NovelToon NovelToon

অবাধ্য হৃদয়

পর্ব____১

[পর্বঃ১]

****************************************

লস অ্যাঞ্জেলেস, ক্যালিফোর্নিয়ার হৃৎপিণ্ডে জ্বলজ্বলে আলোর শহর। হলিউডের ঝলমলে স্বপ্ন, বিলাসবহুল প্রাসাদের সারি, আধুনিক প্রযুক্তির জয়গান আর নানা সংস্কৃতির মিলনমেলা।এই শহর যেন এক জীবন্ত ক্যানভাস। কিন্তু এই ঝকঝকে আলোর ছায়ায় লুকিয়ে আছে অন্ধকারের গল্প।

এই শহরের চাকচিক্য থেকে কিছুটা দূরে, প্রাণকেন্দ্রের কোলাহল ছাড়িয়ে, ধূলিমলিন, পরিত্যক্ত কারখানার গুদাম। দিনের আলোতেও এখানে নিস্তব্ধতা আর নির্জনতার রাজত্ব চলে। ধুলোর স্তরে ঢাকা মেঝে, ভাঙা জানালা দিয়ে ছেঁকে আসা ম্লান আলো আর মরচে ধরা লোহার গন্ধ, এই গুদাম হলো সময়ের কাছে পরাজিত এক ভুলে যাওয়া অধ্যায়।

এই অন্ধকার গুদামের মাঝেই একটা লোহার চেয়ারে ইনায়াকে বেঁধে রাখা হয়েছে। তার হাত-পা শক্ত দড়িতে আটকানো, চেয়ারের সঙ্গে যেন একাকার হয়ে গেছে। যখন তার জ্ঞান ফেরে, সে নিজেকে এই অসহায় অবস্থায় আবিষ্কার করে। ভয় আর বিস্ময়ে তার হৃৎপিণ্ড কেঁপে ওঠে।

সে চিৎকার করে,

“কেউ আছেন?"

আমাকে এখানে কেন আটকে রেখেছেন? প্লিজ, আমাকে যেতে দিন। তার কণ্ঠ ভেঙে আসে, কিন্তু নিস্তব্ধ গুদামে তার কথাগুলো শুধু প্রতিধ্বনিত হয়।তখনই অন্ধকারের গভীর থেকে একটি ছায়া এগিয়ে আসে। পায়ের শব্দ মেঝেতে ধীরে ধীরে প্রতিধ্বনিত হয়। আলোর এক টুকরো তার মুখে পড়তেই ইনায়া চমকে বলে উঠে,

—অলিভিয়া।

সে অলিভিয়াকে এইখানে দেখে কিছুটা অবাক হয়ে যায়। সে কাঁপা কাঁপা গলায় বলে উঠে,

—“অলিভিয়া? তুমি? আমাকে এখানে কেন বেঁধে রেখেছো?”

অলিভিয়ার ঠোঁটে একটি তীক্ষ্ণ, উন্মাদ হাসি ফুটে ওঠে। সে পাগলের মতো চিৎকার দিয়ে বলতে থাকে,

"কেন বেঁধে রেখেছি তুই জানিস না। তুই আমার এরিককে আমার কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছিস, তোর জন্য এরিক আমায় ছেড়ে দিয়েছে। তুই এরিকের লাইফে থাকলে, আমি কখনো আমার এরিককে পাবো না। তাই আজ তোকে আমি শেষ করে দেব।

সে একটা বন্দুক বের করে ইনায়ার দিকে তাক করে। ঠাণ্ডা ধাতব নলটি যেন মৃত্যুর হিমশীতল শ্বাস হয়ে ইনায়াকে আাড়ষ্ঠ করে রাখে।ঠিক সেই মুহূর্তে গুদামের দরজা খুলে যায়। এরিক ছুটে আসে, তার চোখে ভয় আর উৎকণ্ঠা ফুটে উঠে । ইনায়ার দিকে ব*ন্দুক তাক করানো দেখে তার মুখ ফ্যাকাশে হয়ে যায়।সে চিৎকার করে বলে উঠে,

“অলিভিয়া! ইনায়াকে ছেড়ে দে। এটা তুই ঠিক করছিস না। আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না।”

এরিকের মুখে ইনায়ার নাম শুনে অলিভিয়ার চোখে আগুন জ্বলে ওঠে।

“ইনায়া! ইনায়া! শুধু এই নাম!” তার কণ্ঠে উন্মাদনা আর মনে যন্ত্রণা তীব্র হয়ে যায়। “আমাকে তোমার চোখে পড়ে না, এরিক? আমি তোমাকে এত ভালোবাসি, কিন্তু তুমি শুধু এই মেয়ের জন্য পাগল। আমার ভালোবাসা কেন তোমার হৃদয় ছুঁতে পারে না? এই মেয়েটির জন্যই তুমি আমাকে ঠকিয়েছ। আজ আমি ওকে শেষ করব।” বলেই বন্দুকটি আরও শক্ত করে ইনায়ার দিকে ধরে সে।

এরিক বুঝতে পারে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। সে অলিভিয়ার দৃষ্টি নিজের দিকে টানার চেষ্টা করে। শান্ত কণ্ঠে বলে,

“অলিভিয়া, শান্ত হও। গানটা নামাও। আমরা বসে কথা বলি। তুমি আমাকে ভালোবাসো, তাই না? তাহলে এভাবে আমাকে কষ্ট দিচ্ছ কেন?”

তার কথার মায়ায় অলিভিয়া কিছুটা বিভ্রান্ত হয়। তার দৃষ্টি এরিকের দিকে ঘুরে যায়। এই সুযোগে এরিক ধীরে ধীরে ইনায়ার দিকে এগোয়। অলিভিয়ার সঙ্গে কথা বলতে বলতে সে ইনায়ার বাঁধন খুলে দেয়।ইনায়া মুক্ত হয়ে দাঁড়াতেই অলিভিয়া রাগে ফুঁসে ওঠে।

“আবারও তুমি আমাকে ধোকা দিলে, এরিক। এই মেয়ের জন্য।” তার কণ্ঠে ক্রোধ আর হতাশা ফুটে উঠে । এইবার সে কোন রকম সময় নষ্ট না করে, ব*ন্দুকের ট্রিগার টানে। একটি বুলেট তীব্র বেগে ইনায়ার দিকে ছুটে আসে। কিন্তু ইনায়ার কিছু হওয়ার আগেই এরিক তার সামনে ঝাঁপিয়ে পড়ে। বুলেটটি তার বুক চিরে বেরিয়ে যায়। মুহূর্তের মধ্যে এরিক মেঝেতে লুটিয়ে পড়ে, তার শার্ট র*ক্তে ভিজে যায়।ইনায়া চিৎকার করে এরিকের কাছে ছুটে যায়। তাকে জড়িয়ে ধরে কাঁপা গলায় বলে,

“এরিক, তুমি এটা কী করলে? আমার জন্য নিজের জীবন কেন ঝুঁকিতে ফেললে?”

এরিকের চোখে ফুটে উঠে এক অপার ভালোবাসা। সে ইনায়ার দিকে তাকিয়ে থাকে, যেন এই মুহূর্তটুকু চিরকালের জন্য ধরে রাখতে চায়। দুর্বল কণ্ঠে সে বলে,

“ভালোবাসলে এত কষ্ট কেন পেতে হয়, বলতে পারো? তোমাকে ভালোবেসে কী অপরাধ করেছি আমি? সমাজের নিয়ম, ধর্মের বেড়াজাল, এই পৃথিবী, কেউ আমাদের এক হতে দিল না। আমি শুধু তোমার পাশে থাকতে চেয়েছিলাম, তোমার হাসি দেখতে চেয়েছিলাম। আমার দোষটা কোথায় ছিল? কেন তুমিও আমাকে ভালোবাসলে না ... আমার কাছে আসতে পারলে না?”

"ইনায়ার চোখে ক্রমাগত অশ্রু ঝরে পরে ।সে কান্না করতে করতে বলে,

“এরিক, এমন বলো না, প্লিজ!”

এরিক একটি ম্লান হাসি দিয়ে বলে,

" ইনায়া, তোমাকে ভালোবেসে আমি যদি পাপ করে থাকি, তবে এই শাস্তি আমার প্রাপ্য। তোমার মতো পবিত্র ফুলকে ভালোবাসার অনুমতি আমার মতো পাপীর নেই। আমার ভালোবাসা ছিল অভিশপ্ত, তবু আমি তোমাকে ভালোবেসেছি,মন দিয়ে।”

ইনায়া তাকে জড়িয়ে ধরে বলে,

“এরিক, তোমার কিছু হবে না। আমি তোমাকে হাসপাতালে নিয়ে যাব। তুমি ঠিক হয়ে যাবে।”

কিন্তু এরিকের চোখে এক অদ্ভুত শান্তি ফুটে উঠে । সে বলে, “না, ইনায়া, আমার সময় ফুরিয়েছে। যে জীবনে তুমি নেই, সে জীবনের কোন মানে নেই? শুধু একটাই আফসোস থেকে যাবে~আমার ভালোবাসা অসম্পূর্ণ রয়ে গেল।”

তার কণ্ঠ ক্ষীণ হয়ে আসে। মাথাটি ইনায়ার কাঁধে ঢলে পড়ে, চোখ দুটি বন্ধ হয়ে যায়।ইনায়া তার নিথর দেহ জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে উঠে,

“এরিক...., তার চিৎকার গুদামের দেওয়ালে প্রতিধ্বনিত হয়। সে পাগলের মতো কান্না করতে করতে বললো,

"কেন এরিক আমাদের সাথে এমনটা হলো ।আমার যে তোমাকে অনেক কথা বলার ছিলো। আমিও যে তোমায় ভালোবাসি এরিক। হ্যাঁ, এরিক আমিও তোমায় ভালোবাসি, এই এরিক উঠ না, তুমি তো আমার এই একটা কথা শুনার জন্য এতগুলো বছর পাগলের মতো আমার পিছু পিছু ঘুরে বেরিয়েছো। তাহলে, কেন তুমি উঠছো না,দেখ তোমার ইনায়া তোমাকে ভালোভাসার কথা জানিয়েছে। "

ইনায়া আকাশের দিকে তাকিয়ে কাঁদে।

“হে আল্লাহ, আমার এরিককে ফিরিয়ে দাও। আমি তার থেকে চিরদিনের জন্য দূরে চলে যাব, তবুও তাকে বাঁচিয়ে দাও।”

তার কান্নার শব্দে বাতাসও যেন থমকে যায়। গুদামের ভাঙা জানালা দিয়ে আসা ম্লান আলো এরিকের নিথর মুখে পড়ে, যেন শেষবারের মতো তাকে আলোকিত করে।ইনায়া এরিকের মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। "

তার চোখের সামনে ভেসে ওঠে তিন বছর আগের সেই ঘটনা..............

ইউনিভার্সিটি অফ সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া (ইউএসসি), আমেরিকার শীর্ষস্থানীয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একটি, যেখানে অভিজাত পরিবারের সন্তানদের আধিপত্য একচ্ছত্র। এই ক্যাম্পাসে ঐশ্বর্য আর ক্ষমতার ঝলকানি প্রতিদিনের চিত্র।

হঠাৎই একটি কালো রঙের রোলস রয়েস, রাজকীয় গাম্ভীর্য নিয়ে, ক্যাম্পাসের প্রবেশপথে এসে থামে। গাড়ির দরজা খুলতেই চারপাশে উৎসুক মেয়েদের ভিড় জমে যায়, যেন কোনো তারকার আগমন ঘটেছে।গাড়ি থেকে নামে এরিক অ্যাসফোর্ড...বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকের একমাত্র ছেলে। গায়ে কালো শার্ট, জিম করা বডি , চোখে সানগ্লাস আর ঠোঁটে বাঁকা হাসি যেন সে হেঁটে আসছে সরাসরি কোনো হলিউড ছবির পর্দা থেকে। জুনিয়র থেকে শুরু করে সিনিয়র পর্যন্ত সব মেয়েই এই ব্যাড বয়ের উপর ফিদা।

এমন সময় ভিড়ের মধ্য থেকে ছুটে আসে অলিভিয়া নামের একটা মেয়ে, দৌড়ে এসে সে এরিককে জড়িয়ে ধরে বলে,

“বেইবি!” আই মিসড ইউ সো মাচ, বেইবি!”

এরিক, তার চিরচেনা বাঁকা হাসি ঠোঁটে ঝুলিয়ে, অলিভিয়াকে সামান্য দূরে সরিয়ে বলে,

“ওহ, ইউ মিসড মি? কেয়ারফুল বেইবি, ইউ মাইট গেট অ্যাডিক্টেড ইফ ইউ হাগ্‌ মি লাইক্ দ্যাট। অ্যান্ড আই মিসড ইউ টু, বেইবি।"

বলতে বলতেই এরিক অলিভিয়ার কোমরে হাত রেখে তাকে কাছে টেনে নেয়। পরক্ষণেই, পুরো ক্যাম্পাসের সামনে, তার ঠোঁট অলিভিয়ার ঠোঁটে ডুবিয়ে ডিপলি কিস করতে থাকে। এই দৃশ্য দেখে পুরো ক্যাম্পাসে হই, হল্লা পড়ে যায়। এটা তাদের কাছে নতুন কিছু নয় প্রতিটা মেয়েই এরিকের সংস্পর্শে এসেছে। এরিকের মায়াবী আকর্ষণে মুগ্ধ হয়নি, এমন মেয়ে খুঁজে পাওয়া দায়।

তবে ওলিভিয়া এ্যারিকের পিছনে আঠার মতো পড়ে আছে। পুরো কলেজে সে এ্যারিকের পিয়ন্সে হিসেবে পরিচিত। এ্যারিকের বাবা আর ওলিভিয়ার বাবা বিজনেস্ পার্টনার ।

************************************

চলবে............

পর্ব____২

                         [পর্বঃ২]

************************************

ইউনিভার্সিটির কেমিস্ট্রি বিভাগের ক্লাসরুমে এক অস্বাভাবিক উত্তেজনা। ছাত্র-ছাত্রীদের চিৎকার-চেঁচামেচির মাঝে হঠাৎ দরজা খুলে প্রবেশ করলেন শিক্ষিকা, তাঁর পিছনে এক তেইশ বছরের তরুনী। লম্বা, গাঢ় রঙের পোশাক আর মাথায় হিজাবে ঢাকা তার চেহারা দেখে রুমের গুঞ্জন থেমে গেল। সবার চোখে বিস্ময়, কৌতূহল, আর কিছুটা অস্বস্তি। ক্যালিফোর্নিয়ার উদার, উচ্ছল ক্যাম্পাসে এমন পোশাক যেন এক অপ্রত্যাশিত দৃশ্য।শিক্ষিকা ইনায়াকে সামনে এনে পরিচয় করিয়ে দিলেন,

“ইনি ইনায়া শেখ, তোমাদের নতুন সহপাঠী।” কথাটা শুনে ইনায়া একবার সামনে তাকাল। সহপাঠীদের চোখে কৌতুক, কারো কারো মুখে বিদ্রূপের হাসি। যেন তারা তাকে বিচার করছে, তার পোশাক, তার উপস্থিতি দেখে। ইনায়া মনে মনে আল্লাহর নাম স্মরণ করে এগিয়ে গেল বসার জায়গা খুঁজতে। কিন্তু প্রতিবারই একই দৃশ্য, যার কাছে সে বসতে যাচ্ছে, সে ব্যাগ বা বই ফাঁকা জায়গায় রেখে দিচ্ছে। নীরবে, কিন্তু স্পষ্টভাবে তাকে প্রত্যাখ্যান করছে।

শেষে, কোনো উপায় না পেয়ে, ইনায়া পিছনের একটি ফাঁকা আসনে গিয়ে বসল। তার বুকের ভেতরটা ভারী, কিন্তু মুখে ছিল শান্ত দৃঢ়তা।

ক্লাস শেষ হতেই অলিভিয়া, তার কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে, ইনায়ার দিকে এগিয়ে এল। তার চোখে স্পষ্ট উপহাস, মুখে তাচ্ছিল্য ফুটে উঠল ।

সো, ইউ’আর রিয়ালি গোইং টু ড্রেস লাইক দ্যাট হিয়ার? সিরিয়াসলি, ইনায়া, ডু ইউ ইভেন নো হোয়াট ইয়ার ইট ইজ? ইউ লুক লাইকের ইউ কেম ফ্রম অ্যানাদার প্ল্যানেট! হু ওয়েয়ার্স দ্যাট ইন ক্যালিফোর্নিয়া? ইউ আর লুকিং লাইক এ আন্টি।"

 তার কথায় পাশের বন্ধুরা হেসে উঠল, যেন ইনায়াকে হেয় করাটাই তাদের বিনোদন।

ইনায়া এক মুহূর্ত থামল। তার হৃৎপিণ্ডে অপমানের তীর বিঁধলেও, সে শান্ত রইল। অলিভিয়ার চোখে চোখ রেখে, স্পষ্ট, দৃঢ় কণ্ঠে বলল,

“আমি জানি আমি ক্যালিফোর্নিয়ায় আছি। কিন্তু নিজের বিশ্বাস আর পরিচয় হারিয়ে নয়। তুমি হয়তো মনে করো পোশাকই মানুষকে সংজ্ঞায়িত করে। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি, মানুষের আসল পরিচয় তার আচরণে, অন্যকে সম্মান করার ভঙ্গিতে। তুমি আমাকে ‘আন্টি’ বলেছ, কিন্তু আমি গর্বিত যে আমি এমন পোশাক পরি, যা আমাকে আমার মূল্যবোধের সঙ্গে জুড়ে রাখে। আমি এখানে এসেছি পড়াশোনা করতে, শিখতে, ভালো মানুষ হতে। কারো স্টাইল গাইডলাইন মানতে নয়। আর হ্যাঁ, আমিও এই পৃথিবীরই মানুষ, শুধু তোমার মতো দেখতে নই।”

ইনায়ার কথা শুনে অলিভিয়ার মুখ লাল হয়ে উঠল। তার চোখে রাগের ঝলক দেখা দিল। পাশে দাঁড়ানো বন্ধুরাও যেন অপ্রত্যাশিত এই প্রত্যুত্তরে ক্ষুব্ধ। ইনায়ার শান্ত, কিন্তু তীক্ষ্ণ কথাগুলো অলিভিয়ার অহংকারে আঘাত করেছিল। ইনায়া চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই অলিভিয়া চিৎকার করে উঠল,

" হোয়াট দা হেল! ডিড ইউ জাস্ট ট্রাই টু গিভ মি এ লেকচার? ইন ফ্রন্ট অব এভরিওয়ান?"

তার গলায় কাঁপন, যেন সে নিজেই নিজের রাগ সামলাতে পারছে না।

"লিসেন, নিউ গার্ল! এই ইউনিভার্সিটিতে আমি কী বলি, সেটাই চলে। তুমি হয়তো ভাবছো তুমি খুব সাহসী, খুব স্মার্ট। কিন্তু আমিও দেখবো, তুমি এইখানে কীভাবে টিকে থাকতে পারো।

কথা শেষ করে অলিভিয়া ইনায়াকে ধাক্কা দিয়ে, বন্ধুদের নিয়ে দ্রুত ক্লাস থেকে বেরিয়ে গেল। ইনায়া এক মুহূর্ত দাঁড়িয়ে রইল। তার চোখে দৃঢ়তা, বুকে এক অদ্ভুত শক্তি। সে জানে, এই পথ সহজ হবে না। কিন্তু তার বিশ্বাস, তার পরিচয়, তার মূল্যবোধ~এগুলোই তাকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। আস্তে আস্তে সে ব্যাগ কাঁধে তুলে নিল, আর নিজের মনে বলল, “আল্লাহ, তুমিই আমার শক্তি।” তারপর, মাথা উঁচু করে, সে ক্লাসরুম থেকে বেরিয়ে গেল।

 

ইনায়া রুম থেকে বেরিয়ে মাঠের দিকে পা বাড়াতেই কানে ভেসে এলো এক অদ্ভুত গুঞ্জন -চিৎকার, চেঁচামেচি, উল্লাসের ঢেউ। কৌতূহলী মনে সে এগিয়ে গেল, আর একটি মেয়ের কাছে জিজ্ঞেস করলো,

“এখানে কী হচ্ছে?”

মেয়েটি বিস্ময়ভরা চোখে তাকিয়ে বললো,

“তুমি কী এরিক অ্যাসফোর্ডকে চেনো না?” ইনায়া মাথা নেড়ে অজ্ঞতা জানাতেই মেয়েটির চোখে অবিশ্বাসের ছায়া।

“কী বলছো? এই ইউনিভার্সিটিতে এমন কেউ আছে, যে আমাদের ক্রাশ বয় এরিককে চেনে না?

 জুনিয়র থেকে সিনিয়র, সবাই তো ওর এক ঝলক দেখার জন্য পাগল!

 আমিতো সেই দিনের অপেক্ষায় আছি, যেদিন এরিক আমাকে ডেটে নিয়ে যাবে।”

হঠাৎ মাথায় হাত দিয়ে সে চেঁচিয়ে উঠলো,

“ওহ, তোমার সাথে কথা বলতে গিয়ে ভুলেই গেছি, এরিকের কার রেসিং এর কথা। আমি গেলাম,বাই।

”ইউনিভার্সিটির বিশাল খেলার মাঠটি রেসের জন্য সাজানো হয়েছে। কিছুক্ষণ পরেই শুরু হবে এরিক আর লিয়নের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। মেয়েরা সবাই এরিককে চেয়ার আপ করতে থাকে।তা দেখে, লিয়ন একটু রাগী ভঙ্গিতে বলে,

সবাই শুধু এরিক, এরিক করে! আজ আমি প্রমাণ করে দেবো, এরিক অ্যাসফোর্ড ছাড়া এই ইউনিভার্সিটিতে আর কেউ নেই-এই ধারণাটা ভুল। আজকের রেসটা আমার জন্য, এরিকের অহংকার ভাঙার জন্য।

এরিক, তার ঠোঁটে শয়তানি হাসি ঝুলিয়ে, শান্ত কণ্ঠে জবাব দিল,

“তুই তো অনেক স্বপ্ন দেখিস, লিয়ন। কিন্তু স্বপ্ন আর বাস্তবের মধ্যে পার্থক্যটা বুঝতে শিখ-কারণ এখানে জিতবো সবসময় আমি।"

 লিয়নের চোখে জ্বলে উঠলো শত্রুতার আগুন। মনে মনে সে প্রতিজ্ঞা করলো, যেভাবেই হোক, এরিককে একদিন ধরাশায়ী করবেই।রেস শুরু হলো। দুই গাড়ি, দুই প্রতিদ্বন্দ্বী, মাঠের ধুলো উড়িয়ে ছুটলো। কেউ কাউকে ছাড় দিচ্ছে না। শেষ মুহূর্তে এরিকের গাড়ি লিয়নকে পেছনে ফেলে ফিনিশিং লাইন ছুঁয়ে দিল। মেয়েরা উল্লাসে ফেটে পড়লো। লিয়নের চোখে হিংসার আগুন জ্বলে উঠল।এরিক গাড়ি থেকে নেমে, লিয়নের কাছে গিয়ে ঠাট্টার সুরে বললো,

 “দেখলি তো, হার আর জিত আমার কাছে শুধু একটা খেলা-কিন্তু তোর তো আবার হেরে গেলে হিংসা বেরিয়ে পড়ে।

সবাই চায় এরিকের মতো হতে, কিন্তু সবাই পারে না। Try harder next time, champ!"

 এই বলে, এক চোখ টিপে, গাড়ির চাবি ঘুরাতে ঘুরাতে সে অলিভিয়ার দিকে এগিয়ে গেল।

“আই নিড এনার্জি, বেইব। কাম অন, কিস মি উইথ ইয়োর ফা****ং বিউটিফুল লিপস!” বলেই সে অলিভিয়ার ঠোঁটে গভীর চুম্বন এঁকে দিল।

চলবে.....

পর্ব____৩

\[পর্বঃ৩\]

************************************

ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া,

ইনায়া আজ খুব সকালেই নির্জন ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে, চারপাশে মানুষের সাড়া নেই বললেই চলে। নিঃশব্দ পথ ধরে, সে একা একা হাঁটতে হাঁটতে লাইব্রেরির দিকে এগিয়ে যায়-বই পড়ার ইচ্ছেই তাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু নিঃসঙ্গতা তার কাছে ধীরে ধীরে বোরিং লাগছে।

সে লাইব্রেরির দরজা খুলে সামনে তাকাতেই,

তার চোখে ধরা পড়ে এক অনাকাঙ্ক্ষিত দৃশ্য-

লাইব্রেরির নীরবতায় এক ছেলে গভীর ঘনিষ্ঠতায়, একটি মেয়ের ঠোঁটে ঠোঁট রেখে চুমু খাচ্ছে।

ইনায়া বিস্ময়ে থমকে গিয়ে,মনের গভীর থেকে উচ্চারণ করে-

“আস্তাগফিরুল্লাহ! এইখানে কী হচ্ছে এইসব?"

তার কথা শুনে মেয়েটি ছেলেটিকে ধাক্কাতে থাকে,

কিন্তু ছেলেটির মধ্যে বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ নেই বরং সে বিরক্ত হয়ে, আরও আগ্রাসী হয়ে মেয়েটিকে চুমু খেতে থাকে, কোনো বাধা যেন তাকে স্পর্শ করে না।

ইনায়া ছেলেটির এই কান্ড দেখে চেঁচিয়ে ওঠে,

“আপনার কোনো লজ্জা নেই? এখানে সবাই পড়তে আসে, আর আপনি এইসব বাজে কাজ করছেন!ছাড়েন বলছি মেয়েটাকে, দেখতে পারছেন না মেয়েটি শ্বাস নিতে পারছে না।”

ইনায়ার চিৎকার শুনে ছেলেটি এবার কিস্ ব্রেক করে ইনায়ার দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,

" আউট! ইউ স্টুপিড গার্ল। তুমি কী দেখতে পারছো না, এখানে আমরা কিছু প্রাইভেট কাজ করছি।এ্যান্ড লিসেন, ইফ ইউ হ্যাভ অ্যা প্রবলেম, কল দ্য ডিন। গট ইট!"

"কথাটি বলেই ছেলেটি চেঁচিয়ে বলে ওঠে, আউট!"

ইনায়া আর এক মুহূর্তও সেইখানে দাঁড়ায় না-আর এইসব দেখার পর, তার দাঁড়ানোর প্রশ্নই উঠে না।

বাইরে বেরিয়ে আসে সে, নিঃশব্দ ক্যাম্পাসে তার নিঃশ্বাসে মিশে থাকে অজানা অস্বস্তি আর কিছু লজ্জাকর মুহুর্ত। সে মনে মনে তাদের দুইজনকে গালি দিতে দিতে সেইখান থেকে চলে যায়।

এইদিকে, কয়েক মুহূর্ত পর ছেলেটি লাইব্রেরির দরজা খুলে বাইরে এসে ইনায়াকে খুঁজতে শুরু করে- কিন্তু সে ইনায়াকে খুঁজে পাই না এতে সে ভীষণ রেগে যায়।সে রেগে দাঁতে দাঁত পিষে বলে উঠে,

"ফা*কিং গার্ল, ইউ থিংক ইউ ক্যান এস্কেপ মে? জাস্ট ওয়েট টিল আই গেট মাই হ্যান্ডস অন ইউ। "

(স্টুপিড গার্ল, পালিয়ে গেছে।কী ভেবেছে,পালিয়ে এই অ্যারিক অ্যাসফোর্ডের কাছ থেকে বেঁচে যাবে?

রং বেবিগার্ল, ঘুরেফিরে সেই আমার কাছেই আসা লাগবে।)

*************************************

ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটির সেই সুবিশাল, আধুনিক ক্লাসরুমটি হলো একেকটা বৈচিত্র্যময় চরিত্রের মিলনস্থল। উচ্চতর প্রযুক্তিতে সজ্জিত সেই রুমে, ছাত্র-ছাত্রীরা নিজেদের মধ্যে মেতে উঠেছিল নানা আলাপচারিতায়। কেউ কেউ হাসছে, কেউ গ্যাজেট নিয়ে ব্যস্ত, কেউবা টিকটকের ট্রেন্ড নিয়ে আলোচনা করছে। আর ক্লাসরুমের একেবারে পেছনের সারিতে বসে আছে এরিক—তীক্ষ্ণ চোখে সবকিছু পরখ করছে, যার দিকে এক ঝলক তাকাতেই মেয়েরা স্বপ্নে হারিয়ে যায়। তার মুখে চিরন্তন বিদ্রুপের ছাপ, যা দেখে মনে হয়, এই দুনিয়ার সব কিছুকে এক হাতে নিয়ন্ত্রণ করতে চায়।

ঠিক সেই সময় ক্লাসরুমের দরজা খুলে গেল ধীরে ধীরে। ধূসর আলো আর সবার কৌতূহলী চোখের মাঝখানে ভিতর দিয়ে ঢুকে পড়লো এক কোমল মুখের মেয়ে ইনায়া। ইনায়াকে দেখে মনে হচ্ছে, সে একটু নার্ভাস আসলে সে চিন্তিত যদি অলিভিয়া আর তার বন্ধুরা মিলে তাকে বুলি করে। না সে আর ভাবতে চাইল না, যা হবার দেখা যাবে। সে আল্লাহর নাম নিয়ে আত্মবিশ্বাসের সহিত এগিয়ে গেল।মাথায় সুশৃঙ্খলভাবে জড়ানো হিজাব, পরনে ঢিলেঢালা পোশাক, যেন আধুনিকতার মাঝেও নিজের পরিচয় আঁকড়ে ধরা এক মৌন প্রতিবাদ।

কিন্তু সবার দৃষ্টি যেন একসাথে ছুটে গেল তার দিকে।ইনায়াকে দেখে একটা মেয়ে ব্যাঙ্গাত্বক ভঙ্গিতে বলে উঠলো, Hey,Look guys, Who finally Showed up!

আরেকটা ছেলে সেই মেয়েটার তালে তাল মিলিয়ে বলে উঠলো,

"এই পুরোনো যুগের মডেলটা কোথা থেকে এলো রে!"

ছেলেটির কথার মাঝেই হাসিতে ফেটে পড়লো গোটা ক্লাস। কেউ চোখ চড়কগাছ করে তাকালো, কেউ ফিসফিস করে বলাবলি করতে লাগল,

"হিজাব পরে ক্লাসে এসেছে? কী ভয়ংকর পুরোনো চিন্তা - ভাবনা!"

আরেকটা মেয়ে তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলে উঠে,

"ইউনিফর্ম কি এটা এখন থেকে? কেউ যেন বলে দেয় ক্লাসে ফ্যাশনের মানে কী!"

ইনায়া সেসব উপেক্ষা করে ধীর পায়ে এগিয়ে গেল সামনের দিকে। প্রতিটি পায়ে ছিল আত্মবিশ্বাসের শব্দহীন পদচিহ্ন। কিন্তু সামনে এগোতেই তার পথ রোধ করে কেউ ইচ্ছে করে পা বাড়িয়ে দিল। মুহূর্তের ভেতর ভারসাম্য হারিয়ে পড়ে গেল সে সোজা এরিকের পায়ের কাছে। তার বই, খাতা, কলম সব ছিটকে ছড়িয়ে পড়ল মেঝেতে।

হাসির রোল উঠলো আবার। এবার যেন আগের চেয়েও আরও জোরে সবাই হাসতে লাগলো।

এরিক এবার মুখ তুলে তাকালো। তার চোখে বিদ্রুপ, ঠোঁটে বাঁকা হাসি স্পষ্ট ফুটে রয়েছে ।সে ইনায়াকে উদ্দেশ্য করে বললো,

“এই যে! মাদার টেরেসা ভার্সন টু! কোন কনভেন্ট থেকে এসে পড়লে এখানে? নাকি রোড ভুল করে চার্চ থেকে ক্লাসরুমে চলে এসেছো? দুনিয়াটা এগিয়ে গেছে, কিন্তু তুমি এখনও টাইম মেশিনে আছো মনে হচ্ছে!”

তার প্রতিটি কথায় ক্লাসের অন্যরা আরও বেশি করে হাসতে লাগলো।

পেছন থেকে একটা ছেলে গলা ছেড়ে বলে উঠল, "ভুল বলছেন ভাই, ওতো খ্রিষ্টান নই, মুসলিম! আমাদের শেষ করতে হয়তো ওকে কেউ পাঠিয়েছে। আমি বলি কী, ভালো করে খুঁজে দেখুন এই জুব্বার নিচে বোম নিয়ে এসেছে কিনা!

এরিক ছেলেটির কথা শুনে ইনায়াকে একবার পা থেকে মাথা পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করে, এরিককের পাশ থেকে আরেকজন ছেলে রসিকতার সহিত বলে ওঠে ,

আরে না! ও তো ‘শান্তির বার্তা’ নিয়ে এসেছে, বুঝলে না? এই জামা-কাপড়ের নিচে কিছু না থাকলে কী হবে, মাথার ভেতরে একখান পুরো ফতোয়ার বই বসানো! সাবধানে থাকতে হবে, নয়তো কালকেই আমাদের সবার ‘হেদায়েত’ শুরু হয়ে যাবে!"

এরিক ছেলেটির কথায় সম্মতি জানিয়ে ইনায়ার দিকে ঘুরে বাঁকা হেসে বলল,

"So, মিস মডেস্টি! Look around — we’re in a classroom, not some medieval costume party! এই গরমে তুমি কীভাবে বেঁচে আছো সেইটাই আমি বুঝতে পারছি না ! Honestly, তোমার এই ফ্যাশন-স্টাইলটা দেখে আমারই ঘাম ঝরতে শুরু করে দিচ্ছে!"

এরিকের মন্তব্যে দ্বিতীয়বারের মতো পুরো ক্লাস হেসে উঠল। কিন্তু এবার আর ইনায়ার পক্ষে চুপচাপ দাঁড়িয়ে এই অপমান সহ্য করা সম্ভব হলো না। তারা সীমা ছাড়িয়ে গেছে। একজন মানুষের মর্যাদা ও মূল্যবোধকে শুধু তার পোশাক দিয়ে বিচার করার অধিকার এদের নেই।

ইনায়া এগিয়ে এসে এরিকের চোখে চোখ রেখে দৃঢ় কণ্ঠে বলল,

"মিস্টার, আপনি যেই হোন না কেন, আমার পোশাক নিয়ে মন্তব্য করার কোনো অধিকার আপনার নেই। একজন মানুষের মূল্যবোধ বা আত্মমর্যাদা তার পোশাক দিয়ে বিচার করা যায় না। যদি আমার পোশাকে আপনার সমস্যা হয়ে থাকে, তাহলে সেটা আমার নয়;আপনার দৃষ্টিভঙ্গির সমস্যা।

কারও শরীর বা পোশাক দেখে কটাক্ষ করা শুধু অসভ্যতা নয়, বরং তা আপনার মানসিকতার প্রকৃত প্রতিচ্ছবি।আপনার এতটা অস্বস্তি আসলে পোশাক নিয়ে নয় বরং আপনি আপনার চোখের ক্ষুধা মেটাতে না পেরে নিজেই অস্বস্তিতে আছেন।একটা কথা মনে রাখবেন—পোশাক নয়, দৃষ্টিভঙ্গিই একজন মানুষের পরিচয় দেয়। আর আপনার দৃষ্টিভঙ্গি আপনার চরিত্রকে যথেষ্ট স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছে।"

ইনায়ার কথা শুনে এরিক রাগে গর্জে উঠল,

"এই মেয়ে, মুখ সামলে কথা বলো! বুঝেছো? নিজের সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছো তুমি। আর যদি আমিও সীমা ছাড়িয়ে যাই, তাহলে তোমায় দাঁড়িয়ে থাকার অবস্থায়ও রাখব না!"

ইনায়ার এরিকের কথা শুনে গা ঘিন ঘিন করে ওঠে,সে তেড়ে গিয়ে এরিকের মুখের সামনে আঙুল তুলে বলে,

"আমি সীমা পেরোইনি, বরং আপনি বহু আগেই পেরিয়ে গেছেন নিজের নিচু মানসিকতার সীমা। আপনি ভাবছেন, আমি ভয় পেয়ে চুপ করে থাকব? ভুল ভেবেছেন। আমার পর্দা আমার অহংকার, সেটা অপমান করার আগে নিজের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাতে শিখুন!"

আর হ্যাঁ, ইসলাম আমাকে এই পোশাকে রানির মতো মর্যাদা দিয়েছে। তাই পরবর্তীতে আমার পোশাক নিয়ে আর কোনো রকম কুরুচিকর মন্তব্য যেন আপনার মুখে না শুনি!”

এই কথা বলেই ইনায়া নিজের জায়গায় ফিরে যাওয়ার জন্য পেছন ফিরে হাঁটা শুরু করে। কিন্তু হঠাৎ এরিক তাকে থামাতে গিয়ে ইনায়ার হিজাবে টান মারে।

এরিকের এমন অশোভন আচরণে ইনায়া মুহূর্তেই সবার সামনে চরম অপমানিত বোধ করে।

তবে সে চুপ করে না থেকে সাহসিকতার সঙ্গে সোজা হয়ে এরিকের সামনে দাঁড়িয়ে যায়।

তারপর কোনো দ্বিধা না করে ঠাস করে এরিকের গালে একটা চড় বসিয়ে দেয়।

ইনায়া আর এক মুহূর্তও সেখানে দাঁড়ায়নি। চুপচাপ ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেল। হয়তো সে যদি একবারও পিছন ফিরে তাকাত, তাহলে দেখতে পেত;এরিকের গালে চড়টমারাটা কী ভীষণ ভুল ছিল তার।

এরিকের হাত রাগে মুষ্টিবদ্ধ হয়ে উঠল, যেন তার নিঃশব্দ ক্রোধ মুহূর্তেই এক ভয়াল ঝড়ের আকার ধারণ করবে।

************************************

চলবে.....

Download NovelToon APP on App Store and Google Play

novel PDF download
NovelToon
Step Into A Different WORLD!
Download NovelToon APP on App Store and Google Play