অবাধ্য হৃদয়

অবাধ্য হৃদয়

পর্ব____১

[পর্বঃ১]

****************************************

লস অ্যাঞ্জেলেস, ক্যালিফোর্নিয়ার হৃৎপিণ্ডে জ্বলজ্বলে আলোর শহর। হলিউডের ঝলমলে স্বপ্ন, বিলাসবহুল প্রাসাদের সারি, আধুনিক প্রযুক্তির জয়গান আর নানা সংস্কৃতির মিলনমেলা।এই শহর যেন এক জীবন্ত ক্যানভাস। কিন্তু এই ঝকঝকে আলোর ছায়ায় লুকিয়ে আছে অন্ধকারের গল্প।

এই শহরের চাকচিক্য থেকে কিছুটা দূরে, প্রাণকেন্দ্রের কোলাহল ছাড়িয়ে, ধূলিমলিন, পরিত্যক্ত কারখানার গুদাম। দিনের আলোতেও এখানে নিস্তব্ধতা আর নির্জনতার রাজত্ব চলে। ধুলোর স্তরে ঢাকা মেঝে, ভাঙা জানালা দিয়ে ছেঁকে আসা ম্লান আলো আর মরচে ধরা লোহার গন্ধ, এই গুদাম হলো সময়ের কাছে পরাজিত এক ভুলে যাওয়া অধ্যায়।

এই অন্ধকার গুদামের মাঝেই একটা লোহার চেয়ারে ইনায়াকে বেঁধে রাখা হয়েছে। তার হাত-পা শক্ত দড়িতে আটকানো, চেয়ারের সঙ্গে যেন একাকার হয়ে গেছে। যখন তার জ্ঞান ফেরে, সে নিজেকে এই অসহায় অবস্থায় আবিষ্কার করে। ভয় আর বিস্ময়ে তার হৃৎপিণ্ড কেঁপে ওঠে।

সে চিৎকার করে,

“কেউ আছেন?"

আমাকে এখানে কেন আটকে রেখেছেন? প্লিজ, আমাকে যেতে দিন। তার কণ্ঠ ভেঙে আসে, কিন্তু নিস্তব্ধ গুদামে তার কথাগুলো শুধু প্রতিধ্বনিত হয়।তখনই অন্ধকারের গভীর থেকে একটি ছায়া এগিয়ে আসে। পায়ের শব্দ মেঝেতে ধীরে ধীরে প্রতিধ্বনিত হয়। আলোর এক টুকরো তার মুখে পড়তেই ইনায়া চমকে বলে উঠে,

—অলিভিয়া।

সে অলিভিয়াকে এইখানে দেখে কিছুটা অবাক হয়ে যায়। সে কাঁপা কাঁপা গলায় বলে উঠে,

—“অলিভিয়া? তুমি? আমাকে এখানে কেন বেঁধে রেখেছো?”

অলিভিয়ার ঠোঁটে একটি তীক্ষ্ণ, উন্মাদ হাসি ফুটে ওঠে। সে পাগলের মতো চিৎকার দিয়ে বলতে থাকে,

"কেন বেঁধে রেখেছি তুই জানিস না। তুই আমার এরিককে আমার কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছিস, তোর জন্য এরিক আমায় ছেড়ে দিয়েছে। তুই এরিকের লাইফে থাকলে, আমি কখনো আমার এরিককে পাবো না। তাই আজ তোকে আমি শেষ করে দেব।

সে একটা বন্দুক বের করে ইনায়ার দিকে তাক করে। ঠাণ্ডা ধাতব নলটি যেন মৃত্যুর হিমশীতল শ্বাস হয়ে ইনায়াকে আাড়ষ্ঠ করে রাখে।ঠিক সেই মুহূর্তে গুদামের দরজা খুলে যায়। এরিক ছুটে আসে, তার চোখে ভয় আর উৎকণ্ঠা ফুটে উঠে । ইনায়ার দিকে ব*ন্দুক তাক করানো দেখে তার মুখ ফ্যাকাশে হয়ে যায়।সে চিৎকার করে বলে উঠে,

“অলিভিয়া! ইনায়াকে ছেড়ে দে। এটা তুই ঠিক করছিস না। আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না।”

এরিকের মুখে ইনায়ার নাম শুনে অলিভিয়ার চোখে আগুন জ্বলে ওঠে।

“ইনায়া! ইনায়া! শুধু এই নাম!” তার কণ্ঠে উন্মাদনা আর মনে যন্ত্রণা তীব্র হয়ে যায়। “আমাকে তোমার চোখে পড়ে না, এরিক? আমি তোমাকে এত ভালোবাসি, কিন্তু তুমি শুধু এই মেয়ের জন্য পাগল। আমার ভালোবাসা কেন তোমার হৃদয় ছুঁতে পারে না? এই মেয়েটির জন্যই তুমি আমাকে ঠকিয়েছ। আজ আমি ওকে শেষ করব।” বলেই বন্দুকটি আরও শক্ত করে ইনায়ার দিকে ধরে সে।

এরিক বুঝতে পারে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। সে অলিভিয়ার দৃষ্টি নিজের দিকে টানার চেষ্টা করে। শান্ত কণ্ঠে বলে,

“অলিভিয়া, শান্ত হও। গানটা নামাও। আমরা বসে কথা বলি। তুমি আমাকে ভালোবাসো, তাই না? তাহলে এভাবে আমাকে কষ্ট দিচ্ছ কেন?”

তার কথার মায়ায় অলিভিয়া কিছুটা বিভ্রান্ত হয়। তার দৃষ্টি এরিকের দিকে ঘুরে যায়। এই সুযোগে এরিক ধীরে ধীরে ইনায়ার দিকে এগোয়। অলিভিয়ার সঙ্গে কথা বলতে বলতে সে ইনায়ার বাঁধন খুলে দেয়।ইনায়া মুক্ত হয়ে দাঁড়াতেই অলিভিয়া রাগে ফুঁসে ওঠে।

“আবারও তুমি আমাকে ধোকা দিলে, এরিক। এই মেয়ের জন্য।” তার কণ্ঠে ক্রোধ আর হতাশা ফুটে উঠে । এইবার সে কোন রকম সময় নষ্ট না করে, ব*ন্দুকের ট্রিগার টানে। একটি বুলেট তীব্র বেগে ইনায়ার দিকে ছুটে আসে। কিন্তু ইনায়ার কিছু হওয়ার আগেই এরিক তার সামনে ঝাঁপিয়ে পড়ে। বুলেটটি তার বুক চিরে বেরিয়ে যায়। মুহূর্তের মধ্যে এরিক মেঝেতে লুটিয়ে পড়ে, তার শার্ট র*ক্তে ভিজে যায়।ইনায়া চিৎকার করে এরিকের কাছে ছুটে যায়। তাকে জড়িয়ে ধরে কাঁপা গলায় বলে,

“এরিক, তুমি এটা কী করলে? আমার জন্য নিজের জীবন কেন ঝুঁকিতে ফেললে?”

এরিকের চোখে ফুটে উঠে এক অপার ভালোবাসা। সে ইনায়ার দিকে তাকিয়ে থাকে, যেন এই মুহূর্তটুকু চিরকালের জন্য ধরে রাখতে চায়। দুর্বল কণ্ঠে সে বলে,

“ভালোবাসলে এত কষ্ট কেন পেতে হয়, বলতে পারো? তোমাকে ভালোবেসে কী অপরাধ করেছি আমি? সমাজের নিয়ম, ধর্মের বেড়াজাল, এই পৃথিবী, কেউ আমাদের এক হতে দিল না। আমি শুধু তোমার পাশে থাকতে চেয়েছিলাম, তোমার হাসি দেখতে চেয়েছিলাম। আমার দোষটা কোথায় ছিল? কেন তুমিও আমাকে ভালোবাসলে না ... আমার কাছে আসতে পারলে না?”

"ইনায়ার চোখে ক্রমাগত অশ্রু ঝরে পরে ।সে কান্না করতে করতে বলে,

“এরিক, এমন বলো না, প্লিজ!”

এরিক একটি ম্লান হাসি দিয়ে বলে,

" ইনায়া, তোমাকে ভালোবেসে আমি যদি পাপ করে থাকি, তবে এই শাস্তি আমার প্রাপ্য। তোমার মতো পবিত্র ফুলকে ভালোবাসার অনুমতি আমার মতো পাপীর নেই। আমার ভালোবাসা ছিল অভিশপ্ত, তবু আমি তোমাকে ভালোবেসেছি,মন দিয়ে।”

ইনায়া তাকে জড়িয়ে ধরে বলে,

“এরিক, তোমার কিছু হবে না। আমি তোমাকে হাসপাতালে নিয়ে যাব। তুমি ঠিক হয়ে যাবে।”

কিন্তু এরিকের চোখে এক অদ্ভুত শান্তি ফুটে উঠে । সে বলে, “না, ইনায়া, আমার সময় ফুরিয়েছে। যে জীবনে তুমি নেই, সে জীবনের কোন মানে নেই? শুধু একটাই আফসোস থেকে যাবে~আমার ভালোবাসা অসম্পূর্ণ রয়ে গেল।”

তার কণ্ঠ ক্ষীণ হয়ে আসে। মাথাটি ইনায়ার কাঁধে ঢলে পড়ে, চোখ দুটি বন্ধ হয়ে যায়।ইনায়া তার নিথর দেহ জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে উঠে,

“এরিক...., তার চিৎকার গুদামের দেওয়ালে প্রতিধ্বনিত হয়। সে পাগলের মতো কান্না করতে করতে বললো,

"কেন এরিক আমাদের সাথে এমনটা হলো ।আমার যে তোমাকে অনেক কথা বলার ছিলো। আমিও যে তোমায় ভালোবাসি এরিক। হ্যাঁ, এরিক আমিও তোমায় ভালোবাসি, এই এরিক উঠ না, তুমি তো আমার এই একটা কথা শুনার জন্য এতগুলো বছর পাগলের মতো আমার পিছু পিছু ঘুরে বেরিয়েছো। তাহলে, কেন তুমি উঠছো না,দেখ তোমার ইনায়া তোমাকে ভালোভাসার কথা জানিয়েছে। "

ইনায়া আকাশের দিকে তাকিয়ে কাঁদে।

“হে আল্লাহ, আমার এরিককে ফিরিয়ে দাও। আমি তার থেকে চিরদিনের জন্য দূরে চলে যাব, তবুও তাকে বাঁচিয়ে দাও।”

তার কান্নার শব্দে বাতাসও যেন থমকে যায়। গুদামের ভাঙা জানালা দিয়ে আসা ম্লান আলো এরিকের নিথর মুখে পড়ে, যেন শেষবারের মতো তাকে আলোকিত করে।ইনায়া এরিকের মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। "

তার চোখের সামনে ভেসে ওঠে তিন বছর আগের সেই ঘটনা..............

ইউনিভার্সিটি অফ সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া (ইউএসসি), আমেরিকার শীর্ষস্থানীয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একটি, যেখানে অভিজাত পরিবারের সন্তানদের আধিপত্য একচ্ছত্র। এই ক্যাম্পাসে ঐশ্বর্য আর ক্ষমতার ঝলকানি প্রতিদিনের চিত্র।

হঠাৎই একটি কালো রঙের রোলস রয়েস, রাজকীয় গাম্ভীর্য নিয়ে, ক্যাম্পাসের প্রবেশপথে এসে থামে। গাড়ির দরজা খুলতেই চারপাশে উৎসুক মেয়েদের ভিড় জমে যায়, যেন কোনো তারকার আগমন ঘটেছে।গাড়ি থেকে নামে এরিক অ্যাসফোর্ড...বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকের একমাত্র ছেলে। গায়ে কালো শার্ট, জিম করা বডি , চোখে সানগ্লাস আর ঠোঁটে বাঁকা হাসি যেন সে হেঁটে আসছে সরাসরি কোনো হলিউড ছবির পর্দা থেকে। জুনিয়র থেকে শুরু করে সিনিয়র পর্যন্ত সব মেয়েই এই ব্যাড বয়ের উপর ফিদা।

এমন সময় ভিড়ের মধ্য থেকে ছুটে আসে অলিভিয়া নামের একটা মেয়ে, দৌড়ে এসে সে এরিককে জড়িয়ে ধরে বলে,

“বেইবি!” আই মিসড ইউ সো মাচ, বেইবি!”

এরিক, তার চিরচেনা বাঁকা হাসি ঠোঁটে ঝুলিয়ে, অলিভিয়াকে সামান্য দূরে সরিয়ে বলে,

“ওহ, ইউ মিসড মি? কেয়ারফুল বেইবি, ইউ মাইট গেট অ্যাডিক্টেড ইফ ইউ হাগ্‌ মি লাইক্ দ্যাট। অ্যান্ড আই মিসড ইউ টু, বেইবি।"

বলতে বলতেই এরিক অলিভিয়ার কোমরে হাত রেখে তাকে কাছে টেনে নেয়। পরক্ষণেই, পুরো ক্যাম্পাসের সামনে, তার ঠোঁট অলিভিয়ার ঠোঁটে ডুবিয়ে ডিপলি কিস করতে থাকে। এই দৃশ্য দেখে পুরো ক্যাম্পাসে হই, হল্লা পড়ে যায়। এটা তাদের কাছে নতুন কিছু নয় প্রতিটা মেয়েই এরিকের সংস্পর্শে এসেছে। এরিকের মায়াবী আকর্ষণে মুগ্ধ হয়নি, এমন মেয়ে খুঁজে পাওয়া দায়।

তবে ওলিভিয়া এ্যারিকের পিছনে আঠার মতো পড়ে আছে। পুরো কলেজে সে এ্যারিকের পিয়ন্সে হিসেবে পরিচিত। এ্যারিকের বাবা আর ওলিভিয়ার বাবা বিজনেস্ পার্টনার ।

************************************

চলবে............

Hot

Comments

dorothy

dorothy

arik playboy 🙂 ki kore inaya tar preme porlo 🙂🍃

2025-10-14

0

See all

Download

Like this story? Download the app to keep your reading history.
Download

Bonus

New users downloading the APP can read 10 episodes for free

Receive
NovelToon
Step Into A Different WORLD!
Download NovelToon APP on App Store and Google Play