ঢাকার রাজপথে একটার পর একটা বিলবোর্ডে ইনায়ার মুখ।
নারী অধিকার রক্ষায় দেশের অন্যতম মুখ সে।
কিন্তু আজকাল তার মুখের হাসিটা যেন জোড় করে আঁকা।
কারণ শহরে ফিরে এসেছে নাফজা।
এবং, সে প্রতিনিয়ত একটা ছায়ার মতো ইনায়ার জীবনের আশেপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
কিন্তু সবাই জানে না—এই ছায়ার মধ্যেই আছে আগুন।
---
ভয়ের শুরু
ইনায়ার গাড়ির কাচে একটা চিরকুট পাওয়া যায়।
> “তুমি যা নিয়েছো, তা এখন ফিরিয়ে দিতে হবে।”
তার ড্রাইভার জানে না কারা রেখে গেল।
সিসিটিভি ফুটেজ খুঁজেও কেউ ধরা পড়ে না।
রাতে বাসায় ফিরে ইনায়া দেখে, তার ল্যাপটপে একটা অচেনা ভিডিও ফাইল।
প্লে করতেই ভেসে ওঠে নাফজার মুখ।
— “তুই ভাবিস তুই নিরাপদ? ভুল করিস। আমি এবার তোকে তোর জায়গা থেকে নামাব।
তুই আমার কাছ থেকে সব কিছু নিয়েছিস—এখন সময় এসেছে হিসেব দেওয়ার।”
ইনায়া ভিডিও বন্ধ করে দেয়।
সে জানে না, কোন 'সব কিছু'র কথা বলছে নাফজা।
তার কাছে তো সব ঠিকই আছে… তাই না?
---
নাফজা: শহরের নতুন আতঙ্ক
নাফজার গতিবিধি রহস্যময়।
সে একের পর এক প্রভাবশালী লোকদের সাথে দেখা করে,
সংবাদমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে গুজব—
"ইনায়ার বোন নাকি এখন অস্ত্র আর প্রতিশোধের রাস্তায়!"
সে বিভিন্ন ইভেন্টে হঠাৎ হাজির হয়,
ইনায়ার গুরুত্বপূর্ণ সভায় এসে হাসি দিয়ে বলে—
— “আপনার সফলতা দেখে খুব ভালো লাগে, আপু। তবে মনে রাখবেন, ছায়া কখনো আলোকে ছাড়ে না।”
লোকজন ভাবে, এই নাফজা মানসিকভাবে অসুস্থ।
সে পাগলের মতো প্রতিশোধ চায়।
কেন?
কারণ ইনায়া নাম করেছে, জনপ্রিয় হয়েছে, আর সে হারিয়ে গেছে।
কেউ জানে না, ঘৃণার পেছনে আছে এক ছিন্নভিন্ন হৃদয়, এক কণ্ঠহীন সন্তান, আর এক খুন হওয়া স্বামী।
---
রিমশা: হারিয়ে যাওয়া বন্ধুত্ব
রিমশা এখন ইনায়ার পাশেই থাকে,
কিন্তু তার মুখে একটা দুঃখ জমে আছে সবসময়।
একদিন সে বলে—
— “তোর বোনটা তো আগে অন্যরকম ছিল। হাসিখুশি, প্রাণবন্ত। এখন যেন আগুনে পোড়া ছায়া।”
ইনায়া চুপ থাকে।
সে কিছু বলতে চায়, কিন্তু পারছে না।
কারণ একটাই—
তিনিই ছিলেন সেই রাতে বিষ হাতে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষ,
যে ভুল করে নিজের বোনের জীবনের আলো নিভিয়ে দিয়েছিলেন।
--------
স্থান: রাজধানীর অভিজাত এক ফ্যাশন ইভেন্ট
সময়: রাত ৮টা
আলো ঝলমলে মঞ্চে ইনায়া হাঁটছেন ক্যাটওয়াকের মতো নিশ্চিন্ত ভঙ্গিতে। মিডিয়া ফ্ল্যাশ, করতালি আর প্রশংসায় চারদিক গমগম করছে।
তার পরনে নীল-সোনালি শাড়ি, ঠোঁটে আত্মবিশ্বাসী হাসি—এই ইভেন্টে আজ সে “উইমেন অফ দ্য ইয়ার” অ্যাওয়ার্ড জিতেছে।
কিন্তু মঞ্চের ঠিক নিচে, ভিড়ের ভেতরে দাঁড়িয়ে একজন সব কিছু চুপচাপ দেখছে—নাফজা।
কয়েক সেকেন্ড পর এক সাংবাদিক হঠাৎ বললেন—
> “নাফজা ম্যাডাম, আপনি ইনায়ার বোন, তাই তো? আপনি কি আপনার বোনের সাফল্য নিয়ে কিছু বলবেন?”
সবার নজর ঘুরে যায় নাফজার দিকে।
সে ধীরে ধীরে সামনে এগিয়ে যায়।
তার পরনে কালো লম্বা গাউন, ঠান্ডা চোখে ইনায়ার দিকে তাকিয়ে সে বলে—
> “ইনায়া আপনাদের জন্য আদর্শ হতে পারে, কিন্তু আমার কাছে সে শুধু একজন ধোঁকাবাজ। যে আপন মুখোশ পরে ঘুরে বেড়ায়, আর পেছনে বিষ ঢেলে যায়।”
ঘর থেমে যায়।
মিডিয়ার ফ্ল্যাশ বন্ধ হয়ে যায়। ইনায়ার চোখ বড় হয়ে যায়।
তার ঠোঁটের হাসিটা হঠাৎ হারিয়ে যায়।
“তুমি এটা কী বলছো, নাফজা?”
ইনায়া কাঁপা কণ্ঠে বলে।
নাফজা হেসে ফেলে—একটা নিঃশব্দ, ঠান্ডা হাসি।
> “সত্য। আমি আজ আর চুপ করে থাকতে আসিনি। আমি এসেছি তোমার সাজানো জগতটা উল্টে দিতে।”
লোকেরা গুঞ্জন করতে থাকে, ক্যামেরা আবার ক্লিক করতে থাকে। কেউ কেউ ইনায়ার পুরনো সাক্ষাৎকার খুঁজতে শুরু করে।
ইনায়া নিজের ভিতরে ভেঙে পড়তে শুরু করে, কিন্তু বাইরে থেকে সে শক্ত থাকার অভিনয় করে।
---
ভেতরের যুদ্ধ
সেই রাতেই, ইনায়া গাড়িতে বসে। রিমশা পাশে।
— “ও সত্যিই আমার সব শেষ করে দেবে। ও চাইছে আমি publicly ধ্বংস হই।”
রিমশা শান্ত কণ্ঠে বলে— — “কিন্তু তুমি কী জানো, সে কেন এমন করছে? কেবল হিংসা? না কি... কিছু লুকানো আছে?”
ইনায়া চোখ বন্ধ করে।
তার মাথায় আবার ভেসে ওঠে সেই বিষের কাপ, সেই নিঃশব্দ চিৎকার, আর সেই শিশুর চোখ—যার কোনো শব্দ নেই।
---
নাফজার পরিকল্পনা: ক্ষমতার শুরু
ঘরে ফিরে, নাফজা জায়িরকে বিছানায় শুইয়ে দেয়।
তারপরে সে নিজের ডেস্কে বসে।
তার সামনে এক ম্যাগাজিনের কাভার—ইনায়ার ছবি। নিচে লেখা:
> “She Is The Voice Of Justice”
নাফজা সেই ম্যাগাজিনটায় আগুন লাগিয়ে দেয়।
জ্বলন্ত কাভারের দিকে তাকিয়ে সে বলে—
> “এবার আমি হবো সেই কণ্ঠ—যে নীরব থেকেও সব কিছু বদলে দিতে পারে।”
***Download NovelToon to enjoy a better reading experience!***
Comments