[পর্বঃ২]
************************************
ইউনিভার্সিটির কেমিস্ট্রি বিভাগের ক্লাসরুমে এক অস্বাভাবিক উত্তেজনা। ছাত্র-ছাত্রীদের চিৎকার-চেঁচামেচির মাঝে হঠাৎ দরজা খুলে প্রবেশ করলেন শিক্ষিকা, তাঁর পিছনে এক তেইশ বছরের তরুনী। লম্বা, গাঢ় রঙের পোশাক আর মাথায় হিজাবে ঢাকা তার চেহারা দেখে রুমের গুঞ্জন থেমে গেল। সবার চোখে বিস্ময়, কৌতূহল, আর কিছুটা অস্বস্তি। ক্যালিফোর্নিয়ার উদার, উচ্ছল ক্যাম্পাসে এমন পোশাক যেন এক অপ্রত্যাশিত দৃশ্য।শিক্ষিকা ইনায়াকে সামনে এনে পরিচয় করিয়ে দিলেন,
“ইনি ইনায়া শেখ, তোমাদের নতুন সহপাঠী।” কথাটা শুনে ইনায়া একবার সামনে তাকাল। সহপাঠীদের চোখে কৌতুক, কারো কারো মুখে বিদ্রূপের হাসি। যেন তারা তাকে বিচার করছে, তার পোশাক, তার উপস্থিতি দেখে। ইনায়া মনে মনে আল্লাহর নাম স্মরণ করে এগিয়ে গেল বসার জায়গা খুঁজতে। কিন্তু প্রতিবারই একই দৃশ্য, যার কাছে সে বসতে যাচ্ছে, সে ব্যাগ বা বই ফাঁকা জায়গায় রেখে দিচ্ছে। নীরবে, কিন্তু স্পষ্টভাবে তাকে প্রত্যাখ্যান করছে।
শেষে, কোনো উপায় না পেয়ে, ইনায়া পিছনের একটি ফাঁকা আসনে গিয়ে বসল। তার বুকের ভেতরটা ভারী, কিন্তু মুখে ছিল শান্ত দৃঢ়তা।
ক্লাস শেষ হতেই অলিভিয়া, তার কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে, ইনায়ার দিকে এগিয়ে এল। তার চোখে স্পষ্ট উপহাস, মুখে তাচ্ছিল্য ফুটে উঠল ।
সো, ইউ’আর রিয়ালি গোইং টু ড্রেস লাইক দ্যাট হিয়ার? সিরিয়াসলি, ইনায়া, ডু ইউ ইভেন নো হোয়াট ইয়ার ইট ইজ? ইউ লুক লাইকের ইউ কেম ফ্রম অ্যানাদার প্ল্যানেট! হু ওয়েয়ার্স দ্যাট ইন ক্যালিফোর্নিয়া? ইউ আর লুকিং লাইক এ আন্টি।"
তার কথায় পাশের বন্ধুরা হেসে উঠল, যেন ইনায়াকে হেয় করাটাই তাদের বিনোদন।
ইনায়া এক মুহূর্ত থামল। তার হৃৎপিণ্ডে অপমানের তীর বিঁধলেও, সে শান্ত রইল। অলিভিয়ার চোখে চোখ রেখে, স্পষ্ট, দৃঢ় কণ্ঠে বলল,
“আমি জানি আমি ক্যালিফোর্নিয়ায় আছি। কিন্তু নিজের বিশ্বাস আর পরিচয় হারিয়ে নয়। তুমি হয়তো মনে করো পোশাকই মানুষকে সংজ্ঞায়িত করে। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি, মানুষের আসল পরিচয় তার আচরণে, অন্যকে সম্মান করার ভঙ্গিতে। তুমি আমাকে ‘আন্টি’ বলেছ, কিন্তু আমি গর্বিত যে আমি এমন পোশাক পরি, যা আমাকে আমার মূল্যবোধের সঙ্গে জুড়ে রাখে। আমি এখানে এসেছি পড়াশোনা করতে, শিখতে, ভালো মানুষ হতে। কারো স্টাইল গাইডলাইন মানতে নয়। আর হ্যাঁ, আমিও এই পৃথিবীরই মানুষ, শুধু তোমার মতো দেখতে নই।”
ইনায়ার কথা শুনে অলিভিয়ার মুখ লাল হয়ে উঠল। তার চোখে রাগের ঝলক দেখা দিল। পাশে দাঁড়ানো বন্ধুরাও যেন অপ্রত্যাশিত এই প্রত্যুত্তরে ক্ষুব্ধ। ইনায়ার শান্ত, কিন্তু তীক্ষ্ণ কথাগুলো অলিভিয়ার অহংকারে আঘাত করেছিল। ইনায়া চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই অলিভিয়া চিৎকার করে উঠল,
" হোয়াট দা হেল! ডিড ইউ জাস্ট ট্রাই টু গিভ মি এ লেকচার? ইন ফ্রন্ট অব এভরিওয়ান?"
তার গলায় কাঁপন, যেন সে নিজেই নিজের রাগ সামলাতে পারছে না।
"লিসেন, নিউ গার্ল! এই ইউনিভার্সিটিতে আমি কী বলি, সেটাই চলে। তুমি হয়তো ভাবছো তুমি খুব সাহসী, খুব স্মার্ট। কিন্তু আমিও দেখবো, তুমি এইখানে কীভাবে টিকে থাকতে পারো।
কথা শেষ করে অলিভিয়া ইনায়াকে ধাক্কা দিয়ে, বন্ধুদের নিয়ে দ্রুত ক্লাস থেকে বেরিয়ে গেল। ইনায়া এক মুহূর্ত দাঁড়িয়ে রইল। তার চোখে দৃঢ়তা, বুকে এক অদ্ভুত শক্তি। সে জানে, এই পথ সহজ হবে না। কিন্তু তার বিশ্বাস, তার পরিচয়, তার মূল্যবোধ~এগুলোই তাকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। আস্তে আস্তে সে ব্যাগ কাঁধে তুলে নিল, আর নিজের মনে বলল, “আল্লাহ, তুমিই আমার শক্তি।” তারপর, মাথা উঁচু করে, সে ক্লাসরুম থেকে বেরিয়ে গেল।
ইনায়া রুম থেকে বেরিয়ে মাঠের দিকে পা বাড়াতেই কানে ভেসে এলো এক অদ্ভুত গুঞ্জন -চিৎকার, চেঁচামেচি, উল্লাসের ঢেউ। কৌতূহলী মনে সে এগিয়ে গেল, আর একটি মেয়ের কাছে জিজ্ঞেস করলো,
“এখানে কী হচ্ছে?”
মেয়েটি বিস্ময়ভরা চোখে তাকিয়ে বললো,
“তুমি কী এরিক অ্যাসফোর্ডকে চেনো না?” ইনায়া মাথা নেড়ে অজ্ঞতা জানাতেই মেয়েটির চোখে অবিশ্বাসের ছায়া।
“কী বলছো? এই ইউনিভার্সিটিতে এমন কেউ আছে, যে আমাদের ক্রাশ বয় এরিককে চেনে না?
জুনিয়র থেকে সিনিয়র, সবাই তো ওর এক ঝলক দেখার জন্য পাগল!
আমিতো সেই দিনের অপেক্ষায় আছি, যেদিন এরিক আমাকে ডেটে নিয়ে যাবে।”
হঠাৎ মাথায় হাত দিয়ে সে চেঁচিয়ে উঠলো,
“ওহ, তোমার সাথে কথা বলতে গিয়ে ভুলেই গেছি, এরিকের কার রেসিং এর কথা। আমি গেলাম,বাই।
”ইউনিভার্সিটির বিশাল খেলার মাঠটি রেসের জন্য সাজানো হয়েছে। কিছুক্ষণ পরেই শুরু হবে এরিক আর লিয়নের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। মেয়েরা সবাই এরিককে চেয়ার আপ করতে থাকে।তা দেখে, লিয়ন একটু রাগী ভঙ্গিতে বলে,
সবাই শুধু এরিক, এরিক করে! আজ আমি প্রমাণ করে দেবো, এরিক অ্যাসফোর্ড ছাড়া এই ইউনিভার্সিটিতে আর কেউ নেই-এই ধারণাটা ভুল। আজকের রেসটা আমার জন্য, এরিকের অহংকার ভাঙার জন্য।
এরিক, তার ঠোঁটে শয়তানি হাসি ঝুলিয়ে, শান্ত কণ্ঠে জবাব দিল,
“তুই তো অনেক স্বপ্ন দেখিস, লিয়ন। কিন্তু স্বপ্ন আর বাস্তবের মধ্যে পার্থক্যটা বুঝতে শিখ-কারণ এখানে জিতবো সবসময় আমি।"
লিয়নের চোখে জ্বলে উঠলো শত্রুতার আগুন। মনে মনে সে প্রতিজ্ঞা করলো, যেভাবেই হোক, এরিককে একদিন ধরাশায়ী করবেই।রেস শুরু হলো। দুই গাড়ি, দুই প্রতিদ্বন্দ্বী, মাঠের ধুলো উড়িয়ে ছুটলো। কেউ কাউকে ছাড় দিচ্ছে না। শেষ মুহূর্তে এরিকের গাড়ি লিয়নকে পেছনে ফেলে ফিনিশিং লাইন ছুঁয়ে দিল। মেয়েরা উল্লাসে ফেটে পড়লো। লিয়নের চোখে হিংসার আগুন জ্বলে উঠল।এরিক গাড়ি থেকে নেমে, লিয়নের কাছে গিয়ে ঠাট্টার সুরে বললো,
“দেখলি তো, হার আর জিত আমার কাছে শুধু একটা খেলা-কিন্তু তোর তো আবার হেরে গেলে হিংসা বেরিয়ে পড়ে।
সবাই চায় এরিকের মতো হতে, কিন্তু সবাই পারে না। Try harder next time, champ!"
এই বলে, এক চোখ টিপে, গাড়ির চাবি ঘুরাতে ঘুরাতে সে অলিভিয়ার দিকে এগিয়ে গেল।
“আই নিড এনার্জি, বেইব। কাম অন, কিস মি উইথ ইয়োর ফা****ং বিউটিফুল লিপস!” বলেই সে অলিভিয়ার ঠোঁটে গভীর চুম্বন এঁকে দিল।
চলবে.....
***Download NovelToon to enjoy a better reading experience!***
Updated 8 Episodes
Comments
your nightmare
apnar country ki? author...good story but english e dile internationally sbi porte parto.. bc story ta asholei good...keep it up...joldi joldi new chapters diten 🥺
2025-10-16
0
dorothy
sahosi inaya
2025-10-16
1