NovelToon NovelToon

Novel [Collected]

List of Stories...

• Every character, which is portrayed in this story, is fictional. None of the pictures are mine, credit goes to the respective real owners.

• Do not yi any character or incident seriously. Everything is imaginative. Every story is created just for entertainment. Everything shown in the story is not related to the world.

• Story is 20+, be careful. Some pictures might not be suitable for kids.

• If you don't like the story, skip it but don't spread negativity.

"A reader lives a thousand lives before he dies, but a writer can create a thousand lives before he dies."

...AUTHOR• Every character, which is portrayed in this story, is fictional. None of the pictures are mine, credit goes to the respective real owners.

• Do not yi any character or incident seriously. Everything is imaginative. Every story is created just for entertainment. Everything shown in the story is not related to the world.

• Story is 20+, be careful. Some pictures might not be suitable for kids.

• If you don't like the story, skip it but don't spread negativity.

"A reader lives a thousand lives before he dies, but a writer can create a thousand lives before he dies."

...AUTHOR• Every character, which is portrayed in this story, is fictional. None of the pictures are mine, credit goes to the respective real owners.

• Do not take any character or incident seriously. Everything is imaginative. Every story is created just for entertainment. Everything shown in the story is not related to the world.

• Story is 20+, be careful. Some pictures might not be suitable for kids.

• If you don't like the story, skip it but don't spread negativity.

"A reader lives a thousand lives before he dies, but a writer can create a thousand lives before he dies."

...AUTHOR• Every character, which is portrayed in this story, is fictional. None of the pictures are mine, credit goes to the respective real owners.

• Do not take any character or incident seriously. Everything is imaginative. Every story is created just for entertainment. Everything shown in the story is not related to the world.

• Story is 20+, be careful. Some pictures might not be suitable for kids.

• If you don't like the story, skip it but don't spread negativity.

"A reader lives a thousand lives before he dies, but a writer can create a thousand lives before he dies."

...AUTHOR• Every character, which is portrayed in this story, is fictional. None of the pictures are mine, credit goes to the respective real owners.

• Do not take any character or incident seriously. Everything is imaginative. Every story is created just for entertainment. Everything shown in the story is not related to the world.

• Story is 20+, be careful. Some pictures might not be suitable for kids.

• If you don't like the story, skip it but don't spread negativity.

"A reader lives a thousand lives before he dies, but a writer can create a thousand lives before he dies."

...AUTHOR• Every character, which is portrayed in this story, is fictional. None of the pictures are mine, credit goes to the respective real owners.

• Do not take any character or incident seriously. Everything is imaginative. Every story is created just for entertainment. Everything shown in the story is not related to the world.

• Story is 20+, be careful. Some pictures might not be suitable for kids.

• If you don't like the story, skip it but don't spread negativity.

"A reader lives a thousand lives before he dies, but a writer can create a thousand lives before he dies."

...AUTHOR

• Every character, which is portrayed in this story, is fictional. None of the pictures are mine, credit goes to the respective real owners.

• Do not take any character or incident seriously. Everything is imaginative. Every story is created just for entertainment. Everything shown in the story is not related to the world.

• Story is 20+, be careful. Some pictures might not be suitable for kids.

• If you don't like the story, skip it but don't spread negativity.

"A reader lives a thousand lives before he dies, but a writer can create a thousand lives before he dies."

...AUTHOR• Every character, which is portrayed in this story, is fictional. None of the pictures are mine, credit goes to the respective real owners.

• Do not take any character or incident seriously. Everything is imaginative. Every story is created just for entertainment. Everything shown in the story is not related to the world.

• Story is 20+, be careful. Some pictures might not be suitable for kids.

• If you don't like the story, skip it but don't spread negativity.

"A reader lives a thousand lives before he dies, but a writer can create a thousand lives before he dies."

...AUTHOR• Every character, which is portrayed in this story, is fictional. None of the pictures are mine, credit goes to the respective real owners.

• Do not take any character or incident seriously. Everything is imaginative. Every story is created just for entertainment. Everything shown in the story is not related to the world.

• Story is 20+, be careful. Some pictures might not be suitable for kids.

• If you don't like the story, skip it but don't spread negativity.

"A reader lives a thousand lives before he dies, but a writer can create a thousand lives before he dies."

...AUTHOR• Every character, which is portrayed in this story, is fictional. None of the pictures are mine, credit goes to the respective real owners.

• Do not take any character or incident seriously. Everything is imaginative. Every story is created just for entertainment. Everything shown in the story is not related to the world.

• Story is 20+, be careful. Some pictures might not be suitable for kids.

• If you don't like the story, skip it but don't spread negativity.

"A reader lives a thousand lives before he dies, but a writer can create a thousand lives before he dies."

...AUTHOR• Every character, which is portrayed in this story, is fictional. None of the pictures are mine, credit goes to the respective real owners.

• Do not take any character or incident seriously. Everything is imaginative. Every story is created just for entertainment. Everything shown in the story is not related to the world.

• Story is 20+, be careful. Some pictures might not be suitable for kids.

• If you don't like the story, skip it but don't spread negativity.

"A reader lives a thousand lives before he dies, but a writer can create a thousand lives before he dies."

...AUTHOR

সঙ্গিন প্রনয়াসক্তি [Part.1]

𝐓𝐇𝐄 𝐈𝐍𝐃𝐄𝐗

#পর্বঃ০১

ভালোবাসা একটি চার অক্ষরের বিশাল অর্থবহ তাজা অনুভূতির রাজ্য। এ অনূভুতি কে কখনো কখনো বিশ্লেষণ করে হাজারটা রূপ দান করা যায়।প্রেম, প্রনয়, মোহ,ঘোর,আসক্তি আরও কত কিই,আবার কারও কারও কাছে এটি "সঙ্গিন প্রনয়াসক্তি" বা(unhealthy obsession)।

ভালোবাসার বিশ্লেষণ যেমন সবার কাছে এক'নয়, তেমনই সবার ভালোবাসার ধরনটাও ঠিক এক'রকম নয়।কিছু মানুষের ভালোবাসা সদ্য ফোটা ভৃঙ্গরাজ পুষ্পের ন্যায় আকর্ষনীয় আর সুরভীত।তাদের হৃদয়ের আদ্যপান্ত মিলনে ইষার্ন্বিত হয়ে কত প্রশংসাই না করে মানুষ। অলিতে-গলিতে বন্ধু মহল থেকে শুরু করে পাড়ার চায়ের আড্ডা পর্যন্ত তাদের নিয়ে চলে দিনভর আলোচনার বহর, কি করে তৈরি হলো এমন যুগল?? এতো রাজযোটক।কোনো দিন ভাঙবে না।আরও কত কিই!!!!

অন্যদিকে এই পুষ্পরেণুর মতো ভালোবাসার বিপরীতে যে শুধুই ঘৃনার বসবাস তেমনটা নয়, ওই যে বললাম ভালোবাসারও ধরন হয়। কেউ কেউ এসব গঁদবাধা ভালোবাসার নিয়মে গা ভাসাতে পারেনা কোনো কালেই, খালি মুখে ভালোবাসি কথাটা উচ্চারন করাটাও যেন হিমালয় জয় করার মতো এডভেঞ্চারাস আর থ্রিলিং তাদের কাছে, তাই সেসব কিন্তু ওয়ালা মানুষগুলোর ভালোবাসা প্রকাশের ধরনটাও হয় কিছুটা ভিন্নরকম, সেখানে অনুভূতি প্রকাশের থেকে আদায়করার স্পৃহাটাই বেশি কাজ করে।সেই আদায় করার ধরনটা যেমনই হোক,জোর করে কিংবা তার থেকেও কোন কুৎসিত পন্থায় (এট এ্যনি কষ্ট)।

কারও কাছে সে ভালোবাসা বিষাক্ত তো কারও কাছে অসুস্থ। কারও মতে এ আবার কেমন ভালোবাসা, এটা কোনো কালেই ভালোবাসা নয়,নিছকই আসক্তি, ভয়ানক আসক্তি। আবার ইঁচড়েপাকা, ডার্ক রোম্যান্স দেখে দেখে ফরেইন কালচারে বেড়ে ওঠা অষ্টাদশীদের কাছে ইটস কল্ড ডেঞ্জারাস লাভ।

এতো এতো বিশ্লেষণ আর চর্চার বাইরে গিয়ে আরও একধরণের অনুভূতি রয়েছে, এটা অনেকটা একপাক্ষিক ভালোবাসা বা অনসাইড লাভ। হৃদয়ের সুপ্ত অনুভূতির কথা তাকে না জানিয়েও কি সুন্দর দিনরাত অতিবাহিত করে দেওয়া যায় তাকে কল্পনায় ভালোবেসে। একটিবার চোখের দেখা দেখেও নরম হৃদয়টা পুলকিত হয়ে ওঠে মূহুর্তেই। ভালোবাসা টইটুম্বুর হয়, ভরে ওঠে হৃদয়ের কানায় কানায়,ভার্সিটির ক্যাম্পাস থেকে শুরু করে বই আস্তরিত ফাঁকা লাইব্রেরীর এককোনের ছোট্ট টেবিলটায় সেই শ্যাম পুরুষকে দেখার জন্য কত যায়গাতেই না ছুটে বেড়ায় বেপরোয়া সর্বনাশা মনটা, সেই সাথে পাল্লা দিয়ে ছোটে মনের অধিকারী র'ক্তমাংসের মানুষটাও।আপন মনকে অন্যজনের নিয়ন্ত্রনে ছেড়ে দিলে এই হয়। ক্যাম্পাসে এসে তাকে এক নজর না দেখা অবধি অশান্ত মনটা দমার নামই নেয়না। এই যেমন এই মূহুর্তটা মনটা কেমন ঝিমিয়ে যাওয়া ম'রা বিকেলের ন্যায় শান্ত হয়ে আছে। উচ্ছ্বাস আকাংঙ্খা সবকিছু দমে গিয়ে তৃষ্ণার্থ চোখ জোড়া সবচেয়ে পছন্দের শ্যাম পুরুষটিকে দেখতে ব্যাস্ত। সেকেন্ড, মিনিট,ঘন্টা অতিবাহিত হয়,তবুও তাকে দেখে দেখে চোখ দুটো ক্লান্ত হয়না, কি আছে এই শ্যাম পুরুষের মাঝে?? আহামরি তো কিছু নয়, হলিউড কিংবা বলিউড হিরোদের মতো পেশীবহুল গৌড় বর্ন ও নয়।ছিমছাম গড়নের শ্যাম পুরুষ সে, বেশ লম্বা চওড়া মানুষটা আর সবচেয়ে সুন্দর তার হাসি, হাসির সাথে সাথে কি সুন্দর ঠেউ খেলে যায় টোল পরা গাল দুটোতে।

ফাঁকা লাইব্রেরীতে সবচেয়ে কর্নারের টেবিলটায় ঠিক মুখো মুখি হয়ে বসে আছে নিখিল ভাই। এটা বোধ হয় নিখিল ভাইয়ের পছন্দের যায়গা ওই জন্যই তো প্রতিদিন এসে এখানটায় বসে বই পড়ে। পড়বে নাই'বা কেন ভার্সিটির তুখোর ছাত্র নিখিল ভাই,ছাত্র আন্দোলন থেকে শুরু করে সমাবেশ কিংবা নির্বাচন সব কিছুতেই নিখিল ভাইয়ের অগ্রাধিকার, সেই যের ধরে ভার্সিটির ভিপিও তিনিই।এক নামে সবাই চেনে,তবে পড়াশোনার ক্ষেত্রে একটুও কম্প্রোমাইজ করেননা তিনি, এই যে এখনো বই পড়ছে, কানে হেডফোন গুঁজে বইয়ে মুখ ডুবিয়ে পাতার পর পাতা উল্টে যাচ্ছে , এই সিনটা দেখতেও মারাত্মক লাগছে, লাগবেই তো এতো কাছ থেকে নিখিল ভাইকে দেখার সুযোগ হয়নি কোনো কালেই। মনে হচ্ছে সময়টা এখানেই আটকে যাক।আজ লাইব্রেরিটাও বেশ ফাঁকা, সিনিয়র রা তেমন কেউই নেই।এই সুযোগে নিখিল ভাইয়ের সাথে দু'একটা কনভারসেশন এগোলে ক্ষতি কি??

--নিখিল ভাই,এই যে নিখিল ভাই.......লাজুক হেসে টেবিলে টক টক করে সামান্য টোকা দিয়ে ডাকছে অরু, তবুও নিখিল ভাইয়ের হেলদোল নেই কোনো। একবার তাকালো না পর্যন্ত আশ্চর্য এভাবে উপেক্ষা করার কি হলো?অরুর বুঝি খারাপ লাগেনা? লজ্জা আর আত্মসম্মানের মাথা খেয়ে অরু আবারও ডাকলো তাকে,কিন্তু এবারও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে, নিখিল ভাই কোনোরূপ সারা দিলোনা বরং ওর দিকে না তাকিয়েই বাম হাত দিয়ে একটা ছোট্ট সাইজের এলার্ম ঘড়ি এগিয়ে দিলো ওকে, যেটা এই মূহুর্তে বাজখাঁই আওয়াজ তুলে কানের বারোটা বাজিয়ে দিচ্ছে।

--ইশ কি বিরক্তি কর, এটা কেন দিলেন নিখিল ভাই??

এবারও নিখিল ভাই নিশ্চুপ, বরং এলার্মের বিরক্তিকর শব্দটা আরও দিগুণ জোরে বাজিয়ে দিলেন তিনি, এলার্মটা বিরক্তির আওয়াজ তুলে কর্নকূহর ছাপিয়ে মস্তিষ্কে এসে লাগছে এবার, কানের পর্দা ছিড়ে যাওয়ার উপক্রম। নাহ আর নিতে পারলো না অরু,বিরক্তির চড়ম পর্যায়ে গিয়ে শব্দ করে চেঁচিয়ে উঠলো,

-- এটা বন্ধ করুন নিখিল ভাই উফফ আর সহ্য হচ্ছে নাআআআ.. একপর্যায়ে গায়ের কম্ফোর্টারটা ছুড়ে ফেলে হন্তদন্ত হয়ে উঠে বসলো অরু।

ঘুমের ঘোর এখনো কাটেনি.. চারিদিকের পরিবেশ পরিস্থিতি বুঝে উঠতে একটু সময় লেগে গেলো ওর,যখন বুঝে উঠলো তখন প্রতিদিনের মতো প্যালেসের ন্যায় মাস্টার বেডরুমের কিং সাইজ বিছানায় নিজেকে আবিস্কার করলো অরু। ঠোঁট কামড়ে একটা চাঁপা নিঃশ্বাস ছেড়ে ধীরে সুস্থে সময় নিয়ে নিজের হাটু অবধি লম্বা সিল্কি চুল গুলোকে মেসি বান করে বিছানা ছাড়লো ও, তারপর সবার আগে বন্ধ করলো বিরক্তিকর অ্যালার্মটাকে।

একে একে পুরাতন জানালার ভারী পর্দা গুলো সরিয়ে রুমটাকে আলোকিত করে বসে পরলো ল্যাপটপ নিয়ে ,,তারপর সেই বিরক্তিকর কাজ মেইল পাঠানো।

গত একবছর ধরে এটা ওর রুটিনে রূপান্তরিত হয়েছে, আপা যে কেন বুঝতে চায়না কে জানে?আবারও ভেতরের আহত বাতাসকে নিঃশ্বাসের মাধ্যমে নিংড়ে বের করলো অরু।

মেইল পাঠানো শেষ হলে,শক্ত কাঠের চেয়ারটায় গা এলিয়ে দিয়ে উদাসীন চোখে বাইরে চাইলো অরু,ওর

পড়নে কোন দামি পাজামা সেট নয়, বরং সিম্পল প্লাজো আর একটা ওভারসাইজ টিশার্ট, সাধারন বাঙালি মেয়েরা যা পরে ঘুমায় আর কি, এই রুমের বিশাল জানালার কারুকাজ করা লৌহ গাট গলিয়ে যতদূর চোখ যায় শুধু বাগানবিলাশের ছড়াছড়ি, এখন বসন্ত চলছে তাই একটু বেশিই সুন্দর লাগছে বাড়ির ফ্রন্ট ইয়ার্ডটা।

পুরান ঢাকায় যতগুলো প্রাচীন আর নাম করা বাড়ি আছে তার মধ্যে এই বাড়িটা অন্যতম। লোকমুখে শোনা যায় এ বাড়ির পূর্ব পুরুষরা নায়েব -গোমস্তা ছিলেন। পরবর্তী প্রজন্মে জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হয়ে গেলেও এদের বংশপরম্পরায় নেতৃত্ব আর আভিজাত্য ভাবটা রয়েই যায়, তাইতো যুগের পর যুগ, প্রজন্মের পর প্রজন্ম সবাই রাজনৈতিক কর্নধার হয়ে নাম লিখিয়ে এসেছেন। এই বাড়িটা ঠিক কোন প্রজন্মের জানা নেই অরুর তবে বাড়িটা বেশ পুরোনো। প্রায় দশ বিঘা জমি নিয়ে তৈরি এ বাড়িটাকে ছোট খাটো ড্রিম হলিডে বললে মন্দ কিছু হবেনা।

মহলের সদর দরজা থেকে গেইট অবধি যেতে মিনিট দশেক টাইম লেগে যায়, ধীরে সুস্থে হাটলে তার চেয়েও বেশি। তারপর চোখে পরে অযত্নে ইতি-উতি বেড়ে ওঠা বাগান বিলাসে ঘেড়া দানবাকৃতির বিশাল গেইট। তাতে মার্বেল পাথর দিয়ে গুটিগুটি অক্ষরে লেখা

" ক্রীতিক কুঞ্জ "।

বছর ত্রিশেক আগেও বাড়ির নাম কিংবা গেইটের চেহারায় ভিন্নতা ছিল, কিন্তু ত্রিশ বছর আগে এ বাড়ির ছোট কর্তার জন্মের পরই তার দাদাসাহেব এক মাত্র আদরের নাতির নামে বাড়ির নাম পরিবর্তন করেন। ইট পাথর আর লোহায় ঘেরা গেইটকে সর্বেসর্বা বিদায় জানিয়ে মার্বেল পাথরের গেইট নির্মান করেন সে'ই, বাড়ির নাম পরিবর্তন করে রাখেন "ক্রীতিক কুঞ্জ"।

সময় পাল্টেছে, সময়ের তালে তালে বদলে গেছে কতৃত্ব আর আভিজাত্যে মোড়ানো মানুষ গুলোওও। একে একে খালি হয়েছে ক্রীতিক কুঞ্জ। তাদের দাম্ভিকতা কিংবা রাজনৈতিক অবদান এখন কেবলই লোক মুখের বুলি মাত্র। এতো কিছু বাদ দিলেও রিয়েলস্টেড বিজনেস নিয়ে এ পরিবার এগিয়েছে অনেক দূরে..... দেশ ছাপিয়ে বিদেশে সগৌরবে দাপিয়ে বেড়ায় এদের পারিবারিক বিজনেস। সবাই এক নামে চেনে, দেশিয় পন্যের থার্টি পাসেন্ট জোগান এদের পারিবারিক ব্যাবসা থেকেই আসে,শুধু উচ্চ পদস্থ না,সয়ং সরকারওও আজকাল মুখে লাগাম দিয়ে কথা বলে এদের সাথে।

--আনফরচুনেটলি এই পরিবারের শুধু টাকাই আছে পরিবার বলে কিছু নেই, আপসোসের সুরে বলে ওঠে অরু। তখনই নিচ তলা থেকে অনুর রাশভারী কন্ঠস্বর শোনা গেলো,

--অরু এই অরুর বাচ্চা খেতে নাম, আমি কি এখন পালকি নিয়ে আসবো? হসপিটালে যেতে দেরি হলে তোর খবর আছে।

শুনেই বোঝা যাচ্ছে বেজায় চটে আছে সে।

অরু দ্রুত চেয়ার ছেড়ে দেওয়াল ঘড়িতে চোখ রাখলো, নয়টা বেজে পয়ত্রিশ,

-- এই রে..হাবিজাবি ভাবতে ভাবতে সময় শেষ করে ফেলেছি, তারউপর আজ আবার ভার্সিটিতে যাওয়ার প্লান আছে, নিচে গেলে আপা নির্ঘাত কথা শুনিয়ে পেট ভরিয়ে ফেলবে... এখন কি করি?

*****************************************

বিশাল হলরুমের এক কোনে রান্নাঘর, তার পাশেই ছোট একটা ডাইনিং, চারজন মতো বসার যায়গা হবে।সেখানেই খাবার সাজাচ্ছে অরুর বড় আপা অনু। এ বাড়ির কোনো কিছুই না পারতে ব্যাবহার করেনা অরুরা। যতটুকু না করলেই নয়,ঠিক ততটুকুতেই ওরা অধিকার খাটায়।

অনু খাবার সার্ভ করতে করতেই রেডি হয়ে নিচে নামে অরু, পরনে সেটে আছে টপস আর স্কার্ট, হাতে পুঁথি দিয়ে তৈরি বানজারা ব্যাগ।

অরু কে দেখেই মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো অনুর। অরুর পরিপাঠি রূপ দেখে তেতিয়ে উঠলো মস্তিষ্কটা, রাগের বহিঃপ্রকাশ ঘটলো অরু চেয়ারে বসার সঙ্গে সঙ্গে।

-- এতোক্ষণে আসার সময় হলো তোর? রুমে দরজা আটকে কি করিস এতো? তোর জন্য আমার হসপিটালে যেতে কতটা দেরি হয়ে গেলো দেখলি??

--- অরু রুটি আর ডিমের রোলে কামড় বসাতে বসাতে বললো, রেডি হচ্ছিলাম আপা।

-- প্রতিদিনই তোর রেডি হতে লেট হয়? আর রেডি কেন হয়েছিস? কতবার বলেছি ভার্সিটিতে যাওয়ার দরকার নেই, আমি একা এতো কিছু সামলাতে পারছি না হাঁপিয়ে উঠেছি আমি।নিঃশ্বাসের পাল্লা ভারী হয় অনুর।

অনুর হাজারটা অভিযোগেও অরু নিশ্চুপ। শুধু ছোট্ট করে প্রশ্ন করে, মা এখন কেমন আছে আপা?

অনু আবারও ঝাঁঝ নিয়ে বলে,

-- সেটা নিজে গিয়েই বরং দেখে আয়।

-- আমার দেখতে ভালো লাগেনা আপা, বড্ড কষ্ট হয় মাকে এভাবে নিথর হয়ে শুয়ে থাকতে দেখতে, হসপিটালের ডেটল আর হেক্সাসল এর গন্ধে দম বন্ধ হয়ে আসে আমার।শ্বাস নিতে পারিনা আমি।

অরুর কথায় অনু আড়ালে নিঃশ্বাস ছাড়ে, মায়ের অসুখের পর থেকে ওর ডান পিঠে দুরন্ত বোনটা নিজেকে অনেক সামলেছে,যে মেয়ে সারাদিন হুরোহুরি আর বান্ধবীদের নিয়ে মেতে থাকতো সেই মেয়ে ঘরকুনো হয়েছে, হাজারটা অহেতুক বায়না ধরা মেয়েটা প্রয়োজনের বাইরে গিয়ে এখন আর একটা কথাও বলেনা। অরুর মতো মুক্ত বাতাসে ডানাঝাপটানো মেয়ের জন্য এই পরিবর্তন অনেক কিছু, এতো অল্প বয়সে আর কতইবা সামলাবে নিজেকে ও?

অরুর বয়স কম সবে উনিশে পা দিয়েছে, তাইতো অনু নিজেই ওকে এসব হসপিটালের ঝুটঝামেলা থেকে দুরে সরিয়ে রাখে, আবার নিয়তির সাথে পেরে না উঠে নিজেই বিরক্ত হয়ে যায় বারংবার, সে বিরক্তি নিজের মধ্যে আটকে রাখা কষ্টকর হয়ে ওঠে ওর জন্য,গুমরে মরা অশান্ত হৃদয়টাকে একটু হালকা করার দায়ে মাঝেমধ্যেই বহিঃপ্রকাশ ঘটে চড়াও মেজাজের, যার ভুক্তভোগী হয় ওর ছোট্ট বোনটা।

অনু নিজেকে বহুবার বুঝিয়েছে আর যাই হোক ছোট বোনের ওপর রাগ ঝাড়বে না, কিন্তু দিন শেষে, মায়ের অসুখ, বাড়ি হসপিটাল-হসপিটাল বাড়ি এই করতে করতে নিজের খেইর নিজেই হারিয়েছে।

--আপা আমি গেলাম, আগামী একসপ্তাহ কোথাও যাবোনা, রান্না বান্না সব আমি করবো তবুও প্লিজ রাগ করিস না তুই।

-- এই শোন, অনুর অযাচিত ডাকে পেছনে ঘুরলো অরু।

--- ইমেইল...

অনু কি বলবে সেটা বোধ হয় অরু জানতো, তাই এগিয়ে এসে বললো, ইমেইল পাঠিয়ে দিয়েছি।

-- কোন রিপ্লে এসেছে??

অরু তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলে,

--- আপা তুইও না, গত এক বছর ধরে একটানা ইমেইল পাঠানোর পরেও যেখান থেকে একটা রিপ্লে আসেনি,হুট করেই সেখান থেকে রিপ্লে চলে আসবে? এতোটাও বেশি আসা করিস না।

কথা শেষ করে গট গট পা ফেলে প্যালেসের মতো বিশাল মহল ছেড়ে বেরিয়ে যায় অরু।

অরু চলে যাওয়ার পরে.. অনু আনমনে বলে, আমার বিশ্বাস অরু কোনো একদিন ঠিক রিপ্লে আসবে, আর আমরা মাকে সুচিকিৎসার জন্য বিদেশেও নিয়ে যাবো। যেদিন মা আবারও সুস্থ হয়ে ফিরবে, তোর আর আমার দুঃখ সেদিনই ঘুচবে।

*****************************************

জটলা পাঁকানো চুলের মতো পুরান ঢাকার রাস্তা গুলোতে ইলেকট্রনিক তারের ছড়াছড়ি, রাস্তার দু ধারে লোহালক্কড়,হলুদ,মরিচ,শাড়ী, বিরিয়ানি আর গুড়ের পাইকারি দোকানের মরচে পড়া গন্ধ। কখনো কখনো সেই গন্ধটা নাকে উৎকট লাগে,আবার কখনো বেশ ভালো। মাথার উপর সূয্যি মামা তীর্যক আলো ছড়াচ্ছে, আজ বোধ হয় ভালোই গড়ম পরবে, দু'ধারে দোকান পাঠ ছাপিয়ে টিংটিং আওয়াজ করে জগন্নাথবিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে অটোচালিত রিকশা, তাতে চেপে বসে আছে অরু।

পুরো নাম,মেহরীন শেখ অরোরা। এই বছরই ভার্সিটিতে এডমিশন হয়েছে ওর। তবে নতুন নতুন বড় হয়ে যাওয়া, ভার্সিটির আনন্দ, কিংবা বন্ধুমহল কোনো কিছুই ছুতে পারেনি ওকে, কারন একটাই মায়ের হার্টের অসুখ। আগে তাও হেটে চলে আসতে পারতো কিন্তু গত একবছর ধরে হসপিটালের এক কামরার বেডে শুয়ে দিনাতিপাত করে ওর মা আজমেরী শেখ। মায়ের দিনরাত দেখভাল করতে হয় বলে বড় বোন মেহবীন শেখ অনন্যা ইন্টারমিডিয়েটের পরেই পড়াশোনার ইতি টেনেছে।

অরু জানে ওর বড় আপা এতো রগচটা কোনোকালেই ছিলনা, গত একবছর ধরেই এমন হুটহাট রেগে যায় আপা, আর এও জানে পরিবারের জন্য আপার কত বিষর্জন, এমনটা নয় যে অনু বয়সে অরুর থেকে খুব বড়, পিঠেপিঠি বোন ওরা দুজন,তবুও অনুর কত ত্যাগ।

তাইতো আপার রাগের মাথায় বলা সবচেয়ে তিক্ত কথাগুলোকেও গায়ে মাখেনা অরু।

অরুর উদাসীন ভাবনার ইতি টেনে রিকশা এসো পৌঁছালো গন্তব্যে।

ভার্সিটির গেটে দাঁড়িয়ে লম্বা করে শ্বাস নেয় অরু, এই একমাত্র যায়গা যেখানে এসে একটু প্রানভরে সস্থির নিঃশ্বাস নিতে পারে অরু। সেই সাথে সস্থিদায়ক মানুষটার একটিবার দেখা মিললে তো আর কথায়ই নেই।

যাকে নিয়ে ও রোজ স্বপ্ন দেখে, সুন্দর সপ্ন। অরু জানে নিখিল ভাইয়ের সাথে কমিটমেন্ট কিংবা মুখ ফুটে দুটো কথাবলার সাহস ওও ওর নেই।তারউপর নিখিল ভাই ভার্সিটির সিনিয়র, গ্রাজুয়েশন ও এবছর শেষ তার।তবুও বেহায়া মনটা মানেনা। প্রিয় মানুষের স্কেচ বোর্ডে তার মুখটাই এঁকে ফেলে বারবার।

--কবে যে নিখিল ভাই নিজে এসে বলবে, অরু শোনো, আমি ও তোমাকে পছন্দ করি,মনের রঙ তুলির ক্যানভাসে আমিও তোমাকে আঁকি।

--সেই আশায় সেগুড়ে বালি।

পেছনে নীলিমার কাঠকাঠ প্রতিউত্তর শুনে অরুর হাসিহাসি দাঁত কপাটি বন্ধ হয়ে গেলো।মুখটা এইটুকুনি করে বললো,

-- তুই আমার মনের কথা শুনলি কি করে?

-- যেই টোনে বলছিলি,আমি কেন রিকশা ওয়ালা মামারাও শুনেছে আমি শিওর।

-- আপসোস শুধু নিখিল ভাইই শুনলো না।

--- কি করে শুনবে? তুইতো তাকে দেখলেই চোরের মতো যথাতথা লুকিয়ে পরিস।

-- তা ঠিক চল ভেতরে যাই।

গেট পেরিয়ে ক্যাম্পাসে যেতে যেতে নীলিমা বলে,

-- আন্টির কি খবর??এখন কেমন আছেন?

-- একই রকম।আজকেও আপার বকুনি খেয়ে এসেছি।

নিলীমার শান্তনার বাণী বহু আগেই ফুরিয়ে গিয়েছে,ঘটে যা ছিল সব কিছু দিয়েই অরুকে বুঝিয়েছে ও তাই এখন আর বলার কিছু নেই। শান্তনা না দিয়ে হয়ে উল্টো প্রশ্ন ছুড়লো নীলিমা।

--- তোর ভাইয়ার কোম্পানি থেকে ইমেইল এসেছিল??

কথাটা বলতে একটু অসস্থি হলো নীলিমার, কারন সব ব্যাপারে মুখ খুললেও এই ব্যাপারটা সবসময়ই এরিয়ে যায় অরু, খুব বেশি হলে হুম হা করে উত্তর দেয়।

এবারও তাই হলো, এদিক ওদিক মাথা নাড়িয়ে না জবাব দিলো অরু।

নীলিমার রাগ হলো কেন যেন, যদিও ব্যাপারটা সম্পূর্ণ অরুর ব্যাক্তিগত তবুও এ কেমন ছেলে?? মায়ের খোজ নেয়না, ইভেন কোনোরকম যোগাযোগ নেই পর্যন্ত। আজকালকার যুগে ইমেইলে কেউ যোগাযোগ করে?

নীলিমা রাগ সংবরণ করতে না পেরে বলেই ফেললো, কেমন ভাই তোর মাকে এভাবে দেশে ফেলে রেখে নিজে বিদেশে পরে আছে??

অরু মেকি হাসলো, হুট করেই নীলিমার রাগের কারন ধরতে পারলো না, তবুও নরম সুরে বললো,

--হি ইজ নট মাই সিবলিং।

--- তাহলে?? স্টেপ ব্রাদার, মানে আঙ্কেলের দ্বিতীয় স্ত্রীর ছেলে তাইতো??

অরু আবারও হাসে এই মেয়ের এতো কৌতূহল কেন?

---- নাহ তেমন কিছুও নয়।

-- তাহলে কেমন ভাই তোর??

নীলিমার কথার পেছনে অরু কিছু বলতে যাবে তার আগেই ওদের মাঝে তিথি চলে আসে।

আর মি. জায়ান ক্রীতিককে নিয়ে চলমান রহস্যময় কনভারসেশনের ওখানেই ইতি ঘটে।

■■■■■■■■■■■■■■■■■■■■■■■

#পর্বঃ০২

বসন্তের সকাল,চারিদিকে মৃদুমন্দ ঝিরিঝিরি বাসন্তিক হাওয়া বইছে, কতইবা বেজেছে দশটা কি এগারোটা তবুও মাথার উপর চলছে সূর্য্যের তান্ডব নৃত্য। শীত যাবে যাবে করে এখনো যায়নি, তার আগেই সূয্যি মামা তার প্রখরতা দিয়ে ধরনী উত্তপ্ত করে দিয়েছে।

সূর্য্যের তীর্যক রশ্মিকে পিঠে পিছলে দিয়ে একপ্রকার ছুটে বটতলার ছায়ার নিচে এসে দাঁড়ালো তিথি।

ওখানে অরু আর নীলিমা ওও ছিল।

--কিরে এভাবে ছুটে এলি কেন? কিছু হয়েছে?

তারস্বরে জিজ্ঞেস করে নিলীমা।

অরু ও প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে।

অরুর ভার্সিটি জয়েন করার পরে পুরো বাংলা ডিপার্টমেন্টের মধ্যে এই দুটোই বন্ধু জুটেছে ওর, তার মধ্যে ওই ইন্ট্রোভার্ট, নীলিমা যাও মোটামুটি একটু চুপচাপ থাকে, কিন্তু তিথী মোটেই চুপচাপ স্বভাবের মেয়ে নয়, ভার্সিটির সব থেকে গড়ম খবরটা ওর কাছ থেকেই পায় অরুরা,হোক সেটা গসিপ কিংবা কোনো ইম্পর্টেন্ট নিউজ। এছাড়া ডিপার্টমেন্টের অন্য ব্যাচমেটদের সাথে অরুর মুখ চেনাচিনি আছে কিনা সন্দেহ,কিভাবেই বা থাকবে ভার্সিটি জীবন নড়বড়ে ওর,এটেনডেন্স এর জন্যও পর্যন্ত ভার্সিটি আসতে দেয়না অনু, তবুও আপার বকুনি ঝকুনি খেয়ে মাসের মধ্যে দু'একটাবার পা রাখে ভার্সিটির চত্বরে। যদিও সেটা পড়াশোনার জন্য নয়,বরং পছন্দের শ্যাম পুরুষকে একটা নজর দেখার আশায়, সবার আড়ালে তার মুখখানা হৃদমাঝারে স্ক্যান করে নিলেই শান্তি ওর।

নীলিমার কথার প্রতিউত্তরে

তিথি হাঁপাতে হাঁপাতে বললো,

-- পানি দে দোস্ত, তারপর সব বলছি।

নীলিমা ব্যাগ থেকে পানি এগিয়ে দিলে ঢকঢক করে পানি পান করে দম নেয় তিথি,

--আহ এতোক্ষণে প্রানটা ঠান্ডা হলো।

-- কি হয়েছে বললি নাতো? আবারও জিজ্ঞেস করে অরু।

তিথি এগিয়ে গিয়ে অরুর হাত ধরে বলে,

-- ওহ,হ্যা তোর কাছেই আসছিলাম অরু, কাল ভার্সিটিতে কেন এলিনা বলতো??তাহলেই তো তো সব জানতে পারতি।

-- কি হয়েছে একটু খুলে বল? তাছাড়া কেন আসিনি সেটাতো তুই জানিসই,তাহলে নতুন করে কেন প্রশ্ন করছিস তিথি?

-- কাল নিখিল ভাইদের সমাবর্তন অনুষ্ঠান ছিল নিখিল ভাই সেরা ছাত্রত্বের পুরষ্কার পেয়েছে।

নীলিমা সস্থির নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে,

-- ওহ এটাতো ভালো কথা।

--তারপর আরও একটা ঘোষণা হয়, আমি পরে সিনিয়রদের থেকে জেনেছি,

অরু সচকিত হয়ে প্রশ্ন ছুড়লো,

--কি?

--নিখিল ভাই মাস্টার্স করবে না, উনি হায়ার স্টাডিসের জন্য স্কলারশিপ পেয়েছে, খুব শীঘ্রই ইউ এস এ চলে যাবে।

অরু চমকায় না, কোনো রকম প্রতিক্রিয়াও করেনা, অসস্থির লেস মাত্র নেই ওর মুখশ্রীতে। খুশি থাকার একমাত্র কারনটা হারিয়ে যাচ্ছে ও কি আদোও ঠিক আছে?? ওর ভেতরে যে অস্থির ঝড়োহাওয়া শুরু হয়ে গেছে,মনে হচ্ছে হৃদয়টা শক্ত করে খাঁ'মচে ধরেছে কেউ, গলাটা শুকনো কাঠে পরিনত হয়েছে,তবুও থমথমে মুখে ছোট্ট করে অরু জবাব দেয়,

--ওহ

এটুকু শব্দ উচ্চারণে অরুর অ'গ্নিস্ফুলিংঙ্গ উগরে দেওয়ার মতো কষ্ট হলো। তবুও বান্ধবীদের সামনে মুখের মিথ্যে হাসিটা ঠিকই ধরে রাখলো,কারণ আর যাই হোক একপাক্ষিক ভালোবাসা কিংবা আধুনিক শব্দে বলতে গেলে ক্রাশ কে হারানোর জন্য কা'ন্নাকা'টি করে ভাসিয়ে দেওয়া কিংবা সবাইকে বলে বলে সিমপ্যাথী কুড়ানোর মতো আত্মসম্মানহীন মেয়ে অরু নয়।

এমনিতেই ওর মায়ের অসুস্থতা নিয়ে অনেকেই করুনা দেখাতে আসে, যা ওর শরীরে জ্ব'লন ধরিয়ে দেয়, অরুর করুনা মোটেই পছন্দ নয়, তবে নিজ অধিকারের ক্ষেত্রে সর্বদা সতর্ক ও। যা ওর সেটা ওরই।

কিন্তু নিখিল ভাই? সেতো তো ওর নয়, কোনো কালে ছিলোও না। ওই কেবল একতরফা ভালোবেসে গিয়েছে,নিখিল ভাইতো ওকে ছোট বোন ছাড়া কিছুই ভাবেনা, শুধু ওকে কেন ছাত্র নেতা হিসেবে সব জুনিয়র মেয়েরাই তার ছোটো বোনের সমতুল্য, অরু আলাদা করে তো কিছুই নয়।

-- ক্যাম্পাসের দিকে দেখ নিখল ভাই আসছে।

তিথির কথায় অরুর দিবাস্বপ্নে ভাটি পরে, তরিৎ গতিতে ভাবনার জগৎ থেকে বাস্তবে বেরিয়ে দেখতে পায় ক্যাম্পাস থেকে গেইটের দিকেই এগিয়ে আসছে নিখিল ভাই, কালো ডেনিমের সাথে নীল পাঞ্জাবীতে কি সুন্দর লাগছে তাকে, কাধে ঝুলে আছে ল্যাপটপের ব্যাগ,কানে হেটফোন।

সেদিকে একধ্যানে তাকিয়ে তিথি বলে,

--কি এতো গান শোনেন উনি??

কাঠফাটা রোদে উজ্জ্বল শ্যামলা চেহারাটা জলজল করছে তার, মুখে লেগে আছে সেই সুন্দর হাসিটা। অরু চোখ বন্ধ করে বলতে পারে এই ইনোসেন্ট দেখতে ছেলেটার প্রেমে পরে যাওয়া কোন মেয়ের জন্য চুটকির ব্যাপার মাত্র।

*****************************************

নিখিল ভাই ওদের সামনে আসতেই সবাই একযোগে সালাম দিলো তাকে, সিনিয়র বলে কথা। সালামের জবাব দিতে নিখিল ও একটু থামলো, সামনে না গিয়ে ওদের দিকে কয়েক কদম এগিয়ে আসলো।

নিখিল ভাই ওদের দিকে আসছে দেখে অরু নীলিমার পেছনে গিয়ে গুটিশুটি হয়ে দাড়ালো।

কেঁ'টে ফেলা ডগার ন্যায় কেমন নেতিয়ে পরেছে ওর শরীরটা।

--আরে অরোরা না??

নিখিল ভাইয়ের আকষ্মিক সম্মোধনে ধরা পরে যাওয়া চোরের ন্যায় হুরমুর করে সামনে তাকায় অরু। হ্যা সূচক মাথা ঝাঁকিয়ে বলে,

--জজি ভাইয়া।

--ভালো আছো তো? এখন আর রাস্তা পার হতে ভয় নেই তো??

কি সুন্দর অমায়িক কথার ধরন, আরও একবার হোঁচট খায় অরু।

-- নিখিল ভাই কিছু জিজ্ঞেস করছে অরু, উত্তর দে.. তিথির ধা'ক্কায় সম্মতি ফিরে পেলো অরু।

তারপর হ্যা না দুদিকেই মাথা নাড়াতে থাকে, আসলে কি করবে কি বলবে ও কিছুই ঠাহর করতে পারছে না,

ওর অবস্থা দেখে নীলিমা তিথি দুজনই অবাক যে মেয়ে কাঠকাঠ কথার জবাব দিতে ছাড়েনা সে কিনা ভেজা বিড়ালের মতো আচরণ করছে।

জুনিয়ররা সঙ্কোচ বোধ করছে দেখে নিখিল আর দাড়ায় না, সকল কে বিদায় জানিয়ে তারাহুরো করে যায়গা ত্যাগ করে।

নিখিল চলে যেতেই নীলিমা তেঁতিয়ে ওঠে,

-- স্টুপিড একটা, এটাই শেষ সুযোগ ছিল, নিখিল ভাই নিজে এসেছিল, আর তুই কি করলি?? হাবলার মতো উত্তর, দক্ষিণ পূর্ব, পশ্চিম মাথা ঝাঁকিয়ে গেলি?

অরু জবাব দেয়না, এই মূহুর্তে কথা বলতে ইচ্ছে করছে না, মাথাটা ভনভন করে ঘুরছে, গলাটা নিম পাতার মতো তেঁতো হয়ে এসেছে। চারিদিক ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। হয়তো প্রেশার ফল করেছে। কয়েকবার চোখের পলক ফেলে, অস্ফুটেই অরু বলে,

-- ভাল্লাগছে না বাসায় যাবো, আমাকে একটা রিকশা ঠিক করে দে'না তিথি।

-- চলে যাবি মানে এটেনডেন্সটা এটলিস্ট দিয়ে যা।

নীলিমার কথায় অরুর ভেতরের তেঁতো ভাবটা বেরিয়ে এলো, মাথাটা ঝাঁঝিয়ে উঠলো, অরু চটে গিয়ে বললো,

-- বলেছি তো বাসায় যাবো।

*****************************************

শরীর আর মনের একরাশ অসুখ নিয়ে টলতে টলতে ক্রীতিক কুঞ্জে এসে পৌঁছেছে অরু।

বিশাল সদরদরজা ঝনঝন আওয়াজ করে খুলে ভেতরে ঢুকতেই আরও বিরক্ত হয়ে যায় ও।

মামা, মামি আর একমাত্র মামাতো ভাই রেজওয়ান ওরফে রেজা এসেছে।

অরু আর অনুর জীবনের এতো এতো ঝামেলার মধ্যে উটকো ঝামেলা এই পরিবারটা। কথা নেই বার্তা নেই যখন তখন এসে হাজির।আসবে তো আসবে একটা না একটা ঝামেলা পাঁকিয়ে তারপর বিদেয় হবে।

আজমেরী শেখ যখন সুস্থ সবল ছিলেন তখন দিন রাত আগমন ঘটতো এদের, তিন বেলা ফ্রিতে রাজকীয় খাবার আর মহলের নরম গদিতে আরাম আয়েশ করে একটানা দশদিনও কাটিয়ে দিতো। বাড়ি যাওয়ার নাম গন্ধ পর্যন্ত নিতো না।

অরুর মামাতো ভাই রেজা এলাকার পাতি মা'স্তান, যার দরুন তার ছেলে পেলেদের ও নিয়ে আসতো একমাত্র ফুফুর আলীসান বাড়িতে।

অরু আর অনু এসবে বেশ লজ্জিত হতো যত যাই হোক তাদের তো এভাবে আরেকজনার অন্ন ধ্বংস করার কোনো অধিকার নেই। একমাত্র ভাই, ভাবী বলে আজমেরী শেখ তেমন কিছুই বলতেন না।

অনু,অরু একটু গাইগুই করলে ওদের কেও চোখ পাঁ'কাতেন আড়ালে।

সবকিছু এভাবেই চলছিল, কিন্তু আজমেরী হক একেবারে বিছানা সজ্জায় চলে গেলে মামা মামির আসল রূপ দেখতে পায় অরুরা।

আপন বোনকে দেখা তো দুরে থাক গত একবছরে হাসপাতালের গন্ডি অবধি মারায়নি ওদের মামা,

বরং দু'দিন পরপর বউ ছেলেকে নিয়ে এবাড়িতে এসে অনুকে মানসিক অশা'ন্তিতে ভুগিয়েছে দিনরাত। তাদের কথা একটাই,

-- বাবা নেই, মায়েরও ও গ্যারান্টি নেই, আজবাদে কাল মায়ের কিছু হয়ে গেলে ওদের দু বোনের কি হবে? আজ বা কাল এ বাড়ির ছোট সাহেব ঠিকই ফিরবে, তখন তো দুই বোনের কোনো গতি থাকবে না, তাই এখনই যদি তার একমাত্র সুযোগ্যপুত্র রেজার সাথে অনুর বিয়েটা হয়ে যায় তাহলে একটা কুল তো হবে,আর যাই হোক নদীতে তো আর ভেসে যেতে হবে না।

অরু বুঝে পায়না এতোবড় দুনিয়া থাকতে ওরা নদীতে কেন ভেসে যাবে, কি অপ'রাধ ওদের?

অনুর রাগের ঘট এমনিই পরিপূর্ণ, এসব শুনলে আরও বেশি মাথা খারাপ হয়ে যায়, চে'চামেচি করে বাড়ি মাথায় তুলে ফেলে সে, বিপরীতে মামির গা জালানো কথাতো আছেই। এককথায় এরা বাড়িতে পা রাখা মানেই ঝামেলা আর অশা'ন্তি।

*****************************************

অরু হলরুমের চারদিকে চোখ বুলায়, অনু কোথাও নেই,

-- তারমানে আপা এখনো হসপিটালে যাক ভালোই হলো।

ওর মামি ডাইনিং এ বসে আঙুর চিবুচ্ছে, রেজা কাঁউচে বসে পায়ে পা তুলে টিভি দেখছে।মামা আপাতত আসেপাশে নেই।

অরু সবটাই দেখলো, তারপর না দেখার ভান করে দোতলায় পা বাড়ালো।

দুটো সিঁড়ি মারাতেই পেছন থেকে ডাক পরলো মামির,

-- কিরে দেখলি আমরা এখানে বসে আছি তাও ঢ্যাং ঢ্যাং করে উপরে চলে যাচ্ছিস।মামিকে চোখে পরেনা নাকি? আর আমার বউমা কোথায়?

অরু চোখ খিঁচে বন্ধ করে নিলো, এটারই ভয় পাচ্ছিলো ও। অনেক প্রশ্ন করেছে মামি, এক কথায় উত্তর দিতে হবে কি বলা যায়??

-- অরু পেছনে ফিরে বললো,মাথা ব্যাথা করছে মামি, একটু ঘুমাবো, আর আপা হসপিটালে মায়ের কাছে।

-- করে'নে, করে'নে, আরাম আয়েশ যা পারিস করে'নে, আজ বাদে কাল বাড়ির মালিক ফিরলে তোদের তো ঘা'র ধরে বের করে দেবে, অনুটাকে কতোবার বুঝিয়েছি এ কথা,কতোবার বলেছি আমার রেজার সাথে বিয়েটা দিয়ে দেই,কিন্তু মেয়েটা বড্ড বে'য়াদব হয়েছে,বড়দের মুখে মুখে ত'র্ক করে। বাবা মায়ের শাসন না থাকলে এই হয়।

মামির কথায় অরুর নেতিয়ে পরা রাগটা আবারও তরতর করে ঝাঁঝিয়ে উঠলো। তীক্ষ্ণ সু'চেঁর মতো কথা গুলো গিয়ে শরীরে বিধ'লো, ও পেছনে না ঘুরেই বললো, --তুমি যে নরম চেয়ারে বসে আঙুর চিবুচ্ছো, ওটাও কিন্তু এবাড়ির ছোট সাহেবের টাকা দিয়েই কেনা মামি।

তাছাড়া জামশেদ জায়ান চৌধুরীর অবর্তমানে আমার মা'ই কিন্তু জেকে গ্রুপের গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান।

ওর কথায় একটা তাছ্যিল্যের হাসি খেলে গেলো অরুর মামির মুখে,মনে মনে বললেন, এইটুকুনি মেয়ে ভালোই খই ফুটেছে মুখে।তারপর শ'ত্রুকে পাল্টা তী'র নি'ক্ষেপ করার মতো করে বললেন,

-- হতে পারে তোর মায়ের অধিকার আছে,কিন্তু তোদের দু'বোনের তো কোনো অধিকার নেই, তোরা হলি কচুরিপানা।তাছারা তোদের মায়ের আর কদিন, বড় জোর হলে ছয়মাস।

-- মামি, অনেক বেশি বেশি বলে ফেলছো এবার, আমাদের মায়ের কিচ্ছু হবেনা।মাকে আমরা বিদেশে নিয়ে যাবো।

আবারও সেই গা জালানো হাসি ছুড়লেন অরুর মামি, বললেন,

--তোর কি মনে হয়?? জায়ান ক্রীতিক চৌধুরী বা তার কোম্পানি তোদের নেওয়ার জন্য বসে আছে? শুনেছি তোর জন্যই নাকি বাড়ি ছাড়তে হয়েছিল তাকে।

মামির সাথে আর ত'র্কে পেরে উঠলো না অরু, দুশ্চি'ন্তাগ্রস্থ জটলা পাকানো মস্তিস্কটা আর চাপ নিচে পারছে না, হাত পা থরথর করে কাঁপছে। এই মূহুর্তে গলা থেকে একটা কথাও বের হচ্ছে না, মামি যে এতো নোং'রা ভাবে ওকে আ'ক্র'মন করবে ভাবতে পারেনি অরু।

ও সামনের দিকে আরও একবার চোখ বোলালো কয়েকজোড়া আ'ক্রমণা''ত্নক চোখ। মনে হচ্ছে চোখ দিয়েই ওকে ভ'স্ম করে দেবে এরা। ওও আর এক মূহুর্তেওও হল রুমে দাড়ালো না সিরি ডিঙিয়ে দোতলায় নিজের রুমে গিয়ে সপাটে দরজা আটকে দিলো।

*****************************************

ভেতরটা ছিঁ'ড়ে যাচ্ছে, অসহায়ত্ব চারিদিক জংলা আবরণের মতো ঘীরে ধরেছে। মামির তর্কের আ'ঘাতে নিখিল ভাই চলে যাওয়ার কষ্টটা যেন নুন ম'রিচের ছিঁ'টা।

আর ভালো লাগছে না, নীলিমা আর তিথির মতো জীবনটা সাভাবিক কেন হলো না ভাবছে অরু। কেন ওর জীবনে এতো দায়বদ্ধতা? কেন নিখিল ভাইয়ের প্রতি ভালো লাগাটা নিজের মাঝে খুব সহজে তুলে ধরতে পারলো না ও।?এটা কি শুধুই অন্তর্মুখী হওয়ার দরুন, নাকি পরিবারের টানাপোড়েন আর দায়বদ্ধতা।

নিখিলের চলে যাওয়া ভাবতে ভাবতে অরুর মনে পরে যায় নিখিলের সাথে প্রথম দিনের সাক্ষাৎের কথা,

এইতো কয়েকমাস আগের কথা,

ভার্সিটিতে এডমিশনের জন্য এসেছে অরু, মায়ের অসুস্থতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো অতোবড় বিদ্যাপিঠে পড়ার সুযোগ হয়নি অরুর। মোটামুটি প্রস্তুতি নিয়ে যতটুকু পেরেছে তাতেই গুচ্ছতে সুযোগ হয়েছে।

আজ কাগজ পত্র নিয়ে এসেছে সবটা জমা দিতে হবে তাই,

শীতের সকাল, ঠান্ডাটা পুরোপুরি জেঁকে না বসলেও মিষ্টি রোদের মৃদু আলোতে ভালোই আরাম লাগছে। সকাল হতেই অফিসগামী সারিসারি গাড়ির বহর ছুটেছে রাস্তা জুড়ে, ঢাকা শহরে বেড়ে ওঠা হলেও একাএকা রাস্তাঘাট পার হওয়ার অভ্যাস নেই অরুর। সেই দরুন তখন থেকে ভার্সিটির রাস্তার বিপরীতে অসহায়ের মতো দাড়িয়ে আছে সে। কখন রাস্তাটা একটু ফাঁকা হবে আর ও দৌড়ে রাস্তা পার হবে। অনেকে তো গাড়ির ফাঁক ফোকর দিয়েই চলে যাচ্ছে কিন্তু অরুর সাহস হচ্ছে না। এক পা এগোচ্ছে তো দু পা পিছাচ্ছে।

এভাবেই লেফ্ট রাইট চলতে থাকলো প্রায় আধঘন্টা, অরু বিরক্ত হয়ে গিয়েছে। এরকম হলে প্রতিদিন ভার্সিটিতে আসবে কি করে সে??

--ভয় লাগছে??

পেছন থেকে তী'রের ফলার মতো ছুটে আসা পুরুষালী কন্ঠস্বর শুনে হকচকিয়ে পেছনে ঘুরলো অরু। দেখলো মুখে টোল পরা স্নিগ্ধ হাসি নিয়ে ওকেই প্রশ্ন করেছে লোকটা।

অরু থ মেরে আছে, হা না কিছুই বলছে না, কি করে বলবে ও তো হাসিতেই কুপোকাত।

লোকটা পাশ থেকে কাউকে ডেকে উঠল,

--এই অন্তু ওকে রাস্তাটা পার করে দে'তো।

পেছন থেকে ছেলেটা বললো,

-- জ্বি ভাই দিচ্ছি।

ব্যাস তখনই ছিল ভালোলাগার শুরু।অরু বুঝেছিল এই লোকের ভার্সিটিতে বিশাল জনপ্রিয়তা।

তারপর থেকে শুরু হয় অরুর লুকিয়ে লুকিয়ে পর্যবেক্ষন, উদাসীন দুপুরে, কিংবা ম'রচে যাওয়া বিকালে ক্যাম্পাসের এথায় সেথায় তাকেই খুজে বেড়াতো চোখ দুটো। এক নজর দেখা হয়ে গেলে খুশিতে পুলকিত হতো মনটা, ঝিলিক দিয়ে উঠলো মুখের কোনে মিষ্টি হাসি।যা এখনো চলমান......

কখনো সামনে দাড়িয়ে কথা বলা হয়নি,অরু এও জানেনা নিখিল তার নামটা জানলো কি করে? তবে নিখিলের বায়োডাটা সবই অরুর জানা বলতে গেলে মুখস্থ।

কিন্তু আপসোস এখন এসব কোনো কাজেই আসবে না, নিখিল ভাই চলে যাবে, হাজার কিলোমিটার দুরে হবে তার ঠাঁই, সাইন্সল্যাবের ক্যা'মিক্যাল আর এক্সপেরিমেন্টের মাঝে অরোরা নামটাই হয়তো ভুলে যাবে ওর সবচেয়ে প্রিয় নিখিল ভাই আর কখনো দেখা হবে কিনা তারও গ্যারান্টি নেই। ভাবতেই চোখের কার্নিশ বেয়ে তপ্ত নোনা জল গড়িয়ে পরে অরুর।

"তুমি যদি আমার না হও, তবে সুখের অসুখ তোমাকে জ্বা'লিয়ে পু:ড়িয়ে ছা'রখার করে দিক"

বোকা অরু তখনও জানতো না ওর জন্য কেউ এর থেকেও বি'ষা'ক্ত ভালোবাসা নিয়ে দিনের পর দিন অপেক্ষার প্রহর গুনছে।

■■■■■■■■■■■■■■■■■■■■■■■

#পর্বঃ০৩

রাস্তার দু'ধারে সারিসারি ম্যাপল গাছের বহর।বসন্ত হওয়ার দরুন টুপটাপ বৃষ্টি কনার ন্যায় গায়ে এসে একটু একটু বাসন্তিক ছোয়া লাগিয়ে উড়ে গিয়ে নিঃশব্দে পিচঢালা তকতকে রাস্তায় লুটিয়ে পরছে হলুদ কমলা রঙের ম্যাপল লিফ।

এমন দৃশ্য দেখতেই যেন প্রশান্তি খেলে যায় চোখে।আর ফরেইন কান্ট্রি থেকে এলেতো কথায়ই নেই,নিরব শুনশান রাস্তার ধারে ফাঁকা বেঞ্চিতে বসে বসন্ত বিকেলের একটু খানি সৌন্দর্য্য দেখে দেখেই পুরো যুগ পার করে দেওয়ার মতোই সস্থিতে দুচোখ ভরে ওঠে।

তবে এই মূহুর্তে রাস্তার দুই সাইডে দাড়িয়ে থাকা লোক সমাগমের কারোরই ম্যাপল লিফের সৌন্দয্য বিশ্লেষনে আগ্রহ নেই। বরং সুন্দর টকটকে ম্যাপল গাছের ফাঁক ফোকরে উচ্ছ্বাসিত জনতার ভীর যেন উপচে পড়ছে। তারা অন্যকিছু দেখার জন্য অধীর আগ্রহে সামনের রাস্তায় তাকিয়ে হাত নেড়ে যাচ্ছে নির্বিগ্নে সেই সাথে তাদের প্রবল উচ্ছ্বাসের বহিঃপ্রকাশ ঘটছে একই সুরে হইহই করে ওঠা প্রতিধ্বনিতে।ছেলে, বুড়ো যুবক যুবতী সবাই তাতে সামিল। দেখে মনে হচ্ছে তারা কোন পারফর্ম কিংবা প্রতিযোগিতা দেখার জন্য জমায়েত হয়েছে। শুধু যে এইটুকুনি যায়গা ধরে মানুষের ভীর এমনটা নয়, লোকালয় ছাড়িয়ে সানফ্রান্সিসকো শহরের গোল্ডেন গেইট ব্রীজ পেরিয়ে প্রশান্ত মহাসাগর আর পাহাড়ের মধ্যবর্তী সরু আঁকাবাঁকা রাস্তাটা যতদূর অবধি চোখে পরে,ঠিক ততোদূর পর্যন্তই উচ্ছ্বসিত মানুষের সমাগম।

সায়নী সিওর এই রাস্তা ক্যালিফোর্নিয়া অবধি চলে গিয়েছে।

মানুষের এতো আগ্রহ আর হইচই দেখে একটু কৌতুহল নিয়েই সামনে রাস্তায় ওদের দিকে এগিয়ে গেলো সায়নী।

ঠিক তখনই, হুট করে একদম হুট করেই বেশ কয়েকটা বাইক ভোঁ ভোঁ আওয়াজ করে তরিৎ গতিতে রাস্তা অতিক্রম করে চলে গেলো। বাইক গুলো এতোই তারাতারি চলে গিয়েছে যে সায়নি চোখে পলক ফেলা’র সময়টুকু অবধি পেলোনা।

বাইক গুলো রাস্তা ক্রস করতেই সবাই জেকে জেকে বলে চেঁচিয়ে উঠলো। সবার চিয়ারআপ আর উচ্ছ্বাস দেখে সায়নি বোধ করলো এখানে বাইক রাইডিং কম্পিটিশন হচ্ছে। কিন্তু এরকম ঠান্ডা আবহাওয়ায় পাহাড়ি রাস্তায় কিকরে এতো দ্রুত রাইড করছে এরা?? ভয় ডর নেই নাকি?? এগুলো দেখে আবার মানুষ আনন্দে নাচানাচি করছে,যেমন এরা তেমন এদের বিনোদন স্টুপিড আমেরিকান,ঠোঁট উল্টে মনেমনেই মেজাজ খারাপের বহিঃপ্রকাশ ঘটায় সায়নী।

ও চলেই যাচ্ছিল তখন আবারও দ্বিতীয় বারের মতো হাওয়ার গতিতে ছুটে আসা বাইক গুলো রাস্তা ক্রস করে চলে যায়, তৎক্ষনাৎ সবার মুখে মুখে আবারও সেই জেকে নামের হিরিক পরে যায়।

-- আচ্ছা জেকে কে??

কৌতূহলী মস্তিস্কে প্রশ্নটা আসতেই হাটার গতি থামিয়ে দিলো ও দাড়িয়ে থাকলো এই ভ'য়া'নক বাইক রেচিং শেষ হবার অপেক্ষায়।

টানা তিনবার একই ভাবে রাইড শেষে চারবারের সময় শেষ হলো কম্পিটিশন। পরপর সাতটা বাইক এসে একই যায়গায় থামলো। সায়নী জানে সবার আগে যে(kTM 390 adventure) বাইকটা পৌঁছেছে ওটাই জেকে রাইড করেছে।

কারন চারদিক থেকে ভেসে আসা জেকে নামের জয়জয়কার আর আনন্দ উচ্ছ্বাসই তার জানান দিয়ে যাচ্ছে।

তবে জেকে নামক লোকটা একটু অন্যরকম এতোএতো চিয়ারআপেও কোনোরূপ হেলদোল নেই তার, খুবই সাভাবিক মুখভঙ্গি,চ্যাম্পিয়ন হয়েও খুশির লেসমাত্র নেই তার মুখে। অথচ রানার আপ হওয়া বাইকারটা খুশিতে ফেটে যাচ্ছে। সেই খুশি তার মুখে চোখে জোয়ারের জলের ন্যায় উপচে পরছে।

জেকে হেলমেট খুলে উরুর উপরে সেটাকে সটান বসিয়ে দেয়, হেলমেট খুলতেই বেরিয়ে আসে তার স্টাইলিস ঘাড় ছুঁইছুঁই লম্বা চুল গুলো।ঘার অবধি চুলে তাকে জেন্টেলম্যান লাগছে না মোটেই বরং স্টাইলিস্ট সুপারস্টার বললে হয়তো মানানসই হবে বাক্যটা। মনে হচ্ছে ব্র্যান্ড নিউ বাইকের কয়েকদফা শ্যুট করে মাত্রই থেমেছে সে ।

ডানহাত দিয়ে বেখেয়ালে চুলগুলোকে ব্যাকব্রাশ করতে করতেই অন্য হাতে পরে থাকা অ্যাপেল ওয়াচটায় একনজর চোখ বুলিয়ে নিয়ে আবারও হেলমেটটা পরে নিলো সে।

ওদিকে চ্যাম্পিয়ন পুরস্কার বিতরণের জন্য স্টেজে তাকে বারবার ডাকা হচ্ছে। জেকে হেলমেট পরেই সেদিকে একবার চাইলো। আশ্চর্য্য সবাই ডাকছে তবুও কেমন বেখেয়ালি ভঙ্গিমা তার, শেষমেশ কতৃপক্ষের একজন তারকাছে এগিয়ে আসতেই জেকে বলে,

--ওয়েট আ মিনিট।

তারপর কাউকে কল করতেই কয়েক মিনিটের মধ্যে একটা কালো গাড়ি এসে থামলো ওখানে,

গাড়ি থেকে ফর্মাল ড্রেসকোর্ট পরিহিত একজন নামতেই, জেকে লোকটাকে উদ্দেশ্য করে বললো,

--লুক হি ইজ মাই এসিসট্যান্ড প্রত্যয় এহসান, গিভ হিম দা প্রাইজ মানি।

লোকটা বিরক্তিতে ভ্রু কুঁচকায়,

--আর ইউ কিডিং মি?

--নো আ'ম সিরিয়াস।

--দেন হোয়াই আর ইউ এটেন্ড দা গেইম?এন্ড রি'স্ক ইউর লাইফ?লোকটার কথায় বিরক্তির ছাপ স্পষ্ট।

জেকে তীর্যক হাসলো, কাঁধ দুটো সামান্য উপরে তুলে ভাবলেশহীন মুখে বললো,

-- ইউ নো?রাইডিং ইজ থ্রি'লিং অলসো ডে'ঞ্জা'রাস। এন্ড আই লাভ ডে'ঞ্জা'র আ লট।

শান্ত এবং স্থীর কন্ঠস্বর, তবে শরীরে কাঁপন ধরিয়ে দেবার মতোই ভ'য়া'নক কথার টোন।

শেষ কথাটা বলে,চোখে বিশালাকৃতির রোদচশমা চড়িয়ে, শাঁই শাঁই করে নিজের( kTM 390) বাইক নিয়ে পাহাড়ি রাস্তার বাঁকে মূহুর্তেই হারিয়ে গেলো জেকে। সবার দৃষ্টি এখনো সেদিকেই স্থীর। কতৃপক্ষের লোকটা বিরক্ত হলো,তবে চটে গেলোনা, এই ছেলে প্রতি বছর একটা না ঝামেলা পাঁকাবেই এটা তার বোধগম্য হয়ে গিয়েছে এতোদিনে, হয় কোনো প্রতিদন্দ্বিকে ইচ্ছে মতো পে'টাবে, নয়তো রাইডিং এর মাঝ পথেই বাইক ঘুড়িয়ে নিয়ে চলে যাবে, আর না হলে প্রাইস গিভিং এ এসে ঝামেলা পাঁকাবে।

শুধু পপুলারিটির আর অডিয়েন্সের ডিমান্ডেই সারা বছর ঘুরে ঘুরে রাজি করানো হয় তাকে, নয়তো এমন আধপাগ'ল, র'গচটা ছেলেকে জীবনেও কম্পিটিশনে আনতেন না তিনি। বাপের বয়সই হোক কিংবা দাদার কারও কথার দু পয়সা সম্মান পর্যন্ত দেয়না এই ছেলে।

--সাচ আ সাই'কোপ্যাথ। বিরবিরিয়ে কথাটা বলে থমথমে মুখ নিয়ে নিজ স্থানে ফিরে গেলো লোকটা।

--এটিটিউড, এপেয়ারেন্স, গুড লুক এভরিথিং ইজ সো ম্যানলি। মুগ্ধ নয়নে ফাঁকা রাস্তার দিকে তাকিয়ে কথাটা বললো এক বিদেশিনী।

সায়নীর পাশেই মেয়েটা দাঁড়ানো।

ও মেয়েটার মুগ্ধতা দেখে একটু যেচেই জিজ্ঞেস করলো,

--হু ইজ হি?

মেয়েটা নে'শা লাগানো চোখে বললো,

-- হি ইজ জেকে, দা চ্যাম্পিয়ন।

সায়নী মাছি তাড়ানোর মতো করে বললো,

--আই নো দ্যাট বাট....

সায়নীর কথাটা শেষ করতে হলো না, তার আগেই বিদেশিনী ভাঙা ভাঙা বাংলায় বলে,

--ওহ হি ইজ ওয়াসিপ ঝায়ান খ্রিতিক। হি ইজ আ ভেরি গুড রাইডার।

বিদেশিনীর আধও আধও বাংলা শুনে সায়নী মুঁচকি হাসে, তারপর পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে বলে,

--হি লুকস ডিফরেন্ট।

বিদেশিনী ভ্রু কুঁচকায়।

সায়নী মনে মনে ভাবে, লোকটা দেখতে একেবারেই অন্যরকম, টকেটকে গৌড় বর্ন, শরীরের গঠন, চেহারা সব কিছুতে ব্রিটিশদের ছাপ স্পষ্ট,অথচ গোল ভাসমান কালো মনি যুক্ত চোখদুটো দেখলে যে কেউ বলবে এশিয়ান কোনো দেশের, কোনো এক সম্ভ্রান্ত গোত্রের উত্তরাধিকার সে, এটলিস্ট এটিটিউড তো তাই বলে।

বিদেশিনী এখনও তার ধূসর চোখে প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে দেখে, সায়নী মেকি হেসে বলে নাথিং নাথিং, আই জাস্ট সে, হি ইজ সো হ্যান্ডসাম।

--ইয়াহ লুক লাইক আ হলিউড হিরো।

বাই'দা ওয়ে হটস ইওর নেম?

বিদেশিনী সম্মোহনী হাসি দিয়ে জানায়,

-- ক্যাথলিন ক্রিসটিয়ান। ইওর?

--আ'ম সায়নী মুখার্জি।

-- ওহ আর ইউ ফরেইনার?

-- ইয়াহ আ'ম ফ্রম ইন্ডিয়া।

তারপর নিজেদের মধ্যে আরও কিছু কুশল বিনিময় হয় ওদের। এক পর্যায়ে সায়নী জানতে পারে ক্যাথলিন জেকে কে মোটামুটি পার্সোনালি চেনে। আর জেকে আসলে ব্রিটিশ ফ্রিটিশ কিছু নয়,বরং আমেরিকান সিটিজেন ধারী আদ্যপান্ত বাঙালি পুরুষ। তাহলে এই ছেলের চেহারায় এতোটা ভীনদেশী ছাপ কেন? প্রশ্নটা থেকেই গেলো সায়নীর কৌতুহলী মনে।

*****************************************

টানা দু'দিন হতে চললো মামিরা বিদেয় হয়েছে। অরু জানতো অনু বাড়িতে ফিরলেই ঝামেলা শুরু হবে, আর হয়েছেও সেটাই। মামির গা জালানো কথা অরু চুপচাপ মেনে নিলেও অনু খালি মুখে সহ্য করতে পারে না মোটেই, কারন আর যাই হোক মাকে হাসপাতালের এক কামরার বেডে শুয়িয়ে রেখে তার পক্ষে বিয়ের পিঁড়িতে বসা সম্ভব নয়, রেজার মতো পাতি মা'স্তানের সাথে তো নয়ই।

মামিকে এসব মুখের উপর বলে দেওয়া মানে ভ'য়াব'হ ঝড়ের পূর্বাভাস, আর তাই হলো কথায় কথায় গমগমে হয়ে উঠলো পুরো মহল,একপর্যায়ে কথাকা'টাকা'টি থেকে শুরু হয়ে গেলো বিশাল ত'র্ক ।

অনুর মেজাজ সর্বক্ষনই তুঙ্গে থাকে, এই মূহুর্তে মামির কথার আ'ঘাত তার মধ্যে চরম বিরক্তি আর উত্তেজনার সৃষ্টি করলো, শরীরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে পরলো অযাচিত ক্ষো'ভ আর রাগ, রাগের মাথায় হলরুমের কাঁচের জিনিস গুলো একটা একটা করে আঁ'ছার মেরে ভা'ঙতে লাগলো সে।

হলরুমে ঝনঝন করে কাঁচ ভা'ঙার আওয়াজ শুনে অরু নিজের কা'ন্নাকাটিতে লাগাম টেনে বাইরে বেরিয়ে এলো,দেখলো তার ভদ্র,শান্ত, আর নরম মনের আপার সবচেয়ে ক্ষু'ব্ধ রূপ।

ওর এমন রাগ দেখে মামি যে খানিকটা ভরকে যায়নি এমন নয়, তবে সেও দমে যাওয়ার পাত্রি নন,তার ক্ষি'প্ত মুখশ্রী দেখে মনে হচ্ছে এর শেষ দেখেই ছারবেন তিনি।

অবশেষে পরিস্থিতি সামাল দিতে, রেজা নিজের মাকে নিয়ে তৎক্ষনাৎ ক্রীতিক কুঞ্জ থেকে বিদায় নেয়।

--আর কখনো আসবেনা তোমরা...

ওরা চলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অনু গিয়ে ঝনাৎ করে মহলের সদর দরজা আটকে দেয়,তারপর নিজের রুমে ঢুকে কক্ষ বন্ধী করে নয় নিজেকেও।

অরু দৌড়ে যায় বোনকে আটকানোর জন্য, তবে সেটা বড্ড দেরি হয়ে যায়, তার আগেই সপাটে দরজার খিল আটকে দেয় অনু।

অরু জানে তার আপা আজ রুম থেকে বের হবে না, অরু ডাকতে ডাকতে বেহুশ হয়ে গেলেও না। তবু ও কিছুক্ষন ধরে ডাকাডাকি করে ক্ষান্ত হয়ে ফিরে যায় অরু।সে রাতে দু বোনের কারোরই আর খাওয়া হলো না।

পরেরদিন সকালে নিজ হাতে নাস্তা,মায়ের জন্য স্যুপ সব কিছু বানিয়ে অরু আবারও কড়া নারলো অনুর দরজায়।

এবার অনু দরজা খুললো, পড়নে স্যুতি চুড়িদার হাতে টোটে ব্যাগ, লম্বা চুল গুলোতে এটে আছে সুন্দর ফ্রেন্স বেনি। দেখেই বোঝা যাচ্ছে হাসপাতালে যাওয়ার জন্য একেবারে তৈরি হয়েই বেরিয়েছে সে।

আপাকে পরিপাটি হয়ে বেরোতে দেখে বিমূর্ষ চোখ দুটো খুশিতে টইটুম্বুর হলো অরুর।

অনুকে প্রশ্ন করার কোনো অবকাশ না দিয়েই অরু একেরপর এক বলতে লাগলো,

--টেবিলে নাস্তা রেডি, মায়ের স্যুপ হটপটে ভরে রেখেছি, আর ইমেইল ওও পাঠিয়ে দিয়েছি।

চল একসাথে খাবো,

কথা শেষ করে অরু সামনে হাঁটা ধরতেই, ওর হাত টেনে ধরে ওকে বুকে জড়িয়ে ন্যায় অনু। আপার রাগ কমেছে ব্যাপারটা বুঝতে পেরে, খুশিতে পুলকিত হয়ে শক্ত হাতে বোনের গলা জড়িয়ে ধরে অরু নিজেও।

-- আপা তুই কেন বদলে গেলি বলতো, কাল তোর রা'গ দেখে আমি নিজেও ভ'য় পেয়ে গিয়েছিলাম।

অনু ঠোঁট টিপে মুচকি হাসে, তারপর বলে,

-- বিশ্বাস কর আমি একটুও বদলাইনি,স্বজন রূপী কাল সা''প গুলোকে বের করার জন্যই একটু বেশিবেশি করেছি, নইলে কতদিন পরে পরে আমাদের মাথা খেতো কে জানে??

-- তোর কি বুদ্ধি আপা,জিনিয়াস।

অনু আবারও হেসে বলে, হয়েছে, কাল থেকে কিছুই খাইনি,চল নাস্তা খাবো, নয়তো মায়ের কাছে যেতে লেট হয়ে যাবে।

অরু আনমনে বলে,

--আমার আপার হাসি সব চেয়ে সুন্দর নিখিল ভাইয়ের চেয়েও।

*****************************************

নিখিল ভাই, নামটা মস্তিস্কে গিয়ে ঠেকতেই দুদিন আগের ভাবনার ইতিটানে অরু। সকালে ঘুম থেকে উঠে ইমেইল পাঠাতে গিয়েই সেদিনের কথা গুলো ভাবছিল ও,তারপর সেদিন সকাল থেকে বিকেল অবধি ঘটে যাওয়া কুৎ'সিত ঘটনা গুলো একেএকে হানা দেয় আনমনা মস্তিষ্কে।

আজ শুক্রবার আপা একটু দেরি করেই হাসপাতালে যাবে আজ, অরু রাতেই বলে রেখেছিল যে সেও মাকে দেখতে যাবে। তাই খুব সকালে উঠেই ইমেইলের কাজ সেরে ফেলছে ও।

তারপর একটা লম্বা শাওয়ার নিয়ে রেডি হয়ে যখন মোবাইল হাতে নিলো দেখলো নিলীমার অনেকগুলো মিসডকল ভাসছে।

--নিলীমা কল দিয়েছে, তারমানে ইম্পরট্যান্ট কিছুই হবে, কিন্তু কি??

অজানা অনেক প্রশ্নে আবারও মাথাটা ধরে এলো অরুর,কিন্তু ও এতো ভাবতে চায়না,তাই তারাহুরো করে নিলীমাকে কল ব্যাক করলো।

একবার রিং হয়েছে কি হয়নি,তারমধ্যেই নিলীমা কল তুললো।

-- কি হয়েছে নিলীমা, এতো গুলো কল দিলি তুই ঠিক আছিস?

-- আমি ঠিকই আছি, তুই ঠিক আছিস কিনা সেটা বল, আচ্ছা তুই এমন কেন? দিন দুনিয়া ভুলে হিমালয় পর্বতের সন্ন্যাসীনি হয়ে যাস, নাকি মহাসমুদ্রে ডুব দিস কোনটা বল আমাকে?

-- কি অদ্ভুত প্রশ্ন নীলিমা,আমি কেন এসব করতে যাবো? শোন আমার বিয়ে করে সংসার করার বহুত শখ সন্ন্যাসী টন্ন্যাসী এসব কথা ভুলেও বলবি না।

-- তাহলে ফোন কেন তুলিস নাআআআ।বিরক্তিতে চিৎকার দিয়ে উঠলো নিলীমা।

-- আহ আস্তে বল কানে লাগছে তো, আর ফোন সাইলেন্ট মুডে ছিল।

-- তাহলে তুই কেন বসে আছিস এখনো? তুই ও সাইলেন্ট মুডে চলে যা, আর তোর শখের নিখিল ভাই আমেরিকা গিয়ে কোন এক সাদাচামড়ার মেয়েকে বিয়ে করে সুখে ঘর সংসার করুক।

--কি হয়েছে নিলীমা?

অরুর কন্ঠে দৃঢ়তা আর সচকিত ভাবটা স্পষ্ট।

--নিখিল ভাই আজই চলে যাচ্ছে, এতোক্ষণে হয়তো এয়ারপোর্টের কাছাকাছি চলেও গিয়েছে, এটাই তোর শেষ সুযোগ অরু, আমি আর তিথি মেইন রাস্তায় সিএনজি তে ওয়েট করছি তারাতারি চলে আয়, নয়তো এ জীবনে আর নিখিল ভাইকে দেখতে পাবি না তুই।

নিখিল ভাইয়ের সাথে আর দেখা হবেনা, টোল পরা মন ভুলানো হাসিতে মাতোয়ারা হবেনা হৃদয়টা, নিখিল ভাইকে ছাড়া ক্যাম্পাসটাই তো ম''রে যাবে, হৃদয়টা হাড়হীম করা ব্যাথায় শক্ত হয়ে এসেছে অরুর, এবার আর অজান্তে নয়, জেনে শুনেই ফু্ঁ'পিয়ে কেঁ'দে উঠলো ও। মোবাইলের নেটওয়ার্ক ছাপিয়ে সেই ফোঁ'পানোর আওয়াজ গিয়ে পৌঁছালো নিলীমার কানেও।

-- দ্রুত চলে আয়, শেষ বারের মতো দেখা হয়েও যেতে পারে,নিঃসংকোচে কথাটা বলে কল রেখে দিলো নিলীমা।

নিলীমার শেষ কথাটা কর্নকূহরে পৌছাতেই অরু আর কা'ন্নাকা'টি করে সময় নস্ট করলো না, টেবিল থেকে পার্সটা ছো মেরে নিয়ে দৌড়ে বেরিয়ে গেলো রুম থেকে।

নিখিল ভাই চলে যাচ্ছে যাক, কিন্তু মনের কথাটা তো একটাবার শুনে যাক, নিজের একপাক্ষিক ভালোবাসার কোন প্রতিদান চায়না অরু,শুধু শেষবারের মতো মুখ ফুটে বলতে চায়, দিনের পর দিন নিজের মন গহীনে বোনা মাকড়শার জালের ন্যায় ঠুনকো সপ্ন গুলোর কথা।

এই মূহুর্তে অরুর অষ্টাদশী মন বলছে তাকে মন গহীনের সুপ্ত ভালোলাগার কথা না জানালে জীবনটাই বৃথা।

অনু কেবলই খাবার দাবার হটপটে ভরে রেডি হয়ে নেমেছে, তখনই দেখতে পায় হনহন করে কোথাও বেরিয়ে যাচ্ছে অরু।

--কিরে কোথায় যাচ্ছিস, হাসপাতালে যাবিনা?

অরু জবাব দেয়না, এক প্রকার ছুটে বেরিয়ে যায় বাগানবিলাসে ঘেরা ক্রীতিক কুঞ্জ থেকে।

অনুর অযাচিত মন আনমনে বলে,

--ইমেইলটা পাঠালো কিনা কে যানে? চেক করে দেখতে হবে।

*****************************************

মানুষ জীবনে আশা নিয়ে বাঁচে, আশা বিহীন এই উত্থান পতনের জীবনে বেঁচে থাকা দূ'রহ বৈকি আর কিছুই না। সবাই দিন শেষে ভাবে নতুন প্রহর তার জন্য নতুন সুখ বয়ে আনবে। কিন্তু কখনো কখনো সেই নতুন প্রহর আসতে বড্ড দেরি হয়ে যায়, সেই সাথে হারিয়ে যায় সুখের আশাটুকুও। এখন এই মূহুর্তে দাড়িয়ে অরুর সুখের আশা'টাও হারিয়ে গিয়েছে,নীলাম্বর আকাশের কোন একফালি শুভ্র মেঘের আড়ালে।খোলা আকাশের দিকে তাকিয়ে শব্দ করে কাঁ'দছে অরু। হৃদয়টা এবার সত্যি সত্যি ফাঁকা লাগছে, নিখিল ভাইয়ের সাথে শেষ দেখাটা হলোনা আর। এয়ার্পোটের সামনে এমন কা'ন্নারত মেয়েটাকে দেখে অনেকেই কিংকর্তব্যবিমূঢ়।আবার অনেকেই ভাবছে হয়তো কাছের কেউ দূরদেশে পারি জমিয়েছে সেই দুঃখেরই বহিঃপ্রকাশ ঘটছে। তাতে অবশ্য অরুর যায় আসেনা,আপাতত হিতাহিত জ্ঞানশূন্য ওর মস্তিষ্ক। ও উড়ন্ত প্লেনের দিকে তাকিয়ে চেঁচিয়ে বলতে লাগলো,

--আমি আপনাকে ঠিক খুঁজে বের করবো নিখিল ভাই, আপনার আমার আবারও দেখা হবে, আমি ইউ এস এ যাবো,আপনার জন্য হলেও যাবো, ওই জায়ান ক্রীতিক চৌধুরী না নিলেও যাবো।

--হয়েছে অরু থাম এবার।

তিথি ওকে থামাতে ব্যাস্ত, কে জানতো অরুর মতো চুপচাপ সভাবের মেয়েটা এভাবে কেঁ'দে কে'টে দুনিয়া ভাসাবে, তাহলে হয়তো ওরা এই প্ল্যান কোনোকালেই করতো না।

আবারও একই নাম ক্রীতিক জায়ান চৌধুরী। নিলীমা বুঝতে পারেনা ব্যাপারটা, তাই সচকিত হয়ে প্রশ্ন ছু'ড়ে,

-- আচ্ছা অরু তুইতো শেখ, তাহলে তোর ভাইয়া চৌধুরী কেন??

অরু কাঁদতে কাঁদতে হেঁচকি তুলে বলে,

--ওই বদমা'শ লোকটা আমার ভাইয়া না, ইভেন কিছুই না আমাদের।

--তাহলে, তাকে কেন ইমেইল পাঠাস প্রতিদিন?

-- তাকে পাঠাইনা তো, জেকে গ্রুপের হেড অফিসে পাঠাই, মায়ের অসু'স্থতা জানানোর জন্য, শুধু মাত্র জায়ান ক্রীতিকের এপ্রোভালের জন্যই সবটা আটকে আছে যে।আবারও কা'ন্নায় ভিজে আসে অরুর দু-চোখ।

-- তাহলে কে সে??

-- আমরা একটা অমিমাংশিত সম্পর্কে আটকে আছি নিলীমা, আমার যখন আট বছর বয়স তখন মায়ের সাথে ক্রীতিক কুঞ্জে প্রথম পা রাখি আমরা দু বোন।তখন ওনার বয়স কতইবা হবে বিশ বছর।উনি আমার থেকে প্রায় বারো বছরের বড়। আমার মা, জায়ান ক্রীতিকের বাবা মানে জামশেদ জায়ানের দ্বিতীয় স্ত্রী।

শুনেছি ওনার দাদাসাহেব জোর করে ওই বয়সে দ্বিতীয় বার বিয়ে করিয়েছিলেন ওনার বাবাকে কোন এক কারনবশত।

তিথি আর নিলীমা একই সুরে বলে,

-- তার মানে তোদের সাথে ওনার র'ক্তের কোন সম্পর্ক নেই??

অরু এদিক ওদিক না সূচক মাথা নাড়িয়ে বলে

--না নেই, তবে ওনার বাবার অবর্তমানে আমার মা'ই জেকে গ্রুপের চেয়ারম্যান।

তিথি বললো,

-- আচ্ছা অরু উনি দেশে আসেন না।আই মিন বাড়িটা তো ওনার।

অরু না সূচক মাথা নাড়িয়ে জবাব দিলো,

-- গত আট বছর ধরে আসেনি, বছর তিনেক আগে যখন ওনার বাবা মা'রা গেলেন তখন নাকি এসেছিলেন, তবে বাড়িতে প্রবেশ করেননি, বাইরে থেকেই দাফন কাফনের কাজ সেরে সেদিনের ফ্লাইটেই চলে গিয়েছেন।

তিথি ঠোঁট উল্টে বললো,

-- বুঝেছি তোদের উনি একটুও পছন্দ করেননা, সেই জন্যই তো নিজের বাড়িতে পর্যন্ত আসেননা।যতই হোক তোরা হলি ওনার সৎ মায়ের আগের পক্ষ।

অরু ঠোঁট উল্টে বললো,

--কি জানি।

তখনই হঠাৎ করে মোবাইল স্ক্রীনে অনুর নাম্বার ভেসে ওঠে।

সচকিত হয়ে ওঠে অরু, সেই সাথে অকস্মাৎ ভেঙে যায় অবচেতন মস্তিস্কের ধ্যান। আসপাশটা অবলোকন করে বুঝতে পারে ও কত বড় বোকামি করেছে, গভীর থেকে গভীরতর গোপনীয় কথাটা তরতর করে সাজিয়ে গুছিয়ে বান্ধবীদেরকে বলে দিয়েছে। এবার তো তিথি আর নিলীমাও ওকে কচুরিপানা অথবা পরগাছা উপাধি দেবে।

--আচ্ছা তাহলে তোর বাবা কোথায়??

অরু আর জবাব দেয়না,বরং আড়ালে শুষ্ক ঢোক গেলে,

-- আপা কল করছে আমি আসি। এই বলে দ্রুত প্রস্থান করে অরু।

তিথি আর নিলীমা পেছন থেকে উদগ্রীব হয়ে বলে, আরে আরে এভাবে টলতে টলতে কই যাচ্ছিস পরে যাবিতো।

অরুর তাতে ধ্যান নেই, ওও যতদ্রুত সম্ভব ওদের চোখের আড়াল হতে চায়।

*****************************************

একরাশ ভারাক্রা'ন্ত মন আর নিজের করা বোকামিতে বিরক্ত হয়ে দ্রুত বাড়ি ফেরে অরু।

সদর দরজা পার হতেই অনুর হাতের শক্ত চপ'টা'ঘা'তে আবারও বিশ্বয়ে বিমূঢ় হয়ে ওঠে ওর মুখশ্রী। মনে মনে একটাই প্রশ্ন আওরায় নিজেকে

--কি করেছি আমি? আমার উপরেই কেন পৃথিবীর সবার এতো রা'গ??

■■■■■■■■■■■■■■■■■■■■■■■

#পর্বঃ০৪

ভে'ঙে গু'ড়িয়ে যাওয়া আশাহীন হৃদয়ের ছটফটানি আর তীব্র য'ন্ত্রনা নিয়ে,যা হোক কেবলই ঘরের দুয়ারে পা রেখেছিল অরু।ঠিক তখনই অনাকাঙ্ক্ষিত চ'ড়ে'র আ'ঘা'তে নিস্তব্ধ হয়ে আটকে যায় ওর পা দুটো, পাঁচ আঙুলের শক্ত ছাপ লেগে যায় নরম তুলতুলে আদুরে গালে।র'ক্ত জমে ফর্সা গালটা মূহুর্তেই ধারন করে কালচে বেগুনী রঙ।

গালটা বড্ড জ্বা'লা করছে, তবে সেদিকে হুশ নেই অরুর।মাথার মধ্যে কুন্ডলী পাকাঁনো হাজারো চিন্তাদের পাছে ফেলে দিয়ে শুধু একটা প্রশ্নই বারবার উগরে দিচ্ছে ওর মস্তিস্কটা

-- কি করেছি আমি??

অরু যে এতোটা ব্যাথা পেয়েছে, নিজ গালে হাত দিয়ে ছলছলে নয়নে এভাবে বোকাদের মতো তাকিয়ে আছে,তার কোনোটাতেই আপাতত ধ্যান নেই অনুর। রা'গের তোপে এখনো শরীরটা রিরি করছে ওর। ইচ্ছে তো করছে অন্য গালে আরও একটা চ''ড় বসিয়ে দিতে।

অনু রা'গে ফোসফাস করছে দেখে, অরু কেঁ'দেই ফেললো, ঠোঁট উল্টে অস্পষ্ট সুরে বললো,

--কি করেছি আমি? এভাবে মা'র'লি কেন? পৃথিবীতে কি মা'র খাওয়ার জন্যই জন্ম হয়েছে আমার?

অনু দাঁতে দাঁত পিষে বললো,

--আমি ছাড়া আর কে মা'রে তোকে?

অরু বলতে চাইলো, কে আবার?এবাড়ির ছোট কর্তা।দেশে থাকতে তো সকাল সন্ধ্যা গা'য়ে হা'ত তুলতো,।যদিও সে বহু অতীতের কথা সে কারনে অরু সেসব ভাবতে চায়না,তাই মুখ ফুটে বললো,

--অযথা কারন ছাড়া কেন মা'রবি আমাকে?? কই কখনো তো কারন ছাড়া ভালোবাসিস না, সারাক্ষণ ঝা'ড়ির উপর রাখিস, আমিকি তোর সৎ বোন আপা??

অনুর রা'গের অ'ঙ্গারে যেন একটু একটু ঘি ঢালছে এই মেয়ে, ক্রমশ মেজাজ খারাপটা বেড়েই যাচ্ছে, অনু কিরমিরিয়ে বললো,

,-- এমদম পাঁকামি করবি না অরু, আচ্ছা তোর কি মায়ের জন্য আদৌ কোনো চিন্তা আছে বলতো আমায়? নেই তাইনা?

--এভাবে কেন বলছিস আপা?

--বলছি কারণ তুই একটা হাঁদারাম, আর আমি কিনা তোর উপর ভরসা করে এতোবড় একটা দায়িত্ব দিয়েছি।

--কি করেছি,প্লিজ খুলে বলবি,

চেঁচিয়ে ওঠে অরু।

অনু এগিয়ে গিয়ে টেবিল থেকে ল্যাপটপ টা এনে ওর হাতে তুলে দেয়,

--নিজের চোখেই দেখে নে।

ল্যাপটপের ফ্রন্ট স্ক্রীনে ইমেইলের ইনবক্স ভাসছে সেই সাথে কতগুলো নতুন মেইল সব গুলোই আমেরিকা থেকে এসেছে, যা দেখে অরুর কান্নাভেজা চোখ দুটো খুশিতে চিকচিক করে ওঠে, ও কাঁ'দতে কাঁ'দতে বলে,

--আপা কোম্পানি থেকে মেইল এসেছে, ওরা মাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ইউএসএ নিয়ে যাবে । এটাতো খুশির খবর।

অনু একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে,রাগ মিশ্রিত গলায় বলে,

-- হ্যা এটা খুশির খবর কিন্তু এই মেইলটা আরও একমাস আগে এসেছে,ওরা ভিসা টিকিট সব পাঠিয়ে দিয়েছিলো, এই সপ্তাহেই ফ্লাইট।আজ কৌতুহল বসত আমি যদি মেইলের ইনবক্স না চেক করতাম তাহলে এই টিকিট আর ভিসা আমাদের কোনো কাজেই আসতো না, কারন গত একটা বছর ধরে তুই শুধু রোবটের মতো মেইলই পাঠিয়ে গেছিস,কখনো ইনবক্স কিংবা আদারবক্স চেক করেও দেখিস নি। যদি আমি এটা আরও এক সপ্তাহ পরে চেক করতাম তাহলে আমাদের মায়ের চিকিৎসার কি হতো, বল আমাকেএএ?

অনুর রু'ষ্ট চিৎ'কার শুনে কেঁপে ওঠে অরু।

ওর এই মূহুর্তে কিছু বলার নেই। প্রথম প্রথম কয়েকমাস ইনবক্স চেক করেও কোন লাভ হয়নি,তাই ও ধরেই নিয়েছিল এই ইমেইলের কোনরূপ প্রতিক্রিয়া আর আসবে না, অতএব প্রতিদিন ইনবক্স দেখে দেখে আশাতীত হওয়ার কোন মানেই হয়না, এতে ক'ষ্টটা দিগুণ হয়ে হৃদয়ে জেঁকে বসে। কিন্তু সকল চিন্তা ভাবনার উর্ধে গিয়ে এমন কিছু হবে সেটা অরু কল্পনাতেও ভাবেনি। ও আরও একবার সচকিত চোখে ল্যাপটপের মেইলটায় চোখ বোলালো, সকল নিয়ম নীতি হলফ করার শেষে একেবারে নিচে ছোট ছোট অক্ষরে লেখা,

মি. প্রতয় এহসান

সি এফ ও, অফ

জে.কে গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রি।

অরু নামটা দ্বিতীয় বার আওরায়

--প্রত্যয় এহসান,ইনি কে আপা?

অনু ঠোঁট উল্টে বলে,

--হবে হয়তো কোম্পানির দায়িত্বরত কেউ।

অরু একেএকে সবগুলো টিকেট চেক করলো, তার মধ্যে অরোরা শেখ নামের ওও একটা টিকেট রয়েছে।

অনু পাশে এসে বলে,

--আমি বুঝলাম না অরু তোর জন্যওও টিকিট পাঠানো হয়েছে, তুই অবশ্য না গেলেও হতো।

অরু আশ্চর্য হয়ে পেছনে চাইলো,

--কি বলছিস আপা?? তোরা অতদূর চলে যাবি, আর আমি এই ফাঁকা ক্রীতিক কুঞ্জে একা একা থাকবো?? ভুতেরা আমাকে আস্ত রাখবে বলে তোর মনে হয়??তুই এটা বলতে পারলি?আমি নির্ঘাত তোর সৎ বোন।

--হয়েছে, ড্রামা বন্ধ কর, আমি কেন বলছি সেটা শুধু আমিই জানি।

--কেন বলছিস??

--যতই উন্নত চিকিৎসা হোকনা কেন, মায়ের কাছাকাছি সবসময়ই আমাকে থাকতে হবেরে, তাহলে বিদেশের বাড়ি তোকে আমি কার কাছে রেখে যাবো বল? তারউপর ক্রীতিক ভাইয়া মানুষটা সুবিধার না।

অরু মৃদু হেসে অনুকে আস্বাস দিয়ে বলে, --আমি কি আর ছোট আছিরে আপা? আমি ঠিক সব পরিস্থিতি ম্যানেজ করে নেবো তুই দেখিস, তাছাড়া এতোগুলো বছর পর তিনি নিশ্চয়ই আগের মতো নেই, হতে পারে এতোদিনে বিয়েশাদি করে আমাদের জন্য বিদেশিনী ভাবি রেডি করে রেখেছে।

অনু অরুকে জড়িয়ে ধরে ওর গালে আলতো চুমু খেয়ে বলে,

--সরি সোনা। জানিস আমার অনেক খুশি লেগেছিল যখন মেইল গুলো দেখছিলাম, কিন্তু রা'গটা তখনই হয়,যখন ভাবলাম এই মেইল একসপ্তাহ পর পেলে আমাদের টিকেট ক্যান্সেল হয়ে যেতো,আমাদের মাকে আরও ভুগতে হতো।

অরু মুখ কালো করে,মাথা নুইয়ে বলে,

--তুই না আপা,আমিই সরি,আমিই তো খামখেয়ালি করে কিছুই চেক করতাম না। আমাকে ক্ষমা করে দে প্লিজ।

--হ্যা দেবো, তবে একটা শর্ত আছে।

--কি শর্ত?

--এখন এই মূহুর্তে আমার সাথে মার্কেটে যাবি, অনেক প্রয়োজনীয় শপিং করতে হবে, এই সপ্তাহেই ফ্লাইট।

অরু নিজের হাতের বাঁধন শক্ত করে, অনুর গলা জড়িয়ে ধরে খিলখিলিয়ে হেসে উঠে বলে, --আপা!! আই লাভ শপিং, কতদিন নতুন জিনিসের গন্ধ পাইনা।

তারপর আনমনেই বলে,

--এবার আমি নিখিল ভাইকে ঠিক খুজে বের করবো।

*****************************************

আজ রোববার, প্রতিদিনের মতো আজও পরন্ত বিকেলে তীর্যক সূর্য কীরন হানা দিয়েছে খোলা আঙিনার ন্যায় মহলের বিস্তার ছাঁদ জুড়ে। বসন্তের দক্ষিণা বাতাসে পতপত করে উড়ছে রশিতে শুকাতে দেওয়া সারিসারি জামাকাপড়। সেগুলোই নিতে এসেছে অরু। তবে ছাঁদে পা রাখতেই মনটা কেমন উদাসীন হয়ে গেলো ওর।পায়ে পায়ে এগিয়ে গিয়ে বসে পরলো শ্যাওলা পরা চ্যাপ্টা রেলিংএর উপর। বসার দরুন হাটু অবধি খোলা চুল গুলো ধুলো ময়লা জমা মেঝেতে গিয়ে ঠেকলো। গোধূলী বেলার মেঘ ভেজা বাতাসের তালে তালে হাঁপড়ে একটা চাঁপা নিঃশ্বাস বেড়িয়ে এলো ওর বুক চিড়ে।

আজমেরী শেখকে ইতিমধ্যে এমারজেন্সি ফ্লাইটে তুলে দিয়ে এসেছে ওরা দু'বোন,ওদের ফ্লাইট রাতে। আর কয়েক মূহুর্ত মাত্র তারপর এই মহল, বাগান বিলাশে ঘেরা বিশাল বাড়ি, বাড়ির পেছনের সুপারি বাগান, সামনের বিশাল গেইট সব কিছু মানবশূন্য হয়ে পরবে। প্রিয় ক্যাম্পাস, প্রিয় বান্ধবী, আর সব চেয়ে প্রিয় নিখিল ভাই,সবাইকে ছেড়ে বহুদূরে পারি জমাবে অরু।অচেনা দেশে, সব অচেনা মানুষের ভীরে সাদামাটা বাঙালী অরুর জন্য কি অপেক্ষা করছে কে জানে?

কেবল ভরসা একটাই মায়ের সুস্থতা, আর মন গহীনের অযাচিত এক অদম্য ইচ্ছা,নিখিল ভাইকে খুঁজে বের করা। অরু জানে কাজটা এতোটাও সহজ নয়, তবে ও চেষ্টা করবে।পৃথিবীটা তো গোলকার,তার উপর একই দেশে থাকবে ওরা, ইন্টারনেটের যুগে অতোটাও কষ্টকর হবে না ব্যাপারটা,ভাবতেই বিষন্ন মুখে একচিলতে হাসি ফুটে উঠলো অরুর।

-- আমি আসছি নিখিল ভাই। ঠিক খুঁজে বের করে নেবো আপনাকে।

অরুর দিবাস্বপ্নতে টান পরে নিচ থেকে অনুর বাঁজ খাই আওয়াজে,

-- কিরে অরু হাওয়া হয়ে গেলি নাকি, নিচে নাম নয়তো আমি ব্যাগ গুছিয়ে এয়ারপোর্ট চললাম।

*****************************************

টাইম ফ্লাইস, ইয়েস ইট ইজ......

এই যেমন চব্বিশ ঘন্টা আগেও অরু পুরান ঢাকার নাম করা বাড়ি ক্রীতিক কুঞ্জের ছাঁদের কোনে দাড়িয়ে ঝিরঝির হাওয়া খাচ্ছিলো। আর এখন এই মূহুর্তে মোটা পশমি লেদার জ্যাকেট পরেও হু হু বাতাসে থরথর করে শীতে কাঁপছে।

এয়ারপোর্ট থেকে গাড়িতে উঠে কাঁপাকাঁপি একটু কমেছে দু'বোনের তবে লম্বা জার্নিতে বড্ড কাহিল হয়ে গিয়েছে শরীরটা। অনুর চেয়েও অরুর অবস্থা বেগতিক কারণ পুরো ফ্লাইটে কিচ্ছু খেতে পারেনি ও।অরুর যে মা'রা'ত্মক রকমের ফ্লাইট ফো'বিয়া আছে, সেটা এই প্রথমবারই জানলো অনু। ভাগ্যিস কোম্পানি থেকে গাড়ি পাঠিয়ে ওদেরকে পিক করা হয়েছে নয়তো এই অচেনা শহরে অরুকে নিয়ে নির্ঘাত বিপ'দে পরতে হতো অনুর।

অনু অরুকে নিয়ে দুশ্চিন্তা করলেও, অরুর মনে অন্য কিছু চলছিল, ওও ভাবছে, তিথি আর নিলীমার কথা, সেদিন অযাচিত কিছু কথা মুখ ফুটে বলে দেবার পর আর মুখোমুখি হয়নি ওদের। নিজের আত্মগ্লানিই ওকে আটকে রেখেছিল,যাদের সামনে সবসময় নিজের নির্ভীক ব্যাক্তিত্বটা ধারণ করে এসেছে সবসময় তারাই কিনা ওকে নিচু চোখে দেখবে, ফ্র'ট ভাববে এসব ভাবতেই লজ্জায় চোখ মুখ বুজে আসে অরুর।যার যের ধরে এতো দূর চলে এসেছে তবুও নিজের বান্ধবীদের একটাবার জানায়নি পর্যন্ত বরং অরুর মনে হচ্ছিলো দেশ ছেড়ে চলে গেলেই ভালো হবে,তিথি আর নিলীমার মুখোমুখি হতে হবেনা আর। ও বেঁচে যাবে।

*****************************************

সানফ্রান্সিসকোর শহুরে পরিবেশ ছাড়িয়ে আরও প্রায় ঘন্টা খানিক গাড়ি চললো। নির্জন হাইওয়ে রাস্তায় মাঝেমধ্যে দু'একটা প্রাইভেট কার ছাড়া আর কিছুই চোখে পড়লো না ওদের, কিছুদূর পর পর রাস্তার কোল ঘেঁষে দু'একটা ওয়ালমার্ট আর ম্যাক ডোনাল্টস এর ক্যাফেটেরিয়া দেখা গেলো।তবে সেগুলো ও জনমানবশূন্য। এছাড়া রাস্তার দু'পাশে যা চোখে পরে তা হলো উঁচু নিচু পাহাড় আর সারিসারি উইল্ডমিল।

তবে চারিদিকের পরিবেশ প্রান জুড়িয়ে দেবার মতোই সুন্দর। আঁকাবাঁকা পাহাড়ি রাস্তা গুলো পরিষ্কার তকতকে দেখে মনে হচ্ছে আজই পিচ ঢালা হয়েছে এতে। অথচ বাংলাদেশ হলে মানুষের গিজগিজ আর ময়লা আবর্জনায় রাস্তার মুখ খানা পর্যন্ত দেখার উপায় নেই।

যেতে যেতেই অরু বোধ করলো, এদেশের মানুষ যতটা শৌখিন ঠিক ততটাই পরিশ্রমী।

আসলে এখানে অরুর কোন দোষ নেই, প্রথম পরিচিতিতে মানুষের ভালো দিক গুলোই বেশি নজরে আসে।

*****************************************

অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে একটা ছোটমোটো ডুপ্লেক্স বাড়ির সামনে গিয়ে থামলো গাড়িটা, এতোক্ষন সব কিছু ঠিকঠাক লাগলেও হুট করেই নার্ভাস লাগতে শুরু করেছে অরুর, হাত পা গুলো যেন অবস হয়ে এসেছে, সেই সাথে ব'মিব'মি ভাব। মনে হচ্ছে কিছু একটা গলায় আঁটকে আছে। কিছুক্ষন বাড়িটার দিকে তাকিয়েই কাটিয়ে দিলো ও। ততক্ষণে অনু নেমে ওপাশ থেকে বারবার তাড়া দিচ্ছে।

-- কি হলো নাম, তোকে রেখে আমি হসপিটালে যাবো, ইমার্জেন্সী কল এসেছে।

গাড়ির সাউন্ড প্রুভ কাঁচ গলিয়ে সে কথা অরুর কানে গেলোনা, ও আস্তে ধীরে সময় নিয়ে নামলো। বাইরে প্রচন্ত বাতাস আর গুড়িগুড়ি বৃষ্টিতে ঠান্ডায় জমে যাওয়ার উপক্রম।

অরু নামলে, ড্রাইভার মতো লোকটা একটা কার্ড ধরিয়ে দিয়ে বললো,

--দিস ইজ হাউজ পাসওয়ার্ড।

অরু মাথা কাত করে কার্ডটা নিলো।

অনু এগিয়ে এসে অরুকে বললো,

--তারাতারি চল জমে যাবো নইলে।

অরু এখনো নিশ্চুপ, শুধু উপর নিচ মাথা নাড়িয়ে সায় জানালো।

কিন্তু অনুর আর বাড়ির ভেতরে ঢোকা হলো না, তার আগেই ওর ফোনটা বেজে ওঠে, ফোন রিসিভ করে অনু কি কি বললো সেসব কিছুই কানে যায়নি অরুর।

তবে তার পরপরই ওর শরীর জমে হীম হয়ে গিয়েছে। বাইরের খারাপ ওয়েদার এই শীতলতার কাছে কিছুই নয়। কারন এবার ওর শরীর নয় বরং ক'লিজা জমে এসেছে। একটু আগে ফোনে কথা শেষ করে, অনু এসে জানায়,

-- আমাকে এক্ষুনি হসপিটালে যেতে হবে অরু, অনেক ফর্মালিটিস বাকি,আর সব কাগজ পত্র আমার ব্যাগে, এগুলো না পূরন করলে ওরা মাকে ভর্তি করাতে পারবে না,মায়ের শরীর আরও খা'রাপ হয়ে যাবে। তুই পাসওয়ার্ড দিয়ে দরজা খুলে ভেতরে গিয়ে বিশ্রাম কর, আমি যত তারাতাড়ি সম্ভব চলে আসবো।

অরু চমকায়, হকচকিয়ে বলে,

-- নানা আমি একা একা ভেতরে যেতে পারবো না, যদি কেউ থাকে, তার চেয়ে বরং আমি তোর সাথে যাবো।

--- পাগলামি করিস না অরু,বাইরের অবস্থা দেখেছিস?? আমি সিওর রাত হলে ঝ'ড় আসবে, তাছাড়া তুইনা বলেছিস,আমার কথা শুনবি।

অরু ঠোঁট উল্টে কাঁদও কাঁদও হয়ে বলে,

-- আমার ভ'য় করছে আপা, যদি ভেতরে কেউ থাকে??

--- আমি যতদূর জানি কেউ বাড়িতে নেই, নয়তো ড্রাইভার পাসওয়ার্ড দিতোনা, আর যদি থেকেও থাকে তুই নিজের পরিচয় দিবি,কোনো বোকামি করিস না, কেমন??

অরু ঘার কাত করে সায় জানালো।

-- অনু পুনরায় গাড়িতে উঠে পরে, যেতে যেতে বলে সাবধানে থাকবি, প্রয়োজন হলে ফোন করবি।

--- কিভাবে ফোন করবো আমার কাছেতো সীম কার্ডই নেই। মাথা নিচু করে বিরবিরিয়ে কথাটা বললো অরু।

অচেনা দেশ,অচেনা শহর, অচেনা একটা বাড়ি,এখন আপাও চলে গেলো, এর চেয়ে অসহায় বোধ হয় এই আঠারো বছরের জীবনে আর কোনোদিন লাগেনি অরুর।

চারিদিকের অবস্থা বেগতিক, আকাশটা কালও মেঘে ঢেকে ঘুটঘুটে অন্ধকার হয়ে আছে, এখানে আর দাড়িয়ে থাকার উপায় নেই, তাইতো দুরুদুরু বুকে ফ্রেন্স গেটটা খুলে ফ্রন্ট ইয়ার্ড থেকে পা টিপে টিপে সদরদরজার সামনে গিয়ে দাঁড়ায় অরু, তারপর কার্ডে টুকে দেওয়া পাসওয়ার্ড দিয়ে দরজা খোলে ও। আশ্চর্য হলেও সত্যি পাসওয়ার্ডটা ছিল খুবই কঠিন। কে এতো বুদ্ধি খাঁটিয়ে কৌশলী পাসওয়ার্ড সেট করেছে সেটাই আপাতত ভাবছে অরু। তবে ওর ভাবনা বেশিক্ষণ স্থায়ী হলোনা তার আগেই সদর দরজা খুলে গেলো।

ভেতরে প্রবেশ করে চারিদিকে একবার ভালো করে চোখ বুলিয়ে নিলো অরু,কেউ নেই বাড়িতে। লোকালয় ছাড়িয়ে অনেকটা নির্জন পরিবেশে ছোট্ট একটা ডুপ্লেক্স বাড়ি। নিচ তলার পুরোটা জুড়ে বিশাল হল রুম, তার একপাশে আধুনিক ধাঁচের কিচেন কাউন্টার, কাউন্টারের সামনে সেট করা দুটো বারস্টুল কিচেন আর হলের মাঝে কোন দেওয়াল নেই,বরং কিচেন কাউন্টারের সামনেই গোলাকার ডাইনিং। হলে রুমের ঠিক অন্যমাথায় কিছু আধুনিক কারুকাজ করা নড়ম সোফা আর ডিভান। ডিভানের উপর এবরো থেবরো হয়ে পরে আছে একটা কুমড়ো সাইজের কালো রঙের হেলমেট।তারসামনে বিশাল মনিটর।

--টিভি হবে হয়তো, কিন্তু এতো বড় টিভি কে দেখে ভাই? ভ্রু জোড়া কুঁচকে গেলো অরুর।

সামনের দিকে ভালো করে পর্বেক্ষন করে পেছনে চাইলো ও, দেখলো দক্ষিণ দিকের দেওয়ালটা পুরোটাই কাঁচের।

অরু ঠোঁট উল্টে মিনমিনিয়ে বললো,

-- বোরিং, প্রয়োজনের বাইরে কোনো জিনিসই নেই, এতো সুন্দর বাড়িটা আমার হলে আমি মন ভরে সাজাতাম।

আপাতত আর কিছুই দেখার ইচ্ছে নেই ওর, শরীরটা বড্ড ক্লান্ত। বাড়িতে কেউ নেই ব্যাপারটা বুঝে উঠতেই কাঁচুমাচু ভাবটা কমে গিয়ে ঝরঝরয়ি দিগুণ ক্লান্তি নেমে এসেছে শরীর জুড়ে, কাঁচের চকচকে সিরি বেয়ে উপরে উঠে কোনমতে ভারি জামাকাপড় পাল্টে, প্লাজো আর টিশার্ট গায়ে চড়িয়ে, শরীরটাকে ছেড়ে দিলো নরম বিছানা আর কম্ফোর্টারের ভাজে।

*****************************************

অরু, এই অরু, অরুউউউ

সুন্দর ভেলভেটের ন্যায় নড়ম বিছানার মধ্যে থেকেই নরেচরে উঠলো ঘুম কাতুরে অরু।

--অরুউউ,

অনেক দুর থেকে আপার আওয়াজ ভেসে আসছে, মনে হয় সকাল হয়েছে তাইতো প্রতিদিনের মতোই এতো ডাকাডাকি।

কিন্তু আজ ঘুমটা বড্ড ভারী লাগছে, চোখ খোলাই যাচ্ছে না, এতো নরম কেন লাগছে বিছানাটা।মনে হচ্ছে শরীরটা টানছে নিজের দিকে।

অনু আবারও ডাকে শব্দ করে,

--অরু ওওওঠ!!

ঘুমের মাঝেই অরু বলে ওঠে,

--ঘুমাতে দে না আপা, এই বিছানাটা অনেক নরম আর এই কুশনের এর গন্ধটা চন্দন কাঠের মতো, এই বলে কুশনে নাক ডুবিয়ে আবারও লম্বা শ্বাস টানে অরু।

এদিকে অরুর কান্ডে অনুর লজ্জায় জা'ন যায় যায় অবস্থা। ও চোখ খিচে অস্পষ্ট সুরে বলে,

--অরুউউ ওঠ, এটা তোর রুম নয়, আর না তুই বাংলাদেশে আছিস।আমরা আজ সন্ধায়ই আমেরিকা এসেছি ভুলে গেছিস, আর এই মূহুর্তে তুই অন্য কারও রুমে ঘুমিয়ে আছিস।

অনুর শেষ কথাটা একেবারে ছক্কা লাগার মতোই অরুর মস্তিস্কে গিয়ে লাগলো। সঙ্গে সঙ্গে ধরফরিয়ে উঠে বসলো অরু, মুখের কোনে জমে যাওয়া লালাটুকু মুছে শুষ্ক ঢোক গিলে হাঁপাতে হাঁপাতে বললো,

--কি বলিস আপা কার রুমে আমি?

অনু আড় চোখে দরজার দিকে দেখালো, অরু ওর দৃষ্টি অনুসরণ করে সেদিকেই চাইলো,দেখলো ফুল স্লিভ সাদা টিশার্ট আর আর ব্ল্যাক ট্রাউজার পরিহিত লম্বা মতো লোক, অরু এক পলকেই এই সুদর্শন পরিচিত মুখটা ধরতে পেরেছে, এটা অন্য কেউ নয় সয়ং জায়ান ক্রীতিক চৌধুরী।

অরুর মাথাটা ভোঁ ভোঁ করে ঘুরছে, কি করেছে ও এটা? কার বিছানায় এতোক্ষণ ধরে ঘুমিয়েছে??

এই মূহুর্তে দরজার বাইরে থেকে ওর দিকেই অনুভূতিহীন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে লোকটা, নিস্প্রভ,শীতল চাউনি, কিন্তু বরফ কেঁ'টে ফেলার মতোই ধা'রালো তার তীক্ষ্ণতা চোখ দুটোতে। কি আছে ওই চোখে? রাগ, বিরক্তি, কৌতূহল নাকি অন্য কিছু?? ধরতে পারলো না অরু, পাছে শুধু আস্তে করে ভয়ার্ত ঢোক গিললো।

-- তারাতারি চল আমাদের রুম অন্য পাশে, অনু তাড়া দিতেই অরু তরিঘরি করে উঠে অনুর পেছন পেছন চলে যায়, যাওয়ার সময় খুব সতর্কে আরও একবার পেছনে তাকায় ও,

পেছনে তাকাতেই, হুটকরে চোখাচোখি হয়ে যায় ওই রহস্যে ঘেরা চোখ দুটোর সাথে। সঙ্গে সঙ্গে হৃদয়টা কেঁপে ওঠে ওর, করিডোরের মাঝ বরাবর পকেটে হাত গুঁজে দাড়িয়ে এখনো একই ভাবে তাকিয়ে আছে ক্রীতিক।

অরু আর তাকানোর সাহস পেলোনা, দাঁত দিয়ে নখ কা'ম'ড়াতে কা'ম'ড়াতে দ্রুত অন্য রুমে ঢুকে পরলো ও।

ওরা চলে গেলে ক্রীতিক ও নিজের রুমে পা বাড়ায়, রুমে ঢুকতেই ফ্লোরে পরে থাকা মেয়েদের কাপড় চোপড়ে পা আটকে যায় ওর। সেগুলো একপ্রকার ইগনোর করেই বিছানায় গা এলিয়ে দিলো ও, কুশনটা এখনো অরুর লালায় ভিজে আছে, তারঠিক পাশে সুতোর মতো আঁটকে আছে একটা লম্বা চুল।

ক্রীতিক চুলটা হাতে তুলে ধরে, সাভাবিকের চেয়েও বেশ লম্বা চুলটা।

খানিকক্ষণ ওটাকে উল্টে পাল্টে নিয়ে ভ্রুকুটি করে ক্রীতিক বলে,

--এতো বড় কবে হয়ে গেলো?

■■■■■■■■■■■■■■■■■■■■■■■

#পর্বঃ০৫

নবদিগন্তের সূচনা হয়েছে ধরনীতে। তবে আজকের সূচনাটা বেশ অন্যরকম, পাখির কিঁচিরমিচির, ভোরের নরম রোদ, কাঁচের জানালার ফাঁক গলিয়ে সূর্যের ম্যাজিক্যাল আলোছায়া, কিংবা অনুর গলা ছেড়ে বাঁজখাই চিৎকার সব কিছুই অনুপস্থিত আজ।

ফোনে সকাল নয়টার এলার্ম বেজে যাচ্ছে অনর্গল। অরু চোখ মেলে সটান হয়ে শুয়ে শুভ্র সিলিংএর পানে চেয়ে আছে, আজ আর এলার্ম ওর ঘুম ভাঙাতে পারেনি।ওরা পৃথিবীর উল্টো দিকে আছে সে হিসেবে বাংলাদেশে এখন সন্ধারাত। রাত দিনের এই তারতম্যের কারনেই সারারাত এপাশ ওপাশ করে নির্ঘুম কাটিয়ে দিয়েছে অরু। তারউপর রাতের ওই ঘটনা, কথা নেই বার্তা নেই একেবারে সিং'হের গু'হায় গিয়ে হাজিরা দিয়ে এসেছে। কি সাংঘা'তিক, ভাবলে এখনো পিলে চমকে ওঠে অরুর।

.

সকাল নয়টা বেজে পয়ত্রিশ। অনু একটু আগেই রেডি হয়ে বেরিয়ে গিয়েছে হসপিটালের উদ্দেশ্যে। বলেছে কি একটা জরুরি কাজ আছে তাই সকাল সকাল যাচ্ছে। বয়সের তুলনায় অনুর মধ্যে ম্যাচিউরিটি ভাবটা অনেক বেশি, দায়িত্ব জ্ঞানের দিক দিয়ে সবসময় সচেতন সে। আসলে বাস্তবতা যার দরজায় বেশি হা'না দেয়, সেই ততবেশি ম্যাচিউর হয়,এখানে বয়সের কোন হাত নেই।

অরু তখনও শুয়েই ছিল,উদাসীন হয়ে কি জানি কি ভাবছিল।তখনই নিচ থেকে এক অপরিচিত কন্ঠস্বর কানে ভেসে এলো ওর। গলার আওয়াজ শুনে মনে হচ্ছে পুরুষ মানুষ।লোকটা নিচ থেকেই হাক পেরে পেরে ডেকে চলেছে তখন থেকে।

--- জেকে, জেকেএএ, আমি জানি তুই রুমে আছিস নিচে নাম এক্ষুনি, নইলে কিন্তু আমিই উপরে চলে আসবো।ইম্পর্টেন্ট কথা আছে ইয়ার!!

লোকটা আবারও ডাকতে যাবে,তখনই উপর থেকে ভেসে আসা মেয়েলী রিনরিনে কন্ঠস্বর সুনে,হকচকিয়ে গেলো সে।

--এই বাসায় মেয়ে কোত্থেকে এলো? ভুল এড্রেসে আসিনিতো?

অরু রুম থেকে বেরিয়ে দোতলার করিডোরে দাড়িয়ে মালকিনের মতো করে গলায় আত্নবিশ্বাস জমিয়ে বললো,

--এখানে জেকে বলে কেউ থাকেনা ভুল বাসায় নক করেছেন।আ....

অরুর কথা মাঝ পথেই আটকে গেলো,কারন ততক্ষণে পাশের রুম থেকে ক্রীতিক ওও বেরিয়ে এসেছে,লম্বায় অরুর চেয়ে দিগুণ ক্রীতিক, ওর মুখভঙ্গিমা দেখতে হলে অরুকে মাথা উঁচিয়ে চাইতে হয়, এই মূহুর্তে অরু সেভাবেই তাকিয়ে আছে ক্রীতিকের মুখের দিকে, অনুভূতিহীন টকটকে ফর্সা মুখ, ফর্সা মুখশ্রী জুড়ে দু'দিন ক্লীন সেভ না করা খর দাড়িগুলো মাথা চাড়া দিয়ে আছে। দাঁতে দাঁত চেপে আছে বলে তীক্ষ্ণ চোয়ালটা ব্লে'ডের মতোই ধা'রালো মনে হচ্ছে, লম্বা চুল গুলো এলোমেলো হয়ে কপাল ছুয়ে আছে আর পেছন দিক থেকে ঘার, সেই সাথে এটে আছে গোলাকার দুটো ভাসা ভাসা চোখ। প্রথম দর্শনে একত্রিশ বছরের ক্রীতিক কে অরুর চোখে গ্রীক গডের মতোই সুদর্শন ঠেকলো।

--গো ব্যাক টু ইউর রুম।

পাশ থেকে আসা,একটা গমগমে আওয়াজে অরুর ধ্যান ভেঙে গেলো।বেকুবের মতো পাশে তাকিয়ে উল্টে আবার প্রশ্ন করলো,

--অ্যা??

ব্যাপারটা এমন যে, আমাকে বলছেন? কারন ক্রীতিকের দৃষ্টি এখনো একই ভাবে সামনের দিকেই স্থীর।

-- গো ব্যাক টু ইউর রুম।

শাস্ত, নিস্প্রভ কন্ঠস্বর, তবে কথার মাঝেই আটকে আছে কঠোর আদেশ।

ক্রীতিকের এক্সপ্রেশন, বাচনভঙ্গিমা,কিছুই মাথায় ঢুকলো না অরুর, ও উল্টে বাঁচালের মতো বলতে শুরু করলো,

--- আরে আমি কেন রুমে যাবো? দেখতে পাচ্ছেন না , কথা নেই বার্তা নেই অন্যের বাসায় ঢুকে লোকটা জেকে জেকে বলে চেচাচ্ছে, ওটাকে আগে বিদায় করতে হবে।

-- রুমে যেতে বলেছি তোকে।

এবার কাঠকাঠ স্পষ্ট বাংলায় অরুর মুখের দিকে তাকিয়েই কথাটা বললো ক্রীতিক।

অরু ভয়ার্ত ঢোক গিললো, এক মূহুর্তের জন্য মনে হলো ওও আট বছর আগের ক্রীতিকের সামনে দাড়িয়ে আছে। তারপরেই ওর ডানপিটে মস্তিস্কটা সচকিত হয়ে উঠলো ওর, মনেমনে ভাবলো,

--উনি যা বলবে সেটাই আমাকে শুনতে হবে নাকি আশ্চর্য, আমিকি এখনো ছোট আছি যে ওনাকে ভ'য় পাবো হুহ।

মনেমনেই নিজেকে মিস.সাহসী অফ দা ইয়ার এওয়ার্ডটা ছুড়ে মা'রলো অরু।

-- কি হলো কথা কানে যায়নি??

--- যাবোনা। এ যেন অরুর স্বঘোষিত স্নায়ু যু'দ্ধ।

ক্রীতিক নিজের চোখ দুটো বন্ধ করে মেজাজ সংবরণ করলো, তারপর রুষ্ট কন্ঠে বললো,

--- মুখে মুখে ত'র্ক আমার একদম পছন্দ নয় অরু।

"অরু". ক্রীতিকের ঘুমঘুম হাস্কি গলায় নিজের ছোট্ট নামটা শুনে আরও একবার বক্ষপিঞ্জরে কিছু একটা শক্ত টান অনুভব করলো অরু।কেন যেন মনে হলো অরু নামটাও অনেক ভারী আর কঠিন। পৃথিবীর ইতিহাসে এই নামের অস্তিত্ব কোন কালেই ছিলোনা,পৃথিবীর সব থেকে আনকমন নাম এটা।

কিন্তু সেসবে মাথা ঘামিয়ে দমলো না অরুর আত্নঅ'হংকা'রী মন, বরং নতুন উদ্যমে ক্রীতিকের কথার কাঠকাঠ জবাব দেওয়ার প্রস্তুতি নিলো সে। যাকে বলে এক বলেই ছক্কা হাঁকানো।

ঠিক তখনই আগমন ঘটে নিচতলার তৃতীয় ব্যাক্তির।

--- কিরে, দেখছিস তখন থেকে ডাকছি তবুও পকেটে হাত গুজে খাম্বার মতো দাড়িয়ে আছিস? আমাকে কি তোর মানুষ মনে হয়না?

লোকটা এগিয়ে আসতেই ক্রীতিক অরুর সামনে এসে ওকে আড়াল করে দাড়ায়। চম্বা চওড়া,গ্রীক গড সেইপ ওয়ালা বডির অধিকারী ক্রীতিকের পেছন থেকে রোগা অরুকে তো দুরে থাক ওর ছায়াটা পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে না।

অতঃপর ক্রীতিক বলে,

--- কি চাই??

--- চাই মানে??আমেরিকান সুপার মডেল সায়র আহমেদ কি তোর ভিক্ষারী মনে হয়??

--- না, তবে ছ্যাঁচরা মনে হচ্ছে।

-- কিহ!

--তোরা সবকটা মিলে আবারও আমার হাউজ পাসওয়ার্ড হ্যা'ক করেছিস তাইনা।

সায়র মুখে বিরক্তি ফুটিয়ে বললো,

-- এছাড়া উপায় কি?? নক করলে তো জীবনেও দরজা খুলিস না,ফোন ধরিস না, এসএমএস সিন করিস না, হুটহাট উধাও হয়ে যাস। কোন দিন দেখবো একা একা এই ভু'তুরে বাড়িতে ম'রে পরে আছিস।আমার সন্দেহ হচ্ছে জেকে তুই আসলেই মানুষ তো? নাকি ভ্যা'ম্পায়ার টাইপ কিছু? সত্যি করে বল?

-- তোর ইচ্ছা, যা খুশি একটা ভেবে নে।

সায়র বিরক্তিতে চোখমুখ খিঁচে একনাগারে অভিযোগের লিস্ট উগরে দিচ্ছে।

এদিকে ক্রীতিকের পেছনে এখনো ঠায় দাড়িয়ে আছে অরু, দৌড়ে রুমে চলে যাওয়ার উপায় নেই, কারন ক্রীতিক ওর কব্জিটা শ'ক্ত করে চে'পে ধরে রেখেছে, মুখ দিয়ে কিছু বলবে,তার সুযোগ হচ্ছে না, কারন সায়রের মুখ ননস্টপ চলছে।

একটানা, একনাগাড়ে টানা দশমিনিট ধরে ননস্টপ কথা বলে তবেই ক্ষান্ত হলো সায়র।

দশ মিনিট? হ্যা দশ মিনিটই হবে, ক্রীতিক তো চুপচাপ ঘরির দিকেই তাকিয়ে ছিল।

পেছন থেকে অরু নিজের হাত ছাড়ানোর কসরত করে যাচ্ছে। কিন্তু ক্রীতিকের শ'ক্ত বাধনের কাছে সেই চেষ্টা পিপীলিকার সমতূল্য।

ওর পেছনে একটা ছায়া নড়াচড়া করছে দেখতে পেয়েই সায়র উদ্বিগ্ন হয়ে বললো,

-- তোর পেছনে ওটা কি জেকে?? তোর ছায়া এতো ছোট হয়ে গেলো কি করে, আর এমন নরছেই বা কেন?তোকে সত্যি সত্যি ভু'তে ধরলো নাকি?

দাড়া সবাইকে কল করে এক্ষুনি আসতে বলছি।

সায়র একটা মানুষ' ক 'বললে কলিকাতা বুঝে ফেলে। দেখা গেলো সত্যি সত্যি তিল থেকে তাল বানিয়ে ক্রীতিক কে প্র'টেস্ট বাই ঘোস্ট বানিয়ে ছাড়বে। তারপর শুরু হবে ওকে নিয়ে বেহুদা গবেষণা।

তাই সকল রহস্যের ইতি টেনে নিজের চোখ দুটো খিঁচে বন্ধ করে অরুর হাতটা ছেড়ে দিলো, ক্রীতিক।

সায়র সচকিত নজরে ওর পেছনে চাইলো, দেখলো স্কার্ট আর টিশার্ট পরা গোলগাল গড়নের পিচ্চি একটা মেয়ে,বিশাল লম্বা লম্বা সিল্কি চুলগুলো দুই পাশে ঝুটি করে বুকের সামনে ফেলে রেখেছে, একে কি বলা যায় কেশবতী? নাকি এলোকেশী?

সে যাই হোক মেয়েটার চেয়ারায় বিরক্তির ছাপ স্পষ্ট, ফর্সা আদুরে মুখটা রাগে লাল হয়ে আছে, কপালেও বিরক্তির ভাজ।

লাল লাল গাল দুটো দেখেই মনে হচ্ছে একটু টেনে দেই, সেই আশাতেই হাত বাড়িয়েছিল সায়র, পিচ্চিটার গাল টেনে দেবে বলে।

কিন্তু সে আশাতে একবালতি জল ঢেলে অরুকে একপ্রকার ধা'ক্কা মে'রে রুমের ভেতরে পাঠিয়ে দিয়ে ঠা'স করে বাইরে থেকে দরজা লাগিয়ে দিলো ক্রীতিক। সায়র উদ্বেগ প্রকাশ করে বললো,

--- এভাবে কেন ধা'ক্কা মা'রলি মেয়েটাকে? ওর নিশ্চয়ই লেগেছে, দেখেই মনে হচ্ছে তুলোর মতো শরীর।

ক্রীতিক দাঁত চেপে, ঘারের রগ ফুলিয়ে বলে,

--লাগুক, লাগার জন্যেই মে'রেছি। আর ওর শরীর তুলোর মতো নাকি লোহার মতো সেই চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেল।

-- এভাবে বলছিস কেন, পিচ্চি মানুষ তাই বলেছি। বাই দা ওয়ে কে ও??

-- নো ওয়ান।

এই বলে সিরি ডিঙিয়ে ধাপধাপ করে নিচে নেমে যায় ক্রীতিক।

সায়র ক্রীতিকের পেছন পেছন নামতে নামতে বলে, -

--বাই এনি চান্স তুই কি এই পিচ্চি মেয়েটার সাথে কিছু...... কথা শেষ করতে পারলো না সায়র তার আগেই ওর মুখ বরাবর একটা কুশন ছু'ড়ে মা'রে ক্রীতিক,

--মুখে লাগাম টান। তুই জানিস, আই ফা'কিং হে'ইট ওয়েম্যানস।

--- তাহলে মেয়েটা কে?দেখে তো মনে হচ্ছে বাঙালি।

ক্রীতিক আরামছে ডিভানে বসে পরলো, তারপর টি টেবিলে দু'পা তুলে দিয়ে কানে হেডফোন লাগিয়ে মনিটরে ভিডিও গেইম শুরু করতে করতে বললো,

-- বললাম তো নো ওয়ান, ট্রিট হার লাইক এ সার্ভেন্ট।

সায়র বুঝলো ক্রীতিক মেয়েটার ব্যাপারে কথা বলতে চাইছে না।

ওদিকে মি.জায়ান ক্রীতিকের বলা প্রত্যেকটা কথা স্পষ্ট ভাবে কানে পৌঁছালো অরুর। ঢোক গেলার মতো করেই প্রত্যেকটা অ'পমানজনক কথ গিলে নিলো অরু।মায়ের জন্য আপা কতকিছু করছে আর ও এতোটুকু সহ্য করতে পারবে না, তা কি করে হয়??

একটু আগে লাগা ধা'ক্কাটা বেশ জোরেই ছিলো, অসমান দেওয়ালে লেগে কনুইয়ের কাছটা ছিঁ'ড়ে গিয়ে র'ক্ত বের হচ্ছে। র'ক্ত বের হয়ে টিশার্টের হাতাটাও চ্যাটচ্যাটে হয়ে গিয়েছে।

ক্রীতিকের কথা গায়ে না মেখে, পায়ে পায়ে এগিয়ে গিয়ে ওয়াশরুমের ট্যাপ ছেড়ে র'ক্তা'ক্ত যায়গাটা ধুয়ে নিলো অরু।

তারপর সামান্য এনটিসেফটিক আর অন-টাইম ব্যা'ন্ডেজ ওও লাগিয়ে নিলো।

অরু বুঝে গিয়েছে এখন থেকে ঠিক এভাবেই নিজের ক্ষ'ত নিজেকেই সারাতে হবে ওকে। যা হয়ে যাক আপাকে কিচ্ছুটি বলা যাবে না।

*****************************************

সায়র কাউচে শুয়ে ফোন টিপছে, আর ক্রীতিক মনিটরে বাইক রাইড খেলছে,হঠাৎ করে কি মনে করে শোয়া থেকে উঠে বসে সায়র,চিন্তা গ্রস্থদের মতো কপালে ভাজ রেখে বলে,

--- এলিসার বাবা জে'ল থেকে ছাড়া পেয়ে গেছে।

ক্রীতিকের দৃষ্টি মনিটরেই আটকে আছে এখনো, ও চুইঙ্গাম চিবুতে চিবুতে বললো,

--আই নো।

--এবার নিশ্চয়ই খারাপ কিছু হবে এলিসার সাথে।

--- তুই আছিস কি করতে??

সায়র দীর্ঘনিঃশ্বাস ছেড়ে বললো,

---এবার আরও বেশি সতর্ক থাকতে, এবার শুধুমাত্র এলিসা নয়, আমরা চারজনই টার্গেট।

ক্রীতিক খেলাটা পজ করে, দোতলায় অরুর ঘরটার দিকে তাকিয়ে কিছু একটা ভাবলো, তারপর বিরবির করে বললো,

--ইফ হি ডেয়ার টু টাচ, আই সয়ার আই উ'ইল কি'ল হী'ম।

সায়র তাজ্জব বনে গিয়ে প্রশ্ন ছুড়লো

--- কি বলছিস বিরবিরিয়ে কাকে মা'র'বি তুই??

ক্রীতিক ওর ভ'য়ানক শীতল চাউনি নিক্ষেপ করলো সায়রের দিকে, বাঁজপাখির নজরের মতোই তীক্ষ্ণ সে চাউনি। ওর চোখ জোড়াই যেন একটা জীবন্ত থ্রে"ড, ঠোঁটের কোনে ক্রুর হাসি ঝুলিয়ে খুব আস্তে আস্তে জবাব দিল ক্রীতিক

--- এলিসার বাবাকে।

*****************************************

সকাল গড়িয়ে দুপুর হয়েছে, এখনো ফেরেনি অনু, অবশ্য ফেরার কথাও না, বলেই গিয়েছে ফিরতে সন্ধ্যা হবে, হঠাৎ করে বিদেশের মাটিতে পা রেখেই ওর আপার এতো ব্যাস্ততা ধরতে পারলো না অরু। এদিকে সারাদিন না খেয়ে থেকে শরীরটা কাহিল হয়ে গিয়েছে ওর। নিচে গিয়ে কিছু একটা খেতে হবে নয়তো, না খেয়ে প্রেশার ফল করে অ'সুস্থ হয়ে গেলে বিদেশের মাটিতে কে দেখবে ওকে?

যেমন ভাবনা তেমন কাজ। অরু দরজাটা সাবধানে একটু ঢিলে করে উঁকি দিলো বাইরে।

তৎক্ষনাৎ নিচ থেকে সকালের পুরুষালী কন্ঠটা আবারও ভেসে এলো কানে,

-- এই যে এলোকেশী, খেতে এসো।

অরু দু'পা সামনে বাড়িয়ে করিডোর দিয়ে নিচে চাইলো,দেখলো, এপ্রোন পরে হাতে ফ্রাইং প্যান নিয়ে ওর দিকে তাকিয়েই হাসছে সায়র।

ফর্সা মুখশ্রীতে সেই সাবলীল হাসি বেশ ভালোই মানিয়েছে। ঠিক তার অন্য পাসে ডাইনিং এ বসে চুপচাপ কাঁটাচামচ দিয়ে কিছু খাচ্ছে ক্রীতিক, ওর ভাবভঙ্গি এমন যেন ওর আশেপাশে কোনো মানুষই নেই, সব গরু ছাগল।

অরু এবার নিচে নেমে এলো। সায়র নিজের সাবলীল হাসিটা মুখে ঝুলিয়ে রেখেই ওর দিকে খাবারের প্লেট এগিয়ে দিয়ে বললো,

---বসে পড়ো।

অরু প্লেটের দিকে উঁকি দিতেই ওর চোখমুখ বিরক্তিতে কুঁচকে এলো, দুপুরের খাবারে এসব ঘাসপাতা কে খায়??সাথে একটুকরো মাংস ভাজা,স্টেক হবে হয়তো আর একটু খানি ম্যাসট পটেটো।

-- ব্যাস এটুকুই লাঞ্চ??

গোলগোল অসহায় চোখ করে ওদের দুজনার দিকে তাকালো অরু।

সায়র একবার অরুর দিকে আরেকবার ক্রীতিকের দিকে তাকাচ্ছে।

ক্রীতিক খেতে খেতে বললো,

---দেখতে তো এইটুকুনি, এতো খাবার রাখিস কোথায়???

খুব রাগ হলো অরুর,আমেরিকা এসেছে বলে এইসব ঘাসপাতা খেয়ে বাঁচতে হবে??

তাছাড়া ভাত নেই, ডাল নেই, তরকারি নেই এটা কেমন দুপুরের খাবার। ছ্যাহ। মনেমনে আমেরিকান গ্রীন কার্ডধারী বাঙালিদের হাজারটা তি'রস্কা'র জানালো অরু।দেশে থাকেনা বলে দেশের ঐতিহ্যটাও ম্যাস পটেটোর সাথেই ভর্তা বানিয়ে খেয়ে ফেলেছে এরা।

তারপর আলগোছে নিজের লম্বা চুলগুলো হাত খোঁপা করে,ওরনাটা কোমরে পেঁচিয়ে এগিয়ে গেলো রান্না ঘরের দিকে। কেবিনেট আর ফ্রীজ হাতরে, হাতের কাছে, চাল ডাল যা পেলো, সব কিছু একসাথে মাখিয়ে চুলায় বসিয়ে দিলো, কয়েক মিনিটের মধ্যেই খিচুরীর মো মো গন্ধে সুবাসিত হয়ে উঠলো চারদিক।

সায়র নিজের প্লেট সরিয়ে রেখে, রান্না ঘরের দিকে উঁকি ঝুঁকি দিচ্ছে।

ওর কান্ডে ক্রীতিক ভ্রু কুঞ্চিত করে বললো,

-- কি হলো খাচ্ছিস না কেন?? খেয়ে বিদায় হ।

সায়র দাঁত কেলিয়ে বললো,

--- খিচুড়ি, কতদিন পর বাঙালি খানা, লোভ সামলাতে পারছিনা।

ক্রীতিক আবারও নিজের খাওয়ায় মন দিলো।

একটু পর এক প্লেট খিচুড়ি এনে সায়রের সামনে রাখলো অরু।

গড়ম খিচুড়ির গন্ধে ক্ষিদেয় পেট গুড়গুড়িয়ে উঠলো ওর।

অরু,বললো,

---খেয়ে বলুন তো কেমন হয়েছে।

গড়ম খিচুড়ি মুখে নিয়েই আবেশে চোখ বুঁজে এলো সায়রের, ওর মুখের এক্সপ্রেশন দেখলেই বোঝা যায় ও খাবারটা ঠিক কতটা পছন্দ করেছে।

খাবার গিলে নিয়ে, তৃপ্তমাখা হাসি দিয়ে সায়র ক্রীতিককে বললো,

-- তোর বোন ফাটাফাটি রান্না করে দোস্ত। এরকম রান্না খেতে পারলে আমি যখন তখন তোকে শালা বানিয়ে ফেলবো, ড্যাম শিওর।

নিজের হাত মু'ষ্টিবদ্ধ করে অ'গ্নি দৃষ্টিতে অরুর ক্লান্ত মুখশ্রীটা পরখ করলো ক্রীতিক, তারপর একটা তাছ্যিল্যের হাসি দিয়ে বললো,

---ও আমার বোন নয়, ও আমার বোন হতেই পারেনা।

--- মানে??

সায়রের মুখে কৌতুহল স্পষ্ট।

-- ও আমার বাপের দ্বিতীয় বউয়ের আগের পক্ষ।

ক্রীতিকের এতো বি'শ্রী অপ'মানজনক সম্মোধনেও একটু ওও টললো না অরু, বরং মৃদু হেসে সায়রের উদ্দেশ্যে বললো,

---জি উনি ঠিকই বলেছেন, আমি ওনার আপন কিংবা সৎ কোন টাইপ বোনই নই। আমার নাম অরোরা শেখ।

ক্রীতিকের কথা সায়র ওও খুব একটা গায়ে মাখলো না,ওও অরুর কথার জবাবে একরাশ উচ্ছ্বাস নিয়ে জানায়,

---আমি সায়র আহমেদ, কিন্তু বাংলাদেশি নই ইন্ডিয়ান,আমার হোম টাউন দার্জিলিংএ।

দার্জিলিং নামটা শুনতেই আগ্রহের প্রবনতা বানভাসী হলো অরুর, দার্জিলিং আর কাশ্মীর ওর পছন্দের লিস্টে সবার আগে, জীবনে একবার হলেও যায়গা গুলোতে যেতে চায় অরু, পাহাড়ের গায়ে জমে থাকা মেঘ,বৃষ্টি, বরফ,ঝড়না, সব কিছু নিজ হাতে ছুয়ে দেখতে চায়।

নিজের মন গহীনে লুকোনো ইচ্ছার খানিকটা পর্দা খুলে যাওয়ার দরুন অরু বললো, ---জানেন দার্জিলিং এ ঘুরতে যাওয়া আমার অনেক দিনের সপ্ন।

--- তাই কোথায় ঘুরতে চাও দার্জিলিং এ,আর কার সাথে যাবে??

-- আ....

অরুর মুখ থেকে কথার বহর বের হতে না হতেই, সশব্দে হাতের কাঁ'টাচামচ টা ছু'রে ফেলে উঠে দাড়িয়ে পরলো ক্রীতিক, কয়েক কদম এগিয়ে গিয়ে অরুর মুখোমুখি দাড়িয়ে বললো,

--আই হে'ইট বাঙালি ফুড,ইভেন এভরিথিং।সো নেক্সট টাইম আমার বাসায় এসব চিপ রান্না, চিপ আলোচনা কোনোটাই করার সাহস করবি না।আই ওয়া'র্ন ইউ।

অরু স'ঙ্কিত হয়ে দু পা পিছিয়ে গেলো,চোখের সামনে কি ঘটছে কেন ঘটছে বুঝে উঠতে একটু টাইম লাগলো, ক্রীতিক বারবার ওকে অপ'মান করছে, ভে'ঙে ফেলতে চাইছে কিন্তু কেন?? বয়সে ওর থেকে অনেক বড় বলে??

তবে,অরুও তো চুপ মে'রে যাবার মেয়ে নয়,

ক্রীতিকের সুক্ষ অ'পমানের জবাবে, অরু পাল্টা তী'র ছু'ড়লো,বললো,

--আমি যতদূর জানি আপনি নিজেও খাঁটি বাঙালি, তার উপর নাম করা রাজনৈতিক বংশের ছেলে।

ব্যাস এতটুকু বলারই ফুসরত পেলো অরু, এরপরই টেবিলে রাখা স্টেক কাঁ'টার সিলভার রঙের ছু'ড়ি'টা ওর গলায় চেঁ'পে ধরে ক্রীতিক।

--হোয়াট'স রং জেকে,কি করছিস এটা?

ক্রীতিকের কান্ডে সায়র হকচকিয়ে উঠে কিছু বলতে যাবে,তার আগেই ওকে হাতের ইশারাতে থামিয়ে দিলো ক্রীতিক, দাঁত দিয়ে দাঁত পি'ষে ফেলে বললো,

---আমাদের মধ্যে কথা বলতে আসিস না সায়র।

ও যেভাবে "আমাদের"কথাটা উচ্চারণ করলো, মনে হচ্ছে স্বামী স্ত্রী তাদের স্টুপিড সাংসারিক ঝ'গড়া করছে,আর ওই তৃতীয় ব্যাক্তি হয়ে আগ বারিয়ে তাদের ঝগড়া থামাতে এসেছে,

কিন্তু ব্যাপারটা তো তেমন নয়, সায়র একদিনেই বুঝে গিয়েছে ক্রীতিক মেয়েটাকে অসম্ভব অপছন্দ করে। তাহলে কে রেখে গেলো মেয়েটাকে এখানে? এই জ'মের হাতে, এখন না হয় সায়র আছে, কিন্তু রাত বিরাতে হুট করে জেকে রেগে গেলে, তখন কি হবে??

সায়র ভাবতে ভাবতে সটান বসে পরলো।

ক্রীতিক এখনো একই ভাবে দাঁড়িয়ে আছে,

ভয়ে নিজের জামা নিজে শ'ক্ত করে চে'পে ধরে রেখেছে অরু। চোখ দুটোপানিতে ছলছল করছে এই গড়িয়ে পরলো বলে।

--- মুখে মুখে ত'র্ক আমার একদম পছন্দ নয়,এখন থেকে আমি যা বলবো তুই সেটাই করবি, আমার সামনে মোটেই ফা'কিং তে'জ দেখাতে আসবি না,নয়তো তোর তে'জ গলিয়ে দিতে আমার এক সেকেন্ড ও সময় লাগবে না।মাইন্ড ইট।

ক্ষী'প্ত'তা সুস্পষ্ট ওর দু'চোখে,সেই সাথে মুখের কথা গুলো চ'পেটাঘা'তের মতোই শ'ক্তিশালী।

তবুও কতো নির্বিঘ্নে কথাগুলো বলে,রুমে গিয়ে শব্দ করে দরজা লাগিয়ে দিলো ক্রীতিক।

ক্রীতিক চলে যেতেই অরুর চোখের জলের বাধ ভে'ঙে যায়, অসহায়ের মতো নিজের চোখের জলকে থামাতে বারবার চোখ মুছছে অরু। অভিমানী কা'ন্নায় নাকের ডগাটা লাল হয়ে গিয়েছে।

সায়র এগিয়ে গিয়ে, নিজের রুমালটা অরুর দিকে এগিয়ে দিলো।

-- মুখটা মুছে নাও অরু।

অরু নিলোনা, বরং দৌড়ে হল রুম ছেড়ে দোতলার ছাঁদ বারান্দায় চলে গেলো। বড্ড আত্মসম্মানে লেগেছে ওর। একজন অপরিচিত মানুষের সামনে এতোটা অ'পমানিত এর আগে কখনো হয়নি ওও। ক্রীতিক কেন ওকে দু’চোখে দেখতে পারেনা, কেন ওর উপর সবসময় ক্ষী'প্র হয়ে থাকে তা আজও ধরতে পারেনা অরু।

এদিকে সায়র নিজেও ক্রীতিকের কান্ডে বির'ক্ত। কোন এক অজানা কারনে অ-স্বাভাবিক রা'গ ওর। কখনো কি কারনে রেগে যায় সেটা কেবল ওই যানে, আর একবার রেগে গেলেতো কথায়ই নেই, এমন সব ভ'য়াভহ কাজ করে যেগুলো স্বভাবিক মানুষের দ্বারা সম্ভব নয়।এতো র'গচটা স্বভাব নিয়ে ক্রীতিক যে কি করে কলেজের প্রফেসর ভেবে পায়না সায়র।

---কিন্তু অরুতো রেগে যাওয়ার মতো কিছুই করেনি।এতো ছোট একটা মেয়ের সাথে , এতো বা'জে ব্যাবহার করার কি মানে আছে, আশ্চর্য।

আনমনেই বলে ওঠে সায়র।

*****************************************

সন্ধ্যায় ক্রীতিককে বিদায় জানিয়ে চলে যায় সায়র, আজ রবিবার ছিল বলেই এসেছিল, প্রত্যেক সপ্তাহের ছুটির দিনে, এলিসা,সায়র নয়তো অর্নব কেউ না কেউ ক্রীতিকের সাথে দেখা করতে এই জনমানবহীন নিরব স্টেটে আসে। নয়তো মাসের পর মাস গেলেও ক্রীতিকের কোন খোজ মেলেনা,না কোন সোশ্যাল মিডিয়া, না কোন ইন্টারনেট, না কোন ফেস টু ফেস আলাপ।অনেকটা অস্বাভাবিক লাইফস্টাইলই বলা চলে ওর, সাভাবিক মানুষ এভাবে একাএকা থাকলে দ'মব'ন্ধ হয়ে মা'রা যাবে নিশ্চিত। প্রয়োজনের বাইরে গিয়ে ও শুধু একটা কাজই করে, সেটা বাইক রাইডিং।

ক্রীতিক সায়রকে এগিয়ে দিতে গেইটের কাছে এলে,সায়র গাড়িতে উঠতে উঠতে বললো, ---প্লিজ ভাই মেয়েটাকে আ'ঘা'ত করিসনা।বড্ড মিষ্টি মেয়েটা, তুই ওকে রাখতে না চাইলে বলিস,আমি আমার বাসায় নিয়ে পুতুল বানিয়ে সাজিয়ে রাখবো ওকে,তবুও ওকে ট'র্চা'র করিস না।আই রিকোয়েস্ট ইউ।

সায়রের কথায়, জিভ দিয়ে গাল ঠেলে একটা তীর্যক আর রহস্যময় হাসি দিয়ে, ক্রীতিক বলে,

--- আর ইউ ফা''কিং কি'ডিং মি? নিজের হা'র্টবিট কে কেউ আ'ঘা'ত করে?

--উমম!কিছু বললি??

-- নাথিং, তুই যা, আর দয়াকরে প্রত্যেক উইকেন্ডে তিনজন মিলে আমাকে জ্বা'লানোটা বন্ধ কর।

সায়র নিজের ছাঁদ খোলা বিএমডব্লিউতে নিয়ে উল্টো পথে যেতে যেতে পেছনে না ঘুরেই হাত নাড়িয়ে বললো, সি ইউ ইন নেক্সট উইকেন্ড। বায় বায়।

*****************************************

সন্ধার দিকে অনুও ফিরে আসে। রুমে গিয়ে পরনের মোটা কোর্ট খুলে, চারিদিকে খুঁজতে শুরু করে অরুকে।কিন্তু কোথাও অরু নেই।

ও ডাকতে ডাকতে করিডোরের অন্য মাথায় গিয়ে দেখলো অরু চুপচাপ ছাঁদ বাড়ান্দার মেঝেতে বসে আছে। হাত দুটো দিয়ে রেখেছে ঠান্ডা রেলিংএ তার উপর চিবুক।

কাঁচ ঠেলে বারান্দায় পা রাখতেই হুহু বাতাসে হাড় হীম হয়ে এলো অনুর, এই ঠান্ডার মধ্যে অরু কি'করে বারান্দায় বসে আছে বুঝে উঠতে পারলোনা অনু।তটস্থ গতিতে অরুকে টেনে ভেতরে নিয়ে আসলো ও। অরুর ফর্সা মুখ ঠান্ডায় নীল বর্ণ ধারন করেছে, মুখটা শুকিয়ে এইটুকুনি হয়ে আছে।

-- ঠিক আছিস বোন? দুপুরে খেয়েছিস?

অনুর উদ্বিগ্ন প্রশ্নে সচকিত হয়ে উঠলো অরু,শরীরের ক্লান্তি টুকু ঝেড়ে ফেলে দিয়ে, মুখে প্রসস্ত হাসি ঝুলিয়ে বললো,

---খেয়েছি আপা, ভেতরে হাসফাস লাগছিল তাই বাইরে এসে একটু বসলাম, তুই খেয়েছিস, আর মা কেমন আছে? আমি দেখতে যাবো মাকে।

-- অনু সস্থির নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে, মা আই সিউ তে আছেরে অরু, এখন গেলেও কাছে যেতে পারবি না, তারচেয়ে বরং কেভিনে শিফট করুক তখন না হয় যাবি।

-- তোর কষ্ট হচ্ছে আপা তাইনা?

-- নারে, ক্রীতিক ভাইয়া আগেভাগেই কোম্পানিকে সতর্ক করে রেখেছিল, তাই তারাই সব ঝামেলা সামলেছে, আমিতো শুধু মায়ের কাছে কাছে ছিলাম।

দু'বোন আরও অনেক সুখ দুঃখের আলাপ করছিল, তখনই নিচ থেকে কলিংবেল বেজে ওঠে। অনু বলে,

--তুই দাঁড়া আমি গিয়ে দেখছি।

একটু পর কতগুলো প্যাকেট নিয়ে ভেতরে আসে অনু।

অরু, কৌতুহল নিয়ে শুধায়,

---এগুলো কি আপা।

-- মনেতো হচ্ছে বিরিয়ানির প্যাকেট।

বিরিয়ানির নাম শুনতেই সারাদিন না খাওয়া অরুর পেট গুড়গুড়িয়ে ওঠে,

-- কি বলিস আপা তুই অর্ডার করেছিস??

অনু এদিক ওদিক না বোধক মাথা নারায়।

--- তাহলে?

অনু প্যাকেট গুলো টেবিলে রেখে বললো, তুই দাড়া আমি ক্রীতিক ভাইয়াকে একবার জিজ্ঞেস করে আসি।

অনু ক্রীতিকের রুমে নক করে ঢুকলো, দরজাটা খোলাই ছিল। ক্রীতিক ল্যাপটপে কিছু একটা করছিল তখন।

অনু একটু ইতস্তত হয়ে গলায় বলে,

---ইয়ে মানে ভাইয়া, আপনি কি কোন খাবার অর্ডার করেছিলেন।

ক্রীতিক সজোরে এদিক ওদিক মাথা নাড়ায় যার উত্তর না।

অনু নিরাশ হয়ে যেতে যেতে বললো,

,---তাহলে মনে হয়, ভুল করে।

-- ইয়ে অনু।

পিছু ডাকে ক্রীতিক।

অনু ফিরে তাকায়,

--- আমার মনে হয় তোরা ফার্স্টটাইম এসেছিস তো তাই কোম্পানি তোদের ওয়েলকাম গিফট হিসেবে খাবার গুলো পাঠিয়েছে।আফটার অল তোরা চেয়ারওয়েম্যানের মেয়ে।

অনু, শুনে খুশি হয়ে গেলো, উপর থেকে অরুকে ডেকে বললো,

-- খা অরু এগুলো কোম্পানি থেকে পাঠিয়েছে আমাদের জন্য।

অরুও আর অপেক্ষা করলো না, সারাদিনের অভুক্ত পেটটাকে আসকারা দিতে বসে পরলো পেট পুজো করতে।

খুশি মন নিয়ে অনু চলে যেতেই ক্রীতিক আবারও নিজের কাজে মন দিলো।

■■■■■■■■■■■■■■■■■■■■■■■

#পর্বঃ০৬

সানফ্রান্সিসকো থেকে মাইল ত্রিশেক দুরে ছোট্ট নির্জন এই শহরতলীর আবহাওয়া বরই অদ্ভুত। সপ্তাহে বড়জোর দু-একটিবার রোদের মুখ দেখা যায়, বাকিটা সময় ঘুটঘুটে মেঘাচ্ছন্ন আকাশ নয়তো কুয়াশা ঢাকা ঝাপসা প্রকৃতি,তারউপর হাড়কাঁপানো ঠাণ্ডাতো আছেই।

ঘরের মধ্যে কৃত্রিম তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রন ব্যাবস্থা থাকায় সেই হীমধরা শীত ছুতে পারেনা মানুষের শরীর। মাইনাস জিরো ডিগ্রিতেও এদেশের মানুষের কর্মব্যাস্ত জীবন অনড়।

কিন্তু একা একা এভাবে, রুমের মধ্যে বসে বসে ঠিক কতক্ষণ থাকা যায়? গত দুদিন ধরেই এভাবে কাটাচ্ছে অরু। খাও, দাও আর ঘুমাও। আপাও সকাল হতে না হতেই হসপিটালে ছোটে। ক্রীতিক বাড়িতে থাকা না থাকা একই কথা, সে কখন আসে কখন যায় সেই ধারণাটুকু পর্যন্ত নেই অরুর। তাছাড়া এই ব'দমেজাজি লোকের সাথে মুখ দেখাদেখি না হওয়াটাই ভালো, এককথায় গুড লাক।

রুমের মধ্যে এদিক ওদিক পায়চারি করছে অরু। অলস মস্তিষ্কটা ভাবছে কি করা যায়? কিভাবে সময় কাটানো যায়, তখনই গুরুদায়িত্ব মনে পরার মতোই মনে পরে যায় নিখিল ভাইয়ের কথা। গত দু'দিনে অরুতো ভুলেই গিয়েছিল নিখিল ভাইয়ের সাথে একই দেশে আছে ও।

--- কিন্তু মাত্র এই কয়েকদিনের দুরত্বে কিভাবে আপনাকে ভুলতে বসলাম আমি নিখিল ভাই?

ওর অবচেতন মস্তিস্ক বললো,

--ভালোবাসলে ভোলা যায়??

--- তারমানে কি আমি তাকে ভালোবাসিনা? না না কি ভাবছি এসব। ভুলভাল চিন্তাদের দূরে ঠেলে দিয়ে নতুন ভাবনা সংযোজন করলো ও, ---যে করেই হোক নিখিল ভাই কে খুঁজে বের করবো আমি।কিন্তু কিভাবে?

তখনই চোখ গেলো বেড সাইড টেবিলে অযত্নে পরে থাকা মুঠো ফোনটার দিকে, যেটা গত দু'দিন ধরে বন্ধই পরে আছে।

অরু এগিয়ে গিয়ে ফোনটা হাতে তুলে নিলো, মনে মনে ভাবলো এটাকে চার্য দিয়ে লাভ নেই কারণ ওর কাছে সিমকার্ড নেই।

তাহলে এবার কি হবে??

অরু পা দুলিয়ে খাটে গিয়ে বসে পরে। তারপর ভাবতে ভাবতে আনমনে বলে,

-- আমাকে ধাপে ধাপে এগোতে হবে, সবার আগে নিখিল ভাইয়ের ভার্সিটি খুজে বের করতে হবে, আর সেটা জানতে হলে তিথিকে কল করতে হবে, একমাত্র ওই জানবে নিখিল ভাই কোন ভার্সিটিতে হায়ার স্টাডিসের জন্য এসেছে। তারপর এড্রেস নিয়ে সোজা নিখিল ভাইয়ের মুখোমুখি।

কথাটা ভেবেই লজ্জায় নিজের মুখে দু-হাত চেপে মু্ঁচকি হাসে অরু।

---কিন্তু তিথির সাথে যোগাযোগ করার উপায় কি??

বুদ্ধিদীপ্তদের মতো চোখ জোড়া বড় করে অরু বললো আইডিয়া, এতোবড় বাড়িতে নিশ্চয়ই একটা ল্যান্ডলাইন থাকবে? হ্যা থাকবেই, শুধু খুজে বের করতে হবে।নিজেকেই নিজে আস্বাস দিলো ও।

তারপর আর দেরি করলো না, তৎক্ষনাৎ ডায়েরির পাতা থেকে তিথির নাম্বার টুকে রাখা পৃষ্ঠাটা ছিড়ে নিচের দিকে ছুট লাগালো নতুন কোন সুযোগের আশায়।

*****************************************

বেখেয়ালি অরু একপ্রকার নাচতে নাচতেই নিচে নেমে এলো। তবে শেষ সিঁড়িটা পেরোতেই ওর পায়ের উদ্যম গতি থেমে গেলো,সেই সাথে হাস্যোজ্জল মুখটাও চুপসে গিয়ে থমথমে দৃশ্য ধারণ করলো।

অন্ধকার হল রুমে, কালকের মতোই ডিভানে বসে টি টেবিলের উপর দু'পা তুলে বাইক রাইডিং ভিডিও গেইম খেলছে ক্রীতিক।

অরু মনে মনে বিরক্ত হলো,

---এতো বড় হয়েও সারাদিন ভিডিও গেইম খেলে এই লোক,আশ্চর্য অফিস টফিস নেই নাকি?

আবার হতেও পারে কোটি পতি বংশের একমাত্র উত্তরাধীকারী মি.কুম্ভকর্ণ।

নিজের মনের কথায় নিজেই ঠোঁট টিপে হেঁসে ওঠে অরু।

সঙ্গে সঙ্গে মনিটরের গেইমটা পজ হয়ে যায়।

ক্রীতিক ভ্রু কুঁচকে ওর দিকে তাকিয়ে থাকে কয়েক সেকেন্ড,তারপর গম্ভীর স্বরে বলে,

-- হোয়াট হ্যাপেন্?? এভাবে হাসছিস কেন? আমি বয়সে তোর থেকে ঠিক কত বছরের বড় তুই জানিস?

অরুর হাসি থেমে যায়, চারদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার তার সাথে নিস্তব্দ পরিবেশ, কেবল মনিটর থেকে আসা মৃদু আলো ছাড়া আর কোনো আলোই জলছে না হল রুমে।জানালা থেকে শুরু করে, কাচের দেওয়ালের পর্দাটা পর্যন্ত টেনে দেওয়া।

এমন পরিবেশে ক্রীতিকের রাগি আওয়াজ বেশ ভ'য়ানকই ঠেকলো অরুর কানে।

আর এই মূহুর্তে ক্রীতিক যে, ওর দিকে চোয়াল শক্ত করে তাকিয়ে আছে,ব্যাপারটা ভয়ের উপর যা থাকে সেখানে গিয়ে পৌঁছেছে। অরু এই নিরবতা ভাঙতে চাইলো,তাইতো নিস্তব্ধতা কাটিয়ে রিনরিনে আওয়াজে বললো,

--- আ..আপনার অফিস নেই?

-- কোন অফিস??

--- এমা, কি বলছেন আপনাদের কোম্পানি, জেকে গ্রুপ।ওয়েট "জেকে "তারমানে কোম্পানিটা আপনার নামে আর কালকে ওই ভাইয়াটা আপনাকেই ডাকছিল, জায়ান ক্রীতিককে ছোট করে জেকে।

আঙুল নাড়িয়ে নাড়িয়ে অরুর করা বিশ্লেষণ ক্রীতিক শুনেছে কি শোনেনি কে জানে?

ওও আবারও মনিটরে নজর দিয়ে বললো,

--- আমার সামনে একদম হাসবি না তুই। তোর হাসিটা বি'শ্রী লাগে আমার।আর ওটা আমার নয়, তোর মায়ের অফিস। আর না ওখানে আমি বসি, তুই চাইলে অবশ্য বসতে পারিস।

অরু মনে মনে ভরকায়,

---কি বলে এই লোক। আমি কেবল কলেজ পাশ করে এডমিশন নিলাম,উনিকি ঠাট্টা করছেন, মানুষ এতো সিরিয়াস ফেস নিয়েও ঠাট্টা করতে পারে? অদ্ভুত।

অরু আর ঘাটায় না ক্রীতিককে বেশি ঘাটালে হুট করে কি জানি কি অপ'মান করে বসে তার ইয়ত্তা নেই। তাই অরু কথা ঘুরিয়ে বলে।

--- বলছি যে লাইটটা জ্বালাতাম, একটু কাজ ছিল।

-- নো। সচকিত জবাব আসে ক্রীতিকের দিক থেকে।

--- কিন্তু কেন?

--- আমার অন্ধকার ভালো লাগে তাই,যা করার এই অবস্থাতেই করে যা।

হালকা নিঃশ্বাস বেরিয়ে এলো অরুর বুক চিড়ে, ক্রীতিক বলেছে মানে, সে কথা এক চুলও নরবে না।তাই অন্ধকার হাতরেই ল্যান্ড ফোনের সামনে গিয়ে সফেদ কার্পেট বিছানো মেঝেতে বসে পড়লো অরু। কাগজ থেকে খুব সাবধানে নাম্বারটা টুকে,কল লাগালো তিথির নাম্বারে।

কয়েকবার রিং পরতেই কল ধরেছে তিথি বাংলাদেশে তখন রাত দশটা কি এগারো তবুও কথা শুনে মনে হচ্ছে ঘুমে কাতরাচ্ছে তিথি।

-- তিথি আমি অরু বলছি। কেমন আছিস?

তিথি চমকায়, একেতো বিদেশি নাম্বার তার উপর দেশে থাকতেই সকল যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছিল অরু, এখন হুট করেই আবার কেন কল দিলো?

তিথি কিছু বলবে তার আগেই অরু বলে,

---তিথি আমার তোর সাথে অনেক কথা আছে সব খুলে বলবো তোকে,তার আগে ছোট্ট একটা ইনফরমেশন দে, নিখিল ভাই কোন ইউনিভার্সিটিতে পড়ার জন্য ইউ এস এ এসেছে?

তিথি ওপাশ থেকে কি বললো,সেটা শোনা না গেলেওও আপাতত মনিটরে এতোক্ষণ ধরে নির্দ্বিধায় চলতে থাকা বাইকটা ব্রে'ক ফে'ইল করে বি'দ্ধস্ত হয়ে পরে আছে।পর্দায় বড় বড় অক্ষরে লেখা উঠেছে "গেইম ওভার"।

কেন যেন হুট করে ফুপিয়ে কেঁ'দে উঠেলো অরু,

-- কাঁ'দতে কাঁ'দ'তে অসহায়ের মতো করে বলছে, তিথি তুই কি ড্রাং'ক এভাবে কেন কথা বলছিস, তুই কি কোন বা'জে ছেলেদের পাল্লায় পরেছিস??বলনা?

ওপাস থেকে টলতে টলতে তিথি বললো, ---বেশ করেছি বলেছি, তুই আমার বন্ধু হওয়ার যোগ্যতা রাখিসনা। আমাদের ফ্রেন্ডশীপটাকে কোনোকালেই গুরুত্ব দিস নি তুই, উল্টে সবসময় আমাকে আর নিলীমাকে ইউজ করে গেছিস,এটা বল, ওটা বল,এটা জানা, সেটা জানা, কেনরে আমিকি তোর চাকর ?? তোর ইনফরমেশন কালেক্ট করাই কি আমার কাজ?? তারউপর সবসময় এমন ভাব করে এসেছিস যেন তুইই পার্ফেক্ট, তুইই ক্রীতিক কুঞ্জের মালকীন। আর আমরা কি? লেইম?

---কি বলছিস এসব তিথি, তোর মাথা ঠিক আছে?

খানিকটা তাচ্ছ্যিল্যে হেসে তিথি আবারও বলে --আরেহ তুইতো আসলেই কচুরিপানারে।আমার মাথা ঠিক আছে কি নেই সেটা জিজ্ঞেস করার তুই কে? আমিতো এই ভেবে তোকে বন্ধু বানিয়েছিলাম যে তুই অতবড় বাড়ির মেয়ে,পুরান ঢাকার নামকরা রিয়েলএস্টেট ফ্যামিলি বিজনেস তোদের। ওমাই গড। কিন্তুু তুই তো আসলে ওবাড়ির কেউই নস, আশ্রিতা মাত্র, তোদের জন্য ওই বাড়ির একমাত্র ছেলে জায়ান ক্রীতিক চৌধুরী নিজ বাড়িতে পা রাখেনা পর্যন্ত।তাহলে ভাব তোরা কত নিচ। আর তোর সাহস দেখে তো আমি রীতিমত অবাক হচ্ছি,তুই কিনা নিখিল ভাইয়ের খোজ করছিস? তুই জানিস নিখিল ভাই কতবড় সাইন্টিস্ট হবে? তুই তার নখের যোগ্যতাও রাখিস না অরু। তাই তোর ভালোর জন্যই বলছি ওনার বউ হওয়ার যে দিবাস্বপ্নটা দেখছিস না? সেটা এবার বন্ধ কর।আর যাই হোক নিখিল ভাইয়ের মতো হাই স্ট্যাটাসের ছেলে অন্তত, তোকে বিয়ে করবে না।

অরু চোখ দুটো বন্ধ করে সমস্তটা শুনে গেলো। এই ভ'য়টাই তো পেয়ে এসেছিল এতো গুলো বছর ধরে। আজ এতো দুরে এসেও সেই ভ'য় থেকে পালাতে পারলো না ওও। ঠিকই মুখোমুখি হয়ে গেলো তি'ক্ততায় পরিপূর্ণ কিছু চড়ম সত্যের।

নিস্তব্দ শুনশান হল রুমে অরুর ফোঁ'পানির আওয়াজ স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে।

অরু কান্না ভেজা গলায় আরও একবার তিথি কে অনুরোধ করলো,

--- প্লিজ তিথি তুই আমাকে যা খুশি বল আমি শুনবো, শুধু নিখিল ভাইয়ের ভার্সিটির নামটা বল প্লিইইজ। তুই না বললে আমি আর কোনো দিনও নিখিল ভাইকে খুঁজে পাবোনা।

---রিডিকিউলাস

ওপাশ থেকে এতোটুকুই শোনা গেলো, তারপর শুধু কল কে'টে যাওয়ার পিঁক পিঁক আওয়াজ হলো।

অরুর কি হলো কে জানে, আশেপাশে কে আছে কে নেই, কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করে কল কা'টতেই হুহু আওয়াজ করে কেঁ'দে উঠলো। হয়তো নিজের ঘনিষ্ট বন্ধুর কাছ থেকে এই তিরস্কারটা মোটেই হজম করতে পারেনি ও।

আধারে ঢাকা বদ্ধ ঘরে সেই কা'ন্নার আওয়াজ বরই ব্যা'থাতুর শোনালো। লম্বা সিল্কি চুল গুলো পুরো মেঝে জুড়ে ছড়িয়ে আছে, দু'হাত মেঝেতে রেখে তাতে নিজের ভর ছেড়ে দিয়ে অনর্গল কাঁ'দছে অরু।কা'ন্নার তোপে শরীরটা বারবার ঝাঁকি দিয়ে উঠছে, সেই তালেতালে মৃদু রিনঝিন শব্দ করছে পায়ে আটকে থাকা নুপুর জোড়া।পেছন থেকে ওর কালো মেঘের মতো ঘন চুল দেখে যে কেউ বলবে ডিজনি প্রিন্সেস রুপাঞ্জেল তার সবচেয়ে দুঃখের সময় পার করছে।

কিন্তু সবার দৃষ্টিভঙি এক নয়, ধ্যান ধারণাও এক নয়,কারও ক্ষেত্রে হৃদয়টা হয় বরফের মতোই নির্জীব আর অনুভূতিহীন।সামান্য কা'ন্নাকা'টি দিয়ে সেই বরফ গলানো দুষ্কর।

এই যেমন অরুর কান্নাকাটিও পাশের ডিভানে বসে থাকা ক্রীতিকের হৃদয় ছুতে পারলোনা। ওও হুট করেই একটা অদ্ভুত কাজ করে বসলো।

নিজের যায়গা ছেড়ে উঠে এসে অরুর হাতে হ্যাঁচকা টান মে'রে ওকে জো'র করে দাঁড় করিয়ে দিলো। তারপর ওই হাত ধরেই টা'নতে টান'তে দরজার বাইরে বের করে দিয়ে বললো,

--- আউট।

অরু কিছু বুঝে ওঠার আগেই শব্দটা উচ্চারণ করে ধাপ করে দরজা আটকে দেয় ক্রীতিক।

তারপর ভেতরে গিয়ে মেঝেতে পরে থাকা কাগজের টুকরোটা তুলে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে, পকেট হাতরে ফোন বের করে কাউকে কল লাগায়,

--- আমি একটা নাম্বার ফরওয়ার্ড করেছি তোকে, এর এ টু জেট সব ইনফরমেশন চাই।এস সুন এস পসিবল।

বাইরে এলোপা'থারি ঠান্ডা হাওয়া বইছে। শুধু ঠান্ডা বললে ভুল হবে মা'রাত্মক ঠান্ডা। আকাশটাও মেঘাচ্ছন্ন যখন তখন বৃষ্টি চলে আসতে পারে, এতো ঠান্ডা সয়ে অভ্যাস নেই অরুর তারউপর ওর পরনে কোনো শীতের কাপড়ও নেই, এককথায় জা'ন যায় যায় অবস্থা। অরু একটু সময় নিজের কা'ন্নাকা'টি থামালো, তারপর দু'হাত দিয়ে সজোরে দরজা ধাক্কাতে লাগলো।

ক্রীতিক বয়সে অরুর চেয়ে অনেক বড়, তারউপর সম্পর্কটা এতোটাও সহজ নয় ওদের, তাই কখনোই ক্রীতিককে কিছু বলেনি ডাকেনি অরু। কিন্তু এই মূহুর্তে একটু দ্বিধা নিয়েই ডাকতে শুরু করলো ও।

--- ভাইয়া, ক্রীতিক ভাইয়া, দরজা খুলুন না, আমি ঠান্ডায় জমে যাচ্ছি তো। ভাইয়াআআ।

ওপাশ থেকে কোনরূপ প্রতিক্রিয়া এলোনা।

এভাবে ঠিক কতক্ষণ ডেকেছে মনে নেই অরুর। ডাকতে ডাকতে একপর্যায়ে দরজার সামনেই ক্লান্ত হয়ে বসে পরে ঠান্ডায় নীল হয়ে যাওয়া অসহায় অরু ।

*****************************************

হাইওয়ে ধরে এগোলে রাস্তার একপাশে পেট্রোলপাম্প আর অন্যপাশে ম্যাকডোনাল্টস এর বিশাল ক্যাফেটেরিয়া। এই ছোট্ট শহরটা বেশ নীরব, তার চেয়েও নীরব এই স্টেট টা, যে কয়েকটা ফ্যামিলি আছে তারাও বৃদ্ধ বৃদ্ধা,নয়তো ক্রীতিকের মতো একঘেয়ে।মোদ্দাকথা যারা কোলাহল মুক্ত নিরবচ্ছিন্ন জীবন পছন্দ করে তারাই এই স্টেটে থাকে,নয়তো সানফ্রান্সিসকো থেকে এতোটা দুরে এমন নির্জন পরিবেশে সারাদিন কাটিয়ে দেবার মতো অযথা সময় কারোরই নেই।

দুপুর বেলা হওয়াতে ক্যফেটেরিয়ায় বেশ কিছু মানুষ আছে, তারা যে যার মতো ছাঁদ গোল টেবিলে বসে একটু একটু কফির সিপ নিচ্ছে আর গল্প করছে।

লাল সাদা লোগোর একটা গোল টেবিলে প্রত্যয় ওও বসে আছে। মাত্রই একটা গড়ম কফি শেষ করলো সে। এখন একটু নিকোটিনের ধোঁয়া ছাড়ার জন্য মনটা নিশপিশ করছে, তাই ঠোঁটের কোনে সিগারেট নিয়ে বা হাত দিয়ে দিয়াশলাই জ্বালানোর চেষ্টায় আছে ও।

তখনই ম্যাকডোনাল্ড লোগোর টিশার্ট পরিহিত একটা ব্রাউন স্কিনটোনের মেয়ে এসে ওর সামনে দাঁড়ালো। ঠোঁটের ভাঁজে একগাল হাসি টেনে বললো,

--- সরি স্যার স্মো'কিং ইজ নট এলাউ।

প্রত্যয় মাথা তুলে একবার চাইলো,হুট একদম হুট করে চোখে চোখ রাখলো,অতঃপর হারিয়ে গেলো। মেয়েটা সাদা ফ্যাটফ্যাটে চামড়ার নয়,বরং দুধে আলতা রঙের মায়ায় ভরা চেহারা তার, প্রসস্থ হাসিতে স্নিগ্ধতা যেন উঁপচে পড়ছে ওর। ডাগর ডাগর চোখে কোন কৃতিম সৌন্দর্য নেই, চোখের নিচের সুক্ষ ডার্ক সার্কেলটাও তার সৌন্দর্যের সামিল। প্রচন্ড ঠান্ডায় ক্যালিফোর্নিয়ার মানুষের যখন দিনাতিপাত করাই দুষ্কর, ঠিক তখনই প্রত্যয় আবিষ্কার করলো,এক অজানা উষ্ণতায় ছেয়ে যাচ্ছে ওর হৃদয়ের কানায় কানায়।

নিস্প্রভ তাকিয়ে থাকতে থাকতে ঠান্ডা হাওয়ায় ওর চোখের কোনে জল জমে গিয়েছে, তাও মনে হচ্ছে এটা শীত নয় বসন্ত। এটা বরফ গলা হাওয়া নয় বরং বাসন্তিক মনমাতানো হাওয়া।

লোকটা এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে দেখে, এবার একটু ইতস্তত হয়ে হাত নাড়লো অনু।

--- হ্যালো স্যার।

প্রত্যয়ের ধ্যান ভেঙে যায়,ও তৎক্ষনাৎ হুড়মুড়িয়ে সিগারেট টা ডাস্টবিনে ছু'ড়ে ফেলে দেয়।

-- থ্যাংক ইউ স্যার।

মুখে একচিলতে সুশ্রী হাসি ঝুলিয়ে রেখে অনু চলে যায় অন্য কাস্টমারদের কাছে।

প্রত্যয় বলতে চাইলো,

---তুমি এমন করে আর কারও সামনে হেসোনা অপরিচিতা। তোমার এই মনোমুগ্ধকর হাসিটা আমি, হ্যা আমি কেবল একাই উপভোগ করতে চাই। কিন্তু ও পারলো না, তার আগেই অন্যপাশ থেকে ত'র্কাত'র্কির আওয়াজ ভেসে এলো।

প্রত্যয় খেয়াল করলো, অনুকে ওরা কিছু বলছে।

ভারী শরীরের গু'ন্ডা মতো একটা সাদা চামরার লোক। দেখেই মনে হচ্ছে টাল হয়ে আছে,

স্মো'কিং না করতে বলায়, লোকটা ভীষণ চটে গিয়েছে অনুর উপর , অযথা ইংরেজিতে গা'লাগা'ল করছে। এক কথায় দুই কথায় সব মানুষ জড়ো হয়ে গিয়েছে ওদের কাছে, ক্যাফেতে এই মূহুর্তে অনু আর ওর শিফটমেট ডেইজি ছাড়া কতৃপক্ষের কেউ নেই। তারউপর অনু দুইদিন হলো জয়েন করেছে মাত্র, কিভাবে কি সামাল দেবে কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না ও।একপর্যায়ে লোকটা রে'গেমেগে গড়ম কফির মগটা ছু'ড়ে মারে অনুর দিকে। অকস্মাৎ ঘটনায় চোখ জোড়া খিঁচে বন্ধ করে নিলো অনু। এক সেকেন্ড দুই সেকেন্ড করে প্রায় ত্রিশ সেকেন্ড অতিবাহিত হয়ে যায়, শরীরের চামড়ায় গ'ড়ম বিভ'ৎস কোনো কিছুই অনুভব করতে পারলো না ও। ব্যাপারটা কি হলো বুঝে উঠতে ভয়ে ভয়ে চোখ খোলে অনু।দেখতে পায়, একটু আগের সিলভার কালার শার্ট পরিহিত সেই লোকটা, ওকে নিজের বাহুতে আড়াল করে চোখ মুখ খিঁচে দাড়িয়ে আছে।

---তার মানে কফিটা কি ওনার শরীরে পড়লো?

হায় হায়।

অনু ব্যাস্ত হয়ে কিছু বলতে যাবে তার আগেই লোকটা ওর দিকে একরাশ মায়াচোখে তাকিয়ে বললো,

--- আর ইউ ওকে?

*****************************************

রিমঝিম বৃষ্টি আর বাজ পড়ার ভ'য়ানক শব্দ কানে আসতেই ঘুম ছুটে গেলো ক্রীতিকের।

হাত দিয়ে নিজের চুল গুলো ব্যাকব্রাশ করতে করতে উঠে বসলো ও, ঘরিতে তখন বিকেল চারটা।

তখন অরুকে বাইরে রেখে এসে কাউচে শুয়েই কখন যে ঘুমিয়ে গিয়েছিল টের পায়নি ও।

"অরু" কথাটা মাথায় আসতেই নিজের চুল নিজেই খাঁ'মচে ধরলো ক্রীতিক।

---ও'নো মাথা থেকেই বেরিয়ে গিয়েছিল, মেয়েটা ঠিক আছেতো?

এক মূহুর্তও অপেক্ষা না করে ছুটে গিয়ে দরজা খুলে দিলো ক্রীতিক।

দরজার সামনেই দু হাটুতে মুখ গুঁজে বসে আছে অরু। চেতনা আছে কি নেই বোঝা যাচ্ছে না। বিদ্যুৎ গতিতে থ'রথর করে কাঁ'পছে ওর ছোট্ট শরীরটা। সেই সাথে জোর তালে নিঃশ্বাস ফেলছে । দেখে মনে হচ্ছে শ্বা'স ক'ষ্ট হচ্ছে। মাত্রাতিরিক্ত ঠান্ডায় ফ্যাকাশে নীল বর্ন ধারন করেছে পুরো শরীর।

অরুর এ অবস্থা দেখে আড়ালে দীর্ঘঃশ্বাস ত্যাগ করলো ক্রীতিক, তারপর আলগোছে বাচ্চাদের মতো করেই নেতিয়ে পরা অরুকে দু-হাতে তুলে নিলো নিজের কোলে। ওর শরীর স্পর্শ করতেই চমকে ওঠে ক্রীতিক, বরফের মতোই ঠান্ডা হয়ে আছে শরীর,আরেকটু দেরী করে দরজা খুললে কি হতো কে জানে?

....................................................................................

𝐓𝐎 𝐁𝐄 𝐂𝐎𝐍𝐓𝐈𝐍𝐔𝐄𝐃

Download MangaToon APP on App Store and Google Play

novel PDF download
NovelToon
Step Into A Different WORLD!
Download MangaToon APP on App Store and Google Play