◼ Language :- Bengali 💛
ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের এক ছোট শহর রানাঘাট। এখন মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ হয়ে যাওয়ায় এক সন্ধ্যায় ছয়জন বন্ধু— জিয়া, পবিত্র, সৌরভ, লাবনী, অঙ্কিতা আর বর্ষা—গিয়েছিল রানাঘাটের একটি বড়ো স্টেডিয়ামে ‘ধূমকেতু’ মুভি দেখতে| শোটা শেষ হয়েছে বিকাল চারটার নাগাদ। তারা সকলে হেসে হেসে মজা করতে করতে স্টেডিয়াম থেকে বার হচ্ছিল, রাস্তা দিয়ে চলার সময় জিয়ার চোখে পড়ল এক বিশাল বড়ো লাইব্রেরি। সেই লাইব্রেরির উপর ঝুলছে একটি বড়ো বোর্ড, তাতে লেখা: রানাঘাট পাবলিক লাইব্রেরি - ১৯০২।
জিয়া দাঁড়িয়ে পড়ল | “এতো পুড়াতন লাইব্রেরি কিন্তু এখোনো এতো ভালো” কথাটি নিজের মনে ভাবলো জিয়া। “হয়তো লাইব্রেরিটা rebuilt করা হয়েছে” যেন জিয়ার মনের কথাটি বুঝতে পেড়ে উত্তরটি দিলো আঙ্কিতা | পবিত্র বলল, “যদি একটু ঘুরে দেখা যায়?” জিয়া মাথা নাড়তেই সবাই রাজি হয়ে গেল |
“পরীক্ষা শেষে বিদ্যাসাগরের নাত্নি হওয়ার ইচ্ছা হয়েছে সবকয়টার” সৌরভ একটু হেসে বলল | “ওই তুই চুপ কর” লাবনী সৌরভ কে উদ্দেশ্য করে কথাটি বলিল | লাবনীর দিকে আঙুল দেখিয়ে সৌরভ বলল “ওই আমি তোকে কিছু বলছি, তুই আগে আগে কথা বলছিস, তোর মাথায় সমস্যা আছে |” “ হ্যাঁ ভালো আমার মাথায় সমস্যা আছে, তুই জানিস না আমার মাথায় সমস্যা, অঙ্কিতা ও জানেনা আমার মাথায় সমস্যা রয়েছে” সৌরভ কে কথাটি বলল লাবনী | “বাদদে তো ওর কথা, ও ওই রকম বকে” সৌরভকে উদ্দেশ্য করে লাবনী কে বলল অঙ্কিতা কথাটি |
“ তোরা কি যাবি লাইব্রেরির ভিতর?, গেলে এখনই চল না হলে পরে দেরি হয়ে যাবে।” সকলকে উদ্দেশ্য করে বর্ষা কথাটি বলল | “ আরে হ্যাঁ যাবো তো, লাবনী চল ও না গেলে না যাক।” আবার সৌরভকে উদ্দেশ্য করে লাবনীকে বলল অঙ্কিতা। পিছন থেকে সৌরভ বলল “ওই আমি বলেছি আমি যাব না তোর এত বেশি বুঝিস কেন |” “বেশি কথা না বলে চল” পবিত্র সৌরভ কে বলল | “ আরে এ একটু বেশি বোঝে” লাবনীর দিকে আঙ্গুল দেখিয়ে পবিত্র কে বলল সৌরভ | “আরে ওর কথায় কান দিস না যা বলছে বলুক” লাবনীর কানের কাছে এসে ফিসফিস করে কথাটি বলল অঙ্কিতা |
সকলে লাইব্রেরির ভিতরে ঢুকলো, ভেতরে ঢুকে দেখে দুই তলা এবং অনেক বড়ো লাইব্রেরিটা, লাইব্রেরির ভিতরে প্রচুর পরিমাণে মানুষজন।
পবিত্র একটু আস্তে বলল “এখানে সবাই কত চুপচাপ এমন মনে হচ্ছে যেন কেউ নেই |” “পাগল এক নাম্বারের, লাইব্রেরির ভিতরে সকলে চুপচাপি থাকে কেউ কথা বলে না, আর তুইও আরো একটু আস্তে কথা বল।” পবিত্র কে কথাটি বলল লাবনী | “সরি ম্যাডাম আমাকে মাফ করে দাও আমি তো জানতাম না এখানে আরও আস্তে কথা বলতে হয়। আর সবাই চুপচাপ থাকে লাইব্রেরির ভিতর” মাথাটি নিচু করে কথাটি বলল পবিত্র লাবনীকে | লাবনী একটু হেসে উত্তর দিল “হ্যাঁ ঠিক আছে ঠিক আছে হয়েছে হয়েছে আর মাথা নিচু করতে হবে না |”
তারা সকলে সোজা উঠে গেল দ্বিতীয় তলায়। সবাই মিলে গল্পের বই ঘাঁটছিল, আর জিয়া এগিয়ে গেল এক কর্নারের বুক শেলফের দিকে।
সেখানে একটা বাদামি বঙের ডায়েরি চোখে পড়ল জিয়ার, যার ওপর সোনালী রং দিয়ে মোটা অক্ষরে লেখা: Madrick Family Notebook।
হাত বাড়িয়ে ডায়েরিটা তুলল জিয়া। খুলে দেখে—একেবারে ফাঁকা! একটাও লেখার কোনো কালী নেই! একটার পর একটা সাদা পৃষ্ঠা। তখনই সকলে চলে আসলো সেইখানে। “কিরে এত মনোযোগ দিয়ে কি দেখছিস?” অঙ্কিতা জিজ্ঞাসা করলো জিয়াকে। জিয়া উত্তর দিল “আরে দেখ না এখানে এই বইটা পেলাম কিন্তু বইয়ের ভিতরে কিছু লেখাই নেই” তখনই পেছন থেকে পবিত্রর গলা এল, “ ভূতের বই মনে হয়,” | “এখানে কিছু লেখাই নেই তাহলে ভূতের বই হবে কিভাবে?” একটি ভুরু উঁচু করে জিয়া কথাটি জিজ্ঞাসা করল পবিত্র কে | “ আরে নাঃ ভূতের বই মানে ভূতের গল্পের বইয়ের কথা বলছি না, মানে এটা মনে হয় কোন ভুতুড়ে বই।” উত্তর দিয়ে জিয়ার দিকে তাকালো পবিত্র | পবিত্রোর উত্তরটি শুনে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলো জিয়া তার দিকে | “কি হলো ভয় পাচ্ছিস নাকি? আমিতো এমনি বলছিলাম |” জিয়াকে তার দিকে এমন ভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে জিয়া কে উদ্দেশ্য করে কথাটি বলল পবিত্র। “ভুতে ভয় পাস তুই, আমি না” পবিত্র কে আঙ্গুল দেখিয়ে কথাটি বলল জিয়া |
“ওই এবার চল লাইব্রেরি থেকে আর দেরি করলে ট্রেন মিস হয়েযাবে।” সকলকে উদ্দেশ্য করে বর্ষা বলল কথাটি | “আরে যাচ্ছি” লাবনী বলল বর্ষাকে | “যাচ্ছি যাচ্ছি না তুই জানিস আমার মাকে কতবার বলার পর কত কষ্ট করে এসেছি” লাবনী কে বলল বর্ষা | “হ্যাঁ তা দাঁড়া, যাচ্ছি আমরা যাব না বলেছি” বর্ষাকে বলল লাবনী | “হ্যাঁ তোরা যত ইচ্ছা দেরি কর আমি বোসে রয়েছি এই খানে |” একটু রেগে কথাটি বলে পাশের একটি চেয়ারে বোসে পরলো বর্ষা | “হ্যাঁ বস!” লাবনী একটু হেসে বর্ষাকে বলল | “এই না বর্ষা ঠিকই বলছে এখন বার না হলে হইতো ট্রেনটা সত্যি সত্যি মিস হয়ে যাবে” অঙ্কিতা বলল | “দেখলি আমি বললাম চল” বর্ষা চেয়ার থেকে উঠে বলল | “হ্যাঁ চল চল চল চল” সৌরভ বললো | “জিয়া এবার চল” পবিত্র বলল |
জিয়া ডায়েরিটা বুক সেলফের উপর রেখে সবাইকে অনুসরণ করে বাইরে বের হয়ে গেল। তারা একটা ট্যাক্সি ধরে স্টেশনে চলে গেল। ট্রেনে অনেক হাসি, ঠাট্টা, সৌরভের টিপ্পনি, লাবনীর বিরক্ত মুখ—সব মিলিয়ে চেনা বন্ধুত্বের খুনসুটি।
“তোর আঙ্গুলের এই জায়গায় কিভাবে কেটে গেল?” অঙ্কিতা জিয়াকে জিজ্ঞাসা করল | অঙ্কিতার কথাটি শুনে জিয়া তার বাম হাতের তার্জনী আঙ্গুলের দিকে তাকালো ছোট্ট একটা কাটার দাগ কিন্তু রক্ত বার হচ্ছে না সেখান থেকে। “জানিনা, লাইব্রেরিতে ঢোকার সময় তো ঠিকই ছিল হয়তো লাইব্রেরির ভেতর কিছুতে একটাই কেটে গেছে।” জিয়া বলল |
রাত সাড়ে নটার সময় সকলে বাড়ি পৌঁছালো। ক্লান্ত শরীরে খাওয়া দাওয়া করে জিয়া ব্যাগ খুলে ফোন আর মানিব্যাগ বার করছিল, তখন হঠাৎ কিছু একটা দেখি জিয়া অনেক ভয় পেয়ে যায়! Madrick Family Notebook! জিয়ার ব্যাগের ভিতর | বইটিকে তার ব্যাগের ভিতর দেখে জিয়ার পুরো গা ঠান্ডা হয়ে যায়। “আমি তো বই বইটা বুকশেলফে রেখে এসেছিলাম! কিন্তু এখন এটা আমার ব্যাগে?”
হাত কাঁপতে লাগল। বুক ধকধক করছে। জিয়া ধীরে ধীরে ডায়েরিটা টেবিলে রাখল।
ঠিক তখনই দরজায় ধাক্কা দেওয়ার শব্দ এলো “জিয়া?”, “হ্যাঁ.. হ্যাঁ আম্মু” জিয়া উত্তর দিল | “অনেক রাত হয়েছে, এবার ঘুমিয়ে পড়” জিয়ার আম্মু জিয়াকে বলল | “হ্যাঁ আম্মু এইতো, ঘুমাচ্ছি” এটি বলে জিয়া তার ঘরের আলো বন্ধ করে শুয়ে পড়লো|
Thanks for reading 💖
Download NovelToon APP on App Store and Google Play