের নির্লিপ্ত জবাব,

--- আমি আসতে বলেছি তাই আসবি, আয় বলছি।

প্রতিউত্তরে অরু কিছু বলবে তখনই গেইটের কাছে আগমন ঘটে দা ক্রাশ বয় নিখিলের।

হাতে সাইকেল নিয়ে দাড়িয়ে আছে সে। অরুকে দেখা মাত্রই নিখিল আন্তরিক হেসে বললো,

--- আরে অরোরা, বাসায় যাবে নাকি? চলো তোমায় এগিয়ে দিচ্ছি আমি।

অরু তো খুশিতে বাকরুদ্ধ, এ যেন মেঘ না চাইতে জল। ও ক্রীতিকের মুখের দিকে তাকিয়ে মুখ কাঁচুমাচু করে বললো,

--- ইয়ে.. ভ..ভ..ভাইয়া।আসলে।

-- কি?

তী'রের ছিলার মতো একটা ভ্রু উঁচিয়ে শব্দটা উচ্চারণ করে ক্রীতিক।

অরু বলতে ভ'য় পাচ্ছে ক্রীতিককে, তবে এই মূহুর্তে নিখিলের সাথে বাড়ি যাওয়ার মতো এতো বড় সুযোগটাও হাত ছাড়া করতে চাইছে না মোটেই, তাই বুকের মাঝে অনেকটা সাহস জুগিয়ে বললো,

--- আ..আমি নিখিল ভাইয়ের সাথে যেতে চাই।

---ইয়াহ সিওর।

একেবারে একবলে ছক্কা হাঁকানোর মতোই ভেতরটা ইয়াহু বলে চেঁচিয়ে উঠলো অরুর। খুশিতে এখানেই লাফাতে ইচ্ছে হচ্ছিল ওর।কিন্তু সেটা বড্ড বেমানান দেখায়,তাই চুপচাপ গিয়ে সাইকেলের পেছনে উঠে পরলো ও।

ক্রীতিক সেদিকে অনুভূতি শূন্য দৃষ্টি নিক্ষেপ করে দাড়িয়ে আছে, হাত দিয়ে এমন ভাবে নিজের লং হেয়ার গুলোকে ব্যাক ব্রাশ করছে যেন কিছুই হয়নি।এভরিথিং ইজ অল রাইট।

সাইকেল চলতে শুরু করলেই ক্রীতিক মাটির দিকে তাকিয়ে গুনতে শুরু করলো,

--- ফাইব, ফোর, থ্রী, টু,ওয়ান এন্ড জিরো।

সঙ্গে সঙ্গে রাস্তার মাঝখানে ঝনঝন করে কিছু একটা পরার শব্দ হলো। তৎক্ষনাৎ ওর ঠোঁটে খেলে গেলো অদ্ভুত সেই ক্রুর হাসি।

হুট করেই সাইকেলের টায়ার কিকরে পা'ঞ্চার হয়ে গেলো বুঝে উঠতে পারলো না নিখিল,অবশ্য এই মূহুর্তে সে বোঝার মতো অবস্থাতেও নেই, হাত পা ছিলে ছুলে যা-তা অবস্থা হয়ে গিয়েছে।

অরু নিজেও অনেকটা ব্যা'থা পেয়েছে। ক্রীতিক দ্রুত এগিয়ে এসে ব্যাস্ত ভঙ্গিতে শুধালো,

-- আর ইউ অল রাইট মি. নিখিল?

প্রতিউত্তরে নিখিল আদৌও জবাব দিলো কি দেয়নি, তার জন্য একমূহুর্ত ও অপেক্ষা না করে, ক্রীতিক দ্রুত অরুকে কোলে তুলে নিয়ে যেতে যেতে বলে,

-- ওকে বায়, দেন।

অরুকে কোলে তুলতেই অরু, অবাক হয়ে জোরে জোরে বললো,

--আরে আরে নিখিল ভাই পরে আছে আর আপনি আমাকে নিয়ে চলে যাচ্ছেন?

ক্রীতিক হাঁটতে হাঁটতে জবাব দেয়,

--- হ্যা, কারন আমি তোর নিখিল ভাইয়ের প্রতি একটুও ইন্টারেস্টেড না, আমি যার প্রতি ইন্টারেস্টেড তাকে সাথে করেই নিয়ে যাচ্ছি।

--- কি বললেন? কার প্রতি আগ্রহী?

ক্রীতিক দু'হাতে আগলে রাখা অরুর দিকে তাকিয়ে কটমটিয়ে বললো,

--- বিলিভ মি অরু, তুই আর একটাও বাড়তি কথা বললে, আমি তোকে এখানেই ফেলে চলে যাবো। আর তুই ভালো করেই জানিস আমি যেটা বলি সেটাই করে ছাড়ি। কারণ তোর পেছনে ওয়েস্ট করার মতো বেহুদা টাইম আমার নেই।সো মুখে ফুলস্টপ টান।

ক্রীতিকের কথার পাছে অরুও আর কথা বাড়ানোর সাহস পায়না, মুখে দাড়ি,কমা,ফুলস্টপ সবকিছু টেনে দিয়ে, মাথা এলিয়ে পরে থাকে ক্রীতিকের প্রসস্থ বাহুডোরে।

■■■■■■■■■■■■■■■■■■■■■■■

#পর্বঃ১০

ফকফকে পরিস্কার আকাশ আর রোদ্রজ্জল দিনের আগমনী বার্তা নিয়ে,সূচনা হয়েছে আরও একটি সুন্দর সকালের। আজকের আবহাওয়াটা প্রান জুড়ানোর মতোই সুন্দর ,চারিদিকে তাকালেই কেমন মন ভালো হয়ে যায়। কুসুম গরম সূর্য কীরণ আর ভোরের বাতাস গায়ে মাখাতে আজ বহুদিন বাদে ফ্রন্ট ইয়ার্ডের বেঞ্চিতে এসে বসেছে ক্রীতিক।দু'হাতে মুঠি বদ্ধ হয়ে আছে,কফির কাপ আর আইপ্যাড। তবে আপাতত আইপ্যাডে চোখ নেই ওর, বরং দুচোখ নিষ্পলক বিচরন করছে চারিদিকের সবুজে ঘেরা অরন্যে।

.

কোনোদিন দেশে ফিরবে না বলে, বছর তিনেক আগেই ছোটমোটো এই অত্যাধুনিক ডুপ্লেক্স বাড়িটা কিনেছিল ক্রীতিক। তখন কি আর ও জানতো?যে তিন বছরের মাথায় এসে ওর অষ্টাদশী পিচ্চি এলোকেশী এই বাড়িতেই প্রথমে পা রাখবে,দিনরাত যাপন করবে।জানলে হয়তো বাড়িটাকে মনমতো ঢেলে সাজাতে পারতো। অরুর তো আবার হ্যালো কিটি খুব পছন্দ,বাড়িটা হ্যালো কিটি থীমে তৈরি করলে কেমন হতো? কথাটি ভাবতেই এক মনে হেসে ওঠে ক্রীতিক।

ঠিক তখনই ওর আজগুবি ভাবনার সুতো ছিড়ে যায় সামনের ফ্রেঞ্চ গেইট থেকে আসা কলিং বেলের টিংটং আওয়াজে। কে এসেছে দেখার জন্য ক্রীতিক উঁকি দিতে যাবে, তারআগেই মেইন ডোর খুলে বেড়িয়ে আসে অরু। তারপর ফ্রন্ট ইয়ার্ড পেরিয়ে সোজা এগিয়ে যায় গেইটের কাছে। অরুর পড়নে ছিল হোয়াইট পিঙ্ক কম্বিনেশনে সিল্কের পাজামা,রেশমের মতো হাটু অবধি লম্বা চুল গুলো ছিল পুরো পুরি বাঁধন হারা।

অরুর পরনে নিজের কিনে দেওয়া পাজামা সেট দেখে ক্রীতিকের বেশ ভালো লাগলো। এই প্রথম ক্রীতিক কারোর জন্য কিছু নিজের হাতে কিনেছে,অরু আজ আবার সেটা পরেছেও। ভালো লাগারই কথা।

এইতো কালকেরই ঘটনা, সন্ধ্যা বেলা ভার্সিটি থেকে ফিরে,একাই খু'ড়িয়ে খু'ড়িয়ে গাড়ি থেকে নেমেছিল অরু। তবে গাড়ি থেকে নামতেই খুব বড়সড় একটা ঝটকা খেয়ে অগত্যাই বিস্ময়ে আপনা আপনি দু'ঠোঁট আলাদা হয়ে গিয়েছিল ওর ।এই বাড়ির গ্যারেজে এখনো আসা হয়ে ওঠেনি অরুর আজকেই প্রথম ছিল। তাই ক্রীতিকের যে এতো এতো রাইডিং বাইকের কালেকশন আছে সেটাও ওর অজানাই ছিল।

পুরো গ্যারেজে চার চাকা বলতে একটা মার্সিডিজই রয়েছে কেবল। বাকি সব নামি-দামি ব্র্যান্ডেড বাইক কালেকশন। অরু মনেমনে ভাবলো এটাকে কোনো বাইকের শোরুম বললে মন্দ হবেনা বৈকি।চারিদিকে চোখ বুলিয়ে অরু যখন অবিশ্বাসের নজরে ক্রীতিকের পানে চাইলো, ক্রীতিকের মুখ ভঙ্গি তখন খুবই সাভাবিক, ও নিজ হাতের আঙুলে চাবির রিংটা ঘুরাতে ঘুরাতে গ্যারেজ থেকে বেরিয়ে যেতে যেতে বললো,

---গাড়িতে একটা প্যাকেট আছে নিয়ে যাস।

অরু,ভ্রুকুটি করে শুধায়,

-- কার প্যাকেট, আমার?

ক্রীতিক না ঘুরেই জবাব দিলো

-- তো কার??

--- কিন্তু, আমার জন্য হঠাৎ??

ক্রীতিক হাটার গতি থামিয়ে, প্রথমে নাক টেনে বুক ভরে বাতাস নেয়, অতঃপর বলে,

--- তুই ঘুমালে যে অ'র্ধন'গ্ন হয়ে থাকিস সেটা আদৌও জানিস?

--- কিহ!

লজ্জা আর বি'রক্তির চ'রম সীমানায় গিয়ে শব্দটা উচ্চারণ করলো অরু।

ক্রীতিক আবারও স্ব স্থানে দাড়িয়ে থেকেই বেশ সাবলীল ভঙ্গিতে বললো,

--- আমিতো জানি,আর তাছাড়া আমার আমানতের খেয়ানত করার কোন অধিকার তো তোর নেই,তাই ঢেকে রাখার ব্যাবস্থা করেছি মাত্র,সময় হলে নিজের জিনিস নিজে ঠিক বুঝে নেবো,তখন আর তোকে জ্বালাতে আসবো না, নিজের হাত দিয়েই ঢাকবো সবটা।আর দরকার পরলে.... বাক্যটা কেন যেন শেষ করলোটা ক্রীতিক, বরং তারাহুরো করে অরুর সামনে থেকে চলে গেলো।

আমানত, খেয়ানত,কিংবা ক্রীতিকের ঘোরানো প্যাঁচানো কথা কোনোটাই তখন আর মাথায় ঢোকেনি অরুর। ও তো স্রেফ উপহারটুকু গ্রহন করেছে। এক টা দুটো নয়, পুরো দশ কালারের দশটা পাজামা সেট ছিল প্যাকেটে। দেখেই বোঝা যাচ্ছিল পাজামা গুলো খুব দামি, গায়ে চড়ালেই কেমন চোখ ভার হয়ে ঘুম চলে আসে।

কালকের কথা আজও মনে করে মুখের কোনে আঙুল ঠেকিয়ে ঠোঁট কামড়ে একমনে হাসছে ক্রীতিক। আশ্চর্য।

মনে মনে ভাবছে,

--- সত্যি যদি দিশেহারা হয়ে কাল কিছু করে বসতাম? অধিকার খাটাতে গিয়ে দূরত্বের প্রাচীর ভে'ঙে ফেলতাম?তাহলে কি খুব বেশি বারাবারি হয়ে যেত???

ওদিকে অরু নিজের কোলের মধ্যে ছোট্ট বিড়াল ছানা ডোরা কে নিয়ে এগিয়ে গিয়ে গেইট খুলতেই চোখের সামনে ভেসে উঠলো চেনা পরিচিত সেই সুদর্শন মুখখানা,তবে এই মুখটা অরুর থেকে বেশি অনুর পরিচিত।

অরু একপলকে উপর থেকে নিচ পরখ করে নিলে তার। একগুচ্ছ শুভ্র রঙা টিউলিপ হাতে নিয়ে ফর্মাল গেটআপে দাড়িয়ে আছে প্রত্যয়। চোখে অপরিবর্তিত চিকন ফ্রেমের চশমা, দেখে তো মনে হয় পাওয়ার আছে। প্রায় কয়েক মিনিট বিনাবাক্যে অতিবাহিত হয়ে যায়,তবুও অরুর ধ্যান ভাঙলো না,তাই অরুর দিবাস্বপ্নকে বাস্তবে ফিরিয়ে আনতে হাত নাড়িয়ে ডেকে উঠল প্রত্যয়,

--- হ্যালো!

তৎক্ষনাৎ ধ্যান ভেঙে গেলো অরুর, সচকিত হয়ে বললো,

----হ্যা!! আপার কাছে এসেছেন তাইনা?

আপা বাসাতেই আছে, আসুন আসুন।

প্রত্যয় গেইট দিয়ে ভেতরে যেতে যেতে বললো,

--- এ্যাকচুয়াল্যি আমি,অনুর কাছে নয়,ক্রীতিক ভাইয়ের কাছে এসেছি, কিছু ফাইলে আর্জেন্ট সিগনেচার লাগতো। ওহ ওইতো ভাই।

হাত কয়েক দুরে কালো রঙা বেঞ্চিটাকে আঙুল উঁচিয়ে দেখালো প্রত্যয়। তারপর অরুকে রেখেই এগিয়ে গেলো সেদিকে।

অন্যদিকে অরু, দৌড়ে গিয়ে অনুকে বাইরে নিয়ে এলো।

অরুর টানাটানিতে অনেকটা হন্তদন্ত হয়েই বেরিয়ে এলো অনু। একটা লং কুর্তি আর লেগিংস পরিহিত অনু তাকিয়ে আছে প্রত্যয়ের পানে।ওদিকে কাজের ফাঁকে প্রত্যয়ের ওও চোখ সরেনি ঘুমু ঘুমু অনুর মায়াবী মুখশ্রী থেকে।

অরু টানাটানি করছে দেখে, অনু বিরক্ত হয়ে বললো,

--- উফফ ছাড়না অরু। ক্রীতিক ভাইয়া বসে আছে, তার সামনে তুই যদি এমন বাচ্চামো করিস। কি বলবে বলতো?

---আরে কিচ্ছু বলবে না আয় তো তুই।

অরুর একহাতে তখনও ঘাপটি মেরে বসে আছে বিড়ালের বাচ্চা ডোরা।

অনু সামনে এগোতে এগোতে ভাবছে সেদিন রাতের কথা। সেদিন বৃষ্টির অজুহাতটা তো নিছকই বাহানা ছিল। কারণ সেদিন হসপিটাল থেকে বের হতেই দেখা মেলে ছাতা হাতে দাড়িয়ে থাকা প্রত্যয়ের।

প্রত্যয়কে দেখে অবাকের চরম সীমানায় গিয়ে অনু তখন শুধালো,

---আপনি এখানে?

প্রত্যয় মৃদু হেসে জবাব দিয়েছিল,

---- আপনার জন্যই দাঁড়িয়ে আছি।

আর তারপর?? বৃষ্টি ভেজা মনোমুগ্ধকর একটা সিম্পল কফি ডেট। একজন আরেকজনের পরিচয় তো দূরে থাক নামটুকু পর্যন্ত জানতো না, তবুও মন গহীনে কোথাও ঘণ্টী বেজেছিল দুজনারই। অনুর মনে হয়েছিল,যে মানুষটা এতোবার করে সাহায্য করেছে তার সাথে এককাপ কফি তো পান করাই যায়।পরিচয় দিয়ে কি আসে যায়???

তবে আজ এই মূহুর্তে প্রত্যয়ের কর্মকান্ড দেখে মনে হচ্ছে, সে পরিচয় দিতেই একে বারে আঁটঘাঁট বেধে সকাল সকাল বাড়ি বয়ে এসেছে।

বাড়ির ফ্রন্ট ইয়ার্ডটা নরম সবুজ ঘাস, আর বিভিন্ন সৌন্দর্য বর্ধক গাছ গাছালি দিয়ে ভরা, সেই গাছেরই ফাঁক ফোকর গলিয়ে আলো ছড়াচ্ছে একটু একটু সূর্য কীরণ। আর সেই আলোছায়ার মাঝেই মুখো মুখি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে প্রত্যয় ও অনু। অনুর পেছনে অরু আর ডোরা। অন্যদিকে ওদের থেকে খানিকটা দুরে এখনো আইপ্যাডে খুব মনোযোগ দিয়ে কিছু একটা করছে ক্রীতিক।

প্রত্যয় নিজের হাতে থাকা টিউলিপ গুচ্ছ এগিয়ে দিয়ে বললো,

--- শুভ সকাল মিস. অনন্যা শেখ, আমি প্রত্যয় এহসান" সি এফ ও" অফ জেকে গ্রুপ।

অরু হকচকিয়ে অনুর দিকে এগিয়ে এসে মিনমিনিয়ে বললো,

--- আপা উনিই প্রত্যয় এহসান, উনিই মনে হয় আমাদের জন্য ভিসা টিকেটের সব ব্যাবস্থা করেছিলেন।

প্রত্যয় চোখ সরিয়ে অরুর দিকে তাকিয়ে বললো,

--- হ্যা ঠিক বলেছো তুমি।

অনু কথা ঘুরিয়ে বললো,

--- তাহলে আপনি আমাকে চিনতেন তাইতো?

প্রত্যয় মৃদু হেসে জানায়,

-- কিছুটা।

অনু সহসা হেসে টিউলিপ ফুল গুলোকে গ্রহন করে বলে,

--- ধন্যবাদ।

---ওয়েলকাম।

প্রত্যয়ের ঘোর লাগানো চোখ দুটো ছিলো তখনও অনুর নিস্প্রভ চোখে নিবদ্ধ।

ওদিকে ক্রীতিকের চোখ দুটো অরুর চোখে, একই ঘোর, একই কামুকতা, ক্রীতিকের চোখে খানিকটা বেশিই হবে। ক্রীতিকের সেই ঘোর লাগা চোখে চোখ পরতেই,কেঁপে উঠলো অরু, হুট করেই কেন যেন শরীরের প্রত্যেকটা লোমকূপ দাড়িয়ে গেলো। সেই সাথে তলপেটের মধ্যে অনুভব হলো অজানা এক গুরগুরানি। এটা মোটেই খিদের পূর্বাভাস নয়, তাহলে এটা কেমন অনুভূতি?? আগেতো কখনো হয়নি এমন। সামান্য চাহনিতেও কারও এতো জোর থাকে? চোখের চাউনি দিয়ে, পুরো ঝ'ড় বইয়ে তু'লকালাম বাধিয়ে দিলো শরীরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে। তবুও সবটা গতানুগতিক উপেক্ষা করে গেলো অরু, পেছন থেকে অনুদের চোখে চোখে কথা আদান-প্রদানের মাঝে বাম হাত ঢুকিয়ে দিয়ে অরু বলে উঠলো,

---এ্যাই আপা, অনেক তো হয়েছে তোদের আলাপ পরিচয়, এখন চল ক্ষিদে পেয়েছে, আমাকে আবার খেয়ে ভার্সিটি যেতে হবে, তাছাড়া তুই তো হসপিটালে মায়ের কাছে যাবি।

অরুর কথায় সম্বিত ফিরে পেলো অনু, সেই সাথে অজানা একরাশ লজ্জারা প্রজাপতির ন্যায় ঘিরে ধরলো ওকে। ও তারাহুরো করে ভেতরে যেতে যেতে বললো,

---খাবার দিচ্ছি দ্রুত আয়।

পরিবেশটা থমথমে আর অসাভাবিক, প্রত্যয়ের নিজেরও কেমন লজ্জা লজ্জা পাঁচ্ছে। তাই পরিস্থিতি সাভাবিক করতে প্রত্যয় অরুর কোলে ঝিমুতে থাকা ডোরাকে দেখিয়ে বললো,

--- ব..বিড়াল কোথায় পেলে? না মানে আগেতো ছিলোনা।

অরু ডোরার মাথায় আদুরে হাত বুলিয়ে বলে,

--- কাল রাতে ব্যাক ইয়ার্ডে কুড়িয়ে পেয়েছি ঠান্ডায় কাঁপছিল, তারপর ঘরে নিয়ে এসেছি আর তারপর....

প্রত্যায় জিজ্ঞাসু হয়ে শুধালো,

---তারপর?

অরু ক্রীতিকের দিকে দাঁত কটমটিয়ে তাকিয়ে বললো,

-- কিছুনা।

---বাই দা ওয়ে, নাইস ক্যাট।

অরু প্রত্যয়ের কথায় বাঁধ সেধে বলে,

--- ও ক্যাট না, ও আমার বাচ্চা ডোরা।

--- মাথা খারাপ, আমি কেন বিড়ালের বাচ্চা জন্ম দিতে যাবো? পেছন থেকে ভেসে আসা ক্রীতিকের অযাচিত বাক্যে অরু, প্রত্যয় দুজনই বোকা বনে গেলো।

অরু মুখে ভেংচি কেঁ'টে মিনমিনিয়ে বললো,

--- আপনার বাচ্চা কেউ বলবেও না, ভালোবাসা,দরদ বলতে কিছু আছে নাকি হৃদয়ে? থাকলে আমাকে আর ডোরাকে অমন মাঝরাতে বাইরে বের করে দিতে পারতেন না।

ওর ভাবনার মাঝেই ক্রীতিক ওদের কাছে এগিয়ে এসে, আই প্যাডটা অরুর দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,

--- অরু এটা নিয়ে ভেতরে যা, আমার প্রত্যয়ের সাথে কিছু পার্সোনাল কথা আছে।

অরু ঠোঁট উল্টে ভেতরে যেতে আইপ্যাডটা খুলে দেখতে লাগলো।

আর প্রথমেই যেটা সামনে আসলো সেটা অডিও বুক। হা'ন্টিং এডলিন।

বইয়ের নামটা দেখেই চোখ মুখ কুঁচকে গেলো অরুর। মিনমিনিয়ে বললো,

--- উনি হা'ন্টিং এডলিনের মতো ডার্ক রোমান্টিক বই পড়েন? ইউউ!! তারমানে কি উনিও ওইসব বেপরোয়া হিরোদের মতো অতিরিক্ত রোমান্টিক?? হায়হায় ওনাকে সামলাতে তো ওনার বউয়ের বারোটা তেরোটা বেজে যাবে।

পরক্ষণেই নিজের মাথায় নিজেই চাটি মে'রে দাঁত দিয়ে জিভ কেঁ'টে অরু বলে,

---ছিহ!কি সব ভাবছি আমি। তওবা তওবা।

*****************************************

ইউনিভার্সিটিতে আজ হান্ড্রেড ইয়ার সিরিমনি, মানে শতবর্ষপূর্তি উদযা্পন হচ্ছে। আজ কোন ডিপার্টমেন্টেরই কোন ক্লাস নেই। সব কিছু জানাই ছিল অরুর।তবুও একবুক আশা নিয়ে ভার্সিটিতে এসেছিল ও।আকাঙ্খা একটাই নিখিল ভাইয়ের একটা নজর দেখা পাওয়া,ঠিক আগের মতোই।কিন্তু সেটা আর হয়নি, সিনিয়রদের কাছ থেকে খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছে,নিখিল ভাই আজ আর ভার্সিটিতে আসেনি। আসেনি বললে ভুল হবে,আসতে পারেনি,গতকাল সব রিপোর্ট ন'ষ্ট হয়ে যাওয়ায় আজ আবারও সেগুলো নতুন করে রেডি করতে হচ্ছে তাকে। নয়তো সামনের সেমিস্টারে পুরো দমে ফে'ইল। অরু অসহায়ের মতো মনম'রা হয়ে বললো,

--- নিখিল ভাইয়ের মতো ভালো মানুষের সাথে,এমন খারা'প কাজটা কে করলো ??

সে যাই হোক, নিখিল ভাই যেহেতু আসেনি অরু চিন্তা করলো ওও বাড়িতে ফিরে যাবে, কাল সারারাত বাইরে বের করে রেখেছে ক্রীতিক ওকে,তাই ঘুমটাও চোখে তাজা। না ঘুমানোর দরুন কেমন ঝিঁমুনি চলে আসছে দুচোখে। চারিদিক ঝাপসা লাগছে। মনে হচ্ছে এই বুঝি পরে যাবো মাথা ঘুরে। অরু আর বেশিক্ষণ দাড়িয়ে থাকলো না হাটা ধরলো বাড়ি যাওয়ার উদ্দেশ্যে, তবে দু'কদম এগোতেই পথ আটকায় সায়নী,

ওর হাতটা শক্ত করে ধরে উচ্ছ্বাসিত মুখে বলে,

--- এ্যাই অরু,কোথায় যাচ্ছো?? গ্যালারীতে বাস্কেট বল খেলা হচ্ছে,বিশাল টূর্নামেন্ট তারাতাড়ি চলো।

যদিও অরুর এসবে বিন্দু পরিমাণ আগ্রহ নেই, তবুও অগত্যাই যেতে হলো সায়নীর সাথে। যেতে যেতে সায়নী জানালো

--- সবাই এই ম্যাচ দেখার জন্য গত একমাস ধরে বসে আছে, আর তুমি বাড়ি যাচ্ছো? এই ভার্সিটির প্রাক্তন ছাত্র ভার্সেস পাশের ইউনিভার্সিটির প্রাক্তন ছাত্ররা।

সায়নীর উচ্ছ্বাসে জোয়ার দিতে অরু নরম সুরে বললো,

--- ওহ তাই নাকি?

গোলাকার বিশাল গ্যালারীতে গিয়ে সায়নী সিটে বসতে বসতে বললো,

--- হুম, তার চেয়েও বড় কথা কি জানো?জেকে স্যারও এই ভার্সিটির সিনিয়র ছিলেন। আর স্যারও আজ ম্যাচে খেলবেন।

তৎক্ষনাৎ সায়নীর দিক থেকে চোখ সরিয়ে সামনে চাইলো অরু। দেখতে পেলো শুধু ক্রীতিক একা নয়, সায়র আর অর্নব ওও আছে। তাছাড়া ওদের পাশের গ্যালারীতেই বসে বসে নিজের প্রিয় বন্ধুদের চিয়ারআপ করে যাচ্ছে এলিসা,সাথে ক্যাথলিনও।

চেনা পরিচিত সবাইকে একঝলক দেখে নিয়ে অরু মনে মনে বললো,

---তারমানে ওনারা সবাই এই ভার্সিটিরই প্রাক্তন শিক্ষার্থী।

--- অরু,কি ভাবছো খেলা শুরু হয়ে গিয়েছে তো।

সায়নীর কথায় এবার সত্যি সত্যি খেলা দেখায় মন দিলো অরু।

*****************************************

তখন খেলার প্রথম হাফ শেষ হয়েছে মাত্র, সবার মুখেই বিজয়ের হাসি লেগে আছে, কারন প্রথম হাফেই বাজিমাত করে দিয়েছে ক্রীতিকেরা। প্রতিপক্ষ টীম বাকি অর্ধেক সময়ে এই রেকর্ড ভা'ঙতে পারবে কিনা সন্দেহ। এখন দশ মিনিটের বিরতি।

বিরতি পেয়ে সবাই যে যার মতো এক নম্বর, দুই নম্বর সারতে চলে গেলো। কেউ কেউ গিয়ে দাঁড়ালো স্ব টীমের মানুষের কাছে, বাকি অর্ধেক খেলার জন্য পরামর্শেরও তো একটা ব্যাপার আছে।

শুধু মাত্র ক্রীতিক সবাইকে ছাড়িয়ে উঠে এলো জনসমাগম পূর্ন গ্যালারী। ক্রীতিক গ্যালারীতে উঠতেই সবাই একযোগে চিল্লিয়ে উঠলো।

তবে কোন কিছু শোনা, কিংবা দেখার চেষ্টা না করেই ও সোজা গিয়ে বসে পরলো অরুর পাশে। অতঃপর একটান দিয়ে অরুর গলায় পেচানো স্কার্ফটা টেনে নিয়ে তোয়ালের মতো করে নিজের চুল আর কপালের ঘাম মুছতে লাগলো নির্বিগ্নে।

বিস্ময়ে বি'পর্যয়ে হা হয়ে আছে পুরো গ্যালারী ভর্তি মানুষ। যেন এখানে কোন বাস্কেট বল ম্যাচ না বরং রোমান্টিক সিনেমার শুটিং হচ্ছে। অর্নব সায়র ওরাও খানিকটা অবাক। সায়র যতটুকু জানে মেয়েটা ক্রীতিকের দু-চোখের বি'ষ। তাহলে গ্যালারী ভর্তি মানুষের সামনে ক্রীতিক এসব করছেটা কি?

ওদিকে অরু পারছেনা লজ্জায় মাটির সাথে মিশে যেতে। মানে সকলের ক্রাশ বয় রাইডার জেকে স্যার এই মূহুর্তে পুরো ক্যাম্পাসের সামনে ওর শরীরের ওড়না দিয়ে নিজের মুখমন্ডলের ঘাম মুছছে,এমন কাহিনীতে চারিদিকের জোড়া জোড়া চোখের দিকে তাকিয়ে অরুর আর্তনাদ করে বলতে ইচ্ছে করলো,

---বিশ্বাস করো আমি কিছু জানিনা, এই লোকটা পা'গল, মাথায় সমস্যা আছে তাইতো হুটহাট এমন করে আমাকে ফাঁ'সায়।

ওর ভেতরের কা'ন্নাকা'টিকে দু’পয়সা পাত্তা না দিয়ে গমগমে আওয়াজে ক্রীতিক বলে,

----পানিটা দে।

অরু এদিক ওদিক তাকিয়ে বললো,

--- আমারটা খাবেন?

---এখানে আর কেউ আছে?

অরু দ্রুত এদিক ওদিক না সূচক মাথা নাড়িয়ে ব্যাগ থেকে বের করে মাম পট টা এগিয়ে দেয়।

ক্রীতিক এক নিঃশ্বাসে পুরোটা পানি শেষ করে আবারও নেমে যায় গ্যালারী থেকে।

ক্রীতিক চলে গেলে অরু নিজের ওড়নাটা ঠিকঠাক করতে ব্যাস্ত হয়ে পরে, ওড়নার একাংশ ক্রীতিকের ঘামে ভিজে আছে, সেখান থেকে খুব সুন্দর একটা চন্দন কাঠ জাতীয় ঘ্রান আসছে। ঘ্রানটা কিসের ভালোভাবে বোঝার জন্য অরু ওড়নাতে নাক ছোঁয়ালো। হ্যা যা ভেবেছিলো তাই স্যান্ডালউড পারফিউমের একটা মাতাল করা সুবাস।গন্ধটা নাকে লাগতেই অজানা শিহরণে শরীর ছেয়ে গেলো অরুর।

তখনই অপর পাশ থেকে কর্কশ আওয়াজ ভেসে এলো সায়নীর,

---তুমি জেকে স্যারকে চেনো?

---নাহ,না..মানে..হ্যা..মানে।

অরু চোরের মতো মুখ কাচুমাচু করছে।দেখে সায়নী বললো,

---কি না মানে হ্যা মানে করছো? চিনে থাকলে বলো?

অরু হ্যা সূচক মাথা নাড়িয়ে বলে,

--- উনি আমার ভ..ভাই হয়,মানে স্টেপ ব্রাদার।

সায়নী বোধ হয় অরুর জবাবে খুশিই হলো,তাই ওর হাত জড়িয়ে ধরে বললো,

--- ইটস ওকে অরু, আগে বলবে না এ কথা, আমি আরও ভাবলাম কি না কি।

*****************************************

খাওয়া দাওয়া হই'হুল্লোরে সারাদিনটা ভালোই চলে গিয়েছে , সবার সাথে অরুও আজ বেশ ভালোই আনন্দ করেছে, এতোগুলো দিন পর আজকেই প্রথম অরুর মনে হয়েছে যে ও আসলেই ইউনিভার্সিটিতে পড়ে। তবে বিপত্তি ঘটেছে বিকেল নাগাদ।

ক্যাম্পাসে রাতে কনসার্ট আর পার্টি থাকলেও অরু সেসবে একদম অভ্যস্ত না, তাই ও সায়নীকে বুঝিয়ে শুনিয়ে বাড়িতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলো। অরু শুধু একা নয়,অনেকেই যাচ্ছে আসছে। করিডোরে শিক্ষার্থীদের উপচে পড়া ভীর। তাই ও ঠিক করলো বাইরের দিক থেকে তারাহুরো করে বেরিয়ে যাবে,কিন্তু হঠাৎই ওর মনে হলো ও ভীরের মাঝে নিখিল ভাইকে দেখলো,নিখিল কে দেখা মাত্র অরু আনমনে বললো,

---আশ্চর্য নিখিল ভাই সারাদিনে ভার্সিটি এলেন না, আর এখন এই সন্ধ্যা বেলা এলেন? আর সাথে ওটা কে?

অরু দূর থেকেই আরেকটু ভালো ভাবে পরখ করে ওদেরকে দেখলো,হাজারো ভীরের মাঝে এক বিদেশিনীর কোমরে হাত রেখে তার সাথে হাসাহাসি করতে করতে এদিকেই এগিয়ে আসছে নিখিল ভাই, দেখলে মনে হবে তারা জনম জনমের প্রেমিকযুগল।

তবে এখন আর অরুর থেকে খুব বেশি দূরে নেই ওরা বরং অনেক কাছে।

হুট করেই তখন, অরুর কি হলো কে জানে? চক্রাকার ঘুরতে থাকা বলয়ের মতোই ঘুরছিল ওর মাথাটা। চোখের সামনে সুবিশাল ক্যাম্পাসটাকে মনে হচ্ছিলো মহাবিশ্বের সবথেকে অন্ধকারতম ব্ল্যাক হোল। ক্ষনিকের মধ্যে মানুষের গিজগিজ,হাসাহাসি, কথার বহর, সব কিছু ছাপিয়ে কর্ণকূহরে বেজে উঠলো ঝিনননন ধরা এক বিরক্তি কর আওয়াজ। আর তারপর হুট করেই মাথা ঘুরে ওখানেই অচেতন হয়ে পরলো ক্লান্ত পরিশ্রান্ত বাঙালি মেয়ে অরু। দীঘল কালো নজরকাড়া ফ্রেঞ্চ বিনুনিটা তখন মাটি ছুঁই ছুঁই প্রায়।

তবে মাটি আর ছুঁতে পারলো না,তার আগেই ওকে শক্ত বাহুডোরে আবদ্ধ করে নিলো নিখিল।

জনসম্মুখে হুট করে এমন একটা ঘটনা ঘটে যাওয়ায় এহ মূহুর্তেই মোটামুটি ক্যাম্পাসের সবাই অরু আর নিখিল কে ঘিরে ধরেছে। সবার চোখের দৃষ্টিই আবর্তিত হয়ে আছে অজানা কৌতুহল দ্বারা। সবার মুখেই একটাই প্রশ্ন

--- কি হলো মেয়েটার।

নিখিল যখন অরুকে কোলে তুলে কেবল দাঁড়িয়েছে ঠিক সেই মূহুর্তে ভীরের মধ্যে থেকে কেউ বলে উঠলো,

---ডোন্ট টাচ হার।

ভেলভেট মেঘের ন্যায় স্মুথ কন্ঠস্বর, তবে প্রতিটি শব্দতেই উপচে পড়ছে অগাধ কতৃত্ব,যেন ওর কোন একান্ত প্রয়োজনীয় জিনিসকে অন্যকেউ হাত দিয়ে ছুঁয়েছে।

অজ্ঞাত কন্ঠস্বর শুনে ভীরের মাঝে উঁকি দিলো নিখিল, তৎক্ষনাৎ এগিয়ে এসে শি'কারী বাঁজপাখির ন্যায় নিখিলের হাত থেকে ছো মে'রে অরুকে নিয়ে গেলো ক্রীতিক।

নিখিল কিছু বুঝে উঠতে পারলো না, তাই অবাক দৃষ্টিপাত করলো ক্রীতিকের পানে,

তবে ক্রীতিকের দৃষ্টি ছিল গভীর আর অ'গ্নিস্ফু'লিং এর মতোই জ্বলজ্বলে,যেন চোখদুটো দিয়েই ভ'স্ম করে দেবে নিখিল কে।

ক্রীতিকের মুখের উপর কথা বলাতো দুরে থাক, ওর চোখের দিকেই কয়েক সেকেন্ডের বেশি তাকিয়ে থাকতে পারলো না নিখিল। অজান্তেই শুষ্ক ঢোক গিলে চোখ নামিয়ে নিলো নিচে।

*****************************************

ভার্সিটিতে ইমারজেন্সি ট্রিটমেন্টের জন্য যে ক্লিনিক থাকে। তারই একটা কেভিনের ছোট্ট করিডোরে দাড়িয়ে আছে ক্রীতিক। পড়নে কনুই অবধি হাতা গুটানো সফেদ শার্ট আর ব্ল্যাক ডেনিম। মাথার লম্বা চুল গুলো এলোমেলো হয়ে পর আছে কপালে, ফর্সা মুখটা জি'দের তোপে টকটকে লাল হয়ে আছে।এই মূহুর্তে ওকে উদভ্রান্তের মতোই ছ'ন্নছাড়া লাগছে।

ক্রীতিক যখন করিডোরের দেওয়ালে হেলান দিয়ে বুকের উপর দু'হাত ভাজ করে নিস্প্রভ চোখে কেভিনের দিকে তাকিয়ে ছিল ঠিক তখনই হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসে সায়র, ক্রীতিকের মুখোমুখি দাড়িয়ে উদ্বীগ্ন হয়ে প্রশ্ন ছু'ড়ে বলে,

--- কি হয়েছে অরুর?

----, ঘুম আর খাওয়া দাওয়ার অনিয়মের জন্য প্রেশার ফল করে সে'ন্সলেস হয়ে গিয়েছে।

ক্রীতিকের নির্লিপ্ত জবাব।

সায়র ওর দিকে তি'রস্কার করে হাসলো,তারপর তাচ্ছিল্যের ধ্বনিতে বললো,

---সিরিয়াসলি জেকে? মাত্র এই কয়দিনে মেয়েটাকে ট'র্চা'র করে করে আধম'রা বানিয়ে ফেললি?তোর অ'ত্যাচা'রের মাত্রা এতোই বেশি ছিল যে মেয়েটা ক্যাম্পাসের মধ্যে সে'ন্সলেস হয়ে গিয়েছে, ভাব তুই কতটা জ'ঘন্য। আচ্ছা এই পিচ্চি মেয়েটার সাথে তোর কিসের এতো শ'ত্রু'তা বলতো আমায়?তাছাড়া যেভাবেই হোক না কেন ও তো তোর বোন নাকি??

সায়র কথাটা বলতে বাকি, শ'ক্ত থা'বায় সায়রের কলারটা চেঁ'পে ধরতে দেরি হলোনা ক্রীতিকের।

বোন কথাটা শোনা মাত্রই দ'গ্ধ গলিত লাভা যেন হিরহির করে ছড়িয়ে পরলো ক্রীতিকের মাথার মধ্যে। ও করিডোরের বিপরীত দেওয়ালে সায়রকে চেপে ধরে দাঁত দিয়ে দাঁত পি'ষে বললো,

--- খবরদার সায়র ওকে আমার বোন বলবি না, ও আমার বোন নয়। নিজ বোনের যায়গায় ওর চেহারাটা আমি দুঃস্বপ্নেও ভাবতে পারিনা।

আমার কাছে ও পৃথিবীর সবার থেকে ইম্পর্টেন্ট। ও আমার কি, সেটা আমি নিজেও জানিনা, তবে এটুকু জানি, বাকিটা জীবন ওকে ছাড়া আমি দম নিতেও ভুলে যাবো।

সায়র চোখ বড়বড় করে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ক্রীতিকের বিভ'ৎস মুখের পানে।

ঠিক তখনই অন্যদিক থেকে আগমন ঘটে নিখিলের।

ক্রীতিক একপলক নিখিলের দিকে তাকিয়ে, সায়রকে বললো,

--- ওটাকে এক্ষুনি বিদেয় কর।

সায়র সামনের দিকে যাচ্ছে ঠিকই তবে ওর মনে চলছে অন্য কিছু, আজ সায়র উপলব্ধি করলো ওর ধারণা সম্পূর্ণ ভুল,ক্রীতিক অরুকে সবচেয়ে বেশি অ'পছন্দ নয় বরং উ'ন্মাদের মতো পছন্দ করে। এই পছন্দ কে কি নাম দেওয়া যায়?শুধুই আসক্তি? নাকি সঙ্গিন প্রনয়াসক্তি?

■■■■■■■■■■■■■■■■■■■■■■■■

#পর্বঃ১১

মেঘ আর কুয়াশার চাদরে ঢেকে আছে ধরনী।উদীয়মান সূর্যের নিয়ন আলোয় চারিপাশ একটু হলেও পরিষ্কার দেখাচ্ছে। নয়তো আজ মোটেই রোদ্রজ্জল কোন দিন নয়।

সাভাবিক হাইওয়ে রাস্তার থেকেও কয়েকগুণ প্রসস্থ পিচ ঢালা কুচকুচে কালো রাস্তার মাঝ বরাবর এক নাগারে সাদা রঙের ব্রোকেন লাইন রোড মার্কিং টানা।ঠিক তার দুইপাশে পাহারাদারের মতো মাথা উঁচিয়ে দাড়িয়ে আছে ছোট বড় সারিসারি ম্যাপল গাছ।ম্যাপল গাছের ছোট ছোট বিশেষ আকারের রঙিন পাতাগুলি যেন একেক'টা শিল্পের নান্দনিক কারুকাজ। দেখলে মনে হবে রোদহীন মেঘে ঢাকা দিনে রাস্তার পাশের এই লাল কমলা ম্যাপল লিফ গুলোই আলো ছড়াচ্ছে পুরো রাস্তা জুড়ে,ইভেন উইথ আউট এনি সিঙ্গেল প্যানি...

পথচারীদের যাতায়াত সুবিধার্থে সুন্দর আকর্ষনীয় ম্যাপল গাছের অন্যপাশ দিয়ে চলে গিয়েছে আরও একখানা তকতকে সরু রাস্তা।

সেই রাস্তা ধরেই পায়ে পায়ে এগুচ্ছে সায়নী আর অরু। চাশমিশ আর এক্সট্রোভার্ট সায়নী বরাবরের মতোই এক মনে কথার দোকান খুলে বসেছে, ওদিকে ওর একটা কথাও অরু ভালোমতো মন দিয়ে শুনছে কিনা সেটা বোধ করা দুষ্কর। সায়নীর কথা মন দিয়ে না শোনার অবশ্য যথাযথ কারন আছে বৈকি।

ধবধবে শুভ্র রঙা চিকনকারী চুড়িদার সেই সাথে গ্রে রঙের উলের পাতলা সোয়েটার পরে পুরোদমে বাঙালি সেজেই ঘুরে বেরাচ্ছে অরু। ওদিকে সায়নীর পরনে স্কিনি জিন্সের সাথে ভারী কালো কোর্ট।

আজ রবিবার, মানে উইকএন্ড। এই মেঘলা শীতল উইকএন্ডের সকাল বেলা কম্ফোর্টার মুড়ি দিয়ে কেবলই এপাশ থেকে ওপাশ ঘুরে শুয়েছিল অরু। তখনই শুরু হয় সায়নীর একের পর এক কল। যেহেতু অরুর মোবাইলটা ক্রীতিক ভে'ঙে ফেলেছে তাই অনুর নাম্বারেই আপাতত কলের ঝড় তুলে ফেলেছে সায়নী।

শেষ মেশ না পেরে বিদেশী আদলের একমাত্র বাঙালী বান্ধবীর কথা রাখতেই সকাল সকাল ক্যাম্পাসে চলে এসেছে অরু। সায়নীর আর্জি একটাই আজ বাইক রেসিং ক্লাবে রাইডিং কম্পিটিশন আছে, জেকে ও থাকবে সেখানে। আর সায়নী অরুকে সাথে করে সেখানে নিয়ে তবেই যাবে।

প্রথমে একটু গাইগুই করলেও পরক্ষণে ক্যাম্পাসে এসে সায়নীর কথা রক্ষার সার্থকতাটা ধরতে পেরেছে অরু। মনে মনে অনেকটা খুশিও হয়েছে সায়নীর প্রতি, তার কারণ সকাল সকাল ক্যাম্পাসের গেইটেই দর্শন মিলেছে পছন্দের শ্যাম পুরুষের।অরুই নিখিল কে আগে দেখেছে, তবে কথা বলার সাহস পায়নি, কিন্তু নিখিল যখন অরুকে দেখলো, তৎক্ষনাৎ হাক পেরে নাম ধরে ডেকে উঠল সে,

--- এই যে, অরোরা?

অরুকে আর পায় কে,দ্রুত পেছন ঘুরে সামনে গিয়ে দাড়ালো নিখিল ভাইয়ের,

অরু কাছে আসতেই নিখিল শুধালো,

--- অরোরা তুমি ঠিক আছো? না মানে কালকে ওভাবে।

কালকের কথা মনে পরতেই,ওর দৃশ্যপটে ভেসে ওঠে নিখিল ভাই আর সেই বিদেশিনীর একান্ত ব্যাক্তিগত উপচে পড়া হাসিখুশি মূর্হুতের ঘটনা। কেন এতো হাসছিল ওরা দুজন?আর মেয়েটাই বা কে? নিখিল ভাইয়ের বন্ধু? শুধুই কি বন্ধু?

অপার্থিব কিছু অপরিপক্ক প্রশ্ন আর কিছু অনাকাঙ্খিত মূহুর্তের কথা মাথায় কড়া নাড়ছে বারংবার। যার দরুন অরুর হাস্যোজ্জল মুখটা চুপসে এইটুকুনি হয়ে গেলো মূহুর্তেই।নিখিল ভাইয়ের এতোটা আগ্রহী প্রশ্নের জবাবটাও আর মুখ ফুটে দেওয়ার ইচ্ছে জাগলো না মনে।

কিন্তু নিখিলের পরবর্তী পদক্ষেপের জন্য তখন একটুও প্রস্তুত ছিলোনা অরু। ও ভাবেনি,এরপর নিখিল যেটা বলবে তাতে ওর এসব অযাচিত ছেলেমানুষী দুশ্চিন্তা হাওয়ায় মিলিয়ে যাবে ক্ষনিকের মাঝে। তবে কথায় আছেনা বাস্তবের চেয়ে ভাবনারা একধাপ পিছিয়ে থাকে, সেসময় তাই হলো,

অরু কথার কোনো জবাব দিচ্ছে না দেখে নিখিল আগ বাড়িয়েই বললো,

---নেক্সট উইকএন্ডে আমাদের ব্যাচের একটা ছোটখাটো রিচার্জ টীম যাবে পাহাড়ে। বেশি দূরে নয় কাছেই এক দিনের ট্যুর। ফ্রিতে এডভেঞ্চার আর ঘোরাঘুরির সুযোগটা কেউ মিস করতে চাচ্ছে না তাই অনেক জুনিয়ররাও যাবে। তুমিও চাইলে যেতে পারো। আমি ব্যাবস্থা করে দেবো।

লাজুক অরু ঠাস করে বলে দিতে পারলো না যে হ্যা হ্যা নিখিল ভাই, আমিও যেতে চাই আপনার সাথে। তার বদলে ছোট্ট করে হুম শব্দটা উচ্চারন করে শুধু একপাশে মাথা কাত করে সম্মতি জানালো ও ।

অরুর সম্মতি জানাতে যতক্ষণ, তারপর আর এক দন্ডও দাঁড়ালো নিখিল। প্রচন্ড বেগে একপ্রকার তাড়া দেখিয়ে তৎক্ষনাৎ যায়গা ত্যাগ করলো সে।

..............................................................................

𝐓𝐎 𝐁𝐄 𝐂𝐎𝐍𝐓𝐈𝐍𝐔𝐄𝐃

Episodes
1 List of stories...
2
3 সঙ্গিন প্রনয়াসক্তি [Part.1]
4 সঙ্গিন প্রনয়াসক্তি [Part.2]
5 সঙ্গিন প্রনয়াসক্তি [Part.3]
6 সঙ্গিন প্রনয়াসক্তি [Part.4]
7 সঙ্গিন প্রনয়াসক্তি [Part.5]
8 সঙ্গিন প্রনয়াসক্তি [Part.6]
9 সঙ্গিন প্রনয়াসক্তি [Part.7]
10 সঙ্গিন প্রনয়াসক্তি [Part.8]
11 সঙ্গিন প্রনয়াসক্তি [Part.9]
12 সঙ্গিন প্রনয়াসক্তি [Part.10]
13 সঙ্গিন প্রনয়াসক্তি [Part.11]
14 সঙ্গিন প্রনয়াসক্তি [Part.12]
15 সঙ্গিন প্রনয়াসক্তি [Part.13]
16 সঙ্গিন প্রনয়াসক্তি [Part.14]
17 সঙ্গিন প্রনয়াসক্তি [Part.15]
18
19 আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে [Part.1]
20 আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে [Part.2]
21 আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে [Part.3]
22 আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে [Part.4]
23 আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে [Part.5]
24 আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে [Part.6]
25 আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে [Part.7]
26 আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে [Part.8]
27 আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে [Part.9]
28 আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে [Part.10]
29 আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে [Part.11]
30 আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে [Part.12]
31 আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে [Part.13]
32 আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে [Part.14]
33 আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে [Part.15]
34 আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে [Part.16]
35 আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে [Part.17]
36 আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে [Part.18]
37 আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে [Part.19]
38 আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে [Part.20]
39 আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে [Part.21]
40 আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে [Part.22]
41 আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে [Part.23]
42
43 এক সমুদ্র প্রেম [Part.1]
44 এক সমুদ্র প্রেম [Part.2]
45 এক সমুদ্র প্রেম [Part.3]
46 এক সমুদ্র প্রেম [Part.4]
47 এক সমুদ্র প্রেম [Part.5]
48 এক সমুদ্র প্রেম [Part.6]
49 এক সমুদ্র প্রেম [Part.7]
50 এক সমুদ্র প্রেম [Part.8]
51 এক সমুদ্র প্রেম [Part.9]
52 এক সমুদ্র প্রেম [Part.10]
53 এক সমুদ্র প্রেম [Part.11]
54 এক সমুদ্র প্রেম [Part.12]
55 এক সমুদ্র প্রেম [Part.13]
56 এক সমুদ্র প্রেম [Part.14]
57 এক সমুদ্র প্রেম [Part.15]
58 এক সমুদ্র প্রেম [Part.16]
59 এক সমুদ্র প্রেম [Part.17]
60 এক সমুদ্র প্রেম [Part.18]
61
62 ইট পাটকেল [Part.1]
Episodes

Updated 62 Episodes

1
List of stories...
2
3
সঙ্গিন প্রনয়াসক্তি [Part.1]
4
সঙ্গিন প্রনয়াসক্তি [Part.2]
5
সঙ্গিন প্রনয়াসক্তি [Part.3]
6
সঙ্গিন প্রনয়াসক্তি [Part.4]
7
সঙ্গিন প্রনয়াসক্তি [Part.5]
8
সঙ্গিন প্রনয়াসক্তি [Part.6]
9
সঙ্গিন প্রনয়াসক্তি [Part.7]
10
সঙ্গিন প্রনয়াসক্তি [Part.8]
11
সঙ্গিন প্রনয়াসক্তি [Part.9]
12
সঙ্গিন প্রনয়াসক্তি [Part.10]
13
সঙ্গিন প্রনয়াসক্তি [Part.11]
14
সঙ্গিন প্রনয়াসক্তি [Part.12]
15
সঙ্গিন প্রনয়াসক্তি [Part.13]
16
সঙ্গিন প্রনয়াসক্তি [Part.14]
17
সঙ্গিন প্রনয়াসক্তি [Part.15]
18
19
আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে [Part.1]
20
আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে [Part.2]
21
আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে [Part.3]
22
আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে [Part.4]
23
আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে [Part.5]
24
আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে [Part.6]
25
আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে [Part.7]
26
আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে [Part.8]
27
আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে [Part.9]
28
আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে [Part.10]
29
আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে [Part.11]
30
আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে [Part.12]
31
আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে [Part.13]
32
আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে [Part.14]
33
আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে [Part.15]
34
আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে [Part.16]
35
আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে [Part.17]
36
আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে [Part.18]
37
আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে [Part.19]
38
আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে [Part.20]
39
আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে [Part.21]
40
আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে [Part.22]
41
আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে [Part.23]
42
43
এক সমুদ্র প্রেম [Part.1]
44
এক সমুদ্র প্রেম [Part.2]
45
এক সমুদ্র প্রেম [Part.3]
46
এক সমুদ্র প্রেম [Part.4]
47
এক সমুদ্র প্রেম [Part.5]
48
এক সমুদ্র প্রেম [Part.6]
49
এক সমুদ্র প্রেম [Part.7]
50
এক সমুদ্র প্রেম [Part.8]
51
এক সমুদ্র প্রেম [Part.9]
52
এক সমুদ্র প্রেম [Part.10]
53
এক সমুদ্র প্রেম [Part.11]
54
এক সমুদ্র প্রেম [Part.12]
55
এক সমুদ্র প্রেম [Part.13]
56
এক সমুদ্র প্রেম [Part.14]
57
এক সমুদ্র প্রেম [Part.15]
58
এক সমুদ্র প্রেম [Part.16]
59
এক সমুদ্র প্রেম [Part.17]
60
এক সমুদ্র প্রেম [Part.18]
61
62
ইট পাটকেল [Part.1]

Download

Like this story? Download the app to keep your reading history.
Download

Bonus

New users downloading the APP can read 10 episodes for free

Receive
NovelToon
Step Into A Different WORLD!
Download MangaToon APP on App Store and Google Play