\[পর্বঃ5\]
************************************
সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি ক্যালিফোর্নিয়া,
“আজ সকালবেলা থেকেই ক্যাম্পাসের অলি-গলি জুড়ে মানুষের ভিড় জমেছে।অজস্র মানুষের পদচারণায় গমগম করছে চত্বর,সবার মধ্যে কাঙ্খিত জিনিসটা দেখার আগ্রহ ফুটে উঠেছে। তাইতো সবাই একসাথে জড়ো হয়ে একসাথে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
ইনায়ার ক্যাম্পাসে পৌঁছাতে আজ বেশ দেরি হয়ে গেল। প্রবেশ করতেই সে টের পেল এক অস্বাভাবিক পরিবেশ বিরাজ করছে চারপাশে।সবাই তার দিকে তাকাচ্ছে আর নিজেদের মধ্যে ফিসফিস করছে, কেউ কেউ তো তাকে দেখে হেসে বলে উঠছে,
—"আরে, এসে গেছে মিস কফিন!
ইনায়া তাদের কথাবার্তাকে সম্পূর্ণ রূপে ইগনোর করে সামনে এগিয়ে গেল।সে সামনে এগোতেই, প্রতিটি মুখ ঘুরে ঘুরে তাকায় তার দিকে-কেউ সরাসরি, কেউ বা আড়চোখে তাকায়।
ইনায়া কিছুতেই বুঝে উঠতে পারে না, তার চারপাশের এই অস্বাভাবিক আচরণের কারণ কী?মাএ দুইদিন হয়েছে সে এই ক্যাম্পাসে পা রেখেছে। এই দুই-দিনের মধ্যেই সে সকলের আলোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে পরিণত হয়েছে। সে সকলের দৃষ্টিকে মাড়িয়ে সামনে এগোতেই তার নজর বিশাল বড় দেওয়ালের উপর টাঙানো পোস্টারের দিকে পড়ে।পোস্টারটিতে তার আবায়া পড়া ছবি যেটিকে তারা খুব বাজেভাবে উপস্থাপন করেছে। আর তার পাশে গুটি গুটি অক্ষরে লেখা টেরোরিস্ট, লিভ মাই কানট্রি যেইগুলো তাকে সরাসরি হেনস্তা করার জন্য লিখা হয়েছে।
ইনায়া আর সেইখানে একমুহূর্ত না দাঁড়িয়ে দ্রুত পায়ে এগিয়ে গেল দেওয়ালের দিকে।হাত বাড়িয়ে একে একে দেয়াল থেকে পোস্টারগুলো ছিঁড়ে ফেলতে লাগল- প্রতিটি ছেঁড়া পোস্টার যেন তার ক্ষোভের নীরব প্রতিবাদ হয়ে ফুটে উঠছে। ছেঁড়া কাগজগুলো আঁকড়ে ধরে, ক্যাম্পাসের মাঝখানে দাঁড়িয়ে ইনায়া গলা ছেড়ে চিৎকার করে উঠল-
"কে করেছে এই কাজটা?
আমি তোমাদের কী এমন ক্ষতি করেছি,যে তোমরা আমার সঙ্গে এমন আচরণ করছো? আমার প্রতি এতটা বিদ্বেষ কেন তোমাদের?
ইনায়ার কণ্ঠে প্রতিবাদের ঝড় বইতেই ভিড়ের মধ্য থেকে এক দল মেয়ে এগিয়ে এল।তাদের চোখে ছিল তার ইনায়ার প্রতি বিদ্বেষ আর ঠোঁটে ছিল তাচ্ছিল্যের হাসি।তারা ইনায়াকে কড়া গলায় বললো,
—"প্রথমমত, তুই আমাদের সোসাইটিতে একেবারে বেমানান"।আই মিন লুক এ্যাট ইউর সেল্ফ,তোকে দেখতে কোন সন্ত্রাসবাদীর থেকে কম লাগছে না। দ্বিতীয়ত, তুই আমাদের ক্রাশ বয় এরিককে থাপ্পড় মেরেছিস।
"তুই ভাবলি কী করে,
আমাদের ক্রাশকে সবার সামনে থাপ্পড় মেরে পার পেয়ে যাবি?
এটাতো কেবল শুরু, ইনায়া!
আস্তে আস্তে দেখতে থাক, তোর সাথে ঠিক কী কী হয়? আমরা তোকে এই ইউনিভার্সিটি থেকে বের করেই ছাড়বো!
ইনায়া তাদের কথার প্রতিউওরে বলে উঠে,
—এই ইউনিভার্সিটিতে তোমাদের মতো আমারও পড়ার অধিকার আছে।শুধু মাএ আমার পোষাকের জন্য তোমরা আমাকে জার্জ করতে পারো না।
—"আল্লাহ, আমার সাথে আছে। তোমরা আমার কিছুই করতে পারবে না। "
পুরো ক্যাম্পাসের সামনে দাঁড়িয়ে ইনায়া নির্ভয়ে কথাটি বলে ওয়াশরুমের দিকে হাঁটা ধরলো। এই মুহুর্তে নিজেকে শান্ত করতে একা থাকা খুব জরুরি তার।এই মুহুর্তে ইনায়া ওয়াশরুমে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে প্রচুর কান্নাকাটি করতে থাকে। হঠাৎ আয়নার ভেতর থেকে এক দৃঢ় কণ্ঠ ভেসে এলো,ইনায়ার নিজেরই আরেক সত্তা তাকে বলছে-
নিজেকে এতটা অসহায় ভেবো না, ইনায়া। কেন তুমি ওদের কথায় ভেঙে পড়ছো? তোমার শক্তি তোমার পোশাক বা চেহারায় নয়, বরং তোমার বিশ্বাসে। নিজের ওপর বিশ্বাস রাখো। তুমি জানো তুমি সঠিক, তাহলে আর ভয় কীসের?
আয়নার ওপাশের ইনায়া চোখের জল মুছে দৃঢ়তার সাথে বলল,
"তোমার চোখের জল তাদের জেতার কারণ হবে। এই কান্নাকাটি বন্ধ করো। উঠে দাঁড়াও। তুমি এই ক্যাম্পাসে পড়ার অধিকার নিয়ে এসেছো, কারও দয়ায় নয়। তোমার প্রতিবাদ ওদের কথার চেয়েও বেশি জোরালো। এবার তোমার সেই প্রতিবাদ দেখানোর সময়।"
"ওরা যা করছে তা ওদের দুর্বলতা। তুমি যা করছো, তা তোমার শক্তি। ওদের নোংরা কথায় ভেঙে না পড়ে, নিজের লক্ষ্যে স্থির থাকো। প্রমাণ করে দাও যে তুমি এখানে শুধু পড়াশোনার জন্যই আসোনি, বরং এই সমাজের নোংরা মানসিকতার বিরুদ্ধে লড়াই করতে এসেছো। মনে রেখো, তোমার আল্লাহ তোমার সঙ্গে আছেন, আর কোনো শক্তির প্রয়োজন নেই।"
"আর এরিককে থাপ্পড় মারার জন্য তোমার কোনো অনুশোচনা থাকা উচিত নয়। একজন নারী হিসেবে নিজের আত্মসম্মান রক্ষা করা তোমার অধিকার। যে মানুষটি তোমাকে অসম্মান করার চেষ্টা করেছে, তাকে উচিত শিক্ষা দিয়ে তুমি ভুল করোনি। এই আত্মবিশ্বাস নিয়েই তুমি সামনে এগিয়ে চলো।"
আয়নার সামনে নিজের সত্তার সাথে কথা বলার পর ইনায়ার ভেতরের শক্তি আবার জেগে উঠলো। চোখের জল মুছে সে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হলো, আর কোনোভাবেই সে দুর্বল হবে না। এই অপমানের জবাব সে তার কাজ দিয়ে দেবে।
************************************
Galen Center-USC-র বাস্কেটবলের মাঠ হলো একটা আধুনিক কাঁচ-আর-ইস্পাতের রাজপ্রাসাদ, যেখানে হাজারো দর্শকের গর্জন, ঝলমলে আলো আর কাঠের কোর্টে ছুটে চলা খেলোয়াড়দের ঘাম মিশে যায় ক্যালিফোর্নিয়ার উষ্ণ পড়ন্ত বিকেলে।
কোর্টের ঠিক মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে এরিক-
তার হাতে বাস্কেটবল, চোখে তার এক অদ্ভুত আত্মবিশ্বাসের ঝিলিক।
কালো থিন স্লিভের হুডি গায়ে,
যার ফাঁক দিয়ে ডান বাহুর ট্যাটুটা যেন আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে,
ধূসর শর্টস, হাঁটু পর্যন্ত মোজা আর সাদা স্নিকার্সে
তার উপস্থিতি যেন পুরো কোর্টটাকে দখল করে নিয়েছে।
পেছনে চুল টাইট করে বাঁধা,শরীর ঘামে চকচক করছে।
এরিকের এই হট রূপ দেখে গ্যালারির মেয়েরা একসাথে চিৎকারে ফেটে পড়ে।
কেউ মোবাইলে ছবি তোলে, কেউ উচ্ছ্বাসে হাততালি দেয়।
একজন মেয়ে উত্তেজনায় পাশের বান্ধবীকে ফিসফিসিয়ে বলে ওঠে-
"ওহ, মাই গড,লুক এ্যাট হিজ্ রাইট হ্যান্ড!হিজ ট্যাটু লুক সো অ্যাট্রাক্টিভ!আমার তো ওর ট্যাটুটা দেখেই হৃদপিণ্ড বেড়ে যাচ্ছে। "
তাদের মধ্য থেকে আরেকজন মেয়ে লাজুক কণ্ঠে বলে-
"ওর হুডির নিচে যে অ্যাবস লুকানো আছে,
সেইটা যদি একবার দেখতে পারতাম..."
পাশের আরেক মেয়ে বিস্ময় আর উত্তেজনায় বলে ওঠে-
"ওহ মাই গড, একটা ছেলে কীভাবে এতটা হট হতে পারে? ও যখন বল ড্রিবল করছিল, মনে হচ্ছিল যেন আমার হার্টও তার ছন্দে ড্রিবল করছে!"
আরেকজন মেয়ে হেসে বলে-
"আজকে ম্যাচটা কে জিতবে জানি না,
কিন্তু এরিক তো আমাদের মন আগেই জিতে নিয়েছে!"
তাদের এইসব কথা শুনে পেছন থেকে এক সিনিয়র মেয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে ওঠে-
"ওকে পাওয়া তো দূরের কথা,
ওকে নিয়ে স্বপ্ন দেখাটাও রিস্কি।
আমরা মেয়েরা কেন যে ব্যাড বয়দের প্রতি বেশি আকৃষ্ট হই!"
সিনিয়রের কথা শুনে সব মেয়েরা এবার একযোগে দীর্ঘশ্বাস ফেলে।
****************-********************
চলবে..
***Download NovelToon to enjoy a better reading experience!***
Updated 8 Episodes
Comments