স্থান: গুলশান, ইনায়ার ব্যক্তিগত ফ্ল্যাট
সময়: রাত ১১টা
ইনায়া আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে। মুখ ধুয়ে ফেলার পরেও যেন লেগে আছে মিডিয়ার সেই দৃষ্টিগুলো, নাফজার মুখের সেই কথা।
> “সে বিষ ঢেলে দিয়েছে”—এই কথাটা যেন আয়নার মধ্যে বারবার ঘুরছে।
তার ঠোঁট ফেটে যাচ্ছে, মুখে হালকা কাঁপুনি। কিন্তু সে চুপ।
কারণ এখনো পর্যন্ত বিশ্ব জানে না সত্যটা।
---
ভিতরের অপরাধবোধ
রিমশা ধীরে ধীরে ঘরে ঢুকে বলে—
— “তুই ঠিক আছিস?”
ইনায়া মাথা নিচু করে বসে। বলে না কিছুই।
রিমশা বলে—
— “নাফজা যেটা বলছে, সত্যি না তো? বল… আমাকে বল… আমি শপথ করে বলছি, কাউকে বলব না।”
ইনায়া মুখ তুলে চায়, চোখে পানি টলমল করে।
সে চিৎকার করতে চায়, কিন্তু শব্দ বের হয় না।
সে শুধু ফিসফিসিয়ে বলে—
> “আমি জানতাম না তখন ও অন্তঃসত্ত্বা… আমি জানতাম না...”
রিমশা স্তব্ধ।
— “মানে তুই… তুই সত্যিই কিছু করেছিলি?”
ইনায়া এবার চুপ।
---
অন্যদিকে—নাফজার মিডিয়া পরিকল্পনা
নাফজা এই মুহূর্তে ঢাকার এক গোপন পাবলিশিং হাউসে।
তার বই "নীরব আত্মারা" এখন প্রেসে যাচ্ছে—একটি কাল্পনিক উপন্যাস হিসেবে।
কিন্তু প্রতিটি অধ্যায়ই গোপনে ইনায়ার কুকর্মের প্রতিবিম্ব।
তাকে ঘিরে গড়ে উঠছে রহস্য।
টকশোতে লোকজন বলতে শুরু করেছে—
— “এই নাফজা তো আসলে মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। ইনায়ার জনপ্রিয়তা হজম করতে পারছে না।”
— “তাকে এত গোঁড়া করে তোলে কারা? মিডিয়া?”
— “একটা গান না গাওয়া মেয়ের এত প্রতিশোধের তৃষ্ণা কেন?”
কিন্তু কেউ জানে না—তার সন্তান কণ্ঠহীন কেন, তার স্বামী মরল কিভাবে, তার স্বপ্ন ছিঁড়ে গেল কোথায়।
---
ইনায়ার বিচলিত মস্তিষ্ক
পরের দিন সকালে ইনায়া তার NGO তে যায়।
তার অফিসের কাচে কেউ একটা লাল মার্কার দিয়ে লিখে গেছে—
> “ভালোবাসা ছিনতাই করলে, একদিন ছায়াও রক্ষা করতে পারবে না।”
সে থমকে যায়।
তার পাশে এক কর্মী বলে—
— “ম্যাম, নাফজা কি আবার এসেছিল?”
ইনায়া মাথা নাড়ে, কিন্তু তার ভিতরের দুঃশ্চিন্তা ক্রমে বেড়েই চলে।
---
নাফজার চিঠি: ছায়ার কণ্ঠ
রাতে ইনায়ার বাসার নিচে এক ছাপা চিঠি পড়ে থাকে।
খামের ভেতর হাতে লেখা কয়েক লাইন—
> “তুমি যে বিষ দিলে, সেটা শুধু গলা স্তব্ধ করেনি।
সেটা একটা জীবন চিরতরে বদলে দিয়েছে।
এবার আমি বদলাবো তোমার গল্প।”
– ছায়া
ইনায়া খামটা আগুনে পুড়িয়ে ফেলে, কিন্তু লিখাগুলো তার মনে গেঁথে যায়।
---
শেষ দৃশ্য: শক্তির শুরু নাকি পতনের?
স্থান: একটি টেলিভিশন স্টুডিও
নাফজাকে প্রথমবারের মতো লাইভ টকশো-তে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
হোস্ট জিজ্ঞেস করে—
— “আপনি আপনার বোনের বিরুদ্ধে কথা বলছেন। আপনি কি মানসিকভাবে সুস্থ?”
নাফজা শান্তভাবে হেসে বলে—
> “মানসিক অসুস্থতা তখনই শুরু হয়, যখন পৃথিবী আপনার সত্যকে মিথ্যে বলে। আমি অসুস্থ নই। আমি কেবল নীরব নই আর।”
----
স্থান: ঢাকা শহরের সবচেয়ে জনপ্রিয় বুকস্টোর
সময়: সকাল ১০টা
বুকস্টোরের জানালায় এক নতুন বইয়ের প্রচ্ছদ ঝলমল করছে—
“নীরব আত্মারা”
লেখক নাম নেই। কেবল লেখা—ছায়া।
বইটির পরিচিতি লেখায় লেখা—
> "যার গলা তুমি কেটে দিয়েছো, সে যদি একদিন কলম তুলে নেয়?
তার নীরবতা তোমার চিৎকারের চেয়েও জোরালো হয়ে উঠবে।"
---
রিমশা বইটি পড়ে
ইনায়ার বান্ধবী রিমশা প্রথম বইটা হাতে নেয়।
বাড়িতে এসে এক বসাতেই পড়ে ফেলে।
চোখ বড় হয়ে যায় তার।
প্রথম অধ্যায়ে লেখা—
> “সে আমার চোখে বিষ ঢেলে দিয়েছিল, গলায় আগুন।
অথচ সবাই বলে সে দেবী।
কেউ জানে না, তার ঠোঁটের হাসির নিচে লুকানো ছিল মৃত্যু।”
রিমশা কাঁপতে কাঁপতে বই বন্ধ করে।
তার মাথায় স্পষ্ট মনে পড়ে যায়—নাফজা একদিন কিছু বলতে চেয়েছিল ইনায়াকে নিয়ে।
তখন ইনায়া বলেছিল—
— “ওর মাথা খারাপ। আমার ঈর্ষায় পাগল হয়ে গেছে।”
এখন… রিমশা যেন কিছুটা বিশ্বাস করতে শুরু করে।
হয়তো… সত্যিই কিছু ছিল।
---
ইনায়ার অসহ্যতা
ইনায়া বইয়ের কথা শুনেই ক্ষেপে ওঠে।
— “ছায়া নাম নিয়ে লেখা মানেই তো আমি? কে বলেছে আমি এইসব করেছি?”
রিমশা তাকে দেখে বলে—
— “তুই যদি সত্যিই নির্দোষ হোস, তাহলে এত ভয় পাচ্ছিস কেন?”
ইনায়া চুপ।
তার মনের ভিতরে যেন বইয়ের প্রতিটি লাইন ছুরি হয়ে বিঁধছে।
---
টেলিভিশন টকশো: সত্য, না নাটক?
একটি লাইভ টকশোতে আলোচনা চলছে—
"নীরব আত্মারা: সত্য কাহিনি না ভণ্ডামি?"
একজন সেলিব্রিটি বলেন—
— “এই বই যে ইনায়ার বিরুদ্ধে, সেটা বোঝাই যাচ্ছে।
কিন্তু প্রমাণ কোথায়?”
আরেকজন বলেন—
— “ছায়া নামটা কি আসলে নাফজা? সে তো নিজের পরিচয়ও দেয় না!”
কেউ কেউ নাফজার মানসিক অবস্থা নিয়েও কটাক্ষ করে।
---
নাফজার নীরব শক্তি
নাফজা চুপচাপ ওই সব শুনছে।
তার হাতে ইনায়ার সেই ভিডিও—যেখানে ইনায়া তার স্বীকারোক্তির মতো কিছু বলেছিল,
আরো কিছু অডিও ক্লিপ—যেখানে দেখা যায়, কিভাবে সে নিজের বোনকে মিডিয়া থেকে দূরে রাখতে পরিকল্পনা করেছে।
কিন্তু নাফজা এখনো প্রকাশ করেনি।
কারণ সে জানে—সঠিক সময় না আসা পর্যন্ত সত্যকে বললেও, সবাই মিথ্যে ভাববে।
---
শেষ দৃশ্য: বইমেলার ভিড়ে এক পাঠক
এক তরুণী বইমেলায় গিয়ে বইটা কিনে।
সে তার মায়ের কাছে বলে—
— “এই লেখক ছায়া কে জানো মা? আমি নিশ্চিত এটা কোনো সত্য গল্প।
কেউ না জেনে এমনভাবে লিখতে পারে না।
আমি মনে করি, ‘ছায়া’ নিজেই এই গল্পের ভিকটিম।”
তার মা হেসে বলে—
— “হয়তো… একদিন সে সামনে আসবে।”
ক্যামেরা ধীরে ধীরে জুম আউট করে।
দূরে দাঁড়িয়ে থাকা নাফজা চুপচাপ দেখে যাচ্ছে… নিজের লেখা বই মানুষ কীভাবে আপন করে নিচ্ছে।
***Download NovelToon to enjoy a better reading experience!***
Comments