#পর্ব_১৩
ক্লান্ত পায়ে বাড়িতে ঢুকলো আশমিন।ড্রয়িং রুমে কামিনী চৌধুরী আর আমজাদ চৌধুরী বসে আছে। নিজেদের মধ্যে হয়তো কিছু আলোচনা করছে।আশমিন কে বিধ্বস্ত অবস্থায় দেখে চিন্তিত চোখে তাকালো আমজাদ চৌধুরী।কামিনী চৌধুরীর কপালে ও ভাজ পরেছে।আশমিন কারোর দিকে না তাকিয়ে সোজা নূরের রুমে চলে গেলো। নূর নিজের ল্যাপটপে অফিসের কাজ করছিলো। হুট করে আশমিন কে দেখে ভ্রু কুচকে ফেললো। আশমিন নূরের কাছে গিয়ে মুখোমুখি দাড়ালো। নূর ল্যাপটপ ছেড়ে আশমিনের সামনে দাড়াতেই আশমিন মলিন হাসলো। ক্লান্ত গলায় বলল,
-- আমাকে একটু জরিয়ে ধরবে নূর?
আশমিনের এমন গলা শুনে হালকা কেপে উঠলো নূর। জহুরি চোখে পর্যবেক্ষণ করল আশমিন কে।রাগী গম্ভীর লোকটা কে আজ ভঙ্গুর লাগছে।নূর এগিয়ে গিয়ে আশমিন কে হালকা হাতে জরিয়ে ধরলো। আশমিন তাদের মধ্যকার ফাকা টুকু ঘুচিয়ে নূর কে শক্ত করে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরলো। নূরের দম বন্ধ হয়ে আসছে। তবুও কিছু না বলে আশমিন কে শান্ত হতে সময় দিলো।আশমিনের বুকের কাপনি স্পষ্ট বুঝতে পারছে সে।কপালে কয়েকটা ভাজ পরলেও খুব একটা পাত্তা দিল না।কয়েক মিনিট এভাবে কাটার পর নূর নিজের মুখ খুললো।
-- খারাপ সময়ে এভাবে জরিয়ে ধরার জন্য একজন মানুষ দরকার।যে হবে একান্ত ব্যক্তিগত। সে দিক থেকে আপনি আমার চেয়ে লাকি মন্ত্রী সাহেব। আমি আবার খারাপ সময়ে মানুষ কে দুরছাই করতে পারি না।
নূর কে ছেড়ে দূরত্ব বজায় রেখে দাড়ালো আশমিন।নূরের সুক্ষ্ম খোচা সে বুঝতে পেরেছে। নির্লিপ্ত চোখে নূরের দিকে তাকিয়ে হালকা হাসলো। নূর গভীর মনযোগ দিয়ে পর্যবেক্ষণ করলো পুরোটা। আশমিন বরাবরের মতো শান্ত গলায় বললো,
-- তুমি আমার থেকেও ভাগ্যবান নূর। আমি আগেও বলেছি এখন ও বলছি,কখনো এমন কোন কাজ করবে না যার জন্য পরে অপরাধবোধে ভোগো।ধনুক থেকে বেরিয়ে যাওয়া তীর আর মানুষের মুখের কথা কখনো ফেরত আসে না। তোমাকে বলা আমার কথাগুলো ও কিন্তু আমি ফিরিয়ে নিতে পারিনি। আমার তখনকার অপারগতা ও ওই কথাগুলো কে মলিন করতে পারে নি। একই ভুল তুমি করলে আমার খারাপ লাগবে।
কথা গুলো বলে যেভাবে এসেছিল ঠিক সেভাবেই চলে গেলো আশমিন। নূর শান্ত চোখে তাকিয়ে দেখলো আশমিনের চলে যাওয়া।কিছুতো একটা হয়েছে। কিন্তু কি হয়েছে তা বুঝতে পারছে না নূর।
সেদিন রাতে এভাবে নূরের লাগানো আ*গুন নিভিয়ে দিয়ে নূরকে অনেকটা কাছে টেনে নিয়েছিল আশমিন।দীর্ঘ ছয় বছরের বিবাহিত জীবনে এত কাছাকাছি আসা হয়নি তাদের।আশমিন অনেকটা ডুবে গিয়েছিল নূরের মাঝে ভেজা দুটো শরীর একসাথে লেপ্টে ছিল অনেকটা সময়। আশমিন অবাধ বিচরণ করেছে নূরের উপর। দুজনের নিশ্বাস পাল্লা দিয়ে ভারী হচ্ছিল। আশমিন নূরের বুক থেকে মুখ তুলে আশমিনের ওষ্ঠদ্বয় দখল করে নিতেই নূর আশমিন কে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরলো। হুট করেই আশমিন কে ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে গেলো। নূর চোখ বন্ধ করে হাপাচ্ছে।উপর থেকে পানি পরা বন্ধ হয়নি এখনো। নূরের শরীরে পরা পানির বিন্দু গুলো এক একটা মুক্তোর দানা মনে হচ্ছে আশমিনের কাছে।গায়ে লেপ্টে থাকা সাদা শার্ট টা খুলে ফ্লোরে ছুড়ে দিয়ে নূর কে কোলে তুলে নিলো আশমিন। ততক্ষনে ঘোর থেকে বেরিয়ে এসেছে নূর।আশমিনের কোল থেকে নামার জন্য মোচড়া মুচড়ি করতেই আশমিন বাকা হাসলো। নূরের রক্তিম নাকে হালকা কামড় দিয়ে ভরাট গলায় বলল,
-- মোচড়া মুচড়ি করে লাভ নেই। বাসর করতেই তো এসেছো।এখন তোমাকে কিছু না করেই ছেড়ে দিলে তুমি আমার সম্পর্কে ভুলভাল ভাবতে পারো।তবে আমি এভাবে বাসার করতে চাই না বুঝলে।তাই আজ শুধু হতে হতে ও হইলো না টাইপ বাসর হবে। আগুনের ভেজা বাসর।
নূর হতভম্ব হয়ে কথা বলতেই ভুলে গেলো। হাজার কিল ঘুসি দিয়েও আশমিনের হাত থেকে মুক্তি পেলো না। নিজের নখ রাক্ষুসিদের মতো না রাখার জন্য নিজেকেই ভৎসনা করতে লাগলো। তাহলে অন্তত খামচে খামচে এই অসভ্য লোকের চেহারার নকশা বদলে ফেলা যেতো। সেদিন এক অন্য আশমিন কে আবিষ্কার করেছিল নূর।যাকে ভাবলে মনের মধ্যে শুধু একটা কথাই আসে।আর তা হলো, অসভ্য অসভ্য অসভ্য।
পরের দিন থেকেই দুজন ঠান্ডা জ্বর লাগিয়ে কেলেঙ্কারির বাধিয়ে ফেললো। আশমিন কে দেখে সানভির মনে হলো তার সামনে একটা পাকা টমেটো ঝুলে আছে।বাসর করতে গিয়ে এভাবে জ্বর বাধানোর কি হলো আজব!এমন হলে তো সে মোটেও বাসর টাসর করবে না। আশমিন জ্বর নিয়ে পরপর কয়েক টা মিটিং করে ফেললো। এদিকে নূর শুধু বিছানায় শুয়ে শুয়ে আশমিন কে বকে গেলো। কয়েক হাজার অভিশাপ দিয়ে ও খান্ত হলো না। আশমিনের কাবার্ডের সমস্ত সাদা শার্ট গুলো জ্বালিয়ে দিলো।এই সাদা শার্ট পরা দেখেই সে পিছলে গিয়েছিল। দুই দিন রুমের মধ্যে ঘাপটি মেরে বসে রইলো। এই অবস্থায় বাইরে গিয়ে লোক হাসানোর মানেই হয় না। অথচ আশমিন নির্দিধায় নিজের কাজ করে গেলো।একবেলায় জ্বর ছেড়ে গেলেও ঠান্ডা তাকে কুপকাত করে ফেললো। আশমিন কয়েক বার বিরবির করে বলে ও ফেললো, বউয়ের অভিশাপ বউয়ের অভিশাপ।
তার পর থেকে টানা সতের দিন দুজনের দেখা সাক্ষাৎ বন্ধ। নূর আশমিন কে এড়িয়ে চলেছে এ কয়দিন।আশমিন ও সেদিকে পাত্তা দেয় নি। আজ হুট করেই আশমিন এভাবে সামনে চলে এসে বিভ্রান্ত করে দিয়ে গেলো নূর কে।
দীর্ঘশ্বাস ফেলে বারান্দায় গিয়ে দাড়ালো নূর। আকাশের মস্তো বড় চাদের দিকে তাকিয়ে ভাবতে লাগলো নিজের অগোছালো জীবন নিয়ে।সব কিছু স্বাভাবিক থাকতে পারতো।অন্য সব মেয়েদের মতো সে ও একটা সাজানো গোছানো সংসার করতে পারতো।কয়েকজন মানুষের লোভ তাদের জীবন টা এলো মেলো করে দিয়েছে।ফোনের শব্দে ভাবনা থেকে বেরিয়ে এলো নূর।
-- বলো অমি।
-- ম্যাম, মতি মিয়ার খোজ পাওয়া গেছে।আজ সকালে আশমিন স্যারের লোকেরা তাকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল।কিছুক্ষণ আগে থেকেই তার আর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। তার পরিবার ও কয়েক ঘন্টার মধ্যে উধাও।
-- তাদের খোজা বন্ধ করো অমি।আপাতত তোমার স্যারের উপর নজর রাখো।সে যেন বুঝতে না পারে কিছু।
-- ওকে ম্যাম।
অমি ফোন রাখতেই নূর চাঁদ দেখায় মনোযোগ দিল।
-- এই খেলার শেষ ধাপে আপনি ই আমাকে নিয়ে যাবেন মন্ত্রী সাহেব। আজ থেকে আমার কাজ গুলো আপনার। (বাকা হেসে)
সকালের নাস্তার টেবিলে আশমিন কে সবার আগে উপস্থিত হতে দেখা গেলো। নিজের মতো করে গুন গুন করছে সে।নূর রেডি হয়ে এসে বসলো তার চেয়ারে।আশমিনের দিকে তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে খাওয়ায় মনোযোগ দিল। আমজাদ চৌধুরীর ছেলের মতিগতি ভালো ঠেকছে না। কামিনী চৌধুরীর সেদিকে ধ্যান নেই। সে নিজের মতো খেয়ে যাচ্ছে। একজন গার্ড এসে একটা খাম কামিনী চৌধুরীর দিকে এগিয়ে দিলো। রেজিস্ট্রার করা এনভেলাপ। কামিনী চৌধুরী ভ্রু কুচকে সেদিকে তাকালো।
-- এখানে আপনার সাইন লাগবে ম্যাম।
গার্ডের কথায় রেজিস্ট্রার খাতায় সাইন করে খামটি হাতে নিল সে।ভিতর থেকে বের হওয়া ডকুমেন্ট পড়তেই মাথা ঘুরে গেল তার।হাত পা কাপতে লাগলো। নূর বাকা হেসে নিজের মতো খেয়ে যাচ্ছে। আমজাদ চৌধুরী সন্দিহান গলায় বলল,
-- এটা কিসের কাগজ কামিনী?
কামিনী চৌধুরী কিছু বলতে পারলো না। অতিরিক্ত শকে কথা বের হচ্ছে না মুখ থেকে। নূর সেদিকে তাকিয়ে বাকা হেসে বললো,
-- কোর্ট থেকে নোটিশ এসেছে।কোম্পানি থেকে সারে তিন শ কোটি টাকা হেরফের করার জন্য তাকে কোম্পানি কে চার শ কোটি টাকা ফেরত দিতে হবে। তা ও আগামি দুই মাসের মধ্যে।
আমজাদ চৌধুরী হতভম্ব হয়ে নিজের স্ত্রীর দিকে তাকালো। আশমিন একটা পেপার আমজাদ চৌধুরীর দিকে এগিয়ে গিয়ে বলল,
-- এসব বাদ দাও আব্বু।এখানে একটা সাইন লাগবে। তারাতাড়ি করে দাও তো।
আমজাদ চৌধুরী হতভম্ব চোখে পেপারের দিকে এক পলক তাকালো। কয়েক পলক সেদিকে তাকিয়ে থেকে নির্লিপ্ত ভাবে সাইন করে দিলো পেপারে।
-- ধন্যবাদ আব্বু।ওহ,আরেকটা কথা। আমি ভেবেছি তোমাকে আবার বিয়ে করাবো।মিসেস চৌধুরী ও থাকবে।তবে নূরের নাকি একটা ননদ লাগবে।তাই তোমার একটা বিয়ে করা দরকার। সানভি কিছু ছবি দিবে। দেখে পছন্দ করে রেখো।
নূরের বিষম লেগে পানি তালুতে উঠে গেলো। কামিনী চৌধুরী চোখ বড় বড় তাকিয়ে রইলো আশমিনের দিকে। আমজাদ চৌধুরী ছেলেকে ধমক দিতে ও ভুলে গেলো।
আশমিন নূরের দিকে পানির গ্লাস এগিয়ে দিয়ে আবার খাওয়ায় মনোযোগ দিল।
■■■■■■■■■■■■■■
#পর্ব_১৪
ছাদের রেলিংয়ে পা ঝুলিয়ে বসে আছে আশমিন।সব সময় গোছানো ছেলেটা আজ প্রচন্ড অগোছালো হয়ে নিজের জীবনের হিসেব মিলাতে ব্যস্ত। অনুভূতিহীন চোখ গুলো আজ পরাজিত সৈনিকের মতো নত হয়ে আছে।আমজাদ চৌধুরী এসে সন্তপর্ণে ছেলের পাসে বসলো।আশমিন বাবার দিকে একবার তাকিয়ে আবার নিচের দিকে তাকিয়ে রইলো। আমজাদ চৌধুরী তপ্ত শ্বাস ছেড়ে আশমিনের কাধে হাত রাখলো।দুজনের সম্পর্ক সাপে নেউলে হলেও এক জন আরেকজনের জন্য জান দিতেও প্রস্তুত। দুজনের সম্পর্ক অনেকটা বাচ্চা কালের বন্ধুদের মতো। সারাক্ষণ একজন আআরেকজনের পিছনে লেগে থাকতে মজা পায় তারা।কিন্তু একজনের মনের আকাশে মেঘ জমলে আরেক জন অস্থির হয়ে উঠে।
-- কিছু বলবে আব্বু?
-- কি হয়েছে বাবা।সকাল থেকেই লক্ষ্য করছি।এমন উদ্ভট বিহেইভ করছো কেন?
আশমিন শান্ত চোখে তাকালো তার বাবার দিকে।বাবার সহজ সরল বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে বুক টা হু হু করে উঠল।এমন একজন মানুষ কে কেউ কিভাবে ঠকাতে পারে! সেই মানুষ টা যদি হয় নিজের গর্ভধারিণী মা এটা জানার পর এই মানুষ টা পারবে তো নিজেকে সামলাতে?
-- আমাকে খুলে বলো বাবা।
আমজাদ চৌধুরীর থেকে চোখ সরিয়ে নিলো আশমিন। বাবার চোখের দিকে তাকালে কষ্ট হয় খুব।বাবা কে ভালোবাসে।প্রচন্ড ভালোবাসে। সেই বাবা কে এভাবে কেন ঠকাল কামিনী চৌধুরী! চোখ বন্ধ করে ফেললো আশমিন। রাগ হচ্ছে তার। সব কিছু ধ্বংস করে দেয়ার মতো রাগ।
-- ছবি গুলো দেখেছো আব্বু?
আমজাদ চৌধুরী হতাশ হলেন।ছেলের মুখ দেখে কখনোই তার মনের খবর বোঝা যায় না।তাই সে সরাসরি জানতে চেয়েছিল।কিন্তু ছেলে তার মুখ খুলছে না।
-- এসব কি ধরনের কথা আশমিন? আমি কেন আবার বিয়ে করতে যাবো? তুমি জানো তোমার এই আচরণের জন্য তোমার আম্মু কতটা কষ্ট পেয়েছে? তোমার কাছে এমন কথা আশা করি নি।
আমজাদ চৌধুরীর গলায় তীব্র হতাশা আর ক্ষোভ। আশমিন ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো আমজাদ চৌধুরীর দিকে। ছেলের দৃষ্টি দেখে থমকে গেলো আমজাদ চৌধুরী।দুই হাতে ঝাপটে ধরে কেদে উঠলেন।
-- কি হয়েছে বাবা? আমাকে বলো?তুমি এখনো আমার কাছে সেই ছোট্ট আশু।যাকে আমি কাধে নিয়ে ঘুরে বেরিয়েছি। দুই হাতে যাকে আমি প্রথম কোলে তুলে নিয়েছি।হাটা শিখিয়েছি, কথা বলা শিখিয়েছি।তুমি আমার কাছে এখনো সেই আধো আধো বুলিতে আব্বু ডাকা আশমিন ই আছো।আগে যেভাবে আব্বুর কাছে নিজের সমস্ত অভিযোগ অভিমান খুলে বলতে তেমন এখনো বলো বাবা।
আশমিন তার বাবাকে শক্ত করে জরিয়ে ধরলো। ছেলের চোখের পানি দেখে দিশেহারা হয়ে গেলো আমজাদ চৌধুরী।আজ পর্যন্ত ছেলে কে সে কাদতে দেখে নি। এমন কি নূর চলে যাওয়ার পরে যখন মাইনর এট্যাকের জন্য হসপিটালাইজ হলো তখন ও আশমিন কাদে নি।রক্তিম চোখে শুধু তাকিয়ে থাকতো।
আজ কি এমন হয়েছে যার জন্য তার ছেলের চোখের পানি কোটর ছেড়ে বেরিয়ে এসেছে?
কয়েক মুহুর্তে নিজেকে সামলে নিলো আশমিন। চোখের পানি মুছে আমজাদ চৌধুরীর ভয়ে শুকিয়ে যাওয়া মুখের দিকে তাকালো।তার কান্না ভেজা চোখ দেখে সেও কেদে দিয়েছে। ভিতর থেকে কান্না গুলো আবার দলা পাকিয়ে এলো। আশমিন আমজাদ চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে শক্ত গলায় বলল,
-- আমার কথা মেনে নাও বাবা।
-- পাগল হয়ে গেছো?নিজের মায়ের সংসার ভাঙ্গতে চাইছো!আমি অবাক হয়ে যাচ্ছি তোমার কথা শুনে। (হতভম্ব গলায়)
-- আমি চাই সে কষ্ট পাক আব্বু।আপনজন হারালে কেমন লাগে তার বোঝা উচিত। কাছের মানুষ বিশ্বাসঘাতকতা করলে কতটা কষ্ট হয় তা হাড়ে হাড়ে বুঝবে এবার।তার লোভ তাকে কোথায় নামিয়ে নিয়ে যাচ্ছে তাকে আমি তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে চাই আব্বু। আর তাকে তার সম্রাজ্য থেকে টেনে নামাবো আমি।
আমজাদ চৌধুরী এবার ঘামতে লাগলো। কি করেছে কামিনী? এই প্রশ্ন টা করতে তার গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। সে এমন কিছু শুনতে চায় না যা শুনলে সে ভেঙ্গে গুড়িয়ে যাবে।
-- তুমি সহ্য করতে পারবে না আব্বু।তার মৃ*ত্যু অবধারিত। তার লোভ তাকে খু*ন করবে। আগামী সপ্তাহে তোমার বিয়ে। এখন গিয়ে ঘুমাও।মেয়ে আমি নিজেই পছন্দ করে নিবো।
-- আমি ওকে ভালোবাসি আশমিন।
আমজাদ চৌধুরীর গলা টা হালকা কেপে উঠলো।
-- সে তোমার ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য নয়।
আশমিনের গলা নির্লিপ্ত। আমজাদ চৌধুরী টলমল পায়ে চলে গেলেন ছাদ থেকে।
নূর তীক্ষ্ণ চোখে সবকিছু দেখলো।এতক্ষণ সে ছাদের দরজার আড়ালে দাঁড়িয়ে ছিল।পরিস্কার ভাবে কিছু না বুঝলে ও এটা ঠিক বুঝলো যে আশমিনের মাথা খারাপ হয়ে গেছে।সকালে সব কিছু মজা ভেবে উড়িয়ে দিলেও এখন বিষয় টা খুব ভাবাচ্ছে তাকে।হঠাৎ হেচকা টানে তাল সামলাতে না পেরে কারোর শক্ত বুকের সাথে তার মাথার সংঘর্ষ হয়ে গেলো। ব্যথা পেলেও কিছু বললো না সে। এটা আশমিন ছাড়া কেউ না সে জানে।
-- প্রেম পাচ্ছে?
বিরক্ত চোখে তাকালো নূর।প্রেম কেন পাবে আজব? এখানে প্রেম পাওয়ার মতো কি হয়েছে এখানে?একদিন নিজের মন মীরজাফরি করেছে বলে কি প্রতিদিন ই সে পিছলে যাবে নাকি।
-- ছারুন।সব সময় এভাবে গা ঘেষাঘেসি করেন কেন?
আশমিন অবাক হওয়ার ভান করে আর্তনাদ করে বললো,
-- মিথ্যা কথা! আমি সারাক্ষণ তোমার গা ঘেসাঘেসি করি না নূর। আমার কতো কাজ জানো তুমি? আমি শুধু মাঝে মধ্যে হালকা ঘেষাঘেসি করি।তাতেই তুমি দু দিন রুম থেকে বের হতে পারো না(শয়তানি হেসে)।
নূর হা করে তাকিয়ে রইলো। মনে মনে চিৎকার করে বললো, চুপ করুন। আপনি একটা অশ্লিল গিরগিটি।
আশমিন নূরের মুখভঙ্গি কে পাত্তা না দিয়ে সিরিয়াস ভঙ্গিতে বললো,
-- আমার কি মনে হয় জানো?আমরা যখন জেনারেশন বাড়ানোর মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজটা করতে ট্রায় করবো তখন আর তোমাকে খুজেই পাওয়া যাবে না। দেখা গেলো তুমি কোন সাইন্স ল্যাবে অসহায় হয়ে ঝুলছো।তাই তোমার এতো বড় একটা টাস্কে ইনভলভ হওয়ার আগে উচিত নিয়মিত একটু একটু করে প্র্যাকটিস করা। আসো আমরা বরং সময় টাকে কাজে লাগাই।আমি থাকতে তোমার কোন চিন্তা নেই।মিনিষ্টার আশমিন জায়িনের বউ হয়ে তুমি কোন ল্যাবে কংকাল হয়ে ঝুলবে এটা মেনে নেয়া যায় না। ব্যপার টা লজ্জাজনক।
নূর হতভম্ব হতেও ভুলে গেলো। আশমিনের কথা গুলো মাথায় তাল গোল পাকিয়ে খিচুড়ি হয়ে গেলো। সে শুধু চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইলো আশমিনের দিকে। এদিকে আশমিনের কয়েকদফা চুমু খাওয়া শেষ। নূর সম্ভতি ফিরে পেতেই চিৎকার দিয়ে আশমিন থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে দৌড়ে নিচে নেমে গেলো।মনে মনে কয়েকবার আউড়ালো,
-- নির্লিজ্জ নির্লজ্জ নির্লজ্জ।
নূর যেতেই আশমিন আবার নিজের জায়গায় গিয়ে বসে পরলো। আপাতত তার কাজ শেষ। এখন নূর যা শুনেছে তা নিয়ে না ভেবে আশমিন কে গালি দিতে ব্যস্ত থাকবে।সব কিছু তারাতাড়ি করতে হবে। নাহ,আর কয়েকটা চুমু খেতে পারলে ভালো হতো। মেয়ে বিয়ে করেছে না চিংড়ি মাছ দ্বিধায় আছে আশমিন। সারাক্ষণ তিড়িংতিড়িং করতে থাকে।কালকেই বাজার থেকে ভালো দেখে একটা দড়ি কিনে আনাবে সে।আদরের সময় নো তিড়িংতিড়িং। ভোতা মুখ নিয়ে ছাদ থেকে নেমে গেলো সে।এখন একটা ঘুম দরকার।
কামিনী চৌধুরী ফ্যাচফ্যাচ করে কেদেই যাচ্ছে। আমজাদ চৌধুরীর সেদিকে হুস নেই। ছাদ থেকে নেমে অস্থির ভাবে পায়চারি করে যাচ্ছে সে।কামিনী কি এমন করছে ভাবতে ভাবতে চুল ছেড়ার জোগাড়। কামিনী চৌধুরীর নাক টানার শব্দে বিরক্তিতে মুখ কুচকে ফেললো আমজাদ চৌধুরী।রুক্ষ গলায় বলল,
-- কি সমস্যা তোমার কামিনী? এভাবে ফ্যাচফ্যাচ করে কেদে আমার মাথা ব্যথা আর বাড়িয়ে দিয় না।বিরক্ত লাগছে।দয়া করে কান্না বন্ধ করে বলো কি এমন করেছো যার জন্য ছেলে এমন ধ্বংসের খেলায় নেমেছে।নিজের পেটের ছেলেকে তোমার চেয়ে ভালো আর কেউ চেনে না কামিনী। সে যা বলে তাই করে।বুড়ো বয়সে সতিনের সংসার না করতে চাইলে সত্যি টা আমাকে বলো।
কান্না বন্ধ করে ভয়ার্ত চোখে তাকালো কামিনী চৌধুরী। এতো বছরের পাপ কি তবে ছেলের সামনে চলে এসেছে!কাপা কাপা গলায় বলল,
-- আ আমি ক কিছু করি নি আমজাদ। তোমার ছেলের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। চলো আমরা কানাডা ফিরে যাই।ওখানে আমাদের যা আছে তা দিয়ে আমাদের চলে যাবে।
আমজাদ চৌধুরী শান্ত চোখে তাকালো কামিনী চৌধুরীর দিকে। হীম গলায় বলল,
-- আমাদের কিছু নেই কামিনী। আমি আজ সকালে সব কিছু আশমিনের নামে করে দিয়েছি।
■■■■■■■■■■■■■■
#পর্ব_১৫
কালকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা লাইভ কনসার্ট আছে নূরের।সারাদিন অফিস সামলে গান নিয়ে মাথা ঘামানোর সময় পায় না নূর।তবে যতই বিজি থাক না কেন গান সে ছাড়বে না।মন খারাপের সময় গুলোতে এই গান ই ছিল একাকিত্ব ঘুচানোর একমাত্র সঙ্গি।তাই বাবার দেয়া দায়িত্ব সামলে ও নিজের ক্যারিয়ারে মন দিবে।
অফিসের সমস্ত কিছু অনেকটা গুছিয়ে এনেছে নূর।আশমিন এখন পুরো পুরি রাজনীতি নিয়ে ব্যাস্ত। দায়িত্ব থেকে রেহাই পাওয়ার পর থেকে সে আর এদিকে মারায় নি।নূর ইদানীং চোখে চোখে রাখছে আশমিন কে। অফিসের রেসপনসেবলিটি থেকে মুক্ত হওয়ার পর সে যেন একটু বেশিই বেয়াড়া হয়ে উঠছে। সকাল থেকে অমির কোন পাত্তা নেই।ছেলেটা হুট করেই নিখোঁজ হয়ে গেছে। মোবাইল ও বন্ধ। এক আআঙ্গুলের সাহায্যে কপালের মাঝখানে হালকা ম্যাসাজ করে দেয়ালে ঝুলানো ঘড়ির দিকে তাকালো নূর।ঘড়ির কাটা বারোটার ঘর পেরিয়ে গেছে অনেক আগে। চেয়ার থেকে উঠে গ্লাসের দেয়ালের সামনে গিয়ে দাড়ালো নূর। কপালে চিন্তার ভাজ পড়েছে কয়েকটা। আজ সকাল থেকে অমি আশমিনের উপর নজর রাখছিল।আশমিন কিছু করে নি তো!চিন্তা টা মাথায় আসতেই নূর কয়েকবার মাথা ঝাকালো। আশমিন অমির কিছু করবে না তা সে খুব ভালো করেই জানে। মোবাইলের রিংটোনে ভাবনা থেকে বেরিয়ে এলো নূর। দ্রুত পায়ে গিয়ে কল রিসিভ করলো।
-- হ্যালো ম্যাম।আমি অমি বলছি।
-- অমি!কোথায় তুমি? মোবাইল বন্ধ কেন তোমার? আর এটা কার নাম্বার?(চিন্তিত গলায়)
অমি নূরের একসাথে করা এতগুলো প্রশ্ন শুনে ভেবাচেকা খেয়ে গেলো।
-- আমার ফোন টা বন্ধ হয়ে গেছে ম্যাম।
-- তুমি ঠিক আছো?
-- জ্বি ম্যাম।
-- কোন নিউজ পেলে?
-- স্যারের সাথে ওইদিন হোটেলে যে মেয়েটার ছবি ছিল সেই মেয়ের খোঁজ পেয়েছি ম্যাম।মেয়েটি ওই হোটেলের বার সিঙ্গার।ইয়ে মানে আসলে ম্যাম।
অমি কিছু একটা বলতে গিয়ে বার বার আটকে যাচ্ছে। কথা টা বলা ঠিক হবে কি না বুঝতে পারছে না।
-- যা বলার সরাসরি বলো অমি।(শান্ত গলায়)
-- আসলে ম্যাম,ওইদিন মেয়েটা স্যারের,সাথেই ছিল।
নূর চোখ বন্ধ করে কয়েক বার শুকনো ঢোক গিললো।অমি নিজেও চুপ করে আছে। নূর কে সময় দিচ্ছে নিজেকে সামলে নেয়ার জন্য। নূর কয়েকবার জোরে শ্বাস নিয়ে শান্ত অথচ ভয়ংকর গলায় বলল,
-- ওটা যেখানেই থাকুক না কেন তুলে নিয়ে এসো অমি।
-- ওকে ম্যাম।
অমি ফোন রাখতেই চেয়ারে গা এলিয়ে দিল নূর।আশমিন কে নিয়ে কিছু ভাবতে ইচ্ছে করছে না। সামনে অনেক ভয়*ংকর সত্যি অপেক্ষা করছে। এখন ভেঙে পড়া চলবে না।
~
সানভি অসহায় চোখে তাকিয়ে আছে আশমিনের দিকে। আশমিনের অবশ্য সেদিকে কোন খেয়াল নেই। সে নিজ মন ল্যাপটপে কিছু একটা করছে।
-- মেয়েটাকে এখনো বাচিয়ে রেখেছো কেন সান?
আশমিনের হিমশীতল গলা শুনে কেপে উঠলো সানভি।কয়েক দফা ঢোক গিলে চিন্তা করলো, মেয়েটা কে মা*রার কথা কবে বললো!
-- গরিবের ঘরের মেয়ে স্যার। অন্ধ বাবার মেই মেয়ে ছাড়া আর কেউ নেই।
আশমিন চেয়ারে হেলান দিয়ে শান্ত চোখে তাকালো সানভির দিকে। কয়েক পলক তাকিয়ে থেকে গম্ভীর গলায় বলল,
-- আমি আছি সান।
সানভি আর কিছু বললো না। আশমিন বাকা হেসে বললো,
-- চিন্তা করো না সান।আমার ইচ্ছাকৃত ফেলে রাখা কাজ গুলো তোমার ম্যাম করে দিবে।
সানভি মাথা নেড়ে চলে গেলো। সানভি বের হতেই আমজাদ চৌধুরী হন্তদন্ত হয়ে আশমিনের কেবিনে ঢুকলো। বাবার এমন অস্থির ফেস দেখে মুচকি হাসলো আশমিন। আমজাদ চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বাকা হেসে বললো,
-- রাস্তায় ইভটিজিং করে পালিয়ে এসেছো নাকি।এভাবে দৌড়াচ্ছো কেন,?
আমজাদ চৌধুরী চটে গেলেন।দাত কিড়মিড় করে বললো,
-- বাবা হই তোমার। বাবা কে ইফটিজার বলতে লজ্জা করে না তোমার?
-- লজ্জা কেন করবে? কাল থেকে তুমি গার্লস হোস্টেলের সামনে দাড়িয়ে থাকবে।এক সপ্তাহের মধ্যে বিয়ে তোমার।ওখানে দাঁড়িয়ে মেয়ে পছন্দ করবে।যাকে পছন্দ করবে সেই আমার মা হবে।
আমজাদ চৌধুরীর বিস্ময়ের মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে এই ছেলে।এখন নাকি তাকে বখাটে ছেলেদের মতো গার্লস হোস্টেলের সামনে দাড়িয়ে মেয়ে খুজতে হবে। আমজাদ চৌধুরী আর কথা বারালেন না।এই অসভ্য ছেলে যখন তখন ইজ্জতের দফারফা করে দিতে পারে।
-- আমার কিছু টাকা লাগবে আশমিন।
-- আমি জানি আব্বু।চিন্তা করো না। তোমার বিয়ে আমি স্পনসর করবো।আমার একমাত্র বাবার বিয়ে বলে কথা।তুমি বরং পার্লারে গিয়ে হালকা একটা ফেসিয়াল করিয়ে এসো।
আমজাদ চৌধুরী বুঝলেন ছেলে তার কথা শুনবেন না।বাধ্য হয়েই চলে গেলেন।বাসায় কামিনী হা হুতাশ করে কাদছে।এক মাসের মধ্যে টাকা দিতে না পারলে তাকে জেলে যেতে হবে। বার বার নূর কে অভিশাপ দিয়ে যাচ্ছে। এদিকে ছেলে উঠে পরে লেগেছে তাকে বিয়ে করানোর জন্য। কামিনী যাই করুক না কেন সে তো কামিনী কে ভালোবাসে। কামিনীর জায়গা অন্য কাউকে সে কোন দিন ও দিতে পারবে না।এতে কামিনী একা কামিনী একা যন্ত্রণা ভোগ করবে না। তার সমান ভাগিদার সে নিজেও হবে।আশমিন বুঝে শুনেই এসব করছে।সে কষ্ট পাবে জেনেও তাকে আবার বিয়ে করানোর জন্য উঠে পরে লেগেছে। না জানি কোন ভুলের শাস্তি দিচ্ছে ছেলে তাকে।
আশমিন শান্ত চোখে তাকিয়ে রইলো তার বাবার যাওয়ার দিকে।দীর্ঘশ্বাস ফেলে মনে মনে বললো,
-- তুমি ভুল করেছো বাবা।কাছের মানুষ কে না চেনার ভুল যখন করেছো শাস্তি তো তোমাকে পেতেই হবে।
নূরের টর্চা*র রুমে একটা মেয়েকে বেধে রাখা হয়েছে।নূর মেয়েটার সামনে একটা চেয়ারে আয়েশ করে বসে আছে।থেমে থেমে গুন গুন করে কিছু একটা গাইছে।মেয়েটার জ্ঞান ফিরতে না দেখে এবার বিরক্ত চোখে তাকালো নূর।অমির দিকে তাকিয়ে বিরক্ত কন্ঠে বললো,
-- এর জ্ঞান ফেরাও অমি।
অমি বালতি ভর্তি পানি নিয়েই দাঁড়িয়ে ছিল।নূরের হুকুম পেতেই এক বালতি পানি ছুড়ে মারলো মেয়েটার মুখে। কয়েক সেকেন্ডে পিটপিট করে চোখ মেললো সে।নূর পা নাচিয়ে শরীর দুলিয়ে মেয়েটিকে পরখ করছে।
-- আমাকে এখানে কেন আনা হয়েছে??
মেয়েটার কর্কশ গলা শুনে বাকা হাসলো নূর। চোখ বন্ধ করে আরাম করে বসলো।
-- অমি।
-- ইয়েস ম্যাম।
-- ওর মুখটা ভে*ঙ্গে দাও।বিশেষ করে বা পাশ টা।
অমি ইশারা করতেই একটা পালোয়ান সাইজের মেয়ে এসে মেয়েটার মুখে পরপর কয়েক বার আঘাত করলো। মুখের বা পাশ টা থেতলে যেতেই অমি থামিয়ে দিল। মেয়েটা চিৎকার করে আর্তনাদ করছে।নূর নিজের চেয়ার থেকে উঠে মেয়েটার সামনে গিয়ে হালকা ঝুকলো। পাচ আঙ্গুলের সাহায্যে থুতনি উচু করলো।নূরের চোখ মুখ ভয়ংকর লাল হয়ে আছে। নূর মেয়েটার গাল চেপে ধরে দাতে দাত চেপে বললো,,
-- আমার ব্যবহার করা জুতো গুলোর ও কারখানা তে একজোড়া বানানো হয় যাতে অন্য কেউ এই মডেল ইউজ করতে না পারে।আর তুই সেই আমার নামে দলিল করা একমাত্র বরের বুকে মাথা রেখে ঘুমাস।সাহস আছে মাইরি। তোর এই শরীর আমি আস্ত রাখবো ভাবলি কি করে।
মেয়েটা এতক্ষণ যন্ত্রণায় আর্তনাদ করছিল। এবার নূরের দিকে তাকিয়ে ক্রুর হাসলো। ব্যঙ্গাত্মক গলায় বলল,
-- তাহলে তো আপনার সেই দলিল করা একমাত্র বরের বুকটাও ধ্বংস করতে হয়।সে নিজেও তো অন্য একটা মেয়ে দ্বারা ইউজড হয়ে গেছে।
মেয়েটার কথা শেষ হতেই তার কপাল বরাবর একটা গু*লি এফোড় ওফোড় করে দিলো।
আশমিন ব*ন্দুকের নলের উপর ফু দিয়ে বাকা হাসলো।
কথা হবে, দেখা হবে
প্রেমে প্রেমে মেলা হবে
কাছে আসা-আসি আর হবে না
চোখে চোখে কথা হবে
ঠোঁটে ঠোঁটে নাড়া দেবে
ভালবাসা-বাসি আর হবে না
শত রাত জাগা হবে
থালে ভাত জমা রবে
খাওয়া-দাওয়া কিছু মজা হবে না
হুট করে ফিরে এসে
লুট করে নিয়ে যাবে
এই মন ভেঙে যাবে, জানো না
আমার এই বাজে স্বভাব
কোনোদিন যাবে না
আমার এই বাজে স্বভাব
কোনোদিন যাবে না
আশমিনের গান শুনে চোয়াল শক্ত হয়ে গেলো নূরের। রাগে হাত মুঠ করে ফেললো। দাতে দাত চেপে চোখ বন্ধ করে নিজের হাতের পিস্ত*লটা শক্ত করে ধরলো।রাগে মাথা দপদপ করলে ও ফেস সম্পুর্ন স্বাভাবিক করে ফেললো। অমি সহ বাকি সবাই অসহায় চোখে তাকিয়ে আছে দুজনের দিকে।নূর পিছনে ঘুরতেই দেখলো আশমিন তার থেকে ঠিক তিন হাত দূরে।তার দিকেই এগিয়ে আসছে সে।
একটা গু*লি আশমিনের বুকের বাপাশ ভেদ করতেই থেমে গেলো আশমিন।অবাক চোখে তাকালো নূরের দিকে। সবাই স্তব্ধ হয়ে নূরের দিকে তাকিয়ে আছে। অথচ নূর সম্পুর্ন শান্ত।এখনো হাতের পি*স্তল আশমিনের দিকে তাক করা।আশমিনের সাদা শুভ্র পাঞ্জাবি মুহুর্তেই রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছে। বুকের দিকে একবার তাকিয়ে আবার নূরের দিকে তাকালো আশমিন।রক্তিম চোখ দুটো ছলছল করলেও মুখে তার মুচকি হাসি।নূর এগিয়ে গেলো আশমিনর দিকে।আশমিন হাটু মুরে বসে পরেছে ততক্ষণে। সবাই যেন একটা ঘোরের মধ্যে আছে। নূর আশমিনের সামনে বসে তার গালে হাত রাখলো। কপালে চুমু খেয়ে কানের কাছে ফিসফিস করে গাইলো,
'ভালোবাসা ভালোবাসা থাকো তুমি দূরে,,,
কাছে এলেই জ্বলে মন না পাওয়ার
আগুনেতে ধুকে ধুকে পুড়ে থাকো তুমি দূরে'
নূর বেরিয়ে যেতেই আশমিন ঢলে পরলো।অমি 'স্যার' বলে চিৎকার করে এসে আশমিন কে আগলে ধরলো।
-- গাড়ি বের করো বাহাদুর।
ততক্ষণে আশমিনের চোখ বন্ধ হয়ে গেছে।
■■■■■■■■■■■■■■
#পর্ব_১৬
আশমিন কে হসপিটালে সিফট করা হয়েছে।খুব গোপনে ট্রিটমেন্ট করা হচ্ছে আশমিনের। অমি এখনো নিজের ঘোর থেকে বেরিয়ে আসতে পারে নি। নূর এমন কিছু করবে তা স্বপ্নে ও ভাবতে পারেনি সে।সানভি চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে বারান্দায়। শূন্য দৃষ্টিতে অপারেশন থিয়েটারের দিকে তাকিয়ে আছে। আমজাদ চৌধুরী কেউ জানায়নি। বিষয় টা কোন ভাবেই মিডিয়ায় ফাস হতে দেয়া যাবে না। চারিদিকে শত্রুর অভাব নেই। আশমিনের অসুস্থতা তাদের একটা নতুন সুযোগ করে দেয়া হামলা করার জন্য।
-- আমার বিশ্বাস হচ্ছে না ম্যাম এমন কিছু করতে পারে।
সানভি চোখ ঘুরিয়ে অমির দিকে তাকালো। অমি অপরাধীদের মতো মাথা নিচু করে বারান্দার চেয়ারে বসে আছে। সানভি দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল।
-- সময় মানুষ কে বদলে দেয় অমি।রাফসান শিকদারের মেয়ে সে।হিংস্রতা তার রক্তে মিশে আছে। সে যেমন মায়া দেখাতে জানে তেমন হিংস্র বাঘের ন্যায় খুব*লে খেতে ও জানে।অবিশ্বাস করার কিছু নেই।
পরিস্থিতি অনেক বিগড়ে যাচ্ছে সানভি।সব কিছু হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে। তোমার মনে হয় স্যার ম্যাম কে ছেড়ে দিবে? পাল্টা আঘাত সে ও করবে।এরকম চলতে থাকলে তাদের একজনের হাতে আরেকজনের বিনাশ নিশ্চিত।
-- সব কিছু সামনে আসলে ম্যাম নিজেকে সামলাতে পারবে না অমি।সত্যি মাঝে মাঝে খুব নিষ্ঠুর হয়।ম্যাম যেই সত্যির তালাশ করছে তা জানলে সে নিজেই ভেঙ্গে গুড়িয়ে যাবে। কিছু কিছু সত্যি গোপন থাকাই সবার জন্য মঙ্গল।
অমি নির্মিশেষে তাকিয়ে রইলো সানভির দিকে।তার নিজের সত্যিটাই তো নূর কে ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেয়ার জন্য যথেষ্ট। বয়সে সে নূর থেকে তিন বছরের বড়।ছোট বেলা থেকেই আমজাদ চৌধুরীর অনাথ আশ্রমে বড় হয়েছে। নূর কে প্রথম প্রথম সে খুব একটা পছন্দ করতো না। কিন্তু ছোট্ট নূর যখন আশ্রমে আসতো তখন সে তার থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখতে পারতো না। ধিরে ধিরে নূরের মায়ায় নিজেকে জরিয়েই নিল।নূর যখন দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছিল তখন সে ও নূরের সাথেই ছিল।একা ছাড়ে নি নূর কে। চোখ বন্ধ করে চেয়ারে গা এলিয়ে দিলো অমি।সত্যি যেন কখনো নূরের সামনে না আসে সেই দোয়াই করতে লাগলো।
~
রাফসান শিকদার কে ব্যবসার কাজে মাঝে মধ্যে অনেক দেশেই ঘুরতে হতো। নূরের মা আর রাফসান শিকদারের ভালোবাসার বিয়ে ছিল।অসম্ভব ভালবাসতো সে নূরের মাকে।সুদর্শন রাফসান শিকদার কে অনেকেই নিজের রুপের জালে ফাসাতে চাইতো।কিন্তু রাফসান শিকদার কাউকে পাত্তা দিত না।বিয়ের অনেক বছর হয়ে যাওয়ার পরেও তাদের কোন সন্তান হচ্ছিল না।নূরের মা সব সময় ডিপ্রেশনে ভুগতো।অনেক ডাক্তার দেখিয়ে ও যখন কাজ হচ্ছিল না তখন সে রাফসান শিকদার কে আরেকটা বিয়ে করতে বলে। সেদিন রাফসান শিকদারের ভয়ংকর চেহেরা দেখেছিল সবাই।জীবনে প্রথম বারের মতো প্রিয়তমা স্ত্রীর গায়ে হাত তোলে সে।রাগ করে চলে যায় কানাডায় কামিনী চৌধুরীর কাছে।এখানেই জীবনের সবচেয়ে বড় ভুলটা করে বসে সে।হতাশায় কষ্টে নিজেকে সামলাতে না পেরে নিয়মিত বারে যাওয়া শুরু করে। কামিনী চৌধুরী সব দেখে ও কিছু বলতেন না।উল্টো ভাই কে আরো উস্কে দিতেন বউয়ের বিরুদ্ধে। নিজের কানাডিয়ান বান্ধবী লিন্ডা কে সারাক্ষণ রাফসান শিকদারের আশেপাশে রাখতেন। লিন্ডা সারাদিন চিপকে থাকতো রাফসান শিকদারের সাথে। রাফসান শিকদার বিরক্ত হলেও কিছু বলতো না। কয়েকবার কামিনী চৌধুরীর কাছে নিষেধ করেছিলেন যেন লিন্ডা তার আশেপাশে না আসে। কামিনী চৌধুরী কানে নেন নি সে কথা। অবশেষে রাফসান শিকদার সিদ্ধান্ত নেন সে বিডি তে ফিরে আসবে।নিজের স্ত্রীর থেকে আর দূরে থাকতে পারছেন না তিনি।তখন ই কামিনী চৌধুরী জঘন্য এক পরিকল্পনা করেন।রাতের খাবারের সাথে ড্রাগস আর উত্তেজক মেডিসিন খাইয়ে দেন রাফসান শিকদার কে। আর লিন্ডা কে পাঠিয়ে দেন রাফসান শিকদারের রুমে।ফলাফল যা হওয়ার তাই হলো। অপরের বোধে পাগলপ্রায় রাফসান শিকদার লিন্ডা কে সেই অবস্থায় গলা চেপে ধরলেন।লিন্ডা কে কোন ভাবে বাচিয়ে নিলেও নিজের পরিকল্পনা সফল করতে পারলেন না কামিনী চৌধুরী। আমজাদ চৌধুরী শুধু স্ত্রীর দিকে হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে ছিল।প্রেয়সীর এমন বিনাশিনী রুপ তাকে ক্ষনে ক্ষনে মৃত্যু দিচ্ছিল। কামিনী চৌধুরী ভেবেছিল ভাই কে ফাসিয়ে লিন্ডা কে তার সাথে বিয়ে দিয়ে দিবেন।কিন্তু তা আর সম্ভব হলো না। রাফসান শিকদার হুংকার ছেড়ে কামিনী চৌধুরী কে প্রশ্ন করলেন,
-- এই প্রস্টি*টিউট রাতে আমার রুমে ঢুকলো কি করে কামিনী?আমি রুম লক করে ঘুমিয়ে ছিলাম।
রাফসান শিকদার পাগলা ঘোড়ার মতো আক্রমণ করতে চাইছিল লিন্ডার উপর। অবশেষে কোন কুল কিনারা না পেয়ে সমস্ত দোষ লিন্ডার ঘারে দিয়ে দিলেন কামিনী চৌধুরী। ভাই কে আশ্বস্ত করলেন এই কথা আর কেউ জানবে না। রাগে ঘৃণায় জর্জরিত হয়ে রাফসান শিকদার দেশে ফিরে আসেন। আশমিন তখন হোস্টেল থেকে পড়াশোনা করে। ছোট থেকেই সে হোস্টেলে থাকতো। তাই বাড়িতে কি হতো তা সে জানতো না।
দেশে আসার পর নিজের স্ত্রীর দিকে তাকাতে পারতো না রাফসান শিকদার। তবে স্ত্রীর ভালোবাসায় বেশিদিন তাকে দূরে সরিয়ে ও রাখতে পারে নি। এর মধ্যেই খবর আসে লিন্ডা প্রেগন্যান্ট। রাফসান শিকদার এক কোটি টাকা দিয়ে লিন্ডার মুখ বন্ধ করে দেন। লিন্ডার জমজ ছেলে হয়।ডেলিভারির সময় ই লিন্ডা মারা যায়। কামিনী চৌধুরী একটা ছেলে কে নিজের কাছে নিয়ে এলেও আরেকজন কে হসপিটালেই ফেলে আসেন।তার কার্জ হাসিল করার জন্য একজন ই যথেষ্ট। অযথা টাকা খরচ করে দুজন পালার মানেই হয় না। আমজাদ চৌধুরী তখনও স্ত্রীর ভালোবাসায় চুপ ছিলেন।আরেকটা ছেলে কে সে নিজের অনাথ আশ্রমে পাঠিয়ে দেন।আর সেই ছেলেটাই হচ্ছে অমি।রাফসান শিকদার কে এ সম্পর্কে কিছুই জানানো হয়নি। অমি কিছুটা বড় হতেই আমজাদ চৌধুরী তাকে সমস্ত সত্যি জানিয়ে দেন।নিজের মায়ের উপর রাগ হলেও রাফসান শিকদার কে কখনো ঘৃণা করেনি অমি।তার মনে হয়েছে রাফসান শিকদার যা করেছে তা একেবারে সঠিক।
তিন বছর পরে নূর হলো।তাদের সংসারে সত্যিকারের খুশি এসে ধরা দিল।সব কিছু ভালোই চলছিল। নূরের মায়ের এক্সিডেন্টে মৃত্যু আবার সব কিছু এলোমেলো করে দিলো। প্রথম প্রথম নূর কে হিংসে করলেও পরে নূর কে বুক দিয়ে আগলে রেখেছে অমি।কখনো ভাই হওয়ার দাবি নিয়ে তার সামনে দাঁড়ায় নি।তবে তার আরেক ভাই ই তার বাবার জান কেড়ে নিয়েছে এ সম্পর্কে বিন্দুমাত্র ধারণা নেই অমির।কিছু কিছু সত্যি শুধু ধ্বংস ডেকে আনে।তাই রাফসান শিকদার আশমিনের কাছে নিজের জীবন কে খোলা বইয়ের মতো উপস্থাপন করেছিলেন। তার এই জঘন্য অতীত আশমিনের কাছে হেফাজতে রেখে বলেছেন নূর যেন কখনো এই সম্পর্কে জানতে না পারে। তাহলে সে আর তার আব্বু কে ভালোবাসবে না। রাফসান শিকদারের মৃ*ত্যুর পরেও আশমিন তার অতীত কারোর সামনে আসতে দেয়নি। নিজের বাবার প্রতি রাগটা এতো দিন কথায় প্রকাশ করলেও এবার সে হাতে কলমে করার জন্য উঠে পরে লেগেছে। আমজাদ চৌধুরীর নীরবতা ই কামিনী চৌধুরী কে এতটা বিনাশীনি বানিয়ে দিয়েছে।যার শাস্তি তাকে পেতে হবে।
~
আশমিনের অপারেশন সাক্সেসফুল হয়েছে।গুলি হার্টের এক ইঞ্চি উপর দিয়ে বেড়িয়ে গেছে।তাই খুব একটা ক্ষতি হয়নি।তবে অতিরিক্ত ব্লিডিং এর জন্য এখনো জ্ঞান ফিরেনি।কয়েকদিন হসপিটালেই থাকতে হবে। আশমিনকে কেবিনে সিফট করা হলে সানভি আর অমি গিয়ে দেখে আসে তাকে। আশমিনের জ্ঞান ফিরে ছয় ঘন্টা পরে। পিটপিট করে চোখ খুলে চারিদিকে তাকাতেই চোখ পড়ে সোফায় পায়ের উপর পা তুলে বসে ম্যাগাজিন পড়া নূরের দিকে। আশমিনের দিকে না তাকিয়ে ই উঠে আসে নূর। হাতে একটা বুফে নিয়ে আশমিনের দিকে এগিয়ে যায়।আশমিন এখনো এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে নূরের দিকে। নূর বাকা হাসলো। বুফে টা আশমিনের বেডের পাশে রেখে মোহনীয় গলায় বলল,
-- মৃত্যুর যাত্রা কেমন ছিল মন্ত্রী সাহেব?
আশমিন ক্রুর হাসলো। সন্তপর্ণে সার্জিক্যাল নাইফ হাতে তুলে নিলো।নুর বেডে এক হাত ভর দিয়ে আশমিনের দিকে ঝুকে আছে।আশমিন নূরের ভর দেয়া হাতের রগ বরাবর এক টান দিয়ে বাকা হেসে বললো,
-- সেটা নাহয় একটু উপভোগ করে আসো সোনা।আমি এখানেই ওয়েট করছি তোমার জন্য। হ্যাপি জার্নি।
নূরের হাত থেকে ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে।নূর হতভম্ব চোখে তাকিয়ে আছে আশমিনের দিকে। আশমিন ভ্রু কুচকে ফেললো। মুচকি হেসে বললো,
-- কয়েক ঘন্টা আগে আমি ও এমন অবাক হয়ে ছিলাম।আমাদের ফিলিংস গুলো ও কতো মিলে যায় তাই না!
সানভি আর অমি কেবিনে ঢুকে হতভম্ব হয়ে গেলো। নূর ততক্ষণে ঢলে পরেছে ফ্লোরে। আশমিন হালকা হেসে আস্তে করে বললো,
-- পাচ মিনিট পর আমার বউকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাবে সান। এখানে আরেকটা বেডের ব্যবস্থা করো। আমি এখানে শুয়ে থাকবো আর সে বাইরে বাইরে ঘুরবে তা হবে না।আর একটা কালো গোলাপের বুফের ব্যবস্থা করো।
■■■■■■■■■■■■■■
#পর্ব_১৭
নূর কে নিয়ে যাওয়ার পর আশমিন হালকা হাসলো। অমি নিয়ে গেছে নূর কে। সানভি নিস্তেজ নূর কে কোলে নিতে গেলেই আশমিনের ভয়ংকর ধমক খেয়ে থেমে গেছে। চাকরি জীবনে এই প্রথম আশমিন এভাবে হুংকার দিয়ে ধমক দিয়েছে ওকে।ভয় দ্বিধা সব নিয়ে যখন সানভি আশমিনের দিকে তাকিয়ে ছিল তখন আশমিন গম্ভীর গলায় অমি কে বললো নূর কে ডক্টরের কাছে নিয়ে যেতে।অমি এই অপেক্ষায় ই ছিল। নূরের কাটা হাত দেখে কলিজা ছিড়ে যাচ্ছিল ওর।আশমিনের ভয়ে এতক্ষণ অস্থির হলেও এক জায়গায় দাঁড়িয়ে ছিল।অনুমতি পাওয়ার সাথে সাথে নূর কে নিয়ে হন্তদন্ত হয়ে বেরিয়ে গেছে সে।সানভি মুখ ভোতা করে আশমিনের দিকে তাকিয়ে আছে। আশমিন ভ্রু কুচকে বললো,
-- কি?
-- ম্যাম কে এভাবে আঘাত করলেন কেন স্যার??(করুন গলায়)
আশমিন হালকা হাসলো। উঠে বসার চেষ্টা করতেই সানভি এসে সাহায্য করলো আশমিন কে। বেডে হেলান দিয়ে বসে সানভির দিকে তাকিয়ে হালকা হেসে বললো,,
-- বাইরে তোমার ম্যাম সেফ নয় সান।আমার অনুপস্থিতিতে নূরের উপর আক্রমণ হতে পারে। আমি এখনো জানিনা শত্রু কোথায় লুকিয়ে আছে,দেখতে কেমন তাও জানি না। আমি চাই না আমার অনুপস্থিতিতে নূর বাইরে থাকুক। এমনি তে তো তোমার ম্যাম থাকবে না। তাই এই ব্যবস্থা। তোমার ম্যাম ম্যাম যেমন জেনে বুঝে আমার হার্টের ঠিক এক ইঞ্চি উপরে গু*লি করেছে। আমি তেমনি ওর হাতের শুধু চামড়া টাই কে*টেছি।ব্লাড লসের জন্য কিছুদিন দুর্বল থাকবে।এই বাহানায় ওকে এখানে আটকে রাখা যাবে। এখানে আরেকটা বেডের ব্যবস্থা করো।
সানভি হা করে তাকিয়ে রইলো কিছুকাল। তারপর ঘোরের মধ্যেই বেরিয়ে গেল। আশমিন চোখ বন্ধ করে গা এলিয়ে বসে আছে। বুকে হালকা ব্যথা করছে। যেখানে তোকে এতো যত্নে রাখি সেখানেই আঘাত করলি বউ!এই যন্ত্রণা আমি ভুলবো কি করে! আর ভুল করিস না জান।তোকে ক্ষমা করতে করতে আমি না আবার ক্লান্ত হয়ে যাই।আমার অভিমান আমার ভালোবাসার মতোই তীব্র। সহ্য করতে পারবি না।
আপন মনে বিরবির করে বুকের ক্ষতস্থানে হাত বুলালো আশমিন। প্রেয়সীর নিষ্ঠুরতা কষ্ট দিচ্ছে। উহু,কষ্ট নয়।মরণ যন্ত্রণা দিচ্ছে।
সকাল হয়েছে অনেকক্ষণ আগে। নূরের এখন ঘুমাচ্ছে। আশমিন এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে নূরের দিকে। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে কপাল কুচকে নিল সে।নাহ!দুইটা বেড নেয়া মোটেই উচিত হয় নি। তার বেড টা যথেষ্ট বড়। এখানেই রাখা যেত নূর কে। দূরে রেখে হয়েছে এক জ্বালা। বউ কে চুমু খাওয়া যাচ্ছে না। কাছে থাকলে টপাটপ কয়েকটা চুমু খেয়ে ফেলা যেত।ঘুমিয়ে আছে,কিছু বলতে ও পারতো না।
আশমিন আনমনে ভাবলো, সে কি তার বউয়ের ঘুমের সুযোগ নিতে চাইছে?নিজের ভাবনা কে জানালা দিয়ে ছুড়ে মেরে ভাবলো, এখানে সুযোগের কি আছে? আজব! বউ কে চুমু খেতে ইচ্ছে হলে খেয়ে ফেলবে।জেগে থাকলে ও খাবে ঘুমিয়ে থাকলে ও খাবে। বাধা দিলে অজ্ঞান করে খাবে।সে জন্মগত নির্লজ্জ। এখন কয়েকটা চুমুর অভাবে তো আর সে শুকিয়ে মরতে পারে না!সে বাংলাদেশের জাতীয় সম্পদ।একজন গণ্য মান্য মন্ত্রী হয়ে সে নিজেকে শুকিয়ে মেরে তো আর জনগণের ক্ষতি করতে পারে না।
সকাল দশটায় হন্তদন্ত পায়ে কেবিনে ঢুকলো আমজাদ চৌধুরী আর কামিনী চৌধুরী। কামিনী চৌধুরী তো এসেই নূরের দিকে তেড়ে গিয়েছে।নূর এতক্ষণ কটমট করে তাকিয়ে ছিল আশমিনের দিকে। আশমিন ও এক ভ্রু উঁচু করে তাকিয়ে ছিল নূরের দিকে। দেখে মনে হবে এখানে তাকিয়ে থাকার প্রতিযোগিতা চলছে।সেসময় কামিনী চৌধুরীর এভাবে তেড়ে আসা নূরের রাগের আগুনে ঘি ঢাললো।পাশে ফলের ছু*ড়ি টা হাতে নিতেই থেমে গেলো কামিনী চৌধুরী। নূর চোখ লাল করে কামিনী চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে থেকেই একটা আপেলে ছু*রি চালিয়ে দিল। আমজাদ চৌধুরী অসহায় চোখে তাকিয়ে আছে আশমিনের দিকে। আশমিন সেদিকে পাত্তা না দিয়ে মুখ কুচকে তাকিয়ে রইলো তার বাবার দিকে। এরকম একটা রোমান্টিক সময়ে তার বাবা এসে বাগড়া দিল!
-- এখন কেমন আছো?
আমজাদ চৌধুরীর কোমল গলা শুনে মনে মনে ফুসে উঠলো আশমিন।তবে তার ফেস আগের মতোই শান্ত।বাবা কে নিজের পাশে বসিয়ে গম্ভীর গলায় বলল,
-- ভালো আর থাকতে দিলে কই? একটা নব দম্পতির হানিমুনে বাগড়া দিতে তোমার লজ্জা করলো না?আমি নিশ্চয়ই তোমার হানিমুনে গিয়ে বাগড়া দেই নি?দিলে আমাকে দুনিয়ায় এতো তারাতাড়ি আনতে পারতে না নিশ্চয়ই। তোমার যন্ত্রণায় আমি আর বাচ্চাকাচ্চার মুখ দেখতে পারবো না।তারা পড়াশোনায় কতো পিছিয়ে যাচ্ছে জানো?এতটা দায়িত্ব জ্ঞানহীন দাদু হয়ে তুমি নিশ্চয়ই গর্বিত নও।
ছেলের কথা শুনে এতক্ষণের কষ্ট পাওয়া বৃথা মনে হলো আমজাদ চৌধুরীর। বাকরুদ্ধ হয়ে তিনটা প্রাণী তার দিকে হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে সেদিকে তার কোন খেয়াল নেই।সে নাক মুখ কুচকে চোখ বন্ধ করে আছে।আমজাদ চৌধুরী এবার কামিনী চৌধুরীর দিকে আহত চোখে তাকালো। ঝড়ে পরে যাওয়া পাখির
মতো ছটফট করতে করতে বললো,
-- এ আমার ছেলে নয় কামিনী!সত্যি করে বলো এটা কার ছেলে?হসপিটাল থেকে বদলে দেয় নি তো(সন্দিহান গলায়)।
কামিনী চৌধুরী অসহায় চোখে তাকিয়ে রইলো স্বামীর দিকে।এই ভয়াবহ ঠোঁট কাটা ছেলের সামনে সে নিজেই ভয়ে ভয়ে আসে।কখন কি শুনিয়ে দেয় আল্লাহ মালুম।
নূর গা এলিয়ে দিলো। এসব শুনে মাথা ঘুরছে। তার এখন ঘুম প্রয়োজন। যতদিন এখানে থাকবে সে সারাদিন ঘুমাবে।ডিসিশন ফাইনাল।এসব ছিঃ মার্কা কথা শুনার চেয়ে মটকা মেরে পরে থাকা ভালো। এতে পিঠ আর কোমড় বাকা হলেও কিছু যায় আসে না।
কামিনী চৌধুরী বাসায় চলে গেছে। আমজাদ চৌধুরী দুজনের বেডের মাঝখানের ফাকা যায়গায় বসে আছে। আশমিন কয়েকবার বিরক্ত চোখে তাকালেও সে সেভাবেই বসে আছে। আশমিন ও আর কথা বাড়ায় নি।কেবিনে সানভির সাথে এক মহিলার প্রবেশ ঘটতেই ভ্রু কুচকে ফেললো আমজাদ চৌধুরী।তার জানা মতে আশমিনের খবর গোপন রাখা হয়েছে। তাহলে এই মহিলা কে?তাদের পরিচিত কেউ তো মনে হচ্ছে না।
মহিলাটি গিয়ে আশমিনের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতেই আশমিন চোখ খুললো। মিষ্টি হেসে কুশল বিনিময় করে বসতে বললো তাকে।সানভি একপাশে দাঁড়িয়ে আছে। অমি অফিসে গিয়েছে। নূরের অবর্তমানে সেই সব কিছু সামলাচ্ছে। আশমিন তার বাবার দিকে তাকিয়ে গম্ভীর গলায় বলল,
-- আব্বু, ইনি মায়া আন্টি। ওনার সাথেই আগামী শুক্রবার বিয়ে হবে তোমার।
আমজাদ চৌধুরী নিজের রাগ সংবরণ করতে পারলেন না। ছেলের এই পাগলামি আর মেনে নেয়া যাচ্ছে না। চিৎকার করে বললো,
-- একদম বারাবাড়ি করবে না আশমিন।পাগলামির একটা লিমিট থাকে। এসব বলতে তোমার বিবেকে ভাধছে না?তোমার মা শুনলে কতটা কষ্ট পাবে ভেবে দেখেছো? আমাকে রাগীয়ে দিয় না আশমিন।আমি যদি আদর করতে পারি তাহলে শাসন ও করতে পারবো।
আশমিন তার বাবার চোখের দিকে তাকালো। আশমিনের চোখে আজ শুধু ক্ষোভ তার বাবার প্রতি।আশমিন আমজাদ চৌধুরীর চোখে চোখ রেখে ভয়ংকর ঠান্ডা গলায় বলল,
-- তাহলে পচিশ বছর আগে কেন শাসন করো নি আব্বু?তখন যদি শাসন করতে তাহলে আজ এই দিন দেখতে হতো না। আর মিসেস চৌধুরীর স্বামী হারানোর কোন ভয় নেই।থাকলে সে অন্যের স্বামী এভাবে কেড়ে নিতো না(তাচ্ছিল্যের হেসে) । আমার মুখ খুলিও না আব্বু।তাতে শুধু ধ্বংস ই হবে। বিয়ের জন্য তৈরি হও।নিজেকে ঠিক ততটা উৎফুল্ল করো যতটা নিজের প্রথম বিয়েতে ছিলে। বছর ঘুরতেই নূরের জন্য ননদ চাই।আর এটাই আপাতত তোমার শাস্তি।
■■■■■■■■■■■■■■
#পর্ব_১৮
নূর ক্লান্ত চোখে তাকিয়ে আছে আশমিনের দিকে। আশমিনের সেদিকে কোন ধ্যান নেই। সে একমনে কনফারেন্স মিটিং করে যাচ্ছে। চোখে গোল কালো ফ্রেমের চশমা। ধবধবে সাদা পাঞ্জাবি দেখে বোঝার উপায় নেই দু দিন আগে তার বুক সে ফুটো করে দিয়েছে।আশমেন আড় চোখে নূরের ভাবভঙ্গি দেখেও কিছু বললো না। কয়েক জায়গায় তার দলের লোক ঝামেলা পাকিয়েছে।সেগুলো দ্রুত সমাধান করা জরুরি। অথচ বউয়ের বদৌলতে সে হসপিটালের বাসিন্দা। মিনিট কয়েক পর মিটিং শেষ হলো। বুকের ব্যথা খুব একটা কমে নি।সারতে কয়েক দিন লাগবে।ল্যাপটপ টেবিল থেকে ল্যাপটপ নামিয়ে চশমা খুললে চোখের পাতায় ম্যাসাজ করলো আশমিন। নূর তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে। আশমিন নূরের অগোচরে হালকা হাসলো। গম্ভীর ভাব বজায় রেখে চোখ বন্ধ করে গা এলিয়ে দিয়ে বললো,
-- আ'ম লুকিং সো হট,, না?
নূর বিরক্তিকর শব্দ করলো।মাঝে মাঝে মনে চায় একে আটলান্টিক মহাসাগরে রেখে আসতে।আস্তো খবিশ একটা।
-- আংকেলর সাথে এসব কি শুরু করেছেন আপনি? বাবার সাথে এ কেমন ব্যবহার?ছিঃ। এ বয়সে এসে অযথা বিয়ে কেন করবে?কেমন ছেলে আপনি? মায়ের জন্য সতিন আনতে চাইছেন?আর আমার ননদ চাই মানে? দিন দিন এত অসভ্য হচ্ছেন কেন?আপনার জনগণ জানে আপনি একজন চুরান্ত অশ্লীল লোক?
নূরের বিরক্ত গলা শুনে ভ্রু কুচকে ফেললো আশমিন। চোখ ছোট ছোট করে নূরের দিকে তাকিয়ে বললো,
-- তুই আমার বাবার স্ট্রংনেসের উপর আঙ্গুল তুলছো? এতো সাহস তোমার? আমার বাবা চাইলে এখনো ক্রিকেট টিম বানাতে পারবে। হি ইজ আ স্ট্রং ম্যান।
নূর দুই হাতে কান চেপে চিৎকার করে বললো,
-- বন্ধ করুন আপনার অসভ্য কথা।নিজের দিকে তাকিয়ে দেখুন। সময় মতো বাচ্চা কাচ্চা হলে চার বাচ্চার বাবা হয়ে যেতেন। লজ্জা করে না এসব বলতে?
আশমিন নূরের পা থেকে মাথা পর্যন্ত স্ক্যান করে ঠোঁট কামড়ে হাসলো। নূরের দিকে তাকিয়ে চিন্তিত গলায় বলল,
-- তা তো হতো। কিন্তু তুমি এতো ধকল নিতে পারতে কিনা বুঝতে পারছি না। আফটার অল আ'ম অলসো আ স্ট্রং ম্যান। বাট তুমি চাইলে আমি ট্রায় করতে পারি। কাম।
নূর হতভম্ব হয়ে বসে রইলো। মনে মনে কয়েক কোটি বার পন করলো এই লোকের সাথে আর কথা বলবে না। ছিঃ। কয়েক বছর আগে কতো ভালো ছিল।এমন অসভ্য কিভাবে হলো!
আশমিন নূরের দিকে তাকিয়ে মিটমিট করে হাসছে।নূর বুঝতে পেরে বিরক্ত হয়ে বললো,
-- চোখ দিয়ে ইভটিজিং করা বন্ধ করুন।অস্বস্তি হচ্ছে আমার।
নূরের কথা শেষ হওয়ার আগেই কামিনী চৌধুরী আর লারা প্রবেশ করলো কেবিনে।আশমিনের মুখ কঠিন হয়ে গেলো। নূর বিরক্ত চোখে একবার তাকিয়ে চোখ বন্ধ করে সুয়ে পরলো।
লারা আর কামিনী চৌধুরী এসে আশমিনের বেডের সামনের সোফায় বসলো। লারা ন্যাকা স্বরে বললো,
-- এখন কেমন আছো বেবি?আমি কতটা ভয় পেয়েছি জানো?বাপির সাথে কানাডা গিয়েছিলাম তাই আসতে পারিনি।
আশমিন কিছু বললো না। চুপ করে নিজের ফোনে কিছু একটা করছে।
কামিনী চৌধুরী এবার মুখ খুললো, কর্কশ গলায় বলল,
,-- এসব আমি কি শুনছি আশমিন।তুমি তোমার বাবা কে কি বলেছো? আমি তোমাকে জন্ম দিয়েছি।তুমি সন্তান হয়ে আমার সংসার ভাঙ্গতে চাইছো? আর এই মেয়েকে এখনো পুলিশে দাও নি কেন?সে তোমাকে প্রাণে মা*রার চেষ্টা করেছে।
লারা যেন একটা সুযোগ পেল নূর কে হেনস্তা করার।
-- ঠিক বলেছেন আন্টি। একে তো এক্ষুনি পুলিশে দেওয়া দরকার। নির্লজ্জ মেয়ে।যাদের কাছে বড় হলো তাদের ছেলে কে ই মা*রতে চাইছে।আমি থানায় কল করছি। তুমি কিছু চিন্তা করো না বেবি।আমি এই মেয়েকে কঠিন শাস্তি দেয়ার ব্যবস্থা করবো।
আশমিন শান্ত চোখে তাকালো লারার দিকে। কামিনী চৌধুরী বিরক্ত মুখে বসে আছে। আশমিন আবার নিজের ফোনে মনোযোগ দিয়ে লারা কে বললো,
-- আচ্ছা লারা,তোমাকে আমি কি বলে ডাকবো বলো তো? না মানে,তুমি তো কখন থেকে আমাকে বেবি বলে ডাকছো।আমার ও তো আদর করে কিছু একটা ডাকা উচিত।
লারা কল করা বাদ দিয়ে খুশিতে ডগমগ করতে লাগলো। আশমিনের পাশে বসে গদগদ গলায় বলল,
-- হ্যা হ্যা, তুমি আমাকে বাবু বলে ডাকবে।আমার কতো দিনের সখ জানো?তুমি তো কখনো ডাকলেই না(অভিমানী গলায়)।
আশমিন বাকা হাসলো। জোড়ালো গলায় ডাকলো,
-- বাহাদুর,,,
লারা এক লাফে উঠে পরলো।ভীত চোখে একবার দরজার দিকে তাকিয়ে শুকনো ঢোক গিললো।ওদিনের বিভিষিকাময় সময় গুলো ভাবতেই কপালে সুক্ষ্ম ঘাম দেখা দিল।
আশমিনের ডাকের কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই বাহাদুর এসে উপস্থিত হলো। আশমিন মোবাইলে চোখ রেখেই দৃঢ় গলায় বলল,
-- লারা বাবু কে নিয়ে যাও।আজকে সারা দিন তাকে সেরেলাক্স খাওয়াবে।আমার বাবু বলে কথা।কাজের যেন হেরফের না হয়।
লারা বাহাদুরের দিকে ভয়ার্ত চোখে তাকালো। বাহাদুর ভাবলেশহীন ভাবে দাঁড়িয়ে আছে।লারা এবার কেদেই দিল।কামিনী চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে ছটফট গলায় বলল,
-- আন্টি আপনি কিছু বলুন। আপনার কথায় আমি এখানে এসেছি। আমাকে বাচান প্লিজ।
কামিনী চৌধুরী আশমিন কে ধমক দিয়ে বললো,
-- এসব কি আচরণ আশমিন। তুমি ওর সাথে এমন করতে পারো না।
আশমিন সেদিকে ধ্যান না দিয়ে বাহাদুরের নাম ধরে ডাকলো,,
--বাহাদুর,,,
ব্যাস সাথে সাথে বাহাদুর লারা কে নিয়ে কেবিন ত্যাগ করলো। নূর বিরক্তিকর কপালে চোখ বন্ধ করে সুয়ে আছে।দুই দিনে এই সার্কাস দেখতে দেখতে সে অতিষ্ঠ। আজ ই সে বাসায় চলে যাবে।
কামিনী চৌধুরী রাগে গজগজ করতে লাগলো। এই ছেলে লাগাম ছাড়া হয়ে যাচ্ছে। তার সংসার ভাঙার কথা ভাবছে।মনে মনে তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলো সে। আমজাদ কখনোই তাকে ছেড়ে অন্য কারোর কথা ভাববে না।বিয়ে তো অনেক পরের কথা।আশমিন কে কয়েকবার বাচ্চা উপাধি দিল সে।এই খেলায় সে মহারথী। তার সাথে তার পেটের ছেলে এসেছে টক্কর দিতে। ব্যাপার টা হাস্যকর। তার হাতে এখনো মুখ্য চাল আছে। সেই এক চালেই সব কয়টা কুপকাত হয়ে যাবে।
আশমিন হয়তো কামিনী চৌধুরীর মনোভাব বুঝতে পারলো। চোখ বন্ধ করেই মলিন হাসলো সে। কেন তার মা এই ধ্বংসের খেলায় মেতে উঠল।সে এসব কিছু না করলে আজ তাদের জীবন টা কতই না সুখের হতো। টাকা আর ক্ষমতার লোভে অন্ধ হয়ে ঠিক ভুল সব ভুলে গেছে সে। মায়ের কষ্ট দেখলে সেও কি সহ্য করতে পারবে!মরণ যন্ত্রণায় প্রতিদিন কাতরে কাতরে মরবে।আল্লাহ! এ কোন পরিক্ষায় ফেললে আমাকে?
আশমিনের আর্তনাদ বুক চিরে বেরিয়ে আসতে চাইছে। একটু পরেই হয়তো তার মা জীবনের সবচেয়ে বড় ধাক্কা টা খাবে।নিজেকে যতই শক্ত করতে চাইছে ততই ভিতর থেকে ভেঙে পরছে সে।কামিনী চৌধুরী ম্যাগাজিন পড়ায় মন দিয়েছে ততক্ষণে। আশমিন এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো তার মুখের দিকে। এই তার জন্মদাত্রী। সে নিজে সন্তান হয়ে তার জীবনের সমস্ত সুখ কেড়ে নিয়েছে। কামিনী চৌধুরী যত লোভী হোক না কেন।সে আমজাদ চৌধুরী কে প্রাণের চেয়েও বেশি ভালোবাসে। কিন্তু আশমিনের হাতে আর লোন উপায় নেই। গর্ত থেকে শত্রুকে বের করতে হলে কামিনী চৌধুরী কে উন্মাদ করতে হবে। উত্তেজিত হয়েই কামিনী চৌধুরী তার ফেলা ফাদে পা দিবে।
আশমিনের ভাবনার মাঝেই কেবিনে প্রবেশ করলো আমজাদ চৌধুরী।তার পাশেই বধু বেশে মায়া নামক মহিলা। কামিনী চৌধুরী এক পলক সেদিকে তাকিয়ে স্তব্ধ হয়ে গেল। হতভম্ব হয়ে বসা থেকে দাঁড়িয়ে গেলো। প্রিয় মানুষের হাতে অন্য একটা মেয়ের হাত দেখে দুনিয়া দুলে উঠল তার।জ্ঞান হারিয়ে পরে যেতেই আগলে নিলো আশমিন। ছলছল চোখে মায়ের দিকে তাকিয়ে বুকে চেপে ধরলো তাকে। আমজাদ চৌধুরী ফোলা ফোলা রক্তিম চোখে তাকালো আশমিনের দিকে। নূর ও হতভম্ব হয়ে বসে পরেছে। মাথা ঘুরছে তার।আশমিন সত্যি এমন কিছু করবে ভাবতে ও পারে নি সে।
আমজাদ চৌধুরী এসে আশমিনের থেকে কামিনী চৌধুরী কে ছাড়িয়ে নিলো। নিজের বুকে আকড়ে ধরে শব্দ করে কেদে উঠলো। আশমিন শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ভেঙে পড়লে চলবে না। এখনো অনেক পথ বাকি।
■■■■■■■■■■■■■■
#পর্ব_১৯
দিনের সূর্য ঢলে রাতের অন্ধকার নেমে এসেছে পৃথিবীর বুকে।কামিনী চৌধুরী প্রায় আট ঘন্টা অজ্ঞান হয়ে ছিল।ততক্ষণ আমজাদ চৌধুরী তার পাশে তার হাত আকড়ে ধরে বসে ছিল।কামিনী চৌধুরীর জ্ঞান ফিরতে দেখেই তাকে কেবিন থেকে বের করে দেয় আশমিন। কামিনী চৌধুরী চোখ খুলে নিজের পাশে শুধু আশমিন কে দেখে চোখ বন্ধ করে ফেললো। তার বিশ্বাস ই হচ্ছে না আমজাদ, তার ভালবাসা তাকে ছেড়ে অন্য কাউকে বিয়ে করেছে। আশমিন এক ধ্যানে তাকিয়ে রইলো কামিনী চৌধুরীর দিকে। মায়ের জন্য কষ্ট হচ্ছে তার। কিন্তু এছাড়া আর উপায় নেই।
-- আমার সামনে থেকে চলে যাও আশমিন।তোমাকে আমার সহ্য হচ্ছে না।
কামিনী চৌধুরী ভাঙ্গা গলা শুনে বুক কেপে উঠলো আশমিনের। তার আম্মুর এমন গলা এর আগে আর কখনো শোনে নি সে।এক পলক সেদিকে তাকিয়ে বেড়িয়ে গেলো আশমিন।
আশমিন বেড়িয়ে যেতেই চিৎকার করে কেদে উঠলো কামিনী চৌধুরী। তার আর্তনাদে হসপিটালের পরিবেশ ভারি হয়ে উঠল।দরজার বাইরে আশমিন শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমজাদ চৌধুরী হাত পা ছড়িয়ে ফ্লোরে বসে আছে। আশমিন সেদিকে তাকিয়ে তপ্ত শ্বাস ছাড়লো। বুকের ব্যথা টা আবার বাড়ছে। তার পাশের কেবিনেই কামিনী চৌধুরী কে সিফট করা হয়েছে। আশমিন ধীর পায়ে নিজের কেবিনে প্রবেশ করতেই নূরের ঘৃণা ভরা দৃষ্টি দেখে মলিন হাসলো। নিজের বেডে গা এলিয়ে দিতেই মায়া নামক মহিলাটি এসে আশমিনের পাশে বসলো। আশমিন একবার তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিলো।
-- খারাপ লাগছে?
-- নাহ।
আশমিনের গলা স্বাভাবিক। মায়া মুচকি হাসলো। আশমিনের মাথায় হাত বুলিয়ে শান্ত গলায় বললো,
-- সব ঠিক হয়ে যাবে।
-- হুম।
নূর তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে আছে মায়া নামক মহিলার দিকে। নামের মতোই মহিলার মুখটা অসম্ভব মায়ার ভরা।কিন্তু নূরের ভালো লাগছে না। কামিনী চৌধুরী যেমন ই হোক না কেন নূর কখনো চায় নি তার সাথে এমন কিছু হোক। সে জানে ভালবাসার মানুষের সাথে অন্য কাউকে দেখা কতটা যন্ত্রণা দায়ক। সে চায় নি তার শত্রুর সাথেও এমন কিছু হোক।অথচ আশমিন নিজের ছেলে হয়ে তাকে সেই কষ্ট টা দিল।কামিনী চৌধুরীর কান্নার আওয়াজ এখনো শোনা যাচ্ছে। বুক কেপে উঠলো নূরের। আশমিন চোখ বন্ধ করে সুয়ে আছে। মায়া নামক মহিলা তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। রাগে ঘৃণায় অসহ্য হয়ে উঠল নূর।
-- অমি,,,(চিৎকার করে)
হন্তদন্ত পায়ে দৌড়ে এলো অমি।আশমিন ও চোখ খুলে তাকিয়েছে।নূর আশমিনের দিকে ঘৃণা ভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে অমি কে বললো,
-- আমি এক্ষুনি বাসায় যাবো অমি। সব ব্যবস্থা করো। এক্ষুনি মানে এক্ষুনি।
আশমিন কিছু বললো না। অমি মাথা নাড়িয়ে চলে গেলো। নূর বেড থেকে নেমে আশমিনের দিকে তাকালো। ঘৃণা নিয়ে বললো,,
-- জানি না কেন আপনি এমনটা করলেন।কারণ যাই হোক না কেন। আমার আপনার প্রতি ঘৃণা হচ্ছে। আপনার দিকে তাকালে গা গুলিয়ে আসছে। আপনার মতো ছেলে যেন কারোর ঘরে না হয় সেই দোয়া করি।
আসছি।
নূর বেরিয়ে যেতেই চোখ খুললো আশমিন। মায়া কাতর চোখে তাকিয়ে আছে তার দিকে। আশমিন সেদিকে তাকিয়ে হালকা হাসার চেষ্টা করলো।
আমজাদ চৌধুরী একই ভাবে বসে আছে। কামিনী চৌধুরী এতক্ষণ কাদলেও এখন একেবারে শান্ত হয়ে গেছে।ঝড় আসার আগে পরিবেশ যেভাবে শান্ত হয়ে যায় কামিনী চৌধুরী ও সেভাবে শান্ত হয়ে গেছে। বেড থেকে নেমে বেরিয়ে এলো কামিনী চৌধুরী। আমজাদ চৌধুরী দাঁড়িয়ে আছে তার কেবিনের দরজার সামনে। তার পিছনে মায়া নামক মহিলা দাঁড়িয়ে। কামিনী চৌধুরী ধীর পায়ে হেঁটে আমজাদ চৌধুরীর সামনে দাড়ালো। আমজাদ চৌধুরী তার দিকে তাকাচ্ছে না।নিচের দিকে তাকিয়ে আছে সে।
-- আমি হয়তো খারাপ। তবে তোমাকে ভালোবাসার ক্ষেত্রে আমি সম্পুর্ন সৎ ছিলাম আমজাদ। নিজের সবটা দিয়ে ভালবেসেছি তোমাকে। তবে আজ কেন আমাকে এই দিন দেখতে হলো? আমাকে এভাবে ভাঙ্গলে আমজাদ! তুমি আজ সেই কামিনী চৌধুরী কে মেরে ফেলেছো যে তোমাকে নিজের থেকেও বেশি ভালবাসতো। আজ থেকে এই কামিনী চৌধুরীর না কোন স্বামী আছে আর না কোন ছেলে। তোমার নতুন বিবাহিত জীবন সুখের হোক।তুমি সবসময় ই আমার কাছে প্রিয়। তাই তোমার খারাপ চাইতে পারলাম না। ভালো থেকো।
কামিনী চৌধুরী উল্টো ঘুরে যেতে নিতেই আমজাদ চৌধুরী অস্থির হয়ে পথ আগলে ধরলো তার।ব্যগ্র গলায় বলল,
-- কোথায় যাচ্ছো? তুমি অসুস্থ কামিনী। বাসায় চলো।রেস্ট নিতে হবে তোমার।
কামিনী চৌধুরী হাসলো। বিদ্রুপের গলায় বলল,
-- দেখো কান্ড!অসুখ নিজেই বলে আমাকে সারাও। ভালো মজা করতে শিখেছো তো আমজাদ। যাই হোক, পথ ছাড়ো।ডিভোর্স লেটার সময় মতো পেয়ে যাবে।
আমজাদ চৌধুরী অবাক চোখে তাকালো কামিনী চৌধুরীর দিকে। চোখ দুটো ছলছল করছে তার।কাপা কাপা গলায় বললেন,
-- ডিভোর্স!
-- তো! তুমি কি ভেবেছিলে?সতিন নিয়ে সংসার করবো আমিজ?(তাচ্ছিল্যের হেসে)।আমি শিকদার বংশের মেয়ে কামিনী শিকদার। ভাগাভাগি আমার ধাতে নেই। যতদিন শুধু আমার হয়ে ছিলে আমি ও শুধু তোমার ছিলাম। আজ যখন ভাগ হয়েছো তখন পুরো তুমি টাকেই দান করে দিলাম।
আমজাদ চৌধুরী অসহায় চোখে তাকিয়ে রইলো কামিনী চৌধুরীর দিকে। কামিনী চৌধুরী একবার মায়ার দিকে তাকিয়ে গটগট করে বেড়িয়ে গেলো।
আশমিন ও আজ বাড়ি ফিরে যাবে।এভাবে সময় নষ্ট করার মতো সময় তার হাতে নেই। সানভি সমস্ত ফর্মালিটি পুরোন করে এসেছে।আশমিন কেবিন থেকে বেরিয়ে আমজাদ চৌধুরীর পাশে এসে দাড়ালো।
-- এখানেই থাকাতে চাও?
আমজাদ চৌধুরী কটমট চোখে তাকালো আশমিনের দিকে। আশমিন হালকা কেশে চোখ সরিয়ে নিলো। মায়ার দিকে তাকিয়ে গম্ভীর গলায় বলল,
-- গাড়ি তে গিয়ে বসুন আন্টি। আমি আব্বুকে নিয়ে আসছি।
মায়া আন্টি মুচকি হেসে চলে গেলো। আশমিন তার বাবার কাছে গিয়ে হাতে একটা প্যাকেট ধরিয়ে দিয়ে বললো,
-- আজ তোমার দ্বিতীয় বাসর রাত উপলক্ষে আমার পক্ষ থেকে ছোট একটা উপহার।যেভাবে দুর্বল হয়ে যাচ্ছো মনে হয় না তোমাকে দিয়ে কিনা হবে।তখন এটা কাজে লাগবে।রুমে যাওয়ার আগে খেয়ে নিয়।
আমজাদ চৌধুরী বাকরুদ্ধ হয়ে দাড়িয়ে রইলেন।রেগে ছেলের গালে চটাস করে একটা চর মারতেও ভুলে গেলেন।সানভি নিজের বুকে হালকা চাপড় মেরে মনে মনে আহাজারি করতে লাগলো। এরকম একটা ছেলে তার ঘরে হলে সে বনবাসে চলে যাবে বলে প্রতিজ্ঞা করে ফেললো।
আশমিন ততক্ষণে হসপিটাল থেকে বেরিয়ে গেছে।গাড়ি তে বসে মায়া আন্টির সাথে কিছু কথা বলে ফোনে বিজি হয়ে গেলো আশমিন। আমজাদ চৌধুরী হনহন করে এসে গাড়ি তে বসলো।রাগে ফোসফাস করে আশমিন কে বললো,
-- তোমার জন্য শেষ বয়সে এসে আমি ডিভোর্স নিতে পারবো না। যা করার তারাতাড়ি করো।
আশমিন অবাক হওয়ার ভান করে বললো,
-- তুমি ডিভোর্সি হলে কি রাস্তায় মেয়েরা তোমাকে হেনস্তা করবে নাকি?আর বউ তো একটা জোগাড় করে দিলাম।আর কি চাই?
আমজাদ চৌধুরী উত্তর দিতে ভুলে গেলেন।রাগ গিলে ফেলে চোখ বন্ধ করে মাথা সিটে এলিয়ে দিলেন। সানভি ড্রাইভ করতে করতে আমজাদ চৌধুরীর দিকে অসহায় চোখে একবার তাকালো।আহা! বেচারা।
নূর বাসায় আসার কয়েক ঘন্টা পরেই আশমিন বাসায় এসে উপস্থিত হলো। আমজাদ চৌধুরীর সমস্ত জিনিস নতুন রুমে সিফট করা হয়ে গেছে এর মধ্যে। আশমিন আড় চোখে আমজাদ চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে সানভি কে বললো,
-- এই রুমটা ফুল দিয়ে সাজিয়ে দাও সান।বাবার বাসরে জেন কোন ত্রুটি না থাকে।আগের বার না জানি কিভাবে কি হয়েছে।আমি থাকলে সব পার্ফেক্ট হতো। এবার তাই সব পার্ফেক্টলি করবে।
আমজাদ চৌধুরী সহ সবাই হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলো। আগের বার থাকলে পার্ফেক্ট হতো মানে!
কামিনী চৌধুরী নিজের রুমে বসে সব শুনে মুচকি হাসলো। বিরবির করে বললো,
-- তুমি আমার পেট থেকে হয়েছো।আমি তোমার পেট থেকে হই নি। লেট'স দ্যা গেইম বিগেইন বেট্যা।
আশমিন সরাসরি নূরের রুমে ঢুকলো। নূর শাওয়ার নিয়ে বেরিয়েছে মাত্র।আশমিন কে দেখে যথারীতি বিরক্ত হলো। বাড়িতে এসেও শান্তি নেই। ঠিক এসে হাজির হয়েছে।
-- এখানে কি চাই?
-- বউ চাই।কাছে এসো।
-- বের হন।
নূরের কথাকে হাওয়ায় উড়িয়ে দিয়ে আশমিন নূর কে জরিয়ে ধরলো। নূর কি নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে ফিসফিস করে বললো,,
-- বাবা দ্বিতীয় বাসর করে ফেলছে।আর আমার এখনো একটা ও হলো না। এটা মেনে নেয়া যায় বলো?তাই আজ বাসর করতে এসেছি।বাবা তোমাকে ননদ দেয়ার আগে আমি তাকে নাতি দয়ে চমকে দিবো। নাহলে নাক কাটা যাবে যে! এতো হ্যান্ডসাম লুক বৃথা হয়ে যাবে বউ।
নূর ক্লান্ত চোখে তাকালো আশমিনের দিকে। আশমিন কে আর কিছু বলতে ইচ্ছে করছে না। তার এখন ঘুম দরকার।নূর হালকা হেসে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো আশমিনের কাছ থেকে। এক গ্লাস পানি আশমিনের দিকে এগিয়ে দিয়ে শান্ত গলায় বললো,
-- পানি খেয়ে নিন।তারপর ঠান্ডা মাথায় কথা বলবো আমরা।
আশমিন ভ্রু কুচকে তাকালো নূরের দিকে। মনে সন্দেহ হলেও মুখে কিছু বললো না। চুপচাপ খেয়ে নিলো পানি। পানি খাওয়ার সাথে সাথে নূর কে কাছে টেনে নিয়ে আদর করতে ব্যস্ত হয়ে পরলো।কয়েক মিনিট যাওয়ার পরেও যখন আশমিন ঘুমিয়ে পরলো না তখন নূর অস্থির হয়ে পরলো আশমিনের কাছ থেকে ছোটার জন্য। নূরের সারা গায়ে নিজের দেয়া চিহ্ন একে দিয়েই বিজয়ের হাসি হাসলো আশমিন। ব্যথায় চোখ থেকে পানি পরছে নূরের।আশমিন বাকা হেসে উঠে দাড়ালো।
নূরের চোখের পানি মুছে দিয়ে দুঃখী দুঃখী গলায় বলল,
-- বাবা ছেলের একসাথে বাসর করা টা ভালো দেখায় না।আমরা বরং পরে একসময় ট্রায় করবো হুম।ওহ!তোমার পানির গ্লাসটা আমি সরিয়ে ড্রেসিং টেবিলের উপর রেখেছিলাম।মন চাইলে খেতে পারো।
নূর কটমট চোখে তাকালো আশমিনের দিকে। আশমিন নূরের লাল হয়ে ফুলে উঠা ঠোঁটে চুমু খেয়ে শিষ বাজাতে বাজাতে চলে গেলো।
■■■■■■■■■■■■■■
#পর্ব_২০
কামিনী চৌধুরী ব্রেকফাস্ট টেবিলে বসে নিউজপেপারে চোখ বুলাচ্ছে।তাকে দেখে বোঝার উপায় নেই কাল তার স্বামী আরেকটা বিয়ে করে বাসর ও সেরে ফেলেছে। আর কেউ এখনো ব্রেকফাস্ট টেবিলে আসে নি।নূরের আজ কনসার্ট আছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলের সামনে। অসুস্থতার জন্য পোগ্রাম পিছিয়ে দেয়া হয়েছে।আজ সারাদিন রিহার্সাল করবে। রাত আট টায় শুরু হবে কনসার্ট। আশমিন সেখানে চিফ গেস্ট। যদিও নূর সেটা জানে না।আশমিন নিজেই জানতে দেয়নি নুর কে। বর্ষসেরা শিক্ষার্থীদের সম্মাননা দেয়া হবে আজ। আশমিনের পোগ্রাম দুপুরে হলেও আশমিন রাতে একবার যাবে সেখানে।আশমিনের মতে,বউয়ের লেজ ধরে ঘোরা স্বামীদের নৈতিক দায়িত্বের মধ্যে পরে।আর সে কখনো নিজের দায়িত্বের অবহেলা করে না।
আশমিন সকাল সকাল জীমে গিয়েছে।ইদানীং সে নিজেকে নিয়ে চিন্তায় আছে। বউ তার দিকে খুব একটা নজর দিচ্ছে না। ব্যপার টা গুরুতর। এতো মেন্টাল স্ট্রেস নিতে পারছে না সে।কোথায় এসে হ্যান্ডসাম বরের সাথে চিপকে থাকবে তা না করে সারাক্ষণ লাঠিসোঁটা নিয়ে যুদ্ধ করার পায়তারা করে । সে ভালো বলে এখনো কিছু বলছে না। না হলে এতো দিনে দুই বাচ্চার মা করে ঘরে বসিয়ে রাখতো। রাগে গজগজ করতে করতে ওয়াশরুমে চলে গেলো আশমিন।
সকালে ব্রেকফাস্ট টেবিলে এসে এক ভ্রু উচু করে ফেললো আশমিন। কামিনী চৌধুরী গুনগুন করতে ব্রেকফাস্ট করছে।আমজাদ চৌধুরী এখনো নিচে আসেনি। সানভি আর অমি ব্রেকফাস্ট করতে করতে নিজেদের মধ্যে কথা বলছে। আশমিন কে দেখে তারা দাঁড়িয়ে গেলো। আশমিন ইশারায় বসতে বলে গম্ভীর গলায় বলল,
-- আর কখনো খাবার ছেড়ে এভাবে দাঁড়াবে না।
দুজনেই মাথা নেড়ে সম্মতি দিলেন। মিনিট দুই পরে ঘুমে ঢুলতে ঢুলতে নূর এসে উপস্থিত হলো। ধপ করে চেয়ারে বসে মাথা এলিয়ে দিলো টেবিলে।অজানা কারনে তার খুব ঘুম পাচ্ছে। রাগের বসে সে সত্যিই সেই গ্লাসের পানি খেয়ে ফেলেনি তো?উফফফ।মাথা ধরে বসে রইলো নূর। আশমিন নূরের দিকে নির্লিপ্ত চোখে চোখ রেখেই খাবার মুখে পুরছে।তীক্ষ্ণ চোখে নিজের দেওয়া চিহ্ন গুলোতে চোখ বুলিয়ে আবার খাওয়ায় মনোযোগ দিল সে। আশমিনেএ পুর্ণ ধ্যান কামিনী চৌধুরীর দিকে। এতো শান্ত মানেই ঝড়ের পূর্বাভাস।
নূর টেবিলে মাথা রেখেই ঘুমিয়ে পরেছে।অমি নূরের দিকে একবার তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিলেও সানভি একটু পর পর লাজুক চোখে আশমিনের দিকে তাকাচ্ছে। আশমিনের খাওয়ার শেষ পর্যায়ে আমজাদ চৌধুরী আর মায়া আন্টি নিচে নেমে এলো। হালকা গোলাপি শাড়ি তে দারুণ লাগছে তাকে।মায়া আন্টির ভেজা চুল দেখে চোখ বড় বড় করে আমজাদ চৌধুরীর দিকে তাকালো আশমিন।আমজাদ চৌধুরী ও ভ্রু কুচকে তাকালো ছেলের দিকে।এভাবে তাকানোর কি আছে? মায়ার ভেজা চুলের দিকে তাকিয়ে থমকে গেলো কামিনী চৌধুরী। কটমট করে তাকিয়ে রইলো দুজনের দিকে। মায়া এসে আমজাদ চৌধুরীর বরাবর বসে পরলো। কামিনী চৌধুরী গটগট করে চলে গেলো সেখান থেকে। আশমিন আমজাদ চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে গম্ভীর গলায় বলল,
-- বিয়ে করবে না করবে না করে গড়াগড়ি খেয়ে কান্নাকাটি করছিলে।যেই বিয়ে করিয়ে দিলাম অমনি মেইন কাজ সেরে ফেললে!
আমজাদ চৌধুরী চারিদিকে চোখ বুলিয়ে নিলেন।ভাগ্য ভালো আর কেউ শোনে নি।আশমিনের দিকে তাকিয়ে কটমট করে বললো,
-- বাবা হই তোমার। লাজলজ্জা সব খেয়ে বসে আছো? বেয়াদব ছেলে। বিয়েটা নকল, তাই এসব অবান্তর কথা বলা বন্ধ করো।
আশমিন অবাক হওয়ার ভান করে বললো,,
-- তারমানে বিয়েটা আসল হলে সত্যিই বাসর সেরে ফেলতে! এই বয়সে এতো ডেস্পারেট হওয়া ভালো না। আর আমাকে বেয়াদব নির্লজ্জ যাই বলো না কেন আমার কিছু যায় আসে না। কারণ আমি আমার বাবার মতো হয়েছি। আমি নির্লজ্জ মানে সেও নির্লজ্জ। আর বিয়ে টা আসল ছিল।
আমজাদ চৌধুরী হতভম্ব হয়ে বসে ছেলের চলে যাওয়া দেখলো।তার মাথায় একটা কথাই ঘুরছে,বিয়ে টা আসল ছিল।
নূর চোখ বন্ধ করে বাবা ছেলের কথা শুনছিল।আশমিন কে এখন তার শুধু একজন অসহ্য ভয়ংকর মানুষ মনে হয়। চোখ খুলে আমজাদ চৌধুরীর দিকে একবার তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল নূর। শান্ত গলায় বললো,
-- কিছু কথা ছিল আংকেল।
আমজাদ চৌধুরী ক্লান্ত চোখে তাকালো নূরের দিকে। নূর চোখ সরিয়ে নিলো। শান্ত গলায় বললো,
-- আমি ডিভোর্স নিতে চাইছি।যেহেতু আমাদের বিয়ের কোন ডকুমেন্টস নেই সেহেতু মৌখিক তালাক দিলেই হবে।
আমজাদ চৌধুরী চমকে উঠলেন।ভয়ার্ত চোখে তাকালো নূরের দিকে। নূরের পিছনেই আশমিন দাঁড়িয়ে। শান্ত চেহারায় ভয়ংকর চোখে তাকিয়ে আছে সে। সানভি অসহায় চোখে তাকালো আশমিনের দিকে।
আশমিন ঠান্ডা গলায় হুংকার দিয়ে বললো,
-- সান,,,
সানভি পরিমরি পায়ে দৌড়ে গিয়ে একটি হকিস্টিক এনে দিলো আশমিনের হাতে।নূর ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে আশমিনের দিকে।
মুহুর্তেই ডাইনিং টেবিলে চুর্নবিচুর্ন হয়ে গেলো। নূর চোয়াল শক্ত করে তাকিয়ে আছে ভাঙ্গা কাচের দিকে। এটা তার মায়ের হাতে কেনা।মায়ের স্মৃতি এভাবে নষ্ট হতে দেখে রাগে কষ্টে মুখ লাল হয়ে গেলো নূরের।চোখ বন্ধ করে হাত মুঠ করে নিজেকে সামলাতে চেষ্টা করলো। আশমিন হকিস্টিক টা সানভির হাতে দিয়ে নূরের সামনে এসে দাড়ালো। শক্ত হাতে নূরের মুখ নিজের দিকে ঘুরিয়ে দাতে দাত চেপে বললো,,
-- আরেকবার এই কথা মুখ থেকে বের করলেও এই টেবিলের জায়গায় তুই থাকবি আর হকিস্টিকের জায়গায় আমি।কিভাবে ভাঙ্গবো তা সবার সামনে বলতে চাইছি না।
নূরের মুখ ছেড়ে দিয়ে শান্ত ভাবেই বেড়িয়ে গেলো আশমিন। ভাব দেখে মনে হচ্ছে এখানে কিছুই হয়নি।নূর হনহন করে নিজের রুমে চলে গেলো। আমজাদ চৌধুরী আর মায়া আন্টি চুপচাপ বসে আছে। আমজাদ চৌধুরী কে মাথায় হাত দিয়ে বসে থাকতে দেখে তার কাছে এলেন মায়া আন্টি। নরম গলায় বলল,
-- চিন্তা করবেন না।রাগ উঠেছে তাই এমন করেছে।মাথা ঠান্ডা হলে ঠিক হয়ে যাবে।
এমনিতেই আমজাদ চৌধুরীর মাথা গরম ছিল।মায়ার কথা শুনে আগুনে ঘি ঢালার কাজ হলো। সে আগুন চোখে তাকালো মায়ার দিকে। শক্ত করে বাহু চেপে ধরে দাতে দাত চেপে বললো,
-- নাটক করছো?বউ সাজতে চাইছো? কান খুলে শুনে রাখো,এই বাড়িতে কয়েকদিনের মেহমান তুমি।নিজের সীমার মধ্যে থাকো।আমার কাছে ঘেসার চেষ্টা করবে না। আর সবাই কে ভেজা চুল দেখিয়ে কি প্রমাণ করতে চাইছো?আমি খুব আদর করেছি তোমায়।ছিঃ, নোংরা মেয়েমানুষ। আমার পরিবার থেকে দূরে থাকো।সময় হলে আমি নিজে তোমাকে রাস্তায় ছুড়ে ফেলবো।
মায়া ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে আমজাদ চৌধুরীর দিকে। হাতটা ব্যথায় নিল হয়ে গেছে।কাল তো সব ঠিকই ছিল।আজ হঠাৎ করে কি হলো?
মায়া ধরা গলায় বলল,
-- আপনি এসব কি বলছেন? আমি তো শুধু আপনাকে শান্তনা দেয়ার জন্য বলছিলাম,,
আমজাদ চৌধুরী তেতে উঠলেন। কর্কশ গলায় বলল,
-- আমি চেয়েছি তোমার কাছে সান্তনা? একদম আমার কাছে ঘেসার চেষ্টা করবে না। অসহ্য লাগে তোমাকে।
মায়ার বাহু ছেড়ে গটগট করে চলে গেলো আমজাদ চৌধুরী।মায়া অশ্রুসিক্ত চোখে তাকিয়ে দেখলো তার চলে যাওয়া।
কামিনী চৌধুরী রুমে বসেই ক্রুর হাসলো। টাকার ব্যবস্থা করা হতে গেছে। কাল অথবা পরশু টাকা হাতে পাবে।তখন সে নিজের আসল চাল চালবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চত্তরে এসে নূরের মন খানিকটা ভালো হয়ে গেলো। অন্যান্য শিল্পিরা এখন পারফর্ম করছে।মন ভালো হলেও আশমিনের উপর রাগটা ষোল আনাই আছে। পার্কিং এ আশমিনের গাড়ি বহর দেখে বাকা হাসলো নূর।কালো মার্সেটিজ টা আশমিনের অসম্ভব প্রিয়। এটা ছাড়া সে কোথাও যায় না।গাড়ি তে একটা স্ক্রেচ পরলেও আশমিন মাথা ঠিক রাখতে পারে না। ক্রুর হেসে নূর তার জন্য বরাদ্দকৃত রুমে চলে গেলো।
one day I'm gonna fly away
One day when heaven calls my name
I lay down I close my eyes at night
I can see morning light
One day I'm gonna fly away
One day I'll see your eyes again
I lay down I close my eyes at night
I can see morning light
নূরের সাথে একজন মেল সিঙ্গার পারফর্ম করছে।আশমিন তীক্ষ্ণ চোখে সবকিছু দেখছে। নূর কে ঠিক একটা বার্বিডলের মতো লাগছে।বউ সুন্দরী হলে অনেক জ্বালা। সেখানে মন্ত্রী হয়েও কোন লাভ নেই।বউয়ের কাছে পাত্তা পাওয়া যায় না। পুতুলের মতো একটা বউ তার। সারাক্ষণ কোলে নিয়ে না ঘুরে এখানে বসে মুরগির মতো ঝিমাতে হচ্ছে!বিরক্তিতে মুখ তেতো হয়ে গেলো আশমিনের।
কনসার্ট শেষ হলো রাত দুইটায়।আশমি ভার্সিটি চত্তরে দলের কিছু ছেলের সাথে কথা বলছে।নূরের গাড়ি এসে আশমিনের গাড়ির সামনে থামলো। আশমিন ভ্রু কুচকে সেদিকে তাকালো।নূর হাতে হকিস্টিক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। পাশেই বিরস মুখে অমি দাঁড়িয়ে। নূর দুই আঙ্গুল দিয়ে স্যালুট দেখিয়ে ধুম করে আশমিনের গাড়ির গ্লাস ভেঙ্গে ফেললো। ছেলেরা দৌড়ে যেতে চাইলে আশমিন ইশারায় থামিয়ে দিল।
-- তোরা মিডিয়া সামলা।এদিকে যেন না আসে।
ছেলেগুলো মাথা নেড়ে চলে গেলো। নুর সব গুলো গ্লাস ভেঙ্গেই ক্ষান্ত হয় নি। পুরো গাড়ি অচল করেই ক্ষান্ত হয়েছে।আশমিন দুই হাত ভাজ করে শান্ত চোখে তাকিয়ে আছে নূরের দিকে। নূর ক্রুর হেসে আশমিনের কাছে এসে দাড়ালো। ময়লা ঝাড়ার মতো হাত ঝেড়ে ফিচলে গলায় বলল,
-- হিসাব বরাবর মন্ত্রী সাহেব। উইস ইউ আ ভেরি নাইস জার্নি টুনাইট।
■■■■■■■■■■■■■■
#পর্ব_২১
সকাল থেকেই কামিনী চৌধুরী কে খুব খুশি খুশি লাগছে।নূর তীক্ষ্ণ চোখে সবকিছু অবলোকন করেছে।মায়া বেগম নিজের মতো কাজ করে যাচ্ছেন। বিয়ের পর থেকে কিচেন সে সামলায়।এখন আর সেফের রান্না না খেয়ে সবাই তার হাতের রান্না ই খায়।তবে কামিনী চৌধুরীর খাবার সেফ রান্না করে।
আশমিন আজ সপ্তাহ খানেক হলো কানাডা গিয়েছে।কিছু জরুরি কাজে আটকে যাওয়ায় আরো কয়েকদিন থাকতে হবে। নূরের সাথে এই কয়েকদিন কথা হয়নি তার। কামিনী চৌধুরী নূর কে চার'শ কোটি টাকা ফিরিয়ে দিয়েছে কাল।সেই সাথে আর এস কোম্পানির থেকে শেয়ারের একটা পোশাক কারখানা তাকে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে।পৈতৃক সুত্রে সে এই কারখানা পেয়েছে।আর এস কোম্পানি তে তার আর কোন শেয়ার নেই।কামিনী চৌধুরী দাতে দাত চেপে মেনে নিয়েছে সব।কোথায় চার হাজার কোটি টাকার ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানি আর কোথায় পঞ্চাশ কোটি টাকার সামান্য একটা কারখানা।
আজ ছুটির দিন। শুক্রবার কেউ অফিসে যায় না।আমজাদ চৌধুরী নিজের রুমে রেস্ট নিচ্ছে।মায়া বেগমের রুমেই সে থাকে।কয়েকবার কামিনী চৌধুরীর কাছে যেতে চাইলেও কামিনী চৌধুরী তাকে রুমে ঢুকতে দেয়নি। মায়া বেগমের সাথে তার সম্পর্ক আগের মতোই আছে। কেউ কারোর সাথে খুব একটা কথা বলে না। আশমিনের সাথেও দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে আমজাদ চৌধুরীর। চার বছর বয়স থেকে আশমিন হোস্টেলে থেকে পড়াশোনা করেছে।কামিনী চৌধুরী ছোট বেলা থেকেই আশমিনের প্রতি ছিল উদাসীন। জীবনের বিশ টা বছর সে হোস্টেলেই কাটিয়েছে।তবুও আমজাদ চৌধুরীর সাথে তার সম্পর্ক ছিল বন্ধুর মতো। আজ এতো কাছে থেকেও তাদের মধ্যে হাজার মাইলের দূরত্ব।
ড্রয়িং রুমে বসে অফিসের কিছু কাজ করছিল নূর।অমি কিছু হিসেব বুঝিয়ে দিচ্ছে তাকে।আজ আশমিনের দেশে আসার কথা। সেদিন ই একইরকম দেখতে আরেকটা গাড়ি নিয়ে এসেছে আশমিন।
কলিং বেলের শব্দে কামিনী চৌধুরী একপ্রকার দৌড়ে গিয়ে দরজা খুললেন।মেড গুলো হা করে তাকিয়ে আছে কামিনী চৌধুরীর দিকে। দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষ টা কে দেখে কামিনী চৌধুরীর মুখ চকচক করে উঠলো। তাকে জরিয়ে ধরে কুমিরের কান্না কাদতে লাগলো। নূর চোখ মুখ কুচকে সেদিকে তাকিয়ে আছে। ছেলেটার চেহারা দেখা যাচ্ছে না। অমি নিস্প্রাণ চোখে তাকিয়ে রইলো কামিন চৌধুরীর দিকে। কামিনী চৌধুরীর কান্নার আওয়াজ শুনে আমজাদ চৌধুরী ও বেরিয়ে এসেছে তার রুম থেকে। কামিনী চৌধুরী কে শান্ত করে বুক থেকে সরাতেই কেপে উঠলো অমি।অপলক চোখে তাকিয়ে রইলো সেদিকে।এ জেন তারই প্রতিচ্ছবি। নূর একবার দেখে আবার নিজের কাজে মন দিলো। সেদিকে চোরা চোখে তাকালো অমি।নুরের কোন প্রতিক্রিয়া না দেখে অবাক হলেও কিছু বললো না। আমজাদ চৌধুরী একবার নূরের তাকিয়ে আবার শক্ত চোখে কামিনী চৌধুরীর দিকে তাকালো। মনে মনে করুণা হলো তার সহধর্মিণীর জন্য। পদে পদে হেরে নিজেকে উন্মাদ করে চলেছে।এর পরিনতি অত্যন্ত ভয়ংকর।
ছেলেটা কে নিয়ে ভিতরে আসলো কামিনী চৌধুরী। ছেলেটা দেখতে অমির মত হলেও অমি থেকে তার গায়ের রঙ অনেকটা উজ্জ্বল।
কামিনী চৌধুরী শয়তানি হেসে নূরের বরাবর এসে বসলো। সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললো,
-- সবার মনে অনেক প্রশ্ন তা আমি জানি।তার আগে পরিচয় করিয়ে দেই,এ হচ্ছে আশিয়ান শিকদার।শিকদার আম্পায়ারের একমাত্র উত্তরাধিকারী।রাফসান শিকদারের ছেলে।
আশিয়ান এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে অমির দিকে।দেখতে তার মতো ছেলেটা কে বুঝতে বাকি নেই তার।কাউকে কিছু না বলে সে অমি কে শক্ত করে জরিয়ে ধরলো। অমি অবাক হলেও কিছু বললো না। কামিনী চৌধুরী মুখ কুচকে সেদিকে তাকিয়ে আছে। নূর এবার আয়েশ করে বসলো।
অমি নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো আশিয়ানের থেকে।চোখের পানি লুকিয়ে শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।
প্রায় বিশজন গার্ডসহ বাড়িতে ঢুকলো আশমিন। সারি সারি লাগেজ গুলো রেখে গার্ড গুলো নিজেদের জায়গায় দাঁড়িয়ে পড়লো। আশমিন ক্লান্ত গা এলিয়ে দিলো সোফায়।নূরের কাধে মাথা রেখে ন্যাকা গলায় বলল,
-- আই মিসড ইউ বউ। তোমাকে ছাড়া থাকতেই পারছলাম না জানো?তাই তারাতাড়ি চলে এলাম।
নূর ক্লান্ত শ্বাস ছাড়লো। না এই লোকের অসহ্য কারবার শেষ হবে আর না নূর ভালো বউদের মতো সংসার করতে পারবে। আশমিন কে কিছু না বলে আশিয়ানের দিকে তাকালো নূর। সে আপাতত কামিনী চৌধুরীর পাশে বসে তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে আছে নূর আর আশমিনের দিকে। নূর সেদিকে পাত্তা না দিয়ে গম্ভীর গলায় বলল,
-- আপনার পরিচয়?
কামিনী চৌধুরী কর্কশ গলায় বলল,
-- এই মেয়ে,একটু আগে কি বললাম শুনতে পাওনি?
-- নাহ।আমি সবার কথায় কান দেই না।রাস্তার কুকুর ও ঘেউঘেউ করে।তাই বলে তা মনোযোগ দিয়ে শুনতে হবে তার কোন মানে নেই।আমি আপনার সাথে কথা বলছি না মিসেস চৌধুরী।পরের বার আমার কথায় বাম হাত ঢুকানোর চেষ্টা করবেন না। আই ডোন্ট লাইক ইট।
কামিনী চৌধুরী কটমট করে তাকালো নূরের দিকে। আশিয়ান ইশারায় তাকে শান্ত হতে বলে নূরের দিকে তাকিয়ে শান্ত গলায় বললো,
-- আমি আশিয়ান শিকদার। রাফসান শিকদারের ছেলে।
আশমিন নূরের কাধ থেকে মাথা তুলে সোজা হয়ে বসলো। তীক্ষ্ণ চোখে তাকালো আশিয়ানের দিকে।
নূর শান্ত চোখে তাকালো। উঠে গিয়ে রাফসান শিকদারের কাউচে বসে পায়ের উপর পা তুলে গম্ভীর গলায় বলল,
-- প্রুফ?
আশিয়ান নড়েচড়ে বসলো।জোর গলায় বলল,
-- ডিএনএ টেস্ট করিয়ে দেখতে পারো। কানাডায় আমার আম্মুর সাথে সম্পর্ক ছিল তোমার বাবার। সেখানেই আমার জন্ম। আমজাদ চৌধুরীর আর মামনি সাক্ষী আছেন।চাইলে জিজ্ঞেস করতে পারো নূর।
নূর ক্রুর হাসলো। আশমিন শান্ত চোখে তাকিয়ে আছে নূরের দিকে। নূর মলিন চোখে তাকালো আশমিনের দিকে। আশমিন চোখ সরিয়ে নিলো। এ তো একদিন হওয়ার ই ছিল। নূর আশিয়ানের দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্যের গলায় বলল,
-- আমার বাবার এক রাতেই বেড পার্টনার ছিল আপনার মা।তার জন্য তাকে এক কোটি টাকা পেমেন্ট করা হয়েছে। আর আপনার মা আমার বাবার সুযোগ নিয়েছিল। তার বেহায়াপনার ফল হচ্ছেন আপনি। যাকে বলে অবৈধ সন্তান। কোন অবৈধ সন্তান কি করে রাফসান শিকদারের উত্তরাধিকারী হতে পারে? নিজের অবস্থান বুঝতে শিখুন মি. আশিয়ান।লোকে শুনলে হাসবে যে।
আশিয়ান চোয়াল শক্ত করে তাকিয়ে আছে নূরের দিকে। এই মেয়ে কে দুই আঙ্গুলে পিষে দেলা তার দুই মিনিটের ব্যপার। নিজের হিংস্রতা এই মুহুর্তে বাইরে আনতে চাইছেনা সে।কামিনী চৌধুরী বাকা হাসলো। সে জানতো নূর এমন কিছুই করবে।আশিয়ান কে হালকা ভাবে নেয়া তাদের মোটেই উচিত হচ্ছে না। ডুবাইয়ের নামকরা মাফিয়া সে। শিকদারের এই অর্থ সম্পদ তার হাতের ধুলোর মতো। কিন্তু সে শিকদার দের মৃ*ত্যু চায়।তার মায়ের মৃ*ত্যুর বদলা নেয়ার জন্যই তার এখানে আসা।চাইলে এই মুহুর্তে সবাই কে মেরে ফেলতে পারে সে। কিন্তু এতো সহজ মৃত্যু এদের দিবেনা আশিয়ান।ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়ংকর যন্ত্রণা দিবে এদের।তার কাছে মৃত্যু খুব সামান্য শাস্তি।
-- সত্যি টা জানানোর ছিল তাই জানালাম। অনেক তো আয়েশ করলে।এবার নাহয় বাবার জারজ সন্তানের সাথে হালকা মোকাবেলা হয়ে যাক।
আশমিন শব্দ করে হেসে উঠলো। আশিয়ান আর কামিনী চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে ক্রুর হেসে বললো,
-- কেন নয় মি.মাফিয়া।আপনার অপেক্ষায় আমার চোখের নিচে কালি পরে গেলো। এতো অপেক্ষা তো আমি আমার বউয়ের জন্য ও করিনি। এসেছেন, কয়েকদিন ঘুরুন ফিরুন। যা হওয়ার তা নাহয় পরে হবে। দেখা গেলো আর সুযোগ ই পেলেন না বাংলাদেশ দেখার।কয়েকদিন রেস্ট নিন।এখন আপনি আসতে পারেন।আমার খুব প্রেম পেয়েছে।এই মুহুর্তে বউ দরকার। আমি আবার প্রেম চেপে রাখতে পারি না। আসো তো বউ।
কাউকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে নূর কে টেনে উপরে নিয়ে গেলো আশমিন। অমি কোন দিকে না তাকিয়ে সোজা বেরিয়ে গেল বাসা থেকে। আশিয়ান আয়েসি ভঙ্গিতে বসে বাকা হাসলো। ইন্টারেস্টিং কিছু হবে এবার।
আশমিন নূর কে নিজের রুমে এনেই দরজা বন্ধ করে দিল।নূর শয়তানি হেসে তাকিয়ে আছে আশমিনের দিকে। আশমিন কিছু বলতে যাবে তার আগেই নূর অগ্রাসী ভাবে আদর করতে লাগলো আশমিন কে। আশমিন থমকে গেলো। মাথার মধ্যে সবকিছু তালগোল পাকিয়ে গেলো।ঠোঁটে হালকা ব্যথার আবির্ভাব হতেই দুই লাফে দূরে সরে গেলো।
-- তুমি এভাবে একজন গণ্যমান্য মন্ত্রীর ইজ্জত লুটে নিতে পারো না! আমার এতো বড় সর্বনাশ করো না নূর। আমি জনগণের কাছে মুখ দেখাতে পারবো না। এখনো বউয়ের সাথে বাসর টা ও করা হয়নি।
নূর কটমট চোখে তাকালো আশমিনের দিকে। আশমিন দুই হাত দিয়ে মুখ ঢেকে দাঁড়িয়ে আছে। নূর একটা বালিশ ছুড়ে মারলো আশমিনের দিকে। রাগী গলায় বলল,,
-- এমন করলে আর বাসর করাও হবে না। এতো নাটক করেন কিভাবে?অসহ্য মানুষ একটা।
■■■■■■■■■■■■■■
#পর্ব_২২
কনফারেন্স রুমে মুখোমুখি বসে আছে আশমিন আর নূর।তার পাশেই আমজাদ চৌধুরী অমি আর সানভি বসে আছে। সবার মুখে চিন্তার ছাপ থাকলেও নূর স্বাভাবিক ভাবে কিছু একটা ভেবে যাচ্ছে।আজ সকাল থেকেই শেয়ারবাজারে তাদের শেয়ারের রেট কমছে।এভাবে চলতে থাকলে কোম্পানি অনেক বড় লসের মুখে পড়বে। বড় বড় কোম্পানি গুলো তাদের প্রোডাক্ট কম দামে ছেড়ে দিচ্ছে। সবার কোম্পানি তেই ইনভেস্ট করেছে আর এস কোম্পানি।তাই আজ সবাইকে মিটিং এ ডেকেছে নূর। চৌধুরী গ্রুপ অব ইনডাস্ট্রিজের এম ডি হিসেবে আশমিন আর আমজাদ চৌধুরী এখানে উপস্থিত হয়েছে। আশমিন একটু পর পর হাই তুলছে। আজ একটা সমাবেশ আছে তার। এভাবে বসে থেকে সময় নষ্ট করার সময় নেই তার।বিরোধী দল আজ একটা ঝামেলা পাকাবেই।সেভাবেই প্রস্তুতি নিয়ে যাচ্ছে সে। নিজের হিংস্রতা যতটা সম্ভব লুকিয়ে রাখে সে। আবার এক বেওয়ারিশ বাদর ছানা এসে জুটেছে।নাহ! আর ভালো হওয়া হলো না। আফসোসের শিষ তুললো আশমিন।আমজাদ চৌধুরী প্রচুর ক্ষেপে আছে কামিনী চৌধুরীর উপর। ভালোবাসায় অন্ধ হয়ে আজ এই দিন ডেকে এনেছে সে।প্রথম দফায় লাগাম টেনে ধরলে বুড়ো বয়সে এসব দেখতে হতো না।
আশমিন সপ্তম বারের মতো হাই তুলে জোরে বললো,
-- আস্তাগফিরুল্লাহ।
আমজাদ চৌধুরী ভ্রু কুচকে তাকালো ছেলের দিকে। আশমিন সরল হেসে বললো,
-- নতুন বর যে!কি খবর আপনার?দিনকাল কেমন চলে?
আমজাদ চৌধুরী বিরক্ত হয়ে চোখ সরিয়ে নিলেন। নূর অমি কে কিছু কাজ বুঝিয়ে দিয়ে নিজের কেবিনে দেখা করতে বললো।অমি মুচিকি হেসে সায় জানিয়ে চলে গেলো।
হঠাৎ আশমিন গম্ভীর গলায় নূর কে ডাকলো,, নূর।
-- কি হয়েছে?(ভ্রু কুচকে)
-- তুমি আশিয়ানের কথা আগে থেকেই জানতে?(শীতল গলায়)
আশমিনের প্রশ্নে তপ্ত শ্বাস ছাড়লো নূর।ভরাট গলায় বলল,
-- নাহ।কিছুদিন আগে জেনেছি।
-- মামা কে ভুল বুঝো না নূর।আমরা সবাই পরিস্থিতির স্বিকার।
চোয়াল শক্ত হয়ে গেলো নূরের।শক্ত গলায় বলল,
-- নাহ মন্ত্রী সাহেব। আমরা আপনার মায়ের লোভের স্বীকার,আপনার মায়ের হিংসার স্বীকার, আপনার মায়ের জেদের স্বীকার। আপনার মায়ের পাপ কে পরিস্থিতির উপর চাপিয়ে দিবেন না।
আশমিনের চোখ ঘোলাটে হলো। মলিন গলায় বলল,
-- আমাকে ঘৃণা করো নূর?
নূর থমকালো। উত্তর না দিয়ে শান্ত দৃষ্টিতে তাকালো আশমিনের দিকে। আশমিন মলিন হাসলো। চোখ বন্ধ করে আমজাদ চৌধুরী কে উদ্দেশ্য করে বললো,
-- আমি মিসেস চৌধুরী কে কিভাবে ক্ষমা করবো আব্বু?সে যে আমার মমতাময়ী মায়ের খু*নি।তার মধ্যে বাস করা আমার আম্মুকে সে মেরে ফেলেছে। সে এখন শুধু কামিনী চৌধুরী। তার আর কোন পরিচয় নেই।
বিশাল কনফারেন্স রুমে তিনজন মানুষের নিরবতা তাদের হারানোর বিশালতা জানিয়ে দিচ্ছে।
-- এতো কিছুর পরেও তুমি তাকে কিভাবে এতো ভালবাসো আব্বু?
আমজাদ চৌধুরী হাসলো। ছেলের দিকে তাকিয়ে ক্লান্ত গলায় বলল,
-- তোমরা তার বিনাশিনী রুপ কেই চেনো। আর আমি তাকে নিজের একমাত্র কাছের মানুষ হিসেবে চিনি।যে বিদেশের মাটিতে আমার একমাত্র আশ্রয় ছিল। আমার কান্নায় যে কাদতো,আমার হাসি তে যে হাসতো, আমার উদাসীনতায় যে বিষন্ন হয়ে যেত।আমার খারাপ সময়ে এক মিনিটের জন্য যে আমার হাত ছাড়েনি তার প্রতিশোধের আগুনে উন্মাদ হওয়ায় আমি কিভাবে তার হাত ছেড়ে দিতাম বলো? প্রত্যেকটি ঘটনার দুটো দিক আছে বাবা।কারণ ছাড়া এই পৃথিবীতে কিছুই ঘটে না।তোমার মা তার জায়গায় ঠিক। আবার তোমরা তোমাদের জায়গায় সঠিক। তবে যা ঘটছে তা ঠিক নয়। আমি শুধু তোমাকে একটা কথাই বলতে পারি বাবা,তোমার আম্মু যতো অন্যায় ই করুক না কেন আমি তাকে ভালবাসি।আমার এই ছোট্ট জীবনের চেয়েও বেশি ভালোবাসি। সে আমার বেচে থাকার অনুপ্রেরণা। যাকে দেখে আমার আরো একটা জীবন বেচে থাকতে ইচ্ছে করে। আমার এই জীবন আমার নয়।তাকে ভালবেসে নিজের ভিতর নিজেকে অনুভব করতে পারিনা আমি।আমার পুরোটা জুরেই শুধু সে।তোমরা ছাড়া আমার আর কে আছে বলো? তুমি হয়তো ভাবছো আমি কেন তোমার মা কে সঠিক পথে নিয়ে এলাম না।তাহলে শুনে রাখো বাবা,তোমার মা বেচে আছে এই প্রতিশোধের তাগিদে। রাফসান ভাই তার নিজের কর্মফল ভোগ করেছে। ভাবি ও বাদ যায়নি।কামিনী ও করবে। আমি ও করছি।একটা কথা জেনে রাখো বাবা, একসময়ের আঘাত গুলো ই কামিনী এখন ফিরিয়ে দিচ্ছে।
-- সে সুস্থ নয় আব্বু।
-- আমি জানি(হালকা হেসে)।সামনে ঝড় আসছে।সামলে নিতে পারবে আমি জানি। যাকে ভালোবাসবে তাকে শত চেষ্টার পরেও ঘৃণা করতে পারবে না।হোক সে উন্মাদ, পাগল,ভয়ংকর অপরাধী। আর এখানেই আমার ব্যর্থতা। অতীত খুজতে যেয়ো না বাবা।অতীত খুজতে গেলে আমাকে হারাবে।
আমজাদ চৌধুরী নিঃশব্দে চলে গেলেন।নূর আমজাদ চৌধুরীর কোন কথা ই বুঝতে পারেনি। কি এমন করেছিল তার বাবা যার জন্য কামিনী চৌধুরী আজ এভাবে হিংস্র হয়ে উঠেছে? আশমিন চোখ বন্ধ করে গা এলিয়ে বসে আছে। এতো ক্ষমতা, এতো টাকা, আভিজাত্য দিয়ে কি হবে? যেখানে দম বন্ধ হয়ে আসে।চারিদিকে শুধু কষ্টের হাতছানি।
সানভি নক করে বললো,
-- সবাই চলে এসেছে ম্যাম।
-- ভিতরে পাঠিয়ে দাও।
-- ওকে।
সানভি চলে যেতেই সোজা হয়ে বসলো আশমিন।নূর পেপার গুলো চেক করে আশমিনের দিকে এগিয়ে দিলো।
-- অফিসের মধ্যে কি শুরু করলে।এখানে ও লাভ লেটার দিতে হবে? তোমাকে নিয়ে আর পারি না,কেন যে এতো ভালোবাসো আমাকে!
-- হয়ে গেছে? (দাতে দাত চেপে)
আশমিন হতাশার শ্বাস ফেলে বললো,
-- হলো আর কই?তুমি তো সুযোগ ই দিলে না।এরকম একটা বউ রেখে আমি শুকিয়ে মরছি।দেখো, এই মাত্র দুই গ্রাম শুকিয়ে গেলাম।আল্লাহ কে ভয় করো নূর। এমন জনদরদি মন্ত্রী কে তুমি বউ শূন্যতায় শুকিয়ে মারছো।আল্লাহ সহ্য করবে না। এখনো সময় আছে।পাশের রুমে চলো।বাসর দিনটা সেরে ফেলি।
নূর চিৎকার করে বললো,
-- চুপ করুন অসভ্য লোক।আপনার মুখে আমি পিন মেরে দিবো। সারাক্ষণ আজেবাজে কথা। আরেকটা কথা বললে বেইলি রোডে দাড় করিয়ে আখের রস বিক্রি করাবো।তখন মন ভরে জনসেবা করবেন আর নিজেকে ও ভিজিয়ে রাখবেন।অশ্লীল।
নূরের রক্তিম ফেস দেখে আশমিন আর কিছু বললো না। তারাতাড়ি ফাইল দেখায় মনোযোগ দিল।
~
-- আপনাদের এখানে ডাকার কারণ আপনারা সবাই জানেন। নিয়ম অনুযায়ী আপনারা আমাদের সাথে করা চুক্তি ভঙ্গ করেছেন।আমাদের কোম্পানি কে ইনফর্ম না করে নিজেদের প্রোডাক্ট নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অর্ধেক দামে ছেড়ে দিয়েছেন। কন্ট্রাক্ট পেপারে উল্লেখ আছে যে,কোন বড় ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়ার হলে সবার মতামত নিয়ে নিতে হবে। চেয়ারম্যান যা সিদ্ধান্ত নিবে তা ই চুড়ান্ত হিসেবে গণ্য হবে। আপনাদের কোম্পানি আমার কোম্পানির আন্ডারে আছে।আমাকে না জানিয়ে প্রোডাক্ট লঞ্জ করে দিয়েছেন।তাই আজ থেকে আপনার আর এস কোম্পানি থেকে কোন কাচামাল পাবেন না। আমদের কোম্পানি থেকে আপনাদের আলাদা করে দেয়া হলো।আগামী দশ দিনের মধ্যে আমাদের সমস্ত ইনভেস্টমেন্ট ব্যাক করবেন।না হলে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে এবং আপনাদের কোম্পানি সিল করে দেয়া হবে।
সবার কপালে সুক্ষ্ম ঘামের রেখা দেখা দিয়েছে। নূরের তেজী মুখের দিকে তাকিয়ে কথা বলার সাহস হচ্ছে না কারোর।
অমি সবার হাতে একটা করে নোটিশ ধরিয়ে দিলো। এতগুলো টাকা একসাথে ফিরিয়ে দেয়া কোন ভাবেই সম্ভব না। আশিয়ানের হুমকি তে পরেই তারা প্রোডাক্ট কম দামে বাজারজাত করেছে।প্রথমেই এতো লস।এখন এতো টাকা!
-- ম্যাডাম আমরা জানে মারা যাবো। একটু দয়া করুন।আমরা নিরুপায় হয়ে এই কাজটা করে ফেলেছি।
লোকটা সব কিছু খুলে বললো নূর কে।
-- আপনাদের আমাদের সাথে আলোচনা করা উচিত ছিল।
-- ফ্যামিলির উপর রিস্ক হয়ে যেতো ম্যাডাম।আপনার বাবার সাথে থেকে আমরা বিজনেস করছি।কখনো এমন হয় নি।
আশমিন গম্ভীর গলায় বলল,
-- যা হওয়ার হয়ে গেছে। প্রোডাকশন কয়েকদিন বন্ধ রাখুন।কয়েকদিন পরে নতুন করে আগের দামে মাল বাজারজাত করবেন। আপনাদের লস পুষিয়ে দেয়া হবে।
সবাই সন্তুষ্ট হলেও নূর হতে পারলো না। তবুও চুপ করে সম্মতি দিল।আশমিন নূরের মনোভাব বুঝতে পারলো। সবাই বেরিয়ে যেতেই শান্ত গলায় বললো,
-- আমাদের ব্যক্তিগত শত্রুতার জন্য তারা কেন ভুগবে নূর?সব কিছুর দায় আমাদের। মাথা ঠান্ডা রাখো। কিছুতেই মাথা গরম করবে না।এমন কি আমি এই মুহুর্তে তোমাকে চুমু খেলেও না।
কথা,শেষ করেই নূরের অধরে অধর মিলিয়ে দিয়েছে আশমিন। হাত পা ছোড়াছুড়ি করেও যখন কাজ হলো না তখন শান্ত হয়ে গেলো নূর।নিজেও হালকা জরিয়ে ধরলো আশমিন কে। নূরের আলিঙ্গনে উন্মাদ হয়ে গেলো আশমিন। এক হাতে সুইচ টিপে সমস্ত রুমের ইলিক্ট্রেসিটি বন্ধ করে দিলো। কোমড় টেনে নূর কে নিজের সাথে চেপে ধরে কোলে বসিয়ে দিল।
বিশ মিনিট পর দরজায় নক করলো সানভি।ততক্ষণে সবকিছু অনেকটা হাতের বাইরে চলে গেছে। ঘনঘন শ্বাস টেনে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করলো আশমিন। নূরের অবস্থা নাজেহাল। পরিপাটি করা চুলগুলো এলোমেলো হয়ে মুখের সামনে পরে আছে।আশমিনের শুভ্র পাঞ্জাবি ফ্লোরে লুটপুটি খাচ্ছে। নূর কে কোলে তুলে পাশের বিশ্রামের জন্য বরাদ্দকৃত রুমের দিকে অগ্রসর হলো আশমিন। বেডে শুয়িয়ে দিয়ে এলোমেলো চুল গুলো হাত দিয়ে ঠিক করে দিলো। পোশাক ঠিক করে দিয়ে নেশালো গলায় বলল,
-- যেতে হবে বউ। আজ রাত টা আমাদের হবে।আর কোন দূরত্ব চাই না আমি। আই নিড ইউ ব্যাডলি।
নূর চোখ বন্ধ করে আছে। আশমিন নূরের ঠোঁটে হালকা চুমু খেয়ে বললো,
-- এখানে কিছুক্ষণ থাকো।আমি আসছি।রাতে দেখা হবে।অপেক্ষা করবে তো আমার জন্য?
নূর জরিয়ে ধরলো আশমিন কে। ধীর গলায় বলল,
-- করবো।
হালকা হেসে বেরিয়ে গেল আশমিন। পাঞ্জাবি গায়ে দিয়ে নিজেকে পরিপাটি করে বেরুলো রুম থেকে। সানভি মুখ লটকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আশমিন সেদিকে পাত্তা না দিয়ে সরাসরি সিসিটিভি কন্ট্রোল রুমে চলে গেলো। কিছু ফুটেজ ডিলিট করে গটগট করে বেড়িয়ে গেলো অফিস থেকে। সানভি দৌড়ে এলো আশমিনের পিছু।
-- আজকে সারা রাত তুমি সুইমিংপুলে দাঁড়িয়ে থাকবে সান।এটা তোমার শাস্তি।
সানভি অবাক হয়ে গেলো। ভয়ার্ত গলায় বলল,
-- আমি কি করেছি স্যার।
আশমিন কটমট করে তাকালো সানভির দিকে। দাতে দাত চেপে বললো,
-- আমার ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে পৃথিবীতে আসতে বাধা দিয়েছো।এতো বড় সাহস তোমার! নাহ!সুইমিংপুলে না তুমি হাতিরঝিলের নর্দমায় দাড়িয়ে থাকবে সারা রাত।আমি নিজে পাহারা দিবো তোমায়।
সানভির মুখটা কাদো কাদো হয়ে গেলো। সে বুঝতেই পারছে না সে কি ভুল করে বসেছে।
■■■■■■■■■■■■■■
#পর্ব_২৩
উত্তরায় বিশাল সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে। আশমিন সেখানে চিফ গেস্ট। সিটি করপোরেশনের মেয়র সহ কয়েকজন এমপি ও সেখানে উপস্থিত আছে। আশমিনের গাড়ি বহর ঢুকতেই সাংবাদিকরা হামলে পরলো। সানভি ড্রাইভারের পাশের সিটে মুখ কুচকে বসে আছে। মেয়ে হলে এতক্ষণে সে কেদে ভাসিয়ে দিত। আশমিনের সেদিকে ধ্যান নেই। সে ব্যাস্ত ভঙ্গিতে ফোনে কারোর সাথে কথা বলে যাচ্ছে। বিগত কয়েক মাস যাবৎ ঢাকার বিভিন্ন স্কুল কলেজ থেকে মেয়েরা নিখোজ হচ্ছে। কয়েকজনকে পাওয়া গেলেও বাকিদের খোঁজ এখনো পাওয়া যায়নি। পুলিশ আর গোয়েন্দা বিভাগের সাথে সাথে আশমিন নিজের লোকদের ও লাগিয়ে দিয়েছে।কিন্তু ফলাফল শূন্য। প্রায় পঁচাত্তর জন মেয়ে নিখোঁজ। যেদের পাওয়া গেছে তারা বয়ফ্রেন্ড নিয়ে পালিয়ে গিয়েছিল। বাকিদের এরকম কোন রেকর্ড নেই।আশমিন পুলিশের উপর চাপ সৃষ্টি করে রেখেছে।আজকের সমাবেশ শেষে এই নিয়ে একটা মিটিং আছে।
আশমিনের গাড়ি থামতেই বাহাদুর তার টিম সহ পুরো গাড়ি ঘেরাও করে ফেললো। প্রয়োজনের তুলনায় আজ অনেক বেশি সিকিউরিটি দেয়া হচ্ছে আশমিন কে।রাজনীতি বিদদের উপর এরকম জনসমাগমেই সবচেয়ে বেশি হামলা হয়। নূর নিজের সিকিউরিটি টিম ও পাঠিয়ে দিয়েছে আশমিনের অগোচরে। আশমিনের উপর রাগ টা কমে এসেছে নূরের।আশমিন কানাডা থাকা অবস্থায় আমজাদ চৌধুরী তাকে সবকিছু খুলে বলেছে।কামিনী চৌধুরীর করা কীর্তি আর আশিয়ান অমির ব্যপারে সব জানে নূর।বাকরুদ্ধ হয়ে শুনেছিল সব।তাই আশিয়ান কে দেখে সে অবাক হয় নি। হোটেল রুমের সেই মেয়ের ঘটনার পিছনে লারার হাত আছে।আর তাকে সাহায্য করেছে কামিনী চৌধুরী। উদ্দেশ্য ছিল শুধু নূর কে আশমিনের জীবন থেকে সরানো।এতো টা ঘৃণা কেন করেন কামিনী চৌধুরী তার উত্তর পায়নি নূর। আশমিন কে করা ড্রাগস দেয়া হয়েছিল সেদিন।সানভি সময় মতো না পৌছালে আশমিনের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার ধ্বংস হয়ে যেতো সেদিন।সেই মুহুর্তে মাথায় খু*ন চেপে গিয়েছিল নূরের। আমজাদ চৌধুরী থামিয়েছে তাকে।এখনো অনেক কিছু খোলসা হওয়া বাকি।তাই কামিনী চৌধুরী কে নিজের মতো ছেড়ে দিতে হবে।সবকিছু শুনে নিজেকে শান্ত করেছে নূর।মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেছে কামিনী চৌধুরীর বুকে প্রথম গু*লিটা সে ই করবে।শুধু সময়ের অপেক্ষা। নূরের আশমিনের উপর রাগটা এখন আর এতটা প্রখর ভাবে নেই।সে নিজেও চায় জীবন টা কে গুছিয়ে নিতে।আশমিন কে টাইট দেয়ার জন্য সারাজীবন পরে আছে।
আশমিন মনোযোগ দিয়ে ফোনে কিছু একটা করছে। সানভি ভয়ে ভয়ে বললো,
-- স্যার,,
আশমিন ভ্রু কুচকে তাকালো সানভির দিকে। তারা এখনো গাড়ির ভিতর অবস্থান করছে।ভীড় নিয়ন্ত্রণে আসলে গাড়ি থেকে নামবে।সানভি ইতস্তত করতে করতে বললো,
-- আপনার পাঞ্জাবি টা চেঞ্জ করা দরকার।
আশমিন এক ভ্রু উচু করে তাকালো সানভির দিকে। সানভি ফোনে একটা ছবি তুলে আশমিনের দিকে এগিয়ে দিল।আশমিন ছবি দেখে হালকা হাসলো। প্রিয়তমার দেয়া চিহ্ন জ্বলজ্বল করছে তার পাঞ্জাবি তে। ভালবাসার মুহুর্ত গুলো মনে করতেই কটমট করে তাকালো সানভির দিকে। সানভি বেলুনের মতো চুপসে গিয়ে আরেকটা পাঞ্জাবি এগিয়ে দিলো আশমিনের দিকে। গাড়ি তে সব সময় এক সেট কাপড় থাকে আশমিনের।
-- তোমার শাস্তি আরো বারানো হলো সান।বিয়ের পর তুমি একা হানিমুনে সুইজারল্যান্ড যাবে। এটা আমার পক্ষ থেকে তোমার বিয়ের গিফট।
সানভি অসহায় চোখে তাকালো আশমিনের দিকে। সামান্য একটা পাঞ্জাবি চেঞ্জ করতে বলার অপরাধে তাকে একা একা সুইজারল্যান্ড হানিমুনে যেতে হবে! সানভি দুঃখী দুঃখী গলায় বলল,,
-- বউ খুব রাগ করবে স্যার।
আশমিন সেদিকে পাত্তা দিলো না।পাঞ্জাবি চেঞ্জ করে ফেললো। গায়ের পাঞ্জাবি সানভির হাতে দিয়ে বললো,
-- এটা এভাবেই আমার কভার্ডে রেখে দিবে।
সানভি মাথা দুলিয়ে সায় জানালো।বাহাদূর দরজা খুলতেই আশমিন গটগট করে বেড়িয়ে গেলো। সবার সাথে কথা বলে বিশ্রামের জন্য বরাদ্দকৃত রুমে চলে গেলো। মন খুব বিক্ষিপ্ত হয়ে আছে।কপালে চিন্তার ভাজ পরেছে আশমিনের। আশিয়ানের একটা ব্যবস্থা খুব তারাতাড়ি করতে হবে। হাত পা বাধা না থাকলে এক গু*লিতে কাহিনি খতম করে ফেলতো সে।বিরক্তি তে মুখ তেতো হয়ে গেলো আশমিনের। তার হাত পা বাধা থাকলেও আশিয়ানের নেই।সে যে কোন সময় আক্রমণ করতে পারে।চেয়ারে গা এলিয়ে দিয়ে বাকা হাসলো আশমিন। বিরবির করে বললো,
-- দুই একবার ছাড় পাবি ছোট ভাই। আমি আবার ভালো সাজার ভং বেশিক্ষন ধরে থাকতে পারবো না। আমি জন্মগত ব্যাড বয়।
~
নূরের মুখোমুখি বসে আছে অমি।মলিন মুখে ইতস্ততার ছাপ স্পষ্ট।
-- আমার উপর রেগে আছো অমি?
অমি অবাক চোখে তাকালো নূরের দিকে। তড়িঘড়ি করে বললো,
-- না না।কি বলছেন ম্যাম?আমি কেন রাগ করবো আপনার উপর?
-- সত্যি টা আমরা দুজনেই জানি অমি।সম্পর্কে আমরা ভাই বোন। তুমি সব আগে থেকেই জানতে।সব সময় বড় ভাইয়ের মতো আগলে রেখেছো আমাকে।কখনো নিজের পরিচয় প্রকাশ করো নি। একবার বোন বলে কাছে ডেকেই দেখতে। নিরাশ করতাম না তোমায়।আমার নিঃসঙ্গ সময়ের একমাত্র সাথী তুমি। ভাইয়া বলে জরিয়ে ধরার অধিকার কি নেই আমার?
অমি নিচের দিকে তাকিয়ে নিজের চোখের পানি লুকাতে ব্যস্ত। ছোট বোন টাকে সে প্রচন্ড ভালবাসে।কিন্তু নিয়তি তাকে হাতে পায়ে বেড়ি পরিয়ে দিয়েছে। চাইলেও সে বুকে আগলে ধরতে পারেনি তার বোনকে।নিজের বাবার লাশের পাশে বসে দু ফোটা চোখের পানি ফেলতে পারার অধিকার ও তার ছিল না। অবৈধদের এতো অধিকার থাকে না। আর পাচটা সাধারণ মানুষের মতো সে বাবার কবরে দু মুঠো মাটি দিয়েছে।
নূর নিজের চেয়ার থেকে উঠে এসে একপাশ থেকে জরিয়ে ধরলো অমি কে।যে নিঃস্বার্থ ভাবে সারাজীবন আগলে রেখেছে তাকে।অমি ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো।শক্ত করে জরিয়ে ধরলো বোন কে।নূরের চোখ থেকেও পানি ঝরছে।দুটো ভাই আছে তার। একজন শামুকের আবরণের মতো আগলে রাখে তাকে।আরেকজন মারার পায়তারা করছে।অমি নূররে মাথায় চুমু খেয়ে ভরাট কন্ঠে বললো,
-- আমার বোন তুই।সসম্পর্কের মানদন্ড আমাদের যেমন ই হোক না কেন।তোর ভাই সারাজীবন তোর সাথে আছে। আশিয়ান কে নিয়ে ভাবিস না।সেও নিজের ভূল বুঝতে পারবে একদিন। আমরা দুই ভাই আগলে রাখবো তোকে।আমাদের ম্যাম হয়েই থাকবি তুই।তুই যে খুব আদরের বোন আমার।
নূর শক্ত করে জরিয়ে রইলো তার ভাই কে। তার আপনজন। তার ও ভাই আছে ভাবতেই বুক খুশিতে নেচে উঠলো।
~
আশমিন সব সময় শান্ত থাকতে পছন্দ করে। অতিরিক্ত রেগে গেলেও তার মুখবয় থাকে শান্ত।সেই শান্ত মানুষ টা আজ কোন ভাবেই শান্ত থাকতে পারছে না।অস্থির হয়ে পা নাচিয়ে যাচ্ছে বারবার। পাশের কয়েকজন তার অস্থিরতা দেখে নিজেরাও অস্থির হয়ে উঠছে।বার নার জানতে চাইছে সে ঠিক আছে কি না।সে কিভাবে বোঝাবে তার এখন বউ কোলে নিয়ে বসে থাকতে ইচ্ছে করছে। বিকেল পাচটা বেজে গেছে।লম্বা বক্তৃতা শুনতে শুনতে কান পচে গেলো। এদের মুখেই শুধু বড় বড় কথা।কাজের বেলায় ঠনঠনা ঠন ঘন্টা। নিজের বিরক্তি প্রকাশ করেই ফেললো আশমিন। গম্ভীর গলায় বলল,
-- নিজের বক্তব্য ছোট করুন।অপ্রয়োজনীয় কথার দরকার নেই।যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু বলুন।
সবার বক্তব্য শোনার পর আশমিনের কপালে চন্তার ছাপ পরলো। এভাবে চলতে থাকলে পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাবে।
-- ঢাকা শহরের এমনকি মফস্বলের প্রত্যেকটি স্কুল কলেজের সামনে দুজন করে পুলিশ মোতায়ন করুন।সংবাদ সম্মেলন করে বাবা মা এবং স্কুল কলেজ কর্তৃপক্ষ কে সাবধান করে দিন।স্কুল কলেযে থাকাকালীন শিক্ষকেরা এবং বাইরে থাকাকালীন বাবা মায়েরা যেত তাদের সন্তানের উপর কড়া নজরদারি রাখে। সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয়। তাদের কেউ সতর্ক থাকতে হবে। যেহেতু স্কুল কলেজ থেকেই বেশি অপহরণ হচ্ছে সেহেতু সেদিকেই বেশি খেয়াল রাখুন।স্টুডেন্ট সাজিয়ে আপনাদের কিছু টিম মেম্বার পাঠিয়ে দিন।হাত ফস্কে যাবে কোথায়? ঠিক এসে জালে আটকা পরবে।নিজেদের দায়িত্ব নিষ্ঠার সাথে পালন করবেন। দায়িত্বে অবহেলা করলে কেউ ছাড় পাবেন না।
মিটিং শেষ করে আশমিন বেড়িয়ে গেলো। ঘড়ি তে অলরেডি রাত দশটা বাজে।ক্লান্তিতে শরীর ভেঙ্গে আসছে। গাড়ি তে বসে গা এলিয়ে দিলো আশমিন।
-- সোজা বাড়িতে যাবে সান।
সানভি তারাতাড়ি গাড়ি ছাড়ার নির্দেশ দিল।আশমিন কে ক্লান্ত লাগছে খুব।
বাড়িতে প্রবেশ করতেই আমজাদ চৌধুরীর কে গোমড়া মুখে বসে থাকতে দেখে তার দিকে এগিয়ে গেলো আশমিন। ঘড়ির কাঁটা বারোটার ঘরে যেতে পনেরো মিনিট বাকি আছে।
-- দুই দুটো বউ থাকতে এতিমের মতো এখানে বসে আছো কেন? আর কি চাই(কপাল কুচকে)?
আমজাদ চৌধুরী আশমিনের কথায় পাত্তা না দিয়ে আগের মতোই বসে রইলেন। আশমিন তার মুখের দিকে তাকিয়ে চোখ বড় বড় করে বললো,
-- আস্তাগফিরুল্লাহ! তুমি কি আবার বিয়ে করতে চাইছো? এসব বায়না চলবে না। দুটো পর্যন্ত ঠিক আছে। নিজের বয়স টা ও তো একবার দেখো। এই বয়সে এতো গুলো বউ সামলাতে পারবে না। যাও রুমে যাও।ভালো ছেলেরা জেদ করে না।
আমজাদ চৌধুরী আগুন চোখে তাকালো আশমিনের দিকে। দাত কড়মড় করতে করতে বললো,
-- চুপ করো বেয়াদব ছেলে। মুখের লাগাম কি নর্দমায় ফেলে দিয়ে এসেছো? বাবা হই তোমার। সম্মান দিয়ে কথা বলো। বাবার সাথে এসব কি ধরনের কথাবার্তা!
আশমিন অবাক হওয়ার ভান করলো। নাদান গলায় বলল,
-- আমি আবার কি বললাম?
আমজাদ চৌধুরী আর কিছু বললো না। কামিনী চৌধুরী কে হাজার অনুরোধ করে ও গলাতে পারেনি সে।কতদিন হলো ঠিক মতো চোখের দেখা টাও দেখতে পায়না। নিজেকে খুব অসহায় লাগছে।গেস্ট রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিল সে।এই নির্লজ্জ ছেলের যন্ত্রণায় কোথাও বসেও শান্তি নেই।
বাবার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে তপ্ত শ্বাস ছাড়লো আশমিন।এভাবে কথা না বললে সে সারারাত এখানে বসেই পাড় করে দিতো।
নিজের রুমে ঢুকে মুচকি হাসলো আশমিন। সারা রুমে ফুলের ছড়াছড়ি। বউ তার জন্য অপেক্ষা করছে ভাবতেই মন খুশিতে ভরে উঠলো। তারাতাড়ি ওয়াশরুমে চলে গেলো ফ্রেশ হতে।নূর রুমের কোথাও নেই। ফ্রেশ হয়ে এসে সোজা বেলকনিতে চলে গেলো আশমিন। সিদুর লাল শাড়ি তে নূর কে অপ্সরাদের মতো লাগছে।শুকনো ঢোক গিলে দাঁড়িয়ে গেলো আশমিন। কোমোড়ের নিচ পর্যন্ত লম্বা কোকড়ানো চুল গুলো আশমিনের দূর্বলতা। হালকা পায়ে এগিয়ে গিয়ে পিছন থেকে জরিয়ে ধরলো নূর কে।কেপে উঠলো নূর।
-- আমার হাত পা কাপছে বউ। তোমাকে দেখলে আমি হয়তো আজ ম*রেই যাবো। পাগল পাগল লাগছে নিজেকে।
নূর ঘুরে তাকাল আশমিনের দিকে। সত্যিই আশমিনের হাত পা কাপছে। নূরের মুখের দিকে তাকিয়ে কাপাকাপি বন্ধ হয়ে গেলো আশমিনের। চাদের আলোয় নূরের সৌন্দর্য উপচে পরছে। ঘোরে চলে গেলো আশমিন। এক হাতে কোমড় পেচিয়ে ধরে নিজের কাছে নিয়ে এলো নূর কে।নূরের শরীরের হালকা কাপুনি আরো অস্থির করে তুলছে আশমিন কে। বারান্দার দেয়ালের সাথে চেপে ধরেই দুজনের ওষ্ঠ এক করে দিলো সে। আশমিনের বেহায়া হাতের বিচরণ থেকে বাচতে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে লাগলো নূর। আশমিন আরো শক্ত করে চেপে ধরলো। ঠোঁট ছেড়ে কপালে কপাল ঠেকিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে দুজন। আশমিন নেশালো গলায় বলল,
-- আমার তোমাকে চাই নূর।এই মুহুর্তে চাই।আর অপেক্ষা করতে পারছি না।
নূর জরিয়ে ধরলো আশমিন কে।লজ্জায় মুখ গুজে দিলো আশমিনের বুকে।আশমিন শব্দ করে হাসলো।প্রেয়সীর কপালে চুমু খেয়ে কোলে তুলে নিল তাকে।রুমের ভিতর অগ্রসর হতে হতে শয়তানি হেসে বললো,
-- আজ তোমাকে কে বাচাবে সুন্দরী?
রাতটা স্বপ্নের মতো সুন্দর মনে হলো নূরের কাছে।আশমিন এতো বছরের ভালবাসা তাকে উজার করে দিয়েছে।প্রতিটি মুহুর্তে তাকে অনুভব করিয়েছে তার ভালবাসার গভীরতা। ভালবাসায় উন্মাদ হলেও তার সুভিধা অসুভিধার দিকে সম্পুর্ন ধ্যান ছিল আশমিনের।
সকালে আশমিনের চিৎকারে ঘুম ভাঙ্গলো নূরের। মাত্র দুই ঘন্টা হয়েছে ঘুমিয়েছে সে। সারা শরীরের সাথে মাথার যন্ত্রণা ও এসে যোগ হলো আশমিনের চিৎকারে।
-- এভাবে আমার সর্বনাশ করলে নূর! আমার ইজ্জত লুটে নিতে তোমার লজ্জা করলো না? একজন ভোলা ভালা মন্ত্রীর ইজ্জত হরণ করেছো তুমি।কি সাংঘাতিক!
নূর ঘুম ঘুম চোখে নিজের কপাল চাপড়ালো।সারা রাত নিজেই ওকে ঘুমাতে দেই নি।এখন এসে সকাল সকাল নাটক শুরু করেছে।নূর আবার শুয়ে পরলো।গায়ে কম্বল জড়াতে জরাতে বললো,
-- থানায় ফোন দিয়ে বলুন আপনার বউ আপনার ইজ্জত লুটে নিয়েছে। তারা নিশ্চয়ই আপনাকে সাহায্য করবে।
আশমিন পিছন থেকে জরিয়ে ধরলো নূর কে। ঘাড়ে চুমু খেয়ে টেনে বসিয়ে দিল। নূর বিরক্ত চোখে তাকালো আশমিনের দিকে। আশমিন হালকা হেসে একটা একবাটি নুডুলস এগিয়ে দিলো নূরের দিকে। নিজেই চামচ নিয়ে মুখের সামনে ধরলো। নূর কিছু না বলে খেয়ে নিলো। না খেলে আশমিন ছাড়বে না সে খুব ভালো করেই জানে। কয়েক চামচ খেয়ে আর খাবে না জানালে একটা পেইন কিলার খাইয়ে দিল নূর কে। হালকা জ্বর জ্বর ভাব আছে শরীরে।
নূর আবার শুয়ে পরতেই আশমিন ও তাকে জরিয়ে ধরে শুয়ে পরলো।
চোখ বন্ধ করে ভাবলো সানভির একটা খোঁজ নেয়া দরকার। সত্যি সত্যি নর্দমায় নেমে গেছে নাকি দেখতে হবে।
■■■■■■■■■■■■■■
#পর্ব_২৪
সারে দশটায় ঘুম ভাঙ্গলো নূরের।মাথা ব্যথাটা এখন একটু কম।তবে চোখ জ্বালা করছে। বিছানা থেকে উঠে চারিদিকে চোখ বুলালো নূর।আশমিন রুমে নেই।
বাকা হেসে ওয়াশরুমে চলে গেলো। আজ মন্ত্রী সাহেব কে একটু জ্বালানো যাক।
গোসল সেরে একবারে রেডি হয়ে বের হলো নূর।একটু অফিসে যেতে হবে। বজ্জাত মন্ত্রীর একটা খবর নেয়া যাক।ফোন হাতে নিয়ে কল দিতেই আশমিন সাথে সাথে রিসিভ করলো।
-- আমাকে মিস করছিলে বউ? একদিনেই বর পাগল হয়ে গেলে! তুমি না,আমাকে একটু বেশিই ভালবাসো।
নূর হতাশার শ্বাস ফেললো। এই লোক এ জীবনে ঠিক হওয়ার নয়।
-- কোথায় আপনি?
-- আমি একটু বের হয়েছি। কিছুক্ষণ পরেই চলে আসবো। বাসা থেকে বের হওয়ার কথা চিন্তাও করো না বউ।আমার কয়েক দিন খুব প্রেম পাবে। তুমি বাড়িতে না থাকলে প্রেম কার উপর এপ্লাই করবো বলো তো? আব্বুর মতো তো আমার আর দুটো বউ নেই।
নূরের বিরক্তির মাত্রা আকাশ ছুলো।দুম করে ফোন কেটে দিয়ে বেরিয়ে গেল অফিসের উদ্দেশ্যে।আজ একটা বড় ডিল হওয়ার কথা।এখনো হাতে একঘন্টা সময় আছে।
নূর ফোন কেটে দিতেই আশমিন মুখ কুচকে ফেললো। তার এতো রোমান্টিক কথা শুনে ফোন কেটে দিলো! রীতিমতো মানবতা বিরোধী কাজ। তার বউ বড্ড অমানবিক।
নূরের জন্য একজন পার্সোনাল এসিস্ট্যান্ট নিয়োগ দেয়া হবে। অমি আপাতত কয়েকদিন কিছু জরুরি কাজে ব্যস্ত। তাই একজন মেয়ে নিয়োগ দেয়া হবে। আশমিন ইন্টারভিউ নেয়ার দায়িত্ব সানভি কে দিয়েছে।
তারাহুরো করে অফিসে ঢুকতেই এক মেয়ের সাথে ধাক্কা খেয়ে কপাল ধরে দাড়িয়ে গেলো সানভি।মুহুর্তেই ঘটে যাওয়া মেজাজ টা আরো বেশি ঘটে ঘ হয়ে গেলো। সে মোটামুটি ভালোই লম্বা।তার কপালে বারি খেতে হলে অপর পাশের মানুষ টা কেও তার সমান লম্বা হতে হবে।সানভি কপাল ছেড়ে সামনে তাকাতেই দেখলো এক লিলিপুট সাইজের মেয়ে চার ইঞ্চি হিল পরে তার দিকে কটমট করে তাকিয়ে আছে। সানভি সেদিকে পাত্তা না দিয়ে কর্কশ গলায় বলল,
-- জুতা খোলো।
--কিহ?(অবাক হয়ে)
সানভি খ্যাঁক করে বললো,
-- কথা কানে যায় নি।বলছি জুতা খোলো।
মেয়েটা ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো। রাগ সাইডে রেখে নিজের জুতা খুলে আশমিনের মুখের সামনে ধরলো। আশমিন রিসিপশন থেকে কাচি নিয়ে সাথে জুতার সব কয়টা বেল্ট কেটে দিলো। মেয়েটা চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে সানভির দিকে।
-- আর কোনদিন এতো উচু জুতা পরে অফিসে আসবে না।যা সামলাতে পারো না তা পরো কেন?
মেয়েটা রাগে দাত কটমট করতে লাগলো। হাতের জতা গুলো নিচে ফেলে চিৎকার করে বললো,
-- বলি বাসায় কি খাবার দাবার কিছু দেয় না।সকাল সকাল চোখের মাথা কেন খেতে হলো আপনার।আমার মতো আস্তো একটা মানুষ আপনার চোখে পরলো না!নিজের চোখ যদি কাজে লাগাতে না পারেন তাহলে এই মুহুর্তে আমাকে খুলে দিন।আমি চক্ষু হাসপাতালে দান করে আসবো।
সানভি হতভম্ব হয়ে গেলো। এই অফিসে কেউ তার সাথে এভাবে কথা বলার সাহস পায় না। এই টুকু মেয়ে তাকে এভাবে ধমকাচ্ছে!
-- তোমার সাহস দেখে আমি অবাক হয়ে যাচ্ছি মেয়ে।তুমি জানো তুমি কার সাথে কথা বলছো? এই পেরেন্টস গুলো আজকাল দায়িত্ব জ্ঞানহীন হয়ে গেছে।বাচ্চা কিন্ডারগার্টেন থেকে বেরিয়ে এখানে চলে এসেছে তাদের ধ্যান নেই। (একজন গার্ড কে ডেকে) একে এখুনি যে স্কুল থেকে এসেছে সেখানে নামিয়ে দিয়ে এসো।
মেয়েটা রাগে লাল হয়ে গেলো। দাতে দাত চেপে ওই গার্ড কে বললো,
-- হ্যা।সাথে একেও কবরস্থানে ছেড়ে আসুন।কবর থেকে পালিয়ে এসেছে মনে হচ্ছে। আর ভুল করে চোখ দুটো ওখানেই রেখে এসেছে।তাই বুড়ো দাদু একজন অনার্স পাশ করা মেয়ে কে বাচ্চা ভাবছে।
-- চুপ করো বেয়াদব মেয়ে।অভদ্রতার ও একটা ভদ্রতা থাকা দরকার। অসভ্যের মতো চিৎকার করছো কেন? এই অফিসে তোমাকে ঢুকতে দিয়েছে কে?এই একে এখুনি এখান থেকে বের করো।
অফিসের সবাই অবাক হয়ে ওদের ঝগড়া দেখছে।চিৎকার চেচামেচি শুনে আশমিন ও বেরিয়ে এসেছে।সানভি কে এভাবে ঝগড়া করতে দেখে সবার মতো সে ও অবাক হয়ে গেছে।
-- এখানে কি হচ্ছে সান?
আশমিনের কথা শুনে সানভি চুপ করে গেলো। মেয়েটা কাদো কাদো চেহারা করে বললো,
-- আমি ইন্টারভিউর জন্য এসেছি স্যার।এই লোকটার সাথে ধাক্কা খাওয়ায় সে আমার জুতা কেটে দিয়েছে। আবার আমাকে বকাবকি ও করছে।
আশমিন মুচকি হাসলো। শান্ত গলায় জিজ্ঞেস করলো,
-- তোমার নাম কি?
-- লুবানা জান্নাত।
-- তোমার চাকরি হয়ে গেছে লুবানা।আজ থেকেই জয়েন করবে।ওকে কাজ বুঝিয়ে আরএস কোম্পানি তে পাঠিয়ে দাও।
আশমিন চলে যেতেই সবাই নিজের কাজে মন দিলো। সানভি ভোতা মুখ করে তাকিয়ে আছে লুবানার দিকে।লুবানা বিশ্বজয় করা হাসি দিল। সানভির দিকে তাকিয়ে ভাব নিয়ে বললো,
-- চলুন দাদু।এভাবে দাঁড়িয়ে থাকলে আপনার নাট বল্টুতে জং ধরে যাবে।আমাকে আমার কাজ বুঝিয়ে দিয়ে না হয় কবরে চলে যাবেন।আপনার জন্য বাইরের পরিবেশ উপযোগী না।
সানভি কটমট করে তাকিয়ে হনহন করে চলে গেলো। লুবানা ওর পিছু যেতে যেতে গা জ্বালানি হাসি দিতে লাগলো।
...........................................
𝐓𝐎 𝐁𝐄 𝐂𝐎𝐍𝐓𝐈𝐍𝐔𝐄𝐃
***Download NovelToon to enjoy a better reading experience!***
Updated 7 Episodes
Comments